#হৃদয়ের বন্ধন।
পর্ব 1
লেখাঃমেহের।

মারুফ তুই বাহিরে কি করছিস?
ভিতরে বৌমা তোর জন্য অপেক্ষা করছে।
এমনিতেই গরম তার মধ্যে ভারী শাড়ি ও গহনা পরে রুমে বসে থাকতে হয়তো বৌমার কষ্ট হচ্ছে।
এখানে না দাঁড়িয়ে রুমে যা।

মারুফ তার চাচার কথা শুনে বলল,এখনই যাচ্ছি চাচ্চু । রুমের দিকে যেতে নিয়ে মারুফ আবার ফিরে এসে তার চাচ্চুকে বলে,
চাচ্চু কালকের বৌভাতের অনুষ্ঠানের সব কিছু স্টোর রুমে রাখা হয়েছে।
তুমি একটু দেখে নিও আর কিছু প্রয়োজন কিনা।
আর বাবুর্চিদের রান্নার ব্যাপারে ভালো মতো বুঝিয়ে দিয়ো কি কি করতে হবে।
ছোট খাট কোন সমস্যার কারণে দাদা জানের যত্নে গড়া এই খান বাড়ির বদনাম হোক তা চাচ্ছি না।

আহ্ মারুফ তুই সবকিছুতে এতো চিন্তা করছিস কেন?
তুই যা বাবা।
এদিকে আমি সামলে নিব তুই এখন আমাদের বৌমার কাছে যা।

মারুফ মনে মনে বলল,চাচ্চু তোমাদের সবার দ্বায়িত্ব আমার উপরে তাই চিন্তা না করতে চাইলেও এসে পরে চাচ্চু।
তোমাকে সোজা সরল পেয়ে মানুষ ফাঁসিয়ে মজা পায়।
আর সেটা যে আমি সহ্য করতে পারি না।
আমার প্রতি মূহুর্ত কাটে তোমাদের একটু ভালো রাখার চেষ্টায়।
এসব ভাবতে ভাবতে কখন যে মারুফ নিজের রুমে এসে পরেছে তা টের পায়নি।
চোখের সামনে খাটে ফুল দিয়ে সাজানো দেখে বুঝতে পারল নিজের রুমে
এসে পরেছে।

মারুফ রুমে এসে চারো দিকে তাকিয়ে কাউকে না দেখে ভাবছে কোথায় গেল তার বৌ?

এরমধ্যে দেখে ওয়াশরুমের দরজা খুলে প্লাজু ও শার্ট পরিহিত এক নারী রুমে আসছে।
ভালো মতো তাকিয়ে দেখে এই তো সে যার সাথে মারুফের আজকে বিয়ে হয়েছে।
বিয়ের আগে সরাসরি দেখা না হলেও ছবিতে দেখেছে।
অবশ্য ছবির থেকে সরাসরি দেখে মনে হচ্ছে বেশি সুন্দর।
কিন্তু বৌ ওঁর এ ভেসে কেন!
এই ভেসে নতুন বৌকে দেখে
মারুফতো মনে হয় স্ট্রোক করবে।

বেচারা ভেবেছিলো রুমে এসে দেখবে বৌ খাটে ঘুমটা দিয়ে বসে আছে।
সে এসে বৌয়ের ঘুমটা উঠিয়ে মুখ দেখবে।
বৌ তাকে দেখে লজ্জা পাবে ওঁর সে আসায় এ মেয়ে পানি ঢেলে দিয়েছে।
কি সুন্দর এগুলো পরে দাঁড়িয়ে আছে ।
এই মেয়ের লজ্জা শরম নেই নাকি?
মেয়ের দারের কাছে তো একটা ওড়নাও দেখতে পারছে না।

বিয়ের প্রথম রাতে স্বামীর সামনে কোন মেয়ে এভাবে
আসতে পারে তা
মারুফের ধারনার বাহিরে ছিল।
তাও মনের ভাবনাকে একপাশে রেখে মারুফ নতুন বৌয়ের উদ্দেশ্য আসসালামু আলাইকুম বলে বৌয়ের দিকে তাকালো।

আসলে মারুফ সালাম দিয়ে তার উপস্থিতি জানান দিচ্ছে।

কিন্তু নতুন বৌ যেনো সালাম শুনতে পায়নি এমন ভাব ধরে দাঁড়িয়ে আছে।
মারুফ ভাবছে হয়তো শুনতে পায়নি তাই আবারো সালাম দেয়।
কিন্তু এবারেও সালামের সারা পেল না।
মারুফ সহজে রাগে না কিন্তু কোন অনাচার দেখে চুপ মনে হয় কম থাকে।
নতুন বৌয়ের আচরণে মারুফের রাগ উঠে যাচ্ছে একজন মুসলমান ঘরের মেয়ে হয়ে সে কি করে সালামের উত্তর না দিয়ে পারে।
এই সব শিক্ষা তো মানুষ ছোট থেকেই পেয়ে থাকে।
তাই মারুফ নতুন বৌকে বলল, জেসমিন তোমাকে সালাম দিয়েছি তা তুমি শুনতে পাওনি যে এখনও সালামের উত্তর দিচ্ছো না?

হেই ইউ আইএম নট জেসমিন আইএম জেসিকা।
মারুফ অবাক হয়ে যায় জেসমিনের কথা শুনে।
মনে মনে ভাবছে কবুল বলার আগেই তো কাজী জেসমিন তালুকদার বলল ।
তাহলে কি আমি ভুল শুনেছি।
সেটা কিভাবে সম্ভব হয়।
দাদুও তো বলল, জেসমিন।
এসব ভেবে মারুফ কিছু বলতে যাবে তার আগেই জেসমিন বলে উঠল, এই তুই কে যে তোর প্রশ্নের বা সালামের উত্তর আমায় দিতে হবে?
আসছে্ আন কালচার ছোট লোক একটা।

মারুফ নতুন বৌয়ের কথা শুনে বলে,এই মেয়ে ভদ্র ভাষায় কথা বলো, আমি তোমার স্বামী হয় সেটা নিশ্চয়ই ভুলে যাওনি।
আর সালাম দেওয়া মানে একে ওপরের শান্তির জন্য আল্লাহর নিকট দোয়া করা ।
তার উত্তরে তোমার কোন ক্ষতি তো দেখছি না যে এভাবে কথা বলছো!

এই ছোট লোকের বাচ্ছ বড় বড় কথা বলিস কি করে !
আমার বাবার টাকার লোভে পড়ে তো তুই আমাকে বিয়ে করেছিস ভাবছিস আমি কিছু জানি না।
আর তোর চৌদ্দ গুষ্টিতো আমার বাবার টাকায় বিক্রি হয়েছে।
তাইতো আমাকে না দেখে টাকার লোভে পড়ে বিয়ে করতে পাগল হয়েছিস।

মারুফ জেসিকার কথা শুনে হতভম্ব হয়ে গেছে।
কি বলছে এই মেয়ে।
মারুফ ধমকে জেসিকা কে বলে,
চুপ একদম চুপ তোমার সাহস হলো কী করে আমার পরিবারের নামে বাজে কথা বলার?
তুমি না জেনে শুনে উল্টো পাল্টা কথা বলতে পারো না ।

মারুফ মনে হচ্ছে হঠাৎ মাঝ নদীতে পড়ে গেছে।
যেখানে থেকে সাঁতরে তীরে উঠতে পারছে না।
সারাজীবনে নিজের জানা মতে কখনো কোন খারাপ কাজে যুক্ত হয়নি।
আজকে কিনা তার থেকে ছোট একটা মেয়ে যে কিনা ওঁর স্ত্রীর সে এই ভাবে ওকে অপমান করছে।
ওঁর পরিবারকে সদস্যদের তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করছে।
যেখানে ওঁর জীবন হচ্ছে ওঁর পরিবারের সদস্যরা।
এইসব কি হচ্ছে ওঁর সঙ্গে ভেবে কুল কিনারা করতে পারছে না।

বুঝ হওয়ার পরে থেকে বধূরূপে যেমন মেয়ে কল্পনা করে এসেছে কথা শুনে মনে হচ্ছে এই মেয়ে তার ধারের কাছেও নেই।

দ্বায়িত্বর চাপে কখনো কোন নারীকে ভালবাসা হয়নি।
সব ভালবাসা তো জমা করে রেখেছে বৌয়ের জন্য।

সব সময় ভেবেছে বৌয়ের সাথে তার সম্পর্কের বন্ধন হবে শুধু হৃদয়ের বন্ধন।
যেখানে দেহের মিলন পরে হলেও চলবে।
আগে হবে দুটো হৃদয়ের মিলন।

কিন্তু আদৌও কি তা সম্ভব হবে।
নাহ্ এখন মাথা গরম হলে চলবে না। তার থেকে মেয়েটি বয়সে যথেষ্ট ছোট তাই তাকে বুঝিয়ে বলতে হবে।আর ওঁর কোন কথা থাকলে তাও মন দিয়ে শুনতে চায়।
তারপরে মারুফ মাথা ঠান্ডা রেখে জেসমিন কে বলল, শুনো তুমি কি আমার কোন ব্যাপারে কষ্টে পেয়েছো ?
নাহলে কী হয়েছে যে এভাবে কথা বলছো?
তুমিতো জানোই আজকে আমাদের বাসর রাত ।

এ রাতে তো দুজন দুজনকে জানতে চেষ্টা করবো,
বুঝতে চেষ্টা করবো।
দুজনে দুজনের পরিবারের সম্পর্কে জানবো তা না করে তুমি রেগে যাচ্ছে কেন?

হ্যাঁ কোন সমস্যা হলে এখানে এসে আমার কাছে বসে বলতে পার।
দুজনে কথা বলে না হয় সব সমস্যা সমাধান করবো।

মারুফের কথা শুনে জেসিকা ক্ষেপে গিয়ে বলল,এই ছোট লোকের বাচ্চা তোর সাথে আবার কিসের কথা।
আর আমাকে দেখে বুঝি কাছে পেতে ইচ্ছে করছে তাই বুঝি কাছে এসে বসতে বলছিস ছোটলোক।
নিজেকে কি মনে করিস?
আর ভুল করেও যদি আমায় ছুঁতে আসিস তাহলে তোর কি হাল করবো স্বপ্নেও কল্পনা করতে পারবি না।

মারুফ বুঝতে পারছে না সে রাগের কি বলল, যে এই মেয়ে তার ওপরে ক্ষেপে আছে।

এরমধ্যে জেসিকা বলল, আমার আশেপাশে আসলেই তোর পরিবারের সবাইকে নারী নির্যাতনের মামলায় পুলিশের কাছে দিবে জামিনও করতে পারবি না।

মারুফ এতোক্ষণ দর্য্য ধরে ছিলো কিন্তু এখন এই মেয়ের মুখে পরিবারকে কষ্ট দেওয়া কথা শুনে সহ্য হলো না।
মারুফ রেগে বলে,এই বড়লোকের বেটি তুই যদি আমার সামনে পোশাক ছাড়াও আসিস না তাও এই মারুফ তোকে ছুঁয়েও দেখবে না।

এরমধ্যে ছেসিকার মোবাইল বেজে উঠল, জেসিকা সাথে সাথে রিসিভ করে বলল,বেবি তুমি কেমন আছো?
কি করছো?
নাহ্ নাহ্ এই ছোট লোকের বাচ্চাকে আমার কাছে আসতে দেয়নি।
ওহ্ বেবি তুমি চিন্তা করো না তো রাসকেলটা আমার কাছে আসলে অক্ষত অবস্থায় ফিরতে পারবে না।

মারুফ জেসিকার কথা বলা শুনে বুঝতে অসুবিধা হলো না ফোনের ওপ্রান্তে তার বৌয়ের প্রেমিক আছে।
জেসিকাকে বৌ বলাতে তার হৃদয় প্রতিবাদ করে উঠলো।
নাহ্ এমন চরিত্রের মেয়ে কখনোই তার বৌ হতে পারে না।

মারুফ বিরবির করে বলছে,আমার সাথে ধোঁকা হয়েছে।
আমার এখনেই জেসিকার বাবার সাথে কথা বলতে হবে।

সে কি করে পারলো তার মেয়েকে দিয়ে আমার ও আমার পরিবারের ক্ষতি করতে।
মারুফ জেসিকার বাবাকে কল দিচ্ছে
আসেন এই ফাঁকে এবার একটু এদের পরিচয় জেনে নেয় ।

মারুফের পুরো নাম মারুফ খান।
মারুফের দাদা ও তার পূর্ব পুরুষদের আমলে এই খান পরিবারের অনেক নাম ডাক ছিল।
টাকা পয়সার কোন অভাব ছিল না।
নাম ডাক এখনো আছে তবে আগের মতো সেই অর্থ সম্পদ এখন নেই।
মারুফের দাদার বড় অসুখ হয়েছিল তখন তাকে মাদ্রাস্ নিয়ে চিকিৎসা করানো হয়।
সেখানে পানির মত টাকা পয়সা খরচ করতে হয়েছিল।
চিকিৎসার পরেও কিছুদিন ভালোই ছিলেন।
মারুফের বাবা তার দাদা জানের সাথে যাওয়াতে সে সময় নিজেদের ব্যাবসায় নজর দিতে পারেনি।
তখন থেকেই তাদের অর্থ সম্পদ কমতে শুরু করে।
মারুফের এসএইসি পরীক্ষার পরে ওঁর দাদা জান মারা যায়।
আর তার দাদা জানের সব সময় কাছে থেকেছে মারুফের বাবা।

তাইতো মারুফের বাবা তার বাবার মৃত্যু ব্যাসায় লস সব কিছু নিয়ে প্রেসারে ছিলেন।
এসব নিয়ে টেনশনে হঠাৎ করে তিনিও একদিন মারা যায়।
যখন মারুফের বাবা মারা যায় সেদিন মারুফের মাষ্টার্সের ফাইনাল পরীক্ষার শেষ হয়ে ছিল।
এরপরে মারুফ শক্ত হাতে বাবার রেখে যাওয়া ব্যাবসায় লেগে পরে।
মাষ্টার্স্ পাশ করে চাকরি করার স্বপ্ন থাকলেও তা দ্বায়িত্বর খাতিরে বিসর্জন দেয়।

মারুফ দেখতে ফর্সা লম্বাটে মুখ। হালকা দাঁড়িও আছে ।

পরিপাটি হয়ে থাকলে মনে হয়
ভারতের হিরোদের মত।
লম্বাঃ ৬”১’
বয়সঃ ত্রিশ বছর।

নিজেদের কাপড়ের দোকান আছে দুটো সেগুলো চাচা ভাতিজা মিলে কর্মচারীদের নিয়ে করে।
তবে কাপড়ের বড় ডিল হলে মারুফের সামলাতে হয়।
তার চাচ্চু এসব কম বুঝে।

মারুফের বাবাঃ ইসমাইল খান (মৃত)
মাঃ মায়া বেগম।
মারুফের ছোট এক বোন ও ছোট এক ভাই আছে।
তাদের নামঃ কোমল ও রাশেদ খান।
মারুফেরা যৌথ পরিবারে থাকে।
মারুফের একটাই চাচা আছে।
চাচার নামঃ ইসহাক খান।
তার দুই মেয়ে কোন ছেলে নেই।
তাদের নামঃ রেশমা ও ঝর্না।
রেশমার বিয়ে হয়ে গেছে দুই বছর হয়েছে।
মারুফের দাদা বেঁচে নেই দাদু আছে।
মারুফের দাদু, চাচার পরিবার ও মারুফের পরবার একত্রে থাকে।
মারুফের বিয়ে হয়েছে তার বাবার ছোট বেলার বন্ধুর মেয়ের সাথে।
মারুফের বৌয়ের নামঃ জেসমিন তালুকদার ।
দেখতে কাঁচা হলুদের মত গায়ের রং।
টানা চোখ লাল টুকটুকে ঠোঁট।
লম্বাঃ ৫”৪’
বয়সঃ ২০ বছর
বাবার নামঃ জামিল তালুকদার
পেশায়ঃ ব্যারিষ্টার।
মায়ের নামঃ সাথী খানম।
বাবা ও মায়ের একমাত্র সন্তান হওয়ার কারণে আদরে বাঁদর হয়েছে।
রূপে অন্যান্য। প্রথম দেখায় যে কারো মন হনন করার মতো রূপ আছে তবে মেয়েটা জেদি, বেয়াদব ও বদমেজাজি।
বড়দের সম্মান করতে জানে না।
বাবা ও মা মেয়ের নাম জেসমিন রেখেছে কিন্তু মেয়ের কাছে
এ নাম সে কালে মনে হয়েছে। তাই সব খানে তার নাম জেসমিনকে কেটে কুটে জেসিকা দিয়েছে।
উকিল সাহেব মেয়ে নিয়ে একটা সমস্যায় পড়ে তাইতো মারুফের কাছে তার জেদি বেয়াদব মেয়েকে বিয়ে দিয়ে শান্তিতে হয়তো এখন নাকে তেল দিয়ে ঘুমাচ্ছে।

আর মারুফের বিয়ে হবার কথা ছিলো ওঁর মামাতো বোনের সাথে।
কিন্তু চাচ্চু একটা মিথ্যা খুনের মামলায় জরিয়ে গেল বাবার উকিল বন্ধু তাদেরকে সাহায্য করে চাচ্চুকে বের করতে।
তখন দাদু আবেগপ্রবণ হয়ে বাবার বন্বুকে কথা দেয় জীবনে কখনো তার বিপদে প্রয়োজন পরলে আমাদের পরিবার তার যে কোনো বিপদে এগিয়ে আসবে।
সেই কথা রাখতেই মারুফের জেসিকাকে বিয়ে করতে হয়েছে।

এদিকে মারুফ কয়েক বার ফোন করেও জেসিকার বাবাকে পেল না।
যৌথ পরিবার হওয়াতে রুমের বাহিরে বেশিক্ষণ থাকতে পারল না ভয়ে যদি কেউ দেখে তাহলে কি উত্তর দিবে।
মারুফ তো এমন ,,,,

বিঃদ্রঃ লেখায় ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
লাইক ও কমেন্ট করে সঙ্গে থাকবেন।
আপনাদের সাপোর্ট আমাকে লেখতে সাহায্য করে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here