শেষটা_সুন্দর পর্ব__০৬
#অজান্তা_অহি (ছদ্মনাম)
রাতের বেলা এলোমেলো গতিতে প্রায় দৌঁড়ে চলেছে নির্ঝর।সুনশান রাস্তাঘাট।জনমানবের চিহ্ন টুকু নেই।সবাই গভীর ঘুমে।সিলেটের এদিকটা মোটামুটি শহর অঞ্চলের মতো হলেও রাতের বেলা রাস্তাঘাট একদম ফাঁকা।রাতের ঢাকা শহরের মতো জীবন্ত নয়।অনেকটা দূরত্ব নিয়ে নিয়ে একটা করে ল্যাম্পপোস্ট।ল্যাম্পপোস্টের সোনালি হলুদ আলোয় নির্ঝর খুঁজে চলেছে তরীকে!
দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে ক্লান্ত হয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো সে।এক হাতে হাঁটুতে ভর দিয়ে মাথা চেপে ধরে রইলো কিছুক্ষণ।মাথা ব্যথায় টনটন করছে!একটুপর সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে হাতের ফোনটার পাওয়ার বাটন অন করলো।রাত একটা বাজতে চললো প্রায়!এতক্ষণ যাবত সে আশপাশের এলাকাসহ যাবতীয় পরিচিত জায়গা তরীকে খুঁজেছে।কাছের সমস্ত সিএনজি স্টেশন,মোড়ের দোকান,বাস স্টেশন সহ সব জায়গা তরীকে খুঁজেছে।কিন্তু কোথাও তরীর হদিস মিলছে না।
নির্ঝরের বিধ্বস্ত চেহারা!মাথার চুল অগোছালো।কিছু চুল ঘামে কপালে লেপ্টে আছে।পরণের পাঞ্জাবি ঘামে শরীরে মিশে গেছে।হঠাৎ করে দু হাতে মুখ ঢেকে ফেলল।সে হারিয়ে ফেলেছে তরীকে।চিরতরে!তার জীবনতরী খেই হারিয়ে অথই সমুদ্রের বুকে তলিয়ে গেল আজ।সে আর বাঁচবে না।বাঁচতে পারে না।জীবনতরী ছাড়া জীবনসমুদ্র পাড়ি দেওয়া সম্ভব নয় যে!
পাঞ্জাবির পকেটে রাখা ফোন বেজে উঠলো।দ্রুত হাতে নিয়ে সে রিসিভ করলো।বড় মা ফোন করেছে!সে কানে ধরে বলল,
‘হুঁ, বড় মা!’
ফোনের ওপাশে মমতাজ বেগমের উদ্বিগ্ন গলা শোনা গেল।উত্তেজিত কন্ঠে বলল,
‘নির্ঝর, তরীর কোনো খোঁজ পেয়েছিস?’
নির্ঝর অগোছালো ভাবে বলল,
‘না বড় মা।’
‘সে কি?কোথায় গেল মেয়েটা?তরীটা যে কি এক কান্ড করে বসলো!আমার চিন্তায় গলা শুকিয়ে আসছে।কি করবো এখন নির্ঝর?পরিস্থিতি এমন যে কাউকে জানাতেও পারছি না।আমিও ইতিমধ্যে লোক লাগিয়েছি খোঁজার জন্য।’
‘বড় মা, দয়া করে বেশি মানুষকে জানাবেন না প্লিজ।আমি তরীকে খুঁজে বের করবো।কিন্তু ওর চরিত্রে ছিটেফোঁটা কালি লাগতে দিবো না।’
‘আমি বিশ্যস্ত মানুষকে বলেছি।ও নিয়ে তুই চিন্তা করিস না।’
নির্ঝর পায়ের উপর ভর দিয়ে ফ্লোরে বসে পড়লো।হঠাৎ করে সচকিত হয়ে বলল,
‘জীবন ভাইয়া এসেছে?ওদিকের কি অবস্থা?’
‘সব আমার নিয়ন্ত্রণে আছে।কেউ কিছু বুঝতে পারেনি।কাজীকে ফোন করে আসতে বারণ করেছি।বাড়িতে বলেছি এত রাতে ভালো কাজী পাওয়া যাচ্ছে না।তাই আজ বিয়েটা হবে না!এদিকের কথা ছেড়ে দে।তুই আরো খোঁজাখুঁজি কর।সব জ……’
মমতাজ বেগমের বাকি অংশ নির্ঝরের কর্ণকূহরে প্রবেশ করলো না।সে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে কান খাড়া করে আছে।দূর থেকে ট্রেনের মৃদু হুইসেল কানে আসছে।অত্যন্ত ক্ষীণ ভাবে!কাছেই রেলস্টেশন।আসল জায়গাতেই তো খোঁজা হয়নি!
এক লাফে উঠে দাঁড়ালো সে।উঠেই সামনের দিকে দিল একছুট।ক্ষীপ্র কন্ঠে বলল,
‘বড় মা রাখছি।পরে ফোন করবো।’
রাতের আঁধারে নির্ঝর দৌঁড়ে চলেছে।দ্বিকবিদিক ভুলে সে ছুটছে।যত এগোচ্ছে ট্রেনের হুইসেলের শব্দ কানে তত প্রকট হচ্ছে।রাত একটা বাজতে চললো।ঢাকাগামী রাতের শেষ ট্রেন ছাড়ার সময় হয়ে গেছে।তাকে এই ট্রেনে উঠতে হবে।এই ট্রেনেই প্রতিটি বগিতে তরীকে শেষ খোঁজা খুঁজতে হবে।
নির্ঝর যখন প্রাণপণে দৌঁড়ে রেলস্টেশনের প্ল্যাটফর্মে পৌঁছালো ততক্ষণে ট্রেন ছেড়ে দিয়েছে।প্ল্যাটফর্মে মানুষ নেই।সবাই বাঁদরের মতো জীবন মরণ হাতে নিয়ে ট্রেনের দরজা ধরে ঝুলে আছে।চলন্ত ট্রেনের এ দরজা থেকে ও দরজা!দ্বিকবিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে সে ট্রেনে উঠার চেষ্টা করলো।কিন্তু তার ট্রেনে জার্নি করর অভ্যাস নেই।অনেক ছোটাছুটি করেও একটা পা রেখে কিছু একটা ধরে ঝুলে পড়ার জায়গাটুকু পেল না।
ট্রেনের বেগ ক্রমেই বেড়ে চলেছে।ঢাকা অন্তর্গামী শেষ ট্রেন সর্পিল গতিতে বাঁক নিয়ে এগিয়ে চলেছে।নির্ঝরের ছুটে চলা শক্তির চেয়ে ট্রেনের ছুট বেড়ে গেল।শেষ বগির দরজাতেও তিল পরিমাণ ঢোকার জায়গা পেল না সে।অসহায় মুখে পরের বগির দরজার দিকে তাকিয়ে দেখে ট্রেন শেষ।এটাই শেষ বগির দরজা!তার ভাবনার মাঝে সাই করে অদৃশ্য হয়ে গেল রাতের শেষ ট্রেন।ছুটে চলল নবদিগন্তে।
নির্ঝরের শরীরের সমস্ত ভর ছেড়ে দিল।এলোমেলো গতিতে এগিয়ে গিয়ে রেলওয়ের প্ল্যাটফর্মে পা ঝুলিয়ে বসে পড়লো।চারিদিক নিশ্চুপ।নিরিবিলি।রাতের এই স্টেশনের সর্বত্র একটা মন ভাঙ্গার গল্পে ছেয়ে গেল যেন!চারপাশ মন খারাপের হাহাকারে ভরে উঠলো।বাতাসের সাথে সাথে হৃদয় পোড়া গন্ধ মিশে কটু হয়ে উঠলো।
পাঞ্জাবির হাতা গুটিয়ে হাুঁটুর উপর মাথা রেখে চোখ বন্ধ করলো নির্ঝর।জীবন কত অদ্ভুত।জীবনের সবটুকু রঙ যার জন্য ধুয়ে মুছে, যত্ন সহকারে রেখেছিল, সে নতুন রঙের ছটা না দিয়ে তার রঙটুকু শুষে নিয়ে উধাও হয়ে গেল।সে রঙহীন সাদা কালো জীবনটা কি করে পাড়ি দিবে?কি করে?
কেটে গেছে অনেক সময়।মাতাল বাতাসের ঝাপটা এসে ছুঁয়ে দিয়ে যেতে নির্ঝর ব্যথাতুর মাথাটা আস্তে করে উঠাল।কিছুক্ষণ রেলওয়ের দিকে চেয়ে রইলো।তারপর উদ্ভ্রান্ত দৃষ্টি মিলে আশপাশে তাকাল।হঠাৎ করেই তার চোখ আটকে গেল রেলওয়ের অপজিটের প্ল্যাটফর্মের যাত্রীছাউনিতে বসে থাকা মূর্তিটির উপর।বিমূঢ় হয়ে অসহায় মুখে বসে আছে একটা মেয়ে।এই মুখাকৃতি নির্ঝরের খুব পরিচিত।রাতের পর রাত সে এই মুখ দেখে কাটিয়েছে।সেজন্য দূর থেকে আবছা আলোতেও মুখটা দেখে তার চিনে ফেলতে বিন্দুমাত্র বেগ পেতে হলো না।মেয়েটা যে তরী সেটা বুঝতে পেরে মুখে প্রাপ্তির হাসি ফুটে উঠলো।
দু হাতে মুখ ঢেকে হু হু করে কেঁদে ফেলল নির্ঝর।নিজের প্রাণভোমড়া যেন পুনরায় দেহে ফিরে এলো।সে তরীকে হারিয়ে ফেলেনি।আর হারাতে দিবে না।কিছুতেই না!সে আরো কিছুদিন বাঁচতে চায়।এই রুপ, রস, গন্ধ ভরা পৃথিবীতে আরো কিছুদিন প্রাণভরে নিঃশ্বাস নিতে চায় সে।আর তার বাঁচতে হলে,আরো কিছুদিন শ্বাস নিতে চাইলে এই মেয়েটিকে তার পাশে প্রয়োজন।তাকে ছাড়া সে বাঁচবে না।
পাঞ্জাবির সামনের পিঠ তুলে চোখ মুখ মুছে ফেলল নির্ঝর।কলার টেনে উপরের বোতাম গুলো ঠিকমতো লাগল।হাতা ঠিক করে মাথার চুলগুলো হালকা করে গুছিয়ে নিল।নিজেকে ফিটফাট করে লম্বা একটা শ্বাস নিল।যথাসম্ভব স্বাভাবিক রেখে সে যাত্রীছাউনির দিকে এগিয়ে গেল।
ইট, সিমেন্টের তৈরি লম্বামতো বসার জায়গাটাতে তরী মূর্তির ন্যায় বসে আছে।চোখ মুখ ভয়ানক ফোলা।গালে পানির শুষ্ক বলিরেখা এখনো স্পষ্ট।পরণে গ্রে কালারের একটা থ্রি পিস।লম্বা বেণী করা মাথাটা ওড়না দিয়ে ঢেকে আছে।পাশেই কাপড়ের তৈরি অল্প দামী একটা ব্যাগ।
নির্ঝর নিঃশব্দে পা ফেলে এগিয়ে গেল।তরীর থেকে বেশ দূরত্ব নিয়ে বসে পড়লো।তরীর মধ্যে কোনো প্রতিক্রিয়া ঘটলো না।তার পাশে যে কেউ বসে পড়েছে তা টের পায়নি।নির্ঝর বেশ বুঝতে পারলো তরী নিজের খেয়ালে নেই।
সে স্মিত হেসে ফেলল।অতিশয় স্বাভাবিক ভাবে বলল,
‘হাই!’
রাতের নিস্তব্ধতার বুক চিঁড়ে পরিচিত কন্ঠ কানে যেতে আঁতকে উঠলো তরী।চমকে পাশে তাকাল।নির্ঝরকে স্বাভাবিক দেখে বিস্ফারিত নয়নে বলল,
‘আপনি!’
নির্ঝর হাত পা ছড়িয়ে আড়মোড়া ভাঙার ভঙ্গি করলো।তরীর দিকে না তাকিয়েই বলল,
‘কেন তোমার আশিককে আশা করেছিলে?’
তরী নিশ্চুপ হয়ে গেল।নির্ঝরকে অবাক করে দিয়ে হঠাৎ সে ভেউ ভেউ করে কান্না শুরু করলো।নাক টেনে বলল,
‘হারামজাদা এখনো আসছে না।আসবে না বোধ হয়।আমাকে আসছি বলে ফোন বন্ধ করে ফেলেছে।কতকাল হলো ট্রাই করছি।কিন্তু ফোন বন্ধ।’
নির্ঝরের প্রচন্ড হাসি পেল।কি যে ভালো লাগছে!আশিক নামক ছেলেটাকে ধরে ডজন খানেক চুমু খেতে ইচ্ছে করছে।সে সাবধানে মুখ ঘুরিয়ে তরীর দিকে তাকালো।তরীর কান্নারত মুখ দেখে বুক কেঁপে উঠলো তার।হার্টবিট বেড়ে গেল।এতক্ষণে তার পানির তৃষ্ণা পেল।রাতের আঁধারে গাল লাল করে নাক টেনে টেনে কান্না করা মেয়েটির আরেক দফা প্রেমে পড়লো সে।তার চাহনিরত অবস্থায় তরী নাক ঝেড়ে ওড়নার এক অংশে মুছে ফেলল।
নির্ঝরের নাক মুখ কুঁচকে গেল।দ্রুত পকেট হাতড়ে টিস্যু খুঁজলো।হতাশ হয়ে দেখলো নেই!
তরী আবার কাঁদতে কাঁদতে বলল,
‘আশিক এখনো আসছে না কেন?ও বলেছিল আমাকে না পেলে সারাজীবন চিরকুমার থেকে যাবে।আমার জন্য হাত পর্যন্ত কেটেছিল।এই তো কিছুদিন আগে আমায় যখন পাত্রপক্ষ প্রথম দেখতে আসে তখন ওর সে কি কষ্ট!কষ্ট পেয়ে আমার ফোন তুলছিল না।কান্না করে বলেছিল, আমার বিয়ে হয়ে গেলে ও ফ্যানের সাথে লটকে পরবে।তাহলে আশিক আজ আসছে না কেন?বজ্জাত ছেলে।’
তরীর কান্নার বেগ বেড়ে গেল।নির্ঝর বিড়বিড় করে বলল,
‘তরীকুমারী!আশিক তোমার একার আশিক নয়।সে হাজারো মেয়ের আশিক।সে গণআশিক!’
তারপর স্পষ্ট কন্ঠে ধমকের সুরে বলল,
‘ভেউ ভেউ করে কান্না বন্ধ করো না তো।কান্না করার জন্যও সুরেলা কন্ঠ প্রয়োজন।যা তোমার নেই তরী।উল্টো তোমার এই ভাঙা রেকর্ড আমার কানের সব উপকারী ব্যাকটেরিয়া মেরে ফেলছে।কান্না থামাও!’
তরীর কান্না কিছুটা কমে এলো।একেবারে নির্মূল হলো না।থেকে থেকে তার শরীর কেঁপে উঠছে।একের পর এক হিঁচকি তুলে যাচ্ছে।নির্ঝর একটু এগিয়ে এলো।আধ হাত দূরত্ব বজায় রেখে প্রশ্ন ছুঁড়লো,
‘কত মাসের সম্পর্ক?’
‘আজ দিয়ে দুই মাস সাতাশ দিন।আর তিনদিন পর আমাদের থার্ড মান্থ এনিভার্সিরি!’
‘উঃ মাগো!এত দিনের রিলেশনশিপ।আমি শিহরিত।আরো মাস দুয়েক আগে পালানো উচিত ছিল।’
তরী অদ্ভুত দৃষ্টিতে নির্ঝরের দিকে তাকাল।চোখের দৃষ্টি সরু করে কপাল কুঁচকে বলল,
‘আপনি কি ব্যঙ্গ করছেন?’
‘নাহ!একদম না।দাঁড়াও এক সেকেন্ড।আমি আসছি।’
নির্ঝর উঠে দাঁড়ালো।পকেট থেকে ফোন বের করে কিছুটা দূরে গেল।তরীর আড়ালে বড় মাকে ফোন করে বলল,
‘আসসালামু আলাইকুম বড় মা!’
নির্ঝরের অতিরিক্ত স্বাভাবিক কন্ঠ শুনে ফোনের ওপাশ থেকে চিন্তিত কন্ঠ ভেসে এলো।রুদ্ধ কন্ঠে বলে উঠলো,
‘নির্ঝর, তরীর কোনো খোঁজ পাসনি?’
‘হুঁ বড় মা!আমার সাথেই আছে।’
‘আহ!বাঁচলাম।মেয়েটা এত অবুঝের মতো একটা কাজ করে বসেছিল।আর ওই ছেলেটা?ওই ছেলেটার কি খবর?ও কি সাথে আছে?’
‘না বড় মা।আশিক বিয়ের কথা শুনে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছে।ফোন বন্ধ রেখে তরীর সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে।’
‘আমি ধারণা করেছিলাম এমন কিছু। আশিকের মতো ছেলেরা কোনো মেয়ের দায়িত্ব নিতে পারে না।তারা বিয়ের মতো পবিত্র সম্পর্ক বহনের যোগ্যতা রাখে না।’
নির্ঝর মাথা নেড়ে বলল,
‘বড় মা আপনি এক কাজ করুন।বাসার সবাইকে জানিয়ে দিন যে, আমি তরীকে জোর করে নিয়ে পালিয়েছি।কারণ আমার ছোটবেলা থেকে পালিয়ে বিয়ে করার ইচ্ছে ছিল।সেই ইচ্ছেকে প্রাধান্য দিয়ে কাজটা করেছি।সবার কাছে ক্ষমাপ্রার্থী সেজন্য।আর আমি আজ রাতেই তরীকে নিয়ে ঢাকা ফিরে যাচ্ছি।বাবা-মা জীবন ভাইয়ার বিয়ে শেষ করে আসুক।’
মমতাজ বেগম কিছুক্ষণ চিন্তা করে বললেন,
‘সে না হয় বললাম।কিন্তু?’
নির্ঝর সামান্য ঘুরে দাঁড়াল।তরীর দিকে চেয়ে বলল,
‘আমি তরীকে কাজী অফিস থেকে বিয়ে করে নিব বড় মা।আপনি শুধু ওদিকটা সামলান।আর সবাইকে যা বোঝানোর এমন করে বুঝাবেন যেন কেউ তরীকে ভুল না বোঝে।প্লিজ!’
‘ঠিক আছে।তোরা সাবধানে থাকিস বাবা।’
নির্ঝর কান থেকে ফোন নামাল।কিছুক্ষণ এক দৃষ্টিতে তরীর দিকে তাকিয়ে রইলো।তার চোখে মুখে খুশির ঢেউ খেলে যাচ্ছে।সুখের বাঁধ ভাঙা প্লাবনে ভেসে চলেছে সে জীবনতরীতে!তরী ভেজা চোখে তার দিকে তাকাতে নিজের খুশি ভাবটা লুকিয়ে ফেলল। গম্ভীর ভাবে সে তরীর দিকে এগিয়ে গেল।তরীর সামনে দাঁড়িয়ে বলল,
‘চলো!’
‘কোথায় যাব?’
‘কাজী অফিসে।’
তরী চমকে বলল,
‘কেন?’
‘কাজী অফিসে কেন যায় মানুষ?দাওয়াত খেতে?বিয়ে করবে চলো।’
‘ক-কাকে বিয়ে করবো?আশিক তো আসলো না।’
নির্ঝর একটা হাই তুলে বলল,
‘আশিক আসেনি তো কি হয়েছে?পাত্র তো তোমার হাতে।ওই যে ফোন!বাটন ফোন।আশিকের দেয়া ফোনকে বিয়ে করবে তুমি।’
‘কিহ!মাথা খারাপ হয়ে গেছে আপনার।’
‘না!মাথা ইজ টোটালি ফাইন।আগেকার পৌরাণিক কাহিনীতে শোনোনি?বর কোনো কারণে বিয়েতে অনুপস্থিত থাকলে বরের ব্যবহৃত জিনিস বা তার থেকে পাওয়া কোনো জিনিসের সাথে বিয়ে পড়িয়ে দেওয়া হতো।আজ আমি সেটাই করবো।আশিকের অনুপস্থিতিতে তার দেয়া অতি প্রিয় ফোনটাকে বিয়ে করবে তুমি।আজ রাত থেকে ওই ফোনই হবে তোমার স্বামী।আমি সাক্ষী থাকবো।আর দেরি করো না।চলো! চলো!আমি নির্ঝর শাহরিয়ার।ওয়ান ওয়ার্ড ম্যান।তোমাকে ফোনের সাথে বিয়ে না দেওয়া পর্যন্ত আমি জল স্পর্শ করবো না।’
(চলবে)
তরী আর তার আশিকের দেয়া বাটন ফোনের বিয়েতে সবাইকে দাওয়াত রইলো।😒🌚