শুভ্রনীড়
পর্ব১১
#Shamu_Choudhury

আমান শুভ্রার হাত ধরে তাকে নিচের ফুল বাগানে অবস্থিত দোলনায় এনে বসায়। বসিয়ে বলে

তোমাকে এসব নিয়ে ভাবতে হবেনা ছায়াবিনী৷ আমি আছি এইগুলার জন্য। তুমি শুধু আমাকে ভুল বুঝোনা৷ আর সামিহার সাথে বাহিরে যাবানা। গেলেও আমাকে বলে যাবা।

আচ্ছা আচ্ছা ঠিক আছে। আর কিছু? আর কি করা লাগবে??

তোমাকে আদর করবো। আর তুমি আমার সব আদর গুলা আবার পুষিয়ে দিবা।

শুভ্রার মুখে লজ্জার আভা দেখা দিলে। আমান হেসে উঠে আর বলে
আমার একটু কাজ আছে ছায়াবিনী। আমাকে যেতে হবে। তুমি নিজের খেয়াল রেখ আমি মেরু কে পাঠাচ্ছি। ওর সাথে গল্প কর।
এই বলে আমান চলে যায়।
শ্রাবণ আমানের সাথে বাহিরে বের হবে তাই রেডি হচ্ছে। আর তার যা যা লাগতেছে মিরা সব তাকে এনে দিচ্ছে। তারা দুজনেই দুজন কে অনেক আগে থেকে ভালোবাসে তবে মুখ ফুটে বলতে পারেনা মিরা ভাবে শ্রাবণ তাকে শুধু বন্ধু ভাবে তাছাড়া কিছু না। শ্রাবণ এর ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম কিছু না।

মেরু টাই টা লাগিয়ে দে। আমি ডকুমেন্টস গুলা দেখি কিছু বাদ পরল নাকি।

মিরা কি করবে ভেবে পায়না৷ এর আগেও সে টুকটাক কাজ করে দিয়েছে কিন্তু এত কাছে গিয়ে তাকে সাহায্য করেনি। তাই এই মুহুর্তে কি করবে সেইটা ভেবে পায়না এমন ভঙ্গি ধরে দাঁড়িয়ে থাকে যে শ্রাবণ যেন বুঝে তার কথা মিরা কর্ণপাত করেনি। পরক্ষণেই শ্রাবণ আবার বলে উঠে,

এই মেরু? আমাকে ইচ্ছাকৃত ভাবে অগাহ্য করতেছিস নাকি?? এইটা কিন্তু ঠিক না।

আরে এতক্ষণ তো তোর কাজগুলোই করে দিচ্ছি। তাহলে তোকে ইগনোর কখন করলাম? তোর মত ছেলেকে আমি সাহায্য করেছি এইটাই অনেক। আমার শুকরিয়া আদায় করতে পারিস কিছু মনে করবো না।

মিরা কথা টা বলে হাত দিয়ে তার চুল পিছনে দিয়ে উল্টো দিক হয়ে ভাব নেয়।

এহহহহ ঢং। দূর হ। দরকার নাই তোর মত ফাজিল রেএ। আমার জন্য আমার বউ আছে তোকে লাগবেনা৷ আর আমার বউ কে দেখবি??তোর থেকে কিন্তু অনেক সুন্দর।

শ্রাবণ এর কথা শুনে মিরার বুক ছ্যাত করে উঠে। সে ভাবে তাহলে কি শ্রাবণ তাকে ভালোবাসেনা? সে কি জানেনা তার মেরু তাকে অনেক ভালোবাসে। ছলছল চোখে শ্রাবণ এর দিকে তাকায়। শ্রাবণ ডকুমেন্টস চেক করায় তার দিকে খেয়াল করেনা। মিরা বাকরুদ্ধ হয়ে যায়। কি বলবে সে?? কিছু বলার আগেই আমানের ডাক পরে। মিরাকে নিচে শুভ্রার কাছে যেতে বলে। সাথে সাথে মিরা নিচে চলে যায়। নিচে গিয়ে দেখে শুভ্রা শুকনো মুখে বসে আছে। সে শুভ্রা কে গিয়ে বলে

আরে ভাবী। আপনি এখানে একা কেন বসে? সামিহা নাই যে। উনার সাথে আমার তেমন কথায় হয়নি। একটু পরিচিত হতাম।

ওর কথা বাদ দেও মিরা। আমাকে বলত আমার সম্পর্কে তুমি কি কি জানো?? আর আমার চাচ্চু সম্পর্কে ওরা তোমায় কি কিছু বলেছে? ওরা আমাকে কিছু বলতে চায় না মিরা। এই কথা গুলো বলে শুভ্রা নিচের দিকে তাকায় তার চোখ থেকে দুই ফোটা অশ্রু কণা গাল বেয়ে গড়িয়ে পরে। মিরা তার হাতের উপর হাত রেখে বলে

জানো? আমি যখন ইউভী(আমান) কে দেখছিলাম ইউভী এর সম্পর্কে যা যা জেনেছিলাম তার থেকে বেশি তোমার সম্পর্কে জেনেছি। ওই শুধু তোমার কথা বলত। বলতো আমার তোদের একটা করে ছায়া আর আমার দুইটা ছায়া যে আমাকে সবসময় ভালো থাকতে শিখায়। ভালোবাসতে শিখায়। এই সব অনেক কিছু বলে। শুভ্রা হা হয়ে শুনতে থাকে।
এক পযার্য়ে মিরা বলে,
ইউভী কয়েকদিন আগে একটু ডিপ্রেশনে ছিল। কিন্তু তুমি তাকে সেখান থেকে বের করেছো অনেক গুলা ধন্যবাদ বনু।

বুঝলাম না মিরা। কিসের কথা বলতেছো? আমার তো কয়েকদিন হল বিয়ে হয়েছে। আর উনাকে দেখে সে রকম মনেই হয়নি।আর উনি কিসের জন্য ডিপ্রেশনে ছিল??

এমা তুমি জানোনা?? তোমার বিয়ের পরেরদিন ই তো তাকে পাওয়া গেছিল না সে গিয়েছিল সুইসাইড ফরেস্ট এ৷

এতটুকু শুনেই শুভ্রা কেঁপে উঠে। সে ভাবে আবার উনি সুইসাইড ফরেস্ট এ গিয়েছিল?? তাই শুভ্রা মিরা কে বলে,,

কোন ফরেস্টে গিয়েছিল? জার্মান যেই ফরেস্ট আছে সেইটাতে?? আর কেন গিয়েছিল?

মিরা বলে,,
না। জাপানের টাতে। আর তোমার চাচ্চুর খুনের ভিডিও ক্লিপ নিতে গিয়েছিল। কিন্তু সেখান কার কিছু আদিবাসী তাকে বন্দি বানিয়েছিল। তাই তো তার খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিলো না।

শুভ্রা এইবার ভয় পেয়ে যায়।ইউভী এত কিছু করেছে? তাকে না বলে? এই জন্য সে বলে তাকে কোন চিন্তা করতে হবেনা। কিন্তু এইভাবে চললে তো ইউভীর ক্ষতি হবে৷ সে ভাবে সেই খুনি কে খুজে বের করবে তাই সে বলে উঠে,,

সেই ক্লিপ কি তোমার কাছে আছে মিরা?? আমাকে দেখাতে পারবে??প্লিজ না বলোনা

আমার কাছে নেই তবে ইউভীর ল্যাপটপে আছে। উপরে চল তোমাকে দেখায়। এই বলে শুভ্রা কে মিরা উপরে নিয়ে যায়।

____
আচ্ছা তোমার মাঝে আর আমানের মাঝে এমন কোন পার্থক্য আছে? যেইটা দেখে শুভ্রা বুঝে যাবে আসল ইউভী কে???

(সামিহা আসার পর থেকে আমানের পর্দা ফাঁস করতে চাচ্ছে। কিন্তু সব পথ যেন বন্ধ। কাজটা এমন নিখুঁত ভাবে করতে হবে যাতে তাকে কেউ সন্দেহ না করে। আর যদি সে হুট করেই কিছু করে বসে এতে তার ই ক্ষতি হবে। তারপর অনেক ভেবে সে ইউভী কে ফোন করে আগের কথা বলে)

যখন তখন ফোন করে বিরক্ত করো কেন সামিহা?? আমার ভালো না।( ইউভী বিরক্তিকর কন্ঠে বলে)

এই শোন এখন কেন বিরক্ত লাগবে তোমার?? আগে মনে ছিল না? তুমি তো অনেক বড় লোভী যার জন্য এত খুন করেছো। আর এখন ভালো হতে চাচ্ছ। যা বলেছি উত্তর দাও। যে নিজের বাবা কে খুন করতে চায় সে আর যাই হোক ভালো হতে পারেনা।
সামিহা রাগ্বানিত স্বরে ইউভী কে বলে৷ কথা গুলো শুনে ইউভীর অনেক মন খারাপ হয়। আসলেই তো সে একটা পশু। না না পশু না পশুর চেয়েও নিকৃষ্ট। না হলে যে তাকে এত ভালো বাসতো তাকে সে কিভাবে খুন করল।
ইউভী জানে তার আর আমানের মাঝে এমন এক পার্থক্য আছে যেইটা তে তাদের না দেখেও সহজেই বলা যাবে কে ইউভী আর কে আমান। তবুও সে সামিহাকে সাফ জানিয়ে দেয় সে কিছু জানে না৷ ইউভী ভাবে সে সব কিছু ঠিক করতে পারবেনা তবে নিজেকে শেষ করে দিতে পারবে। এই ভেবে সে রেইনবো ব্রিজ এর দিকে এগোয়। এত দিন অনেক মানুষ এই ব্রিজ এ তার শিকার হয়েছে। আজ সে নিজেকে বলি দিতে চায়। এইভাবে থাকা বড় দ্বায়।)

আমান আর শ্রাবণ ইউভী কে খুজতে বের হয়েছে। তারা জানতে চায় কিভাবে ইউভী নিজের বাবা কে খুন করতে পারলো?? এত নিকৃষ্ট কেন হতে গেল?? এই সব ভাবতে ভাবতে আনমনেই আমানের চোখ হতে পানি পরতে লাগলো। তারা খোঁজ পেয়েছে ইউভী আগে কোথায় থাকতো। সেখানে গিয়ে তারা ইউভী কে পায়নি। মনে হয়েছে সে রুম টাতে অনেকদিন যাবৎ কেউ থাকে। রুমে সে রকম কিছু পাওয়াও যায়নি পুরো রুম ধূলিকণা তে পরিপূর্ণ ছিল৷ কিন্তু একটা দেয়ালে শুধুই একটি জায়গার ছবি বার বার ছিল। আমান আর শ্রাবণ দুজনেই সেই জায়গা টা ভালো খুব ভালো ভাবে চিনে৷ তাই এখন তারা সেখানে যাচ্ছে।

____
আজকে ইউভীর নিজেকে বড্ড অসহায় মনে হচ্ছে৷ সে মারা গেলে তার জন্য কেউ কি কাঁদবে?? না তার তো কেউ নাই। হয়ত আমান কাঁদবে। আর শু? শু তো তাকে ছোট বেলায় দেখেছিল এখন সে জানতেও পারবেনা তার খেলার সাথিটা আর নেই। আর সে তো আমান কেই ইউভী ভাবে সত্যি টা হয়ত জানবেনা আবার জানতেও পারে। আমান যদি জানায়। এই সব ভাবতে ভাবতে ইউভী রেইনবো ব্রিজ এর কর্ণারে দাঁড়ায়। আর সেখানে উঠে পরে একটু নরচর করলেই সে পরে যাবে। এতদিন ব্রিজ টার সবচাইতে উচুঁ জায়গাতে চড়ে কত মানুষ কে সে খুন করেছে৷ তার মনে একটুও দয়া মায়া কাজ করেনি। এইতো এ্যালেক্স বলেছিল তার ছোট ছোট বাচ্চা আছে। তাকে যেন সে দ্বিতীয় সুযোগ দেয় কিন্তু ইউভী তা করেনি। এই সব ভাবতে ভাবতে এক সময় ইউভী জোরে জোরে চিৎকার করে কাঁদতে থাকে। তার পকেট থেকে ছুরি বের করে নিজের হাতে নিজেই চালিয়ে দেয়। হাত থেকে অনবরত রক্ত ঝরঝর করে পরতেই তাহকে মুহুর্তে তার পায়ের নিচে রক্তে লাল হয়ে যায়। আস্তে আস্তে তার দেহ নিস্তেজ হয়ে আসে। সে সেখান থেকে পরে যেতে লাগলেই____

চলবে???

(দুঃখিত,দুইদিন গল্প দিতে পারবোনা।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here