মেঘের_আড়ালে_মেঘ”৯”
#জেরিন_আক্তার_নিপা

রাত দশটা বাজে। আয়াম মেহরীনকে ঝাপটে ধরে ঘুমিয়ে আছে। মেহরীন নড়তে পারছে না। উঠতে গেলেই আয়াম নড়ে উঠছে। এই ঘরে এখন কেউ নেই। ইরফান দরজায় নক করে ভেতরে এলো। মেহরীনের দিকে একপলক তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নিয়ে বলল,

“অনেক রাত হয়েছে। আপনার এবার যাওয়া দরকার।”

“হুম। কিন্তু… ও তো আমাকে ছাড়তেই চাচ্ছে না। দেখুন না কীভাবে আকড়ে ধরে রেখেছে। আয়াম ওর মা’কে সত্যিই অনেক ভালোবাসে।”

কথাগুলো বলে মেহরীন নিচু হয়ে আয়ামের কপালে চুমো খেল। ইরফান কী বলবে ভেবে পাচ্ছে না। এই মেয়ের সামনে থাকলে তার এত অস্বস্তি লাগে কেন? যতক্ষণ সামনে থাকে ততক্ষণই যেন দম বন্ধ হয়ে থাকে। মেহরীন সাবধানে আয়ামের ঘুম ভাঙতে না দিয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে ওঠে পড়ল। ইরফান ওকে দেখে বলল,

“চলুন আমি আপনাকে বাসায় পৌঁছে দিচ্ছি।”

মেহরীন বাধা দিয়ে বলল,

“না,না। আমি একা যেতে পারব। আপনি ওর কাছে থাকুন। হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেলে আপনাকে খুঁজবে। আমি রাস্তা থেকে রিকশা নিয়ে নেব।”

“এই সময় রিকশা না-ও পেতে পারেন।”

মেহরীন আবারও বাধা দিতে নিলে ইরফান চোখ মুখ কঠিন করে তাকাল। এতেই কাজ হয়ে গেল। মেহরীন আর না করার সাহস পেল না।

“আচ্ছা ঠিক আছে। যাবার আগে একবার আঙ্কেলদের সাথে কথা বলে যাই?”

“হু।”

ঘর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় দরজার কাছে থেমে মেহরীন বলল,

“আয়ামের কাছে কে থাকবে?”

“হুমায়রাকে বলে গেলেই হবে।”

“আচ্ছা।”

মেহরীন নিজের ব্যাগ নিয়ে ইরফানের বাবা আর শ্বশুরের সাথে দেখা করতে গেল। ওনারা আজকের রাতটা মেহরীনকে থেকে যেতে অনেক অনুরোধ করলেন। উনাদের না করতে মেহরীনের খারাপ লাগলেও কিছু করার ছিল না। অনন্তকে না বলে সে আজ এখানে থাকলে অনন্ত তার ঠ্যাং ভেঙে ফেলবে। এমনিতেই কল না করার জন্য কোন শাস্তি কপালে ঝুলছে আল্লাহ জানে। এখান থেকে বের হয়েই একটা কল করতে হবে। নইলে কপালে দুঃখ আছে।
.
.
মেহরীনের পরের দিনটা অনন্ত কল দিয়েই শুরু হয়। কল রিসিভ করে ঘুমঘুম কন্ঠে সে হ্যালো বলার সাথে সাথে ওপাশ থেকে অনন্তর চিৎকার শোনা গেল।

“ওই কই থাকস তুই? নতুন কারে পাইছোস? পুরান হইয়া গেছি আমি? এখন আর আমারে ভাল্লাগে না? তোর ঠ্যাং ভেঙে আমার কাছে রেখে দেব। তখন আমাকে রেখে কোথাও যেতে পারবি না। পাখনা গজাইছে তোর, না? তোর পাখনা আমি কাটতেছি দাঁড়া।”

মেহরীনের সব ঘুম উড়ে গেল। সে লাফিয়ে উঠে বসতে বসতে বলল,

“কী হয়েছে তোমার? এমন করতেছ কেন? শরীর খারাপ লাগছে। এসব কী বলতেছ?”

“কী হইছে আবার জিজ্ঞেস করিস? কাল সারাদিন কই ছিলি তুই? সকালে বলছিলাম, বাসায় ফিরে আমারে কল দিতে? বলছিলাম আমি? কল দিছোস তুই? তার তো কোন খবর নাই। উল্টো এদিকে টেনশন করতে করতে আমার অবস্থা খারাপ। ওই তুই জানস, সন্ধ্যা থেকে দশটা পর্যন্ত তোর ফ্ল্যাটের নিচে দাঁড়িয়ে ছিলাম আমি? কই গেছিলি তুই? এত রাত পর্যন্ত কার সাথে ছিলি?”

“তুমি একটু শান্ত হও। আমি সব বলব। প্লিজ আগে একটু মাথা ঠান্ডা করো। আমি বাসায় ফিরেই তোমাকে কল করতাম। কিন্তু ফোনে চার্জ ছিল না। চার্জে বসিয়ে কখন যে ঘুমিয়ে গেলাম আর চোখই খুলল না। রাগ কোরো না তুমি।”

“দরজা খোল।”

“হ্যাঁ? ”

“আমি তোর দরজার সামনে। দরজা খোল তুই।”

এইরে, মেহরীন এবার কান্না কান্না হয়ে গেল। তার কপালে আজ দুঃখ আছে। এই ছেলে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে! না, না। আজ সে কোন অবস্থাতেই অনন্তর সামনে পড়বে না। অনন্ত তাকে কাঁচা চিবিয়ে খাবে। উঁহু মরে গেলেও আজ দরজা খোলা যাবে না। দরকার পড়লে সারাদিন রুমে বন্দী হয়ে থাকবে। বাইরে বেরুবে না। তবুও আজ অনন্তর সামনাসামনি হওয়া যাবে না।
মেহরীন শুনতে পেল অনন্ত দরজায় ধাক্কিয়ে ভেঙে ফেলবার উপক্রম করছে। সে দৌড়ে রুম থেকে বেরিয়ে এলো।

“মেহু দরজা খোল। ভালো হবে না কিন্তু। দরজা খোল মেহু। আমি জানি তুই আমার ভয়ে দরজা খুলছিস না। আমি কিন্তু দরজা ভেঙে ফেলব মেহু।”

মেহরীন দরজার এপাশ থেকে কাঁদো কাঁদো গলায় বলল,

“আগে তুমি কথা দাও ভেতরে এসে আমার সাথে রাগারাগি করবে না।”

“তুই দরজা খুলবি না তো?”

“খুলব। কিন্তু তুমি রাগ করতে পারবে না। বলো আমার কসম।”

“যা তোর দরজা খুলতে হবে না। আমি দরজাটাই ভেঙে ফেলব। না থাকবে দরজা, না থাকবে তোর জেদ।”

“আচ্ছা, আচ্ছা। খুলছি, খুলছি। ভেঙ্গো না প্লিজ।”

অনন্ত দরজায় লাথি দিতে যাচ্ছিল। মেহরীন দরজা খুলে দিলে অনন্ত তাকে দেখে এক মুহূর্তের জন্য থেমে গেল। তারপর হঠাৎ কী ভেবে মেহরীনকে জড়িয়ে ধরল সে। অনন্তর এমন আচরণে মেহরীন বিস্ময়ের চরম সীমায় পৌঁছে গেছে। সে মেহরীনের মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে বলল,

“তুই কেন আমার সাথে এমন করিস মেহু? কেন আমাকে বুঝতে চাস না? আমাকে টেনশন দিতে তোর অনেক ভালো লাগে, না? তোকে নিয়ে আমার কতটা চিন্তা হয় তুই কেন বুঝিস না। তোকে হারানোর ভয় আমাকে সারাক্ষণ তাড়া করে। তুই চোখের আড়াল হলে আমার পৃথিবী অন্ধকার হয়ে আসে। তুই কোনদিন এসব বুঝবি বল তো?”

মেহরীন কিছুই বলতে পারল না। এই ছেলেকে সে কখনও বুঝে উঠতে পারেনি। না কখনও পারবে। একেক সময় একেক রূপ দেখা যায় এই ছেলের। এইতো বিয়ের কথা তুললেই তাকে কেমন ইগনোর করে। এখন আবার ওর প্রতি তার এত কেয়ার।

“আমাকে হারানোর কিসের ভয় তোমার? আমি তোমাকে ছেড়ে কোথাও যাব না। কোনোদিনও না। সব সময় আমি তোমার সাথে থাকব। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত। তুমি শুধু শুধু ভয় পেও না তো। কেউ আমাকে তোমার কাছ থেকে আলাদা করতে পারবে না। আমি তোমার ছিলাম। তোমার আছি। আর ভবিষ্যতেও তোমারই থাকব।”

অনন্ত বুক ভরে শ্বাস নিয়ে মেহরীনের মাথায় চুমু দিল। এই মেয়েকে হারানোর কথা সে এখন কল্পনাও করতে পারে না। হ্যাঁ, একদিন সে টাকার লোভেই মেহরীনকে ভালোবাসার প্রস্তাব দিয়েছিল। সেটা তখন মন থেকে দেয়নি। তার লোভ শুধু মেহরীনের টাকা পর্যন্তই সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু কী থেকে যে কী হয়ে গেল, অনন্ত নিজেও টের পেল না। টাকা ফাকা সব গোল্লায়। সে এখন শুধুমাত্র মেহরীনকে চায়। তার ভাই তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার পরও যখন অনন্ত মেহরীনকে ছাড়তে পারল না। তখনই সে বুঝতে পেরেছে। নিজের অজান্তেই নিজের মধ্যে বড় একটা পরিবর্তন হয়ে গেছে। এখন সে একজন খাটি প্রেমিক।
.
.
আয়ামের ঘুম ভাঙতেই সে মাম্মীকে খুঁজছে। মাম্মীকে না পেয়ে তার কান্না শুরু হয়ে গেলে হুমায়রা, ইরফান অনেক বোঝালেও সে কারো কথাই শুনছে না। তার এক কথা,

“মাম্মী আবার কেন চলে গেছে পাপা? তুমি মাম্মীকে বকেছ? মাম্মী কেন এমন করে খালামনি? মাম্মী কি আমাকে ভালোবাসে না? আমি মাম্মীর ব্যাড বয়? তাই মাম্মী আমাকে রেখে চলে যায়। ও নানুভাই, ও দাদুভাই তোমরা মাম্মীকে এনে দাও না। প্লিজ খালামনি তুমি আমার মাম্মীকে এনে দাও।”

হুমায়রা সহ্য করতে না পেরে ঘর থেকে বেরিয়ে আসে। ইরফান ছেলেকে ধরতে গেলেও আয়াম চিৎকার করে উঠছে। কাউকে ধারের কাছে ঘেঁষতে দিচ্ছে না সে। তার এক আবদার মাম্মীকে এনে দাও। ইরফানের বাবা ছেলেকে বললেন,

“ইরফান, মেয়েটাকে আবার নিয়ে আয় না বাবা। দেখ না আয়াম কেমন করছে। আমি ওকে এভাবে দেখতে পারছি না। তুই ওই মেয়েকে নিয়ে আয় বাবা।”

“কীভাবে বাবা? ওই মেয়েকে কীভাবে আনব আমি? প্রতিদিন ওই মেয়ে কেন আসবে? আয়াম তার কী হয়? একদিন ওই মেয়ে আমার অনুরোধ রেখেছে বলে রোজ রোজ আমি ওই মেয়ের কাছে যেতে পারব না।”

“চেষ্টা করে দেখ না বাবা। ওই মেয়ে তো হামনার কথা জানে। ওকে যে হামনার মত দেখতে এটা ও নিজেও দেখেছে। আয়ামের কথা ওকে বুঝিয়ে বললে ওই মেয়ে নিশ্চয়ই বুঝবে। বিনা কারণে ও এখানে আসতে না চাইলে ওকে জবে রেখে দেব। আয়ামের দেখাশোনা করবে ও। আমার নাতিটার মা সাজার জন্য ওকে নাহয় মাসে মাসে টাকা দেব।”

ইরফান অসহায় মুখে বাবার দিকে তাকাল। তার শ্বশুরও বলল,

“ইরফান, তোমার বাবা ঠিকই বলছে। নাতিটাকে আমি এই অবস্থায় দেখতে পারছি না। মেয়েটাকে হারিয়েছি। আমরা সবাই নাহয় ওই মেয়েকে অনুরোধ করব, ও যেন আয়ামের খেলায় রাখে। হামনার মত দেখতে তো ওই মেয়ে আমার সামনে থাকলে মনে শান্তি পাই।”

ইরফান মনে মনে বলল,

“কিন্তু আমার যে কষ্ট হয় বাবা। ওই মেয়ে আমার সামনে থাকলে ভীষণ অস্বস্তি লাগে। ওকে আমি আর কখনও আমার সামনে দেখতে চাই না। ওই মেয়ে আমার হামনা না। আয়াম ওকে মা ডাকলে আমার একটুও ভালো লাগে না। হামনার জায়গায় আমি ওই মেয়েকে কল্পনাও করতে পারি না।”
.
.
মেহরীন আজ নাচের ক্লাস শেষ করে সোজা ফ্ল্যাটে চলে আসে। তার শরীরটা তেমন ভালো লাগছে না। আয়ামের কথাও ভীষণ মনে পড়ছে। নিশ্চয়ই ঘুম থেকে জেগে আয়াম তাকে না দেখে কান্নাকাটি করছে। কিন্তু তারও তো কিছু করার নেই। সে তো আর চব্বিশ ঘন্টা ওই বাড়িতে থাকতে পারবে না। সিএনজি থেকে নেমেই মেহরীন ইরফানকে দেখল। গাড়িতে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে কারো সাথে ফোনে কথা বলছে। তাকে দেখেই ইরফান ফোন পকেটে ভরে রাখল। মেহরীন এগিয়ে গিয়ে নিজে থেকেই বলল,

“আয়াম এখন কেমন আছে?”

“জ্বর নেই। কিন্তু আপনার জন্য কান্নাকাটি করছে। কারো কথাই শুনতে চাইছে না।”

“ওহ। আসলে আমি ভেবেছিলাম একবার আয়ামের খোঁজ নেব। কিন্তু…

মেহরীন ইরফানের মুখের দিকে তাকিয়ে থেমে গেল। ইরফান বলল,

” আপনার সাথে আয়ামের ব্যাপারে কথা বলতেই এসেছি। একটা জবের অফার আছে আপনার জন্য। না, অন্য কোন জব না। আয়ামের বেবিসিটার… কাল রাতে আপনি তো নিজের চোখেই দেখে এসেছেন। আয়াম আপনাকে তার মা ভাবে। যতদিন না আয়াম বুঝতে পারে তার মা বেঁচে নেই ততদিন যদি আপনি ওর দেখাশুনো করতেন… এর জন্য আপনাকে মাস শেষে স্যালারি দেওয়া হবে। এটা আপনার জন্য একটা জবই বলতে পারেন। টাকার এমাউন্টটা আপনিই ঠিক করবেন।”

এক নাগাড়ে সব কথা বলে ইরফান থামল। মেহরীন চুপ করে কিছুক্ষণ ভাবল। সে নিজেও জবের জন্য ট্রাই করে শেষে নাচের ক্লাসে যোগ দিয়েছে। এই সময় একটা চাকরি পাওয়া তার জন্য কম কথা না। লোকটা যেহেতু নিজে থেকে জবের অফার দিচ্ছে তাহলে সেটাকে ফিরিয়ে না দেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। আর তাছাড়া আয়ামের জন্য কিছু করতে পারলে তার নিজেরও ভালো লাগবে। ছেলেটা তাকে মা ডেকেছে। তবুও মেহরীন হুট করে কিছু বলল না। সে বলল,

“আমি তো অলরেডি এক জায়গায় কাজ করছি। এই জবটা নিতে হলে আমাকে আগে সেখানে কথা বলতে হবে। আর তাছাড়া পরিবার’ বলতে বলতে থেমে গেল সে। তার পরিবার নেই। তাই পারমিশন নেওয়ারও কোন প্রশ্ন আসে না। কিন্তু অনন্ত তো আছে। তার কাছ থেকে নিশ্চয়ই পারমিশন নিতে হবে।’ আমাকে একজনের থেকে অনুমতি নিয়ে নিতে হবে। সে না বললে আমি এই জবটা নিতে পারব না।”

“ঠিক আছে। তবে যা করার আজকের মধ্যেই করবেন প্লিজ। আয়ামকে সামলানো কঠিন হয়ে পড়েছে। আমার কথাও শুনছে না ও।”

“জি, আপনার কার্ড বা নাম্বার আমাকে দিয়ে যান। আমি দুপুরে আপনার সাথে যোগাযোগ করব।”

“ধন্যবাদ।”

ইরফান তার কার্ড এগিয়ে দিল। তার বুক থেকে পাথর সরে গেছে যেন। মেয়েটা এক কথায় রাজিও হয়নি। আবার সরাসরি মানাও করেনি। সে যার কাছ থেকে অনুমতি নেওয়ার কথা বলছে, ওই লোকটা অনুমতি দিলেই হলো।
.
মেহরীন অনন্তর সাথে কথা বলেছে। অনন্তকে সে সবটা আগেই বলেছিল। আজ জবের অফারের কথা বললে অনন্ত না করেনি। টাকার ব্যাপারটা যেহেতু তার নিজের হাতে তাই এই চাকরি ছাড়া বোকামি ছাড়া আর কিছু না।

“তুমি চাকরিটা নিতে বলছো?”

“অবশ্যই। বাচ্চাটা যেহেতু তোকে তার মা ভেবে তোর সব কথা শুনে তাহলে ওই ছেলেকে সামলাতে তোর কষ্ট হবার কথা না। আর তুই তো এমনিতেই বাচ্চা কাচ্চা পছন্দ করিস। এই চাকরিটা তোর জন্যই। বেতন তুই নিজের খুশি মত চাইতে পারবি। এই চাকরি না করার কোন কথাই আসে না।”

“ওই বাড়িতে আমাকে থাকতে হলে?”

“থাকবি। সমস্যা কী?”

হঠাৎ অনন্ত থেমে গেল। একটু চিন্তিত গলায় সে বলল,

“একটা কথা আমার মাথা থেকে বেরিয়েই গেছিল। তুই ওই ছেলের মায়ের মত দেখতে হলে তো ওই লোকের স্ত্রীর মতও দেখতে।”

“হুম।”

“ছেলেটা তোকে মা ভেবে ভুল করেছে ঠিক আছে। যদি ওই লোকটা তোকে বউ ভেবে ভুল করতে যায়। তাহলে কিন্তু আমি ওর চোখ তুলে ফেলব।”

“কী বলছো তুমি এসব! ওই লোক এমন না। আমার সাথে বাজে কোনও ব্যবহার করেনি। উনি তো আমার দিকে তাকিয়ে কথাও বলেন না।”

“ওই লোক এমন না!(ব্যঙ্গ করে)
তুমি দেখছি খুব লোক চেনো! একদিন দেখেই লোকটাকে সাধু সন্ন্যাসী বলে ধরে নিলে! গাধা, পুরুষ মানুষকে চেনা অত সোজা না। প্রতিটা পুরুষের ভেতরে একটা করে হায়েনা লুকিয়ে থাকে। একটু সুযোগ পেলেই কিন্তু সেই হায়েনা বেরিয়ে আসে। শুধু একটা সুযোগের অপেক্ষা। কেউ সুযোগটা পায়, কেউ পায়না। কোন পুরুষই সাধু না।”

“তুই আমাকে ভয় দেখাচ্ছ। তাহলে বলা যায় তুমিও সাধু না। তোমার ভেতরেও একটা হায়েনা লুকিয়ে আছে। সেই হায়েনা যেকোন সময় সুযোগ পেলে বেরিয়ে আসবে। আচ্ছা সেই হায়েনাটা কি আমার ক্ষতি করবে?”

“বেশি পাকামো করতে হবে না তোকে। আমার কথা আমাকে শোনাচ্ছিস। আমাকে দিয়ে তোর কখনও কোন ক্ষতির সম্ভাবনা নেই। তুই আমার কাছে সব সময় সুরক্ষিত। আমার জীবনে পবিত্র একটা ফুল তুই। যে ফুলে আমি একটুও দাগ লাগতে দেব না। একটুও অপবিত্র হতে দেব না এই ফুলটাকে বুঝলি?”

“বুঝলাম। তাহলে লোকটাকে ফোন করে হ্যাঁ বলে দেই?”

“দে। তবে নিজের নিরাপত্তার দিকটা তোকেই খেয়াল রাখতে হবে। ওই লোককে বেশি লাই দিবি না।”
.
বিকেলেই মেহরীন ইরফানের বাড়িতে নিজের নতুন কাজে জয়েন করে। আয়ামের অবস্থা এমনই হয়েছে যে মেহরীন আর একদিনও দেরি করে এলে নির্ঘাত ছেলেটা পাগল হয়ে যেত। মেহরীনকে পেয়ে তবেই সে শান্ত হয়েছে। এই বাড়িতে মেহরীনের আগমন হুমায়রা আর বুড়ো দু’জনের মুখেও হাসি ফুরিয়েছে। শুধু ইরফানই মন থেকে এসব মেনে নিতে পারছে না। মেহরীনকে দেখে বাকি সবার মত খুশিও হতে পারছে না। এই মেয়ে বারবার তাকে হামনার কথা মনে করিয়ে দেয়। মনে করিয়ে দেয় হামনা তার সাথে নেই। তার ভালোবাসার মানুষটা এই দুনিয়ার নেই। তবে ছেলের খুশিই তার কাছে সবচে গুরুত্বপূর্ণ। ছেলের জন্য হাসতে হাসতে সে সব কষ্ট গ্রহণ করে নিতে পারবে।

চলবে___
দয়া করে কেউ নেক্সট, নেক্সট করবেন না। এই একটা শব্দ ভীষণ বিরক্ত লাগে। আপনারা নেক্সট না চাইলেও আমি নেক্সট দেব। পারলে গঠনমূলক কমেন্ট করবেন। নইলে কমেন্ট করা লাগবে না।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here