#মেঘের_আড়ালে_মেঘ”১১”
#জেরিন_আক্তার_নিপা

ইরফান রাতে বাসায় ফিরে আসে। মেহরীন তখন তার নিজের ঘরে ছিল। ইরফানের গলা পেয়ে ছুটে আসে সে। ইরফান টাই খুলতে নিচ্ছিল। মেহরীনকে ছুটে আসতে দেখে দাঁড়িয়ে গেল। মেহরীন এসেই বলল,

“কিছু লাগবে আপনার? চা, কফি? ”

ইরফান আড়চোখে একবার মেহরীনকে দেখে নিল। সে ভেবে পাচ্ছে না মেয়েটা এভাবে ছুটে এসেছে কেন? আর হঠাৎ করে তাকে নিয়ে এত আদিখ্যেতাই বা দেখাচ্ছে কেন? ইরফান বিড়বিড় করে বলল,

“মেয়েদের মন বোঝা অসম্ভব ব্যাপার। এই মেয়ে মনে মনে নিজেকে হামনার জায়গায় বসিয়ে নিয়েছে নাকি? আয়াম ওকে মা ডাকে বলে ও নিজেকে আমার বউ ভাবছে। উঁহু, এই মেয়েকে লাই দেয়া যাবে না। আয়ামের জন্য একে সহ্য করতে হচ্ছে। নইলে আমি কখনও এই মেয়েকে আমার বাড়িতে থাকতে দিতাম না। কক্ষনো না।”

মেহরীন এখনও ইরফানের উত্তরের অপেক্ষা তার দিকে তাকিয়ে আছে। ইরফান তার দিকে তাকালে মেহরীন ভ্রু উঁচিয়ে জানতে চাইল,

“চা না কফি?”

ইরফান চিবিয়ে চিবিয়ে বলল,

“আমি চা বা কফি কোনোটাই খাই না।”

“ওহ। তাহলে লেবুর শরবত করে দিই?”

ইরফান বিরক্তি চেপে রেখে বলল,

“না। মিষ্টি জাতীয় কিছু খেতে পারি না আমি।”

“ওহ। আচ্ছা, তাহলে চিনি ছাড়া শুধু লেবু দিয়ে শরবত করে দিই? আচ্ছা আপনার তো মিষ্টিতে সমস্যা। তাহলে চিনির জায়গায় একটু লবণ দিয়ে শরবত করে আনি?”

ইরফান দাঁতে দাঁত চেপে রাগী চোখে তাকালে মেহরীন বলল,

“লবণেও আপনার সমস্যা! আল্লাহ! কেমন মানুষ আপনি! পানি, শুধু পানি খান তো? নাকি পানিতেও সমস্যা আছে? একগ্লাস ঠান্ডা বিশুদ্ধ পানি এনে দিই?”

ইরফান মনে মনে রাগে ফেটে পড়লেও মুখে কিছু বলতে পারল না। এই মেয়ে তো তার রাগ বুঝেই না। এর উপর চিৎকার চেচাঁমেচিও করা যাবে না। আয়ামের বেবিসিটার বলে কথা। এর উপর চোটপাট করলে আবার যদি চাকরি ছেড়ে চলে যায়। হাল ছেড়ে দিয়ে ইরফান বলল,

“জি, আনুন।”

মেহরীন খুশি হয়ে দৌড়ে ইরফানের জন্য পানি আনতে চলে গেল। ইরফান ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলল। এখন থেকে রোজ রোজ তাকে এই মাথামোটা মেয়েটাকে সহ্য করতে হবে!
টাই খুলে ছুড়ে ফেললে ইরফান চাপা রাগে চেঁচিয়ে বলল,

” অহ গড! কোথায় এনে ফেললে আমাকে। এই মেয়ের মাথা মিনিমাম এতটুকু বুদ্ধিও নেই। গর্দভ মাথামোটা মেয়ে একটা। ওকে আমি দেখতে চাই না। আমি চাই ও আমার সামনে না আসুন। এই কথাটা কি এই মেয়ে বুঝতে পারছে না? নাকি বুঝতে চাইছে না? আজকালকার মেয়ে অতটা গাধা হয় না। হতে পারে পুরোটাই এই মেয়ের নাটক।”

মেহরীন পানি নিয়ে এলে আয়ামও দাদুর ঘর থেকে এ ঘরে চলে আসে। বাবাকে দেখেই সে কোলে উঠে পড়ে। আজ সারাদিন সে কী কী করেছে বাবার সাথে সেসব গল্প করতে লাগল।
.
ইরফানের বাবা প্রতিদিন রাতে ঘুমোতে যাবার আগে এক কাপ চা খান। বাবার থেকে এই অভ্যাস ইরফানও পেয়েছে। ঘুমাতে যাবার আগে তারও চা বা কফি খেতেই হবে। নইলে ঘুম আসবে না। মেহরীন চা বানিয়ে বাবার রুমে গেলেন। উনাকে চা দিয়ে মেহরীন ঘরের এটা সেটা গুছিয়ে রাখছে। বাবা বললেন,

“ইরফানকে চা দিয়েছ?”

মেহরীন ফুলের টবের কাছে ছিল। বাবার দিকে না ফিরেই সে বলল,

“উনি চা খান না।”

বাবা চায়ের কাপে চুমুক দিয়েছিলেন মাত্র। মেহরীনের কথা শুনে কেশে ফেলে বললেন,

“কে চা খায় না! ইরফান?”

“হুম।”

“কে বলেছে তোমাকে? ইরফান আমার থেকেও বেশি চা খোর। সন্ধ্যার পর কম করে হলেও ইরফান পাঁচ কাপ চা খায়।”

বাবা হাসছেন। মেহরীন কথাটা বলে এখন বোকা হয়ে গেল। মনে মনে রেগে আগুন হয়ে যাচ্ছে সে। লোকটা কী ভীষণ বাজে! আল্লাহ! এমন মিথ্যা কেউ বলে। সে কী তার চায়ের বিষ মিশিয়ে দিত? লোকটার কষ্টের কথা শুনে একটু গলে গিয়েছিল। তাই লোকটা বাড়িতে আসার পরে ভালো করে একটু চা কফি সেধেছিল। আর লোকটা কিনা!
মেহরীন কিড়মিড়িয়ে বিড়বিড় করে বলল,

“মিথ্যাবাদী পাঁজি লোক। তোর চায়ে ইঁদুর মারার ঔষধ মিশিয়ে দিতাম আমি? মিথ্যা বললি কেন তুই? এই জন্য কারো ভালো চাইতে নেই। আমি তো সাদাসিধা মনে তোর উপকারই করতে চেয়েছিলাম।”

বাবার ডাকে মেহরীন নিজেকে সামলে নিল। বাবা বললেন,

” ইরফান চা খায় না। এ’কথা আয়াম তোমাকে বলেছে, না? ও ছোট মানুষ বুঝে না। তুমি গিয়ে ইরফানকে চা দিয়ে আসো। তখন আমরা অনেক গল্প করব।”

“হুম।”

মেহরীন বাবার রুম থেকে বেরিয়ে সোজা নিজের ঘরে গেল। পা দিয়ে কয়েকবার ফ্লোরে জোরে জোরে শব্দ করে স্থির হয়ে দাঁড়াল।

” আল্লাহ, আল্লাহ! কী ইতর লোক হ্যাঁ! এইজন্য আজকাল মানুষের মন থেকে মানবতা উঠে গেছে। কেউ সাহায্য করতে চাইলেই তো অন্য মানে খুঁজে। শালা ভন্ড! আর জীবনে তোর কোন কাজ করব না আমি।”

বড় বড় করে দম নিতে নিতে মেহরীন নিজেকে শান্ত করছে। রাতে আয়ামকে ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে সে রান্নাঘরের ফ্রিজ থেকে ঠান্ডা পানির বোতল আনতে যাচ্ছিল। গিয়ে দেখে ইরফান চা করছে। মেহরীন কোন শব্দ না করে চুপচাপ ওর পেছনে দাঁড়িয়ে রইল। ইরফান কাপে চা ঢাললে মেহরীন টুক করে গিয়ে চায়ের কাপ হাতে নিয়ে বলল,

“আপনি তো চা কফি খান না। মিষ্টিতে আপনার সমস্যা আছে। তাহলে নিশ্চয়ই এই চা আঙ্কেলের জন্য বানিয়েছেন। আঙ্কেলকে আমি অলরেডি চা দিয়ে এসেছি। তাই এটা আমিই খাই।”

কথাগুলো বলেই মেহরীন চায়ে চুমুক দিল। ত্যাড়া চোখে ইরফানের দিকে তাকিয়ে মুখ বাঁকিয়ে বলল,

“এ্যাহ-হে! আপনি তো মনে হয় ভুল করে চায়ে দু চামচ চিনি দিয়ে ফেলেছেন। এত মিষ্টি চা হয়! শরবতের মত লাগছে। যাক আমার জন্য ভালো। আমি আবার কড়া মিষ্টি খাই। আমার তো আর লোকের মত মিষ্টিতে প্রবলেম নেই। কিছু কিছু মানুষ আছে যাদের শুধু মিষ্টিতে প্রবলেম না, মিষ্টি কথা বলতে বা শুনতেও কানে যন্ত্রণা হয়।”

ইরফান কী বলবে বা করবে ভেবে পেল না। সে মূর্তির মত দাঁড়িয়েই রইল। এই মেয়ে এত কথা বলতে পারে তার জানা ছিল না। হামনার মত দেখতেই শুধু। ঝগড়ার দিক দিয়ে হামনার থেকে একশো পা এগিয়ে।
মেহরীন ইরফানকে দাঁড় করিয়ে রেখেই গটগট করে চায়ের কাপ হাতে নিয়ে নিজের ঘরের দিকে চলে গেল।

“আহা! লোকটাকে কিছু কথা বলতে পেরেছি। এখন মনে শান্তি শান্তি লাগছে। মাথাও হালকা হয়ে এসেছে।”

রাতে একবার আয়ামের ঘুম ভেঙে গেলে সে মাম্মীকে খুঁজেছে। ইরফান মেহরীনের ঘুম ভাঙাতে না চাইলেও তাকে মেহরীনকে ডেকে তুলতে হলো। নইলে আয়ামকে সামলানো যেত না। মেহরীন ঘুম জড়ানো চোখে দরজা খুলে ইরফানকে দেখে বলল,

“আয়াম উঠে পড়েছে?”

“হুম।”

হাই তুলছে সে। চোখ ঠিকমত খোলা রাখতে পারছে না। তবুও টলতে টলতে মেহরীন ইরফানের ঘরের দিকে পা বাড়াল। এই সময় ইরফানের নিজেকে অনেক অসহায় মনে হচ্ছে। নিজের ছেলেকে সে সামলাতে পারছে না। অন্য একটা মেয়ের সাহায্য নিতে হচ্ছে। হ্যাঁ, মেয়েটাকে এই কাজেই রেখেছে। তাই বলে কাউকে মাঝরাতে গভীর ঘুম থেকে ডেকে তোলার অধিকার তার নেই।
মেহরীন আয়ামের পাশে শুয়ে বলল,

“কী হয়েছে বাবা। কাঁদছো কেন?”

“তুমি কোথায় গিয়েছিলে মাম্মী?”

“ওয়াশরুমে বাবু। তুমি এখন ঘুমাও তো। আমারও ভীষণ ঘুম পেয়েছে।”

মেহরীন ঘুমঘুম চোখে জেগে থাকার চেষ্টা করে আয়ামের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। এভাবে কতক্ষণ পরে আয়াম মেহরীন দু’জনই ঘুমিয়ে পড়ে। ইরফান আর মেহরীনকে ডেকে তুলে নিজের ঘরে যেতে বলল না। দ্বিতীয় বার মেয়েটাকে ঘুম থেকে ডেকে তোলা অন্যায় হবে। ইরফান ওদের দু’জনের দিকে কিছুক্ষণ পলকহীন দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বেরিয়ে এল। হামনা আর আয়াম এভাবেই গলা জড়াজড়ি করে ধরে ঘুমাত। ছেলে তাকে ধরে ঘুমায় না বলে ইরফান তখন কত অভিমানই না করত। হামনা তাকে অভিমান করতে দেখে হাসত। বাকি রাত ইরফান ড্রয়িংরুমের সোফায় শুয়ে পার করল।
সকালে বাবার ডাকে ইরফানের ঘুম ভাঙল।

“ইরফান! এই ইরফান, এখানে ঘুমোচ্ছিস কেন তুই? তোর ঘরে কে? আয়ামকে একা রেখে এখানে এসে শুয়ে আছিস। ইরফান! ”

ইরফানে ঘাড়ে হাত দিয়ে ডলতে ডলতে উঠে বসল। হাই তুলে বলল,

“আয়ামের সাথে ওই মেয়ে আছে বাবা।”

“মেহরীন? ”

“হুম।”

“তুই ওকে ওই মেয়ে ডাকিস কেন? ওর সুন্দর একটা নাম আছে। আজকের পর থেকে মেহরীন বলে ডাকবি ওকে। ও বয়সে তোর থেকে অনেক ছোট। নাম ধরে ডাকলে সমস্যা হবে না।”

“হুম।”
.
দুপুরে হুমায়রা মেহরীনের সাথে দেখা করতে এলো। তখন বাসায় কেউ নেই। ইরফান অফিসে। বাবা যেন কোথায় বেড়িয়েছে। বাসায় শুধু আয়াম আর মেহরীন।

“তোমাকে না একদম হামনা আপুর মত লাগে।”

মেহরীন হাসল। হুমায়রা মেহরীনের কাছে এসে বলল,

“দু’জন মানুষের মধ্যে এত মিল কীভাবে হয় বলতে পারো? আপু বেঁচে থাকলে তোমাকে দেখে কী করত সেটাই ভাবি। নিশ্চয়ই আমাদের মতই ঝটকা খেত। খুশিও হত আবার।”

“আমিও জানি না, আমি কীভাবে তোমার আপুর মত দেখতে হলাম। আমার জানামতে আমার কোন যমজ বোন নেই। আর তোমার আপুরও তো আলাদা বাবা মা আছেন।”

“হুম। তোমাকে দেখে বাবাও তো অবাক। মা থাকলে হয়তো তোমাকে নিজের মেয়ে বলেই দাবি করতেন। উনার টুইন বেবীর অনেক শখ ছিল।”

“তোমার মা নেই?”

“না। আপুর বিয়ের কয়েকমাস পরেই মা মারা যান। আয়ামকে তিনি দেখে যেতে পারেন নি।”

“ওহ।”

ওদের মধ্যে আরও অনেক কথা হলো। কথায় কথায় জানা গেল মেহরীন হুমায়রার থেকে বড়। হুমায়রা তাকে আপু ডাকার অনুমতি নিয়ে নিল। মেহরীন এটাও জানল হুমায়রার এনগেজমেন্ট হয়ে গেছে।

“কী করেন তোমার উনি? ”

“একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে জব করেন?”

“ওহ। বিয়ে কবে করছো?”

“ওর চাচা মারা গেছে। তাই ও গ্রামে গেছে। গ্রাম থেকে ফিরলেই বিয়ের ডেট ঠিক করা হবে।”

“আচ্ছা। তোমার হবু হাজবেন্ডের নাম কী?”

হুমায়রা নাম বলার আগেই আয়ামের চিৎকার শোনা গেল। আয়ামের চিৎকার শুনে দু’জনই হুড়মুড় করে ছুটে বেরিয়ে গেল।

“আয়াম বাবুসোনা, কী হয়েছে তোমার?”

“খালামনি ঘুড়ি। আমাদের ছাঁদে একটা ঘুড়ি উড়ে এসেছে। তুমি ওটা আমাকে পেরে দাও।”

ওরা ভয় পেয়ে গিয়েছিল। ভেবেছিল আয়াম হয়তো পড়ে গিয়ে ব্যথা পেয়েছে। মেহরীন আয়ামকে শাসন করার মত করে বলল,

“আয়াম বাবা, আর কখনও এভাবে চিৎকার করবে না। মাম্মীকে কেন ভয় দেখাও বাবা! এখনও আমার কলিজা কাঁপছে। ঘুড়ি দেখে এভাবে কেউ চিৎকার করে!”

“সরি মাম্মী। আর করব না। তুমি ভয় পেয়েছ?”

হুমায়রা এই দৃশ্যটা ভীষণ উপভোগ করল। যেন হামনা আপু তার ছেলেকে শাসন করছে। মেহরীনের মধ্যে নিজের বোনকে দেখতে পেল সে। আয়াম যেমন মেহরীনের মাঝে নিজের মাম্মীকে পেয়েছে, তেমনই যদি ইরফানও তার স্ত্রীকে পেত। দুলাভাইয়ের কষ্ট সে দেখতে পারে না। আপুর জন্য তারও কষ্ট হয়। কিন্তু যে চলে গেছে তার জন্য তো জীবন আটকে থাকবে না। সময় ঠিকই কেটে যাবে। দুলাভাইয়েরও সময়ের সাথে সাথে জীবনে এগিয়ে যাওয়া দরকার। হুমায়রা মনে মনে বলল,

“বাবার সাথে এই বিষয়ে কথা বলতে হবে। বাবাও নিশ্চয়ই আমার মত এটাই চাইবেন। আয়াম তার মা পাবে এর থেকে বড় আর কিছু নেই। আঙ্কেল কী ভাবছেন তা-ও জানা দরকার।”
.
.
এ বাড়িতে আসার পর মেহরীনকে এখন পর্যন্ত কোন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়নি। কিন্তু তার জন্য পরের রাতটা একটু কঠিনই হয়ে উঠল। আয়াম মাম্মী পাপাকে একসাথে নিয়ে ঘুমাতে চাইছে। মেহরীন ভাবতেই লজ্জা ও সংকোচে মরে যাচ্ছে। ওই লোকের সাথে এক ঘরে এক বিছানায় শোয়া অসম্ভব ব্যাপার৷ অনন্ত জানতে পারলে তাকে পানি ছাড়া কাঁচা গিলে খাবে। এদিকে আয়ামকে কে বোঝাবে!

“আয়াম বাবু তুমি আমার রুমে ঘুমাবে? আমি তোমাকে অনেক গুলো স্টোরি শোনাব।”

“না। মাম্মী তুমি, পাপা, আমি আগে ওই রুমে থাকতাম। এখন কেন তুমি এই রুমে থাকো? তুমি পাপার সাথে রাগ করেছো?”

“আয়াম, আসো বাবা তোমাকে রাজকন্যার গল্প শোনাই। আমি অনেক গল্প জানি।”

“পাপাকেও ডাকো। আগে যেভাবে আমি তোমার আর পাপার মাঝখানে ঘুমাতাম। এখনও সেভাবে ঘুমাব।”

“পাপা কাজ করছে বাবা। তুমি এখন ঘুমাও না।”

“না। পাপা এলে তখন ঘুনাব।”

তখনই ইরফান ঘরে আসে। মেহরীন অসহায় দৃষ্টিতে ইরফানের দিকে দেখে। ইরফান ছেলেকে উদেশ্য করে বলল,

“এখনও ঘুমাওনি আয়াম। জেগে থেকে মাম্মীকে জ্বালাতন করছো? ব্যাড বয়। তুমি তো আমার ভালো ব্যাটা। চলো ঘুমিয়ে পড়ো।”

“তুমিও আসো পাপা। আমি তোমাদের দু’জনের সাথে ঘুমাব।”

আয়ামের কথাটা শুনে ইরফানের চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল। হঠাৎ করে আয়াম এই বায়না ধরেছে কেন? ছেলেটা ছোট হলেও বুঝে গেছে মাম্মী পাপার মধ্যে আগের মত কিছুই নেই। মেহরীন বলল,

“দেখুন না আয়াম আজ আমার একটা কথাও শুনছে না।”

আয়াম কথার মাঝেই বলে উঠল,

“মাম্মী তুমি পাপাকে আপনি বলো কেন? আগে তো তুমি পাপাকে তুমি করে বলতে। মাম্মী তুমি সব ভুলে গেছ কেন? তুমি যেন কেমন মাম্মী হয়ে গেছ।”

এই ছেলে আজ ভালো ভাবেই মাম্মী পাপাকে পাকড়াও করেছে। এর হাত থেকে ছুটে যাওয়া আজ সম্ভব হবে না।
আয়ামকে অনেক বোঝানোর পরও যখন আয়াম কিছু বুঝতে চাইল না, তখন মেহরীন ইরফান ওকে মাঝে রেখে দু’জন দু’পাশে শোলো। আয়াম নিজের দুই হাতে ওদের দু’জনের হাত মুঠো করে ধরে রেখেছে। মেহরীন লজ্জায় গুটিয়ে আছে। ইরফানও এদিকে তাকাচ্ছে না।

“পাপা তুমি ওদিকে কী দেখছো? মাম্মী সেই মামদো ভূতের গল্পটা বলো না।”

“হ্যাঁ? কী ভূত বাবা!”

“মামদো ভূত। তুমি আগে মামদো ভূতের গল্প বলতে মনে নেই তোমার?”

“হ্যাঁ, হ্যাঁ। মনে আছে তো। মনে থাকবে না কেন? খুব মনে আছে।”

মেহরীন মামদো ভূতের গল্প বলবে কী? সে তো আজই এই ভূতের নাম প্রথম শুনল। মেহরীন আমতা আমতা করছে। উল্টাপাল্টা বানিয়ে কোন গল্প বলে দেবে? না, আয়াম যা চালু ছেলে। এক সেকেন্ডে ধরে ফেলবে।
.
সকালে বাবা ইরফানকে নিজের ঘরে ডাকলেন। ইরফান বুঝতে পারছে না বাবা আজ সকাল সকাল ওর সাথে কী এমন কথা বলবে।

“হ্যাঁ বাবা বলো। ডেকেছিলে কেন?”

“ইরফান কথাটা বলতে না চাইলেও আমাকে বলতেই হচ্ছে। কাল রাতে তোমরা একই ঘরে ছিলে?”

ইরফান বাবার প্রশ্ন শুনে কিছুক্ষণ বাবার মুখের দিকে তাকিয়ে রইল। তারপর মাথা নেড়ে হ্যাঁ জানাল।

চলবে___

গল্প সম্পর্কিত সকল আপডেট পেতে গ্রুপে জয়েন করুন।
গ্রুপ লিংক
👇
https://www.facebook.com/groups/928548141001685/?ref=share

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here