বাসন্তী
পর্ব-২২
লিমু

_____ ” গতকাল রাতের বৃষ্টিতে ভিজে হাড়কাঁপিয়ে জ্বর এসেছে প্রণয়ের শরীরে। এভাবে রাত বিরাতে বৃষ্টিতে ভিজলে জ্বর আসাটাই তো স্বাভাবিক। কলি অনেক্ষন ধরে বকাবকি করছে প্রণয়কে,কিন্তুু প্রণয়ের যেন কলির শাসনটা বেশ ভালোই লাগছে। কলি কেমন বড় মানুষের মতো ওকে শাসন করছে,আর প্রণয় চুপচাপ ছোট্র শিশুর মতো সেই শাসন হজম করছে। মেয়েটা একদম বদলে ফেলেছে নিজেকে। অল্প কদিনে কেমন দায়িত্ব নিতে শিখে গেছে। অথচ তার এখন স্বপ্নে বিভোর হওয়ার বয়স। বাস্তবতা আমাদের সঠিকভাবে গড়ে তোলে আসলে। আমরা যতই অলীক কল্পনায় ডুবে থাকি না কেন,বাস্তবতার কাছে সবাই অসহায়।

হঠাৎ কলির কথায় প্রণয়ের ভাবনায় ছেদ পড়লো। কলি দাঁত কটমট করে বললো,

আমি কি আপনাকে কিছু বলছি ভাইয়া?

_ ” হ্যা বলো কি বলছিলে?”

_ ” মানে! এতোক্ষণ ধরে আমি কি বলছিলাম আপনাকে? এক তো মজনু গিরি দেখাতে গিয়ে জ্বর বাঁধালেন,এখন আবার আমার কথাগুলোও শুনছেন না। এতোক্ষণ যাবত আপনাকে ডাকছি ঔষধ খাওয়ার জন্য,আর আপনি কি তখন থেকে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছেন।

_ ” ওহ,সরি ফুলকলি। দাও ঔষধটা আমার কাছে। আর আমিই তো নিয়ে খেতে পারতাম,তুমি শুধু শুধু এতো চাপ নিচ্ছো কেন।

_ ” এই কথা বলেছে না পাপ করে ফেলেছে প্রণয়। কলি চোখমুখ অন্ধকার করে বললো,” আমি আপনার আপন বোন হলে কখনোই এই কথাটা বলতেন না। জানি যতই ভালোবাসেন না কেন,সেটা শুধু মুখে।আসলে আমি তো আর আপনার নিজের ছোট বোন না,তাই এ কথাটা বলতে পারলেন। আর নয়তো, ভাইয়ের অসুখে বোন সেবা করবে,সেটাতে আবার প্রশ্ন কিসের? এটা বলে কলি জ্বরের ট্যাবলেট টা প্রণয়ের হাতে দিয়ে,পানির গ্লাসটা এগিয়ে দিল। প্রণয় পুরো বোকা সেজে গেল। প্রণয় ঠিক ঐভাবে মিন করতে চায়নি,মেয়েটা শুধু শুধু ভুল বুঝলো ওকে।
আসলেই মেয়েরা অভিমানী,এটা ভেবে প্রণয় মৃদু হাসলো। সেটা দেখে কলি জিজ্ঞেস করলো,
অসুখ তাও মুখে হাসি আসে কি করে বুঝিনা বাপু।
এবার প্রণয় একটু শব্দ করে হাসার চেষ্টা করলো,তবে ঠান্ডায় গলাও বসে গিয়েছে ওর। কথায় স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে না।
তারপর প্রণয় কলিকে উদ্দেশ্য করে বললো,

শোনো,পুরুষ মানুষের এই সামান্য জ্বরেই কাবু হলে চলে না। পুরুষ মানুষকে হতে হয় ইস্পাতের মত শক্ত,যেন সহজে ভেংগে না যায়।

_ ” কলি মুখ ভেংচি কেটে বললো,শুনুন পুরুষ হোন আর যাই হোন না কেন,সবার আগে কিন্তুু আপনিও একজন মানুষ। তাই এতো বীরপুরুষ গিরি দেখাতে হবে না। ঔষধ খেয়ে চুপচাপ শুয়ে থাকুন। আসছে আমার বীরপুরুষ রে। কলির শেষের বলা কথাটা শুনে, প্রণয় আবারও হাসলো। তারপর কলিকে বললো,
যার কাছে মন ভালো করার টনিক আছে,তার অসুখ এমনি ভালে হয়ে যাবে। জানো তো মন সুস্থ,তো শরীর সুস্থ।

_ ” হুম,তাইলে এক কাজ করেন।

_ ” প্রণয় জিজ্ঞেস করলো কি?

_ ” ঔষধ খাওয়া বাদ দেন।

_ ” প্রণয় কিছু না বলে ভ্রু কুচকে তাকালো।

_ ” আরে এভাবে তাকানোর কি আছে। আমি কি ভুল কিছু বলেছি নাকি?

_ ” প্রণয় এবারও বোকার মতো তাকিয়ে রইলো। যেন ও কিছুই বুঝতে পারছেনা।

_ ” এতো ইনোসেন্ট সাজেন কেন?

_ ” আমিতো একটা ইনোসেন্ট বয়- ই।

_ ” হইছে ইনোসেন্ট গিরি দেখানো? এবার শোনেন কি বলি। এই মজনু ভাবটা এবার ছাড়েন। বু কে স্বাভাবিক করার দায়িত্ব সম্পুর্ণ আপনার। আপনি যেটা পারবেন,সেটা আমরা পারবনা। কারন ওর এখন সবচেয় বেশি আপনার সাপোর্টটা দরকার। ও ভিতরে ভিতরে হয়তো চাইছে,আপনি ওর পাশে দাঁড়ান। ওকে ভরসা দিন,সাহস যোগান। ও যে এভাবে থেকে থেকে ভেতর থেকে মরে যাচ্ছে। কোনকিছু জিজ্ঞেস করলে,শুধু হ্যা বা না বলে। ব্যাস এতটুকুই,এর বেশি একটা কথাও বলেনা। এভাবে একটা মানুষ ঘরবন্দি হয়ে থাকলে তো আরো অসুস্থ হয়ে যাবে। প্লিজ যা করার করুন,কিন্তুু আমার বু কে আগের মতো করে দেন। আমি যে আমার রাগী বু কে খুব মিস করছি। কতদিন ওর সাথে খুনসুটি করিনা। কথাই বলে না আমার বু টা। ওকে দেখলেই আমার দু’চোখ ফেটে কান্না আসে। প্লিজ ভাইয়া কিছু তো করুন। কলি চোখ মুছতে মুছতে রুম থেকে চলে গেল।

_ ” প্রণয় ভাবতে লাগলো আসলে ওর কি করা উচিত। কয়দিন আগে ডাক্তারের সাথে কথা হয়েছিল। উনি বলছিলেন যে বায়ু পরিবর্তন করে দেখতে পারেন। প্রকৃতির কাছাকাছি নিয়ে যান। প্রকৃতির সান্নিধ্যে গেলে মানুষের মন অনেক শান্ত হয়। এরকম রোগীর জন্য এটা খুব ইমপরটেন্ট।
প্রণয় মনে মনে কোথাও একটা যাওয়ার প্লান করলো। কিন্তুু কোথায় গেলে ভালো হবে সেটা কলির কাছ থেকে জানতে হবে।
অথবা পুষ্পর বিশেষ কোন পছন্দের জায়গা আছে কিনা,যেখানে ও যেতে চায়।
তবে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো, মায়াচন্ডী যেতে রাজি হবে কিনা!”
এটা ভেবেই প্রণয়ের মুখটা ঘনকালো মেঘে ঢেকে গেল।

_ ” কলি প্রণয়ের রুম থেকে বের হতে নিতেই অল্পের জন্য প্রিয়মের সাথে ধাক্কা খায়নি। তবু সাথে সাথে কলি সরি বললো। যেটা দেখে প্রিয়ম বললো,ইটস ওকে বাবা। এতে সরি বলার কিছু নেই,আমিই ফোন প্রেস করে করে আসছিলাম। প্রিয়ম কলির চোখের দিকে তাকিয়ে একটু ভড়কে গেল,কলির চোখে জল টলমল করছে। প্রিয়ম ঠিক বুঝতে পারল না,তার আগেই কলি ওকে পাশ কাটিয়ে চলে গেল। আর ও কলির যাওয়ার পানে হতবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো। মেয়েটা এতো কাঁদে কেন!

_ ” গভীর রাত। বাইরে ঝড়ো বাতাস বইছে। আজকাল অসময়ে বেশ ঝড় হচ্ছে। প্রকৃতিও মনে হয় অশান্ত হয়ে গেছে।
আর অশান্ত হয়ে আছে দুটো মানুষের মন। সন্ধ্যার দিকে একটু চোখ লেগে গেছিলো প্রণয়ের, তাই এখন ঘুম আসছেনা। আর শরীরের তাপমাত্রাটাও এখন একটু বেশি মনে হচ্ছে। সারা শরীর ব্যাথা করছে জ্বরের প্রকোপে। প্রণয়ের জ্বর হলেই এমন হয়। আর যতই ঔষধ খাক না কেন,তিন দিনের আগে ওর জ্বর কমবেনা।
প্রণয় বিছানায় এপাশ ওপাশ করছে, শরীরটা কেমন ছটফট করছে। ঘুম যেন ছুটি নিয়েছে চোখ থেকে। একটা অসস্থিকর অবস্থা। তবুও প্রণয় জোর করে ঘুমানোর চেষ্টা করলো। হঠাৎ ও রুমে কারো উপস্থিতি টের পেলো। এতোরাতে কে আসতে পারে? কলি তো এতো রাত অব্দি সজাগ থাকতে পারে না। তাহলে কে?

_ ” কলির চোখকে ফাঁকি দিয়ে খুব সন্তর্পণে ওদের রুমটা পেরোলো পুষ্প। ও জানেনা ও যেটা করছে ঠিক কিনা। কিন্তুু জীবনে সবকিছু কি আর ঠিক ভুল হিসেব করে চলে। কখনো কখনো মনের টা শুনতে হয়। আবার কখনো মস্তিষ্কের টাও। কিন্তুু এইমুহুর্তে পুষ্প ওর মনের কথাটায় শুনবে। না হলে যে ওর ছটফটানি কমবেনা,ঘুমই আসবেনা চোখে। প্রণয়কে একটু দেখেই চলে আসবে পুষ্প। এখনতো হয়তো গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন সে, তাই টের পাবে না। পুষ্প সারাদিন ছটফট করেছে প্রণয়ের জ্বরের কথা শুনে। না কিছু বলতে পারছিলো, না সইতে। আর কি ই বা বলবে সে? যে বাঁধনের সুতো ছিড়ে ও নিজেই চলে যাবে,সে সুতো আর জোড়া লাগানোর কোন মানে হয় না। শুধু শুধু চাপা ব্যাথা আরো তীব্র করার কোন যুক্তিকতা নেই। প্রণয় ঠিকই একসময় পুষ্পকে ভুলে যাবে,এটাই স্বাভাবিক। কারো জন্য কারো জীবন থেমে থাকে না,সে যে যতই বলুক তাকে ছাড়া বাঁচবেনা। আসলে দিনশেষে সবাই বাঁচে,বাঁচতে হয় আমাদের। জীবন যে একটাই।

_ ” শুধু কিছু কিছু বোকা,পাগলরা পাগলামী করে। হয়তো তারা সত্যটা,বাস্তবটা মানতে পারে না তাই।
কিন্তুু কারো চলে যাওয়াতে এই পৃথিবীর কিছুই আসে যায় না। সে তার মতই চলে। প্রতিদিন সূর্য উঠে,অস্ত যায়। পাখিরা ডাকে, ফুল ফোটে সব কিছুই আগের মতোই থাকে।

_ ” প্রণয়ের রুমের দরজাটা খোলাই ছিল,শুধু চাপানো ছিল। হয়তো অসুস্থ, তাই দরজার লক লাগায় নি। অবশ্য এতে পুষ্পর জন্য ভালোই হলো। পুষ্প ধীর পায়ে হেটে হেটে প্রণয়ের বেডের পাশে বসলো। প্রণয় সোজা হয়ে শুয়ে আছি,গায়ে চাদর জড়ানো। মুখটা কেমন ফ্যাকাসে হয়ে আছে। নাক লাল হয়ে আছে,ঠান্ডা বেশ ভালো ভাবেই লাগিয়েছে পুষ্প বুঝতে পারলো। প্রণয় একটু জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিচ্ছে। মনে হয় নিঃশ্বাস ফেলতে কষ্ট হচ্ছে। কে বলেছিলো তাকে এই অসময়ে বৃষ্টিতে ভিজতে। এখন চেহারার দিকে তাকানো যাচ্ছে না। উনি উনার নামের সত্যতা দেখাতে চাইছেন। যে উনি একাই শুধু আমাকে ভালোবাসেন,তাই এমন পাগলামী করছেন ছোট বাচ্চাদের মতো,তাও আবার আমার আড়ালে থেকে। কি মনে করে কি নিজেকে,খুব প্রেম শিখেছে না। নিজেকে প্রেমের ইতিহাসে হিরো বানাতে চাইছে,আর আমাকে ভিলেন।

_ ” ইচ্ছে করছে আরো কতক্ষণ বৃষ্টিতে দাঁড় করিয়ে রাখি। তাহলে সব প্রেম পালাবে,হিরো সাজতে চাইছে। এই যে শুনুন, গায়ক আছেন গায়কই থাকেন,নায়ক সাজতে হবে না।
পুষ্প মৃদুস্বরে এটা বললো, জোরে বললে যদি জেগে যায়। তাহলে তো ধরা পড়ে যাবে।

_ ” পুষ্পর খুব ইচ্ছে করছে প্রণয়ের কপালে হাত রেখে জ্বরটা কেমন সেটা দেখতে। কিন্তুু সেটা কি ঠিক হবে,যদি টের পেয়ে যায়। অনেকটা দ্বিধা,ভয় পাশ কাটিয়ে সাহস করে পুষ্প এ কাজটা করেই ফেললো। প্রণয়ের কপালে হাত রাখার সাথে সাথেই মনে হলো পুষ্পর হাতটা পুড়ে যাচ্ছে,জ্বর বাড়ছে মনে হয় প্রণয়ের। পুষ্প কি করবে বুঝতে পারলনা। পাশেই দেখলো টেবিলে একটা বড় বাটির মাঝে পানি আর জলপট্টি দেয়ার জন্য ন্যাকড়া রাখা। কলি হয়তো জলপট্টি দিয়েছিল সন্ধ্যেবেলায়। পুষ্প বাটিটা এনে ফ্লোরে রাখলো। ও জানেনা এখন যেটা করছে ঠিক কিনা,কিন্তুু এখন এটাই করা উচিত। যদি প্রণয় টের পেয়েও যায়,তারজন্য তো তাকে আর জেলফাঁস দিবে না।

এসব ভাবতে ভাবতে ন্যাকড়া টা ভিজিয়ে পানি কিছুটা নিংড়িয়ে সেটা প্রণয়ের কপালে দিলো। জ্বরের সময় এটা অনেক কার্যকরী। বেশ কয়েকবার পুষ্প এভাবে দিল। প্রণয় বেঁহুশ ঘুমে। হয়তো আরাম লাগছে জলপট্টি দেওয়াতে।

_ ” পুষ্প প্রণয়ের মাথায় হালকা হাত বুলিয়ে দিল। মাথায় হাত বুলিয়ে দিলে যেকোন মানুষের অন্যরকম ভালো লাগে।
পুষ্প স্থির দৃষ্টিতে প্রণয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো। এই ছেলেটা চাইলেই হাজারটা সুন্দরী মেয়ে লাইনে দাঁড়াবে, আর সে কেন পুষ্পতে মগ্ন হলো। কি আছে পুষ্পর মাঝে,কিছুই নেই। একটা নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের অত্যন্ত সাধারণ একটা মেয়ে সে। প্রণয় কি খুঁজে পেয়েছে ওর মাঝে? কেন ছেলেটা ওর মতো একটা মেয়ের জন্য নিজেকে কষ্ট দিচ্ছে। আমার মতো মেয়েরা এতো ভালোবাসা পাবার সৌভাগ্য নিয়ে জন্মায়না। আপনি ভুল মানুষকে ভালোবেসেছেন মিস্টার মেহবুব,ভুল মানুষকে। আপনাকে ভালোবাসার মতো সাহস আমি আর করতে পারবোনা। আপনার ভালোবাসা পাওয়ার সৌভাগ্য আমার হয় নি।

_ ” পুষ্পর গলা জড়িয়ে আসছে,এখানে আর কিছুক্ষণ থাকলে ও কেঁদে বুক ভাসাবে।
পুষ্প প্রণয়ের একটা হাত ওর দু’হাতের মুঠোয় পুরে নিল। তারপর বলতে লাগলো,
আমাকে ক্ষমা করে দিবেন, আমি আপনার ভালোবাসা পাওয়ার মত সৌভাগ্য নিয়ে জন্মায়নি। আপনার জন্য তো কোন পরীর মত মেয়ে অপেক্ষা করছে,আমি যে অতি সাধারণ এক মেয়ে। আপনাকে ভালোবাসার কোন যোগ্যতাই যে আমার আর নেই। আমি কেন শুধু শুধু আপনার উজ্জ্বল ক্যারিয়ারের পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়াবো। আমি দূর থেকেই আপনার সাফল্যে আমার সুখ খুঁজে নিবো। খুব করে চাইবো আপনি অনেক বড় মাপের একজন গায়ক হোন। দেশ বিদেশে আপনার যশ ছড়িয়ে পড়ুক। আমি দূর থেকেই খুব খুব খুশি হবো। পুষ্প একই সাথে হাসছে আবার কাঁদছেও,ওর কি হলো নিজেও জানে না। কেন হৃদয়টা এতো পুড়ছে তাকে ছেড়ে যাওয়ার কথা ভাবতেই। বিষাদে কেন ঢেকে যাচ্ছে পুষ্পর ভুবন। মনে হচ্ছে কি যেন হৃদয়টাকে খুঁট খুঁট করে কেটে চলেছে, আর সেটা পুষ্পকে ধীরে ধীরে গ্রাস করছে। মন কেন কথা শুনেনা আমাদের? মন যেটা চাই,সে তা না পেলে ভেতরটা চূর্ণবিচূর্ণ করে দেয়। তছনছ করে দেয় ভেতর ও বাহির। মন যে বড্ড অশান্ত আজ। এতো অস্থিরতা কেন বিরাজ করছে পুষ্পর অন্তরে,কিসের অস্থিরতা?

সে কি তবে নিজের সর্বস্ব দিয়ে ভালোবেসে ফেলেছে প্রণয়কে?
যদি তাই হয়,তবে কি এতো সহজে পুষ্প পালাতে পারবে এ মায়াজাল থেকে?
এ যে ভালোবাসার মায়াজাল, প্রণয়ের মায়াজাল,তা ভেদ করে নিজেকে আড়াল করা কি পুষ্পর ধারা হবে?

_ ” পুষ্প পাগল হয়ে যাচ্ছে,এক্কেবারে পাগল। নিজেকে এতো অসহায় লাগছে ওর।
কাউকে ভালো না বাসলেও একসাথে থাকা যায়,কিন্তুু কাউকে ভালোবেসে তার থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে নেয়া যে কষ্টের অতীত। যেখানে তুমি জানো সেও তোমাকে পাগলের মতো ভালোবাসে। পুষ্প আর ভাবতে পারছেনা,ওর মাথা ভোঁ ভোঁ করছে।
হঠাৎ মনে হলো প্রণয় একটু নড়াচড়া করছে,আর আগের চেয়ে ধীরগতিতে শ্বাস ফেলছে। পুষ্প প্রণয়ের হাতটা ছেড়ে দিল আস্তে করে। তারপর কতক্ষণ স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো প্রণয়ের মুখপানে। চলে যাওয়ার আগে পুষ্প ওর নিজেরও ভাবনার বাইরে, এমন একটা কাজ করে গেল।

_ ” আর পুষ্প চলে যাওয়ার সাথে সাথে প্রণয় চোখ মেলে তাকালো,আর ঠোঁটের কোণে একটা লম্বা হাসির রেখা ফুটে উঠলো। এতোক্ষণ ঘুমের ভান করে থাকতে থাকতে হাঁপিয়ে যাচ্ছিলো সে। যদিও জ্বরে শরীর কাঁপছে এখনো,তবে প্রণয়ের যা বুঝার বুঝে গেছে। ওর বাসন্তী ওকে ভালোবেসে ফেলেছে,হৃদয়ের সবটা দিয়েই। কিন্তুু শুধু ঐ কারনে ওর থেকে পালাতে চাইছে,যেটা প্রণয়ের কাছে কিছুই না। হয়তো সমাজের লোক কথা বলবে,বলুক প্রণয়ের তাতে কোন আফসোস নেই। আমরা যদি ভালো থাকি,সুখী থাকি সমাজের তাতে কি।
প্রণয় আবারও মৃদু হেসে ওর কপালে হাত রাখলো, তার বাসন্তীর মিষ্টি স্পর্শ যে লেগে আছে ঐখানটায়। মিস আফরা পুষ্প,তুমি যে আমাকে নিজের চেয়েও বেশি ভালোবেসে ফেলেছো,যেটা আমার ভাবনার বাইরে। তুমিতো এই প্রণয়ের মায়াজালে আটকা পড়েই গেছো,এখন শুধু তোমাকে সেই জালে পাকাপোক্তভাবে বন্দি করার অপেক্ষায়। ভালোবাসি বাসন্তী। আর তুমি আমাকে ভালোবাসার চেয়েও বেশি মায়ায় জড়িয়ে ফেলেছো,নিজেও জড়িয়েছো। এ যে কঠিন অসুখ,নিদারুণ কঠিন!
কি করে পালাবে বলো?
আর কোন পথ যে নেই,শুধু একটাই পথ তা হলো ভালোবাসার।

#চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here