বাসন্তী
পর্ব-০৯
লিমু

-” আজ শুক্রবার। দেখতে দেখতে বেশ কিছুদিন কেটে গেছে। কলির পরীক্ষা প্রায় শেষ,শুধু ব্যবহারিক পরীক্ষা গুলো বাকী রয়েছে। সাইন্সের স্টুডেন্টদেরতো আট-নয়টা ব্যবহারিক খাতাই করতে হয়,কলি রুমে বসে বসে সেই খাতা করছিল।

আর পুষ্প রান্নাঘরে ভুনা খিচুড়ী রান্না করছিলো। আর উদাস হয়ে কি যেন ভাবছিল। হঠাৎ কলির ডাকে ওর হুঁশ ফিরলো।

-” করছোটা কি বু?

-” কেন? ডিম ভাজছি,খিচুড়ীর সাথে তো ডিম ছাড়া তোরা খাস না।

-” ডিম কি দিয়ে ভাজছো?

-” আজব প্রশ্ন,তেল দিয়েই তো ভাজছি। ডিম কি পানি দিয়ে ভাজবো নাকি?

-” একটু কড়াইয়ের দিকে দেখ ভালো করে।
-” পুষ্প কড়াইয়ের দিকে তাকালো,তেলটা এমন দেখা যাচ্ছে কেন? কেমন যেন বেশি ঘন,আঠালো,পুষ্প ঠিক বুঝতে পারছেনা।

-” তখনি কলি একটা বোতল পুষ্পর সামনে ধরলো,আর বললো এটা কি?
-” পুষ্প বোতলটা হাতে নিয়ে দেখলো এটা তেলের বোতল না। বরং এটার মধ্যে মধু ছিল।

-” কলি পুষ্পর দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসছে। পুষ্পও কিছু ভেবে না পেয়ে মুচকি হাসলো। আর মনে মনে নিজেকে একশো বকা দিতে লাগলো,কেন অযথা ঐ লোকের কথা ভাবছে পুষ্প!

-“কাউকে নিয়ে ভাবলেই,ভাবনারা আরো আস্কারা পাই। পুষ্প একদম ভাবতে চাইনা,কিন্তুু ভাবনারা এত অবাধ্য কেন?

-” কলি দেখলো পুষ্প আবার ভাবনায় বিভোর,সেটা দেখে ওর বেশ লাগছে। আর মনে মনে বলছে,ভাবো বু ভাবো। বেশি করে ভাবো,যত ভাববে,ততই ডুববে!
তোমাকে ডুবাতেই তো……..!

-” আর তোমার মনে কি ভাবনা ঘুরপাক খাচ্ছে,সেটা যদি আমি বুঝতে না পারি তাহলে কিসের লেডি আইনস্টাইন আমি। যেখানে আমিই নাটের গুরু,এটা বলেই কলি আবার মুখ টিপে হাসলো।

-” যেটা দেখে পুষ্প বললো,এত হাসছিস যে? ভুল হতেই পারে, এতে এতো হাসার কি আছে আজব!

-” এবার পুষ্পর অবস্থা দেখে কলি জোরে হেসে দিল ঘরকাঁপিয়ে। তারপর হাসি থামিয়ে বললো,এক কাজ করি তোমার এই স্পেশাল ডিমভাজির একটা ছবি তুলে ফেসবুকে গার্লসগ্রুপে আপলোড দেই। আর ক্যাপশন দিবো আহা মধুর ডিমভাজি’ ফর স্পেশাল পারসন,আপুরা ট্রাই ইট।

এটা বলে কলির হাসির মাত্রা আরো বিস্তৃত হলো। ঠিক তখনি পুষ্প কলির কান ধরে বললো,ফেসবুক চালিয়ে চালিয়ে খুব কথা শিখছো, পাকনা হইছো তাই না।

-” আহ,বু লাগছে। কানটা টেনে টেনে দাগ করে ফেলছো,পরে বিউটি কন্টেস্টে অংশ নিতে পারবনা। তখন তুমিই আফসোস করবে মিস বাংলাদেশ হতে পারিনি বলে।

-” ড্রামা তো ভালোই পারিস,ফিল্মে নাম লিখা। পুষ্প কান ছেড়ে দিয়ে নতুন করে আবার ডিম ভাজতে নিল।
-” কলি কানটায় মালিশ করতে করতে বললো,তা কিসের এত উদাসীনতা জানতে পারি? কবিমন কেন এত ব্যাকুল,কার ভাবনায় সে বিভোর? কে সেই দুর্ভাগা!

-” পুষ্প ভ্রু কুচকে তাকালো।

-” কলি বললো,মানে তোমার চোখেমুখে না কিসের যেন একটা লক্ষণ ফুটে উঠেছে। সেই লক্ষন যেটা চাইলেও লুকানো যায় না,বেহায়ার মতো চেহারায় ভেসেই থাকে।

-” কলিইইই……বেশি হয়ে যাচ্ছে কিন্তুু, বেশি পেকে গেছিস। বিয়ে দিয়ে দিব তোকে।

-” দাওনা,আমি কি মানা করছি নাকি। কিন্তুু আমারতো বয়সই হইনি। আর তাছাড়া বড়বোনের আগে ছোটবোনের বিয়ে দ্যাটস নট ফেয়ার। সবাই ভাববে আমি বোধহয় কোন আকাম করছি তাই বিয়ে দিয়ে দিছে।

-” পুষ্প কলির কথা শুনে কি করবে বুঝতে পারছেনা,এই মেয়ের মাথা নষ্ট।

-” তখন শুনলো কলি বলছে,আচ্ছা বু বড় ভাইয়ের আগে ছোট ভাই বিয়ে করলে তাকে এককথায় পরিবেদন বলে। কিন্তুু বড়বোনের আগে ছোটবোনের বিয়ে হলে তাকে কি বলে?

-” পুষ্প হতাশ চোখে তাকালো কলির দিকে,সাধে কি আর লেডি আইনস্টাইন ডাকে। সবসময় তার মাথায় উদ্ভট প্রশ্ন,কথা ঘুরতে থাকে।

-” পুষ্প কলিকে রান্নাঘর থেকে বের করে দিল,না হলে ওর মাথা আরো খারাপ করে দিবে। অলরেডি ওর মাথা ঠিক নেই,না হলে এই কান্ড করে কি করে।

-” কলি যেতে যেতে বললো,” বু কা দিলমে কুচ খিচুড়ী হে,পাতা লাগাও দয়া। ওহ সরি দয়া নয়,আমিতো কলি,লেডি আইনস্টাইন। এটা বলে হাসতে হাসতে চলে গেল কলি,পুষ্প যেন হাফ ছেড়ে বাঁচলো। আর একটু সময় কলি ওকে প্যাচালে সব জেনে যেতো,যে প্রশ্ন করে সারাক্ষণ।

কিন্তুু হঠাৎ কি হলো পুষ্পর!

পুষ্প ঐদিনের ভাবনায় ডুব দিলো আবার।

-” জানো ভালোবাসা জিনিসটা খুব বেয়াদবও। এই যে দেখো তোমার সাথে দেখা হওয়ার পর আমার মনে সে তার কাজ শুরু করে দিল, অথচ তোমার মনে টুকিও দিলো না এখন পর্যন্ত। এখন আমাকে সারাক্ষণ জ্বালাচ্ছে,অথচ তোমার মনে ফুলের টোকাও দিচ্ছে না। আমাকে মাতাল করে,পাগল করে সে পৈশাচিক আনন্দ নিচ্ছে, তাহলে সে বেয়াদব না? অবশ্যই বেয়াদব,একেবারে পাজির পা- ঝাড়া। বলি তোর কি এনার্জি কম,না ধৈর্য কম,নাকি তুই অলস?

-” যদি একসাথে দুদিকে ঘন্টা বাজাতে না পারবি,তাহলে একদিকে কোন কারনে বাজাস রে ব্যাটা বজ্জাত! একদিকে ঘন্টা বাজিয়ে তুই চলে যাস ঘুমুতে,ব্যাটা কুম্ভকর্ণ।

-“না না,ঘুমুতে যায় না ঐ তো একটা বদ

তাই, একদিকে ঘন্টা বাজিয়ে সে চলে যায় অন্য কোথাও। অন্য আরো দুজনের মধ্যে একজনের মনে ঘন্টা বাজানোর জন্য
আর যার মনে ঘন্টা বাজায় সে বেচারা ভোগে যন্ত্রনায়। পুরো একটা বেয়াদব,ফাজিল,হতচ্ছাড়া এই ভালোবাসা।

-” প্রণয়ের কথা শুনে পুষ্পর দমফেটে হাসি আসছিল,আর প্রণয় যেভাবে মুখের এক্সপ্রেশন দিচ্ছিল, পুষ্পর জন্য হাসি চেপে রাখা কষ্টকর ছিল। তবু অনেক কষ্টে পুষ্প হাসি চেপেছে,মানুষটার মাথায় কি প্রবলেম আছে নাকি কে জানে।

-” কিন্তুু ঐদিনের পর প্রণয় আর পুষ্পর সামনে আসেনি। না কলেজে,না টিউশনির রাস্তায়, কোথাও দেখতে পেলো না পুষ্প প্রণয়কে। পুষ্প মনে মনে বললো,আমার কি ঠেকা পড়েছে যে তার কথা ভাববো। সে কে হয় আমার, কেউ না।
কিন্তুু তবুও তো আমি তার কথা আনমনে হলেও ভেবে চলেছি,ভাবনারা এত অবাধ্য কেন হয়!

-” প্রণয় ঐদিন চলে যাওয়ার আগে পুষ্পকে শুধু বলেছিল,ভালোবাসি,ভালো থেকো ফুল বাসন্তী।
এই এতটুকু কথা কেন যেন পুষ্পর হৃদয়টা কাঁপিয়ে দিল হঠাৎ করেই। কিন্তুু পুষ্প কিছুই বলতে পারলনা,মনে হচ্ছে ওর মুখ দিয়ে কোন শব্দই বের হচ্ছে না, ও ঠাঁই দাঁড়িয়ে রইলো। আর স্থির দৃষ্টিতে প্রণয়ের চলে যাওয়ার পথপানে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। প্রণয়ের এভাবে নিঃশব্দে নিরবে চলে যাওয়াটা কেন যেন পুষ্পর হৃদয়টাকে দুমড়ে মুচড়ে দিচ্ছে।
কিন্তুু কেন?
প্রণয়তো ওর আপন কেউ নয়,তাহলে?
কেন হৃদয় এত বিচলিত হচ্ছে বারবার তার চলে যাওয়াতে। কেন হৃদয়টা পুড়ছে তার জন্য।

-” হৃদয়তো কাছের মানুষ ছাড়া কারো জন্য পুড়ে না,তবে কেন পুড়ছে তার দহনে!

পুষ্প সে তোর কেউ হয় না,শুধু শুধু তার কথা ভাবার কোন কারন নেই। কারো কথা ভাবলেই সে বেশি বেশি ভাবনায় আসে। তাই ভাবনাকে এত আস্কারা দিতে নেই,দিলেই বাড়ে,না দিলে নয়।

-” কিন্তুু মন এত অবাধ্যতা কেন করে,কেন!
পুষ্পর অনেক অসস্থি হচ্ছিল,কি হচ্ছে ওর সাথে কিছু বুঝতে পারছেনা। এত অশান্ত কেন মনটা, কেন এত উৎকন্ঠা!

-“কারো কাছে বিষয়টা একটু শেয়ার করা দরকার,কিন্তুু কার কাছে করবে। তন্নী বা কলি কারো সাথে বললেই এরা ঢোল বাজানো শুরু করবে আর আমাকে সারাক্ষণ খুঁচাবে। কিন্তুু আর তেমন কেউ নেই পুষ্পর লাইফে,ওর আপন মানুষের গন্ডিটা যে সীমাবদ্ধ।

-” হঠাৎ পুষ্পর প্রিয়মের কথা মনে পড়লো,উনাকে কল দিলে কেমন হয়। উনি তো বলেছিলেন সহজেই নাকি যেকোন বিষয় বুঝতে পারে,তাহলে এটাও নিশ্চয়ই বুঝবে। পরক্ষণেই আবার ভাবলো, একদিনের একটু পরিচয়ে তার সাথে এসব কথা বলা কি ঠিক হবে,পুষ্প আর ভাবতে পারছেনা। কিন্তুু এছাড়া পুষ্পর হাতে আর কোন অপশনও নেই।
আর প্রিয়মকে বেশ মিশুক আর ফ্রি টাইপ মনে হয়েছিল।

.

-” কলি দুইহাত কোমড়ে দিয়ে রাগী চোখে পুষ্পর দিতে তাকিয়ে রইলো। মনে হচ্ছে পুষ্প ওর ছোট বোন, আর সে কোন বড়সড় অপরাধ করে ফেলেছে যার জন্য কলি এভাবে তাকিয়ে আছে। কিন্তুু পুষ্প কিছুই বুঝতে পারলনা,আচমকা কলির এভাবে রেগে যাওয়ার কারন কি?

#চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here