বাসন্তী
পর্ব-০৩
#লিমু

-” আলগা করো গো…খোঁপার বাঁধন,
দিল ওহি মেরা ফাঁসগায়ি,
দিল ওহি মেরা ফাঁসগায়ি…(২)

বিনোদ বেনি জরির ফিতায়(২)
আন্ধা ইসকে মেরা ফাঁসগায়ি(২)
আলগা করো গো খোঁপার বাঁধন
দিল ওহি মেরা ফাঁসগায়ি।

-“তোমার কেশের গন্ধে কখন
লুকায় আসিলো লোভী আমার মন

বেঁহুশ হো কে গিরি পরি হাতো মে(২)
বাজু বান্ধ মে ফাঁসগায়ি (২)

আলগা করো গো……ফাঁসগায়ি ।

দিল ওহি মেরা…দিল ওহি মেরা…

-“কানেরও দুলে তার রাখিয়ে বিধিয়া
ওর ফিরা দিয়া জো বি খরিদিয়া,
কানেরও দুলে তার রাখিয়ে বিধিয়া
হা ফিরা দিয়া জো বি খরিদিয়া।

দেহেরও দেওরিতে বেড়াতে আসিয়া(২)
ওর নেহি ও বা-পাস গায়ি
ওর নেহি ও বা-পাস গায়ি…

আলগা করো গো খোঁপার বাঁধন
দিল ওহি মেরা ফাঁসগায়ি
বিনোদ বেনি জরির ফিতায়
আন্ধা ইসকে মেরা ফাঁসগায়ি (২)
আলগা করো গো খোঁপার বাঁধন……
দিল ওহি মেরা,দিল ওহি মেরা
দিল ওহি মেরা, ফাঁসগায়ি……….

-” গানের প্রথম লিরিকটা শুনেই পুষ্প গেটের কাছে দাঁড়িয়ে পড়ে,যেটা দেখে তন্নী মুখ টিপে হাসলেও পুষ্পর সামনে হাসে নি। কারন ও জানে, হাসলেই পুষ্প রাগ করে চলে যেতে চাইবে। আর তন্নী এটাও জানে এই নজরুল সংগীতটার প্রতি পুষ্পর বিশেষ দুর্বলতা আছে। আর ত্রিপলি এই গানটায় গাইলো,নট ব্যাড!

-” মনে হচ্ছে ফিল্মের হিরোইন চলে যাচ্ছিল রাগ করে, আর হিরো তার পছন্দের গান গেয়ে থামিয়ে দিল। এটা ভেবে তন্নী একা একাই হাসলো, তারপর ভাবলো,কোথায় প্রাগৈতিহাসিক আর কোথায় আলট্রা মডার্ণ,ইটস টোটালি ইমপসিবল ইকুয়েশন!

-” তাই পুষ্প চুপচাপ তন্নীর পাশে বসে পড়লে তন্নী কিছু বলে নি,জাস্ট মুচকি হাসি দিয়েছিল। পুষ্পও আর কিছু বলে নি,স্বাভাবিকভাবে বসে থাকার চেষ্টা করলো।

-” কিন্তুু যখন ঐ কলি টা গাইছিল,”তোমার কেশের গন্ধে কখন,লুকায় আসিলো লোভী আমার মন।
-” পুষ্প বেশ অসস্থিতে পড়লো,কারন তখন শুধু গাজরাটা খুলে নি, পুষ্পর খোঁপা খুলে গিয়ে প্রণয়ের নাকে-মুখে চুল ছড়িয়ে পড়ে। পুষ্পর চুল প্রাকৃতিকভাবেই অসম্ভব সিলকি আর ঘন কালো দীঘল কেশ। কোমড় ছাড়িয়ে চার আঙুল নিচে পড়ে,আর খোঁপা করলে অসম্ভব ভালো লাগে। ওর চুল দেখেই যে কেউ ক্রাশ খাবে,তন্নীই মাঝে মাঝে বলে পুষ্প তোর বর তো তোর এই ঘনকেশে নিজেকে হারিয়ে ফেলবে রে।
হঠাৎ এটা মনে হতেই পুষ্পর আরো অসস্থি লাগছে,এই ত্রিপলি আর গান পেলো না খুঁজে!
-” একে তো গানটা আমার অনেক পছন্দের তার মধ্যে আজকের ঘটনার জন্য এখন গানটা শুনে কেমন যেন লাগছে। গানটা শেষ হতেই পুষ্প চলে যেতে নিল আবার,কিন্তুু তন্নী যাবে না।
এবার পুষ্প একাই চলে যাচ্ছিল,কলেজ থেকে ওদের বাসা খুব বেশি দূরেও নয়।

-” রাস্তায় একা একা বক বক করে হাঁটছিল পুষ্প,আর চারপাশে দেখছিল কাপলরা হাত ধরে হাঁটছে। রিকশা করে ঘুরছে অনেকে,তাই ও রিকশায় পাচ্ছে না আজকে। মনে হয় সব রিকশাওয়ালাকে কাপলরা বুক করে নিয়েছে আজকের জন্য,তাই বকবক করে করে হাঁটছিল পুষ্প।

-” হঠাৎ একটা গাড়ি প্রায় ওর পাশে এসে ব্রেক কষলো,পুষ্প তাড়াতাড়ি সাইডে সরে গেল। যদিও ও সাইড দিয়েই যাচ্ছিল,তারমানে দোষ ঐ গাড়ির মালিকের।

-” গাড়িটা পুষ্পর পাশেই থামলো। সাথে সাথে পুষ্প গাড়ির গ্লাসের কাছে গিয়ে বলতে শুরু করলো,” রাস্তাটা কি আপনার বাপের যেদিকে মন চায় যাবেন,যেখানে মন চায় ব্রেক কষবেন? আপনারা বড়লোকরা নিজেদের কি মনে করেন বলেন তো,গাড়ি কিনেছেন তো রাস্তাটাও কি কিনে নিয়েছেন নাকি?

-” গাড়ির গ্লাসটা সরাতেই পুষ্প চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইলো,এ এখানে কি করছে? মাত্র না ফাংশনে দেখে আসলাম,ভূত নাকি!

-” প্রণয় গাড়ি থেকে নেমে চোখ থেকে কালো সানগ্লাস টা সরিয়ে পুষ্পকে লক্ষ্য করে বললো,” রাস্তাটা অবশ্যই পাবলিক প্রোপার্টি,তবে রাস্তার মানুষটা তো কারো প্রাইভেট প্রোপার্টিও হতে পারে,তাই না।
-” পুষ্প এই কথার কিছুই বুঝলনা,তাই বললো মানে?
-” নো,নাথিং। এমনি বললাম।
তা হেটে যাচ্ছেন কেন?
-” টাকা নেই তাই। আপনার কোন সমস্যা?
-” প্রণয় এমন উত্তর পাবে আশা করে নি। তাই বললো,নাহ আমার কি সমস্যা আবার। হাঁটলে শরীর ভালো থাকে। আগের দিনের মানুষ বেশিদিন বাঁচতো কেন জানেন?
-” পুষ্প ভ্রু কুচকে তাকালো প্রণয়ের দিকে।
-” প্রণয় বলতে লাগলো,আগে মানুষ কোথাও গেলে হেটে যেতো,এখনকার মতো এতো গাড়িঘোড়া তো আর ছিল না। আমরা তো এখন পাঁচটাকার পথও হাঁটতে রাজি নয়,এতটাই অলস হয়েছি।
-” পুষ্প কিছুক্ষণ প্রণয়ের দিকে তাকিয়ে ওর মতো সামনে হাঁটতে শুরু করলো।
কেউ গায়ে পড়ে ওর সাথে কথা বলতে আসাটা ওর সুবিধার মনে হয় না। কারন ওর ধারণা এদের মুখে থাকে এক আর মনে আরেক। নিশ্চিত কোন বদ মতলবে ওর পিছু নিয়েছে কিন্তুু পুষ্প এতো বোকা নয়,সহজে পাত্তা দিবেনা।

-” একটু সামনে এগিয়ে গিয়ে দেখে পিছন পিছন আসছে কিনা,যখন দেখলো আসছেনা পুষ্প একটা হাফ ছাড়লো।
কিন্তুু আর দু’কদম এগুতেই পাশ থেকে কেউ বলে উঠলো,আপনার বাসা কি আশেপাশেই?
-” একদম পুষ্পর কানের কাছে এসে কথাটা বলায় পুষ্প ভয় পেয়ে গেল। ভয়ে বুকে থুথু দিয়ে অগ্নিদৃষ্টিতে তাকালো প্রণয়ের দিকে। তারপর বললো,” আপনার মতলবটা কি সরাসরি বলে ফেলুন তো এবার? ক্রিকেটে রান আউটে আমি ডাইরেক্ট হিট করাটাই পছন্দ করি,অন্য প্লেয়ার বল ধরে আউট করার চেয়ে। আর লাইফেও সরাসরি কথা বলতেই পছন্দ করি,এত ভূমিকা করা পছন্দ করি না।

-” পুষ্প এই কথা বলাতে প্রণয় দুই সেকেন্ডও না ভেবে এমন একটা কথা বলে বসলো যে,পুষ্পর চোখ কপাল পেরিয়ে পারলে মাথায় উঠে যায়।

প্রণয় কোন সংকোচ ছাড়াই বলে দিল,” আই লাভ ইউ।”

-” পুষ্প বললো,” আপনি আমাকে চিনেন কতক্ষণ হলো? বা আদৌ আমাকে চিনেন,আমার সম্পর্কে জানেন?
-” নাহ।
-” তাহলে কি করে এই কথাটা বললেন? আপনাদের মত কিছু মানুষের জন্যই এই কথাটা সস্তা,ফালতু হয়ে গেছে। আগে এই কথাটা বলতে একশো বার ভেবেও বলতে পারতনা মানুষ,তাই যখন বলতো তখন একটা আলাদা অনুভুতি হতো। আর এখন একশো বার আই লাভ ইউ বলার পরেও ঐ অনুভুতি টা পায় না কেউ। পাবে কি করে, যেটা সহজে পাওয়া যায় তার মূল্য একটু না বেশ কমই থাকে। আপনাদের কাছে মনে হয়,কাউকে ভালো লাগলো আর আই লাভ ইউ বলে দিলেন। আর দু’দিন পর ভালো লাগলনা তো ছুড়ে ফেলে দিলেন,মানে তুমি আমার টাইপ না সেটা বলে। কেন টাইপের কি না সেটা আগে খেয়াল থাকে না,তখন কি চোখে কালো কাপড় বাঁধা থাকে? আর আমি এমন কোন সুন্দরী নয় যে আমাকে দেখেই আপনি ক্রাশ খেয়ে ফেলেছেন।
-” প্রণয় চুপচাপ মুখ হাত দিয়ে চেপে রেখে একমনে পুষ্পর কথাগুলো শুনছিল। হঠাৎ পুষ্প থেমে যাওয়াতে হাত সরিয়ে বললো,
ক্রাশ খাওয়ার জন্য কি সুন্দরী হওয়া জরুরি?
-” পুষ্প একটু রেগে তাকালো প্রণয়ের দিকে।
-” প্রণয় বললো,” আচ্ছা আপনার কাছে সুন্দরের ডেফিনিশন কি?
-” পুষ্প কোন কথা বললোনা,বুঝলো এ ওর সাথে কথা বলার জন্য ইচ্ছে করে টপিক চেঞ্জ করছে।
-” প্রণয় নিজেই বলতে শুরু করলো,” আমাদের একটা ভুল ধারণা কি জানেন?
-” পুষ্প চুপ,মানে ওর কোন আগ্রহ নেই সেটাই বুঝাচ্ছে।
-” কিন্তু প্রণয় নাছোড়বান্দা, সে বলেই চলেছে। আমাদের ধারণা সুন্দর মানেই হলো ফর্সা সাদা চামড়া,অথচ এটা সম্পুর্ণ ভুল। একটা কালো মেয়েও সুন্দর হতে পারে,যেখানে অনেকসময় একটা ফর্সা মেয়েও অসুন্দর হতে পারে। আর ফর্সা মানেই যদি সুন্দর হতো,তাহলে প্রতিবছর ঐ সাদা চামড়ার মেয়েরাই বিশ্বসুন্দরী হতো। সৌন্দর্য আসলে ব্যাক্তিত্বের বহিঃপ্রকাশ,উন্নত মনোভাবের পরিচয়।
যেটা সবার থাকে না,যার থাকে সেই সুন্দরী। সেটা যেমন কালো মেয়ের থাকতে পারে আবার ফর্সা মেয়েরও থাকতে পারে। আর সবচেয়ে দুঃখের বিষয় হলো এই একবিংশ শতাব্দীতে এসেও এখনো গায়ের রংটাই আমাদের কাছে ম্যাটার করে। পাত্রী দেখতে গেলে আমাদের প্রথম শর্ত মেয়ে ফর্সা তো। ছেলে যেমনই হোক সেটা বিষয় না, সেটা নিয়ে কোন কথা নেই।
-” যদিও কথাগুলো পুষ্পর ভালোই লাগলো কিন্তুু সবই মতলব। ভালো ভালো কথা বলে এটেনশন পাওয়ার ধান্দা,কিন্তুু এতো সহজ না। পুষ্প ওর মতো হাঁটতে শুরু করলো,প্রণয়ও ওর পাশাপাশি হাঁটছে।
পুষ্প মেইন রোড পেরিয়ে গলির পথে হাটা ধরলো। যখন প্রণয়ও ওর সাথে আসতে নিলো,তখন দাঁড়িয়ে পড়লো।
প্রণয়ের দিকে তাকিয়ে বললো,” এই যে মিস্টার এবার নিজের রাস্তা মাপুন। এতক্ষণ কিছু বলিনি, কিন্তুু এখন এটা আমার বাসার গলি তাই এখানে একটা ছেলের সাথে হেটে আসছি দেখলে মানুষ নানা কথা বলবে। তাই দয়া করে নিজের বাসার রাস্তা দেখুন,আর ঐসব ফালতু ট্রাই অন্য কোন মেয়ের পিছনে করুন। আমি ঐ টাইপ মেয়ে নয়,বাই বস।
-” আপনার নামটা তো বলে যান অন্তত।
-” পুষ্প একবার পিছনে তাকিয়ে, শাড়ির আঁচলটা ঠিক করে সামনে চলে গেল কোন কথা বললোনা।
-” প্রণয় হাবার মতো তাকিয়ে রইলো,যাহ নামটাও জানতে পারলাম না!
আর বাইরের কান্ট্রিতে প্রথম দেখায় মেয়েরা ডেটিং এ পর্যন্ত চলে যায়।
-” যতক্ষণ পুষ্পকে দেখা গেল প্রণয় দাঁড়িয়ে রইলো,কিন্তুু পুষ্প আর একবারও ফিরে তাকালো না। প্রণয় হতাশ হয়ে গাড়ির কাছে ফিরে গেল। গাড়িতে বসে কতক্ষণ পুষ্পর কথাগুলো ভেবে আনমনে হাসলো প্রণয়। মেয়েটাকে দেখে বুঝা যায় না এতোটা কঠোর। অথবা এমন হওয়ার পিছনে হয়তো কোন বড় কারন আছে। কারন মানুষ জীবনে ধাক্কা খেয়েই এমন কঠোর হয়ে যায়,কিন্তুু এই মায়াবতীর এমন হওয়ার কি কোন বিশেষ কারন আছে! একটু গোয়েন্দাগিরি করতে হবে মিস্টার মেহবুব,এটা বলে গাড়ি স্টার্ট দিল।

#চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here