#পর্বঃ১
#এক_দেখায়
#লেখনীতে_পুষ্পিতা_প্রিমা

বি;দ্র ➤ ” মেলেছি ইচ্ছেডানা ” সংশোধিত

সেদিন কলেজ ছুটির পর কলেজগেইট পেরিয়ে বাসস্ট্যান্ডেএলাম। ক্লান্ত হয়ে বসেছিলাম সিএনজিতে। পটিয়া থেকে আজিমপুর আসার জন্য বাসস্টপে যে সিএনজিগুলো পাওয়া যায়, সেই সিএনজি গুলোতে ড্রাইভার সহ ছয়জন ভর্তি না হলে ছাড়ে না। আমি যখন সিএনজিতে বসলাম তখন দুইজন পুরুষ ছিল, একজন মহিলা। আমি মহিলাটির সাথে পেছনের সিটে গিয়ে বসলাম। আমি সহ পাঁচজন হলাম। দুপুরের খাঁ খাঁ রোদ তখন তার নিজস্ব গতিতে তেজ ছড়াচ্ছে। আমি ঘেমে একাকার। চারপাশের গাড়ির হর্নের আওয়াজ,লোকজনের কোলাহল,ধূলাবালিতে প্রচন্ড বিরক্তিকর আমি। এদিকওদিক তাকিয়ে বিরক্তিকরভাবে নড়াচড়া করতে করতেই মহিলাটির পাশ থেকে সরে পড়লাম। তেষ্টা পেয়েছে। গলা ভেজানো দরকার। ভদ্র মহিলা বললেন,
‘ কোথায় যাচ্ছ মা ? এখুনি গাড়ি ছেড়ে দেবে।
আমি তার মিষ্টি কথার বিনিময়ে হাসলাম। বললাম,তেষ্টা পেয়েছে আন্টি। পানির বোতল কিনব।
ওনি হেসে বললেন, তাড়াতাড়ি এসো।
আমি নামতে গেলাম। কিন্তু গাড়ি থেকে নামতে যাব তখনি একটি ছেলে তাড়াহুড়ো করে এসে বলল,সাইড চাপুন।
আমি কিছু বলতে চাইলাম। ড্রাইভার বললেন, ওনাকে বসতে দিন। গাড়ি ছাড়ব।
আমি বিরক্তি নিয়ে সাইড দিলাম। ছেলেটি বোধহয় আমার বিরক্তির কারণ বুঝতে পারল না। তাই গাড়ি ছাড়ার পর জিজ্ঞেস করে বসল,
‘ আপনি কি নামতে চেয়েছিলেন?
আমি শক্ত গলায় জবাব দিলাম, হ্যা।
ছেলেটি বলল, ওহ সো সরি? আগে বলবেন না? এখন? গাড়ি তো ছেড়ে দিয়েছে। কেন নামতে চেয়েছিলেন?
আমি বড্ড বিরক্তি নিয়ে বললাম, আপনি জেনে কি করবেন?
ছেলেটি যেন ভড়কাল। বলল, না এমনি, যদি কোনোভাবে হেল্প করতে পারি। এই আর কি।
আমি নড়েচড়ে বসে বললাম, দরকার নেই সাহায্য। অপরিচিত কারো কাছ থেকে সাহায্য নিতে আমি পছন্দ করিনা।
ছেলেটি মাথা উপর নিচ করে ঠোঁট গোল করে বলল, ওহহহহ আচ্ছা।
আমি অন্যদিকে মুখ করে বসলাম। হঠাৎ দেখলাম আমার সামনে ছেলেটি প্রাণ আপ ধরে রয়েছে। আমি কৌতূহল নিয়ে তার দিকে তাকালাম। ছেলেটি হেসে বলল,
‘ খান। আপনার মেবি তেষ্টা পেয়েছে। তাই মাথা গরম হয়ে আছে। নিন। খেয়ে মাথা একটু ঠান্ডা করুন। নিন।
আমার পাশে বসা মহিলাটি উৎসুক হয়ে কান্ড দেখছে। আমি নিঃশব্দে প্রাণ আপ হাতে নিলাম। খেলাম না। ছেলেটি বলল,
‘ বসে আছেন কেন? এটা বাসায় নিয়ে যাওয়ার জন্য দেইনি কিন্তু।
আমার রাগ হলো ভীষণ। আমি দিয়ে দিলাম। বললাম,
‘ লাগবে না। আপনি আপনার বাসায় নিয়ে যান সেটি।
আমার পাশের মহিলাটি হেসে উঠলেন। বললেন,
‘ আহা রেগে যাচ্ছ কেন? অ্যাই রায়ান তুই কি শুরু করেছিস? বাসায় করিস করিস বাইরে ও এসব ফাইজলামি?
আমি কিছু না বুঝে ছেলেটির মুখের দিকে তাকালাম। ছেলেটি হাসছে৷ আবার মহিলাটির দিকে তাকালাম । বললাম,
‘ উনি আপনার ছেলে?
মহিলাটি মৃদু হেসে মাথা নাড়াল। বলল,
‘ খেয়ে নাও। তেষ্টা কমে যাবে। খাও।
আমি ওনার জোরাজুরিতে দু চুমুক খেলাম। আর দেখলাম ছেলেটি বাইরের দৃশ্য দেখছে মন ভরে। হয়ত মিটিমিটি হাসছে। আমি মনে মনে গালি দিলাম। হাসার কি আছে? আশ্চর্য!
বাসা থেকে আর ও কিছু আগে নেমে গেলাম সিএনজি থেকে। এসব ভদ্র মহিলার বিশ্বাস নেই। বাড়ি, ঠিকানা মুখস্থ করে নেবে। ওনাদের হাসিমুখে বিদায় দিলাম। ছেলেটি আমাকে বলল,
‘ বোতলটি যত্নে রাখবেন একটু।
সিএনজি ছেড়ে দেওয়ার সাথে সাথে আমি দূরে ছুড়ে মারলাম সেটি। বিরক্তিকর।

_______________

বাসা থেকে কিছুটা দূরে কালিয়াসে ফুপীর বাসা৷ শুক্রবারে দাওয়াত পড়ল ফুপীর শ্বশুরের বছরের মেজবানে । আমার যেতে অমত থাকলে ও বাবার জোরাজুরিতে যেতে হলো৷ দাওয়াত খেতে একদফা চমকালাম। ছেলেটি এখানে?
ক্রিকেট ব্যাড হাতে নিয়ে বাইরের লনে ছোট ছোট বাচ্চাদের সাথে খেলছে। আমি বাবার পিছু পিছু যাওয়ার চেষ্টা করলাম। কিন্তু সব শেষ করে দিল ছেলেটা৷ বল ছুড়ে আসল আমার দিকে৷ ধপ করে আমার মাথার উপর এসে পড়ল। আমি আর্তনাদ করে উঠতেই সবাই হুড়মুড় করে দৌড়ে এল। ফুপী এসেই চিল্লাচিল্লি শুরু করল৷

‘ আমার ভাইঝিটা এতদিন পরে আমার এখানে এসেছে। কে মেরেছে বল???

ছোট ছোট বাচ্চাগুলো চুপচাপ ঠোঁটের উপর আঙুল দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে৷ ফুপী তাদের সাথে আর না পেরে আমাকে ভেতরে নিয়ে গেলেন৷ আমি তো দেখেছি আমাকে কে মেরেছে। তাই ফুপীকে বললাম
‘ ফুপী ওখানে যে বড় ছেলেটা ছিল সে আমাকে মেরেছে৷
ফুপী বলল,
‘ বড় ছেলে মানে কে? রায়ান? ও আল্লাহ! রায়ান মেরেছে?
আমি উপর নিচ মাথা নাড়ালাম। ফুপী জিভে কামড় দিয়ে বললেন,
‘ ওই তোমার রোহিতা আন্টির ছেলে, বেশ ভালো ছেলে। হয়ত ভুলে এসে পড়েছে। ইচ্ছে করে মারেনি।
আমি ভেবেছিলাম ফুপী ছেলেটির মাথা ফাটিয়ে দেওয়ার জন্য তেড়ে যাবে। কিন্তু না? ফুপী তো উল্টো আমাকে ছেলেটির গুনগান শোনাচ্ছে।
রাতে মেজবানে বাড়ি ভর্তি মেহমান। চারদিকে মানুষের সমাগম। খাওয়া দাওয়া, অতিথি অ্যাপায়নে ব্যস্ত সবাই। বাবা ব্যস্ত কয়েকজন লোকের সাথে কথা বলায়। আমি বেশ চাপা স্বভাবের হওয়ায় সহজে কারো সাথে কথা বলতে পারিনা। মিশতে পারিনা। কাজিনগুলোকে ও পাওয়া যাচ্ছেনা। ফুপী তাদের কাজ ধরিয়ে দিয়েছে। ফুপীর বাড়ির উঠোনের একপাশে নির্জন জায়গা খুঁজে বের করলাম। চেয়ার টেনে বসে ফেসবুকে নিউজফিড ক্রল করার সময় ওই ছেলেটি কোথা থেকে যেন উড়ে এল। আমার দিকে চকলেট জাতীয় কিছু বাড়িয়ে দিয়ে বলল,
‘ নিন এটি আপনার জন্য। বল মেরেছিলাম তাই। বেশি ব্যাথা পেয়েছেন??

আমি মনে মনে মস্ত বড় গালি দিলাম। ছেলেটি হুট করে চলে গেল। ফুপীর বড় ছেলে শাহেদ ভাইয়াকে একসাথে নিয়ে আবার হাজির হলো। ছেলেটি আমার কিছুটা পেছনে বসল। শাহেদ ভাইয়া আমার সামনে বসে পড়ল। শাহেদ ভাইয়ার সাথে বেশ কিছুক্ষণ কথা বলার পর দেখলাম ছেলেটা নিরুদ্দেশ। মনে মনে খুশি হলাম। হাতের চকলেটসটি খুলে মুখে দেওয়ার আগে শাহেদ ভাইয়া আমায় আটকালো।
‘ পানি ছাড়া ঔষধ খাচ্ছ কেন রুশা?
আমি চমকে হাতের দিকে তাকালাম। দেখলাম ওইটা চকলেটস নয়,একটি প্যারাসিটামল। রাগে আমার মাথা ধরে গেল। ঘাড় ঘুরিয়ে ছেলেটিকে দেখার চেষ্টা করতেই দেখলাম ছেলেটি বাবার সাথে হেসেখেলে কথা বলছে। আমাকে দেখতেই খাওয়ার জন্য ইশারা করল। আমার কান্না পেল রাগে। কি করব বুঝে উঠতে না পেরে চেয়ার ছেড়ে উঠতে গেলাম৷ কি একটা কান্ড?

চেয়ারটা ও আমার সাথে যেতে লাগল। শাহেদ ভাইয়া হেসে দিল। বলল,
‘ রুশা তোমার ওড়না দিয়ে কেউ চেয়ারে গিট মেরে দিয়েছে।
আমি এদিকওদিক না তাকিয়ে ছেলেটির দিকে তাকালাম। ছেলেটি দূরে সরে গিয়ে পেট চেপে হাসতে লাগল। হাসতে হাসতে ঢলে পড়ার অবস্থা হলো। আমার চোখ,কান দিয়ে গরম গরম হাওয়া বের হলো। হাতের মুঠি শক্ত হলো। এই ছেলেটাকে আমি মেরে ফেলব।
ছেলেটি হাত দিয়ে ইশারা করে বলল,
‘ কাম ডাউন। কাম ডাউন।
আমি ওড়নার গিট খুলে নিলাম। ওড়না ঝাড়ি মেরে চোখ রাঙিয়ে চলে গেলাম। সোজা রান্নাঘরে গিয়ে আশপাশ না দেখে ফুপীকে বললাম,
‘ ফুপী ওই বল মারা ছেলেটি আমাকে দেখো কি করেছে?
কয়েকজন একসাথে বলে উঠল,
‘ কোন ছেলে? কি করেছে? কি করেছে?
ফুপী বলল,
‘ বল মারা ছেলে? মানে রায়ান?
আমি উপরনিচ রেগে মাথা নাড়ালাম। ফুপী জিভে কামড় দিল। সাথে সাথে হেসে বলল,
‘ আবার দুষ্টুমি করেছে?
আমি বললাম,
‘ না। চকলেটস দেইনি, দিয়েছে প্যারাসিটামল। তারপর চেয়ারের সাথে আমার ওড়নার গিট মেরে দিয়েছে।
ফুপীসহ বাকি সবাই হেসে উঠল একসাথে। আমি রেগে বললাম,
‘ ওই ছেলেকে আমি ছাড়ব না। মেরে ফেলব একদম। তুমি দেখো।
চলে আসার সময় নিজে নিজেই লজ্জায় পড়ে গেলাম৷ দরজার কাছে ছেলেটির মা মিটিমিটি হাসছে। আল্লাহ! আমার কথা কি শুনে ফেলেছে?
আমি উনাকে ডিঙিয়ে চলে এলাম। কি ভেবেছে কে জানে?
মেহমানদের সমাগম একটু কমে আসতেই আমি ফুপীর ডাক শুনলাম। তাড়াহুড়ো করে যেতেই দেখলাম ছেলেটির মা ছেলেটির কান টেনে ধরেছে। আমাকে দেখেই বলল,
‘এই দেখো, কান মলে দিচ্ছি। তোমার সাথে দুষ্টুমি করার শাস্তি।
ছেলেটি আমাকে দেখে বলল,
‘ চকলেট দেইনি বলে মায়ের কাছে বিচার দিলেন? বল পড়ে ব্যাথা পেয়েছেন বলে প্যারাসিটামল দিয়েছি,আর আপনি আমার মোমেন্টায় প্যারাময় বানিয়ে দিলেন৷
আমি বললাম,
‘ চেয়ারে ওড়না……
ছেলেটি আমাকে থামিয়ে দিয়ে বলল,
‘ আপনার বাবা বলেছিলেন। জিজ্ঞেস করে আসুন।
আমি অবাক হলাম।
‘ বাবা? বাবা কখনো এমনটা বলবে না।
আমি সত্য মিথ্যা যাচাই করতে গেলাম না। ছেলেটি মিথ্যেই বলছে। বাবাকে আমি ওসব কথা জিজ্ঞেস করতে কখনোই যাব না তা ছেলেটি বুঝে নিয়েছে। আমি চলে এলাম।
ছেলেটি আমার পিছু পিছু এসে বলল,
‘ আপনার বাবাকে গিয়ে জিজ্ঞেস করুন। যান।
আমি বললাম,
‘ মাথা খারাপ। আমি বাবার সাথে যেমন তেমন ব্যাপার নিয়ে কথা বলিনা৷ অন্তত আপনার মতো ফালতু মানুষকে নিয়ে তো একেবারেই নয়।
ছেলেটি হাসল আওয়াজ করে। মাথার চুলগুলো ঠিক করতে করতে বলল,
‘ আপনি নাকি বিবাহিত?
আমি চিল্লিয়ে বললাম,
‘ মাইন্ড ইয়োর ল্যাঙ্গুয়েজ। আমার বিয়েই হয়নি। ফালতু,,,,,,
ছেলেটি আমাকে থামিয়ে দিয়ে চোখ বড় বড় করে বলল,
‘ অবিবাহিত সেটি এত জোরে বলে লাভ নেই বাপ। সিট অলরেডি বুকিং।
আমি পা দিয়ে দুম করে মেঝেতে আঘাত করে গর্জন করে বললাম,
‘ ফুপী????? এই ছেলেটাকে আমি সত্যি সত্যি খুন করব। মেরে ফেলব।
ছেলেটি যেতে যেতে হাসল। বলল,
‘ খুন করে লাভ নেই ম্যাডাম। জেলে ও জায়গা নেই। বুকিং।

চলবে,

বি,দ্র ; গল্পের নামটি চেন্জ করেছি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here