#হৃদয়_জুড়ে_তুমি

#দুই

শান্তাকে একা রিকশায় এগিয়ে যেতে দেখে থামতে বলে তন্ময়।
— কিরে তুই একা যে? তটিনী কোথায়?

— ভাইয়া, ওর তো এসাইনমেন্টের কাজ ছিল তাই আমাকে চলে যেতে বলল।
— ও বলল আর তুই চলে আসলি?
শান্তা আমতা আমতা করে বলে, বাসায় কাজও ছিল আমার।
— আচ্ছা, রিকশা থেকে নাম। তোকে আমি পৌঁছে দিচ্ছি।
— চলেই তো এসেছি ভাইয়া। আমি একাই পারবো।
— নাম তো। ফুচকা খাবি?
শান্তা ঠোঁট টিপে হাসে। তন্ময় ভাইয়ের উদ্দেশ্য ঠিক শান্তা জানে। হুম খাবো, চলো।

— তোর ক্লাস ঠিকমতো চলছে।
— হুম।
— ভার্সিটিতে সবাই আসে-টাসে?
শান্তা খানিক জোরে হেসে বলে, হুম ভাইয়া, সবাই আসে-টাসে। তোমার সাথে যে ঝগড়া সেটাও বলে-টলে।

তন্ময় গম্ভীর হওয়ার ভান ধরে বলে, কি বলে?

— স্বর্ণা আপু তো তোমাকে বিয়ের চাপ দিচ্ছে। করছো না কেন?
— তোদের মতো বোন মাথার উপরে রেখে ক্যামনে বিয়ে করি, বেকুব? আমি বড় ভাই, আমার একটা দায়িত্ব আছে না! তটিনীর বিয়ে দিয়ে না আমি বিয়ে করবো, এটা স্বর্ণার বোঝা উচিত।
— আচ্ছা তোমরা দুই বন্ধু আমাদের পিছনে লেগেছো কেন, বল তো? ভাইয়াও আমাকে আগে বিয়ে দিতে চায়। তোমরা নিজেরা আগে করলে সমস্যা কি?
— তোর বেশি বুঝা ভাইয়ের বিয়ে করার কোনো চান্স নেই, এটা নিশ্চিত থাক।
— কি বলো, বাবা তো বউ খুঁজছে।
— তাই নাকি? চাকরী পাওয়ার সাথে সাথে একেবারে বিয়ের মিষ্টি খাবো মনে হয়।
— কোথা থেকে? ভাইয়া তো বিয়ের নামই শুনতে চায় না। আচ্ছা, তুমি তো ওর বন্ধু, ভাইয়ার কোনো পছন্দ আছে বা ছিলো নাকি?
— আরে নাহ! শালা তো চাপা স্বভাবের। থাকলেও আমরা জানবো না। বুঝদার ভাই তোর, প্রেম টেম থেকে দূরে থাকে।

ফুচকার প্লেট খালি করে হাত ঝাড়া দিয়ে শান্তা বলে, ভাইয়া ফুচকা খাওয়ানোর জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। এখন তুমি একটা উপহার পাবে আমার কাছ থেকে।

তন্ময় চোখ উজ্জ্বল করে বলে, কি দিবি?
— চিঠি!
— চিঠি? এই যুগে কেউ চিঠি লিখে?
— হুম, তোমার স্বর্ণা ঝগড়া করে এখন পস্তাচ্ছে। ইয়া লম্বা চিঠি দিয়েছে তোমাকে। ধরো।
— চিঠি খোলা কেন? তুই আবার পড়িসনি তো?
— না না! কি বলো?

–যা বাসায় যা। আমাকে আবার তটিনীকে আনতে যেতে হবে। আকাশ কেমন কালো করেছে, জোরে বৃষ্টি নামবে মনে হয়।
— ভাইয়া, শোভন ভাইয়া তো নীলক্ষেত আছে। ওকে বলে দাও তটিনীকে আনতে।
— হুম ভালো বুদ্ধি।
***

— তটিনী, কোথায় আছো তুমি?
— ফুলার রোডে।
— ঠিক আছে তুমি থাকো, আমি আসছি।

মোবাইল হাতে তটিনী জোরে জোরে শ্বাস নেয়।

তন্ময় ভাইয়া কিছুক্ষণ আগেই কল দিয়ে বলেছে বাসায় একা একা ফিরার দরকার নেই। শোভন তোকে নিয়ে আসবে।
এরপর থেকেই তটিনীর শ্বাস বন্ধ হয়ে আসছিলো। এখন শোভনের কণ্ঠ শুনে মনে হচ্ছে আর দাঁড়াতে পারবে না। এখনি দম বেরিয়ে মারা পরবে।

শোভন লম্বা পা ফেলে কিছুক্ষণেই তটিনীর সামনে এসে দাঁড়ায়। একটু হাঁপাচ্ছে।
–আকাশ কেমন কালো করেছে দেখেছো? এখনই ঝুম বৃষ্টি নামবে। জলদি রিক্সা নিতে হবে -বলতে না বলতেই বড় বড় ফোটায় বৃষ্টি নামে।

বৃষ্টিতে দুহাত ছড়িয়ে উচ্ছল কণ্ঠে তটিনী বলে, গাছের নীচে দাঁড়াবেন?
— আরে না। ভিজে যাবো পুরাই।
— একদিন ভিজলে কিচ্ছু হবে না।
— জ্বর আসবে তোমার।
— আসুক।
–তন্ময় রাগ করবে।
— করুক। আজ আমি ভিজবো।
— তটিনী জিদ করো না।
— করবো।
শোভন হঠাৎ তটিনীর হাত ধরে ছুট দেয়।
ছুটতে ছুটতে এদিক সেদিক তাকায় কোথাও আশ্রয় পাওয়া যায় কিনা।
বৃষ্টির শীতল হওয়ায় তটিনীর পুরো শরীর শিরশির করে উঠে।
শোভন তার হাত ধরে ছুটছে। মনে মনে দোয়া করে আজ যেন কোথাও তিল পরিমান ঠাঁই না মিলে। এভাবেই দুজনে হাত ধরাধরি করে ছুটবে।

কতক্ষণ ছুটেছে তটিনী জানে না তবে দুজনেই কাকভেজা হয়ে একটা যাত্রী ছাউনিতে দাঁড়ায়।

বৃষ্টির কারণে ছাউনীতে মানুষের ভীড়ে তিল পরিমান ঠাঁই নেই। তাতেই শোভন তটিনীকে নিয়ে একেবারে শেষ প্রান্তে দাঁড়ায়।

ভেজা শার্ট গায়ে লেপ্টে আছে শোভনের। দুজন এতোটা কাছাকাছি যে একে অপরের উষ্ণ শ্বাস অনুভব করতে পারে।
এতো মানুষের মাঝেও তটিনীর মনে হয় এখানে শুধু শোভন আর তটিনী ছাড়া আর কেউ নেই।

শোভনের বুকের কাছে তটিনী অথচ ভাবলেশহীন দৃষ্টিতে শোভন বৃষ্টি দেখছে।
প্রবল বেগে বৃষ্টির ধারা শহর ভিজিয়ে দিচ্ছে। কোনো এক ভিন্ন অনুভূতিতে ভিজে যাচ্ছে শোভনের মন। মনের ইচ্ছে এ বৃষ্টি যেন না থামে।

তটিনী শোভনের দিকে মুখ তুলে তাকায়। চিন্তিত মুখ দেখে ভাবে, কিসের এতো চিন্তা? একদিন বাড়ি না ফিরলে কি হয়?
আজ কার্ফিউ হোক। যে যেখানে আছে সেখানেই থাকার ঘোষনা হোক। শোভন এভাবেই তটিনীর সামনে দাঁড়িয়ে থাকুক। আজীবন!

শোভন ভেজাচুলগুলোয় হাত বুলিয়ে বলে, তন্ময় এই নিয়ে তিনবার কল দিয়েছে। কি যে করি?

— ভাইয়াকে বলেন, এতো চিন্তা করার কিছু নেই। আপনি আমার সাথে আছেন।
শোভন শান্ত চোখে তটিনীর দিকে একবার তাকিয়ে আবার সামনে তাকায়।

— চলো, বৃষ্টি কিছুটা কমেছে। এগিয়ে রিক্সা পাই কিনা!
— না না, আমি যাবো না। বৃষ্টি এখনও গুড়ি গুড়ি হচ্ছে। আমরা আরোও কিছুসময় এখানে থাকি।

শোভন আবার তটিনীর হাত ধরে টেনে নিয়ে চলে।

তটিনী মুচকী হাসে, এটাও মন্দ না।

রাস্তায় হেঁটে হেঁটে রিক্সা খোঁজে শোভন। কোনো চালকই যেতে রাজি হচ্ছে না।
তটিনীর হাত এখনও ধরে রেখেছে সে।

তটিনী হঠাৎ নিজের আঙ্গুলগুলোকে সক্রিয় করে শোভনের আঙ্গুলগুলোকে স্পর্শ করে।
শোভন ব্যস্তভঙ্গির মাঝেও চমকে ওঠে। একনজর তটিনীর দিকে তাকায়।
তটিনী নির্লিপ্ত। সেও যেন রিক্সা খোঁজায় মনযোগী।

একটা রিক্সা পেয়ে ঝটপট উঠে পড়ে দুজন।

মাথার উপর হুড আর ভেজা পলিথিন জড়ানো আঁটসাঁট ছোট্ট কুটিরে যেন তটিনী আর শোভনের সংসার। হঠাৎ তটিনী খিলখিলিয়ে হেসে উঠে।
–সেরকম মজা হলো আজ, তাই না? একেবারে বৃষ্টি বিলাস।

শোভন চুপ থাকে। ঠোঁটের কোণে স্মিত হাসি।

প্রকৃতি মাঝে মাঝে জীবনের ডাইরীতে লিখে রাখার মতো চমক দিয়ে দেয়।

আরেকবার তটিনীর হাতটা ধরার ইচ্ছে জাগে মনে। মনের মধ্যেই তা দমন করে নেয় ।

বাসায় ফিরলে বাবা বেশ রাগ করেন। আগামীকাল অফিস জয়েনিং। জ্বর টর বাঁধলে কেমন হবে ব্যাপারটা।

ভালোলাগায় বুদ হওয়া শোভন যেন মেঘের ভেলায় ভেসে বেড়াচ্ছে।
রাতে শুয়ে শুয়ে ম্যাসেজ দেয় তটিনীকে।
— ঠিক আছো?
উত্তর আসে, হু..!
–জ্বর আসে নি তো?
–না।

******
অফিসের প্রথম দিন শেষ করে ফেরার পথে বাবা কল দিয়ে বলেন, কিছু পরিবারকে মিষ্টি না দিলেই নয় শোভন। ওরা সুখে দুঃখে পাশে ছিলো। তোর সুখবর খালি হাতে কিভাবে ভাগাভাগি করি?

মিষ্টি হাতে বাড়িওয়ালা আঙ্কেলের বাসায় বাবা নিজে যান। বরকত চাচা ও সোমাইয়া আন্টির বাসায় যায় শান্তা আর শুভ।

তন্ময়দের বাসায় শোভন নিজে উপস্থিত হয়।
গতকালের অনুভূতির রেশ এখনও মনে রয়ে গেছে।
কলিং বেল বাজতেই দরজা খুলে দেয় হলুদ রঙা ফড়িং।
শোভন কিছুক্ষণ অপলক চেয়ে থাকে। হলদে শাড়িতে তটিনী যেন ভেজা সোনালু ফুলের মতোন সিগ্ধ।
কিন্তু চঞ্চল তটিনীর চোখে আজ রাজ্যের অভিমান। অভিমানী চোখ আড়াল করে দরজা থেকে সরে দাঁড়ায় সে।
শোভন সামনে তাকিয়ে দেখে ড্রইং রুমে পরিবারের সবাই উপস্থিত। সাথে তন্ময়ের মামা মামী।
শোভনের চাকরী সংবাদে সবাই আনন্দে হৈ হৈ করে উঠলেও তটিনী ছলছল চোখে রুমে চলে যায়।

তন্ময় শোভনকে নিজের রুমে নিয়ে জানায় খুশির খবর। তটিনীকে দেখতে ছেলেপক্ষ এসেছিলো। মামা মামী হুট করে নিয়ে এসেছে। ছেলে নাকি যেমন দেখতে, তেমন কর্মে। কানাডায় পড়াশোনা শেষে ওখানেই স্যাটেল। বিয়ে করতে দেশে এসেছে। ছেলের মা বলে গেছে, আজ আমরা পছন্দ করে গেলাম, দুএকদিনে ছেলে মেয়ে নিজেরা একে অপরকে দেখে, কথা বলে পছন্দ করে নিলে আলহামদুলিল্লাহ।

শোভন নির্বাক তাকিয়ে থাকে হাস্যজ্জ্বল তন্ময়ের দিকে।
মুহূর্তে কেমন শূন্যতা ভর করে মনে।
টলমলে পায়ে রাস্তায় বেরিয়ে হাঁটতে থাকে উদ্দশ্যহীন ভাবে।

রাত নটা, দশটা, এগারোটা পেরিয়ে গেছে।

চিন্তিত শান্তা কল দিলে, খেয়ে শুয়ে যেতে বলে শোভন।

চঞ্চল ফড়িংটিকে নিজের করে কখনো পেতে চায় নি শোভন। আসলেই কি চায় নি?
তবে কেন আজ হারানোর ভয়ে চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে? কেন বলতে ইচ্ছে করছে তুমি কারো হবে না! শুধু আমার রবে!

উদ্দেশ্যহীন পথ শোভনকে যেন ঠিক তন্ময়দের বাড়ির পেছনের গলিতে দাঁড় করায়। যেখান থেকে তটিনীর রুমের বারান্দা দেখা যায়।

তিনতালার বারান্দায় তটিনী রেলিংয়ে ভর দিয়ে দাঁড়ানো। আকাশের দিকে দৃষ্টি, আনমনে।

তটিনীর দিকে চেয়ে শোভন এই প্রথম ভালোবাসার জল চোখে অনুভব করে।

বেখেয়ালী তটিনীর চোখ হঠাৎ শোভনের চোখে পড়ে। ওতোদূর থেকে শোভনের চোখের নোনাজল হয়তো দেখতে পায়নি তটিনী। তাই তো কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে রুমে চলে যায়।
শোভন শূন্য বারান্দাতেই চেয়ে রয়। তটিনী কি এভাবেই হারিয়ে যাবে জীবন থেকে?

হঠাৎ কাঁধে হাত রাখে তন্ময়।

–কি রে? এতো রাতে তুই বাইরে? আমি তো সিগারেট খেতে এলাম তুই এখানে কেন?

শোভন অন্যমনস্ক হয়ে উত্তর দেয়, বাবার ঔষধ কিনতে এসেছি।

গলির এ মাথায় কোনো ফার্মেসী নেই তন্ময় জানে। কিছু বুঝে বা না বুঝে শোভনের কাঁধে হাত রেখেই বলে, বাসায় যা শোভন, রাত হয়েছে।

বাসায় দরজা খুলে দেয় বাবা।
— তুমি শোয় নি কেন, বাবা? আমার কাছে তো চাবি ছিলো।
— চল, রুমে চল।

রুমে বাবা গম্ভীর হয়ে বসেন।
— কি হয়েছে তোর?

— কিছু না তো!

— এতো রাত বাইরে কেন ছিলি?
— এমনি বাবা। তন্ময়ের সাথে ছিলাম।
— তন্ময় তো উল্টো তোকে খু্ঁজতে বের হলো।

শোভন চুপ হয়ে রয়। এরচেয়ে মিথ্যা বলা ঠিক হবে না।
বাবা শোভনের কাঁধে হাত রেখে বলেন, আমাকে বল শোভন।

শোভন নিজেকে আর থামিয়ে রাখতে পারে না। বাবাকে জড়িয়ে ধরে ডুকরে কেঁদে ওঠে।
কিছু না বুঝেও বাবার মন ছেলের কষ্টে কেঁদে উঠে।

— আমি অনেক বড় ভুল করে ফেলেছি বাবা। এখন আমি তা মেনে নিতে পারছি না। নিজেকে অনেক সামলেছি। কিন্তু এখন আর পারছি না।

— কি ভুল করেছিস? খুলে বল!

শোভন মাথা নিচু করে অপরাধী কন্ঠে বলে, আমি তটিনীকে ভালোবাসি।

— এটা তো ভালো কথা। ভুল কোথায়?
তটিনী তোকে ভালোবাসে না?

— তা আমি জানি না।
— জানার চেষ্টা কর। কাঁদছিস কেন বোকার মতো?

— ওর বিয়ে ঠিক হয়ে যাচ্ছে। পরিবারের সবাই খুব খুশি। তন্ময় খুব খুশি। পাত্র তটিনীর যোগ্য।
আমি তো কিছুই না বাবা। কেবল চাকরী পেয়েছি। আমার কিছুই করার নেই।

বাবার ভেতরটা চূরচূর হয়ে ভাঙ্গতে থাকে। ছেলেটা চাপা স্বভাবের, তাই বলে এতোটা আত্মবিশ্বাসের অভাব। আজ মা নেই বলে কি শোভন ভেতরে ভেতরে হেরে যাচ্ছে। পরিবারের দায়িত্ব নিতে গিয়ে কি ছেলেটা নিজের দায়িত্ব নিতে ভয় পাচ্ছে?
— তুই তটিনীকে তোর মনের কথা বল, শোভন।

— না বাবা, ও কি পারবে এ পরিবারে, আমাদের সীমিত আয়ে মানিয়ে চলতে? ওর অনেক কষ্ট হবে। তাছাড়া তুমিও কি তটিনীকে মন থেকে মেনে নেবে?

— কি বোকার মতো কথা? কেন মেনে নিবো না?

— ও তো অনেক চঞ্চল, ছটফটে। এ পরিবারের দায়িত্ব কিভাবে নেবে ও?

— আরে বোকা, আমি তিনটে চুপচাপ বাচ্চা পেলেছি এখন একটা চঞ্চল বাচ্চা এলে বরং আমার সময় আরও ভালো কাটবে। আর এ-তো তটিনী, আমারই মেয়ে। তুই তোর চিন্তা কর।

— বাবা, তুমি বুঝছো না। দুপরিবারের এতো ভালো সম্পর্ক আমার একটা ভুলে সব নষ্ট হয়ে যাবে। তুমি কি শান্তার ভালো বিয়ে হোক চাও না?

— অবশ্যই চাই। কিন্তু শান্তা যদি কাউকে ভালোবাসে তবে আমি সেখানে আগে রায় দিবো। তটিনীর বেলাতেও তাই হতে পারে শোভন। তুই তটিনীকে বলে দেখ।

— বিষয়টা এতো সোজা না।

দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বাবা বলেন, দেখ শোভন, আমি তোর বাবা হয়ে বলছি, সবকিছু হিসেব মিলিয়ে হয় না। আর ভালোবাসার বেলায় তো নয়ই। দায়িত্বশীল ছেলে, বড় ভাই, বন্ধু অনেক হয়েছিস এবার নিজের জন্য ভাব। ভালোবাসা নিজে থেকে জয় করা শিখ।

*****

বিকালে তন্ময় কল দিয়ে বলে, ব্যস্ত না থাকলে বাইরে আয়।

গলির মাথায় তটিনীকে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে তন্ময়। আসমানী রংয়ের শাড়ি পরে তটিনী নত মুখে দাঁড়ানো।

হৃদয় চেপে ধরে ধীর পায়ে সামনে এগোয় শোভন।

— শোন শোভন, একটা জরুরি কাজে আমাকে এক্ষুনি যেতে হবে। তুই তটিনীকে একটু সানলাইট ক্যাফেতে নিয়ে যা তো।

শোভন পালানোর জন্য তড়িঘরি বলে, আমারও অন্যদিকে কাজ আছে। তুই নামিয়ে দিয়ে তারপর কাজে যা।

— আরে আমার সমস্যা আছে বলেই তো তোকে বলছি।

— আমি কেন?

তন্ময় সরু চোখে চেয়ে বলে, কারণ আমার তোকেই পছন্দ।

শোভন বোকার মতো তাকায়।

— দেরী করিস না। যা তো।

গলি থেকে মেইন রোডে উঠে রাস্তা পেরুলেই ক্যাফে।
শোভনের পাশে একা দাঁড়িয়ে আছে তটিনী।
শোভন উসখুস কণ্ঠে বলে, চলো হেঁটে যাই।
তটিনী মাথা নেড়ে সায় দেয়।

দুজনে চুপচাপ হেঁটে ক্যাফেতে পৌছায়। ছয়তালার ছাদে খোলা আকাশের নীচে সারি সারি চেয়ার টেবিল পাতা। ভেতরে কিছুটা ব্যস্ততা। পেছনের দিকে পুরাই নিরিবিলি। সিড়ি দিয়ে নিচে নামার ব্যবস্থা।
মোবাইলে চোখ রেখে ওয়েটারকে পাশ কাটাতে গিয়ে অযথাই শোভনের সাথে ধাক্কা খায় তটিনী। দুজনেরই মোবাইল হাত থেকে পড়ে যায়। শোভন নিজেরটা পকেটে পুরে তটিনীরটা হাতে তুলে দেয়।

তটিনী ধন্যবাদ জানায় তাকে পৌছে দেয়ার জন্য।

— তুমি কি একা যেতে পারবে বাসায়? নাকি আমি পেছনে অপেক্ষা করবো?

নত মুখ ভার করে ঠোঁট কামড়ে থাকে তটিনী।

কোনো উত্তর না পেয়ে শোভন আবার প্রশ্ন করে, এখানে কার সাথে দেখা করতে এসেছো? কোনো বান্ধবী?
— না।
— তাহলে?
— গতকাল যারা আমার বাসায় এসেছিল তাদের ছেলের সাথে দেখা করতে।

শোভনের পায়ের নীচের মাটি দুলে ওঠে। মুখে কথা আসে না।
তটিনী চলে না গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে শোভনের পাশে।
শোভন শক্ত মূর্তির ন্যায় তটিনীর দিকে তাকিয়ে থাকে।
তটিনী দীর্ঘ শ্বাস আড়াল করে বলে, আসি।

শোভন খপ করে তটিনীর হাত টেনে ধরে।

জিজ্ঞাসু চোখে তটিনী তাকায় শোভনের দিকে কিছু শোনার অপেক্ষায়।
শোভনের মন চিৎকার করলেও মুখ কিছু বলে না।

হাত ছাড়িয়ে ভেতরে চলে যায় তটিনী।

উদাস চোখে আকাশের দিকে তাকায় শোভন। আকাশের আজ মন খারাপ। যে কোনো সময় অজস্র ধারে কান্না শুরু করবে।

চলবে।

ঝিনুক চৌধুরী।।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here