গল্পঃ হৃদয়ের বন্ধন।
পর্বঃ৪৩
লেখাঃ #মেহের।

অন্যদিকে দোলা চেঁচিয়ে বলছে, ওদের সাহস হলো কী করে আমার মেয়েটাকে এভাবে মারধর করার।
মেয়েটার হাতে কয়েক জায়গায় লাল বানিয়ে ফেলেছে এর একটা বিহিত তো করেই ছাড়ব।
দেবর হয়ে ভাবীকে মারার ও ধাক্কা দেওয়ার সাহস হয় কি করে?
সিফাতের ভাইকে তো আমি জেলের ভাত খাওয়াবো।
ওরা তো আমাদের তো চিনে না।

এদিকে রেশমা বলল,মা সিফাতের বোন আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করে ।
এই মেয়ের বিয়ে হয়েছে তবুও বাপের বাড়িতে এসে পরে থাকে আর আমার বিরুদ্ধে শ্বাশুড়ির কাছে সত্য মিথ্যা কথা লাগায়।

দোলা মেয়ের কথা শুনে বলল,ওটা তো একটা বদের হাড্ডি।

রেশমা আবার বলে,জানো মা আমি সিফাতের কাছে ওর বোনের নামে বিচার দিলে সে উল্টো আমাকেই অপমান করে।
সেজন্য আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি ওই বাড়িতে আর ফিরে যাবো না।

ইসহাক মেয়ের কথা শুনে বলল,আমারা তো আর তোর বিয়ে দেয়নি।
নিজেই পছন্দ করে বিয়ে করেছিস তাহলে এখন মানিয়ে চলতে পারিস না কেনো?
আর শ্বশুর বাড়িতে এমন একটু আধটু হয়েই থাকে।
তার জন্য সংসার ফেলে আসতে হবে?

দোলা স্বামীর কথা শুনে বলল, ফেলে আসবে না তো হুজুর হুজুর করবে।
ওদের মতো ননদ দেবরকে পায়ের নিচে পিঁষে মারা উচিত।

ইসহাক দোলার কথা শুনে বলল, দেখো রেশমার মা,শুধু জামাইয়ের দোষ দিলেই তো হবে না।
তোমার মেয়ের যে মুখের ভাষা ও বাড়িতে
খোঁজ নিয়ে দেখা যাবে ওর বেশি দোষ আছে।

দোলা ইসহাকের কথা শুনে বলল,তুমি বাবা হয়ে মেয়েকে এগুলো বলছো কেন?

আর রেশমা যায় করুক না কেন তা জন্য দেবর হয়ে ওকে মারার সাহস পেলো কি করে?

দোলার কথা শুনে চাঁদনী বানু বলে উঠল, রেশমা হাতে যদি জেসিকা মার খেতে পারে তাহলে রেশমা কেনো ওর দেবরের হাতে মার খেলে সমস্যা হবে?
চাঁদনী বানু এখানে অনেকক্ষণ ধরেই দাঁড়িয়ে ওদের কথা মন দিয়ে শুনেছে।

চাঁদনী বানু সব শুনে বুঝতে পারছে, রেশমার হয়তো এমন কিছু করেছে সেজন্য মার খেতে হয়েছে।
তাই ওপরের কথাটা বলল।
ইসহাক মায়ের কথা শুনে বলল,মা তুমি ঠিক কথা বলেছো।

দোলা ইসহাকের কথা শুনে রেগে কিছু বলতে যাবে
এরমধ্যে ঝর্না এসে বলল,বাবা রিফাতের কিছু টাকা লাগবে ওর চাচা অসুস্থ্য তাকে দেখতে যাবে।

ইসহাক ছোট মেয়ের কথা শুনে বলল,তুই যা আমি জামাইয়ের সাথে দোকানের ব্যাপারে কথা বলবো তখন টাকা দিবোনে।

ইসহাকের কথা শুনে ঝর্না নিজের রুমে চলে গেল।

অন্যদিকে রেশমা বলল,মা আমি সত্যিই কিন্তু ঐ বাড়িতে আর ফিরে যাবো না কথাটা বলে রেশমা নিজের রুমে চলে গেলো।

ইসহাক মেয়ের কথা শুনে মনে মনে ভাবছে, কয়েকমাস ধরেই আমার সংসারের শান্তি চলে গেছে।
বড় মেয়ে দুইদিন পর পর শ্বশুর বাড়িতে অশান্তি করে এখানে এসে পরে।
আর ছোট মেয়ের জামাই কাজের থেকে টাকা উড়ায় বেশি।
আজকাল দোকানের মালের ঠিকঠাক হিসেব মিলছে না।
এমন চললে ব্যাবসা লাটে উঠবে।
মারুফ আলাদা হওয়ার পরেও দোকানের হিসেবে,ব্যাবসায় লাভ লসের খোঁজ খবর রাখতো।
ওর কথা মত ব্যাবসা করেই তো এতকাল ব্যাবসায় লাভের মুখ দেখেছি।
কিন্তু ঝর্নার জামাই বাসায় এসে মারুফকে নিয়ে ওর শ্বাশুড়িকে কি বলছে কে জানে?
সেদিন জামাইয়ের কথা শুনে, দোলা নিজে ডেকে মারুফকে আমাদের ব্যাবসায় ঢুকতে নিষেধ করেছে ।
সে থেকে ভাতিজা আর আমার দোকানের আশেপাশের আসে না।
এদিকে টাকার জন্য আমার ভাগের জমি বিক্রি করতে হচ্ছে।
দোলা দূরে বিক্রি করতে বলেছ কিন্তু মা বলেছে বিক্রি করলে মারুফের কাছেই করতে হবে।
আর মারুফের কাছে এখন এতো টাকা নেই তাই ওর শ্বশুর তার মেয়ের নামে জমি গুলো কিনতে চাচ্ছেন।
কি করবো ভেবেই পাচ্ছি না।
আমি আগে ভাবতাম দোলার কথা শুনলেই ভালো হবে।
কিন্তু তা আর হচ্ছে কয়!

ইসহাক যখন এসব ভাবছিল সে সময়ে দোলা বলে উঠল,এই তুমি নাকি আজকে তাড়াতাড়ি দোকানে যাবে?

ইসহাক দোলার কথা শুনে বলল,যাওয়া তো দরকার।

দোলা বলল,যাওয়া দরকার হলে তাড়াতাড়ি নাস্তা করতে এসো।
ইসহাক দোলার কথা শুনে বিরবির করে বলছে,আর নাস্তা তোমার হাতের আজে বাজে রান্না খেয়ে খবারের প্রতি অরুচি ধরে গেছে।

দোলা ইসহাককে বিরবির করতে দেখে বলল,এই একা একা কি বলছো?
দোলার কথা শুনে ইসহাক তড়িগড়ি করে বলল, কিছুনা , রেশমার মা এতো সকালে আমার নাস্তা করতে ইচ্ছে করছে না।
তোমার কষ্ট করার দরকার নেই।
আমাকে এক কাপ চা দিলেই হবে।

অন্যদিকে জেসিকার ঘুম ভেঙ্গে যাওয়াতে বিছানায় শুয়ে থাকতে ভালো লাগছে না।
তাই খাটে হেলান দিয়ে বসলো।
মারুফ জেসিকাকে খাটে হেলান দিয়ে বসতে দেখে বলল,লক্ষীটি তোমার কি খারাপ লাগছে?

জেসিকা মারুফের কথা শুনে বলল,না গো এমনি শুয়ে থাকতে ইচ্ছে করছে না।
সেজন্য উঠে বসলাম।

মারুফ মনে মনে বলল, বেচারি অসুস্থ্য শরীরে একটু শান্তিতে ঘুমাতে পারে না।
সকাল হলেই চাচী তার মেয়েদের সাথে না হলে কাজের খালার সাথে চেঁচামেচি শুরু করে দেয়।
জেসিকার এই সময়ে পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমের দরকার।
যেহুতু জেসিকার ইদানিং রাতে বেশিভাগ সময়ে ঘুম হয় না।
ভোরে নামাজের পর একটু ঘুমাবে তাও উপায় নেই।
আগে কখনো আমাদের বাড়িতে সকলের চিল্লাচিল্লি শুনা যায়নি কিন্তু আজকাল সেসব অতীত।
তবে এভাবে চলতে থাকলে বাড়ির পরিবেশ যেমন নষ্ট হচ্ছে তেমনি বাবা দাদার অর্জন করা সম্মান ধূলোয় মিশে যেতে সময় লাগবে না।
তাই এ বিষয়ে আমাকে চাচ্চুর সাথে কথা বলতে হবে।

জেসিকা মারুফকে চুপচাপ থাকতে দেখে বলল, তোমার সাথে একটা কথা ছিলো।

মারুফ জেসিকার কথা শুনে বলল, আমার সাথে কথা বলতে তোমার তো কোনো দ্বিধা থাকার কথা না বৌ।
জেসিকা মারুফের কথা শুনে বলল, আসলে তা নয়।
ছুটকির জন্য আব্বু বিয়ের একটা প্রস্তাব এনেছে।

মারুফ জেসিকার কথা শুনে বলল, দূর কি সব বলছো!
ছুটকি তো এখনও বাচ্চা মেয়ে।
মাত্র কলেজে ভর্তি হয়েছে।
এখনেই ওর কাঁধে বোঝা তুলে দিলে তো হবেনা।

মারুফের কথা শুনে জেসিকা বলল, আমিও তোমার সাথে একমত।
তাই বাবাকে নিষেধ করে দিয়েছি।

মারুফ জেসিকার কথা শুনে বলল, ভালো করেছো সোনা।
জেসিকা মারুফকে বলল, আচ্ছা এই শুনো না।

মারুফ দুষ্টুমি করে বলল,বলনা।

জেসিকা মারুফের বুকে মাথা রেখে নিজের পেটে হাত বুলাতে বুলাতে বলল, আমার ছোট পেটে ওদের থাকতে কষ্ট হচ্ছে না।

জেসিকার কথা শুনে মারুফ মুচকি হেসে বলল,না সোনা । কারণ ওরা সবচেয়ে নিরাপদ স্থানে আছে।

জেসিকা কিছুদিন আগেই জানতে পেরেছে তাদের ঘরে আলোকিত করতে একটি না দুটো বাবু আসছে।
সে থেকেই চিন্তা ভাবনা করে ওর ছোট পেটে বাচ্চাদের কষ্ট হচ্ছে না তো।

আবার কখনো এটা ভেবে ভয় পাচ্ছে কত মানুষ সন্তান হওয়ার সময়ে মারা যায়।
আমি মারা যাব না তো?
আমি মারা গেলে আমার বাচ্চাদের কী হবে?

এই বৌ কি চিন্তা করছো?

মারুফের কথা শুনে জেসিকা বলল,
জানো আমার না আজকাল খুব ভয় করছে।
মনে হয় আমি মরে যাব।

জেসিকার কথা শুনে মারুফ রেগে বলল, তোমাকে এসব কথা বলতে নিষেধ করেছিলাম না।
তবুও বারবার এমন কথা বলে আমাকে কষ্ট দিতে ভালো লাগে।
জেসিকা মারুফের বুকে থেকে মাথা তুলে মারুফের মুখের দিকে তাকিয়ে আতংকের ছাপ দেখে আবার টুপ করে মারুফের বুকে মাথা রেখে জরিয়ে ধরে বলল বলল,প্লিজ রাগ করো না।
আমি আর এসব বলবো না।

মারুফ জেসিকার কপালে উষ্ণ স্পর্শ দিয়ে বলল, আল্লাহর রহমতে তোমার কিছু হবে না।
বৌ তোমাকে ছাড়া আমি মারুফ যে শূন্য।
তুমি যখন এসব কথা বলো তখন মনে হয় আমার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে।
তোমাকে হারানোর কথা শুনে হৃদয়ে রক্তক্ষরণ শুরু হয়।
তুমি বুঝো না কেন বৌ?

মারুফ জেসিকাকে যখন এসব কথা বলছে জেসিকা মারুফের বুকে মাথা রেখে কথাগুলো শুনছে।
তারমধ্যে জেসিকা আহ্ কর উঠল।
মারুফ ভয় পেয়ে বলল,বৌ কি হয়েছে?
কোথায় ব্যথা করছে?
মারুফ একবার ভাবছে ডাক্তারকে ফোন করতে হবে আরেক বার ভাবছে তাতে দেরি হয়ে গেলে তার থেকে ভালো হবে ওকে হসপিটালে নিয়ে গেলে।
কথাটা ভেবে বলল,বৌ তুমি আমার গলা শক্ত করে জড়িয়ে ধরো তো কথাটা বলে মারুফ জেসিকাকে কোলে তুলে নিতে যাচ্ছিল।
জেসিকা মারুফকে বাঁধা দিয়ে বলল, ও গো একটু তুমি শান্ত হওতো।
আমার কিছু হয়নি।
অযথা তুমি এতো অস্থির হচ্ছো কেন?

মারুফ জেসিকার কথা শুনে বলল, তোমার কষ্ট হচ্ছে তা দেখে আমি শান্ত থাকবো?

জেসিকা মুচকি হেসে মারুফকে বলল,আরে এতো উত্তেজিত হতে হবে না।
তোমার বাচ্চারা পেটে ভিতরে মনে হচ্ছে ফুটবল খেলছে।
তাই তখন একটু ব্যথা পাচ্ছিলাম।
আর তোমার ভয় পাওয়া দেখে বাচ্চারা ভয়ে শান্ত হয়ে গেছে।

মারুফ জেসিকার কথা শুনে মুচকি হেসে জেসিকার পেটের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলল,সোনারা তোদের মা ব্যথা পাচ্ছে তো।
দুষ্টুমি করে না।

কথাটা বলে মারুফ জেসিকার পেটে চুমু দিয়ে হাত বুলিয়ে আদর করে দিলো।
জেসিকা মারুফের কান্ড দেখে মনে মনে বলল, পাগল একটা।
জেসিকা মারুফের কান্ড দেখে মনে পরে গেলো ওদের বাচ্চা হবে শুনে সবাই কত খুশি হয়েছে।
চাঁদনী বানু তো পরদাদু হবে সে খুশীতে কেঁদে দিয়েছিলো।

আর জেসিকার বাবা যেদিন নানা হবে শুনেছে সেদিন সন্ধ্যায় অনেক কিছু নিয়ে মেয়েকে দেখতে আসে ।
জেসিকা মা হবে তা শুনে জেসিকার বাবা মেয়েকে জড়িয়ে ধরে খুশিতে কেঁদেছে অনেকক্ষণ।
উকিল সাহেব তার মেয়ের সর্বক্ষণ দেখাশোনা করার জন্য একজন নার্স ঠিক করে দিয়েছে।
জেসিকার মা বাবা একগাদা জিনিস পত্র নিয়ে মেয়েকে দুইদিন পর পর দেখতে আসে।
মারুফ তা দেখে বলে, আব্বু মেয়েকে দেখতে আসলে এতো কিছু কেন নিয়ে আসতে হবে?

উকিল সাহেব মারুফের কথা শুনে বলে, তোমাদের জন্য তো আনি না।
আমি আমার নাতি নাতনির জন্য আনি‌
মারুফ শ্বশুরের কথা শুনে তখন আর কিছুই বলতে পারে না।
কিন্তু জেসিকা মারুফের দিকে তাকিয়ে ওর বাবাকে বলে, বাবা প্রতিদিন এতো কিছু খাওয়া তো হয়না উল্টো তা নষ্ট হচ্ছে।
আর পৃথিবীতে এমন অনেক মানুষ আছে যারা ঠিক মত এক বেলা খেতে পায় না।
তুমি তাদের এগুলো দিলে তারা খুশি হবে।

জেসিকার কথা শুনে ওর বাবা বলল, আমি আমার সাধ্য মত মানুষকে সাহায্য করতে চেষ্টা করি। তোদের জন্য কিছু আনলে আমার ভালো লাগে তা বুঝিস না কেন?

জেসিকা ওর বাবার কথা শুনে বলল,জানি তো বাবা।
আর আমি তো তোমাকে আনতে একেবারে নিষেধ করছি না। শুধু বেশি না এনে কম আনতে বলছি।
আব্বু অপচয় কারি সয়তানের বন্ধু।
তাই আমি চায় না আমার আব্বু অপচয় কারি হিসেবে পরিচিত হোক।
জেসিকার বাবা মেয়ের কথাটা শুনে ওর কপালে চুমু দিয়ে বলল, আমার মা কত বড় হয়ে গেছে , এখন কত কিছু বুঝতে পারে।
মারুফ বাবা সেজন্য তোমাকে ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করতে চায় না।
জানো তো সঙ্গ দোষে লোহা ভাসে ।
এই কথাটা যে সত্যি তার প্রামান আমার চোখের সামনে।
তোমার সংস্পর্শে এসে আমার উগ্র রাগী মেয়েটা কতটা বদলে গেছে।
সেজন্য তোমার কাছে আমি কৃতজ্ঞ।

মারুফ জেসিকার বাবার কথা শুনে বলল, ছিঃ আব্বু এসব বলছেন।
এভাবে বলে আমাকে লজ্জা দিবেন না।
সবাইকে নিয়ে ভালই দিন কেটে যাচ্ছিল।
তবে জেসিকার মনের কোণে একটা অপরাধ বোধ কাজ করে।
ওর মনে হতো মারুফ ওর জন্য চাচ্চুর পরিবারকে নিজের থেকে আলাদা করেছে।

মারুফ জেসিকার মনের কথা বুঝতে পারে।
তাইতো সব সময় বুঝায় এসবের জন্য তারা দায়ী জেসিকা না।
এভাবে আস্তে জেসিকার ভিতরে একটু একটু করে বড় হচ্ছে ওদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম।
কিছুদিন আগেই
জেসিকার সাত মাস শেষ হয়ে আট মাসে পরছে।
মাস হিসেবে জেসিকার পেট স্বাভাবিকের তুলনায় বেশিই বড়।
জেসিকা পেট বড় হওয়াতে প্রথম দিকে ভয় পেয়ে মারুফকে বলতো,এই পেট আবার ফেটে যাবে না তো?
মারুফ তা শুনে জেসিকার নাক টিপে দিয়ে বলতো,না গো।
আর তোমার পেটে দুইটা বাবু আছে তাই একটু বড় দেখা যায়।
আস্তে আস্তে বাবুরা বড় হবে তার সাথে তোমার পেট আরও বড় হবে।
বাবুরা আমাদের কাছে এসে পড়লে আবার তোমার পেট আগের মত হয়ে যাবে।
জেসিকা মারুফের কথা শুনে বলল, আরও বড় হবে তাহলে তো আমি পেট ফেটে ঠুস হয়ে যাবো।
মারুফ জেসিকার কথা শুনে ওর পেটে চুমু খেয়ে বলছে, কিছু হবে না বৌ।
তুমি ভয় পেও না।
মারুফের কথা শুনে জেসিকার ভয় দূর হলেও দিন দিন অসুস্থ্য হয়ে যাওয়াতে চিন্তা দূর হয়নি।
জেসিকার শরীরে পানি আসায় হাত পা ফুলে আছে।
একা নড়াচড়া করতে কষ্ট
হয়।
তাই মারুফ বাসায় যতক্ষণ থাকে জেসিকার খেয়াল রাখে।
মারুফ দোকানে গেলে তখন কোমল, রাশেদ , নার্স এবং মায়া বেগম জেসিকার খেয়াল রাখে।
তা ছাড়া জেসিকার মা দুইদিন পর পর সকালে এসে মেয়ের দেখাশোনা করেন।
জেসিকার বাবা রাতে এসে মেয়েকে দেখে যান এবং স্ত্রীকে বাসায় নিয়ে যায়।
তার একার জন্য কতগুলো মানুষ কষ্ট করছে।
সে সত্যিই ভাগ্যে জোরে এই মানুষগুলোকে পেয়েছে।

জেসিকা এসব ভাবছে মারুফ জেসিকার মুখের কাছে এসে জেসিকার ঠোঁটে হালকা করে উষ্ণ স্পর্শ দিয়ে বলল, কি ভাবছো সোনা।
জেসিকা মারুফের দিকে তাকিয়ে বলল, তোমাকে আমি কত জ্বালায় ।

জেসিকার কথা শুনে মারুফ বলল, ইস্ তুমি এ কথা বললেই হলো।
আবার এমন কথা বললে তোমাকে পিটুনি দিবো।
জানো আমার এই সোনা মনাটা জন্য কিছু করতে পারলে নিজের কাছে কত ভালো লাগে।
আর বৌ সকাল হয়েছে অনেকক্ষণ হয়েছে সোনা কিছু খেতে হবে তো চলো তোমাকে হাত মুখ ধুয়ে দেয়।

এরপর মারুফ জেসিকাকে ফ্রেস করিয়ে রুমের বাহিরে নিয়ে যায়।
জেসিকাকে মারুফের সাথে বের হতে দেখে মায়া বেগম ওর কাছে গিয়ে বলল, এতো খাওয়া দাওয়ার অনিয়ম করলে
চলবেরে মা।

জেসিকা শ্বাশুড়ির কথা শুনে বলল,তোমরা থাকতে খাওয়া দাওয়া নিয়ে আমার চিন্তা করার সময় নেয়।

মারুফের মা ও মারুফ জেসিকাকে ধরে টেবিলে বসায়।
নার্স এসে বলল, বাবা আপনি নাস্তা করুন ।
আমি আম্মুকে দেখছি।
মারুফ নার্সকে বলল, দেখুন আন্টি আমি আগেও বলেছি আমি যখন ওর কাছে থাকবো সে সময়ে ওর সবকিছু আমি করবো তাই আপনি অন্য কিছু থাকলে তা করুন নাহলে রেষ্ট নেন।

মারুফের কথা শুনে নার্স সেখানে থেকে সরে গেল।

মারুফ ওর দাদুকে খেতে ডেকে জেসিকার দিকে মনোযোগ দিলো।
মারুফের ডাক শুনে চাঁদনী বানু নাস্তা করতে টেবিলে এসে বসেছে মাত্র।
তা দেখে দোলা বলল,আম্মা আপনাকে কত করে বললাম আমাদের সাথে খেতে।
আপনি আসলেন না।
চাঁদনী বানু দোলার কথা শুনে বলল, ছোট বৌ তোমার রান্না যে স্বাদ তা আমার পেটে সহ্য হয় না।
আর বড় বৌমার হাতের রান্না না খেলে তৃপ্তি পায় না।
চাঁদনী বানু মুখে এ কথা বললেও মনে মনে বলল,বৌ তোমার ওই জঘন্য রান্না করা খাবার খেলে আমার অসুস্থ্য হতে বেশি সময় লাগবে না।

দোলা শাশুড়ির কথা শুনে মন মনে বলল , বুড়ির এক পা কবরে এখনো মুখে স্বাদ খুঁজে।
যতসব।

মারুফ জেসিকাকে জোর করেই কিছুটা ডিম ও রুটি খাওয়ালো ।
তা দেখে দোলা মুখ বাঁকিয়ে বললো, দিনে দিনে এই বাড়িতে কত ঢং যে দেখতে হবে কথাটি বলে দোলা নিজের রুমে চলে গেল।
এরমধ্যে রাশেদ মারুফকে বলল, ভাইয়া চাচীর সমস্যা কি?
সব সময় এমন করলে তো ভালো লাগে না!

মারুফ রাশেদকে বলল,ভাই সবাই তো আর এক হয় না।
আর আমরা আলাদা থাকি তাই কে কি বলছে তা আমাদের শুনতে হবে কেন?
সেজন্য অন্যের আমাদের বিষয়ে কথা না বললেই ভালো।

রাশেদ মারুফের কথা শুনে বলল, সেটা ঠিক।
তবে ভাইয়া একটা কথা বলার ছিলো।
মারুফ রাশেদকে কথা শুনে বলল, নাস্তা করে দোকানে যাব তাই কি বলবি ভাই তাড়াতাড়ি বলে ফেল।
রাশেদ মারুফের কথা শুনে বলল, তাহলে রাতে কথা বলবো নে।
মারুফ ওঁর ভাইয়ের কথা শুনে বলল, সমস্যা নেই তুই এখনেই
বল দরকার হলে দোকানে পরে যাব।
রাশেদ মারুফের দিকে তাকিয়ে বলল, ভাইয়া আজকাল আমাদের বাড়িতে বাহিরের মানুষের আনাগোনা বেড়ে গেছে।
বাড়িতে এতো গুলো মেয়ে মানুষ থাকে তাই তাদের নিয়ে চিন্তা হচ্ছে।
ছোট ভাইয়ের কথা শুনে মারুফ বলল, আমাদের বাসায় বাহিরের লোক আসবে কোথায় থেকে?
মারুফের কথা শুনে রাশেদ বলল,রিফাতের বন্ধুরা দুই একদিন পর পর বাসায় আসে।
সেদিন রিফাতের এক বন্ধু কোমলকে প্রেম পত্র দিয়েছে।
কোমল ভয় পেয়ে সেটা আমাকে দেখিয়েছে।

জেসিকা কথাটা শুনে চমকে বলল, ভাইয়া ছুটকি তো এ ব্যাপারে আমাকে কিছুই বললো না।
রাশেদ ওর ভাবীর কথা শুনে বলল, ভাবী তুমি অসুস্থ্য কথাটা শুনে চিন্তা করবে সেজন্য বলেনি।

মারুফ কথাটা শুনে রাগে থম ধরে বসে আছে।

রাশেদ আরও বলে, ভাইয়া রিফাতের বন্ধুরা বাসায় আসলে আমি খেয়াল করেছি ভাবী ও কোমলের দিকে তারা বাজে ভাবে তাকায়।

এসব দেখে আমি ওদের ধমক দিলে চাচী আমাকে শাসিয়ে বলল,তার জামাইয়ের বন্ধু বান্ধবদের সাথে এমন করার সাহস হলো কী করে আমার?
এই বাড়িতে তার মেয়েদের অধিকার আছে সে সুত্রে তার মেয়ের জামাইদের।

এসব কথা শুনে মারুফের রাগে চোখ লাল হয়ে যাচ্ছে।
নিজের বাড়িতে বাহিরের লোক এসে বাজে আচরণ করছে তা তো মানা যায় না।
তাই জোরে জোরে রিফাতকে ডাকছে।

আর চাঁদনী বানু কথাটা শুনে মনে মনে দোলার উপর ক্ষেপে যায়।

অন্যদিকে রিফাত সাদে এসে ওর বন্ধু রনির সাথে ফোনে কথা বলছে।
রনি, বন্ধু তোর শালীটা যা হট ।
দেখলেই শরীর চাঙ্গা হয়ে ওঠে।

রিফাত রনির কথা শুনে ঠোঁট কামড়ে বলল,আরে আমার তো শালীর থেকে সমন্ধি বৌকে বেশি জোস লাগে।
দিন দিন তার রূপ বেড়েই চলছে।

রিফাতের কথা শুনে রনি বলল,
আরে ওটা তো খাসা থুক্কু চরম হট।
ওটার দিকে তাকালে শরীরে শিহরণ খেলে যায়।

রিফাত রনির কথা শুনে বলল, কিন্তু বন্ধু শুধু দেখেই মন ভরতে হবে কারণ মারুফ ভাইয়ের শ্বশুর বড় উকিল।
তাই ওদিকে নজর না দেওয়ায় আমাদের জন্য ভালো
দেখলি না উকিল সাহেব আমাকে কিভাবে খুঁজে বের করে ফেলল!

রনি রিফাতের কথা শুনে বলল দোস্ত তা হলে তোর শালীর সাথে আমাকে সেট করে দে।

রিফাত রনির কথা শুনে বলল,আরে এই মাইয়া তো আমার ধারের কাছেও ঘেঁষে না।
আমি কথা বলতে গেলে এমন ভাবে সরে যায় মনে হয় আমার শরীরে খুঁঝলি প্যাঁচড়া আছে।

রনি রিফাতের কথা শুনে বলল , তাহলে আমার কি হবে?

রিফাত রনির কথা শুনে বলল বলল, দোস্ত মন খারাপ করিস না।

রিফাতের কথা শুনে রনি বলল,হম,তা তোর কাজ কতদূর?

রনির কথাটা শুনে রিফাত আগে আশেপাশের তাকিয়ে দেখে কেউ আছে কিনা।
কেউ নেয় দেখার পরে রনিকে বলল, দোস্ত কাজ বেশি অর্ধেক শেষ।
সামান্য একটু বাকি আছে।

আর শুন রনি তোরা যেখানে আছিস সেখানে থেকে অন্য জায়গায় বাসা ভাড়া নে।
তোদের যেনো কেউ খুঁজে না পায়।
এরমধ্যে রিফাতের নাম ধরে মারুফ যে ডাকছে তা রিফাত শুনতে পেয়েছে।

তাই ফোন কেটে ছাদে থেকে নেমে মারুফের কাছে আসলো।

মারুফের ডাক শুনে সবাই যে যার রুমে থেকে ডাইনিং রুমে এলো।
দোলা এসেই মারুফকে জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে তুমি রিফাতকে ডাকছো কেন?

এরমধ্যে রিফাত মারুফের সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলল, আমাকে ডেকেছেন ভাইয়া?

মারুফ কোন ভনিতা ছাড়াই বলল, আজকের পরে থেকে তোমার বন্ধুদের যেনো এই বাড়িতে না দেখি।
তাদের এখানে দেখলে তোমার জন্য ভালো হবে না।

মারুফের কথা দোলা বলল, মারুফ বাড়িটা কিন্তু তোমার একার না বাবা।
তাই তোমার সিদ্ধান্ত আমার মেয়ের জামাইয়ের উপরে চাপিয়ে দিতে পারো না।

এরমধ্যেই চাঁদনী বানু দোলাকে ধমকে বলল, ছোট বৌ বেশি কথা বলছো কেন?
দাদু ভাই ঠিক কথাই বলেছে।
এখন থেকে আমার বাড়িতে বাহিরের মানুষ আসতে পারবে না।
রিফাত মারুফ ও দাদুর কথা শুনে বলল, ঠিক আছে এখন থেকে আমার বন্ধুরা এ বাড়িতে আসবে না।
কথাটা বলেই রিফাত ঝর্নার দিকে তাকিয়ে দোকানে চলে গেল
এদিকে মারুফের মাথায় অন্য চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে।
মারুফ আগে থেকেই জানে এই রিফাত ছেলেটা ভালো না।
আর ওর বন্ধুরা তো ওর মতোই।
ওরা ছুটকিরর কোন ক্ষতি করে দিবে না তো?
এসব ভেবে মারুফ ঝটপট একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে…..

এই যে পাঠক পাঠিকা ভাই বোনেরা চট যলদি জেসিকা ও মারুফের বাচ্চাদের নাম ঠিক করে ফেলেন তো।
আপনাদের ঠিক করা নামের মধ্যে থেকে ওদের বাচ্চাদের নাম দিবো ভেবেছি।

নোটঃ খারাপ মানুষ যতই অভিনয়ে পারদর্শী হোক না কেন?
এক সময় না এক সময় তাদের খোলস ছেড়ে বের হয়ে আসে।
হয়তো আমাদের অজ্ঞতার কারণে সেটা বুঝতে পারি না।
দুষ্টু লোকের মিষ্টি কথায় ভেসে যায়।
স্বার্থপর মানুষেরা নিজেদের স্বার্থের কারণে এক সময় সব হারায়।

বিঃদ্রঃ আমার লেখা যদি আপনাদের ভালো লাগে তাহলে লাইক ও কমেন্ট করে পাশে থাকবেন।
আর লেখায় ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here