গল্পঃ হৃদয়ের বন্ধন।
পর্বঃ ৮।
লেখাঃ #মেহের।
জেসিকার মনে মনে দুইদিন আগের কথা ভাবছে একটা সত্য হানা দিয়ে ওঁর জীবনে সব কিছু বদলে ফেলেছে।
কিন্তু দুইদিন আগেও সে মারুফকে এ সম্পর্ক থেকে মুক্তি দিতে চেয়েছে ।
কিন্তু এখন সে মারুফকে স্ত্রী হয়ে সারাজীবন কাটাতে চায়।
এতো দিনে মনের মধ্যে যত প্রশ্ন ছিল তার সব উত্তর হচ্ছে মারুফ।
মারুফের স্ত্রী হয়ে থাকতে না পারলেও দাসী হয়ে থাকতে চায়।
তার বেপরোয়া জীবনের লাগাম মারুফের হাতে দিতে চায়।
এখন থেকে মারুফের পরিবার মানে সেটা আমার পরিবার।
দুই দিন আগে কি এমন হয়েছিল যে জেসিকা নিজেকে বদলে ফেলেছে।
দুইদিন আগে ঘটনা।
দুইদিন আগে জয়া আসে জেসিকার সাথে দেখা করতে।
জয়াকে দেখে জেসিকা খুব খুশি হয়।
কয়দিন ধরে একা ছিল নিজের কর্মের জন্য বাসার কারো সাথে কথা বলতে সাহস হচ্ছিল না।
তাইতো জয়াকে দেখে খুশি হয়েছে।
তাছাড়া মারুফের সাথে ছাড়াছাড়ি হয়ে গেলে কিছুদিন থাকায় জায়গা লাগবে এ ব্যাপারেও জয়ার থেকে সাহায্য নিতে হবে জেসিকা এইসব ভাবছিল।
এরমধ্যে জয়া বলে, কেমন আছিস?
জেসিকা বলে, এইতো চলছে কোনরকম।
তুইতো সবেই জানিস এতো কিছু হওয়ার পরেও কী কেউ ভালো থাকতে পারে?
জয়া বলল, ইচ্ছে করলে অবশ্যই ভালো থাকতে পারে।
জেসিকা একথা শুনে বলে, তুই বলতে চাস আমার ভালো থাকার ইচ্ছে নেই।
জয়া বলে,আমি তাতো বলেনি বলেছি কারো ইচ্ছে থাকলে এবং চেষ্টা করলে অবশ্যই ভালো থাকতে পারে।
জেসিকা বলে,সেই তো একেই কথা!
জয়া বলে,আরে মন খারাপ করিস না তোর জন্য একটা খুশির খবর আছে?
জেসিকা হতাশ হয়ে বলে, আমার আবার খুশির খবর ।
মজা করেছিস না!
জয়া বলে,আরে নাহ্ শুন না রাহুলের অবস্থা
জেসিকা জয়াকে কথা শেষ করতে না দিয়েই বলে,জয়া চুপ আমি ঐ জানোয়ারটার নামও শুনতে চায় না।
জয়া বলল, তুই কথা না শুনেই অযথা রেগে যাচ্ছিস কেন?
কারণ তুই আমার ক্ষততে লবণ ছিটিয়াচ্ছিস।
জয়া বলল,ছি্ তুই আমাকে এই কথা বলতে পারলি ।
আমার ইচ্ছে করছে এখনই এখানে থেকে চলে যায়।
কিন্তু না আমি যা বলতে এসেছি তা না বলে তো যাবই না।
জেসিকা বলে, আমি কিছু শুনতে চাই না তুই চলে যা।
জয়া বলল, সেদিন মারুফ ভাই তোকে না বাঁচালে আজকে এত বড় বড় কথা বলতি কোন মুখে?
জেসিকা মারুফের নাম শুনে বলে,কী বলছিস এসব? আমাকে তো দুইজন মহিলা বাঁচিয়েছে।
তাহলে মারুফ আসলো কোথায় থেকে?
জয়া বলল,তুই ভুল জানিস।
তোকে মহিলা গুলো বাঁচায় নাই
মারুফ বাঁচিয়েছে।
জেসিকা বলে,কী?
জয়া বলতে শুর করল।
সেদিন রাহুল আমার দরজা বন্ধ করলে আমি ভয় পেয়ে আঙ্কেলকে মানে তোর বাপিকে ফোন দেয়।
তাকে এসে আমাদের বাঁচাতে বলি।
কিন্তু সে এখানে আসতে অস্বীকার করেন।
সেদিন তোর চিৎকারে চেঁচামেচি শুনে আমি ভয় পেয়ে যায়।
একবার মনে হচ্ছিল আমাদের বাঁচাতে কেউ আসবে না।
আমাদের কেউ বাঁচাতে পারবে না।
সেদিন অনেকক্ষণ পরে তোর আর কোন আওয়াজ না পেয়ে আমি ভাবলাম তোর সর্বনাশ হয়ে গেছে।
হঠাৎ করে আমার রুমে থেকে মার দেওয়ার আওয়াজ পাচ্ছি তাতে আরও ভয় পাচ্ছিলাম।
কিছুক্ষণ পর কেউ একজন আমার দরজা খুলে দিল।
খেয়াল করে দেখি আঙ্কেল আমার দরজা খুলে দিয়েছে।
এবং সামনে একজন লোক রাহুলকে ইচ্ছে মত কেলাচ্ছে।
আঙ্কেল বললেন ওটা তোর স্বামী।
আমি অবাক হয়ে দেখলাম এতো সুন্দর একটা ছেলেকে তুই দিনের পর দিন অপমান করছিস কিভাবে।
সেদিন মারুফ ভাই রাহুলকে অন্তকোষে জোরে লাথি দেয়।
তার বৌকে মানে (তোকে) অসম্মান করায়।
ওদের সাথে বাসার উদ্দেশ্যে বের হয়ে বুঝতে পারলাম ।
আমি যখন ফোন করেছি সে সময় আঙ্কেলের পাশে মারুফ ছিল।
তোর এই অবস্থার় কথা শুনেই মারুফ ভাই আঙ্কেলরের অনিচ্ছা সত্ত্বেও আঙ্কেলকে মারুফ ভাই জোর করে নিয়ে এসেছে তোকে বাঁচাতে।
তুই কি অবস্থায় আছিস তা ভেবে এবং পোশাক ঠিক মত আছে কিনা!
ওদের দেখে তুই যাতে লজ্জা না পাস তাই ঐ মেয়েগুলোকে তোর রুমে আগেই পাঠানোর হয়।
তারা দুজন পরে রুমে ঢুকে।
জেসিকা সব শুনে হতভম্ব হয়ে গেছে।
যাকে সে এতদিন অপমান করেছে আজকে সেই তার ইজ্জত বাঁচাতে এসেছে।
জয়া জেসিকার হতভম্ব অবস্থা দেখে বলল,শুন জেসিকা মারুফের মত স্বামী সবাই চায় কিন্তু পায় না।
আর তুই পেয়েও হেলায় হারিয়ে ফেলিস না!
সেদিন এই কথা বলে জয়া তো চলে গেলো ।
যাওয়ার সময় জেসিকাকে বলে গেল, সময় থাকতে মারুফকে তোর হৃদয়ের বন্ধনে আবদ্ধ করে রাখ।
সেদিনের পরে থেকেই জেসিকা মারুফের সাথে করা অন্যায় গুলো জেসিকার অন্তরকে ঝাঁজরা করে দিচ্ছে।
দুই দিন চোখ বুজলেই মারুফকে দেখতে পায়।
চোখের সামনে মারুফকে দেখে তখন বেশি করে নিজের করা অপরাধ মনকে হানা দেয় হৃদয়ে।
নিজের অপরাধ যখন নিজের মনকে কুরে কুরে খাচ্ছে।
তখন মনের ভিতরে থেকে আওয়াজ আসে মারুফ তোর স্বামী।
স্বামীর কাছে থাকা স্ত্রীর অধিকার।
একটা কাগজে সাইন করে সে অধিকার থেকে বঞ্চিত হতে পারিস না।
মনের কথা শুনে জেসিকা সিদ্ধান্ত নেয় ।
যে কোন মূল্যে মারুফের সাথে সংসার করবে।
মারুফের যোগ্য সহধর্মিণী হওয়ার চেষ্টা করবে।
জেসিকা ভেবে চিন্তে আজকে থেকেই তার এই দেহ মন সব মারুফের নামে দলিল করে দিয়েছে।
ফোনের শব্দে জেসিকা ভাবনা থেকে বাহিরে আসে।
মোবাইল হাতে নিয়ে দেখে জেসিকার মা ফোন দিয়েছে।
জেসিকার মা ফোন করে বলে,জেসিকা তুই কোথায়?
তোদের তালাক কী হয়ে গেছে?
জেসিকা বলে,নাহ্ মা।আর শুন মা আমার জীবন থাকতে মারুফকে ছাড়তে চায় না।
এ কথা শুনে জেসিকার মা আলহামদুলিল্লাহ বলল।
জেসিকা মায়ের সাথে কথা বলা শেষ করে ফোন রেখে দিল।
জেসিকা মনে মনে বলল, কালকে থেকে নিজের সংসার ও স্বামীকে ফিরে পেতে আমাকে কঠিন পরিশ্রম করতে হবে।
আমার মত খারাপ মেয়ে একবার মারুফের ভালবাসা পেলে পূর্ণ হয়ে যাবে।
এসব ভাবতে ভাবতে একসময় ঘুমিয়ে গেল।
জেসিকা পরের দিন ভোরে উঠে নামায শিক্ষা বই দেখে নামায পড়ে।
এরপর রুমের বাহিরে এসে একটু হাঁটাহাঁটি করে দেখি মারুফ মসজিদ থেকে এসে পরেছে।
মারুফ এসে অন্য রুমের দিকে যাচ্ছে।
জেসিকা তার পেছনে পেছনে সে রুমে যায়।
মারুফ পাঞ্জাবি খুলে হ্যঙ্গারে রেখে পিছনে ঘুরে দেখে জেসিকা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।
মারুফ জেসিকারে ওঁর রুমে দেখে রেগে বলল, তুমি এখানে এসেছো কেন?
কি চায়?
জেসিকা হঠাৎ করে মারুফের পায়ে পড়ে ক্ষমা চাইছে।
মারুফ বলে, ভালইতো সকাল সকাল নাটক শুরু করে দিয়েছো ।
জেসিকা বলে, বিশ্বাস করেন আমি নাটক করছি না সত্যিই আমার করা কাজের জন্য আপনার কাছে ক্ষমা চাচ্ছি
।
তখন মারুফ বলে,তা বড় লোকের বেটি হঠাৎ করে ছোট লোকের বাচ্চার কাছে মাফ চাচ্ছে ব্যাপারটা কেমন দেখায় বলতো!
জেসিকা আজকে মারুফের কোন কথার প্রতিবাদ করছে না।
সে অনেক বড় অপরাধ করেছে তাইতো তাকে এসব কথা শুনতে হবে।
মারুফের কথা শুনে কোন প্রতিবাদ করলো না।
জেসিকা মারুফের পায়ের কাছে থেকে সরছে না তাই মারুফ জেসিকার হাত ধরে টেনে রুমে থেকে বের করে দিলো।
জেসিকা কান্না করতে করতে নিজের রুমে চলে গেল।
মারুফ জেসিকার চোখে পানি দেখে বিরবির করে বলছে, তোমাকে এত সহজে বিশ্বাস করবো কিভাবে?
তোমার করা সব অপমান এখনো আমার চোখে ভাসছে।
তোমাকে সহজে বিশ্বাস বা ক্ষমা কোনটাই আমার কাছে থেকে এত সহজে পাবে না।
তুমি যদি সত্যিই ভালো হয়ে থাকো তাহলে তিলে তিলে কষ্ট পেয়ে আগুনে পুড়ে একসময় খাঁটি সোনা হবেই।
তোমার চোখের পানিতে আমাকে…..