গল্পঃ হৃদয়ের বন্ধন।
পর্বঃ ৫২।
লেখা #মেহের।

জেসিকার কিছু ভালো লাগছে না বারবার মারুফের কথা মনে পরছে।
তিনটা মাস মারুফ জেসিকা ও বাচ্চাদের পাশে সব সময় ছায়ার মতো ছিল।
তাই মারুফকে সারাদিন না দেখে জেসিকার কাছে আজকে কেমন শূন্য শূন্য লাগছে ।
শুধু জেসিকা না ওদের বাচ্চারাও মারুফকে মিস্ করছে।
বাচ্চারা তাইতো ওদের মা’কে বারবার দরজার দিকে তাকাতে দেখে ওরাও আব্বু আব্বু বলে ডেকে উঠছে।
বিশেষ করে জেরিন তো অনবরত তা বাবাকে ডেকেই যাচ্ছে ।
জেরিনের ডাক শুনে জেসিকা কপট রাগ দেখিয়ে বলছে,এই বুড়ি আমাকে দেখিস না?
সারাদিন শুধু আব্বু আব্বু সারাদিনের মধ্যে একবার তো আম্মু বলতে দেখি না পঁচা মেয়ে।
জেসিকা কথাটা বলতে যতটুকু দেরি হয়েছে জেরিন বুড়ির মনে হয় মায়ের কথা বুঝতে দেরি হয়নি!
জেরিন মায়ের কথাটা শুনে কি বুঝলো কে জানে বুড়িটা ঠোঁটকে তিন বাঁকা করে সাথে সাথে কেঁদে দিল।
জেসিকার কাছে এটা আশ্চর্য বিষয় মনে হচ্ছে।
আর কান্নার সাথে সাথে মেয়ের চোখে দিয়ে পানি পরতে দেখে জেসিকা হতভম্ব!
এতটুকু পিচ্চি মায়ের রাগও বুঝে তা ওর জানা ছিল না।
জেসিকা মেয়েকে বুকে জড়িয়ে ধরে বিছানায় শুয়ে দিল।
তারপর মেয়ের সারা মুখে আদর দিল।
তাতেও মেয়ের কান্না থামছে না। মেয়েকে কাঁদতে দেখে ওর নিজেকে অসহায় লাগছে।
ছেলে ও মেয়েকে কাঁদতে দেখলে ওর বুকের ভিতরে অস্থিরতায় ছেয়ে যায়।
জেসিকা কিছু একটা ভেবে,
মেয়ের ফ্রকটি পেটের উপরে উঠিয়ে মেয়ের পেটে ওর নাক দিয়ে ঘষে সুরসুরি দিল।
এদিকে জেরিন পেটে সুরসুরি পেতেই কান্না থামিয়ে খল খলিয়ে হেসে দিল।
জেসিকা মেয়ের মুখে হাসি ফোঁটাতে পেরে সস্থির নিঃশ্বাস ছাড়লো।
এদিকে জেরিনকে সুরসুরি দেওয়ায় মুহিব বোনের দিকে একবার তাকিয়ে আবার মায়ের দিকে একবার তাকায় ।
মুহিব ভাবছে মা তার বোনের সাথে খেলছে কিন্তু তার সাথে খেলছে না।
তাই মায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে হাত পা ছুড়তে থাকে আর মুখ দিয়ে মা,মি,মা, শব্দ করছে ।
জেসিকা মুহিবের দিকে তাকালে মুহিব নিজের পেটে হাত দিয়ে থাপ্পর দিচ্ছিল আর ইত্তে ইত্তি মা তা আ করছিল।
জেসিকা মুহিবের কর্ম কান্ড দেখে হেসে বলল, আমার বাবাটাও মায়ের সাথে খেলতে চাচ্ছে বুঝি?
কথাটা বলেই জেসিকা মুহিবের পেটে সুরসুরি দিল।
মুহিবও জেরিনের মত হেসে উঠলো।
জেসিকা ছেলে ও মেয়ের মুখে হাসি দেখে মনটা ভরে গেল।
জেসিকার মা জেসিকাকে ছোট বেলায় এভাবে হাসাতো ওর মন খারাপ থাকলে।
তাই মেয়েকে হাসানোর কথা ভাবতে গিয়ে এই টেকনিক মনে পরায় তা এপ্লাই করেছে কিন্তু ছেলেও যে এটা পছন্দ করবে তখন তা বুঝতে পারেনি।
পরে ছেলে নিজের পেটে থাপ্পার ও চাইনিজ ভাষায় যে সুরসুরি দিতে বলছে তা বুঝতে পারে।
বাচ্চাদের এই নিষ্পাপ মুখের দিকে তাকিয়ে জেসিকা সব দুঃখ কষ্ট হাসি মুখে সহ্য করতে রাজি আছে।
তবে জেসিকা চায় না কোন কারণেই সে তার বাচ্চাদের মন খারাপের উছিলা হোক।
তার বাচ্চাদের সে শুধু মন প্রাণ উজাড় করে ভালোবাসা দিতে চায়।
প্রায় আট মাস বাচ্চাগুলো মা ছাড়া ছিল এটা মনে করলে ওর বুকটা কষ্টে ফেটে যায়।
তবুও জেসিকা এটা ভেবে সস্থি পায় ওর বাচ্চারা মায়ের আদর না পেলেও বাবাসহ পুরো পরিবারের আদরে সিক্ত হয়েছে।
এমন অনেক বাচ্চা আছে যারা জন্মের পর মা,বাবা ও পরিবারের অন্য কারো আদর যত্ন তাদের কপালে ঝুটে না।
কিন্তু ওর বাচ্চারা এক মাত্র মা ছাড়া আর সবার ভালোবাসা পেয়েছে।
আল্লাহকে অসংখ্য শুকরিয়া আদায় করছে আর এখনো করে ওর বাচ্চাদের মাথার উপর সব সময় পরিবারের ছায়া রেখেছে সেজন্য।
জেসিকা বাচ্চাদের সাথে দুষ্টুমি করছিল আর এসব ভাবছিল।
সে সময়ে মারুফ রুমে ঢুকলো।
বাচ্চারা ওকে দেখেই কোলে যাওয়ার জন্য বিছানায় থেকে নামতে চাচ্ছে।
জেরিন ও মুহিবের বয়স এখন এগারো মাস চলছে।
কিছুদিন হলো বাচ্চারা হাঁটতে শিখেছে তবে এখনও ভালো মত হাঁটতে পারে না।
হাঁটার সময় বারবার পরে যায়।
কিন্তু তাও তারা থামতে নারাজ।

মারুফকে দেখে দুই ভাই বোন বিছানায় দাঁড়িয়ে যায়।
যেনো প্রতিযোগিতা লেগেছে বাবার কোলে কার আগে কে যাবে ?
জেসিকা ওদের খুনসুটি দেখে মুচকি হেসে ওদের দুজনকে বিছানায় বসিয়ে দিল যাতে পরে ব্যথা না পায়।
মারুফকে রুমে ঢুকতে দেখে
জেসিকা বিছানায় থেকে উঠে মারুফের কাছে যেতে নেয়।
জেরিন ও মুহিব ওদের মা’কে বাবার কাছে যেতে দেখে বিছানায় থেকে হুড়মুড় করে নামতে চাচ্ছিল।
মারুফ তা দেখে বলল,বৌ বিচ্ছু দুটোকে যলদি ধর।
তা নাহলে পরে যাবে।
জেসিকা পিছনে তাকিয়ে দেখে বাচ্চারা খাটের কিনারায় এসে পড়েছে।
তা দেখে দৌড়ে ওদের কাছে গিয়ে দুটোকে জরিয়ে ধরে।
জেসিকা ভয়ে মুখ আমসি হয়ে গেছে।
মনে মনে ভাবছে,আজ মারুফ খেয়াল না করলে আরেকটু হলেই ওরা পরে যেতো।

মারুফ জেসিকার মুখে ভয়ের ছাপ দেখে বলল,বৌ ওরা তো ঠিক আছে।
তুমি এমন ভয় পাচ্ছ কেন?
জেসিকা মারুফের কথা শুনেও চুপচাপ বাচ্চাদের জরিয়ে ধরে বসে আছে।

মারুফ তা দেখে বলল,বৌ শুনো ওদের নিয়ে তুমি একটু গল্প কর আমি তাড়াতাড়ি পরিষ্কার হয়ে আসি।
সারাদিন বাহিরে ছিলাম শরীরে অনেক ধূলাবালি লেগে আছে।
হাত মুখ না ধুয়ে ওদের ধরলে ওদের শরীরে ধুলাবালি লাগবে ।
তাই আমি ফ্রেস হয়ে আসছি।
কথাটা বলেই মারুফ ওয়াশ রুমে চলে যায়।
এদিকে জেসিকা বাচ্চাদের বুকে জড়িয়ে ওদের সারা মুখে চুমু দিচ্ছে আর বলছে সোনারা আরেকটু হলেই তো ব্যথা লাগতো।
এমন করতে হয়?
তোদের কিছু হলে আমার কি হবে!
কথাটা বলেই ওদের বুকের সাথে জাপটে ধরে।
কিছুক্ষণ পর
মারুফ ফ্রেস হয়ে এসেই বাচ্চাদের বুকে জড়িয়ে ধরে চুমু খেল।
বাচ্চারা সারাদিন পর বাবাকে পেয়ে আনন্দে মেতে উঠেছে।
জেরিন ও মুহিব বারবার বাবার ঠোঁটে, গালে, গলায় চুমু দিচ্ছে।
মারুফও ওদের ফিরতি চুমু দিচ্ছে এতে ওরা খঁট খটিয়ে হেসে উঠছে।
তা দেখে জেসিকা মুখ গোঁমড়া করে খাটে বসে আছে।
মারুফ জেসিকার মুখের দিকে তাকিয়ে গোঁমড়া মুখ দেখে হাসি পাচ্ছে কিন্তু এই মুহূর্তে হাসলে জেসিকার অভিমান হতে পারে তাই অনেক কষ্টে নিজের হাঁসি আটকে রেখে বলল, সোনা তুমি ওখানে বসে আছো কেন?
আমার কাছে এসো।
জেসিকা মারুফের কথা শুনে বলল, আমি এসে কী করবো?
তোমার কাছে যাদের থাকার কথা তারা তো আছেই।

মারুফ জেসিকার কথা শুনে বলল, ছিঃ বৌ নিজের বাচ্চাদের কেউ হিংসা করে বুঝি?
মারুফের কথা শুনে জেসিকা বলল, ওদের হিংসা করতে আমার বয়েই গেছে।
ওদের সাথে আমার আড়ি।
মারুফ জেসিকার কথা শুনে ওর দিকে তাকিয়ে আছে ।
যদি ক্ষেপে যায় সে ভয়ে কিছু বলছে না।

এদিকে জেসিকা বলে চলেছে ,সারাদিন ওরা আমার কাছে থেকে আমাকে হামি দিয়েছে মাত্র একটা কি দুটো।
আর তোমার কোলে যাওয়ার পর তো হামি আর চুমুর বর্ষন শুরু করেছে।
আর আমার বেলায় ওদের চুমু আর হামি ফুরিয়ে যায়।
এটা কি ঠিক!

মারুফ জেসিকার কথা শুনে বাচ্চাদের গালে চুমু দিয়ে বলল,কি গো সোনারা মা’কে নাকি আদর দাওনি কথাটা বলেই মারুফ হেসে দিল।
জেসিকা মারুফের হাসি দেখে রাগ হয়ে মারুফকে ভেংচি কেটে বিছানায় চাদর মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়ল।

মারুফ জেসিকার অবস্থা দেখে হাসতে হাসতে ওদের নিয়ে রুমের বাহিরে চলে যায়।
এদিকে জেসিকার অভিমান হচ্ছে।
ও না হয় রাগ হয়ে শুয়ে আছে তা দেখেও মারুফ ওর রাগ না ভেঙ্গেই বাচ্চাদের নিয়ে রুমের বাহিরে চলে গেছে।
একটু ওর কাছেও আসলো না ।

এদিকে মারুফ বাহিরে এসে বাচ্চাদেরকে ছুটকি আর রাশেদের কাছে দিয়ে পাগলিটার রাগ ভাঙাতে রুমে আসলো।

মারুফ রুমে এসে দেখে জেসিকা চাদর মুড়ি দিয়ে শুয়ে আছে।
তা দেখে মারুফ পা টিপে টিপে বিছানায় কাছে গিয়ে বিছানায় উঠে জেসিকার পাশে শুয়েই জেসিকার চাদরের মধ্যে ঢুকে ওকে জরিয়ে ধরলো।

মারুফ জেসিককে জরিয়ে ধরে ওর দিকে ফেরায়।
জেসিকা মারুফের দিকে ফেরায় মারুফ জেসিকার মুখের উপরে থেকে চাদর সরিয়ে দিয়ে আঁতকে উঠে।
এই বৌ তোমার কি হয়েছে?
কাঁদছ কেন সোনা?
জেসিকা মারুফের বুকে মাথা রেখে বলল, তুমি বাহিরে থেকে এসে আমাকে আদর করোনি আবার আমার উপরে হেসেছো।
আর এখন বলছো কি হয়েছে?
যতসব ঢং!
তাও তোমার সাথে ও আড়ি….

সারপ্রাইজ
একসাথে দুই পর্ব দিলাম।
দেখলেন তো অপেক্ষার ফল মিষ্টি হয়।

 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here