গল্পঃ হৃদয়ের বন্ধন।
পর্বঃ ৪৫।
লেখাঃ #মেহের।

চাচী ,যে করেই হোক আগামী কালকে আমি বেঁচে থাকলে অবশ্যই আপনি টাকা পাবেন।
এটুকু ভরসা তো আমাকে করতেই হবে ।

দোলা মারুফের কথাটা শুনে বিরবির করতে করতে চলে গেল।

মারুফ ওর চাচীকে যেতে দেখে মনে মনে বলল, একদিনের মধ্যে এতগুলো টাকা জেসিকার আব্বু আজকের জোগাড় করতে পারবে তো?

এরমধ্যেই মায়া বেগম ছেলের কাছে এসে মারুফের মাথায় হাত বুলিয়ে বলল, চিন্তা করিস না।
সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে।

মারুফ ওর মায়ের কথা শুনে বলল,মা আমি ঠিক আছি তুমি চিন্তা করো না।
আল্লাহ সব ঠিক করে দিবে ইনশাআল্লাহ।
এ কথা বলে মারুফ দোকানে চলে গেল।

মারুফ দোকানে এসেই প্রথমে শ্বশুরকে ফোন দেয়।
ফোন বেজে চলছে কেউ ধরছে না।
মারুফ তিন বার ফোন দিয়েছে ওর শ্বশুরকে।
ওর শ্বশুর ফোন রিসিভ করছে না।
তাই মারুফ মোবাইল ডেস্কের ডয়ারে রেখে দোকানে মনোযোগ দেওয়ার চেষ্টা করছে।
কিন্তু টাকার চিন্তাতে দোকানের কোন কাজেই মন বসছে না ।

মারুফের কাছে আপাতত যা টাকা আছে তাতে চাচ্চুর যা সম্পত্তি আছে তার চার ভাগের এক ভাগ কিনতে পারবে কিনা সন্দেহ।
কিন্তু ওর চাচ্চু সব সম্পত্তি বিক্রি করতে চাচ্ছে।
যার দাম বাজার মূল্য এক প্রায় ষাট লাখ টাকা।
অল্প টাকা হলে সে এতো চিন্তা করতো না।
চাচ্চু এই সম্পত্তি বাহিরে বিক্রি করবে তা শুনে জেসিকার বাবা তার মেয়ের এবং আরেকজনের নামে এই সম্পত্তি কিনতে চেয়েছেন।
তাই তো মারুফ ভেবেছিল বাবা দাদার এতো কষ্ট করে অর্জিত সম্পত বাহিরের মানুষজনের কাছে যাওয়ার থেকে নিজেদের মধ্যেই থাকা ভালো ।
সেজন্য জেসিকার বাবা তার মেয়ের নামে কিনতে চাইলে মারুফ বলেছিলো আব্বু আপনি টাকা দিচ্ছেন তাহলে আপনার নামে কিনলে ভালো হয়।

উকিল সাহেব মারুফের মুখে এমন কথা শুনে হেসে বলল,আরে বাবা আমার সব কিছু তো তোমাদের।
তাই আমার নামে বা ওর নামে কিনা একেই কথা।
মারুফ আরও কিছু সেদিন বলতে চেয়েছে কিন্তু উকিল সাহেব আর কিছুই শুনতে নারাজ।
তাই মারুফ এতদিন নিশ্চিত ছিলো জেসিকার বাবা যেহেতু তাদের জমি কিনবেন তাহলে আর ওদের বাড়ির সম্মান নিলামে উঠছে না।
কিন্তু এতো টাকা একদিনের মধ্যেই জোগাড় করা মুখের কথা নয়।

কিন্তু চাচী যেমন মানুষ কালকের মধ্যে টাকা তার হাতে না পেলে অন্য মানুষের কাছে জায়গা জমি বেঁচে দিতে দ্বিধা বোধ করবে না।
এতে যে বাড়ির সম্মান ধূলোয় মিশে যাবে তা একবার ভাববে না।

মারুফ অতিরিক্ত চিন্তায় এটা ভুলে গেছে জেসিকার বাবার যা টাকা আছে তাতে দশ ইসহাকের সম্পত্তি কেনা তার কাছে কোন বিষয় নয়।

মারুফ কিভাবে কালকের ভিতরে টাকা পয়সা জোগাড় করবে তা চিন্তা ভাবনা করছিল। তখন হঠাৎ করেই মাথাটা ঝিমঝিম করছিল।
আশেপাশের সব কিছু অন্ধকার লাগছে , মারুফের মনে হলো সে পরে যাচ্ছে।

সে সময় দোকানের কর্মচারী নাম জয়।
জয় অনেকক্ষণ ধরে খেয়াল করেছে মারুফ দোকানের ভেতরে পায়চারি করছিল।
তারমধ্যে হঠাৎ জয় মারুফের দিকে তাকিয়ে তাকে পরতে দেখে দৌড়ে মারুফের যায়।
মারুফের কাছে এসে ওকে জড়িয়ে ধরেই বলল, ভাইয়া আপনার কী হয়েছে?

এখনেই তো পরে যাচ্ছিলেন।
মারুফ জয়ের দিকে তাকিয়ে বলল কিছুনা তুই আমাকে একটু বসিয়ে দে।

জয় মারুফাকে বসিয়ে দিয়ে পাশের ফার্মেসি থেকে ডাক্তার মামুনকে ডেকে নিয়ে আসে।

ডাক্তার এসেই মারুফের প্রেশার চেক করে দেখেছে।
মারুফের প্রেশার ১১০/১৮০ আছে।
মারুফের দিকে তাকিয়ে ডাঃ বললেন , মারুফ তোমার তো প্রেশার নরমাল থাকে বা লো থাকে ।
তা হঠাৎ করে এতো হাই হলো কি করে?
কথাটা বলে ডাঃ মামুন কাগজে কিছু ওষুধের নাম লেখে তা আনতে জয়কে তার দোকানে পাঠায়।

মারুফ ডাঃ মামুনের কথা শুনে বলল, মামুন ভাই বলতে পারছি না হঠাৎ এমন কেন হলো!

এরপর মারুফ খেয়াল করে দেখে , কর্মচারীরা মানে শাকিব , সোহেল ও রেজা দোকানের দিকে খেয়াল না রেখে ওর কাছে বসে আছে।
তা দেখে মারুফ বলল,এই তোরা আমার কাছে বসে না থেকে নিজেদের জায়গায় গিয়ে বস।
নাহলে এখানে বসে থাকলে দোকানের চুরি হলে টেরও পাবি না।

ডাঃ মামুন মারুফের কথা শুনে বলল, বাহ্ অসুস্থ্য শরীরেও দোকানের খেয়াল রাখতে ভুলছো না!
এজন্যই তো বাজারে সবচেয়ে বড় দোকান তোমার।

মারুফ মুচকি হেসে বলল, মামুন ভাই যে ব্যাবসা করে পেট চালায় তার খেলতো রাখতেই হবে।
আমি তো আরামে বসে কলমে খোঁচা দিয়ে টাকা রোজগার করতে পারবো না।

মারুফের কথা শুনে ডাঃ মামুন হেসে বলল, অসুস্থ্য শরীর নিয়েও আমাকে খোঁচা মারছো তা ভালোই।

আচ্ছা মারুফ তোমার তো দোকানে আয় রোজগারের মাশআল্লাহ ভালো।
তাহলে কি নিয়ে চিন্তা করতে যেয়ে প্রেশার বাড়ালে?

মারুফ ডাঃ মামুনের কথা শুনে চুপচুপ বসে আছে।
মারুফ মনে মনে বলল, মামুন ভাই আপনার সাথে আমার যতই ভালো সম্পর্ক হোক না কেন?
তবুও সবকিছু বাহিরের মানুষকে বলে নিজের ক্ষতি করতে সুযোগ দিতে নেয়।
আপন সেজে কাছে এসে কখন কে ক্ষতি দেয় তা বুঝা মুশকিল।

মারুফকে চুপচাপ দেখে ডাঃ মামুন বলল,তা শুনেছি ভাবীর বাচ্চা হবে।
সে কিছুটা অসুস্থ্য তা নিয়ে চিন্তায় এমন অবস্থা করোনি তো?
নাকি অন্য কিছু নিয়ে চিন্তা করছো ?
মারুফ ডাঃ মামুনের কথা শুনে বলল,না আল্লাহর রহমতে আমার বৌ ভালোই আছে ।
তা নিয়ে চিন্তিত না।
আর ভাই আপনি তো প্রশ্ন করে আমায় আরও অসুস্থ্য করে দিবেন মনে হয়।

ডাঃ মামুন মারুফের কথা শুনে আর কোনো প্রশ্ন না করে।
জয়ের কাছে থেকে ওষুধ গুলো নিয়ে সেখানে থেকে মারুফকে একটা ওসাড়টিল ও প্যনটোনিক্স ২০ মিলি খাওয়ালো।
তারপর জয়কে বলল, মারুফকে বাসায় দিয়ে
আসতে।
এখন ওর রেষ্ট দরকার তাহলে সুস্থ্য হয়ে যাবে।

ডাঃ মামুনের কথা শুনে মারুফ বলল, বাসায় যেতে হবে না।
একটু বসে বিশ্রাম নিলে এমনিতেই ঠিক হয়ে যাবো।

জয় মারুফাকে অনুরোধ করে বললো, ভাইয়া আপনি সুস্থ্য থাকলেই আমরা ভালো থাকবো।
আপনার উছিলায় আমাদের সংসার চলে।
তাই আপনার জন্য না হলেও আমাদের জন্য বাসায় চলেন।

জয়ের কথাটা শুনে মারুফ আর কিছু বলতে পারল না।

এরপর জয় মারুফকে বাসায় দিয়ে আসে।
জয় মারুফাকে দিয়ে আসার আগে শুধু রাশেদকে বলেছে, মারুফের অসুস্থতার কথা।

কারণ জয় ভালো করেই জানে তাদের মহাজন বাড়িতে নিজের অসুস্থ্যতার কথা বলে বাড়িতে সবাইকে চিন্তায় ফেলতে চায় না।
তাই জয় মারুফের অসুস্থতার কথা রাশেদকে ছাড়া আর কাউকে বলে নায়।

মায়া বেগম ছেলেকে দেখে বুঝতে পারছে ,তার ছেলে কিছুটা অসুস্থ্য।
কিন্তু ছেলে যেহেতু তাকে বুঝতে দিতে চাচ্ছে না তাই ছেলেকে বলল, তুই আজকে তাড়াতাড়ি বাসায় এসে ভালো করেছিস বাবা।
তোর ভয়ে জেসিকা যদি এখন একটু রেস্ট করে।
কথাটা বলে মায়া বেগম মারুফকে ওর রুমে পাঠিয়ে দিল।

এদিকে জেসিকা মারুফকে এ সময় বাসায় দেখে ঘাবড়ে যায়।

ঘাবড়ে মারুফকে বলল,এই তোমার মুখ এমন লাগছে কেন?
কি হয়েছে?
মারুফ মুচকি হেসে বলল,পাগলি আমার কিছু হয়নি।
তোমাকে আর আমার বাচ্চাদের কথা খুব মনে পড়ছিল তাই দোকানে থেকে বাসায় চলে আসলাম।
কথাটা বলেই মারুফ জেসিকার পেটে চুমু খেয়ে বলল, সোনা তোরাও বাবাকে মিস্ করছিল তাই না?

মারুফের কথা শুনে জেসিকার বিশ্বাস না হলেও ওকে আর এই বিষয়ে কিছু বললো না।

মারুফ হাতমুখ ধুয়ে মুছতে মুছতে বিছানায় বসে
জেসিকাকে বলল,বৌ আসতো আমি তোমার বুকে মাথা রেখে একটু ঘুমায় আর তুমি আমার চুলে বিলি কেটে দাও।

জেসিকা মারুফের কথা শুনে মারুফের পাশে শুয়ে পড়ল।
মারুফ জেসিকার বুকে হালকা করে মাথা রাখলো।
জেসিকা মারুফের চুলে বিলি কেটে দিচ্ছে।

দুপুরের পরে জেসিকার বাবা মেয়ের বাসায় এসে হাজির।

জেসিকার বাবাকে রাশেদ দেখে সালাম দেয়।
আসসালামু আলাইকুম আঙ্কেল?

জেসিকার বাবা রাশেদের সালামের জবাব দিলো।
ওয়া আলাইকুমুস সালাম।
তা বাবা তুমি কেমন আছো।

আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি আঙ্কেল।
তারপর রাশেদ জেসিকার বাবাকে বসতে বলে ওর মা’কে ডাক দিতে যাবে তখন উকিল সাহেব রাশেদকে বাঁধা দেয়।
মায়া বেগমকে ডাকতে নিষেধ করে।
এখন কাউকে ডাকতে হবে না ।
শুধু মারুফকে ডেকে দাও।

রাশেদ উকিল সাহেবের কথা শুনে বলল, আঙ্কেল ভাইয়া অসুস্থ্য।
জেসিকার বাবা বলল,তা জেনেই ওর সাথে দেখা করতে এসেছি।
ও আমাকে ফোন দিয়েছে তখন কোটে ছিলাম তাই ফোন ধরতে পারিনি।
পরে ওকে ফোন করি।

কিন্তু ফোন ধরে জয়।
জয় ফোন ধরে আমাকে বলল, মারুফ নাকি দোকানে বসে হঠাৎ অসুস্থ্য হয়ে যায়।
তাই তাকে বাসায় দিয়ে এসেছে আর ভুলে মারুফের ফোনটা দোকানের ডেস্কে রয়ে গেছে।

আর আমি জানি মারুফ অসুস্থ্য তা বাসায় কাউকে জানায়নি তাইতো তোমার রুমে বসে ওর সাথে কথা বলতে চাচ্ছি ।
যাতে আপা ও জেসিকা জানতে না পারে মারুফ অসুস্থ্য।

রাশেদ জেসিকার বাবার কথা শুনে, মনে মনে খুশি হলো।
তবে তাকে বুঝতে না দিয়ে , ভাইকে ডাকতে যায়।

মারুফ রাশেদের ডাক শুনে আসছি বলে জবাব দেয়।

এরপর মারুফ জেসিকার দিকে তাকিয়ে দেখে জেসিকা ঘুমিয়ে গেছে।
তাই আস্তে করে ওর পাশে থেকে উঠে আসে।
মারুফ বাহিরে এসে রাশেদকে না দেখে ওর রুমে যায়।

ওখানে গিয়ে জেসিকার বাবাকে দেখে হকচকিয়ে গেল।
তারপর নিজেকে সামলে তাকে সালাম দেয়।
উকিল সাহেব সালামের জবাব দিয়ে মারুফের শরীরের অবস্থা খোঁজ খবর নেন।

উকিল সাহেব, মারুফ কি নিয়ে এতো ভাবছে?
যে শরীর অসুস্থ্য হয়ে গেছে তা জানতে চায়?

মারুফ সকালে দোলার সাথে কি কথা হয়েছে সব শ্বশুরকে বলে এবং তার চিন্তার কারণ ও বলে।
উকিল সাহেব সব শুনে রাশেদকে বলে, তার চাচীকে তার ঘরে ডেকে আনতে।

রাশেদ চাচীকে ডাকতে চলে যায়।
কিছুক্ষণ পর রাশেদের রুমে রাশেদসহ দোলা ও রিফাত এসে হাজির হয়।

দোলাকে কেনো এখানে ডেকেছে তা উকিল সাহেবের কাছে দোলা জানতে চায়?

উকিল সাহেব দোলাকে বলল,আপা আপনাকে কাজেই ডেকেছি ও কাজে নয়।
আর আমি কালকে চেক নিয়ে আসবো।
তারপর ভাইকে বলবেন আমার মেয়ে ও আমার এক বোনের নামে সব জায়গা জমি লিখে দিতে।

দোলা জেসিকার বাবার কথা শুনে ঠিক আছে বলতে নেয়।
তার আগেই রিফাত শ্বাশুড়িকে এক সাইডে ডেকে আনে।

রিফাত শ্বাশুড়িকে ডেকে এনে ফিসফিসিয়ে বলল,আম্মা আপনি ফট করে রাজি হচ্ছিলেন কেন?
তারা চালাকি করে চেক দিতে চাচ্ছেন যাতে আমাদের এতো টাকা ব্যাংক থেকে তুলতে ঝামালায় পরতে হয়।
আর আপনি না বুঝে তাদের কথায় সায় দিচ্ছেন!

রিফাতের কথা শুনে দোলা অবাক হয়ে বলল,বাবা তোমার কত বুদ্ধি!

তুমি না থাকলে এরা তো আমাদের ঠকিয়ে দিতো।
এখন তুমিই বলো কি বলতে হবে?
রিফাত শ্বাশুড়ির কথা শুনে বলল,আম্মা আমি থাকতে আপনাদের কেউ কোন ক্ষতি করতে পারবে না।
আর এখন আপনি ভাবীর বাবার কাছে ক্যাশ টাকা চাইবেন।

দোলা রিফাতের কথা শুনে জেসিকার বাবাকে বললেন, ভাই আমরা চেক নিবো না নগদ টাকা দিতে হবে।

দোলার কথা শুনে জেসিকার বাবা বলল,দেখেন আপা মানুষ এতো গুলো টাকা বাসায় রাখে না।
তাই ব্যাংকে থেকে আমার টাকা তুলতে হবে ।
তার জন্য সময় প্রয়োজন ।
আপনি ক্যাশ নিলে ১৫দিন পরে নিতে হবে।
তবে এই বিষয়ে আপনার যা বলার আমাকে বলবেন।
মারুফ বা জেসিকাকে এই বিষয়ে জড়াবেন না।
যেহেতু আপনি জমি বিক্রেতা আর ক্রেতা তাই যা কথা বলার আমাকে বলবেন।

দোলা উকিল সাহেবের কথা শুনে রিফাতের দিকে তাকালো।

রিফাত দোলাকে ইশারায় হ্যাঁ বললে।
দোলা জেসিকার বাবার প্রস্তাবে রাজি হয়ে যায়।
এরপর দোলা ও রিফাত যার যার রুমে চলে গেল।

তারা যাওয়ার পর জেসিকার বাবা মারুফকে বলল,আর কখনো ছোট খাটো বিষয়ে চিন্তা করে শরীর খারাপ করবে না।
জেসিকার প্রতি যেমন আমার দায়িত্ব আছে তেমনি তোমাদের তিন ভাই বোনও আমার দায়িত্ব।
তাই কখনো কোন বিপদে পরলে ভেঙ্গে পরবে না।
মনে রাখবে তোমাদের যে কোন বিপদে আপদে আল্লাহর রহমতে তোমাদের সাথে আছি‌।

উকিল সাহেব আরও কিছুক্ষণ ওদের সাথে কথা বলে চলে যায়।
জেসিকার বাবা যাওয়ার আগে মেয়ের সাথে দেখা করতে গিয়ে মেয়েকে ঘুমে দেখে আর ডাকেনি। যাতে মেয়ের ঘুম নষ্ট না হয় তাই মেয়েকে না বলে মারুফের কাছে বিদায় নিয়েই চলে যান।

জেসিকার বাবার কথা শুনে মারুফের মাথা থেকে বিরাট ঝামেলা নেমেছে।
মারুফ না খেয়ে থাকতে রাজি আছে কিন্তু সম্মান নষ্ট হয় এমন কিছু করতে চায় না।
মারুফ ভেবেছে ওর কাছে টাকা হলে সে সময় জেসিকার বাবাকে সব টাকা ফেরত দিয়ে দিবে।
এসব ভাবছিল এরমধ্যে রাশেদ বলল, ভাইয়া তুমি যেয়ে বিশ্রাম নেও।
মারুফ রাশেদের কথা শুনে ভাইয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে নিজের রুমে চলে যায়।

দুপুরের পরে সবাই ঘুম ছিলো তাই জেসিকার বাবা এসেছে তা দোলা, রাশেদ,রিফাত ও মারুফ ছাড়া কেউ জানে না।
এদিকে রিফাতের কাছে রনির ফোন আসায় সে ছাদে চলে যায়।
রিফাত ছাদে উঠে ফোন রিসিভ করে বলল,আরে এতো ফোন দিস ক্যান শালা?
কাজ হলে আমিই ফোন দিমুতো!

রনি বলল,আর কত দেরি হবে কাজ হতে?
মারুফ রনির কথা শুনে বলল, দোস্ত আর ১৫দিন পরেই আমাদের স্বপ্ন পূরণ হয়ে যাবে।
তুই সব রেডি করে রাখিস।
আর শুন দোস্ত আমার কিন্তু চামেলিরে চায় ।

রনি রিফাতের কথা শুনে বলল, দোস্ত নো চিন্তা ডু ফুর্তি।
চামেলি তোর ছাড়া আর কারোই হবে না।
তবে দোস্ত তোর শালীর জন্য আমার মনটা আনচান করে ।

রিফাত রনির কথা শুনে ধমকে বলল,বালের প্যাচাল পারিস না তো।
এই মাগীর দেমাক বেশি।
এইটারে একবার বাগে পায়লে বুঝায়তাম এই রিফাত কি চিস!

আর শুন রনি আমাদের প্লান সাকসেসফুল হলে এর থেকেও খাসা ও সেক্সি মাল পাবি।

রনি রিফাতের কথা শুনে বলল, তুই যদি তোর বৌকে একবার আমারে টেস্ট করতে দিস তাহলে তর সব কথাই শুনতে রাজি আছি।

রিফাত রনির কথা শুনে হেসে বলল,আরে আমাদের কাজ শেষ হলে ওরে হাতের মুঠোয় পেলে মজা নিস।
আমি তোরে অনুমতি দিলাম যা।

রিফাতের কথা শুনে রনি খুশিতে বাঁক বাঁকুম হয়ে ফোন রেখে দিল।

অন্যদিকে মারুফ জেসিকার কাছে গিয়ে দেখে তার বৌটা এখনো ঘুমাচ্ছে।
মারুফ জেসিকার দিকে তাকিয়ে বলল, দিনদিন আমার সোনাটা গোলু মোলু হয়ে যাচ্ছে।
দেখলেই মনে হয় খেয়ে ফেলি।
কথাটা বলে মারুফ জেসিকার ঠোঁটে আলতো করে চুমু দিল।

১৫ দিন পর।
মারুফ ভোরের দিকে ওদের ছাদে হাঁটাহাঁটি করছে ।
সূর্য্যি মামা উঁকি ঝুঁকি দিচ্ছে তাতে হালকা আলোতে চারপাশে স্বিগ্ধতা ছড়িয়ে পড়েছে ।
এমন সময়ে জেসিকা নিচে থেকে মারুফকে খুঁজতে ছাদে আসে।
জেসিকার কোলে ফুটফুটে দুটি বাচ্চা।
ইস্ বাচ্চা গুলো দেখে মনে হচ্ছে বেহেশতের দূত।
কি সুন্দর দেখতে আর জেসিকাকে দেখতে অপূর্ব সুন্দরী লাগছে।
মনে হচ্ছে আকাশ থেকে পরি মাটিতে নেমে এসেছে।

মারুফ মুগ্ধ নয়নে পরি ও বেহেশতের পাখিগুলোর দেখে অপলক তাকিয়ে আছে।
ওর সহধর্মিণী ও কলিজার টুকরোরা ওর দিকে তাকিয়ে আছে।
এরমধ্যেই বাচ্চাগুলো ওর কোলে আসতে হাত বাড়িয়ে দিয়েছে।
মারুফের দিকে তাকিয়ে জেসিকা খিলখিলিয়ে হাসছে।

জেসিকার হাঁসি যেনো মারুফকে পাগল করে দিচ্ছে।
জেসিকার পাগল করা হাঁসি দেখে মারুফ ওর দিকে তাকিয়েই ওদের কাছে যাচ্ছে।

জেসিকা মারুফকে আগাতে দেখে হাসতে হাসতে পিছনে সরে যাচ্ছে।

মারুফ জেসিকাকে পিছাতে দেখে ভয় পেয়ে পিছনে সরতে নিষেধ করেছে।

কিন্তু জেসিকা মারুফের কথা শুনতে পেলো না তার আগেই ছাদের বাহিরে এক পা ফেলে দেওয়ার সাথে সাথে বাচ্চাদের সহ নিচে পরে যায় ।
পরার আগে চিৎকার করে মারুফ বাঁচাও বলছে ।

মারুফ ওর প্রিয়তমাকে ছাদে থেকে পরতে দেখে , জেসিকা বলে চিৎকার করে ওখানে বসে পরল।

তারপর চারপাশে কেমন নিস্তব্ধতায় ছেয়ে গেছে।
….

 

 

নোটঃ কিছু মানুষ স্বার্থের কারণে চোখ থাকতেও অন্ধ।
ভালোবাসা,মায়া মহব্বত কিছুই তাদের নজরে আসে না।
এক সময় যাদের ভালোবাসি বলে মুখে ফেনা তুলতো।
তাতে হয়তো ভালোবাসার মানুষটি তাকে নিরাপদ ভাবতো ।
এক সময় নিরাপদ ভাবা লোকটিই যে তার আপনজনদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করতে একটুও দ্বিধা বোধ করবে না সে কথা তার অজানা।
দুষ্টু লোকের কাছে ভালোবাসা মানে সে তো নিছক মজা।

বিঃদ্রঃ গল্পের স্বার্থে আজকে কিছু খারাপ শব্দ ব্যাবহার করায় ।
কারো খারাপ লাগতে পারে সেজন্য আন্তরিক ভাবে দুঃখিত।

আমার গল্প লেখতে ভালো লাগে তাই সংসারের কাজ শেষ করে নিজের বিশ্রামের সময়টুকু গল্প লেখি।
সেজন্য দিতে দেরি হয়।
হয়তো অনেকের অভিযোগ আছে আমি গল্প দেরি করে দেয়।
আমার প্রিয় পাঠক/পাঠিকাদের আমার দিকটাও দেখতে হবে।

আর আগামীকাল গল্প দিতে পারব কিনা তা জানিনা।
যেখানে এক মুহূর্তের নিঃশ্বাসের এর বিশ্বাস নেই।
আমার লেখা যদি আপনাদের ভালো লাগে তাহলে লাইক ও কমেন্ট করে পাশে থাকবেন।
আর লেখায় ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here