গল্পঃ হৃদয়ের বন্ধন।
পর্বঃ ২৪।
লেখা #মেহের।

জেসিকা মারুফকে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে জিজ্ঞেস করে ,আপনাকে কি চা দিবো ?

জেসিকার কথার আওয়াজ পেয়ে মারুফ ধ্যান ভঙ্গ হয়।
মারুফ জেসিকার দিকে তাকিয়ে বলল, তুমি আমায় কিছু বলেছো নাকি?

জেসিকা মারুফের কথা শুনে বলল, বলেছি আপনাকে এখন কি চা দিবো?

থাক চা লাগবে না ।
আমার তো অন্য কিছু লাগবে বৌ মারুফ কথাটা বলে জেসিকাকে জরিয়ে ধরে।

জেসিকা মারুফের কাজে মনে মনে খুশি হলেও মুখে বিরক্ত ফুটিয়ে বলল, সবসময় এমন ঝাপটা ঝাপটি কিন্তু আমার ভালো লাগে না।
তারপরও আপনার সবসময় এমন না করলে চলছে না!

মারুফ জেসিকার কথা শুনে মন খারাপ করে বলল, বারবার আমি তোমার কাছে আসি তাই তুমি এখন বিরক্ত হচ্ছো তো যখন দূরে চলে যাবো তখন আমাকে আর খুঁজলেও পাবে না।

জেসিকার বুকে মারুফের কথাটা তীরের মত বিঁধে।
জেসিকা মনে মনে বলল, মারুফ হঠাৎ দূরে যাওয়ার কথা বলল কেন?
ওঁর মুখে আগে কখনো তো এমন কথা শুনেছি তা মনে পরছে না!
তাহলে কি আমার কঠিন ব্যাবহারে ওকে কষ্ট বেশি দিয়ে ফেলেছি!
সেজন্য অভিমান করে এমন কথা বলল।

জেসিকা যখন এসব ভাবতে ব্যস্ত সে সময়ে মারুফ জেসিকার রূপে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে।
মারুফ বিরবির করে বলছে, হায়রে কপাল বৌ আমার তার রূপ দেখিয়ে তৃষ্ণা বাড়াতেই পারে ।
কখনো কাছে এসে তৃষ্ণা মেটাতে পারে না।
এত দুঃখ কোথায় যে রাখবো সে জায়গা খুঁজে পায়না।

জেসিকা মারুফের কথা শুনে বলল, পাগল হলেন নাকি?
আজকাল দেখি আপনি প্রায় একা একা বিরবির কথা বলেন!

আমি পাগল হলে তো তুমিই বেশি খুশি হবে তা আমি ভালো করেই জানি।
তবে সরি বৌ এই বিষয়ে আমি তোমাকে খুশি করতে পারছি না।

মারুফের কথা শুনে জেসিকা মারুফের কাছে থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে কিছুটা রেগেমেগে ওদের রুমে থেকে বাহিরে চলে আসে।
আশ্চর্য বিষয় হচ্ছে জেসিকা যে রাগ করে বের হয়েছে তা ওঁর স্বামী বোঝেনি।

মারুফ ভেবেছে জেসিকা এমনিতেই রুমে থেকে চলে গেছে।
এটা বুঝতে পারিনি যে জেসিকা ওঁর কথা শুনে রাগ করেছে।
মারুফ ভেবেছে বৌ ওঁর কাছে থেকে দূরে থাকতে চায় তাই হয়তো রুমে থেকে চলে গেছে।

মারুফের আজকে খুব ইচ্ছে ছিল জেসিকা গোলাপী ওষ্ঠের সুধা পান করার।
কিন্তু কামড়ের ভয়ে নিজের ইচ্ছেকে সংযত করতে হয়েছে।

মারুফের হঠাৎ কামড়ের কথা মনে হতেই এক সপ্তাহ আগের কাহিনী চোখে ভেসে ওঠে।

এক সপ্তাহ আগে

মারুফ সেদিন দোকানে থেকে দুপুরে তাড়াতাড়ি এসে পড়েছে।
বাসার কাছেই যে মসজিদে আছে সেখানে থেকে নামাজ আদায় করে বাসায় এসেছে।
তাই বাসায় এসে আর হাত মুখ ধুতে হয়নি।
ভেবেছে খাওয়া দাওয়া করেই আবার দোকানে চলে যাবে।
কিন্তু বাসায় এসে দেখে এখনো রান্না হয়নি ।
তাই নিজের রুমে চলে গেল।
এদিকে জেসিকা কিছুক্ষণ আগেই ভার্সিটিতে থেকে এসেছে ।
এসেই গোসল করতে চলে যায়।
মারুফ রুমে এসে দেখে জেসিকা মাত্র গোসল করে বের হয়েছে।
মারুফের চোখে সে সময় জেসিকাকে খুব সিগ্ধ লাগছিল।
মনে হয়েছে সদ্য ফোঁটা কোন ফুল।
যাকে ছুঁয়ে না দিতে পারলে জীবন বৃথা হয়ে যাবে।
সে সময়ে মারুফের বৌকে একটু ছুঁয়ে দিতে মনটা আঁকুপাঁকু করছিল।

জেসিকা গোসল করে বের হয়েই মারুফকে দেখতে পেয়েছে।
কিন্তু মারুফ যে ওঁর দিকে নেশাগ্রস্ত চোখে তাকিয়ে আছে তা খেয়াল করেনি।

সেজন্য মারুফের দিকে নজর না দিয়ে জেসিকা বারান্দায় ভেজা কাপড় মেলে দিতে যাওয়ার জন্য সামনে এগিয়ে যাচ্ছিল।
সে সময় মারুফ জেসিকার সামনে এসে দাঁড়ালো।
জেসিকার হাতে থেকে ভেজা কাপড় চোপড় নিয়ে টি টেবিলে রেখে জেসিকার কাছে এসে ওকে কোলে তুলে নেয়।

জেসিকাকে কোলে নিয়ে মারুফ বিছানার কাছে এসে ওকে বিছানায় শুইয়ে দেয়।
এরপর নিজের শরীরের সবটুকু ভর জেসিকার ওপরে ছেড়ে দিলো।

জেসিকা মারুফের কাছে থেকে ছাড়া পেতে হাঁসফাঁস করছে।
মারুফ তা তোয়াক্কা না করেই ওঁর বৌয়ের সারা মুখে ছোট চুমু খাচ্ছে।
এক পর্যায়ে নিজের শুকনো খড়খড়ে ঠোঁট দিয়ে জেসিকার ভেজা ওষ্ঠ দখল করে নেয়।
তৃষ্ণার্ত হৃদয় একটু একটু করে যখন প্রেয়সীর ওষ্ঠের সুধা পান করছিলো।

সে সময়ে মারুফের প্রেয়সী মারুফের কাছে থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে ব্যর্থ হয়ে ঠোঁট কামড়ে রক্ত বের করে দেয়।
সেই মূহূর্তে জেসিকার দেওয়া ব্যথা মারুফের ঘোর কাটাতে যথেষ্ট ছিল।
ঘোরে থেকে বের হয়ে মারুফ রাগে ক্ষোভে ফুঁসছে কারণ এমন প্রেমের মুহূর্তে আদৌও কোনো বৌ তার স্বামীর সাথে এই আচরণ করতে পারে কিনা মারুফ তা ভেবে পাচ্ছে না!

মাঝে মাঝে জেসিকার এমন বৈরী আচরণে মারুফের রাগ উঠে।
সে তো স্বীকার করেছে তার ভুল হয়েছে।
তবুও কেন ওঁর বৌ বুঝতে চায়না না।
মারুফ এসব ভাবছে সে সময়
জেসিকা বাহিরে থেকে বরফ এনে মারুফের হাতে দিয়ে বলল,এই নেন আপনাকে কষ্ট করে খুঁজে আনতে হয়নি আমি এনে দিলাম।
নিন ঠোঁটে সেঁক দিলে বোধহয় ব্যথা কমে যাবে।

মারুফ জেসিকার কথা শুনে রেগে বলল, ধন্যবাদ ।
কারো কাটা জায়গায় কিভাবে লবণ ছিটিয়ে দিতে তা মনেহয় ভালোই জানো?
একথা বলেই বরফ ছুঁড়ে দূরে ফেলে দিয়ে হনহনিয়ে রুমে
থেকে বের হয়ে আসে।

এদিকে মারুফকে বের হতে দেখে মায়া বেগম বললেন,বাবা টেবিলে খাবার সাজিয়ে রাখা আছে তোর দাদুকে নিয়ে খেয়ে নে।
মারুফ ওঁর মা’কে বলল, মা তোমরা সবাই আসো একসাথে খেতে বসি।

মায়া বেগম বলল,তুই তো
আবার এখন দোকানে যাবি সেজন্য বলেছি তোর দাদুকে নিয়ে খেয়ে নিতে।
আমি গোসল করব এরপর নামাজ পড়ব তাতে তোর অনেক দেরি হয়ে যাবে বাবা ‌।

মায়ের কথা শুনে মারুফের মনে পড়লো ওঁর আজকে দোকানে তাড়াতাড়ি যেতে হবে।
বিকালে একটা বড় অর্ডার পাবার কথা আছে।
তাই দাদুকে ডেকে একসাথে খেতে বসে।

চাঁদনী বানু খাচ্ছে আর মারুফের দিকে তাকাচ্ছে।
মারুফের ঠোঁট ফোলা ও লাল দেখে মারুফের দাদু বললেন, কিরে দাদু ভাই তোমার ঠোঁটে আবারো কি হয়েছে?
মারুফ দাদুর কথা শুনে হকচকিয়ে গেল!

চাঁদনী বানু মারুফকে চুপচাপ দেখে বলল, ঠোঁটে কি হয়েছে বললে না ?
মারুফ ওঁর দাদুর কথা শুনে আমতা আমতা করে বলে, দাদু তাড়াহুড়ো করে ওয়াশ রুমের দরজা খুলতে গিয়ে একটু লেগে গেছে।
তাই হয়তো লাল হয়ে গেছে।

চাঁদনী বানু এ কথা শুনে বলল, তোমার ঠোঁট একদিন পিঁপড়ায় কামড়ে লাল করে দেয়। একদিন দেয়ালে লাগে, আবার খাটে লেগে লাল হয় আর আজকে দরজায় লাগলো।
তা দাদু ভাই সব কিছু ছেড়ে শুধু তোমার ঠোঁটের উপরে কেন এতো ঝড় যাচ্ছে আমাকে একটু খুলে বলবে?

মারুফ চাঁদনী বানুর কথা শুনে মনে মনে বলল, দাদা ভাই মনে হয় তোমার ঠোঁট‌ কখনো লাল করেনি।
যে বুঝতে পারছ না।
আসলে তুমি বুঝতে পেরেছো ঠিকই তবুও কেন যে আমার ঠোঁটের লাল হওয়ার পিছনে পরে থাকো সে কথা আমি বুঝতে পারছি না।

আমার হয়েছে যত জ্বালা, একজন আমার ঠোঁট কামড়ে লাল করে দেয়।
অন্যজন সেটা নিয়ে গয়েন্ধা গিরি করতে আসে।
দূর ভালো লাগে আর এসব ক্যাচাল।
সেদিনের পরে থেকে মারুফ জেসিকার ওষ্ঠ থেকে নিজের ঠোঁটকে নিরাপদ দুরত্ব বজায় রাখে।

বর্তমান

তবে কতদিন রাখতে পারবে তা জানে না।

মারুফ যখন এসব ভাবছিল সে সময়ে রুমের বাহিরে থেকে হাসিঁর শব্দ শুনল।
মারুফ হাঁসির শব্দ শুনে বুঝতে পারছে রাশেদ, ঝর্না, কোমল এবং ওঁর বৌ কেরাম খেলছে।

তাই তাদের মুখে এতো হাঁসির ঢল নেমেছে।
তবে এই মুহূর্তে মারুফ ওদের কাছে গেলেই দেখা যাবে সব কয়টা চুপচাপ বসে আছে।
শান্ত ও ভদ্র মানুষের মত।

তাই মারুফ ওদের বিরক্ত করতে ওদিকে যায়নি।
থাকুক ওঁরা নিজেদের মত করে এসব চিন্তা করে মারুফ মায়ের রুমে যায়।

মারুফ মায়ের রুমে গিয়ে দেখে ওখানে চাঁদনী বানু ও দোলা ও আছে।
মারুফকে দেখে দোলা বলল, তোমার কাছে আমরা কিছুক্ষণ পরেই যাচ্ছিলাম আব্বু।
তার আগে তুমিই এসে পরেলে!

মারুফ ওঁর চাচীর কথা শুনে বলে,আমিও আপনার সাথে কথা বলতে যাব ভেবেছি।
ঝর্নার ব্যাপারে চাচ্চু এসব কি বলছে?
তা জানার জন্য।

চাঁদনী বানু মারুফের কথা শুনে বলল, দাদু তুমি কি ঝর্নার বিয়ের কথার ব্যাপারে বলতে চাচ্ছো?

মারুফ ওঁর দাদুকে বলল, দাদু চাচ্চু বলেছে আগামী শুক্রবার ঝর্নাকে দেখতে আসছে ছেলে পক্ষ।
ঝর্নার তো এখনও তেমন একটা বয়স হয়নি ।
এই সময়ে দেখা দেখি কি ঠিক?

চাঁদনী বানু বলল, মেয়ে ঝী বড় হলে দেখতে তো আসবে।
যেমন গাছে ফল পাকলে মানুষ তো টোকা দিবেই এতে সমস্যার কিছু দেখছি না তো দাদু ভাই।

মারুফ দাদুর কথা শুনে বলল, কিন্তু দাদু আমাদের ঝর্নার এখনো আঠারো হয়নি এতো তাড়াতাড়ি বিয়ে দেওয়া ঠিক হবে না।

মারুফের কথা শুনে দোলা বলল,দেখো বাবা সব সময় এমন ভালো ছেলে পাওয়া যায় না।
ছেলে সরকারি চাকরি করে, আর্থিক অবস্থা আমাদের থেকেও অনেক ভালো এবং পরিবারের লোকজনও ভালো ।
তোমার বোনের এবং আমাদের ভাগ্যে যে ওঁর জন্য এমন ঘর থেকে প্রস্তাব এসেছে।

মারুফ চাচীর কথা শুনে বলল, আপনি না দেখেই পরিবার ভালো বুঝলেন কিভাবে?

দোলা মারুফকে বলল,আরে বাবা, ছেলে তো আমার চোখের সামনে বড় হয়েছে।
আমার ভাইয়ের সমুন্ধীর ছেলে।

মারুফ চাচীর কথা শুনে বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে না।
এখানে ঝর্নাকে বিয়ে দিতে চাচী একপায়ে রাজি আছে।
কারো বাঁধা মনে হচ্ছে না শুনবে।
তাই শেষে চাচীকে বলল, আপনাদের যেটা ভালো মনে হয় সেভাবেই করুন। আমাকে বললেই হবে কি কি আনতে হবে?
তা এনে দিবো আশাকরি এদের আপ্যয়ণে কোন সমস্যা হবে না।
আরও কিছুক্ষণ তাদের সাথে গল্প করে মারুফ নামায পড়তে মসজিদে যায়।

এদিকে জেসিকা খেলা শেষ হয়েছে আরও আগেই।
আযান দেওয়াতে কোমল ও ঝর্নার সাথেই নামায পড়ে। এরপর রুমে আসে।
রুমে এসে দেখে মারুফ রুমে নেই।
জেসিকা খাটে বসে চোখ বুজে ভাবছে তখন মারুফ হঠাৎ করে দূরে যাওয়ার কথা বলছে কেন?
জেসিকা প্রথমে মারুফের সাথে রাগ করে থাকলেও মারুফের ওঁর প্রতি সেবা যত্ন ভালোবাসা দেখে একটু একটু করে ওঁর হৃদয় মারুফের ভালবাসা উপলব্ধি করছিল।
একজন পুরুষ কতটা দোর্য্যশীল হতে পারে তা মারুফকে না দেখলে বিশ্বাস করতে পারত না।

সবসময় এক বিছানায় দুজনে ঘুমিয়েছে মারুফের এতো কাছে থাকার পরেও মারুফ কখনো ওঁর ওপরে জোর করে নিজের অধিকার আদায়ে চেষ্টা করেনি।

মারুফ বুক ভরা ভালোবাসা নিয়ে ওঁর কাছে গিয়েছে।
ওষ্ঠ দখল করেছে।
জেসিকার প্রত্তাক্ষান স্বরুপ কামড় খেয়ে ব্যথা পেয়েছে তবুও জেসিকা কে কিছু না বলে নীরবে সরে এসেছে।
কিন্তু জেসিকার এমন কাজের জন্য ওকে একটুও শাস্তি দেয়নি।
জেসিকা দেখেছে মানুষটা কিভাবে নিজের অস্থিরতাকে দমিয়ে রেখেছে তবুও
জেসিকা কষ্ট পাবে এমন কাজ করেনি।
জেসিকার জন্য মারুফকে কতবার সবার সামনে লজ্জায় পড়েছে তবুও ওকে কারো কাছে লজ্জিত হতে দেয়নি।
জেসিকা বুঝতে পারছে মারুফের মত এমন স্বামী পাওয়া সত্যিই….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here