গল্পঃ হৃদয়ের বন্ধন।
পর্বঃ ২১।
লেখাঃ #মেহের।

তাই মারুফের আদর পেয়েও কেমন নির্লিপ্ত হয়ে আছে।
মারুফের মনে হচ্ছে ওঁর বৌ মানুষ না রোবট ।
নাহলে যে মেয়ে মারুফের একটু ছোঁয়া পেতে অস্থির হয়ে থাকতো।
মারুফের ঘুমের সুযোগে ওঁর ওষ্ঠ ছুঁয়ে দিতো।
নিজেকে মারুফের সাথে মিশিয়ে একাকার হতে চাইতো।

সেই মেয়ে কিনা আজকে ওঁর আদরে কোন রেসপন্স করছে না বরং শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

মারুফ জেসিকার অবস্থা দেখে নিজেকে সামলে নিয়ে ওকে ছেড়ে দেয়।

জেসিকা মারুফের কাছে থেকে ছাড়া পেয়ে আস্তে আস্তে ওয়াশরুমের দিকে যেতে নেয়।

তা দেখে মারুফ জেসিকাকে হাত ধরে ওয়াশরুমে দিয়ে এসে।

জেসিকার জন্য বাহিরে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে।

মারুফ জেসিকার মুখ দেখেই বুঝতে পারছে বৌয়ের কাছে এতো তাড়াতাড়ি সে মাফ পাবে না।
দরকার হলে বৌয়ের অভিমান ভাঙ্গাতে দোর্য্য ধরে অপেক্ষা করতে হবে।
এবারে মারুফের সময় এসেছে দোর্য্যে পরীক্ষা দেওয়ার।

মারুফ যখন এসব চিন্তা করছিলো সে সময়ে জেসিকা ওয়াশরুমে থেকে বের হয়ে আসে।

মারুফ ওকে বের হতে দেখেই ওঁর কাছে গিয়ে হাত ধরে নিয়ে খাটে বসিয়ে দিল।

মারুফ এরপর রুমের বাহিরে গিয়ে দশ মিনিট পরে হাতে করে পিরিচে করে কিছু নিয়ে আসে।

জেসিকা সে সময় বসে বসে নামায আদায় করছিলো।
মারুফ এই দৃশ্য দেখে মনে মনে অনেক খুশি হয়েছে।
তার বৌ অসুস্থ্য তবুও নামায পড়তে আলসেমি করছে না।
এটা দেখে মনে মনে আল্লাহকে শুকরিয়া জানালো।

জেসিকার নামায পড়া শেষ হলে মারুফ জেসিকার সামনে বসল।
সামনে বসে বলল, হাঁ করো তো।
জেসিকা মারুফের কথা শুনে কোন প্রতিক্রিয়া করছে না।

মারুফ তা দেখে জেসিকাকে বলল,তুমি না নামায পড় তাহলে এটা জানো না স্বামী কিছু বললে তা শুনতে হয়।
দেখছো আমি তোমার সাথে কথা বলছি আর তুমি বোবা মানুষের মত চুপ করে আছো এটাতো ঠিক না!
যেখানে ইসলামে বলা আছে , স্ত্রী কাজে যতই বাস্ত থাকুক স্বামীর ডাকে দরকার হলে কাজ ফেলে স্ত্রীকে সাড়া দিতে হবে ।

আর তুমি আমার সামনে বসেও জবাব তো দিচ্ছো না আবার আমার কথা শুনতে পারছো না এমন ভাব করছো!

জেসিকা মারুফের কথা শুনে বলল,তা ইসলাম বুঝি বিনা কারণে স্ত্রীকে এভাবে আঘাত করার নির্দেশ দিয়েছে ?
আর আপনার মুখে তুই শব্দ ভালো মানায় তাই ভদ্রতা দেখিয়ে আমার মত খারাপ মেয়ের সাথে তুমি করে বলতে হবে না।

মারুফ জেসিকার কথা শুনে বলল,নাহ্ ইসলামে এভাবে আঘাত করার নির্দেশ নেয়।
আমি মানছি তো সোনা আমার ভুল হয়ে গেছে।
দরকার হলে তুমি আমাকে এরজন্য যে শাস্তি দিবে আমি তা মাথা পেতে নিবো।
আর আমার বৌকে আমি তুই বলবো না তুমি সেটা আমাকেই বুঝতে দেও সোনা।

জেসিকা মারুফের কথা শুনে বলল, বারবার সোনা সোনা বলছেন কেন?
আপনি এই মাত্র বললেন তো আমি যে শাস্তি দিবো আপনি তা নাকি মাথা পেতে নিবেন। ঠিক আছে তাহলে আপনার শাস্তি হচ্ছে ,আপনি আমাকে একবারে ছেড়ে দিন মানে তালাক দিয়ে দেন।
আমি এখানে আর থাকতে চায় না।
তাছাড়া আপনি সেদিন তো আম্মুকেও বলে ছিলেন আমাকে বাড়িতে থেকে বের করতে তাহলে আজকে সু্যোগ থাকা সত্ত্বেও তা করলেন না কেন?
নাকি দাদুর আদর্শ নাতি হওয়ার লোভ সামলাতে পারলেন না।

জেসিকার কথা শুনেই মারুফের রাগ উঠে যাচ্ছিল কিন্তু মারুফ নিজেকে এই বলে শান্ত করেছে, বৌয়ের মুখে এসব কথা শুনতে হচ্ছে নিজের দোষে।
তাই শান্ত হয়ে মারুফ জেসিকাকে বলল, তালাকের কথা আর কখনো তোমার মুখে শুনতে পেলে এমন হাল করবো তা কখনো স্বপ্নেও ভাবতে পারবে না।
একটা কথা কান খুলে শুনে রাখ, তোমাকে সারাজীবন আমার সাথেই কাটাতে হবে।
তবে হ্যাঁ , আমি মারা গেলে তখন যা ইচ্ছে করো তখন কেউ বাঁধা দিতে আসবে না।
জেসিকা মারুফের মুখে মরার কথা শুনে চুপ হয়ে গেল।

মারুফও এই বিষয়ে আর কথা বাড়ালো না।
মারুফ জেসিকার জন্য ডিম পোঁচ করে এনেছে তা খাওয়ানোর জন্য জেসিকাকে আবারো হাঁ করতে বলল।
জেসিকা খাবারের দিকে তাকিয়ে বলল, আমি খাবো না।
মারুফ ধমকে বলল, চর মেরে দাঁত ফেলে দিবো তোমার।
হাঁ করতে বলেছি হাঁ করবে খাবে কিনা তা আমি কি তোমার কাছে জানতে চাইছি!
জেসিকা মারুফের ধমক খেয়ে দু’চোখ দিয়ে পানি পড়ছে মনে হচ্ছে নীরবে কাঁদছে।
তবে আর যেনো ধমক না খেতে হয় তাই মারুফের হাতে ডিম পোঁচ খাচ্ছে।
কিন্তু অর্ধেক ডিম খাওয়ার পরে আর খেতে পারছে না।
মনে হচ্ছে আরেকটু খেলেই বমি হবে।
জেসিকা ভয় পাচ্ছে পুরো ডিম পোঁচ না খেতে পারলে মারুফ কী তাকে মারধর করবে?

মারুফ মনে হয় জেসিকার মুখ দেখে সব বুঝতে পারছে।
তাই জেসিকাকে কিছু না বলেই বাকি ডিমটুকু নিজেই খেয়ে নিল।

এরপর টি টেবিলে রাখা ফলের প্যাকেটে থেকে একটা কমলা নিয়ে তা খোসা ছাড়াতে ছাড়াতে বলল,কমলা খেলে বমি ভাব কমে যাবে।
জ্বর হওয়াতে এখন মুখ তেতো হয়ে আছে তাই কমলা খেলে তোমার ভালো লাগবে ।
এ কথা বলা শেষ হলে জেসিকার মুখে কমলার কোয়া দিয়ে দিল‌।
জেসিকা প্রথমে মনে মনে রাগ হলেও কমলার কোয়া মুখে নেওয়ার পরে দেখল খারাপ লাগছে না।
মারুফ বসে বসে পুরো কমলা জেসিকাকে খাওয়ালো।

জেসিকার কমলা খাওয়া শেষ হলে শুয়ে পড়লো।
মারুফ জেসিকাকে শুয়ে থাকতে দেখে হাত ধুয়ে একটা বাটিতে অল্প কুসুম গরম পানি ,সুতি নরম কাপড় ও মলম নিয়ে বিছানায় আসে।
মারুফ এগুলো আগেই রুমে এনে রেখেছিলো।

মারুফ বিছানায় বসে
জেসিকাকে উপর হয়ে শুয়ে থাকতে বলল।
জেসিকা মারুফের কথা শুনেও চুপচাপ শুয়ে আছে।
তা দেখে মারুফ জোর করে জেসিকাকে উপর করে শুয়ে দিল।
এরপর জেসিকার কামিজ উপরে তুলল।
জেসিকা বাঁধা দিতে চাইলে মারুফ ধমকে উঠে।
এরপর জেসিকা আর টুঁশব্দটিও করে না।
মারুফ জেসিকার কামিজ উপরে তুলে জেসিকার পিঠের দিকে তাকিয়ে থেকে ভয় পেয়ে গেল।
ফর্সা পিঠ তার দেওয়া বেল্টের আঘাতে কোন জায়গায় রক্তের মত লালচে আবার কোন জায়গায় নীলচে দাগ হয়ে গেছে সারা পিঠ জুরে।
জেসিকার এই অবস্থা দেখে মারুফের নিজের কাছে নিজেকেই আজ অমানুষ মনে হচ্ছে।
মারুফ সুতি কাপড় ভিজিয়ে হালকা করে পিঠ মুছতে লাগলো।
জেসিকার ব্যথা জায়গাগুলোতে ছোঁয়া দেওয়াতে ব্যথায় বার বার কেঁপে উঠছে।
মারুফের তা আরও কষ্ট হচ্ছিল।

সুতি কাপড় ভিজিয়ে পরিষ্কার করার পরে মারুফ জেসিকার সারা পিঠে নিজের ওষ্ঠ দিয়ে ছুঁয়ে দিচ্ছিল।

এতে জেসিকার রেগে গিয়ে বলল, আপনার ঢং শেষ হবে কখন?
আমার ভালো লাগছে না আমি ঘুমাবো।
মারুফ জেসিকার কথা শুনে কষ্ট হচ্ছে।
এখন তার ভালোবাসা জেসিকার কাছে ঢং মনে হচ্ছে।
মারুফ মনে মনে বলল,বৌ তোমাকে আমার বুক ফেড়ে দেখাতে পারলে বুঝতে কি যন্তনা হচ্ছে এই বুকে?
তোমাকে আঘাত করেছি ঠিক তবে তার ব্যথা হচ্ছে আমার বুকে।

জেসিকাকে ঔষুধ দেওয়ার পরে ঠিক হয়ে ঘুমাতে নিলে মারুফ ওকে বাঁধা দেয়।
বলে, এমন ভাবে ঘুমালে সব মলম মুছে যাবে।

কারণ মারুফ জেসিকার পুরো পিঠে মলম দিয়ে দিয়েছে।
এতে জেসিকার ঘুমাতে কষ্ট হচ্ছে।
তা দেখে মারুফ লাইট নিভিয়ে বিছানায় শুয়ে জেসিকার মাথা ওঁর বুকের ওপরে নিলো।

কিন্তু জেসিকা মারুফের বুকে শুবে না তাই বুকে থেকে নেমে যেতে নেয়।

তা দেখে মারুফ বলল, বুকে থেকে নামার আগে ভেবে দেখো আমার বুকে থেকে মাথা সরিয়ে নিলে আমি কিন্তু তোমার বুকে মাথা রেখে শুয়ে পরবো।
তখন তুমি ব্যথা পেলেও সরবো না।

জেসিকা মারুফের কথা শুনে মনে মনে বলল, ইস্ সখ কত আমার বুকে শুবে।
আপনার মত হাতিকে আমার বুকে শুতে দিলে তো!
দরকার হলে কষ্ট হলেও আপনার বুকে মাথা রাখবো ।
আর মনে মনে ভাববো আমি শক্ত ফ্লোরে শুয়ে আছি তাহলেই হবে।
তবু আমার বুকে আপনার আর জায়গা নেই।
কি ভেবেছেন আমাকে মিষ্টি মিষ্টি কথা বলে আদর করবেন আর আমি সব ভুলে যাব? কক্ষনো না।
একবার আপনাকে ভালোবেসে ভুল করেছি বলে বার বার সে ভুল করবো না।

মারুফ খেয়াল করে দেখে জেসিকা ওঁর বুকে মাথা রেখে চুপচাপ শুয়ে আছে।

তা দেখে মারুফ জেসিকার চুলে বিলি কেটে দিচ্ছে আর মনে মনে বলছে,বৌ তুমি আগে সুস্থ্য হও।
তারপরে তুমি চাই়লেও আমি তোমার থেকে দূরে থাকবো না।

তোমাকে এতো ভালবাসা দিবো যে তুমিও আমাকে ভালবাসতে বাধ্য হয়ে যাবে।

তোমার মনের বাগানে দরকার হলে আমি ভালোবাসা দিয়ে ফুল ফুটিয়ে ছাড়বো।

তোমাকে কষ্ট যেমন দিয়েছে ভালোবাসা তার থেকে বেশি দিয়ে পুষিয়ে দিব।
এসব ভাবতে ভাবতে মারুফ এক সময় ঘুমিয়ে পরে।

মারুফ ভোরে নামায পড়ে এসে শুয়ে পড়লো।
সকালে আটটার দিকে মারুফ ঘুম থেকে উঠে জেসিকাকে ফ্রেস করিয়ে দেয়।
এরপর খাওয়া দাওয়া করতে টেবিলে নিয়ে বসিয়ে দেয়।
সবাই একসাথে বসে খাচ্ছে জেসিকা খাবারে হাত দিয়ে খাবার নাড়াচাড়া করছে।
মারুফ আড় চোখে তা খেয়াল করে।
মারুফ নিজের নাস্তা শেষ করে জেসিকাকে জোর করে নাস্তা খাওয়ালো।
খাওয়া শেষে রুমে এসে জেসিকাকে ঔষুধ খাওয়ায়।
এরপর পিঠে মলম দিয়ে দিল।
জেসিকা খেয়াল করছে মলমটা দেওয়ার পরে থেকে ব্যথা কমতে শুরু করেছে।
মনে হচ্ছে তাড়াতাড়ি সুস্থ্য হয়ে যাবে।
এদিকে মারুফ মলম দেওয়া শেষ হলে হাত ধুয়ে
জেসিকাকে হালকা করে জড়িয়ে ধরে কপালে চুমু খেয়ে বলল। সোনা সাবধানে থেকো আমি দোকানে যাচ্ছি।
অবশ্য তোমাকে এই অবস্থায় রেখে দোকানে যেতে ইচ্ছে করছে না।
কিন্তু দোকানে না গেলে সংসার চলবে না তাই যেতে হচ্ছে।

জেসিকা মারুফের কথা শুনে বলল, আচ্ছা আপনি এগুলো আমাকে শুনান কেন?

জেসিকার এই কথা শুনে মারুফের কিছুটা খারাপ লাগছিল।
তবুও মুচকি হেসে বলল, তুমি হচ্ছো আমার প্রি….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here