গল্পঃ হৃদয়ের বন্ধন।
পর্বঃ ১৭।
লেখাঃ #মেহের।
আমার চোখের সামনে থেকে দূর হ্।
জেসিকা অবাক হয়ে মারুফের দিকে তাকিয়ে আছে।
সে তো এমন কিছুই করেনি তাহলে মারুফ তার সাথে এরকম আচরণ করছে কেন তাই বুঝতে পারছে না!
কাকি আর দাদু সবজি ও ডালে কোথায় থেকে ঝাল পেলো।
সে তো জানেই শাশুড়ি মা তাকে আগেই বলেছে দাদুর ঝালে সমস্যা হয়।
সেজন্যই তো রান্নার সময় কোন কিছুতেই তেমন একটা ঝাল দেয়নি।
তাহলে দাদুর ঝালে এমন অবস্থা কেমন করে হয়!
এদিকে মারুফ ওঁর দাদুকে এনেই হসপিটালে ভর্তি করিয়ে দেয়।
দাদুকে ভর্তি করার পরে নার্স এসে রক্ত নিয়ে গেছে পরীক্ষা করতে।
এরপর মারুফ নিয়াজউদ্দিন সাহেবের সাথে দাদুর বিষয়ে কথা বলল।
চাঁদনী বানুকে অক্সিজেন দিয়ে রাখা হয়েছে।
তার অবস্থা আশঙ্কাজনক ।
মারুফ মনে মনে আল্লাহকে স্মরণ করছে।
মারুফের দাদু রাগী আর জেদি হলেও মারুফের দাদা জান মারা যাবার পরে থেকে এই পর্যন্ত সংসারটাকে এক সুতোয় বেঁধে রেখেছে।
দিনের পর দিন সবাইকে একসাথে সুখ দুঃখ ভাগাভাগি করে থাকতে উৎসাহ দিয়ে গেছেন।
মারুফকে নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসে ওঁর দাদু।
তার সেই দাদুর এমন অবস্থা মারুফ যে কিছুতেই মানতে পারছে না।
মারুফ মনে মনে বলল, দাদুর ঝালে সমস্যা তা জানা সত্যেও জেসিকা তুমি কিভাবে রান্নায় বেশি ঝাল দিলে।
দাদুর রাগ তোমার চোখে পরেছে কিন্তু তোমার করা অন্যায় দেখে দাদুর যে অভিমান হয়েছে তা কেন তোমার চোখে পড়ল না!
দাদু তোমার সাথে খারাপ ব্যাবহার করে ঠিক কিন্তু দাদু যদি তোমায় একবার মেনে নিত তখন আমাদের সবার থেকে বেশিই ভালবাসা দিতো।
কিন্তু তুমি আমার দাদুকে সে সুযোগটা পর্যন্ত দিলে না।
দাদুর কথায় ঠিক তোমাকে বিশ্বাস করে আমি চরমভাবে ঠকে গেছি।
তোমার জন্য আমার মনে যে ভালোবাসা তৈরি হয়েছিল তা এক নিমিষেই শেষ করে দিলে।
এ ঘটনার পরে তোমাকে দেখলে আমার ঘৃণা ছাড়া আর কিছুই হবে না।
জেসিকা এ তুমি কী করলে?
এদিকে বাসায় সবাই
জেসিকাকে যা নয় তাই বলছে ।
মারুফের চাচী জেসিকাকে শাশুড়ির এই অবস্থার জন্য চর পর্যন্ত মেরেছে।
আলো তো নাকি কান্না করে দাদুর শরীর অসুস্থ হওয়ার জন্য জেসিকাকে মন খুলে অভিশাপ দিচ্ছে।
জেসিকা সবাইকে বারবার বলছে সে সবজি ও ডালে কোন বারতি ঝাল ব্যাবহার
করেইনি।
কিন্তু ভাগ্য খারাপ হলে যা হয় আর কি!
ওঁর এ কথা কেউ বিশ্বাস করছে না।
তাদের ধারণা চাঁদনী বানু জেসিকার সাথে খারাপ আচরণ করে তাই জেসিকা ইচ্ছে করে এমন করেছে।
অন্যদিকে মারুফের চাচ্চু মায়ের এ অবস্থায় কথা শুনে হসপিটালে এসে কান্না কাটি শুরু করছে মারুফ তার চাচ্চুকে বুঝিয়ে শান্ত করল।
মারুফের চাচ্চু বলল,তার মা তো সকালেও সুস্থ ছিল তাহলে হঠাৎ করে কি হয়েছে।
মারুফ তার চাচাকে বলেছে জেসিকার জন্য এমন হয়েছে।
এ কথা শুনে মারুফের চাচ্চু বলল, মারুফ বাবা আমার শুন মা সুস্থ হলেই ঐ মেয়েকে আমাদের বাড়িতে থেকে বের করে দিবে।
এমন খুনি মেয়ের কোনো জায়গা নেই আমাদের বাড়িতে।
মারুফ বলে,হ্যাঁ চাচ্চু তুমি চিন্তা করো না।
এবার জেসিকার অপরাধের কোন ছাড় দেয়া হবে না।
জেসিকার বাবা মা চাঁদনী
বানুর অসুস্থতার কথা শুনে হসপিটালে দেখতে এসেছে।
তাদের হসপিটালে দেখে মারুফের চাচা অনেক অপমান করেছেন।
শেষে এটাও বলেছে, তারা মেয়ে জন্ম দিয়েছে ঠিক কিন্তু মানুষ করতে পারেননি।
বাবা বড় উকিল কিন্তু মেয়েকে বানিয়েছে খুনি।
এমন মেয়েকে জন্ম দেওয়ার পরে তারা কেন বিষ দিয়ে মেরে ফেলল না?
মারুফের চাচ্চুর করা অপমানে জেসিকার বাবার চোখে পানি চলে আসে।
উকিল সাহেব আরও বেশি কষ্ট পেয়েছে মারুফ তার চাচ্চুর কথার কোন প্রতিবাদ তো করেইনি বা তার চাচ্চুকে শান্ত হতেও বলেনি।
উকিল সাহেব সব অপমান মুখ বুঝে সহ্য করে তার স্ত্রীকে নিয়ে হসপিটালে থেকে মারুফের বাসায় আসে।
সেখানেও দোলা ও আলো একজোট হয়ে তাকে অনেক অপমান করে এমনকি ঘাড়ে ধাক্কা দিয়ে বের করে দিতেও চায়।
জেসিকা তার বাবার কথার শব্দ শুনে রুমে মধ্যে থেকে দৌড়ে বের হয়ে আসে।
এসেই বাবার বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ে।
জেসিকা যখন তার বাবার বুকে আশ্রয় খুঁজছিলো সে সময় উকিল সাহেব মেয়ের মায়াতে না পড়ে উল্টো জেসিকাকে ইচ্ছে মত চর থাপ্পর মারে।
কেন সে এই বয়সে এসে মেয়ের জন্য সবার কাছে অপমানিত হলো সেজন্য।
জেসিকা বুঝতেই পারলো না কোন অপরাধের জন্য তার বাপি তাকে এমন করে মারছেন।
যেখানে তার বাপি ছোট থেকে এ পর্যন্ত একটা চর ও মারেননি।
আর আজকে মেরে রক্তাক্ত করে দিচ্ছে।
জেসিকা মার খেয়ে একসময় অজ্ঞান হয়ে পরে যায়।
তখন জেসিকার বাবা মেয়েকে রক্তাক্ত করেই শান্ত হয়।
জেসিকার মা মেয়ের অবস্থা দেখে কেঁদে বলল, তুমি কি পাগল হলে?
মেয়েটাকে কী জানেই মেরে ফেলতে চাচ্ছো?
জেসিকার বাবা বলে, কেন তুমি শুনো নি ওরা তো বলেছে এমন মেয়েকে বিষ দিয়ে মেরে ফেলতে।
তুমি আমার সাথে চল ওকে এভাবেই মরতে দেও।
জেসিকার মা তার স্বামীর কথায় পাত্তা না দিয়ে জেসিকার চোখে পানি দিয়ে জ্ঞান ফিরাতে চেষ্টা করছে।
কয়েক বার চেষ্টা করার পরে জেসিকার জ্ঞান ফিরেছে।
জেসিকাকে তার রুমে দিয়ে জেসিকার মা কাঁদতে কাঁদতে চলে গেল।
তার মন বলছে মেয়েটা এতো বড় অন্যয় করেনি।
বিনা অপরাধে তার মেয়েকে শাস্তি পেতে হচ্ছে।
এদিকে জেসিকা মাইর খেয়ে জ্বর এসে গেছে।
কিন্তু তাকে দেখতে কেউ আসেনি।
তবে কোমল একবার লুকিয়ে এসে জেসিকাকে খেতে ঔষুধ দিয়েছে।
এদিকে মারুফ ও ওঁর চাচ্চু সারারাত হসপিটালে ছিল।
চাঁদনী বানুর এখনো কোনো উন্নতি হচ্ছে না।
মারুফকে দুপুরের দিকে তার চাচ্চু বাসায় পাঠিয়ে দিল।
কারণ মারুফ কালকে থেকে এক পোশাক পড়েই আছে।
শরীর থেকে গন্ধ আসছে এভাবেই ছেলেটা নামাজ পড়ছে।
তাই ওকে বাসায় থেকে গোসল করে আসতে বলে।
মারুফ বাসায় এসেছে মাত্র আলো এসে দরজা খুলল।
দাদু এখন কেমন আছে তা জিজ্ঞেস করেই কতক্ষন নাকি কান্না করতে শুরু করে।
এরপর এনিয়ে বিনিয়ে বলে, জেসিকা ও তার বাবা ফুপি ও চাচীর সাথে অনেক খারাপ ব্যাবহার করছে।
এমনকি চাচীকে ধাক্কা মেরেছিল একটুর জন্য
চাচির মাথাটা বেঁচে গেছে।
মারুফ এমনিতেই জেসিকার উপরে রেগে ছিল এসব কথা শুনে তেড়ে ওদের রুমের দিকে
যায়।
রুমে গিয়ে দেখে জেসিকা ঘুমিয়ে আছে।
মারুফ গিয়ে আচমকা জেসিকার হাত ধরে টেনে তুলে কোন কথা না শুনেই
জেসিকাকে চর মেরে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিল।
এরপর পান্টের বেল্ট খুলে মারতে শুরু করে।
জেসিকা এতক্ষণ জ্বরের ঘোরে বেহুঁশ হয়ে ছিল।
আচমকা কি হচ্ছে ওঁর সঙ্গে তা বোধগম্য হচ্ছে না।
চর খেয়ে কোন প্রতিক্রিয়া না দেখালেও মারুফের প্রত্যেকটা বেল্টের আঘাতে জোরে জোরে বাঁচাও বলে চিৎকার করে উঠছে।
জেসিকার হঠাৎ চিৎকারে সবাই দৌড়ে আসে।
দোলা মারুফকে মারতে দেখে বলে, ভালো হয়েছে।
মায়া বেগম রুমে এসেই মারুফের হাতে থেকে বেল্ট কড়ে নিয়ে মারুফকে ধমকে বলল,তোরা কি মেয়েটাকে একবারে শেষ করে দিতে
চাচ্ছিস।
মারুফ রাগে বলতে থাকে ,মা ওকে এখনেই বাড়িতে থেকে বের করে দেও।
আমি ওঁর মুখ দেখতে চায় না।
এদিকে জেসিকা ব্যথায় ছটফট করছে ওঁর দু’চোখ দিয়ে সমানে পানি পড়ছে।
জেসিকা মনে মনে বলল, তোমাকে ভালোবেসে আমি যে অপরাধ করেছি আজকে তার শাস্তি পেলাম।
জানো আমি এতো ব্যথা সহ্য করতে পারছিনা।
আমার এই পৃথিবীতে বেঁচে থেকে কোন লাভই নেই।
আমার বাবা আমাকে ঘৃণা করে।
এ বাসার কেউ আমাকে সহ্য করতে পারে না।
এমন জীবন রেখেই কি লাভ!
মায়া বেগম জেসিকার অবস্থা দেখে তার মনে মায়া হলো।
তাই জেসিকাকে ধরে বিছানায় উঠাতে নিলে জেসিকা ব্যথা পেয়ে আহ্ করে আস্তে চিৎকার করে উঠল।
তা দেখে দোলা বলল, বুবু এই সব অভিনয়।
জেসিকা দোলার কথা শুনে নিজের প্রতি ঘৃণা হচ্ছে।
কারণ জেসিকা খারাপ মানুষ হয়ে এ বাড়ির বৌ হতে চাচ্ছিল কোন সাহসে বা যোগ্যতায় !
তাই আকাশ কুসুম স্বপ্ন দেখার ভালো শাস্তি পেয়েছে।
তবে জেসিকা মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলো সবাই যা চায় তাই হবে।
জেসিকা আর জোর করে এ বাড়িতে……
বিঃদ্রঃ আমার লেখা আপনাদের ভালো লাগলে লাইক ও কমেন্ট দিয়ে লেখতে উৎসাহ জানাবেন।
লেখায় ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
আগামীকাল একটু বাহিরে যাব তাই গল্প দেওয়া হবে না।
তবে যদি সময় পায় তাহলে দিতে চেষ্টা করব।