হৃদমোহিনী
পর্ব ১০
মিশু মনি
.
১১.
স্মার্টনেসের সংজ্ঞা শুনতে শুনতে অন্য এক জগতে প্রবেশ করেছিলো মিশু। আনমনা হয়ে নানান কথাই ভাবছিলো। সম্বিৎ ফিরে পেলে বুঝতে পারলো শরীরের অবস্থা সুবিধার নয়। অনেক খারাপ লাগছে, এভাবে সারারাত বসে থাকলে নির্ঘাত কঠিন কোনো অসুখ বাঁধবে।

বাধ্য হয়েই বললো, ‘নৌকা তীরে ফেরান। আমি বাড়ি যাবো।’
মেঘালয় অবাক হয়ে বললো, ‘বাড়ি যাবা মানে?’
– ‘এখন তো বাড়িতে যাওয়া সম্ভব না। আপনাদের বন্ধুর বাড়িতেই চলুন আপাতত।’
– ‘কোনো সমস্যা?’
– ‘আমার খুব শরীর খারাপ লাগছে।’

মেঘালয় মাথাটা ঝাঁকালো। শরীর খারাপ হওয়াটাই স্বাভাবিক। নিজের এডভেঞ্চারের শখ পূরণের জন্য অন্য কারো শরীর অসুস্থ হোক সেটা হতে দেয়া যায়না। আজকে রাতে নৌকা নিয়ে বের হওয়াটা নিতান্তই বোকামী হয়ে গেছে। গত রাতে ট্রাকে জার্নি করে এমনিতেই মিশুর ঠাণ্ডা লেগে গেছে।

ভাবতে ভাবতে নৌকা তীরে ফেরালো মেঘালয়। মিশুর দিকে তাকিয়ে বললো, ‘নামো।’
– ‘আমার পা ঝিঝি লেগে গেছে। নড়াতেই পারছি না।’
মেঘালয় নিজেই উঠে লাফ দিয়ে নামলো নৌকা থেকে। তীরে কিসের সাথে নৌকাটা বেঁধে রাখবে সেটা খুঁজতে লাগলো। মিশু ওকে এভাবে কিছু খুঁজতে দেখে জিজ্ঞেস করল, ‘কি খুঁজছেন?’
– ‘নৌকাটা এখানে কোথাও বেঁধে রেখে যেতে হবে। যাওয়ার পথে মাঝির বাসায় ইনফর্ম করে যাবো। সে এসে নৌকা নিয়ে যাবে।’
– ‘এদিক দিয়ে মাঝির বাসা খুঁজে পাবেন?’
– ‘সমস্যা নেই, এখনো রাত বেশি বাড়েনি। রাস্তায় নিশ্চয়ই গাড়ি পাওয়া যাবে। তুমি আস্তে আস্ত ওঠার চেষ্টা করো তো।’

মিশু ধীরেধীরে উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলো। মেঘালয় ওকে হাত ধরে নৌকা থেকে নামতে সাহায্য করলো। কিন্তু নৌকা বেঁধে রাখার মত কোনো খুঁটিই আশেপাশে খুঁজে পেলোনা। একটা হালকা খড়ির সাথে বেঁধে রেখে মিশুকে বললো, ‘শক্তমতন খুঁটি দরকার একটা। তুমি কি এখন হাঁটতে পারবে?’
– ‘হ্যা পারবো।’

মেঘালয় নদীর তীর দিয়ে হাঁটা শুরু করলো। মিশু অনুসরণ করলো ওকে। চাঁদের আলোয় সবকিছু স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। যদিও বেশ শীত শীত করছে। মিশুর ইতিমধ্যেই জ্বর এসে গেছে। কাঁপতে কাঁপতে হাঁটছে ও। মেঘালয় আগে ও মিশু পিছনে।
আশেপাশে কোথাও খুঁটি জাতীয় কিছু চোখে পড়ছে না। নদীর হিমশীতল হাওয়ায় শরীরে কাঁপন ধরে যাচ্ছে। মেঘালয় ব্যাপারটা বুঝতে পেরে নিজের গায়ের জ্যাকেট টা খুলে এগিয়ে দিলো মিশুর দিকে। ইতস্তত করেও পড়ে ফেললো মিশু। মেঘালয়ের শরীরের ঘ্রাণ অনুভব করছে জ্যাকেটের মাঝে।

কিছুদূর আসার পর এক জায়গায় স্তুপ করা কিছু লাকড়ি চোখে পড়লো। একটা শক্ত লাকড়ি টেনে বের করে নিয়ে আবারো নদীর দিকে হাঁটা ধরলো মেঘালয়। চারিদিক জনশূন্য। একটু দূরে কাঁচা বাড়িঘর ও গাছগাছালি দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। নৌকা বেঁধে মিশুর দিকে তাকিয়ে বললো, ‘এবার হাঁটতে হবে। হাঁটতে পারবে তো?’
– ‘পারবো।’
মেঘালয় এগিয়ে এসে বললো, ‘জ্বর এসেছে নাকি?’
– ‘একটু। আমি আসলে দাঁড়িয়ে থাকতে পারছি না।’
– ‘আমার ফ্রেন্ডকে বাইক নিয়ে আসতে বলি। কিন্তু এটা কোন জায়গা সেটাই তো বুঝতে পারছি না। একটু কষ্ট করে আগাই বরং?’
– ‘আচ্ছা আসুন।’

মিশু একদম ই হাঁটতে পারছে না। শরীরের অবস্থা মারাত্মক খারাপ। তার উপর পিরিয়ড চলছে। ঠাণ্ডা লেগে আরো করুণ অবস্থা। মেঘালয় নিজেও বুঝতে পারছে আর মনেমনে নিজেকে গালি দিচ্ছে। আজ রাতে না আসলেও পারতো। মেয়েটা গত রাতে জেদ ধরলো বলেই না আজকে আসা, নয়ত আসতো না। এখন কিছু করার নেই, চাপ সামলাতেই হবে।

চাঁদের আবছা আলোয় মিশুর মায়াবী মুখের দিকে তাকিয়ে বড্ড মায়া হচ্ছে মেঘালয়ের। মেয়েটা অনেক ইনোসেন্ট আর খুব সরল। চোখেমুখে চিন্তার ছাপ পড়েছে। একটু হাঁটার চেষ্টা করার পর বুঝতে পারলো মিশু একেবারেই হাঁটতে অপারগ। কিন্তু মুখে কিছু বলতেও পারছে না। এমন দূর্ভোগে পড়তে হবে এটা কখনোই ভাবেনি ওরা। কিন্তু এরপরে যে আরো বড় দূর্ভোগ অপেক্ষা করছে সেটা কে ভেবেছিলো!

মেঘালয় কোনোকিছু না ভেবেই আচমকা মিশুকে কোলে তুলে হাঁটা শুরু করলো। ঘটনার আকস্মিকতায় হতবাক হয়ে গেছে মিশু। দারুণ ভালো লাগছে। মুচকি হাসতে হাসতে চোখ বন্ধ করে রইলো। আর মনেমনে বললো, কোলে নেয়াটা কি ওনার প্যাশন নাকি? ভেবেই খিলখিল করে হেসে উঠলো।

মেঘালয় ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বললো, ‘হাসছো কেন?’
– ‘মনেহচ্ছে আমি ক্লাস টুতে পড়ি আর আপনি আমার আব্বু।’

মেঘালয় আরেকবার ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বললো, ‘কোন সিচুয়েশনে কি কথা বলতে হয় তাও জানোনা দেখছি।’
মিশু মুখটা গোমরা করে ফেললো। আসলেই তাই। কোন পরিবেশে কেমন কথা বলতে হয় সেই বোধটা হয়ত এখনো হয়নি ওর। নিতান্তই বাচ্চাদের মতন আচরণ করে ফেলে। অবশ্য এই স্বভাবের জন্যই মেয়েটাকে অনেক দুরন্ত মনেহয়। ম্যাচিউর হলে ওকে হয়ত মানাতো না।

মেঘালয় বললো, ‘নদীর তীরে ফাঁকা জন্যই কোলে নিলাম। গ্রামের পরিবেশ মোটেও সুবিধার না। লোকালয়ে ঢুকেই নামিয়ে দিবো।’
– ‘আচ্ছা। আমার মত মোটা মানুষটাকে নিয়ে আপনি এত সহজে হাঁটছেন কিভাবে? আপনার অনেক শক্তি।’
– ‘তুমি মোটা? ওজন বড়জোর ৩৮ কেজি হবে। এটা তো আমার পাপ্পির ওজন ও না।’
– ‘ছিহ আপনি খুব খারাপ। এসব বলেন কেন?’
– ‘আরে বোকা পাপ্পি মানে কুকুরছানা। আমি কুত্তা পালি, আমার বাসায় দুইটা বিদেশি কুত্তা আছে বুঝছো?’

হো হো করে হেসে উঠলো মিশু। নদীর তীরে চড়ে এক জায়গায় যাত্রাপালা হচ্ছে। কয়েকজন লোক মাঝরাতে সেই যাত্রা দেখার জন্য নদীর তীর দিয়ে হাঁটছে। লোকগুলো বেশি সুবিধার না। নেশাপান করে আর এদের মধ্যে একজন এতটাই জঘন্য যে মাঝেমাঝে নেশার ঘোরে গ্রামের মহিলাদের ঘরে ঢুকে পড়ে। যাত্রার মেয়েদেরকেও টাকার বিনিময়ে ভাড়া করে। কয়টা মেয়ে সেখানে রীতিমত দেহ ব্যবসা শুরু করে দিয়েছে আর এই ক’জন লোক সেসব মেয়ের টানেই রোজ সেখানে যায়।

মেঘালয় ও মিশু দুজনের কেউই ওদেরকে দেখতে পায়নি কিন্তু ওরা ঠিকই দূর থেকে মেঘালয়কে লক্ষ করছে। নৌকা ঘাটে বেঁধে মেয়েমানুষ নিয়ে কোলে তুলে গ্রামের দিকে যাওয়াটা এদের চোখে কি সেটা মেঘালয় ও মিশু কল্পনাও করতে পারেনি। ওরা দূর থেকে দেখছে আর জ্বলছে। গ্রামে নদীর তীরে চাঁদের আলোয় এরকম ফাঁকা জায়গায় একটা মেয়েকে কোলে নিয়ে হাসি তামাশা করার মজাটা ভালোভাবে টের পাওয়ানোর জন্য মনেমনে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠলো ওরা। এলাকার কয়েকজনকে কল দিয়ে বললো সেখানে আসার জন্য।
মেঘালয় ভেবেছিলো লোকালয়ে প্রবেশ করার আগেই মিশুকে কোল থেকে নামিয়ে দেবে। কিন্তু বেশিদূর এগোতে পারেনি, তার আগেই চরম বিপদের সম্মুখীন হয়ে গেলো। ওরা জানতো না পিছন থেকে কেউ ফলো করছো ওদেরকে। বাজে লোকগুলো দ্রুত ছুটছিলো ওদের ধরার জন্য। মিশু তো চোখ বুজে আছে আর মেঘালয় তাকিয়ে আছে সামনের দিকে।

মিশু বললো, ‘আমার খুব মজা লাগছে জানেন তো? বড় হওয়ার পর প্রথম কারো কোলে উঠলাম।’
– ‘আমি কিন্তু মজা দেয়ার জন্য কোলে নেইনি। তুমি হাঁটতে পারছিলে না বলেই নিয়েছি।’
– ‘হাঁটতে না পেরে ভালোই হয়েছে। বুড়াতি বয়সে কোলে ওঠার সাধ পাচ্ছি। হা হা হা।’

মিশু জোরে জোরে হাসছে। মেঘালয় ওর হাসির দিকে একবার তাকানো মাত্রই উষ্ঠা খেয়ে ক্ষেতের উপর পড়ে গেলো। মিশু পড়লো মেঘালয়ের নিচে। পড়ে গিয়ে দুজনেই একেবারে থ!

মেঘালয় থতমত খেয়ে ওঠার চেষ্টা করলো। মিশু লজ্জায় দুহাত দিয়ে মুখ চেপে ধরে রেখেছে। মেঘালয় উঠে দাঁড়ানো মাত্রই সেই পাঁচজন লোক এসে ঘিরে ধরলো ওদেরকে। মুখটা হা হয়ে গেলো মেঘালয়ের!
মিশু একাই উঠে দাঁড়ালো। কিন্তু লোকগুলোর বিভৎস হাসি দেখে ভয়েই বুকটা কেঁপে উঠলো ওর।

১২.
এরপর এতটা বাজে পরিস্থিতির সৃষ্টি হলো যা বলার মত নয়। লোকগুলো মেঘালয়ের ফোন, সব টাকা পয়সা সবকিছু কেড়ে নিলো। মোবাইল হাতে নিয়েই সিম খুলে ফেলে দিলো। মেঘালয় মারপিট করার জন্য এগোতে যাবে এমন সময় গ্রামবাসী অনেকেই এসে ধরে ফেললো ওকে। খুব বাজে ভাবে ফেঁসে গেছে সেটা ভেবেই মাথায় যেন বাজ ভেঙে পড়লো দুজনের।
গ্রামবাসী কয়েকজন এসে মেঘালয়কে রীতিমত পাঁজাকোলা করে তুলে ধরে নিয়ে যেতে লাগলো। মিশুকেও ধরেছে দুজন লোক। মেঘালয় এত করে সত্যিটা বোঝানোর চেষ্টা করলো তবুও কেউ ওদের কথা শুনতে চাইলো না। লোকগুলো ওর ফোন কেড়ে নিয়েছে সেটাও গ্রামবাসীকে বোঝানো সম্ভব হলোনা। সবাই শুধু যাকে তাকে ফোন দিচ্ছে আর আসতে বলছে। প্রথমে অভিযোগ আনা হয়েছিলো, ‘রাত দুপুরে মেয়েমানুষ তুলে নিয়ে এসে ধর্ষণের চেষ্টা করেছিলো।’ মিশু চিৎকার চেঁচামেচি করে বারবার মেঘালয়কে নির্দোষ বলার পর এখন তাদের অভিযোগ, “বাড়ি থেকে পালিয়ে এসে খারাপ কাজ করতে গিয়ে ক্ষেতে ধরা পড়েছে”

এত জন লোকের মুখের কথা থামানোও যাচ্ছিলো না, অন্যদিকে অনেক চেষ্টা করেও মেঘালয় কোনো কথাই বলতে পারলো না। সবাই ওকে গালাগালি করে থামিয়ে দিলো। আসন্ন বিপদের আশংকায় ভয়ে গলা শুকিয়ে গেলো মেঘালয়ের। এরকম অনাকাঙ্ক্ষিত বিপদে কখনো পড়তে হবে সেটা কিছুতেই ভাবেনি। গ্রামের অশিক্ষিত মানুষদেরকে কোনোভাবেই কিছু বোঝানো যাচ্ছেনা। তাছাড়া শুধুমাত্র এডভেঞ্চারের জন্য এতরাতে বেড়িয়েছে সেটাও বলা যায়না। সেটা শুনলে ওরা আরো খারাপ কথা বলা শুরু করবে। কি বলবে কিছুই বুঝতে পারছে না মেঘালয়। খুবই অসহায় হয়ে পড়েছে সে। রাগে ক্ষোভে কান্না এসে যাচ্ছে।

মিশু ইতিমধ্যেই হাউমাউ করে কান্না শুরু করে দিয়েছে। লোকজন ওদেরকে ধরে একটা বাড়িতে নিয়ে এসেছে। মেঘালয়কে বাঁধতে গিয়েও বাঁধতে পারলো না। ছেলেটার চেহারা দেখে যেকেউ ভাব্বে সে সিনেমার নায়ক। কিন্তু মিশুর চেহারায় গ্রামের মেয়েদের সমস্ত বৈশিষ্ট্যই বিদ্যমান। সবাই হাজারো কথা বানিয়ে বানিয়ে বলা শুরু করছে।

মেঘালয়ের রূপের বর্ণনা শুনেই রাতের ঘুম থেকে উঠে এলাকার মহিলা ও মেয়েরাও দেখতে এলো ওদের দুজনকে। মিশুর কান্না দেখে মহিলাদের নানান উক্তি মেঘালয়ের কানে আসছিলো। মেম্বার সাহেব এসে হাজির হলেন কিছুক্ষণের মধ্যেই। মেম্বারকে দেখে একটু স্বস্তি পেলো মেঘালয়।

ওনার পাশে বসে ধীরেসুস্থে বললো, ‘আংকেল আসলে ও আমার স্ত্রী। আমরা একটু নৌকায় ঘুরছিলাম দুজন মিলে। ওর শরীরটা খারাপ তাই নৌকা থামিয়ে রাস্তার দিকে যাচ্ছিলাম। ও হাঁটতে পারছিলো না বলেই কোলে নিয়েছি এটা নিশ্চয়ই আমার অন্যায় নয়?’
মেম্বার একটু নিশ্চুপ থেকে বললো, ‘কথাবার্তা শুনে তো ভালোই মনে হয়। কিন্তু ও যে আপনার স্ত্রী তার সত্যতা কি?’
– ‘আমাকে কি আপনার বিশ্বাস হচ্ছেনা?’
– ‘বিপদের সময় অনেকে অনেক মিথ্যে কথাই বলে। মেয়েটা গ্রামের, সহজ সরল মেয়ে। ওকে ভূলিয়ে ভালিয়ে ব্যবহার করতেও পারো। বোঝোনাই?’

মেঘালয় এরপরও অনেক চেষ্টা করলো বোঝানোর। কিন্তু বিবাহিত স্ত্রী সেটা প্রমাণ করার কোনো উপায় পেলো না। মেম্বার মিশুকে আলাদাভাবে ডেকে নিয়ে গেলেন কথা বলার জন্য। মেঘালয় অনেকবার ইশারা করে যেতে বারণ করলো। মিশু ওর ইশারা বুঝতে না পেরে আড়ালে গেলো কথা বলার জন্য। ওর কান্না এখনো থামছে না। লোকজন ভিড় করে দেখছে ওদের। মেঘালয় লজ্জায় মাথা নিচু করে রেখেছে। এতটা অপমানের শিকার কখনো হয়নি ও।

মিশুকে নানান প্রশ্নে জর্জরিত করলেও মিশু মেঘালয়ের বলা কথাটাই ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে বললো। মেম্বার অনেক চাপ দিয়ে মিশুর কাছ থেকে ওর বাবার ফোন নাম্বার নিয়ে কল দিলেন। মিশু কিছুতেই দিবেন না, উনি অনেক ভয় দেখিয়ে নাম্বারটা বের করে নিয়েছেন।

মিশুর বাবা কল রিসিভ করতেই মেম্বার সাহেব বললেন, ‘আপনার মেয়ে কোথায়?’
– ‘সে তো বান্ধবীর বাসায় বেড়াতে গেছে। আপনি কে?’

প্যাঁচটা এভাবেই লেগে গেলো। মিশুর বাবা মেয়ের বান্ধবীকে কল দিয়ে রাগারাগি করতেই সে বলে দিলো মিশু বয় ফ্রেন্ডের কাছে গেছে। এদিকে মেম্বার ও মিশুর বাবাকে বললেন আপনার মেয়ে একজন ছেলের সাথে ধরা পড়েছে। ব্যস, কাহিনী এখানেই জটিল হয়ে উঠলো।

মিশু ও মেঘালয়কে একটা ঘরে আটকে রেখে সাথে প্রহরীও রাখা হলো। বিয়ের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি বিধায় নানান গুজব ছড়িয়ে পড়লো চারিদিকে। মিশুর বাবা পৌছে গেলেন রাত একটার মধ্যেই। সাথে মিশুর চাচা ও মামাও এসেছেন। নিজের মেয়ের জন্য এতটা অপ্রীতিকর অবস্থায় পড়তে হবে সেটা ওনারাও ভাবেন নি। মিশু কেঁদেই চলেছে আর মনেমনে গালি দিয়ে চলেছে তন্ময়কে। ওর জন্যই এই অবস্থায় পড়তে হলো। আর মেঘালয়ের মত একজনকে বিপদে ফেলায় নিজেকে খুব অপরাধী মনে হচ্ছিলো ওর।

মিশু ও মেঘালয়কে কথা বলার সুযোগ কেউই দিলো না। মিশুর পরিবারের সবাই মেঘালয়কে এক পলক দেখেই সন্তুষ্ট হয়ে গেলেন। রাজপুত্র বোধহয় একেই বলে। ওনারা মেম্বারের সাথে আলাপ আলোচনা করার পর মিশু ও মেঘালয়কে সাথে নিয়ে বাড়ির পথে রওনা দিলেন।

১৩.
মেঘালয় একবার পুরো পরিস্থিতি বোঝানোর চেষ্টা করলো কিন্তু কেউই ওর কথা শুনতে চাইলো না। ওদেরকে কথা বলার কোনো সুযোগ ই দেয়া হলোনা। মিশুর বাবা, চাচা সবাই রেগে আছেন। মেয়ের জন্য এতটা অপমানিত হতে হলো তাও আবার অচেনা এলাকায়। সেখানকার লোকজন কখনো এলাকায় এসে এসব বললে কি যে রটে যাবে পুরো এলাকায়!
মিশুর বাবা শুনেছেন মেয়ে প্রেমিকের কাছে গেছে, আর এই ছেলের সাথে অপ্রীতিকর অবস্থায় পাওয়া গেছে ওকে। আর কিছুই শোনার প্রয়োজন মনে করছেন না ওনারা। সকলেই মেঘালয় ও মিশুর প্রতি ভীষণ রেগে আছেন।

ভোরবেলা মিশুদের বাসায় পৌছে মেঘালয় ও মিশু দুজনকেই আলাদা আলাদা ঘরে তালা দিয়ে রাখা হলো। মেঘালয়ের কথা বলার কোনো সুযোগ ই রইলো না। ও শুধু ভয় পাচ্ছে কথাটা যেন বাবার কানে কোনোভাবে না যায়।

কিন্তু সবচেয়ে আশ্চর্যজনক ব্যাপার এইযে, মিশুর অভিভাবক সবাই মিলে সকাল ১১ টায় কাজি ডেকে মেঘালয়ের সাথে বিয়ে পড়িয়ে দিলো মিশুর। মেঘালয় একেবারে অসহায়, কথা বলার কোনো সুযোগ পায়নি। মেয়ের জন্য অপমানিত হয়ে ওনারা এতটাই রেগে গেছেন যে প্রয়োজনে মারধোর করে হলেও বিয়ে দিয়ে দিবেন। বাধ্য হয়েই মেঘালয়কে বিয়ে করতে হলো। এদিকে মিশুর ও কিছুই করার ছিলোনা। বাবার রাগি চেহারার দিকে তাকিয়ে কবুল বলতেই হলো।

চলবে..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here