#হীরের নাকফুল ও লাল বেনারসি
শেষ পর্ব
তারপর দিন আর রাত্রির অজস্র আনাগোনায় কেটে গেছে অনেকগুলো বছর।
স্বর্ণার ছোটো ছেলে শানিনের আজ রিসেপশন।শহরের সেরা ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের কারিকুরিতে চোখ ধাঁধানো আলোয় আলোকিত হয়ে উঠেছে সেনাকুঞ্জ।
স্বর্ণার স্বামী শাহেদ অতিথি আপ্যায়নে ব্যস্ত, কোলে বড় ছেলে সাহিলের দুই বছরের মেয়ে সাহার।শাহেদের পাশেই দাঁড়িয়ে আছে সাহিল।
রাজপ্রাসাদের আদলে স্টেজ সাজানো হয়েছে।পিচ কালারের লেহেঙ্গা পরে রাজ সিংহাসনে বসার মত ভাব নিয়ে, রাজহংসীর মত গ্রীবা উঁচিয়ে বসে আছে শানিনের বউ রাইসা।ফটোগ্রাফারের ক্যামেরার জ্বলে ওঠা আলোর সাথে প্রাণবন্তভাবে পোজ দিচ্ছে।চোখে-মুখে অফুরান সজীবতা।
স্বর্ণা দূরে দাঁড়িয়ে বিভোর চোখে দেখছে।
ওর জা নিশাত ও ছোটো ননদ রেহনুমা ওর পাশে এসে দাঁড়ায়।
রেহনুমা চাপা গলায় বলে,
“বউ দেখছি দুই অনুষ্ঠানেই লেহেঙ্গা পরল।একটা অনুষ্ঠানে অন্তত শাড়ি দিতে।”
কথাটা বলেই প্রমাদ গোনে।
উফ! কেন যে এই কথা বলল!
ভাবী এখন কী বলবে এটা ওর ভালো করেই জানা।
স্বর্ণা সাথে সাথে বলে ওঠে,
“ বউয়ের যা পছন্দ, সেটাই পরেছে।ও দুই অনুষ্ঠানেই লেহেঙ্গা পরতে চেয়েছে।যার বিয়ে তার পছন্দকেই সবচে গুরুত্ব দেওয়া উচিত।”
রেহনুমার পুরনো অনেক কথা মনে পড়ে যায়।” যার বিয়ে তার পছন্দই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ” এই মতবাদ প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে সেজান ভাইয়ার বিয়ের শপিংয়ের আগে বড় আপার সাথে রীতিমত তর্কযুদ্ধে নেমে পড়েছিল ভাবী।শেষমেষ অবশ্য ভাবীই জিতেছিল।বহু পুরনো সেসব কথা ভেবে মনে মনে ও একচোট হাসে।
চঞ্চল পায়ে এদিক ওদিক ঘুরে বেড়াচ্ছিল সাহিলের স্ত্রী আনিকা।হঠাৎ স্বর্ণার দিকে চোখ পড়তেই ওর পাশে এসে দাঁড়িয়ে পড়ে।স্বর্ণার দুই বোনও তখন ওর পাশে এসে দাঁড়ায়।স্বর্ণার মুগ্ধ দৃষ্টি অনুসরণ করে স্টেজের দিকে তাকায়।
“ ইশ! এখন বউরা ন্যুড মেকআপে কী স্মার্ট ভাবে সাজে! দেখলেই আবার বউ সাজতে ইচ্ছে করে।”
স্বর্ণার ছোটো বোন শবনমের কথা বলার ধরনে সবাই হেসে ওঠে।
“ দ্যাখো স্টেজে কেমন রাণীর মত বসে আছে বউ! আমাদের বিয়ের সময় ঘাড় নিচু করে বসে থাকতে থাকতে ঘাড় ব্যথা হয়ে যেত।একভাবে বসে থাকতে থাকতে পায়ে ঝি ঝি ধরে যেত।”
হাসি মুখে বলে স্বর্ণার বড় বোন সোহানা।
প্যাস্টেল শেডের শেরওয়ানি পরে স্মিত হাসি দিয়ে তখন স্টেজে ওঠে শানিন।
ফটোগ্রাফার হৈচৈ করে ওঠে,
“ভাইয়া, ভাবীর হাতটা ধরে মুখের দিকে তাকান।আরেকটু ক্লোজ হন।ভাবী একটু হাসেন।”
ফটোগ্রাফারের কথা মত ক্যামেরার সামনে পোজ দিচ্ছে শানিন ও রাইসা।
সেদিকে তাকিয়ে রেহনুমা বলে,
“ এখনকার বিয়েতে বর-বউ যেরকম রোমান্টিক পোজ দিয়ে ছবি তোলে আমাদের সময় আমরা এরকম ভাবতে পারতাম বলো?”
স্বর্ণা মাথা নাড়ে।
“ আসলেই। আমরা এমনটা কল্পনাই করতে পারতাম না।”
স্বর্ণার জা বলে ওঠে,
“ যাই বলো না কেন, আমার এখনকার বিয়ের সবকিছু খুব আর্টিফিশিয়াল, প্রাণহীন মনে হয়।আমাদের সময় রোমান্টিক,মিষ্টি একটা ব্যাপার ছিল।আর এখনকার বউ গুলোকে এমনভাবে সাজায় যে পরে দেখলে আর চেনা যায় না।”
সাহিলের স্ত্রী আনিকা এতক্ষণ চুপচাপ সবার কথা শুনছিল।ওর ছটফটে স্বভাব।বেশীক্ষণ চুপচাপ থাকা ওর জন্য কঠিন ব্যাপার।
ও চঞ্চল গলায় বলে ওঠে,
“ তোমরা কী বিয়ের সেকাল-একাল নিয়ে গল্প করে সময় পার করবে? চল, আমরা স্টেজে গিয়ে ওদের সাথে ছবি তুলি।”
শানিনের বিয়ের আগেই বাড়ির তিনতলাটা শানিনের জন্য সুন্দর করে গুছিয়ে দিয়েছিল স্বর্ণা।শানিন কিছু বলেনি।ও জানে কিছু বলে লাভ নেই।মায়ের সিদ্বান্ত থেকে মা’কে একচুলও নড়ানো যাবে না।
বড় ছেলে সাহিলের বিয়ের আগে স্বর্ণা যখন দোতলাটা গোছানোর তোড়জোড় করছিল,তখন সাহিল ব্যথিত গলায় বলেছিল,
“ মা, এভাবে কেন আমাকে আলাদা করে দিচ্ছো? আমার দোষটা কোথায়? আমি কী কখনো তোমাদের কষ্ট দিয়েছি?”
স্বর্ণা মৃদু হেসেছে।
সাহিলের কাঁধে হাত রেখে বলেছে,
“ আমি তোর ভালোর জন্যই এটা করছি।আলাদা থাকলে সবার সাথে সম্পর্ক খুব ভালো থাকবে।তাছাড়া এক বাড়িতেই তো থাকব।যখন ইচ্ছে দেখা হবে।”
সাহিলের স্ত্রী আনিকার সাথে স্বর্ণার দারুণ বন্ধুত্ব।কাছের বন্ধুর মত ঘন্টার পর ঘন্টা আড্ডা দিচ্ছে, হাসছে।শানিনের স্ত্রী রাইসা এ বাড়িতে আসার পর যেন আনন্দের ষোলোকলা পূর্ণ হল।
তিনজন নিজেদের কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকে।স্বর্ণা শহরের বিখ্যাত একটা কলেজের ইংরেজির টিচার, সাহিলের স্ত্রী আর্কিটেকচার নিয়ে পড়াশোনা শেষ করে নিজেই ফার্ম খুলেছে, সাথে আরেক বন্ধুও অবশ্য আছে।শানিনের স্ত্রী পেশায় ডাক্তার।
তিনজন কর্মব্যস্ত নারী সময়, সুযোগ পেলে গল্পের হাট খুলে বসে।স্বর্ণার কোল ঘেঁষে বসে থাকে সাহিল, আনিকার মেয়ে সাহার।
কখনো ছুটির দিনে আনিকা ফোন করে বলে,
“মা, আজকে গার্লস ডে আউট। আমরা ঘুরব, বাইরে লাঞ্চ করব।বিকেলে কফিশপে গিয়ে কফি খাব।”
কখনো স্বর্ণার দুই বোন, জা, ননদ-ননাসদেরকেও এমন আড্ডায় ডেকে নেওয়া হয়।কফি খেতে খেতে জমে ওঠে গল্প,কফির পেয়ালায় ওঠে তুফান, বয়ে যায় হাসির ঝরনা।স্বর্ণার মনেও ভালোলাগার কুলকুল স্রোত বয়ে যায়।
কখনো অলস বিকেলে তিনজন বারান্দায় কিংবা ছাদে বসে গল্প করে।
এমনি এক গল্পমুখর বিকেলে শানিনের স্ত্রী রাইসা আচমকা প্রশ্ন করল,
“ মা, হীরের নাকফুল পরতে না পারার কষ্টটা কী তোমার এখনোও আছে?”
স্বর্ণা এক মুহর্ত দেরি না করে বলে ওঠে,
“নাহ্।”
আনিকা হাসতে হাসতে বলে,
“ বাবার মত মা’র ও এখন মনে হয় মুখের মধ্যে একটা ফুল।ইট লুকস্ আগলি।”
আনিকার কথায় অন্যরাও হেসে ওঠে।
স্বর্ণা নিস্পৃহ গলায় বলে ওঠে,
“ ঠিক তা নয়।নাকফুল পরার ইচ্ছেটা মরে গেছে।”
“আর লাল বেনারসি?”
রাইসার এ প্রশ্নে স্বর্ণার মুখের হাসি দপ করে নিভে যায়।
স্বর্ণার নিভে যাওয়া মুখের দিকে তাকিয়ে ওরা যা বোঝার বুঝে ফেলে।
স্বর্ণা কিছুক্ষণ চুপ থেকে সহজ গলায় বলে,
“ লাল বেনারসি পরতে না পারার কষ্টটা আছে।যখন কোনো বিয়ে বাড়িতে কোনো বউকে লাল বেনারসিতে দেখতাম মন খারাপ হত।আমার বিয়ের শাড়ির কথা মনে পড়ে যেত। বিয়ের এতগুলো বছর গেল।এখনো বিয়ে বাড়িতে লাল বেনারসিতে কোনো বউকে দেখলে একই রকম ফিলিংস হয়।ভেরি স্ট্রেঞ্জ, তাই না?”
তিনজন চুপ করে বসে থাকে।
“প্রথম বিবাহ বার্ষিকীতে কেন পরনি?”
নিরবতা ভেঙ্গে রাইসা প্রশ্ন করে।
রাইসার প্রশ্নে স্বর্ণার ঠোঁটে এক চিলতে হাসি ফুটে ওঠে।
“ তখন তো আমার প্রেগনেন্সির লাস্ট স্টেজ।এসব চিন্তা মনেই ছিল না।শাশুড়ি আমার পছন্দের খাবার রান্না করেছিল।শাহেদ একজোড়া গোল্ডের গোলাপ বালা,কেক আর ফুল নিয়ে এসেছিল।”
“ তারপরের কোনো বিবাহ বার্ষিকীতে পরতে?”
রাইসার প্রশ্নে স্মৃতিকাতর গলায় স্বর্ণা বলে ওঠে,
“সংসার, পড়াশোনা-সবকিছু নিয়ে এত ব্যস্ত হয়ে গিয়েছিলাম যে আর মনে হয়নি।শানিনের জন্মের পাঁচ মাস আগে শাশুড়ি মারা গেলেন।তার তিন বছর পর শ্বশুরও মারা গেলেন।দুই ভাইয়ের বিজনেস, সংসার আলাদা হল।আমরা এই বাড়িতে উঠে এলাম।শাহেদ বিজনেস নিয়ে ভীষণ ব্যস্ত হয়ে পড়ল।বাচ্চা সামলানো,সংসার, ক্যারিয়ার গোছাতে গোছাতে কী করে যে এতগুলো বছর চলে গেল বুঝতেই পারলাম না।”
“হুমম বুঝেছি।ব্যস্ততার গ্যাঁড়াকলে পড়ে এতদিন সাধ-আহ্লাদ পূরণ করার চিন্তা মাথায় আসেনি।এখন তো পূরণ করা যায়।সামনের মাসেই তো তোমাদের বিয়ের তিরিশ বছর পূর্ণ হবে।”
আনিকা হাসিমুখে বলে।
স্বর্ণা চোখ বড় বড় করে বলে ,
“ কী বলে! এখন এই বুড়ো বয়সে,শাশুড়ি হয়ে যাওয়ার পর আমি লাল বেনারসি পরব? পাগল নাকি!”
রাইসা বলে,
“ তুমি একটুও বুড়ো হওনি।ইউ আর অনলি ফোরটি নাইন।ইউ স্টিল লুক ভেরি ইয়াং।”
“ আর শাশুড়ি হয়ে যাওয়ার পর সারাক্ষণ বুড়ি লুক নিয়ে থাকতে হবে, লাল বেনারসি পরা যাবে না তোমার মত স্মার্ট মহিলার মুখে এমন কথা একটুও মানায় না।দেখো তোমাকে লাল বেনারসিতে ফাটাফাটি সুন্দর লাগবে।আর বাবা কনট্রাস্ট করে গোল্ডেন শেরওয়ানি পরবে।আমরা হল ভাড়া করে গ্র্যান্ড একটা পার্টি দিব।দারুণ মজা হবে।”
চনমনে গলায় আনিকা বলে ওঠে।
যেন কোনো বাচ্চা মেয়ের ছেলেমানুষী কথায় মজা পেয়ে হাসছে এমন ভঙ্গীতে স্বর্ণা হাসে।
“ ধুর! এখন এসব হবে না।শাহেদও কিছুতেই রাজি হবে না।”
“ তুমি প্লিজ রাজি হয়ে যাও।বাবাকে আমরা রাজি করাব।”
স্বর্ণার গলা জড়িয়ে ধরে বলে রাইসা।
কারো পায়ের শব্দে পেছন ফিরে তাকায় স্বর্ণা।দীর্ঘদিনের পুরনো গৃহকর্মী লিপি সাহারকে কোলে নিয়ে এদিকেই আসছে।
স্বর্ণার দিকে তাকিয়ে হাসিমুখে বলে,
“ঘুম থেকে উঠে দাদী দাদী বলছিল, তাই নিয়ে আসলাম।”
স্বর্ণা হাত বাড়াতেই ঝাপ দিয়ে স্বর্ণার কোলে চলে আসে সাহার।
“ আমার চাইতে দাদীকেই বেশী চেনে।”
আনিকার কথায় স্বর্ণা হাসে।সাহারকে জড়িয়ে ধরে কপালে চুমু খায়।
বিকেলে কলেজ থেকে ফিরে আসার পর সাহার দাদীর কাছেই থাকে।স্বর্ণার সব আনন্দের কেন্দ্রবিন্দুতে এখন ওর দুই বছরের নাতনি সাহার।
“ সাহার সোনা, লাল বেনারসিতে দাদীকে খুব সুন্দর লাগবে, তাই না?”
আনিকার কথায় দুই বছরের সাহার কিছু না বুঝে তরল চোখে হাসি খেলিয়ে বলে,
“হুমম।”
সবাই হেসে ওঠে।
“ দ্যাখো মা, তোমার আদরের নাতনিও বলছে অনেক সুন্দর লাগবে।”
রাইসা বলে।
দুই ছেলে এবং ছেলের বউদের প্রবল আগ্রহের কারণে শাহেদ এবং স্বর্ণা অবশেষে সম্মতি দেয়।
যদিও শাহেদ খুব বিরক্তির সুরে বারবার বলছিল,
“ এদের আদিখ্যেতা দেখে আমার প্রচন্ড মেজাজ খারাপ হচ্ছে।এদের জন্য এখন ছাপান্ন বছর বয়সে শেরওয়ানি পরে জোকার সাজতে হবে।”
তবে বিবাহ বার্ষিকী উদযাপনের দিন দেখা গেল গোল্ডেন কালার শেরওয়ানি পরে খুব আমুদে ভঙ্গীতে ও সবার সাথে কথা বলছে।চোখ যদিও বারবার স্বর্ণার দিকে চলে যাচ্ছে।অবশ্য স্বর্ণার ওপর আজ একবার যার দৃষ্টি পড়ছে তার পক্ষে সহসা চোখ ফিরিয়ে নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
চিরন্তন লাল বেনারসির স্বপ্নীল আলিঙ্গনে স্বর্ণাকে রাজেশ্বরীর মত লাগছে।
চোখে-মুখে কৌতুকের ঝিলিক তুলে আনিকা ওর কাছে এসে ফিসফিস করে বলে,
“ দ্যাখো একটু পর পর বাবা ভীষণ রোমান্টিক লুক দিয়ে তোমাকে দেখছে।”
রাইসা বলে,
“বিয়ের তিরিশ বছর পরেও যদি আমার এমন সুন্দর চেহারা,ফিগার থাকে আর বর আমার দিকে এমন রোমান্টিক চোখে তাকায় তবে আমি আর দুনিয়ার কিচ্ছু চাইব না।”
স্বর্ণা হাসে।
ঘরে ফেরার সময় হয়।
আবছায়া ঘরে বিছিয়ে আছে মোমবাতির মায়াবী আবেশ ও মিষ্টি গন্ধ।
দু’জনের মুখে লেগে আছে উৎসবের অনাবিল আনন্দের রেশ।
ড্রেসিং টেবিলের সামনের টুলে বসে কানের ভারী ঝুমকা খুলতে খুলতে স্বর্ণা অস্ফুটে বলে,
“উফফ!”
“কী হল?”
শাহেদের উৎকন্ঠিত প্রশ্নে স্বর্ণা মাথা ঝাঁকিয়ে বলে,
“ কিছু না।বিয়ের ভারী ঝুমকাটা এতক্ষণ পরে থাকতে থাকতে কান ব্যথা করছে।অথচ এই ঝুমকাটা বিয়ের পর কতবার পরেছি।কিচ্ছু হয়নি।এখন কানের অবস্থা শেষ।বয়স মনে হয় আমাকে ধরেই ফেলল।”
শাহেদ ভুরু নাচিয়ে বলে,
“ কাকে বয়স ধরল? তোমাকে?”
হাতঘড়িটা খুলে ড্রেসিং টেবিলের ওপর রাখতে রাখতে স্বর্ণার মুখে চোখ বুলিয়ে বলে,
“ মনে তো হয় না।”
স্বর্ণা শব্দ করে হাসে।
খোঁপার বেলীফুলের মালা খুলে ড্রেসিং টেবিলের ওপর রাখার আগে প্রাণভরে সুঘ্রাণ টেনে নেয়।আলমিরা খুলে রাত পোশাক বের করে।
শাহেদ অন্যমনস্ক ভঙ্গীতে খাটে বসে থাকে।পুরনো দিনের রঙজ্বলা অনেক ছবি স্পষ্ট হয়ে চোখের সামনে ভাসতে থাকে।
শাহেদের অন্যমনস্কতা লক্ষ্য রেখে স্বর্ণা কাছে এসে দাঁড়ায়।
“ বসে বসে কী ভাবছো? “
ওর কথায় একটু চমকে তাকায়।
“ নাহ্। তেমন কিছু না।”
স্বর্ণার দিকে তাকিয়ে বলে ,
“একটু আমার কাছে এসে বসো।শাড়িতে কিছুক্ষণ থাকো।তোমাকে লাল বেনারসিতে দেখতে খুব ভালো লাগছে।”
স্বর্ণা পাশে বসে।
শাহেদ ছোট একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,
“কতগুলো বছর চলে গেল ছুটতে ছুটতে।সংসারের দিকে সেভাবে তাকাইনি।জানতাম একজন মাল্টিটাস্কার আছে যে কিনা নিখুঁতভাবে নিজের সংসার, ক্যারিয়ার সামলাবে।আবার আত্মীয়-স্বজন,উৎসব-আয়োজনও সামলে নিবে।তার ওপর প্রচন্ড ভরসা করেছি।তাকে ভালোবেসেছি।কিন্ত তার মনের খোঁজ রাখিনি।”
স্বর্ণা বিস্ময়ভরা চোখে শাহেদের দিকে তাকায়।
শাহেদ পূর্ণ দৃষ্টি মেলে স্বর্ণার দিকে তাকিয়ে ওর হাত ধরে বলে,
“ এখন থেকে তার মনের অপূর্ণ সব সাধ পূরণ করব। লাল বেনারসির মত তার মনে আর কী কী সাধ জমে আছে সেগুলোও জেনে নিব।”
ঠোঁটে হাসি, চোখ ভরা জল নিয়ে স্বর্ণা শাহেদের দিকে তাকায়।