হার্ট ব্লক (শেষ পর্ব)
নুর মুহাম্মাদ

শেফা না কি জানি নামের একটা মেয়েরে ভালোবাসছিল। হ্যাতাগো পরিবারের লোকজন সাহেবরে মাইন্যা নেয় নায়। সাহেব নাকি আগে গরীব ছিল সেজন্যে।

শেফা যা বুঝার বুঝে নিলো। অতীতকে মনে করে দীর্ঘ শ্বাস ছাড়ল। মনে মনে ঠিক করল, নিলয় আসুক। আজ ওকে শক্ত করে ধরতে হবে। এভাকে ওর জীবনটা নষ্ট হতে দেয়া যায় না। ওর জন্য সুন্দর একটি লক্ষ্মী মেয়েকে বউ করে আনতে হবে। তাহলে ধীরে ধীরে ঠিক হয়ে যাবে।

নিয়ল সাহেব বাজার নিয়ে এলেন। শেফা নিজ হাতে পাকালো। পাকালো বলতে পাকাতে চেষ্টা করেছেন। এতক্ষণ যাবত নিলয় সাহেবকে শেফা বুঝতে চেষ্টা করছে। খাওয়াদাওয়ার পর নিলয়কে নিয়ে বসল। আমি তোমার কাছে একটা আবদার করব রাখবা?
–হুম রাখবো।
–সত্যি বলছো তো?
–হুম।
–তুমি এখনো বিয়ে করো নি।
বিষয়টি আমার থেকে লুকিয়েছ। কাজরা ভাল কর নি। এখন পেছনের সব ভুলে যাও। জীবনকে নতুন করে সাজাও। তুমি এভাবে জীবনটা কাটিয়ে দিলে আমি ভীষণ কষ্ট পাবো। একটা মেয়েকে বিয়ে করে ফেলো এবং তার সাথে মিশে যাও। দেখবা পেছনের সব ভুলে যেতে পারবা। সুখী হবা।
–তুমি কী ভুলে যেতে পেরেছো?
–ভুলে যেতে না পারলেও ভুলে থাকতে হয়।
–আচ্ছা মনে কর তোমার আবদার রাখলাম। তুমি কী আমার একটা আবদার রাখবে?
–বলো। রাখবো।
–বাকী জীবনটা তুমি আমার সাথেই থেকে যাও। আমার বিশ্বাস আমরা দুজন ভালো থাকবো এবং সুখে থাকবো।
-এসব কী পাগলামি কথাবার্তা বলছ তুমি?!মাথা ঠিক আছে??
–হুম ঠিক আছে। এবং যা বলছি তাও ঠিকই বলছি।
তুমি এখনো বিয়ে কর নি। অঢেল সম্পদের মালিক। আমার কী আছে!
আমি বিবাহিত। যৌবন তো আরেকজনকে দিয়েই দিলাম। তার উপর বাচ্চা আছে একটা। এটা কোনদিন হতে পারে না। আমাকে মাফ কর।
–আমি তোমাকেই চাই।
–আমি তোমাকে ঠকাতে পারব না। তুমি চাইলে আমার চেয়ে অনেক বেশি রুপবতী এবং কুমারী মেয়ে বিয়ে করতে পারবে। শুধু শুধু পাগলামো কর না।
-যে কারণে তোমার চোখে তোমার বাবা-মা দোষী ছিল। তুমিও তো আজ সেই একই কাজ করছো। তোমাকে তো খুব ধনাট্য পরিবার দেখে বিয়ে দিয়েছিল। সুখে হতে পেরেছো? পারো নি। আমি বিয়ে করতে চাইলে এতদিনে কতগুলো করতে পারতাম ভাবতে পার!! থাক রাজি না হলে নাই। আমার বিয়ে করা লাগবে না। বিয়ের প্রসঙ্গ নিয়ে আর কথা বলবা না।
–রাগ কর না প্লিজ।
–না রাগ করিনি।
–তুমি রাগ কর আর যাই কর আমি এমন স্বার্থপর হতে পারব না।
–আচ্ছা। এই আমার শেষ চেষ্টা। আর একবারও বলব না। মনোযোগ দিয়ে শোন, আমি কি আমাদের নবিজির চেয়েও শ্রেষ্ঠ পুরুষ?
–না।
–আমি কি আমাদের নবিজির চেয়েও বেশি চরিত্রবান?
–না।
–আমি কি আমাদের নবিজির চেয়েও সম্ভ্রান্ত বংশের?
–না।
–আমি কি আমাদের নবিজির চেয়েও বেশি সম্মানিত?
–না।
–আমি কি আমাদের নবিজির চেয়েও ভাল?
–তুমি এসব জিজ্ঞেস করছ কেন?!
–এসব জিজ্ঞেস করছি কেন? তাহলে শোন,পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ মানব হওয়া সত্ত্বেও নবিজি সঃ তাঁর চেয়ে ১৫ বছর বেশী বয়স্ক একজন মহিলা খাদিজা রাঃ কে বিয়ে করেছিলেন। শুধু তাই নয়, খাদিজা রাঃ এর আগে আরো দুই স্বামীর ঘরও করেছিলেন।সেখানে তাঁর দু’তিনটে সন্তানও ছিল।অথচ ইতিহাসে সাক্ষী দেয়, নবিজির,সবচেয়ে আদরের স্ত্রী ছিলেন খাদিজা রাঃ। তাঁর মৃত্যুর পরও নবিজি তাকে ভুলতে পারেন নি। ভাবতে পারো,তারা কতটা সুখী ছিলেন?!

–আচ্ছা আমি আরেকটু ভেবে দেখি। এবং আমার ছেলে তোমাকে বাবা হিসেবে পছন্দ করে কিনা তারও জানার ব্যাপার আছে।
-আচ্ছা। প্লিজ তুমি একটু বুঝতে চেষ্টা কইরো।
-ওকে।
এর এক সপ্তাহ পর তাদের দুজনের বিয়ে হয়ে যায়। আয়মন একজন নতুন বাবা পায়। যে আপন বাবার চেয়ে কোন অংশে কম না। এরপর সুখে শান্তিতেই তাদের দিন কাটতে থাকে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here