হার্ট ব্লক পর্ব-৭
নুর মুহাম্মাদ
–আচ্ছা তারপর?
–তারপর আর কী? মামলা করলাম। মামলায় অনেক টাকা গচ্ছা দিয়ে ঘরে উঠতে হয়েছে।ওরা নেতাখাতা-প্রশাসন সব কিনে ফেলেছে। এরপর একটা হাঁপিয়ে উঠি। তখন সবকিছু বাদ দিয়ে গার্মেন্টসে কাজ শুরু করি। তাতে যা পাই তা দিয়ে খেয়েদেয়ে থাকতেই হিমশিম খেতে হয়। তার উপর, উন্নত বাসা ভাড়া নিয়ে থাকি কী করে? এখন যে বস্তিতে থাকি ওখানেও মাসে এক হাজার টাকা করে ভারা দিতে হয়। শেফা কথা শেষ করে খেয়াল করল, নিলয় তার কথা শুনে নি। অন্যমনস্ক হয়ে কি যেন ভাবছে।
শেফা নিলয়কে ঠেলা দিয়ে বলল, এ্যাই! কোথায় হারিয়ে গেলা? এত ভাবছ কি?
–না মানে আমাদের ইমাম সাহেবের কথা মনে পড়ে গেল।
–কি কথা?
–তিনি জুমার আলোচনায় বলেছিলেন,
এতিমের সম্পদে অবৈধ ক্ষমতা প্রয়োগকারীদের ব্যাপারে কোরআন হাদিসে ভীষণ শাস্তির হুমকি রয়েছে, মহান আল্লাহ বলেন, নিশ্চয়ই যারা এতিমদের ধন-সম্পদ অন্যায়ভাবে ভক্ষণ করে তারা তো তাদের পেটে আগুন খাচ্ছে, আর অচিরেই তারা প্রজ্জ্বলিত আগুনে প্রবেশ করবে। (সুরা নিসা : ১০)
জাহেলি যুগে মানুষেরা এতিমদের ধন-সম্পদ থেকে উপকার হাসিলে সীমালঙ্ঘন করত। এমনকি কখনো
কখনো সম্পদের লোভে ইয়াতিমকে বিয়ে করে নিত যাতে সম্পদ হাত ছাড়া না হয়ে যায়। কখনোবা নিজের ছেলেকে দিয়ে বিয়ে করাত। এরকম বিভিন্ন পন্থায় ইয়াতিমদের সম্পদ ভক্ষণের চেষ্টা করত।
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাদের ব্যাপারে উপরোক্ত আয়াতটি নাযিল করেন। আয়াতের পরিপ্রেক্ষিতে ইবনে জারির (রহ.) বলেছেন, এতিমের মাল অন্যায়ভাবে ভক্ষণকারী কিয়ামতের দিন এমতাবস্থায় উত্থিত হবে যে, তার পেটের ভেতর থেকে আগুনের লেলিহান শিখা মুখ, দুই কান, নাক ও দুই চক্ষু দিয়ে বের হতে থাকবে। যে তাকে দেখবে সে চিনতে পারবে যে, এ হচ্ছে এতিমের মাল ভক্ষণকারী। (ইবনে কাসীর)
এ প্রসঙ্গে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, কিয়ামতের দিন এক সম্প্রদায় নিজ নিজ কবর হতে এমতাবস্থায় উত্থিত হবে যে, তাদের মুখ থেকে আগুন উদগীরণ হতে থাকবে। সাহাবায়ে কেরাম আরয করলেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! এরা কারা? তিনি বললেন, তোমরা কি লক্ষ্য করনি যে, আল্লাহতাআলা বলেন, যারা এতিমের সম্পদ অন্যায়ভাবে ভক্ষণ করে তারা তাদের পেটে আগুন ছাড়া আর কিছুই ভক্ষণ করে না। (ইবনে কাসীর)
আবু সাঈদ খুদরি রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে রাতে আমাকে ভ্রমণ করানো হলো (অর্থাৎ ইসরার রাতে), সেখানে এমন এক সম্প্রদায়কে দেখলাম তাদের রয়েছে উটের ঠোটের ন্যায় ঠোট, যারা তাদের দায়িত্বে নিয়োজিত তারা ওই সকল লোকদের মুখের চোয়াল খুলে হা করাচ্ছে তারপর তাদের মুখ দিয়ে আগুনের পাথর ঢুকিয়ে দিচ্ছে, আর সঙ্গে সঙ্গে পাথরগুলি তাদের মলদ্বার দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে। আমি জিবরাঈলকে বললাম, এরা করা? তিনি বললেন, এরা হচ্ছে এতিমদের সম্পদ অন্যায়ভাবে ভক্ষণকারী। (ইবনে কাসীর)
নিলয় সাহেবের কথা শেষ না হতেই গাড়ি নিলয় সাহেবের বাড়িতে এসে পড়ে। শেফা মাথা উচু করে বাড়িটা দেখে, পাঁচতলা সাজানো গুছানো একটি বাড়ি। বাড়ির ভেতরে ঢুকে শেফা কাজের বুয়া ছাড়া কাউকে দেখে না। নিলয়কে জিজ্ঞেস করে, কই আমার সেই সৌভাগ্যবতী কোথায়? তাকে তো দেখি না!
–ও বেড়াতে গেছে।
–কোথায়?
–জানিনা।
–এসব কী বল! ফাজলামি বাদ দাও তো। এখন আমরা বড় হয়ে গেছি। এ বয়সেও তোমার দুষ্টুমি গেল না।
–সত্যি বলছি!
–আচ্ছা তাইলে চা নাস্তা করে আমরা এখন চলে যাবো।
— তা হয় না। এসেছো আর কবে না কবে আসো। তারচেয়ে আজ দুপুরের খানাটা আমার এখানে খেয়ে যাও।
–আচ্ছা। তবে আমি নিজ হাতে পাকিয়ে খেয়ে যাবো এবং তোমাকেও খাইয়ে যাবো।
–তুমি তো অসুস্থ! পাক করবে কেমনে?
–তাইলে অসুস্থ রুগী ছাড়ছো কেন?
— না মানে তুমি এখনো পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠোনি।
–হইছে আর বলতে হবে না। সুস্থ হবার পরও গুনে গুনে পাঁচ দিন বেশি রেখে দিয়েছো। আমি কী খুকি যে বুঝবো না। গ্যাস তো সমস্যা নাই। বুয়া রান্নার সব যোগার করে দিবে। আমি বসে বসে পাকাবো।
–আচ্ছা বাসায় মোটামুটি সবই আছে। আর অল্পসল্প যা লাগবে তা আমি বাজার থেকে নিয়ে আসছি।
নিলয় সাহেব বাজারে চলে যাওয়ার পর শেফা আর আয়মন বসে চা খাচ্ছে। এর মধ্যই কাজের বুয়ার সাথে শেফা কিছুটা ফ্রি হয়ে গেছে।কাজের বুয়াকে শেফা জিজ্ঞেস করল, আচ্ছা আপনার সাহেবের বৌ আসবে কখন বলতে পারেন?
–কী কন আপনে!?
–সাহেব তো এ এখন পর্যন্ত বিয়েই করে নি।
চলবে—–