হার্ট ব্লক পর্ব-২
নুর মুহাম্মাদ
–তাহলে তোমাকে আবার মাদরাসায় ভর্তি হতে হবে। হাফেজ মাওলানা হতে হবে। তোমার খরচাদির বিষয়টা আমি দেখব। তুমি শুধু মনোযোগ দিয়ে পড়ব।
–এতো আমার জন্য সৌভাগ্য । আমার মায়ের স্বপ্ন পূরণ। জানেন, আমার মা আমাকে নিয়ে অনেক বড় স্বপ্ন দেখতেন। নামাজ পড়ে পড়ে কাঁদতেন।আল্লাহর কাছে বলতেন, ” আল্লাহ! আমি তোমার কাছে আর কিছু চাই না। তুমি আমার আয়মনকে হাফেজ বানিয়ে দাও। আমার আয়মনকে আলেম বানিয়ে দাও। আম্মু আমাকে বলতেন, “তোমাকে হাফেজ হতে হবে।আলেম হতে হবে। তুমি হাফেজ হলে আমাকে ইয়া বড় একটি নুরের টুপি পরিয়ে দেয়া হবে। সেই টুপির আলোর কাছে অন্য সব আলো ম্লান হয়ে যাবে।”
–বাহ! মাশাআল্লাহ। তুমি সুন্দর করে খুব গুছিয়ে কথা বলতে পারো।
–আম্মু শিখিয়েছে।
নিলয় সাহেব ভাবেন, না ছেলেটার প্রতিভা আছে। ভবিষ্যতে বড় আলেম হতে পারবে। মানুষের সামনে ইসলামকে তুলে ধরতে পারবে।
ডাক্তার নিলয় সাহেব অপারেশন থিয়েটারে ঢুকলেন। ভেতরে ঢুকেই সহকারী সবাইকে বললেন, সব প্রস্তুত তো? সবাই সমস্বরে বলে উঠল, জি স্যার। এরপর তিনি রুগীর দিকে তাকাতেই বিস্ময়বিমূঢ় হয়ে পড়লেন । মনে হলো, তিনি যেন এইমাত্র আকাশ থেকে পড়েছেন। কয়েক মুহূর্ত শুধু এক দৃষ্টিতে চেয়েই থাকলেন। চোখে পলক দিতে পারলেন না এবং কিছুই বলতেও পারলেন না। ভাবছেন, আমি কী বাস্তবেই আছি নাকি স্বপ্নের ঘোরে আছি? এতো সেই শেফা! যাকে আমি জীবনের চেয়েও বেশি ভালোবাসতাম। তার চোখের তারায় একে একে স্মৃতির পাতাগুলো ভেসে উঠতে লাগল। ভার্সিটি লাইফের শুরুর দিকে এই মেয়ের সাথে পরিচয়। পরিচয় থেকে প্রেম। শেফা একটু লাজুক টাইপের ছিল। এজন্য সে ঠিকমত ভালোবাসাটা প্রকাশ করতে পারত না। কিন্তু নিলয় সাহেবকে প্রচণ্ড ভালোবাসত। এরপর একদিন শেফা তাকে জানালো, আমার বাড়িতে আমার বিয়ে নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। তুমি কিছু একটা কর। নিলয় সাহেব কিছুক্ষণ ভেবেচিন্তে বলেছিলেন। “আমি তো এখনো স্টুডেন্ট। তাই এই মুহূর্তে বিয়ে শাদি করা ঠিক হবে না। কিন্তু তোমাকে পেতে আমি লেখাপড়াও ছেড়ে দিতে পারি। লেখাপড়া না করলেও তোমাকে নিয়ে আমি সুখেই জীবনটা কাটিয়ে দিতে পারব।”
–তুমি আমাকে এত্ত ভালোবাসো?!
-কেন এতদিনেও তা বুঝতে পারো নি?!
–হুম বুঝেছি ! না বুঝলে কী এতদিন ধরে তোমার সাথে প্রেম করি!?
–আচ্ছা তোমার আব্বু কি আমাদের সম্পর্কটা মেনে নিবেন? বিশেষ করে আমি এখনো বেকার এদিকটা??
–তুমি যে কী বল না! আমার আব্বু আমাকে সবার চেয়ে বেশি আদর করে। আমি বললেই তিনি রাজি হয়ে যাবেন।তার কাছে আমার পছন্দ সবকিছুর উপরে। তাছাড়া তুমি তো আজীবন স্টুডেন্ট থাকবা না। তুমি এখন দেশের একজন মেধাবী ছাত্র। ডাক্তারি পড়ছো। তোমার ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল।
–আল্লাহ যেন তাই করে।
–তা তুমি আমার আব্বুর সাথে দেখা করছ কবে?
–তুমি যেদিন নিয়ে যাও।
–আচ্ছা আগামী বৃহঃবার তুমি আমার সাথে আমার বাসায় যাবে। ঠিকাছে?
-ওকে।
চলবে—-