#হলদে_চিঠির_প্রেম
#শেষ_পর্ব
#রিয়াদ_আহম্মদ_ভূঁঞা
বিয়ের জন্য হয় তোহফা নয় তানহাকে এভাবে কেন চাইতে বললেন তা ভাবতে গিয়ে কিছুক্ষণ চুপ করে রইলাম। আমার নিরবতায় সাদিক সাহেব যেনো কিছুটা বিরক্ত হলেন। তিনি এগিয়ে এসে কিছু বলতে চেয়েও বললেন না। মনে হলো খুব জোর করেই নিজেকে সংযত করলেন। এরপর হাতে থাকা চায়ের কাপটি ট্রেতে রেখে বললেন,
– কী এতো ভাবছো হ্যা, নাকি কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারছো না?
– ভাবছি আপনাকে কথাটা ঠিক কিভাবে বলবো।
– কেন, কী এমন কথা রয়েছে যা আমাকে বলার আগে এতো ভাবতে হচ্ছে তোমাকে। বলো কি বলতে চাও।
– অভয় দিচ্ছেন।
– ধরে নাও তাই-ই দিচ্ছি। এবার বলো শুনি।
– আমি আসলে তোহফা বা তানহা দুজনের কাউকেই বিয়ে করার প্রতিশ্রুতি দিতে পারবো না যতক্ষণ না মায়ের সাথে এবিষয়ে কথা হয়।
– আমি তো স্রেফ একটা কথার কথা জিজ্ঞেস করলাম। এখানে প্রতিশ্রুতির কথা আসছে কেন।
– দেখুন, কোন বাবা তার মেয়েদের নিয়ে আর যাইহোক অন্তত এবিষয়ে কোন কথার কথা বলবেনা। আপনি সরাসরি না বলে ঘুরিয়ে বলতে চাইছেন, এই যা।
তিনি আমার কথাগুলো শুনে একটি দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। তারপর এগিয়ে এসে দুই হাতে আমার কাঁধ চেপে ধরে চোখে চোখ রেখে বললেন,
– আমি এমন একটি হীরের টুকরো কেন হাতছাড়া করবো যার চাকরী না থাকা স্বত্বেও পথেঘাটে অসহায় মানুষদের দু-হাত ভরে দান করে যায়। কেন তাকে হাতছাড়া করবো যে অসহায় কোন বৃদ্ধকে যাত্রী নিয়ে উপরে উঠতে কষ্ট হচ্ছে দেখে তার রিকশা ঠেলে উঠিয়ে দিতে সাহায্য করে। কেন তাকে হাতছাড়া করবো যে একজন টগবগে যুবক হয়েও রোজ ফজরে আরামের ঘুম ত্যাগ করে মসজিদে যেতে অলসতা করেনা। কেন তাকে হাতছাড়া করবো যার মাঝে রয়েছে সামাজিক, ধর্মীয় মূল্যবোধ সহ অসাধারণ এক ব্যক্তিত্ব। আমি কি তাকে হাতছাড়া করবো শুধুমাত্র তার একটি চাকরী নেই বলে? এতোটাও নির্বোধ নই আমি বাবা। তোমার কাছে আমার যে মেয়েকেই বিয়ে দিই না কেন, আমি তাকে নিয়ে নিশ্চিন্ত থাকবো এটা ভেবে যে, সে কেবল একজন যোগ্য স্বামীর কাছেই নয় একজন ভালো মনের মানুষের কাছে রয়েছে।
কথাগুলো বলে তিনি এবার দম নিলেন। তাকিয়ে রইলেন চোখে চোখ রেখে। এরপর বললেন,
– এখন বলো তুমি কাকে চাইবে?
সাদিক সাহেবকে আমি সাধারণ একজন মানুষ ভাবতাম। ভাবতাম তিনি মাটির দিকে চেয়ে পথ চলেন। দিন দুনিয়ার তেমন খবর রাখেন না। কিন্তু আমি ভুল ছিলাম। পথেঘাটে সচরাচর কি করি না করি তাও যে মানুষটার নজর এড়ালো না সেটাই আমাকে বিস্মিত করেছে। কাঁধ থেকে নামিয়ে উনার হাত দুটো ধরে বললাম,
– মাফ করবেন। অন্তত একদিন সময় দিন আমাকে। তারপর না হয় জানাবো।
উনি রাজি হয়ে গেলেন। বললেন,
– ঠিক আছে। যেমনটি তুমি চাও। তবে হ্যা, আমি কিন্ত তোমার থেকে ইতিবাচক জবাবের আশায় থাকবো। নিরাশ করোনা।
কক্ষের দরজা খুলে দেখি মেঝেতে তিন তিনটি ভাজ করা কাগজ পড়ে আছে। দুটো হলদে রঙের কাগজ একটি সাদা। হাতে তুলে নিলাম সেগুলো। টেবিলের উপর রেখে উত্তর দিকের খোলা জানালা দুটো বন্ধ করে নিলাম। বৃষ্টি হলে ধমকা বাতাসের সাথে পানি আসে তাই। ঠিক তখনি লোডশেডিং। টেবিলের নিচে থাকা হারিকেনটি নিয়ে তাতে আগুন ধরালাম। এরপর প্রথমে একটি হলদে কাগজের ভাজ খুলে পড়তে শুরু করলাম। লিখেছে,
‘আমাদের মাঝে একটু ভুল বুঝাবুঝি হয়েছে। আমি ধরেই নিয়েছিলাম যে তোহফা আপনাকে পছন্দ করে ফেলেছে আর তাই এসব করছে। কিন্ত না। ও নিজে থেকেই এসে আমাকে বলেছে যে, “আপু, তিন তলার ভাড়াটে ছেলেটাকে তোমার সাথে বেশ মানাবে। দেখতে যেমন সুন্দর তেমন চালচলনও। আমি তো একবার দেখেই সব ধরে ফেলেছি। এরপর যথাসম্ভব কাছ থেকে দেখার চেষ্টা করেছি কথা বলার ভঙ্গি কেমন বা অন্যকোন সমস্যা আছে কিনা; যেমন ধরো হাঁটাচলা ঠিক আছে কিনা, কানে কম শোনে কিনা এসব আরকি। না, সে ধরণের কোন সমস্যা চোখে পড়েনি। তবে চশমা পরে। এটা মানিয়ে নেয়া যাবে। তুমি বললে বাকিসব আমিই ঠিক করে দিই কি বলো!” এসব ছাড়াও আরো অনেক কথাই বলেছে ও। এখানে চুম্বক অংশ লিখলাম শুধু। আচ্ছা, সত্যি করে বলুন তো আপনার মনেও কি তাই চলছে যা আমার মনে চলছে? জানাবেন কিন্ত। আমি অপেক্ষায় থাকবো। ঘুম থেকে উঠেই প্রথমে সেটা জানতে হাজির হবো আপনার দরজায়।
ইতি
তানহা’
এরপর সাদা কাগজের ভাজ খুলে পড়তে শুরু করলাম। লিখেছে,
‘আপনি আসলই খুবই ভাগ্যবান যে আমার আপুর মতো মেয়ে আপনাকে পছন্দ করেছে আর বিয়ে করতে চায়। তার কোন তুলনা নেই। এমনকি সেটা কোনদিক থেকেই না। আমাকে ছাদে দেখতে পেয়ে আপনি যখন অপলক তাকিয়েছিলেন তখন বুঝতে পারছিলাম আমার বাহ্যিক সৌন্দর্যের মোহ আপনাকে আকৃষ্ট করেছে। এরপর আপনি চোখ নামিয়ে নিয়েছিলেন। কিন্ত আমার আপুর সৌন্দর্যের কাছে আমি ম্লান। সে নিজেই তার তুলনা। তার সাথে আমার কোন তুলনা চলেনা। আমি আপনার কাছে তার হাতের রান্নার প্রশংসা করেছিলাম। বলেছিলাম তার রান্নার হাতকেও আমি হিংসে করি। আসলে শুধু তাই নয়। তার সৌন্দর্য আর ব্যক্তিত্বকেও আমি হিংসে করি। আত্মীয়স্বজনদের যে কারোর বাসা বাড়িতে আমাদের যাওয়া হলে সকলের মধ্যমনি হয়ে থাকে আমার আপু। সবার মুখে মুখে কেবল তারই গুণগান। হিংসে কি আর এমনি এমনি হয় বলুন। তথাপি, বোন হওয়ার সুবাদে এসব আমাদের মাঝে কোন অশান্তির সৃষ্টি করতে পারেনা। কেননা, তাকে আমি যতটা না হিংসে করি তারচেয়ে হাজারো গুণ বেশি ভালোবাসি। কারণ, সে আমার বোন। আপনাদের দুজনকে মানাবে বেশ। এতসব কথা সামনা সামনি বলার সুযোগ বা সময় কোনটাই হবেনা তাই চিঠি লিখে জানালাম। আপনার কোন আপত্তি না থাকলে আমি মায়ের সাথে কথা বলবো। প্রয়োজনে বাবার সাথেও। উত্তরের অপেক্ষায় থাকবো। আর হ্যা, ছাদে যে কবুতরের ঘরটি আছে তার পেছেনের দিকে সুতোয় বেঁধে চিঠিটা রেখে আসবেন। আমি সেখান থেকে নিয়ে নিব।
ইতি
তোহফা’
এসব পড়ে আমি যেনো পাথর হয়ে যাচ্ছিলাম। এক গ্লাস পানি পান করে এবার অবশিষ্ট হলদে কাগজের ভাজ খুলে পড়তে লাগলাম। লিখেছে,
‘আমার অসতর্কতার কারণে একটি অসুবিধে হয়ে গেছে। চিঠিটা দিয়ে যখন বালিশের নিচে থাকা ডায়েরিটা নিতে আসলাম তখন তা সেখানে ছিলোনা। ঠিক কখন থেকে এটা সেখানে ছিলোনা তাও বলতে পারছিনা। ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম খুব। বাবা কিবা মায়ের হাতে চলে যায়নি তো আবার। অনেক খুঁজাখুঁজির পর সেটা তোহফার কক্ষে পেলাম। তাতে আপনাকে নিয়ে আমার অনেক কথাই লিখা ছিলো। তোহফা সব পড়ে নিয়েছে। আর ওকে নিয়ে যে ভয় ছিল তারও প্রমাণ পেলাম। ওর কক্ষের ঝুড়ির মাঝে অনেকগুলো কাগজ দেখে সন্দেহ জাগে মনে। তারপর সেগুলো একে একে নিয়ে দেখতে থাকি। তোহফার ছোট্ট অবুঝ মনে আপনাকে জায়গা দিয়ে ফেলেছে। এত কম সময়ে এমনটি হয়ে যাবে তা ভাবনাতীত। কিন্তু তাই-ই হয়েছে। ও নিজেই যখন আপনাকে পছন্দ করলো আর পরে আমার ডায়েরি দেখে নিল তখনি আমার কাছে ছুটে আসে আর আমাকে ঐসব বলে যা আমি অন্য চিঠিতে আপনাকে লিখেছি। আমি আসলে এখন ঠিক কি করবো বুঝে উঠতে পারছিনা। আপনিই বলুন কি করা উচিৎ আমার।
ইতি
তানহা’
তিনটি চিঠি পড়ার পর সবকিছু আমার সামনে স্পষ্ট হয়ে গেলো। তোহফা তানহার ছোট হলেও আমাকে নিয়ে লিখা ওর বোনের সব মনের কথা জানতে পারার পর সে নিজের মনের আকাঙ্খাকে জলাঞ্জলী দিতে কালবিলম্ব করেনি। সে তানহাকে হিংসে করে ঠিক, কিন্ত ভালোও বাসে, যে ভালোবাসার কাছে হিংসেটা আসলে কিছুই নয়। তানহাও দারুণভাবে আহত সব জানার পর। সে তার বোনের চোখের পানি সহ্য করতে পারবেনা। সে নিরূপায়। তবে সে জানে আমি তাকে ভালোবাসি। অবশ্য, যদিও তা কখনো সেভাবে বলা হয়ে ওঠেনি। বলিনি। বলতে পারিনি।
সাদিক সাহেব আমার প্রতি সন্তুষ্ট। তিনি তোহফা কি তানহা যেকোন একজনকে আমার কাছে বিয়ে দিতে চান। উনার চাওয়াটা দোষের নয়। বাবা হিসেবে তিনি তা চাইতেই পারেন। কিন্ত আমি যে উনার থেকে একদিনের সময় নিলাম নিজের সিদ্ধান্ত জানাবো বলে তার কি হবে। আগামীকাল দিনশেষে উনি যখন বুকভরা আশা নিয়ে আমার থেকে সুখবর শুনতে চাইবেন তখন আমি আমার প্রতি থাকা দু’বোনের কার ভালোবাসাকে বলিদান দিব। কার অনুভূতিগুলোকে গলাটিপে হত্যা করবো আমি যখন যেকোন একজনকে চাইলেই সাদিক সাহেব হাসিমুখে বিয়ে দিতে রাজি হয়ে যাবেন। তানহাকে আমি ভালোবাসি। ওকে চাইলে আর বিয়ে হয়ে গেলে ও কি করে তোহফার সামনে দাঁড়াবে। যদিও তোহফা আড়ালে নিজের চোখের পানি ফেলবে কিন্তু তানহা তো সব জানে। ভেতর থেকে নিজের বোনের কষ্টগুলো কি ওকে খুঁড়ে খুড়ে খাবেনা। আর তোহফাকেই বা কি করে চাইবো। সে তো প্রশ্নই আসেনা।
কেরোসিন ফুরিয়ে হারিকেন থেকে ঘন কালো ধোঁয়া বেরুচ্ছে। এদিকে খেয়াল ছিলোনা এতক্ষণ। ভাবনায় হারিয়ে গিয়েছিলাম। হারিকেনে এবার কেরোসিন ভরে নিজের কাপড়চোপড় গুছিয়ে নিতে লাগলাম। ঘড়ির কাটা ততক্ষণে রাত পৌনে একটা অতিক্রম করছে। তেমনকিছু নেই আমার। কিছু বই আর কাপড়চোপড়। ফার্নিচার কিছু আগে থেকেই ছিলো আর কিছু সাদিক সাহেব প্রয়োজন অনুসারে দিয়েছিলেন ব্যবহারের জন্য। সবকিছু গোছগাছ করে ঘর পরিষ্কার করতে প্রায় আড়াইটা বেজে গেছে। এবার নিজের ডায়েরির ক’টা পাতা ছিড়ে চিঠি লিখতে বসলাম।
‘তোহফা,
তুমি ছোট মানুষ। তুমি করে বলায় আবার কিছু মনে করোনা যেনো। দুনিয়ার ভালোমন্দ বুঝার ক্ষমতা এখনো তোমার হয়ে ওঠেনি। এবয়সে হুট করেই কখনো কিছু ভালো লেগে যাওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। তবে, তোমার নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে শিখতে হবে। ধৈর্য ধরতে জানতে হবে। এবয়সে নেয়া একটি ভুল সিদ্ধান্ত সারাজীবনের দুঃখের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। নিজের বাবা-মায়ের কথা মেনে চলো। তাঁদের অবাধ্য হয়োনা। তোমার আপুকে এভাবেই সারাজীবন ভালোবেসো। এটা যেনো কখনো ম্লান না হয়। আমার জন্য দোয়া করো। ভুল কিছু করে থাকলে ক্ষমা করে দিও।
ইতি
রিয়াদ’
এরপর সাদিক সাহেবকে লিখলাম,
‘চাচা,
আমাকে ক্ষমা করবেন। যখন আপনি এ চিঠি পড়ছেন তখন আমি ঢাকা ছেড়ে চলে গেছি। আমি যাচ্ছি আমার মায়ের কাছে। আপনাদের থেকে পাওয়া ভালোবাসার কথা ভুলবনা কোনদিন। দোয়া করবেন আমার জন্য। আপনাকে কষ্ট দিতে চাইনি। আর আপনার সামনে দাঁড়ানোর মুখও আমার নেই। চাচীকে আমার সালাম জানাবেন। নিজের যত্ন নিবেন।
ইতি
আপনার স্নেহধন্য
রিয়াদ’
তানহাকে কি ভাষায় লিখবো বুঝে উঠতে পারছিলামনা। চিঠির শব্দচয়ণ কেমন হবে যাতে করে পড়তে সময় ওর হৃদয়ে কিছুটা হলেও স্বস্তি মিলবে। লিখতে শুরু করলাম,
‘তানহা,
জানি খুব রাগ হবে আমার প্রস্থানে। ভেঙে পড়বে। ক্ষতবিক্ষত হবে তোমার হৃদয়। এতদিন কাছে থেকেও আপনি সম্বোধনে কতো চিঠি লিখেছি অথচ আজ, আজ যখন তোমাকে তুমি করে লিখছি তখন আমি তোমার থেকে বহুদূরে চলে যাচ্ছি। তোমার বাবা বলছিলেন তোহফা বা তোমার থেকে কাকে বিয়ে করতে চাইবো আমি। একবার মুখ ফুটে বললেই হয়তো সারাজীবনের জন্য তোমাকে আমার চোখের আলো করে পেয়ে যেতাম। তুমি আমার ঘরে সেভাবে উড়তে যেভাবে বাগিচায় প্রজাতিরা ওড়ে। বিচরণ করতে আমার মনে। নিজের সকল ক্লান্তি আর ক্লেশ দূরীভূত করতে আমার আলিঙ্গনে। সারাজীবন আমরা একে অপরের সুখ-দুঃখের সঙ্গী হয়ে থাকতাম। কিন্তু এতসব হওয়ার সুযোগ থাকা স্বত্বেও আমি চাইনি একজন আদর্শ বড় বোন তাঁর ছোটবোনের কাছে সারাজীবনের জন্য ছোট আর নিচু হয়ে যাক। তোমাকে লিখা এটাই আমার জীবনের শেষ চিঠি। তোমার হলদে রঙের চিঠিগুলো আমার বুকে ক্ষণে ক্ষণে প্রেমের যে ঝড় তুলতো আজ তা বেদনার প্লাবনে রূপ নিয়েছে। জানিনা কতদিন এই দুঃসহ স্মৃতি নিয়ে বাঁচতে পারবো। নিজের যত্ন নিও। বাবা-মাকে কখনো কষ্ট দিওনা। আমায় ক্ষমা করো। চিঠিগুলো সব পুড়িয়ে দিও না হয় এগুলো তোমাকে ভেতর থেকে পুড়ে ছারখার করে দিব। ভালোবাসা নিও, যেভাবে তুমি নিতে চাও। আল্লাহ হাফেজ।
ইতি
রিয়াদ’
তোহফাকে লিখা চিঠিটা ছাদে ওর বলে দেয়া জায়গায় রেখে এলাম। বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে। সাথে ধমকা বাতাস। ক্ষণে ক্ষণে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। মনে হচ্ছিলো আজ যেনো আমার সাথে আকাশটারও হৃদয় ভাঙলো। বইগুলো পলিথিনে পেচিয়ে পাটের ব্যাগে নিলাম। কাপড়গুলো ভিজলে ভিজে যাক, অসুবিধে নেই। বেরিয়ে পড়লাম বাসা থেকে। ততক্ষণে বাসার সামনের দিকটায় টাখনু পর্যন্ত পানি জমে গেছে। ভোর অবদি হয়তো হাঁটু পানি হয়ে যাবে। তখন আমি আর আসবোনা সাদিক সাহেবকে পানি সেঁচে সাহায্য করতে। গেট পেরিয়ে গলির সরু পথটা ধরে বড় রাস্তার দিকে এগোতে লাগলাম। ততক্ষণে সারা শরীর ভিজে গেছে আমার। চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছিলো, পারছিলাম না। সে শক্তি এখন নেই আমার। কাঁদতেও শক্তির প্রয়োজন। মাথার উপর আকাশটাই যেনো বারবার আমার হয়ে বুক কাটিয়ে চিৎকার করে উঠছিলো। হয়তো তার ক্রোধও হচ্ছিলো আমার প্রতি। হলেই বা কি, আকাশটা তো আর জানেনা তার বিশালতার চেয়েও বেশি বেদনা আর দুঃখ বয়ে নিশিতে নিভৃতে কেঁদে ফিরছি আমি একা – সঙ্গীহীন।
———সমাপ্ত———