#হঠাৎ_দেখা
#পর্ব_২৫

শামীম সাহেবের স্টাডিরুমে বসে আছে বাবা ছেলে।কিছুক্ষন আগে আসাদের দেওয়া প্রস্তাবের কথা ভাবছেন তিনি।কিন্তু তিনি শতভাগ নিশ্চিত তার স্ত্রী কখনো এই প্রস্তাবে রাজী হবেন না।

“এই প্রস্তাবে আমার কোন সমস্যা নেই আসাদ।বরং সাব্বির ছেলে হিসেবে ভালো।কিন্তু তোর মা, আমি তাকে যতটুকু চিনি সে রাজী হবেনা। তাছাড়া সাফা….?”

“সাফা ভালোবাসে সাব্বিরকে বাবা।”

“তাই নাকি!”

“বাবা ছোটকাল থেকে তোমাকে সবসময় বন্ধুরর মতো পাশে পেয়েছি।তাই এই পরিস্থিতে তোমাকে ছাড়া আর কাউকে ভরসা করতে পারছিনা।আমি চায় আমার বোনটা সুখে থাকুক।আর তার খুশি সাব্বিরের সাথে।”

আসাদের কথা শুনে শামীম সাহেব হেসে বললেন,”তোরাই তো আমার সব।তোদের জন্য করবো না তো কাদের জন্য করবো।”

বাবার সাথে কথা বলে কিছুটা স্বস্তি অনুভব করছে আসাদ।তার বাবা মানুষটাই এইরকম। এখন সে নিশ্চিত বাবা সব সুন্দর করে সামলে নিবেন।

জিহান পুরো হসপিটালে মিষ্টি বিতরণ করে চলছে।লাবনী একটি সুস্থ কন্যা সন্তান জন্ম দিয়েছে।সাব্বির আর আসাদের সামনে এসে তাদের মুখে মিষ্টি পুরে দিয়ে বলল,”নে আমার মেয়ের চাচারা।মিষ্টি খা।”

সাব্বির হেসে বলল,”তো নতুন মেয়ের বাবা অনুভূতিটা কি রকম?”

“আলহামদুলিল্লাহ।”

রাবেয়াকে এই দিকে আসতে দেখে জিহান তার দিকে মিষ্টির প্যাকেট বাড়িয়ে দিয়ে বলল,”নেন আমার মেয়ের নতুন চাচী মিষ্টি মুখ করুন।”

রাবেয়া একটা মিষ্টি তুলে নিয়ে বলল,”আপনাকে লাবনী ভাবী ডাকছেন।” জিহান সেদিকে চলে গেল।সাব্বিরও আসাদের কেবিনে ঢুকে বসল।করিডোরে দাড়িয়ে আছে রাবেয়া আর আসাদ।

“আপনি কি কিছু নিয়ে চিন্তিত?”

চমকিতে রাবেয়ার দিকে তাকালো আসাদ।
“আমার মুখে তো হাসি হাসি ভাব।তোমার কেন এমনটা মনে হলো?”

“জানি না।মনে হচ্ছে আপনি কিছু নিয়ে খুব চিন্তিত।”

“তোমাকে তো সাফা আর সাব্বিরের কথাটা জানালাম।সেটা নিয়ে একটু টেনশেনে আছি এই আরকি।”

“আপনি তো বাবার সাথে কথা বলেছেন এই নিয়ে।আপনি কি আমার কাছ থেকে কিছু লুকাচ্ছেন?”

আসাদ ইচ্ছে করে রাবেয়ার বাবার কথা এড়িয়ে গেল।কারন হাসান সাহেবের হার্টের অবস্থা খুব একটা ভাল না।আসাদ চায় না এই নিয়ে রাবেয়া দুশ্চিন্তায় থাকুক।

________________________________

সাফা আজ দুইদিন ধরে কলেজে যাচ্ছেনা।মন খুব একটা ভাল নেই তার।সারাদিন রুমে শুয়ে বসে নামাজ পড়ে কাটিয়ে দেয় সে।তার এই অবস্থা দেখে কিছুটা চিন্তিত হলেন সেলিনা বেগম।তার হাস্যউজ্জ্বল মেয়েটা হঠাৎ এমন হয়ে গেল কেন।কোর্ট থেকে ফিরে এসে রাতে স্বামীর সাথে এই নিয়ে কথা বললেন তিনি।প্রতিউত্তরে শামীম সাহেবের মুখ থেকে যা শুনলেন তারপর তারা মাথা আর কোন কাজ করছেনা।

“এইসব কি বলছো তুমি?সাব্বিরর আর সাফা?”

“কেন সাব্বিরকে তোমার ভালো লাগেনা?”

“সাব্বিরকে আমি কখনো আসাদের বন্ধুর চোখে দেখিনি।সবসময় নিজের ছেলের মতো দেখিছি কিন্তু তাই বলে…”

“আজ নিজের মেয়ের বিয়ে সাব্বিরের সাথে দেওয়ার কথা উঠেছে বলে তুমি দ্বিধা দ্বন্দ্বে পড়ে গেলে।অথচ অন্য কোন মেয়ের পরিবার শুধুমাত্র সাব্বিরের পায়ের কন্ডিশন দেখে বিয়েতে রাজী না হলে রীতিমত রাগ উঠতো তোমার।কি ঠিক?”

শামীম সাহেবের কথা শুনে আর কিছু বলতে পারলেন না তিনি।কারন কথাটা শুনতে খারাপ লাগলেও কথাটা সত্যি।

“আমার মেয়েটা….”

“ভালো থাকবে তোমার মেয়ে।”

সন্ধ্যায় অফিস থেকে বাসায় এসে মীর পরিবারের সবাইকে দেখে অনেকটা চমকে গেছে সাব্বির।তার চেয়ে চমকে গিয়েছে তাদের এখানে আসার কারনটা জানতে পেরে।সে কখনো ভাবেনি এমন একটা দিন তার জীবনে আসবে।ছাদের এক কোনায় দাড়িয়ে এইসব ভাবছে সে।পাশে তার দাড়িয়ে আছে আসাদ।নিরবতা ভেঙে সাব্বির বলল,”কেন তোর বোনের সুন্দর জীবনটা এই পঙ্গুমানুষটার সাথে জড়াতে চাচ্ছিস আসাদ।”

“ওর জীবনটা আরো সুন্দর ও সুখময় করার জন্য।”

“আমি ওর যোগ্য নয় আসাদ।”

“সেটার সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার শুধুমাত্র সাফার।আমাদের দায়িত্ব ছিল সেই সিদ্ধান্তটাকে যাচাই বাছাই করার যা আমরা করে ফেলেছি।এবার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পালা তোর।আমি জানি তুই সাফাকে ভালোবাসিস তাহলে কেন দূরে থাকার মতো কঠিন সিদ্ধান্ত নিচ্ছিস?”

“সাফাকে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে আসাদ।আর আমি চায় না আমার কারনে…”

“আমার বিশ্বাস সেই সমস্যা সম্মুখীন করার সময় তুই
ওর পাশে থাকবি।”

আসাদের এমন প্রশ্নেরর জবাবে আর কিছুই বলতে পারেনি সাব্বির।দুই হাতে জড়িয়ে ধরেছিল আসাদকে।

___________________________

“সেই তখন থেকে ফ্যাঁচ ফ্যাঁচ করে কান্না করতেছস।মেকাপ সব তো শেষ তোর।আরে বিদায় তো এখন না তোর।অনার্স শেষ করার পর বিদায় হবে তোর।তাহলে এখন এতো কাঁদছিস কেন?” রাগ মিশ্রিত গলায় বলল তুলি।তবুও কান্নার থামছেনা সাফার।

“সাফা,কান্না থামাও।এখন যদি কেউ এসে দেখে তখন কি ভাববে?”আদুরে গলায় বলল রাবেয়া তারপর সযত্নে সাফার চোখের পানি মুছে দিল।

“আমি কি নিচে গিয়ে সাব্বির ভাইয়াকে বলবো যে তুই এই বিয়েতে রাজী না।দেখ এখনো সময় আছে বল তুই রাজী কিনা?” তুলির এমন কথা শুনে দুই চারটা কিলঘুসি দিল সাফা।এই বোকা মেয়েকে কেমন করে বুঝাবে সে এইটা যে খুশির কান্না।শত কষ্টের পর ভালোবাসার মানুষকে কাছে পাওয়ার খুশির বহিঃ প্রকাশ এটা।

বিয়ে পড়ানোর পর সবাইকে খুরমা বিতরনের দায়িত্ব পড়ল আসাদের ঘাড়ে।সাফার রুমে ঢুকে সবাইকে দুইটা করে খুরমা দিল সে।যখন রাবেয়ার সামনে আসলো তখন একমুঠ খুরমা ধরিয়ে দিল আসাদ।সেটা দেখে তুলির খালাতো বোন শাওন বলল,”দুলাভাই আপনি নিজের ঘরওয়ালিকে একমুঠ খুরমা দিলেন আর নিজের শালীদেরকে মানে আধাঘরওয়ালিদের দিলেন মাত্র দুইটা।এটা কিন্তু অন্যায়।”

আসাদ তখনো রাবেয়ার দিকে চেয়ে আছে।আর রাবেয়া চোখ নিচে করে দাড়িয়ে আছে।আসাদ রাবেয়ার দিকে চেয়ে বলল,”ঘরওয়ালি বলল আর আধাঘরওয়ালি সব আমার এই সামনের মানুষটা।”
আসাদের কথা শুনে সবাই হেসে উঠলো।তাদের হাসির আওয়াজে আসাদও কিছুটা বৃব্রতবোধ করল তাই তাড়াতাড়ি রুম থেকে বেরিয়ে গেল।এইদিকে লজ্জায় কারো দিকে তাকাতে পারছেনা রাবেয়া।

সাফা আর সাব্বির বসে আছে পাশাপাশি।আর তাদের কে ঘিরে বসে আছে আত্নীয়রা।যার কারনে দুইজন দুজনের সাথে কথা বলার সুযোগটা পাচ্ছেনা।অনেক কষ্টে একটু সময় পেল সাব্বির কিন্তু সাফা কোন কথায় বলছেনা।সাব্বির বুঝে গেল পিচ্ছিবউটা তার রাগ করেছে।কিন্তু রাগ ভাঙানোর কোন সুযোগই তো দিচ্ছেনা মেয়েটা।কিছুক্ষন পর রুমটা খালি হল বর আর কনের জন্য।সেইটাকে কাজে লাগালো সাব্বির।

“রাগ করে আছো?”

“কেন রাজী হলেন এই বিয়েতে আপনি?আমি তো আপনার অনুরোধ রাখবো বলেছিলাম।করে নিতাম অন্য কাউকে বিয়ে।”

সাব্বির এইবার সেই কাজটা করল যা কখনো সাফা কল্পনাও করতে পারেনি।সাফার হাতটা শক্ত করে ধরলো সে আর বলল,” আমি জানি তোমার মনে হাজারটা প্রশ্ন।সবগুলোর উত্তর আজ তোমাকে দিব।সাফা,কাউকে ভালোবাসাটা কঠিন কিছুনা কিন্তু ভালোবাসার মানুষটাকে সারাজীবন আগলে রাখাটা কঠিন কিছু।আর আমার নিজের উপর সেই বিশ্বাসটুকু ছিলো না যে আমি তোমাকে আগলে রাখতে পারবো।তুমি কত অকপটে তোমার আমার প্রতি ভালোবাসাটা ব্যক্ত করতে পারতে কিন্তু আমি…..।”

একটু থেমে আবার বলতে শুরু করল সাব্বির,”তোমার জীবন নষ্ট করতে চায়নি আমি।আমি জানি যখন মানুষ তোমার সাথে আমাকে দেখবে তখন অনেক হাসাহাসি করবে।আমি চাইনা তুমি কারো কাছে হাসির পাত্র হও।তাই নিজেকে ও নিজের অনুভূতিগুলো কে সবসময় তোমার কাছ থেকে দূরে সরিয়ে রাখতাম।”

টলমল চোখে সাব্বিরের কথা শুনছিল সাফা।অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে নিয়ে বলল,”আপনি কি আমাকে ভালোবাসেন?”

“না ভালোবেসে উপায় কি?এখন তো তুমি আমার বউ তোমাকে সবরকমের ভালোবাসার অধিকার শুধুই আমার।” মুচকি হেসে বলল সাব্বির।
সাব্বিরের এই এক কথায় সাফা সবকিছু ভুলতে রাজী।সাফার সব অভিমান পানি হয়ে গলতে বাধ্য।কারন সে যে ভালোবাসার নামক মায়ায় আবদ্ধ।

চলবে…..
©নওশিন সালসাবিল।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here