#হঠাৎ_দেখা
#পর্ব_১৯

যথারীতি সকাল ১১ নাগাদ রাবেয়াকে নিয়ে যমুনা ফিচার পার্কে পৌছে গেল তুলি।এই দোকান সেই দোকান ঘুরছে তারা।

“কি কিনবি তাড়াতাড়ি কিনে ফেল।আমাকে আবার হসপিটালে ব্যাক করতে হবে।পরশু নতুন হার্ট সার্জেন জয়েন হবেন।কত কাজ পরে আছে।”

“হ্যা আপু করছি।বোরকা কিনবো বলেই তো তোমাকে নিয়ে এলাম। তুমি তো জানো আমার এই বিষয়ে জ্ঞান খুব কম।”
তারপর রাবেয়া আর তুলি নিজের মতো শপিং করতে লাগলো।ফাঁকে ফাঁকে তুলি খুঁজতে লাগলো সাফাকে। কিন্তু দেখা পাওয়া যাচ্ছে না।ফোনও দিতে পারছেনা রাবেয়া আশে পাশে থাকার কারনে।কিছুদূর হেটে গিয়ে একটি শাড়ির শোরুমে সামনে দাড়ালো রাবেয়া।কলাপাতা রঙের জামদানি শাড়িটার দিকে একমনে চেয়ে রইল সে।রাবেয়াকে ব্যস্ত দেখে তুলি একটু দূরে সরে এসে ফোন দিল সাফাকে।

এইদিকে পার্কিং লটে গাড়ি পার্ক করছে আসাদ।পাশে আসাদ থাকার কারনে তুলির ফোন রিসিভ করতে পারছেনা সে।পাছে যদি আসাদ বুঝে যায়।এমনি তো এই দেখা করানোর প্ল্যানের কারনে জান যাই যাই অবস্থা।আসাদ যদি জেনে যাই তাহলে?তাই ফোন রিসিভ করছেনা সে।গাড়ি পার্ক করে লিফট হয়ে উপরে উঠে আসলো তারা।তুলি কে দেখতে পেয়ে হাত নাড়াতে লাগলো সাফা।আসাদকে বলল,”ভাইয়া দেখ ঐটা তো তুলি!”

সাফার কথায় সেদিকে তাকালো আসাদ।দেখতে পেল তুলিকে। তার পাশে এক বোরকা পরিহিত মেয়েও আছে।কিন্তু সে উল্টো দিকে ফেরা।

“তুলিরও আসার কথা ছিলো নাকি? ”

আসাদের কথা শুনে দুই এক ঢুক গিলল সাফা তারপর বলল,”কি জানি।আমি তো এইমাত্র দেখতে পেলাম ওকে।চল যায়।”

আসাদ আর সাফা অগ্রসর হতে থাকলো তুলির দিকে।আসাদ আর সাফা যখন তুলির কাছাকাছি এলো এমন সময় মলের সব লাইট চলে গেল। মিনিট দুইএকের মধ্যে লাইট চলেও এলো।

সাফা জানেই না এমন ভাব করে বলল,”আরে তুই এখানে?”

তুলিও তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে বলল,”তুই এখানে?শপিং এসেছিস বুঝি।আমি আর মিস্টি আপুও এসেছি।”

“কই আপু কই?”

“এইতো” কথাটা বলে তুলির সাথে সাফা ও আসাদ পিছনে তাকালো।কিন্তু কাউকে দেখতে পেলো না।সাফা ভ্রু নাচিয়ে ইশারায় তুলিকে ঘটনা কি জানতে চাইলো।তুলি বলল,”এইমাত্র তো এখানে ছিল কই চলো গেল?”

“ফোন দিয়ে দেখ।”সাফার কথায় তুলি রাবেয়াকে ফোন দিলো।রাবেয়া রিসিভ করাতেই সে কোথায় জানতে চাইলো তুলি।তারপর ফোন রেখে দিলো।
সাফা জিজ্ঞাসা করল,”আপু কেথায়? কি বলল?”

“হসপিটাল থেকে ইমার্জেন্সি কল আসাতে আপু চলে গেছে।”
“এখন কি হবে?”উদ্বিগ্ন ভঙিতে জিজ্ঞাসা করল সাফা।
“কি আর হবে?অপেক্ষা করতে হবে।”
এই পরিস্থিতিতে একটু হতাশ হলো দুই বান্ধবী।আসাদের ফোন কল আসার কারনে একটু দূরে সরে গিয়েছিল সে। তাই সাফা আর তুলির কোন কথায় সে শুনতে পাইনি।

সকাল থেকে হাসপাতালে ব্যস্ত সময় পার করছে রাবেয়া।কর্মস্থলে কেউ তাকে এই নামে চিনে না।সকলে চিনে ডা.সাবিহা নূর নামে।আজ হসপিটালে নতুন হার্ট সার্জেন জয়েন দিবেন।আর তাকে এসিস্ট করার দায়িত্ব পড়েছে রাবেয়ার উপর।

“কি হলো কি চিন্তা করছো সাবিহা?” ডা.রুমার কথায় ধ্যান ভাঙল রাবেয়ার।মুচকি হেসে বলল,”তেমন কিছু না।”

“শুনেছি নতুন হার্ট সার্জেন কে নাকি তুমি এসিস্ট করছো।”

“তাই তো টেনশেনে আছি!”

“আরে টেনশেন নিয়ো না তো।শুনেছি অনেক শান্তশিষ্ট তিনি।”

“তুমি কিভাবে জানো?”

“উনি তো ডা.জিহানের বন্ধু।”

“ও তাই নাকি!”

সকাল ১১টা নাগাদ হাসপাতালে আসলো আসাদ।তাকে স্বাগত জানাতে জিহানসহ আরো অনেক ডাক্তার উপস্থিত ছিল সেখানে।সবার সাথে পরিচিত হবার পর নিজ কেবিনে তাকে নিয়ে গেল জিহান।আবার নিজ কর্মস্থলে ফিরে এসে এক অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে আসাদের।সেই চিরচেনা সবকিছু।

তখন সবেমাত্র ওটি থেকে বের হয়ে নিজ কেবিনে এসে বসেছিলো রাবেয়া।ডা.রুমিকে হদদন্ত হয়ে কেবিনে ঢুকতে দেখে কিছুটা অবাক হলো সে।

“এমন হাঁপাচ্ছো কেন তুমি?কি হয়েছে?”

রুমি চেয়ারে গাঁ এলিয়ে দিয়ে বলল,”নতুন হার্ট সার্জেনকে দেখেতো আমিই হার্ট পেশেন্ট হয়ে গেছি। উফ কি হ্যান্ডসাম!!”

“কি বলছ এইসব তুমি?আর উনি চলে এসেছেন?”

“হ্যা।জানো এতোদিন আমি ফর্সা ছেলেদের সুন্দর মনে করতাম।কিন্তু উনাকে দেখে মনে হলো শ্যাম বর্নের ছেলেরাও দেখতে এতো সুন্দর হয়।আর উনার খোঁচা খোঁচা দাড়িগুলো।আমি তো পুরাই ক্রাশড।তুমি দেখনি তাকে?”

“না।আমি তো ওটিতে ছিলাম।আজ আমার ডা.এনাম হক স্যারকে এসিস্ট করার কথা ছিলো তাই।”

“উফ কি যে মিস করলা।তুমি কতো লাকি!!কারন তুমি উনার সাথে কাজ করার সুযোগ পাচ্ছো।জানো এই মেডিকেল কলেজের পুরানো ছাত্র তিনি আর অসট্রেলিয়া থেকে পিএইচডি করে এসেছেন নাকি।”
ডা.রুমির কথা শুনে ফাইল থেকে মুখ তুলে তাকাল রাবেয়া।হঠাৎ কিছুটা উত্তেজোনা অনুভব করলো সে।কাঁপা কাঁপা গলায় জিজ্ঞেস করল,”উনার নাম কি?”

“ম্যডাম আসবো?আপনাকে এনাম স্যার ডাকছেন।”
পিয়নের কথায় দুইজনের কথা থেমে গেল সেখানে।
“আসছি।” বলেই উঠে দাড়ালো রাবেয়া।সাদা কোর্টা পড়তে পড়তে বের হয়ে গেল কেবিন থেকে।নামটা আর জানা হলোনা তার।

ডা.এনাম হক স্যারের কেবিনের দরজায় নক করলে রাবেয়াকে ভিতরে আসার অনুমতি প্রদান করেন তিনি।রাবেয়াকে বসতে বলে কান থেকে ফোনটা রেখে দেন আর বললেন, “ডা.সাবিহা আজকে থেকে আমাদের হসপিটালে যিনি হার্ট সার্জেন হিসেবে জয়েন করছেন এখন থেকে ওটিতে আপনি ওনাকে এসিস্ট করবেন।চলুন তার সাথে আপনার পরিচয় করিয়ে দেই।”কথাটা বলেই উঠে দাড়ালেন ডা.এনাম।তার সাথে উঠে দাড়ালো রাবেয়াও।ডা.এনামের পিছু পিছু হাঁটছে রাবেয়া।

“ডা.সাবিহা ও কিন্তু আমাদের কলেজের ছাত্র ছিলো
এবং ডাক্তারও।পরে পিএইচডির জন্য অসট্রেলিয়া চলে গিয়েছিল।চাইলে সেখানেই থেকে যেতে পারতো।কিন্তু দেশের টানে ফিরে আসলো।ওহ আপনাকে তো ওর নামই বলা হলোনা।ওর নাম ডা.আসাদ মীর।আমারই ছাত্র ছিলো ও।”
এতক্ষন ডা.এনামের পিছন পিছন হাঁটছিলো রাবেয়া।আসাদের নাম শুনে থমকে দাড়ালো সে।কোনমতে তার পা গুলো সামনে এগুতেই চাচ্ছিলোনা।এতদিনের অপেক্ষা শেষ হওয়ার খুশিতে নাকী অন্য কি কারনে তার এমন অনুভূতি হচ্ছে সে জানে না।এতোবছর পর মানুষটাকে দেখবে সে!মানুষটা কি চিনবে ওকে?ভুলেও তো যেতে পারে!না উত্তেজোনায় আর কিছুই ভাবতে পারলো না সে।
ডা.এনামের ডাকে হুশ ফিরলো তার।”কি হলো দাড়িয়ে গেলেন যে।তাড়াতাড়ি আসুন।”শরীরের সব শক্তি একসাথে করে আবার হাঁটা ধরল রাবেয়া।

আসাদ তখন নিজ কেবিনে বসে জিহানের সাথে কথায় মশগুল ছিলো।ডা.এনামের কন্ঠ শুনে ফিরে তাকালো তারা।
“দুই বন্ধু ডাক্তারের মধ্যে এমন কি আলাপ হচ্ছে শুনি।”আসাদ ও জিহান উঠে দাড়ালে। সালাম দিয়ে আসাদ বলল,”স্যার আসুন না প্লীজ।”

“তোমাকে আজ থেকে যে এসিস্ট করবে তার সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে আসলাম, ডা.সাবিহা।”
রাবেয়াকে ডাকার সাথে সাথে আসাদের কেবিনে প্রবেশ করলো সে।কাঁপা কাঁপা কন্ঠে সালাম দিল সে।
আসাদের চোখজোড়া থমকে গেল যখন সে দেখলো ডা.এনামের অাড়াল থেকে সামনে আসা ডা.সাবিহা নামের মেয়েটিকে ।সেই কাজল কালো চোখদুটি।যার গভীরতায় সে মুগ্ধ ছিলো এতোটা কাল।রাবেয়াও চেয়ে রইল আসাদের পানে।সেই বিশ্বস্ত চাহনি। চোখাচোখি হয়ে গেল দুজনের।

“ডা.আসাদ ইনি হলেন ডা.সাবিহা আর ডা.সাবিহা ইনি হলেন আমাদের নতুন হার্ট সার্জেন ডা.আসাদ মীর।” তাদের পরিচয় করিয়ে দিয়ে জিহানের সাথে আলাপ আলোচনায় ব্যস্ত হয়ে গেলেন ডা.এনাম।
এদিকে এখনো একে অপরের দিকে চেয়ে রইল আসাদ আর রাবেয়া।আজ যে তাদের অপেক্ষা শেষ হলো।অথচ দুইজনের কেউ জানে না একে অপরের জন্য তাদের অপেক্ষার প্রহর।।

চলবে….

©নওশিন সালসাবিল।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here