#হঠাৎ_দেখা
#পর্ব_০৪
“অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে,ডাক্তারসাহেব।এত ভাল ওয়ার্ডে চাচাকে ভর্তি করানোর জন্য তার চিকিৎসার সমস্ত ভার বহন করার জন্য।”
রাবেয়ার মুখে ডাক্তারসাহেব কথাটা শুনে আসাদের এক অন্যরকম ভাল লাগা সৃষ্টি হল।আসাদ হেসে বলে উঠল,”ডাক্তার এখনো হয়নি মিস রাবেয়া।আরো কিছু সময় বাকি আছে এই উপাধিটা পেতে।যাইহোক,আমার নাম আসাদ মীর। আর ধন্যবাদ দেওয়ার প্রয়োজন নেই।সেই সকাল থেকে শুধু ধন্যবাদই শুনতে হচ্ছে।বলুনতো এত ধন্যবাদ কই রাখি।”
“তবুও অাপনাকে ধন্যবাদ জানানো আমার দায়িত্ব, ডাক্তারসাহেব।আপনি খুব ভালো একজন মানুষ আর একজন দায়িত্ববান ডাক্তার। তা না হলে এইভাবে দুই দুই বার অপরিচিতদের সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসতেন না।”
“প্রথমবারের সাহায্যটা ছিল একজন মানুষ হিসেবে।বিপদেই তো মানুষ মানুষের জন্য এগিয়ে আসবে।আর দ্বিতীয়টা সাহায্য ছিল না,একজন ইন ফিউচার ডাক্তার হিসেবে আমার কর্তব্য ছিলো মিস রাবেয়া।”
বাইরে খুব বাতাস হচ্ছে। যেন “এখনই ঝড় আসাবে, সবাই সাবধান হও” এমন আগাম বার্তা জানিয়ে দিচ্ছে।হাসপাতালের নিচতলার করিডোর এ দাড়িয়ে আছে রাবেয়া আর আসাদ।
“এবার তাহলে আমি আসি।ঝড় আসতে পারে।আচ্ছা চাচাকে কবে রিলিস করবে বলতে পারবেন।আমি সেদিন এসে দেখা করে যাবো ওনার সাথে।”
“এইতো দুইদিন পর। কিছুটা বিশ্রাম দরকার ওনার ক্ষতটা শুকানোর জন্য। ”
“ও তাহলে আমি দুইদিন পর আসবো।এখন আসি।আল্লাহ হাফেজ। ”
রাবেয়া সেখান হতে যেতে নিলেই পিছন হতে ডাক দিয়ে উঠল আসাদ,”মিস রাবেয়া”
আসাদের ডাক শুনে থেমে দাড়লো সে।রাবেয়ার সামনে এসে আসাদ বলল,”নিজের পায়ের যত্ন নিবেন আর এই প্রেসক্রিপশনে কিছু মেডিসিন পেসক্রাইব করে দিলাম,মনে করে নিয়ে নিবেন।”
রাবেয়া হাত বাড়িয়ে কাগজটা নিয়ে নিলো আর বলল,”অব্যশই ডাক্তারসাহেব।”
রাবেয়া চলে যেতে নিতেই পুনরায় ডাক দিয়ে তাকে থামাল আসাদ।
“জ্বি,আর কিছু বলবেন।”
“হ্যা…আসলে..”
“হ্যা বলুন।”
“ও…হ্যা..যেদিন চাচার সাথে দেখা করতে আসবেন সেদিন মনে করে আমার সাথে একটু দেখা করতে পারবেন?
”
“কেন!!” বিস্মিতভাবে প্রশ্নটা করল রাবেয়া।
আরে বলে তো দিলি দেখা করতে,এখন কি বলবি?কি জন্য দেখা করতে চাইছিস।মনে মনে কথাটা বলল আসাদ।
“কিছু বললেন না যে।”
রাবেয়ার কথায় ধ্যান ভাঙ্গলো আসাদের।
“আসলে….ও হ্যা আপনার পায়ের ড্রেসিংটা চেইঞ্জ করে নতুন ব্যান্ডেজ করে দেওয়ার জন্য।” কথাটা বলেই ছোট এক স্বস্তির নিশ্বাস ফেলল সে।
কথাটা শুনে রাবেয়া দৃষ্টি নামিয়ে বলল,”আপনি এত চিন্তা করবেন না, ডাক্তারসাহেব।এতটাও বড় আঘাত না সেইটা।”
আসাদের কিছুটা মন ক্ষুন্ন হলো কথাটা শুনে।আসাদের দিকে তাকিয়ে রাবেয়া পুনরায় বলে উঠল,”আচ্ছা আমি আসবো সেদিন।”
ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটলো আসাদের।
“তাহলে দেখা হবে সেদিন।”
“জ্বি,আচ্ছা।এখন আসি।ভালো থাকবেন।আল্লাহ হাফেজ।” কথাটা বলে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে এলো সে।আর রাবেয়ার যাওয়ার দিকে চেয়ে রইল আসাদ।
হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে আকাশের পানে তাকিয়ে থাকলো রাবেয়া।বুঝা যাচ্ছে আকাশের অবস্থা খুব একটা ভাল না।তবে রাবেয়ার মনের অবস্থা খুব ভাল।কারন তার জানা নেই।মাঝে মাঝে কিছু ভাল লাগার কোন কারন থাকে না।অকারনে যেমন মন খারাপ হয় ঠিক তেমনি অকারনে মন ভালও হয়।বাসায় ফিরতে প্রায় দুপুরবেলা পার হয়ে গেল রাবেয়ার। ঢাকা শহরের জ্যাম কোনদিন গিনিজ বুকে উঠবে।এত জ্যাম কেমনে হয় বুঝতে ব্যর্থ রাবেয়া। ঘরে ঢুকে নিজের রুমে গিয়ে ফ্রেস হয়ে নিল সে।সকাল থেকে কিছু না খেয়ে থাকার দরুন খুব ক্ষিদে পেল তার।রান্নাঘরে গিয়ে দেখতে পেল মা নিলুফা বেগমকে।
“মা,এখনে কি রান্না হয়নি?”
মেয়ের কন্ঠ শুনে পিছনে ফিরে তাকালেন নিলুফা বেগম।
“আরে রান্নাতো সে কবেই শেষ।সবাই খেয়েও ফেলল।তোকে বাসায় ঢুকতে দেখে তরকারি গরম দিচ্ছিললাম।”
“এত কষ্ট না করলেও হতো মা।এখন তোমার বিশ্রামের সময়।”
“আমার মেয়ের জন্য আমি কষ্ট করবো না তো কে করবে শুনি?”
মায়ের কথায় মুচকি হাসলো রাবেয়া। মেয়ের হাসির দিকে এক নজরে তাকিয়ে রইলেন নিলুফা বেগম।কি সুন্দর তার মেয়ের হাসি।হাসলেই মেয়েটার গালের দুপাশে গর্ত হয়ে যায়।একপাশের গেঁজ দাতাটাও ঝিলিক মেরে ওঠে।কত ঘন লম্বা চুল মেয়েটার।কিন্তু একটায় দোষ মেয়েটা যে তার কালো।বাবার গায়ের রং পেলেও মেয়েটা তার বাবার ভালোবাসাটা পেল না।এ নিয়ে রাবেয়ার মন ক্ষুন্ন না হলেও নিলুফা বেগমের চিন্তার শেষ নেই।বাবার ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত এই কালো মেয়ের ভবিষ্যৎ কি লেখা আছে শুধুমাত্র আল্লাহ ভালো জানেন।
সবে মাত্র গোসল সেড়ে বারান্দায় বেতের সোফায় বসেছিল আসাদ।ক্লান্ত হওয়ার দরুন চোখ দুইটি বুজে এলো তার।চোখ বন্ধ করতেই ভেসে উঠল মায়াবী চোখ দুটি।কেন এত বিষন্ন চোখ দুটি? যেন হাজার খানেক মন খারাপের কবিতা আবৃতি করে।দীঘল পালকযুক্ত চোখ দুটির প্রেমে পড়ে গেছে সে।ভয়ংকর প্রেমে।এই প্রেমের যাত্রায় হয় সে হেরে গিয়ে হবে সন্ন্যসী নইতো জিতে গিয়ে হবে সফল প্রেমীক পুরুষ।
এক হাতে দুইকাপ কফি টেবিলের উপর রেখে অন্য হাতের এলবো ক্রাচটা(পায়ে আঘাতপ্রাপ্ত লোকের কনুইয়ের ভরে চলবার লাঠি) বারান্দার এক কোণে রাখল সাব্বির।
আসাদ,সাব্বির,জিহান তিনজন মিলে একসাথে থাকে এই চাররুমের ফ্লাটে।ছোটকালের বন্ধু তারা।ঢাকায় সবার নিজ নিজ ঘর-বাড়ি, পরিবার পরিজন আছে।তবুও বন্ধুত্বের টানে একসাথে থাকা। সাব্বির ম্যাথম্যাটিক্স নিয়ে বুয়েটে পড়ছে।আসাদ আর সাব্বিরর ছোটকালের বন্ধু হলেও জিহানের সাথে বন্ধুত্ব হয় তাদের হাইস্কুল লাইফে।তখন থেকে একসাথে পথচলা তাদের। জিহান আর আসাদ প্রথমবারে মেডিকেলে চান্স পেলেও সাব্বিরের পায়ের দুর্ঘটনার কারনে পরীক্ষা দিতে পারেনি সাব্বির।সেই দুর্ঘটনার ফলে সাব্বিরের বাম পায়ে সমস্যা দেখা যায়। যার কারনে তাকে এলবো ক্রাচটার সাহায্য নিয়ে চলতে হয়।দুর্ঘটনার কারনে এক বছর গ্যাপ দিয়ে বুয়েটে ভর্তি হয় সে। সারাটাদিন যে যার যার কাজে ব্যস্ত থাকে বলে সন্ধ্যার সময়টাকে তিন বন্ধু কফিটাইম হিসেবে ইউজ করে আড্ডা দেয়।
“কিরে জিহান ব্যাটা কয় রে?” কফি মগটা আসাদের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল সাব্বির।
সাব্বির কথায় চোখ খুলে সোজা হয়ে বসল আসাদ।
“কোথায় আর হবে? ওনার মিস প্যারার কাছে।” কফি মগটা হাতে নিয়ে কথাটা বলে সামান্য হাসল আসাদ।
“আরে ব্যাস। তাহলে তো রাত দশটার আগে সাহেবের দেখা পাওয়া যাবে না। কিজন্য ডাকলো আজ মিস প্যারা।”
“কিজন্য আর হবে। বাজারে যে নতুন নতুন প্যারা এসেছে তা দিতে হয়তো।”
“হা..হা..মিস প্যারা আমাদের বন্ধুটাকে প্যারা দিবে আর আমাদের ডাক্তারসাহেব তা গ্লুকোজ এর মতো গিলে নিবে।”
চলবে…..
®নওশিন সালসাবিল
[ “একাকী হয়ে যাওয়ার অর্থ হলো তুমি খারাপ সঙ্গ পরিত্যাগ করেছ। কিন্তু একজন ভালো বন্ধু থাকা একাকীত্বের চাইতে উত্তম।”
— উমার ইবনুল খাত্তাব (রাদিয়াল্লাহু আনহু)♥]