স্বীকৃতি
পর্ব_১২
#Saji_Afroz
.
.
.
সাদেক কে দেখে নিজের জায়গায় দাঁড়িয়ে পড়লো খুশবু।
আরহাম বললো-
দাঁড়িয়ে পড়লে কেনো? চলো।
-সাদেক!
.
ততক্ষণে সাদেক এগিয়ে এসেছে তাদের কাছে।
তাকে দেখে আরহামের ভেতরে জমে থাকা রাগ যেনো বেরিয়ে এলো। দাঁতে দাঁত চেপে বললো সে-
তুমি এখানে কি করছো?
.
এক পলক আফসানাকে দেখে নজর সরিয়ে নিলো সাদেক।
অন্যের হবু বউকে এভাবে দেখার অধিকার তার নেই।
আফসানাও ছলছল নয়নে মেঝের দিকে তাকিয়ে রয়েছে।
খুশবু বললো-
শান্ত হন। সাদেক ভাইয়া কি বলতে এসেছে সেটা তো বলতে দিন!
.
খুশবুর উদ্দেশ্যে সাদেক বললো-
আফসানা কে প্রাপ্য সম্মান আমি কোনোদিন দিতে পারিনি আর পারবোও না। আমি দেশের বাইরে চলে যাবো খুব তাড়াতাড়ি। এটা মায়ের ইচ্ছাতেই। আমি চাইনা আমাকে নিয়ে কোনোদিনও আফসানার আফসোস হোক। তাই আজ আসলাম এটা জানাতে। আমি আফসানার যোগ্যই না। ভালোবাসার জন্য কিছু করতে পারিনি আমি। সম্পূর্ণ ব্যর্থ প্রেমিক।
.
তার দিকে তাকালো আফসানা। বেশি নয়! কয়েকমাসের সম্পর্ক তাদের। এই কয়েকমাসেই অনেকটা ভালোবেসে ফেলেছিলো সে সাদেক কে। কিন্তু সাদেক হয়তো সম্পর্ক টা নিয়ে এতোটাও সিরিয়াস ছিলোনা যতোটা আফসানা ছিলো!
.
সাদেক বললো-
মনোমালিন্য করে সম্পর্ক শেষ করার কি দরকার বলো? এমন ভাবে সম্পর্ক টা শেষ করি, যাতে পথে কোনো সময় দেখা হলে দুটো কথা বলতে পারি দুজনে। ভুল কিছু বললাম?
.
আফসানা মুখে হাসি এনে বললো-
না।
-ক্ষমা করে দিয়েছো তো?
-হু।
-সুন্দর লাগছে তোমাকে।
-ধন্যবাদ।
-আজ আসি তাহলে।
.
খুশবু বললো-
খেয়ে যাও?
-নাহ ভাবী। অন্য কোনোদিন। আজ আসি।
.
সাদেক চলে যাচ্ছে। নীরবে দাঁড়িয়ে তার চলে যাওয়া দেখছে আফসানা।
আফসানার দিকে তাকিয়ে আছে আরহাম।
আফসানার কষ্ট হচ্ছে কিনা বোঝার চেষ্টা করছে সে।
তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা খুশবুর চোখের পানি স্পষ্ট দেখতে পেলো আরহাম।
নিশ্চয় ফারাজকে মনে পড়ছে তার। এভাবে হয়তো ফারাজও তার জীবন থেকে চলে গিয়েছিলো
.
.
অনুষ্ঠান শুরু হয়েছে বেশ কিছুক্ষণ হলো। হঠাৎ ফোন এলো আরহামের। ফাহিমের ফোন এসেছে।
-হ্যালো দোস্ত?
-হু ফাহিম বল?
-আফসানার একটা ছবি তুলে দে।
-তোর তো সাহস কম না! আমার বোনের ছবি চাস?
-তোর বোন যে আমার হবু বউ।
.
দুজনেই হেসে উঠলো। আরহাম বললো-
আচ্ছা দিবো।
-এটা কিন্তু ঠিক না আরহাম।
-কি ঠিক না? ছবি তো দিবোই বললাম।
-সেটা নয়। বোনের অনুষ্ঠানে বসে থাকলে হবে? আজ যে তোর বেস্ট ফ্রেন্ডেরও হলুদের অনুষ্ঠান এটা ভুলে গেলি?
-না ভুলিনি। এদিকে সবটা সামলাতে হচ্ছে।
-ওসব বাহানা ছাড়। আমার ফ্রেন্ড আমাকে হলুদ লাগাবে ব্যাস! আমি আর কিছু শুনতে চাইনা।
-ওকে বাবা ওকে! আমি আসবো।
-আগে ছবিটা দিস কেমন।
-কিসের ছবি!
-ভুলে গেলি?
.
আরহাম হেসে বললো-
দিচ্ছি।
.
ফাহিমের কাছে ছবি আসতেই তা দেখতে থাকলো সে।
হলুদের সাজে অনেক বেশি সুন্দর লাগছে আফসানাকে।
ছবির দিকে তাকিয়ে সে নিজের মনে বললো-
ভালোই হলো সাদেক নামক আপদটা বিদেয় হয়েছে। নাহলে আমার স্বপ্নটা স্বপ্নই থেকে যেতো।
.
.
.
বিয়ে নিয়ে একটা মেয়ের অনেক স্বপ্ন থাকে। আফসানারও ব্যতিক্রম নয়। লাল টকটকা নয়, খয়েরী রঙের একটা লেহেঙ্গা পরে বিয়ের পিড়িতে বসার ইচ্ছে ছিলো তার। এই ইচ্ছের কথা ফাহিমকে জানিয়েছিলো সে। ফাহিমও তার ইচ্ছেটা পূরণ করেছে। আফসানাকে সাথে নিয়েই বিয়ের বাজার সব সেরেছে সে৷ এমনকি আফসানার পছন্দেই নিজের সেরোয়ানী টাও সে পরেছে।
এসব ভেবেই মুখে হাসি ফুটলো আফসানার। এতোটা সুখে থাকার যোগ্য তো সে!
-যাওয়া যাক এবার আফসু?
.
খুশবুর মুখে কথাটি শুনে আফসানা বললো –
হু।
.
আফসানাকে নিয়ে বিয়ের স্টেজের দিকে এগিয়ে এলো খুশবু।
আরহামের দৃষ্টি তাদের দিকে। পৃথিবীর সবচেয়ে দুজন সুন্দরী রমনী হাঁটছে, এমনটাই লাগছে তার কাছে। একজন তার বোন আরেকজন সহধর্মিনী।
.
একটু পরেই আগমণ ঘটলো ফাহিমের। কি সুন্দর টাই না লাগছে আফসানাকে বিয়ের সাজে! তাকে দেখে যেনো চোখ ফেরাতে পারছেনা সে।
এদিকে আরহামের পাশে এলো খুশবু।
আরহাম বললো-
এতোক্ষণে আমাকে মনে পড়লো?
-ভুলেও যাইনি।
.
তাদের পাশে এলো খুশি ও অনন্ত।
খুশি বললো-
একটা সেলফি হয়ে যাক?
.
আরহাম হেসে বললো-
এটার পরেই তোমার আর অনন্তের টার ব্যবস্থা করবো।
-আপনি কি করে জানলেন?
-তোমার আপুর কাছে ধরা যেদিন খেয়েছো সেদিনই দেখেছি। অনন্ত কে কিন্তু আমারো বেশ পছন্দ।
.
অনন্ত মৃদু হেসে বললো-
ধন্যবাদ ভাইয়া।
.
.
.
বিয়ে সাদির ধকলে অনেকটা ক্লান্ত আরহাম।
মনেহচ্ছে অনেক ঘুম হবে তার। ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এসেই বিছানায় শরীর টা এলিয়ে দিলো আরহাম।
খুশবু আগে থেকেই শুয়ে ছিলো।
আরহামের দীর্ঘশ্বাসের শব্দ শুনতে পেলো সে ।
আরহামের উদ্দেশ্যে সে বললো –
আফসানাকে মিস করছেন?
-কি করে বুঝলে?
-বুঝেছি।
-অনেক বেশি করছি। একমাত্র বোন আমার। কিন্তু কি করবো! এটাই যে নিয়ম।
-হু।
-যাক, ঘুমাও। তোমার উপরেও কম ধকল যায়নি।
-আপনিও ঘুমান।
.
.
রাত দুটো। কারো ফুপিয়ে কান্নার শব্দ কানে আসলো আরহামের।
প্রথমে উঠতে না চায়লেও খুশবুর কথা মনে হতেই উঠে পড়লো সে।
খুশবুকে দেখতে পেলোনা। তাহলে কি সে কাঁদছে!
কষ্ট লুকোনোর জন্য মেয়েটি তার পাশ থেকে সরে গেলো!
বারান্দার দিকে এগিয়ে গেলো আরহাম। কিন্তু খুশবুর হাতে ফোন দেখে থেমে গেলো সে। সে কি কাউকে ফোন দিতে চায়ছে?
আরহাম বারান্দার ভেতরে প্রবেশ করলোনা আর। বাইরে বেরিয়ে এসে কান পেতে দেয়াল ঘেষে দাঁড়িয়ে রইলো।
আরহামকে অবাক করে দিয়ে খুশবু কথা বলতে থাকলো কান্নাজড়িত কণ্ঠে –
কেনো চলে গেলে তুমি? আমি যেতে চাই তোমার কাছে। সাথে নিয়ে যাও আমাকে প্লিজ।
.
খুশবুর মুখে এসব কথা শুনে থমকে গেলো আরহাম।
তার মানে ফোনে সে ফারাজের সাথেই কথা বলছে!
.
চলবে
.
বি:দ্র: গত পর্বে ফাহিমের জায়গায় ভুলবশত সাদেক লিখে ফেলেছিলাম 😷