#স্বপ্নের_চেয়ে_মধুর❤️
লেখাঃ সুমাইয়া ইসলাম মিম

পর্ব-দুই

.
বৃষ্টিস্নাত এক দিনে খালি পায়ে রাস্তায় হেটে চলেছে বেলা। সে একা নয় তার পাশে তার হাত ধরে হাটছে সাদা শার্ট পরিহিত এক যুবক। বেলা তার কাজল কালো চোখ দিয়ে তার পানে তাকাতেই ছেলেটা মুচকি হাসলো। কি স্নিগ্ধ সেই হাসি! বেলা তাকিয়ে থাকলো। তার হৃদয় কাঁপছে হাসি দেখে। ফ্যালফ্যাল দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলো। তা দেখে ছেলেটি একটু কাছে এগিয়ে এলো তার।

-“কি ম্যাডাম? কি দেখেন ওভাবে?”

বেলা আনমনেই উত্তর দিল,

-“আমার চোখের তৃষ্ণা।”

ছেলেটি বিস্তর হাসলো। বেলার হাতটা আরেকটু শক্ত করে ধরে বলল,

-“আমি তো আপনারই মায়াবী কন্যা!”

-“সামনে আসছেন না কেন? এই দেখেন আপনার জন্য কাজল পড়তে শুরু করেছি। কাজল দিলেই আপনাকে অনুভব করতে পারি আমি।”

-“আসব খুব শীঘ্রই। ”

কথাটা বলেই ছেলেটা এগিয়ে এসে বেলার কপালে ঠোঁটের স্পর্শ দিল।

হকচকিয়ে ঘুম থেকে উঠে গেল বেলা। আবার সেই স্বপ্নপুরুষ। তার মাথাটা কেমন ভার ভার লাগছে হয়তো হকচকিয়ে উঠার জন্য। বেলা আশেপাশে তাকালো চট্টগ্রাম পৌঁছাতে আর বিশ মিনিট এর মতো লাগবে। বেলা নিজেকে গুছিয়ে নিল। ব্যাগটা হাতে নিয়ে সিট থেকে উঠে দরজার কাছে দাড়ালো। তার ভালো লাগছে। খুবই খুশি লাগছে তার। স্বপ্নটা একদম স্বচ্ছ ছিল। আচ্ছা সত্যিই কি তার স্বপ্নপুরুষ তার জীবনে আসতে চলেছে? ভেবেই হেসে উঠলো বেলা। একটা স্বপ্নের জের ধরে সে কি কি ভেবে চলেছে। যাকে কখনো বাস্তবে দেখেই নি সে কিভাবে আসবে তার জীবনে? বেলা হেসে উঠলো আনমনে। স্বপ্নে আসা এক পুরুষের জন্য সে রোজ কাজল দেয় চোখে। আগে মোটেই পছন্দ করতো না কাজল দেওয়া। কিন্তু তার স্বপ্ন পুরুষটি বলা মাত্রই যেন কাজল তার প্রিয় হয়ে উঠলো। তবে কাজল কালো চোখ দেখে তার মা ভীষণ খুশি হয়েছিলেন। গালে হাত দিতে বলেছিলেন,

-“এইবার একদম পারফেক্ট আমার বেলা। তুই জানিসও না তোর মিষ্টি হাসির সাথে এই কাজল রাঙ্গা চোখ দুটি কি মায়াবী লাগছে!”

বন্ধুদের আড্ডায় সেভাবেই গিয়েছিল বেলা। তাকে দেখে সবাই হাসলো, তবে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে ছিল রাফাত। তার প্রেয়সীকে দিন দিন তার কাছে ভীষণ স্নিদ্ধ লাগে। কাছে পেতে ইচ্ছে হয় তার। রাফাত হেসে দিয়ে বেলাকে বলে,

-“বেলা! তোর এই রূপে আমি জ্বলে যাচ্ছি। একটু মুক্তি দিবে কি? কেন তোমার এই সর্বনাশী রূপে এখানে এসেছো? মারতে চাও?”

সবাই কথাটাকে হেসে উড়িয়ে দিলেও রাফাত কথাগুলো মন থেকেই বলেছিল। রাফাতকে খোঁচা মারলো বাঁধন।

-“তাই নাকি রে! একদম জ্বলে যাচ্ছিস? এবার তোর চল্লিশা আমরা খাবোই তবে!”

সবাই মজার ছলেই কথা বলছিল তবে রাফাতের ধ্যান জ্ঞ্যান ছিল বেলার কাছে।

আগের কথা মনে আসতেই বেলার মন খারাপ হয়ে গেল। কেন পারলো না রাফাত ভালো বন্ধু হতে? কেন এইভাবে তাকে অপমান করলো?

ট্রেন থামলো স্টেশনে। বেলা ধীরেসুস্থে নামলো। এই শহরটাকে সে খুবই পছন্দ করে। সুযোগ পেলেই চলে আসে এখানে, তবে কাউকে না জানিয়েই। এইভাবে পালাতে তার যেন বেশ লাগে। বেলা একটা সিম কিনে তার ফোনে লাগিয়ে নিল। ব্যাগ খুঁজে একটা কাগজ বের করলো। লিখে রাখা নাম্বারটি ফোনে নিয়ে কল দিলো সে। বেশ কয়েকবার রিং বাজতেই ফোন তুলল অপরপাশের জন।

-“হ্যালো!”

-“হ্যালো! ঝুমা আপু, আমি বেলা বলছিলাম।”

-“আরে বেলা তুমি! কেমন আছো?”

-“আপু তুমি কি বাসায় আছো?”

-“হ্যাঁ। কি হয়েছে বেলা? তোমাকে চিন্তিত লাগছে খুব।”

-“আপু আমি তোমার বাসায় আসতে চাইছি।”

-“অবশ্যই! তুমি কি এখন চট্টগ্রামে?”

-“হ্যাঁ আপু মাত্রই নামলাম।”

-“আচ্ছা চলে আসো।”

বেলা ফোন কেটে দিয়ে হাসলো। এখানে যে ঝুমা আপু থাকে তার বাবা মা ভুলে গেছে। ঝুমা সম্পর্কে বেলার মামাতো বোনের বান্ধবি হয়। বেলাকে চিনে বিধেয় কোন সমস্যা হয় নি। এর আগেও চট্টগ্রাম এসে বেলা ঝুমাদের বাসায় থেকেছে। তাই বিনা পেরেশানিতে সে ঝুমার বাসায় যেতে পারবে। ঝুমার ছোট্ট একটা ছেলে আছে নাম সোহান। ঝুমার স্বামী প্রবাসী, তাই বেলা নিশ্চিন্তে থাকবে সেথায়। আজ থেকে তার নতুন পথচলা শুরু হলো ভাবতেই ভেতর থেকে এক দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো।

.
ভোর হতেই রাফাতের কানে এলো বেলা বাসায় নেই। মিসিং! খবরটা শুনেই যেন ভয়ংকর হয়ে উঠলো সে। চোখদুটো লাল হয়ে এসেছে। সে এতো লোক বসিয়েও যদি তার প্রেয়সীর খেয়ালই না রাখতে পারে তবে কেমন প্রেমিক সে? বেলা ছিল তাদের গ্রুপের সবচেয়ে বিচক্ষণ একটা মেয়ে। তাই সে পাহারায় বসিয়েছিল যেন পালাতে না পারে। কিন্তু কি হলো সেই তো পালিয়ে গেল সে। বেলা যে বেশ দক্ষতার সাথে পালিয়েছে বুঝতে বাকি রইলো না তার। কোথায় খুঁজবে এখন সে বেলাকে। আজ বিয়ের দিন কনে উধাও? বিষয় তাকে ভীষণ পোড়াচ্ছে। বেলাকে সে ঠিক খুঁজে বের করবে। আর তার কাছে বন্ধীও করবে। রাফাতের সামনে বসে আছে বেলাল ও আদ্রিতা। রাফাত তাদের যথেষ্ট সম্মান করে। তাই ভালোভাবেই জিজ্ঞাসা করলো,

-“দেখুন আংকেল! বেলাকে আমি ভালোবাসি। কেন আপনারা এতো ভয় পান আমাকে? আমি বেলাকে রানীর মতো রাখবো। আংকেল প্লিজ বলেন বেলা কোথায়? আপনারা জানেন আমি জানি!”

বেলাল বেশ বিচক্ষণভাবেই উত্তর দিল,

-“আমি জানি তুমি বেলাকে ভালোবাসো। আর আমরাও তো তোমার সাথেই ওর বিয়েটা দিতে রাজি হয়েছিলাম। কিন্তু বেলা পালিয়ে যাবে তা আমি ভাবতেও পারি নি। আর কোথায় গেছে তা আমি এবং আমার স্ত্রী কেউই জানি না। আমরা ঘুমোচ্ছিলাম।”

রাফাত খুব ভালো করেই বুঝলো এখান থেকে সে কোন প্রকার ক্লু পাবে না। তাই জোরে দরজায় লাথি দিয়ে বেরিয়ে গেল রুম থেকে। সে খুব ভালো করেই বুঝতে পেরেছে বেলার পক্ষে একার পালিয়ে যাওয়াটা একদমই অবাস্তব। তবে যে সেচ্ছায় পালায় তাকে খুঁজে পাওয়ার সাধ্যি কার! তবে রাফাত হাল ছাড়বে না সে বেলাকে খুঁজে বের করবেই। জিদে মুষ্ঠিবদ্ধ করলো রাফাত। দরজার আড়ালে বেলার পালিয়ে যাওয়ার কথাটা শুনতেই যেন ঠোঁটে হাসি ফুটলো হুমায়রার।

.
ভাবতে ভাবতে রাস্তায় হাটছিল বেলা। হঠাৎ কারো ধাক্কা গেলে পড়ে গিয়ে ব্যাথাও পেল খুব সে। আহ করে উঠলো। লোকটি বেলাকে একবার দেখে নিয়ে খুব করুণ সুরে বললো,

-“আই এম সো সরি মিস! আমি খেয়াল করি নি একটু তাড়া ছিল তো। সরি এগেইন।”

কন্ঠটা বেশ চেনা মনে হতেই বেলা তাকাতে চাইলো তবে বিধিধাম! লোকটা তাড়াহুড়ো করে যাচ্ছে, বেলা চেষ্টা করলো তারা চেহারা দেখার। কিন্তু সে ব্যর্থ। তবে লোকটিকে কেউ সম্বোধন করলো,

-“স্পর্শ! তাড়াতাড়ি আয় বেটা!”

লোকটি আসছি বলেই ছুটে গেল সেথায়। বেলা কনুই ধরে ফ্যালফ্যাল চোখে তাকিয়ে রইলো। বেলা নিজেই উঠে আনমনে বলল,

-“অদ্ভুত তো!”

.
ঝুমার বাসায় গিয়ে বেলা তাকে সবটা জানালো। ঝুমাও বেশ চিন্তিত, এইটুকুনি মেয়ের জীবনে একি অগোছালো বিপদ! সে বেলাকে বলল তার সাথেই থাকতে। বেলা সায় দিয়ে বলল,

-“তুমি আমার জন্য এক মুক্ত জানালা ঝুমা আপু।”

ঝুমা হাসলো। মেয়েটাকে তার খুব পছন্দ। ছোট থেকেই দেখে আসছে তাকে। বেলা আবার তাকে বারণ করে দিল বেলার বোন রাদিয়াকে কিছু যেন না বলে। ঝুমাও সায় দিল এতে। সারাটাদিন বেলা ঝুমা আর সোহানের সাথেই কাটিয়ে দিল। এখন তাকে একটা ছোটখাটো চাকরি খুঁজতে হবে। যদিও কাজটা খুব একটা সহজ হবে না বলেই তার মনে হচ্ছে। এই হাজারও ঝামেলার মাঝেই হুট করে বেলার মনে এলো তার স্বপ্ন পুরুষটিকে। কেন যেন চোখে ভাসছে সে। চোখটা বন্ধ করতেই নজরে এলো সে। মুচকি হেসে তার কাছে এগিয়ে এসে মুখে পড়ন্ত চুলগুলো সরিয়ে দিল আনমনে। সে চোখ বন্ধ করেই যেন অনুভব করলো। হঠাৎই ভাবনার মাঝে মনে পড়লো ধাক্কা খাওয়ার কথা। লোকটা ধাক্কা দিয়ে কোন সৌজন্যতা না দেখিয়ে সরি বলেই গায়েব হয়ে গেল? কি আজব! তার মুখ থেকে বেরিয়ে এলো,

-“আজব পুরুষ! ”

(চলবে)..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here