#সেই_তো_এলে_তুমি
#পর্ব_২৯
#Saji_Afroz
তানিশা নিচে নামতেই তাকে কাছে ডাকলেন নওয়াজের মা৷ একটি লাল রঙের জামদানী শাড়ি তাকে দিয়ে বললেন, ভেবেছিলাম বাসায় তোকে বেড়াতে এনে এটি উপহার দেব। নিজের কাছে রয়ে গেছে। এটা নে।
.
তানিশা খালাকে ধন্যবাদ জানিয়ে শাড়িটা নিয়ে রুমে যায়। নওয়াজের মা জানেন, সে এখন এটি পরবে। অন্যসময় হলে হয়তো তাকে কয়েকটা কথা শোনাতেন। কিন্তু এখন সে খুশিমনে শাড়িটি নিয়েছে।
তানিশা নিজের কামিজ পালটে শাড়ি পরে নেয়। সাথে নিজেকে একটু সাজিয়েও নেয় সে। শাড়ির আঁচল ঠিক করতে করতে নওয়াজের কথা ভাবে।
এরইমধ্যে দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ শুনতে পায় সে। খুলে দেখলো নওয়াজ এসেছে। তানিশাকে এভাবে দেখে চমকে যায় সে। নওয়াজ বলল, কোথাও যাচ্ছ?
-নাহ। খালাম্মা শাড়িটা শখ করে দিয়েছেন। তাই তাকে দেখাতে পরলাম।
-ওহ! আসলে আলমারি তে আমার কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস ছিল।
-নিয়ে নিন।
.
এক বাড়িতে থাকলেও একই রুমে তারা থাকেনা। যদিও তানিশা নওয়াজের রুমেই থাকে। কিন্তু নওয়াজ অন্য একটি রুমে থাকা শুরু করেছে। সব জিনিস তো আর মুহুর্তেই সরানো যায় না। কাপড় ছাড়া তার অনেককিছুই এই রুমে আছে। যার কারণে তাকে এখানে আসতে হয়।
নওয়াজ আলমারি খুলে। তানিশা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল আঁচড়াতে থাকলো।
তাকে আড়চোখে দেখছে নওয়াজ। তানিশা নিতান্তই সহজ-সরল একটা মেয়ে। তার সামনেও সবসময় সাধারণ ভাবেই থাকতো। তাকে সাজলে যে এত সুন্দর লাগে নওয়াজ জানতো না। হয়তো খালাতো বোন বলে সেভাবে কোনোদিন খেয়ালও করেনি।
.
তানিশা ইচ্ছে করে পেছনে ব্লাউজের ফিতা খুলে দেয়। এরপর চুলে খোপা করে নেয়। ফিতা খোলার কারণে তার সাদা পিঠটা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। যেখানে চোখ গিয়ে আঁটকায় নওয়াজের। না কচাইতেও বারবার সেদিকে চোখ যাচ্ছে তার।
হঠাৎ নওয়াজের মা ডাক দেয় তানিশাকে। সে বেরুতে চাইলে নওয়াজ বলল, তোমার ফিতাটা ঠিক করে যাও।
-কিসের ফিতা?
-পেছনে।
.
তানিশা পিঠে হাত দিয়ে অবাক হওয়ার ভান করে বলল, ওহ ধন্যবাদ।
.
সে ফিতে বাঁধার চেষ্টা করতে থাকে। কিন্তু এমন ভাব দেখায় যেন সে পারছে না। নওয়াজ এসে বলল, আমি হেল্প করি।
.
এই বলে সে ফিতা বাঁধতে শুরু করে। তার হাঁতের ছোঁয়া তানিশার পিঠে লাগতেই কেঁপে উঠলো সে। স্বামীর একটু ছোঁয়াতেই যে পুরো শরীরে শিহরণ জাগিয়ে তোলে জানা ছিল না তানিশার।
এদিকে নওয়াজেরও খুব করে ইচ্ছে করছে তার সাদা পিঠটায় হাত বুলিয়ে দিতে। কিন্তু পরক্ষণেই নিজেকে সামাল দিয়ে প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে বেরিয়ে পড়ে সে।
তানিশাকে নিয়ে আগে কখনো তো এসব ভাবেনি সে। তবে এখন কেনো বাধ্য মনটাও অবাধ্য হয়ে যাচ্ছে?
.
.
বুশরাকে ডেকে আলিয়া খাতুন বললেন, কাল তৈরী হয়ে থাকিস।
-কেনো?
-তোকে দেখতে আসবে।
-মানে?
.
আলিয়া খাতুন শান্ত গলায় বললেন, তোর বাবা চায় দেশে এসে তোকে বিয়ে দেবে। এক পাত্রের সন্ধানও তিনি করেছেন। তিনি চায় তার ওই পছন্দের ছেলের সাথে তোর বিয়ে হোক। ওসব নিহির টিহির বাদ দে। তোর বোনকেও ঠকিয়েছে তোকেও ঠকাবে।
-আর তানিশা? সে কী তাকে ঠকায়নি?
.
এই মুহুর্তে বুশরার সাথে তর্কে তিনি যেতে চান না। ঠান্ডা মাথায় সব সামলাতে হবে। এই ভেবে তিনি বললেন, বোন যার সাথে প্রেম করেছিল তাকেই কেনো বিয়ে করতে হবে? এসব প্রেম ভালোবাসা তুইও বাদ দে। বাবার পছন্দকে গুরুত্ব দে। উনি এসে যদি জানতে পারে, তুই তার পছন্দকে গুরুত্ব দিচ্ছিস না কী ভাববে বল তো? সৎ মা এর সাথে ঝগড়া করে আসতেছেন তিনি।
-প্রেম ভালোবাসা আমি করি না। পরিবারের অমতে বিয়েও করব না। তবে হ্যাঁ, বাবা আসুক। তখন আমি পাত্র পক্ষের সামনে যাব। এর আগে না।
-কিন্তু পাত্রের মা তোকে দেখার জন্য অস্থির হয়ে আছে।
-তবে শুধু তাকেই আসতে বলো। এখন কোনো ছেলের সামনে আমি যেতে ইচ্ছুক না। বাবা আসুক আগে।
.
এই বলে বুশরা নিজের রুমে যায়। তার পিছু নেয় নাফিশা। সে এসে বলল, তুমি সত্যিই বিয়ে করে নেবে? কিন্তু নিহির ভাই যে তোমাকে বিয়ে করতে চায়।
.
নিহির যে ওসব মিথ্যে বলেছিল তা বলল না বুশরা। শুধু বলল, বাবা আসুক। বাবার ইচ্ছেকে অবশ্যই প্রাধান্য দেব আমি। সে আমার জন্য এতদূর থেকে আসবেন। দেওয়া উচিত নয় কী?
-তুমি বলেই পারছ। এতদিন যে বাবা একটিবারের জন্য কথাও বলেনি তার জন্য তুমিই পারছ এসব করতে।
-মা বাবা সবই আছে তোর। তাই আমার কষ্ট বুঝবি না। বাবাকে দেখার জন্য যে কতটা অস্থির হয়ে আছি আমি এটাও বুঝবি না।
.
নাফিশাও জানেনা এসব আলিয়া আর তায়শার সাজানো নাটক। বুশরার বাবা আসবেন এমন কিছুই বলেননি। শুধু বুশরার খেয়াল রাখতে বলেছেন। তারা তার কথা বলে বুশরাকে ইমোশনাল করে অন্য কোথাও বিয়েতে রাজি করতে চায়। যার মাধ্যমে নিহির ও তার মাঝে ফাটল সৃষ্টি হয়। এসব সম্পর্কে জানেনা নাফিশাও।
.
.
রাতের খাওয়া দাওয়া শেষে যে যার রুমে চলে যায়। সবাই যখন খেতে বসেছিল, তানিশা এক ফাঁকে নওয়াজের রুমে গিয়ে তার ইয়ারফোন টা নিয়ে আসে।
কাজটি সে ইচ্ছে করেই করেছে। কারণ সে জানে, নওয়াজ রাতে ইয়ারফোন কানে গুজে গান শুনে শুনে ঘুমোয়। ইয়ারফোন না পেয়ে খুঁজতে সে নিশ্চয় এখানেই আসবে। তানিশা চটজলদি ফ্রেশ হয়ে নেয়। এরপর একটি হালকা গোলাপি রঙের নাইটি পরে শুয়ে পড়ে৷ দরজাটা শুধু ঠেলে রেখেছে সে। বন্ধ করেনি।
নওয়াজের ইয়ারফোন কানে গুজে দেয় তানিশা।
একটু পর নওয়াজের আওয়াজ শুনতে পায়। মা বোনকে চেঁচিয়ে জিজ্ঞেস করছে, তার ইয়ারফোজ নিয়েছে কি না। তাদের কাছে না পেয়ে রুমে আসে নওয়াজ। দরজা খোলা দেখে ভেতরে প্রবেশ করে। তাকে দেখে গান প্লে করে ঘুমের ভান করে থাকে তানিশা।
নওয়াজ দেখলো তানিশা শুয়ে আছে। কিন্তু সে যে এভাবে ঘুমোয় তা নওয়াজের জানা ছিল না। স্লিভলেস নাইটি পরে গুটিসুটি মেরে ঘুমোচ্ছে তানিশা। দখিনার জানালা দিয়ে বাতাস আসছে। সেই বাতাসে তার চুলগুলো এসে মুখে ও কপালে লেপ্টে আছে। নওয়াজ তার কাছে যায়। আলতোভাবে চুল সরিয়ে দেয়। দেখলো তার ইয়ারফোন তানিশার কানে। সে নেওয়ার চেষ্টাও করলো না। মেয়েটার ঘুম ভেঙে যাবে।
নওয়াজ সরে যেতে চাইবে ঠিক তখনি তানিশার বুকের দিকে চোখ পড়ে তার। বুক থেকে কাপড় অনেকটা সরে গেছে। যদিও এটা ইচ্ছেকৃত ভাবে তানিশাও করেনি। তবে সে বুঝতে পারছে নওয়াজ তাকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। ভীষণ লজ্জা পাচ্ছে তার। কাপড়টি ঠিক করতে পারছে না সে। কারণ নওয়াজ বুঝে ফেলবে তার অভিনয়।
নওয়াজ চোখ সরিয়ে নেয়। পাশে আলনায় থাকা তানিশার একটি ওড়না নিয়ে তার বুকের উপরে দিয়ে দেয়। এরপর জানালাটা বন্ধ করে সে রুম ছেড়ে বেরিয়ে যায়।
তানিশা শোয়া থেকে উঠে পড়ে৷ নওয়াজের প্রতি তার সম্মান বেড়ে গেল। চাইলেই সে তানিশাকে আরও খুটিয়ে দেখতে পারতো, স্পর্শ করতে পারতো কিন্তু এমনটা সে করেনি। উলটো ওড়না জড়িয়ে দিয়ে গেল। ঘুম ভাঙবে বলে ইয়ারফোন টাও নেয়নি, বাতাস বইছে বলে জানালা বন্ধ করেছে। কতকিছু খেয়াল করে সে! এমন একটা ছেলেকে নিজের কাছে সারাজীবন রাখার জন্য একটু বেহায়া হওয়াই যায়।
.
.
বুশরা যাওয়ার পর থেকে তার কথা সারাক্ষণ মনে পড়ে নিহিরের। কই! আগে তো সারাক্ষণ এই বাড়িতেই থাকতো। কখনো তো এমনটা অনুভব করেনি।
এখন দিনে একটাবার তার কণ্ঠ না শুনলে পুরো দিনটিই খারাপ কাটে নিহিরের। অস্থিরতা অনুভব করে সে।
এদিকে বিয়ের কথা শুনে চিন্তিত বুশরা। অন্যের ঘাড়ে আর কতদিন রইবে সে? সংসার জীবনে সবারই পা দিতে হয়। যদি সেখানে তার সুখের দেখা মেলে! বাবা নিশ্চয় তার খারাপ চাইবে না। এতদিন যোগাযোগ না করলেও তার খরচা দিতে ভোলেননি। তার জন্যই তো ফুফুকে এই বাড়িতে থাকতে দিয়ে তার দেখভাল করতে বলেছে। কিন্তু এসবের উপর থেকে যে তার বিশ্বাস উঠে গেছে। এত তাড়াতাড়ি সে বিয়ে করতে চায় না। আবার বাবাকেও দুঃখী করতে চায় না। এই বিষয়ে বরং বাবা আসলে তার সাথেই খোলামেলা কথা বলবে বুশরা। নিশ্চয় তিনি তার মেয়েকে বুঝবেন।
.
.
রাতে নওয়াজের ফোনে ঘুম ভেঙে যায় তায়শার। নাফিশা না দেখে মতন সে বারান্দায় আসে। এত রাতে নওয়াজের ফোন!
সে রিসিভ করতেই নওয়াজ ওপাশ থেকে বলল, তোমার মা না কি বুশরার জন্য পাত্র দেখছেন?
-কে বলল?
-আমার এক বন্ধু মেসেজ দিয়ে রেখেছিল। আমি তা দেখিনি। ঘুম আসছিল না বলে ফেবুতে যাই। মাত্র দেখলাম। দেখেই আমার মাথা গরম হয়ে গেল। সে বুশরার খবরাখবর নিতে আমাকে মেসেজ দিয়েছে৷ ঘটনা এতদূর কীভাবে গেল? তুমি আমাকে আবারও ঠকাচ্ছ?
-নওয়াজ ভাই! বুশরা আপনারই হবে। এসব শুধু নিহির আর ওর মধ্যে ফাটল সৃষ্টি করার জন্য করছি। তাছাড়া মা তো আমাদের প্লানের কথা জানেনা। যেভাবে চলছে চলতে দিন। আগে নিহির থেকে তো ওকে ছাটাই করি। এরপর বাকিটা আপনার জন্যও সহজ হবে। নাহলে নিহির আপনাকে ছেড়ে দেবে ভেবেছেন?
.
নওয়াজ একটু ভেবে বলল, অন্য কোথাও বুশরার বিয়ে হবে না তো?
-উহু! একদমই না।
.
ফোন রেখে লম্বা একটা শ্বাস নেয় তায়শা। ওদের মধ্যে ফাটল সৃষ্টি না করলে সে কীভাবে নিহিরের মনে আবারও জায়গা করবে! তাই বুশরাকে নওয়াজের হাতে তুলে দেওয়ার আগে এটা করাও জরুরী।
.
চলবে