#সেই_তো_এলে_তুমি
#পর্ব_২৩
#Saji_Afroz
খুব দ্রুতই যেন কাঙ্ক্ষিত সময়টা চলে এল। আজ নিহির ও তায়শার এনগেজমেন্ট হবে। যদিও পারিবারিকভাবে হচ্ছে। তবুও নিহির তায়শাকে তার মনের মতো করে সাজতে বলেছে। তাকে নিয়ে শপিং এ গিয়েছে। তায়শা নিজের জন্য সাদা একটি গাউন নেয়। সেই গাউনে তাকে কেমন লাগে তা দেখার জন্য অস্থির হয়ে আছে নিহির।
নিহির স্যূট পরে নিখিলের কাছে আসে। বরাবরের মতোই নিখিল তৈরী হতে গিয়ে রুমটা অগোছালো করে রেখেছে। নিহির বলল, নতুন তো নিয়ে দিলাম। সেটাই পর না।
-আর বলো না ভাইয়া। ভালো লাগছে না সেইটা আবার।
-আচ্ছা ঠিক আছে। তোর ইচ্ছে মতো পরে নে। আমার ভাইকেও সেই লাগতে হবে।
-হু। আচ্ছা ভাইয়া, তোমার শালিকা আছে।
-আছে একজন।
-বাহ। এইবার জমবে!
-জমাবি অবশ্যই।
-আমার যদি তাকে ভালো লেগে যায়?
-আমার মনেহয় দুই ভাই একই নৌকায় পা দেওয়া ঠিক হবে না। মানে একই ঘরে বিয়ে করা ঠিক হবে না।
-উহু ভাইয়া! ভাবী যখন সুন্দরী তার বোনও হবে। যদি হয় আমি চান্স মিস করব না।
-সেই দেখা যাবে। তৈরী হয়ে নে তাড়াতাড়ি।
.
.
সেনোয়ারা বেগমকে শাড়ি পরাতে ব্যস্ত বুশরা। তিনি শুনেছেন, বুশরা ভালো শাড়ি পরাতে জানে। অবশ্য সেদিন তার কুচি ঠিক করা দেখেই এটা তিনি বুঝতে পেরেছেন।
শাড়ি পরানোর পর তাকে ধন্যবাদ জানায় সেনোয়ারা বেগম। এরপর বললেন, তুমি চাইলে আমাদের সাথে যেতে পারো।
-একেবারে বিয়েতে যাব ম্যাডাম৷ আপনি বলেছেন এতটুকুতেই খুশি হয়েছি।
.
এই বলে রুম থেকে বেরুই বুশরা৷ সে জানে তিনি মন থেকে কথাটি বলেননি। তাছাড়া ওখানে যাওয়ার কোনো ইচ্ছেও বুশরার নেই।
হঠাৎ নিখিলের কণ্ঠস্বর শুনতে পেয়ে তার রুমে ছুটে এলো বুশরা। সাথে বাকিরাও এলো। নিখিল প্রায় কেঁদে জানালো, তার যে বন্ধুটি এক্সিডেন্ট করেছিল তার মৃত্যু হয়েছে।
একথা শুনে সকলে বেশ দুঃখ অনুভব করলো। নিহির তাকে শান্তনা দিয়ে বলল, আল্লাহ এতটুকুই তার সময় নির্ধারণ করেছেন। তুই ভেঙে পড়িস না। গাড়ি নিয়ে যা। এই সময়ে তোর ওখানে থাকা প্রয়োজন।
.
ভাইকে জড়িয়ে ধরে কিছুক্ষণ নীরবে চোখের পানি ফেললো নিখিল। এরপর তাদের বিদায় জানিয়ে বেরিয়ে গেল হাসপাতালের উদ্দেশ্যে।
সেনোয়ারা বেগমকে বলল নিহির, আমাদেরও বেরুনো উচিত।
-নিশ্চয়।
.
মা এর খেয়াল রাখতে বলে বুশরাকে তারাও বেরিয়ে পড়ে।
.
.
নিহিরদের অনেক আগেই রেস্টুরেন্টে চলে এসেছে তায়শা ও তার পরিবার। এতবড়ো রেস্টুরেন্টে তায়শা আগে আসলেও আলিয়া খাতুন, তার স্বামী ও নাফিশা প্রথমবার এসেছে।
আলিয়া খাতুন মিনমিনে স্বরে তার স্বামীকে বললেন, আমাদের তায়শার জন্যে এখানে আসার ভাগ্য হয়েছে। ভালোই হলো আশিকের সাথে বিয়েটা হয়নি। কী বলো?
.
তিনিও তাল মিলিয়ে বললেন, ঠিকই বললে।
.
এদিকে তায়শাকে ছবি তুলে দিতে ব্যস্ত নাফিশা। খানিকবাদে তায়শা খাবার অর্ডার দেয়। নাফিশা বলল, উনারা না আসতেই এটা করছিস কেনো? আসুক না। তারা কী আয়োজন করেছে তাও তো জানিস না।
-খিদে পেয়েছে তো।
-বিল বেশি আসবে এখানে।
-ওসব ওরা সামলাবে।
.
খাবার আসতেই তারা এমনভাবে খেতে শুরু করলো, যেন অনেকদিন না খেয়ে ছিল! একমাত্র নাফিশা নির্বাক হয়ে তাদের কাণ্ড দেখছে।
এরইমধ্যে প্রবেশ করে নিহির ও তার চাচী। তারা খাওয়ার মধ্যে এতই মগ্ন ছিল যে, নিহিরদের উপস্থিতি টের পায়নি। নাফিশা তাদের দেখে দাঁড়িয়ে পড়লো। বুশরাকে ডেকে বলল, তারা এসেছে।
.
মুখের খাবার প্লেটে ফেলে তায়শাও তাড়াহুড়ো করে দাঁড়িয়ে পড়ে। সেনোয়ারা বেগমকে সালাম জানিয়ে বলল, আসলে খিদে লেগেছিল তো।
-ইটস ওকে। তোমার মুখে খাবার লেগে আছে। টিস্যু দিয়ে মুছে নাও।
.
নাফিশা তাকে সাহায্য করে। এদিকে তাদের দেখেও খাওয়া থামায়নি আলিয়ারা। সেনোয়ারা বেগম ওয়েটারকে ডেকে বললেন, আমার গেস্টদের জন্য স্পেশাল মেন্যু বুকিং দিয়ে রেখেছিলাম। ওসব দিলে না কেনো?
-ম্যাম তারা আপনার গেস্ট বুঝতেই পারিনি। তাই যা চেয়েছে দিয়েছি।
.
সেনোয়ারা বেগম তাদের উপরে খুবই বিরক্ত হলেন কিন্তু প্রকাশ করলেন না। ভেবেছেন আগে রিং পরানো শেষ করবে। পরে খাওয়া দাওয়ার মাধ্যমে গল্পগুজব করা যাবে। কিন্তু এদের বোধহয় এনগেজমেন্ট থেকেও খাওয়া নিয়ে তাড়া বেশিই!
.
সেনোয়ারা বেগম রিং পরিয়ে নিতে বললেন। আলিয়া বলল, এইভাবে খাওয়া রেখে উঠলে খাবারের অপমান হবে। আপনারা বসুন। শেষ করছি।
.
খাওয়া শেষ করে নিহিরকে ভালো করে দেখে তিনি বললেন, মাশাআল্লাহ! চাঁদের টুকরো একটা।
.
নিহির হেসে ধন্যবাদ জানায় তাকে। এরপর তায়শাকে রিং পরিয়ে দেয়। সকলে করো তালি দিয়ে উঠে। এইবার সেনোয়ারা বেগম বললেন, এখন তায়শা পরাবে নিহিরকে।
.
আলিয়া বলল, বেশ তো! পড়াক।
.
এই বলে সেনোয়ারার দিকে তাকিয়ে থাকে। তিনি বললেন, রিং দিন মেয়েকে। ছেলেকে পড়িয়ে দিক?
-সে কী! রিং আনেননি?
.
সেনোয়ারা অবাক হয়ে বলল, রিং আমি কেনো আনব? তায়শার জন্যে তো আনলাম। নিহিরের টা আপনারা আনবেন৷ আর এটাকেই তো এনগেজমেন্ট বলে তাইনা?
.
তিনি সেনোয়ারার থেকেও বেশি অবাক হয়ে বলল, সবকিছু আপনি করবেন বলেছেন। আমি ভাবলাম এত টাকা আপনাদের রিংও আপনারাই আনবেন।
.
মেজাজ খারাপ হলেও নিজেকে সামলে নিয়ে তিনি বললেন, তাহলে আর কী করার! দ্বিতীয় দফা খেয়ে নিন। পরে কখনো যদি ইচ্ছে হয় মেয়ের জামাই এর হাতে একটি রিং পরিয়ে দিয়েন।
.
নিহির চাইলেই এখুনি রিং কিনে আনতে পারে। কিন্তু এটা তার চাচী পছন্দ করবে না ভেবে সে তা করলো না। এদিকে তায়শা নিহিরকে ইশারা করে বারবার এটাই বুঝাচ্ছে, যেন বের হয়ে একটা রিং কিনে আনে। কিন্তু সে তা করেনি। কথা ঘুরানোর জন্য বলল, আমারও খিদে পেয়েছে। আসুন খেয়ে নিই।
.
সেনোয়ারা বললেন, আমাদের জন্য স্পেশাল টেবিল করা হয়েছে। ওখানে যাওয়া যাক?
.
সবাই সেদিকে যাচ্ছে। নিহির ও তায়শা পাশাপাশি যাচ্ছে। তখনি নাফিশা তাদের মাঝখানে এসে বলল, আহারে! আজকে হতে হতেও তোমাদের এনগেজমেন্ট টা সম্পূর্ণ হয়নি।
.
একথা শুনে তায়শা হেসে বলল, ধুর! রিং তো পেয়ে গেছি। যেকোনো একজনের হাতে থাকলেই হলো।।
.
এই বলে সে হেঁটে গিয়ে চেয়ার টেনে বসে পড়ে। তার পিছু নেয় নাফিশা। সেনোয়ারা বেগম এসে নিহিরকে নিয়ে একটু আড়াল হয়ে বললেন, দুইটা রিং ছেলে পক্ষ আনে কোথাও শুনেছ তুমি? জানিনা কেমন ফ্যামিলির সাথে নিজেকে জড়িয়ে ফেলছ। তায়শা তো স্মার্ট বেশ। সেও কী কিছুই জানেনা? অন্তত তোমাকে বলতে পারতো সমস্যা হলে!
.
নিহির লজ্জায় মাথা নিচু করে রাখে।
আসলেই তো! তায়শার যদি রিং নিতে সমস্যা হয় তবে সে এটা শেয়ার করতেই পারতো। কালই তো তাকে নিয়ে গাউন ও রিংটা নিলো নিহির। একবারও নিহিরের রিং এর কথা জিজ্ঞাসা করলো না। আর এনগেজমেন্ট হয়নি বলেও তার আফসোস নেই। নিজের ডায়মন্ডের রিং পেয়েই সে খুশি।
তায়শার খুশি কী এসবেই সীমাবদ্ধ?
.
.
রাত বারোটা পেরিয়ে যায়। নিখিল তার বন্ধুর বাড়ি থেকে নিজের বাড়ি ফিরে আসে। খালেকুজ্জামান দরজা খুলে দিলে নিজের রুমে আসে সে। নিখিল বেশ ক্লান্ত অনুভব করছে। তার মনটাও বিষণ্ণ। প্রিয় বন্ধুকে হারানোটা সহজে মেনে নিতে পারছে না সে। সবকিছু কেমন যেন লাগছে।
হতাশ হয়ে বিছানায় বসে রয়েছে নিখিল।
-আসব?
.
বুশরাকে দেখে ভেতরে আসতে বলল নিখিল। সে বলল, আপনি ঘুমাননি?
-আসেনি ঘুম। দাফন সম্পন্ন হয়েছে?
-হ্যাঁ। মানুষের জীবন কত অদ্ভুত তাইনা? একটা মিনিটের বিশ্বাস নেই জীবনের।
-আসলেই।
.
কিছুক্ষণ নীরব থেকে বুশরা বলল, ফ্রেশ হয়ে আসুন। ভালো লাগবে।
.
নিখিল গোসল সেরে আসে। দেখলো তার পড়ার টেবিলে খাবার সাজিয়ে রাখছে বুশরা। নিখিলকে দেখে সে বলল, নিশ্চয় কিছু খাননি সারাদিন। ভাত খেয়ে নিন।
.
নিখিলের আসলেই খিদে পেয়েছে। এত রাতে বলা ছাড়াও তাকে কেউ খাবার দেবে ভাবেনি।
সে বলল, ধন্যবাদ।
.
বুশরা যেতেই নিখিল খেতে বসে। তৃপ্তি নিয়ে খায় সে। খাবার নিশ্চয় বুশরাই করেছে। মেয়েটা ভালো রান্না করে।
কয়েকটা দিন কেটে যায়।
প্রিয় বন্ধুর শোকে নিখিল বেশ চুপচাপ হয়ে গেছে। তার জন্মদিন নিয়ে যে এত আয়োজন করা হচ্ছে, এই বিষয়েও সে অবগত নয়।
এদিকে সেনোয়ারা বেগম কাল জন্মদিনের অনুষ্ঠানে তায়শা ও নাফিশাকে আসতে বলেছে। তিনি ইচ্ছে করেই পুরো ফ্যামিলিকে বলেননি। কারণ তাদেরকে সেনোয়ারার পছন্দ না।
অপরদিকে তায়শা কাল নিহিরের বাড়ি দেখার জন্য অনেক বেশি উত্তেজিত। নিহিরের কাছে যা শুনেছে, বিশাল বড়ো তাদের বাড়ি। এতবড়ো বাড়ির বউ হবে ভাবতেই ভালো লাগছে তার। আজকের দিনটা যেন তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যায়, সেই কামনায় করছে তায়শা।
.
চলবে