#সুখ_সন্ধানী
পর্ব ১২
লেখিকা #Fabiha_Busra_Borno

ঠিক তখনই একজন দরজা খুলে ভিতরে আসে। আমিও পুর্ব পরিকল্পনামতো লোকটার ঘাড়ে ধারালো ছুরি দিয়ে এক টান মারি।সাথে সাথে ফিনকি দিয়ে রক্ত আমার চোখে মুখে ছিটে পড়ে। আমি বিন্দুমাত্র সময় অতিক্রম না করে আমার গায়ে জড়ানো চাদর দিয়ে লোকটাকে প্যাঁচিয়ে ফেলে দিই এবং দরজা ভালো করে আটকে দিলাম যেন বাইরে কোন শব্দ না যায়। তারপর হাতে আর বুকের বাম সাইডে আঘাতের পরে আঘাত করতে থাকি। গলার ভেতর থেকে কেমন ভয়ংকর ককানোর শব্দ বের হচ্ছে। হাত পা গুলো লাফাচ্ছে।

মুখের উপর চাদর থাকার জন্য সে আমাকে দেখেনি। অনেকক্ষন লাফানোর পরে নিস্তেজ শরীর এলিয়ে পড়ে মেঝেতে। আমি চাদর সড়াতেই দেখি চোখ গুলো অনেক বড় বড় করে রেখেছে। শুয়ো*** বাচ্চা এই চোখ দিয়ে কতশত মেয়ে এবং শিশুর দিকে তাকিয়েছে কে জানে। আমার রাগ যেন কমছে না। চোখ দুটো কুচিয়ে কুচিয়ে গর্ত করে দিলাম,, কেমন ঘনকালো পদার্থ বের হচ্ছে চোখ দিয়ে। লাশটি টেনে ওয়াশরুমের এক কোনে রেখে দিলাম। তারপর অন্য জনের জন্য অপেক্ষা করতে থাকি। কিন্তু দীর্ঘ অপেক্ষার পরে ও কারো কোনো সারা শব্দ পেলাম না।

অত্যন্ত সতর্কতার সাথে বাইরে এসে দেখি কোথাও কেউ নাই। আমি আবারও ওই ঘরে গেলাম, যেখানে সবাই হিসাব করছিলো। দেখলাম একজন হাত পা মেলে সুয়ে আছে। কিন্তু বাকি সবাই কোথায় দেখার জন্য অন্য ঘরে উঁকি দিয়ে দেখি যে ঘরে বাচ্চাদের রাখা হয়েছে সেখানে বাচ্চাদের খাবার দিচ্ছে। তারপর গেলাম পরের ঘরে। সেখানে ওই মেয়েটার সাথে একজনকে খুব ঘনিষ্ঠ অবস্থায় দেখলাম।

যে লোক ঘুমন্ত অবস্থায় আছে তার একটা ব্যবস্থা আগে করতে হবে ভেবে তারাতাড়ি এই ঘরে এসে ভিতর থেকে দরজা লাগিয়ে দিলাম। জীবনের প্রথম কাউকে জেনে বুঝে এমন ভাবে খুন করলাম। আবারও আরেকজনকে খুন করতে এসেছি। সব কিছু যেন ভালো ভাবে শেষ করে নিষ্পাপ বাচ্চাদের জীবন ফিরিয়ে আনতে পারি সেই পত্যাশায়।

পাশের সোফার উপর থেকে কুশন টা নিয়ে এক কুশন দিয়ে মুখ চেপে ধরে অন্য হাতে গলাতে এক কোপ মেরে দিলাম,, সাথে সাথে ঘরঘর শব্দ বেড়িয়ে আসছে গলার ভেতর থেকে। হাত পা ছড়াছড়িতে পাশের টেবিলের উপর থেকে মদের বোতল নিচে পরে ঝনঝন শব্দ হয়। আমি কোন শব্দ রেখে কোন শব্দ বন্ধ করবো তার কুল কিনারা পাচ্ছি না। একটা জীবন যেতে বেশ কিছুক্ষণ সময় লাগে। তারউপর আঘাত টা মনে হয় যায়গা মতো লাগে নি। বিছানা এমন ঘরের মেঝে রক্তাক্ত হয়ে গেছে। আমি ছুরিটা দিয়ে আবারও এলোপাতাড়ি আঘাত করি যেন খুব দ্রুত মারা যায়।

এমন সময় কেউ একজন দরজায় বারবার কড়া নেড়ে ডাকছে, বল্টু বল্টু বলে। ভয়ে আত্মা শুকিয়ে গেছে। আরেকটু সাবধানে কাজ করলে এমন মাঝপথে আমি ধরা খেতাম না।কেন এমন অসতর্ক ভাবে ভুল করলাম।
বাইরে থেকে আরো দুইতিন টা কণ্ঠে “”বল্টু দরজা খোল”” কথা গুলো অনবরত বলে চলছে। ভিতরে কোন গন্ডগোল হয়েছে তা উনারাও নিশ্চিত। তাই দরজা ভাঙার চেষ্টাতে ব্যাকুল উনারা। আমিও মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলাম,, আজ আমার মৃত্যু অবধারিত। তাই শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করবো মরার আগ পর্যন্ত এদের মধ্যে থেকে আরো দুইএক জন কে মারতে।

সব চেয়ে ছোট ছুরিটা আমার কোমড়ের পিছনে শাড়ির পাড়ের সাথে ভাজ দিয়ে রাখলাম। আর অন্য টা আমার হাতে নিয়ে দরজার ঠিক ডান পাশে দাঁড়িয়ে আছি।সর্বপ্রথম যে দরজা ভেঙে ভিতরে আসবে তাকেই আঘাত করবো। মারা যাক অথবা না যাক অন্তত আঘাত করে আহত করতে পেরেছি এটাতেও সুখ লুকিয়ে আছে। বারবার কালিমা পড়ছি আর অপেক্ষা করছি। এমন সময় দরজার ছিটকিনি আস্তে করে খুলে দিলাম আর অমনি হুরমুড়িয়ে পড়ে গেল আমিও উপরে যে পরেছে তাকে উদ্দেশ্য করে তার পিঠে নিজের সমস্ত শক্তি দিয়ে কোপ মারি,, দুই তিন
সেকেন্ডের মধ্যে ৪/৫ টা কোপ বসিয়ে দিলাম।

ওদের সাথের মেয়েটি আমার রক্তে ভেজা চুলের মুঠি ধরে টেনে দূরে নিয়ে যায়। আমি মেয়েটার পা বরাবর লাত্থি মেরে তার হাতেও ছুরি দিয়ে এক কোপ দিলাম। মেয়েটা আমার থেকে একটু দূরে যেতেই যে ছেলে টা নিচে পড়ে ছিলো সে উঠে আমাকে ধরে ফেলে। তারপর আমাকে টেনে বাইরে বারান্দার খুটির সাথে বেঁধে একটা লাঠি দিয়ে তাদের ইচ্ছে মতো মেরে জ্বালা মিটাতে লাগে। তাদের সঙ্গীদের দুজন কে চিরতরে শেষ করেছি আরেক জন ও মৃত্যুর যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে। তাদের রাগের জ্বালা তো কম না। আগে থেকেই আমার পুরো শরীর রক্তাক্ত ছিলো আর এখন উনাদের আঘাতে আমার শরীর থেকে কোন রক্ত বের হচ্ছে নাকি তা বুঝা যাচ্ছে না। তবে অনুভব করছি শরীরের বিভিন্ন যায়গা থেকে রক্ত বেরুচ্ছে।

আমাকে ইচ্ছে মতো অশালীন কথা বলে গালিগালাজ করছে আর জিজ্ঞেস করছে কে আমি, কেন মারলাম এদের ইত্যাদি। আমি কোন কথা বলি নি। জানি মরতে হবে, কথা বললেও মরবো না বললেও তাই এইসব নিকৃষ্ট মানুষের সাথে কথা বলার রুচি হারিয়ে ফেলেছি।ঘরের মধ্যের আঘাত লোক এবং মেয়েটার প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার জন্য এই লোক টা কাকে যেন ফোন করে তারাতাড়ি আসতে বলে। তারপর এখানের ঘটে যাওয়া ঘটনার বিস্তারিত বলে।

ফোনের অপর প্রান্তের লোক না আসা পর্যন্ত আমাকে বেধে রাখা হবে। উনি আসার পরে আমার ব্যবস্থা নিবেন উনি। কে উনি,, যে লোকের জন্য আমি এখানে, তাকে এখনো দেখলাম না। তাহলে ফোনের অপর প্রান্তের লোক ই কি উনি।

অনেক ছটফটানির পরে তৃতীয় জন ও মারা গেলেন। আমি মরবো তাতে কোন কষ্ট নেই, সাথে তিনজন খারাপ লোককে মেরেছি সেই আনন্দ আমাকে শান্তি দিচ্ছে। তৃতীয় জনের মৃত্যুতে বাকি দুজন যেন মাতাল হয়ে গেছে আমাকে মারার জন্য। ছেলেটার ব্যাল্ট দিয়ে আমাকে অনবরত মেরে চলেছে। ব্যাথা প্রাণ যায় যায় অবস্থা। অবশেষে চোখ দুটো বন্ধ হয়ে গেছে।

যখন চোখ খুলি তখন দেখি, আমি ভাঙা একটা ঘরে। হয়তো সকাল হয়ে গেছে। কেন আমাকে সকালের আলো দেখতে দিয়েছে তার মানে খুঁজে পাচ্ছি না। গলাটা পিপাসায় ফেটে যাচ্ছে। শরীরের যন্ত্রণা মনে হচ্ছে আরো বেড়ে গেছে এখন। অনেকক্ষন ধরে জেগে আছি কিন্তু আশেপাশে কারো কোনো কথা শুনতে পাচ্ছি না। তাহলে কি বাচ্চা গুলো কে পাচার করে দিয়েছে। আমি কি সত্যিই পারলাম না হিমেল রাতুল মুকুলের মতো দুশো টা শিশুর জীবন বাঁচাতে।

আমি কোথায় এবং বাইরে কি হচ্ছে তা জানতেই হবে। আগেই জানতাম যদি কখনো আমি ধরা পরি এবং আমাকে তৎক্ষনাৎ না মারে তাহলে বেধে রাখবে। আর বেঁধে রাখলে অবশ্যই দুই হাত পিছনে দিয়ে বেঁধে রাখবে। ঠিক সে জন্য ছুরি টা কোমড়ের পিছনে রেখেছিলাম। হাত দুটোতে এতো ব্যাথা যে নাড়াতে পারছি না। বহু কষ্টে কোন রকম ছুরি টা দিয়ে বাধন কেটে দিলাম। নিজেকে মুক্ত করার পরে যেই না ঘর থেকে বেরুতে যাবো ঠিক তখনই দেখি কেউ একজন বাইরে থেকে তালা খোলার চেষ্টা করছে। আমি দেরি না করে সাথে সাথে আবারও আগের মতো বসে পড়ি।

সেই চেনা পরিচিত মুখ কে সামনে দেখলাম। উনার জন্যই তো এখানে আশা আমার। উনি এসেই আমাকে জিজ্ঞেস করলেন,, কে তুই??

তুই আমাকে ভুলে গেলেও আমি তোকে ভুলিনি। তোর মিথ্যার জালে ফেঁসে আমার সর্বস্ব হারিয়েছি। তোর সাথে বোঝাপড়া করবো বলে এখানে এসেছি।

কে তুই? কিভাবে আমাকে চিনিস?

মনে করে দেখ, প্রায় দের বছর আগে আমার প্রতিবন্ধী অবুঝ সন্তানের সাথে দুই ভাই এবং মা কে নিয়ে ঢাকায় আসার সময় যে বাসে উঠেছিলাম সেই বাসের মধ্যে তোর খপ্পরে পড়ি। বল আমার মা সন্তান ভাই কোথায়?

একটা বিটঘুটে হাসি দিয়ে বলে, তোর ভাই আর সন্তান হয়তো এতোদিন উপরের বাসিন্দা হয়ে গেছে। তোর মা কে তো রাস্তায় ফেলে এসেছি। জানিনা বেঁচে আছে নাকি মরে গেছে। তা তুই ঢাকা থেকে চট্রগ্রামে আমাকে কিভাবে পেলি। আগে যদি জানতাম তোর মৃত্যু আমার হাতে তাহলে ওইদিন ই মেরে দিতাম।

যে সন্তান গর্ভে থাকা অবস্থায় নষ্ট করার চেষ্টা করার পরেও মারা যায় নি সেই চিরদুঃখী সন্তান কে এই জানো*** বাচ্চা বিক্রি করে ফায়দা লুটে নিছে। ইচ্ছে করছে এই মুহূর্তে কুচিকুচি করে কেটে মনের জ্বালা নিভাই। বারবার চোখের সামনে সেই খিদাকাতুর হিমেলের মুখশ্রী ভেসে ওঠে। কতদিন ছেলেটা না খেয়ে দিন পার করেছে। যখন আজিজের সাথে ছিলাম তখন শত কষ্ট ওই ছোট বুকে চেপে ধরে রেখেছিল।

এইসব ভাবছিলাম ঠিক তখনই উনার ফোনে কল আসে। আর উনি ফোনে কথা বলতে বলতে অন্য মুখো হলেন। এতোক্ষণ এই সুযোগের অপেক্ষায়-এই ছিলাম। তাই সাথে সাথে সুযোগ টা কাজে লাগালাম। খুব সাবধানে উঠে উনার পিছনে ঠিক গলা,,,,,,,

চলবে,,,

এতো সময় নিয়ে গল্পটা পড়ার পরে সুন্দর একটা করে কমেন্ট করবেন সবাই। আর আপনাদের গল্পপ্রেমী বন্ধুদের মেনশন দিবেন ☺️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here