#সভ্যতার_সভ্য
#তৃতীয়াংশ
#NishchupSpriha
==============
সভ্য আর আমার প্রেম জমে একদম বরফ! যত দিন যাচ্ছে আমি যেন সভ্যর মধ্যে ডুবে যাচ্ছি। সভ্য যেন কোন মানুষ না, একটা সমুদ্র। প্রেমে পূর্ণ সমুদ্র! এই সমুদ্রের জলে যত ডুব দেই ততই শুধু প্রেম পায়।

রাগ, অভিমান, ঝগড়া, ঘুরাঘুরি এভাবেই আমাদের দিন যাচ্ছিলো। আমি সবসময় অপেক্ষায় থাকি সভ্য কবে বাড়ি আসবে। ক্যাডেটে প্যারেন্টস ডে তে ছোটবাবা ছোটমা যখন ওর সঙ্গে দেখা করতে যেতো, তাদের সাথে আমিও যাওয়া শুরু করলাম। অথচ ক্যাডেটে যাওয়ার পর দুই বছর আমি ওর কোন খোঁজ রাখিনি। আর এখন সব সময় ওর চিন্তা আমার মাথায়! আমি অপেক্ষায় থাকি কবে ওদের প্যারেন্টস ডে আসবে!

আমি ভাবতাম এটাই কি মাতাল করা প্রেম? এটাই কি ভালোবাসা? হ্যাঁ এটাই ভালোবাসা। আমার জীবনের প্রথম ভালোবাসার নাম সভ্য।

আচ্ছা তাহলে অনিক আমার কি ছিলো? আমি যে বলতাম আমি ওকে জান প্রাণ দিয়ে ভালোবাসতাম। সেটা কি ছিলো?? একটা ঘোর? সম্ভবত সেটাই। কারণ আমি এখন জানি অনিক কখনোই আমার ভালোবাসার মানুষ ছিলো না।

সভ্য ওর এসএসসি পরিক্ষা শেষ করে লম্বা ছুটিতে বাসায় এলো। কিন্তু তখন এইচএসসি পরিক্ষা আমার দরজায় কড়া নাড়ছে। আমি পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে সারা দিন রাত আমার ঘরে পরে থাকি। পড়া ছাড়া আমি চোখে মুখে অন্ধকার দেখি।

আমার পরিক্ষা শুরু হওয়ার দুই দিন আগে সভ্যর সাথে আমার তুমুল ঝগড়া লেগে গেলো। সামান্য একটা বিষয় নিয়ে। বিষয়টা হচ্ছে চুমু!

তার কথা হচ্ছে রিলেশনের একবছর পার হয়ে যাওয়ার পরেও আমি কেনো ওকে চুমু খেতে দিচ্ছি না বা আমি কেনো চুমু খাচ্ছি না।

আমাদের কথা ছিল ভ্যালেন্টাইন ডে তে আমরা ফাস্ট কিস করবো। যেহেতু ভ্যালেন্টাইন ডে তে ওর পরিক্ষা ছিল সেজন্য ও বাসায় ছিল না। আর আমাদের ফাস্ট কিসও হয়নি। যদিও সেদিন আমাদের দেখা হয়েছে। কারণ ওর পরিক্ষার সেন্টার জিলাতে ছিল। যেদিন করে ওর পরিক্ষা থাকতো সেদিন ছোটমা ওর সাথে দেখা করার জন্য জিলায় যেত। সাথে আমিও যেতাম, আমি কি আর ওকে দেখার চান্স মিস করতে পারি!

আর ভ্যালেন্টাইনেও ওদের পরিক্ষা ছিল।

সেদিন ওকে দেখে আমার মায়া প্লাস হাসি দুটোয় পাচ্ছিলো। ইশ্! বেচারা! চুমু খেতে না পেরে চোখ, নাক, মুখ, কান কেমন লাল হয়ে ছিলো। রাগে শুধু ফোঁস ফোঁস করছিল।

ও ওর পরিক্ষার রুটিন পেয়েই আমাকে বলেছিল,
— ‘খবরদার সভ্যতা ওই দিন তুমি যেন আমার সেন্টারে না আসো। যদি আসো তাহলে কিন্তু কিছু একটা হয়ে যাবে বলছি। আ’ম ওয়ার্নিং ইউ। সবার সামনে আমি কিছু করে ফেললে কিন্তু আমার দোষ নাই।’

তবুও আমি সেদিন গেলাম। প্রতিশোধ নেয়ার জন্য, ওকে জ্বালানোর জন্য। কারণ বাসায় আসলে ও আমাকে প্রচুর জ্বালায়।

সামান্য একটা চুমুর জন্য কেউ যে এত ছটফট করতে পারে সেটা আগে আমার জানা ছিল না। ওকে না দেখলে বিশ্বাসও করতাম না। রাগে সেদিন ও আমার সাথে কথাই বলেনি। আর ছোটমা সামনে থাকায় ও আমাকে কিছু বলতেও পারছিল না। রাগে শুধু ফোঁস ফোঁস করছিলো।

ওর এই অবস্থা দেখে আমি ফিক করে হেসে ফেললাম।

আমাকে হাসতে দেখে ছোটমা বললো,
— ‘কি ব্যাপার বলতো? তুই এমন পাগলের মতো হাসছিস কেনো?’

আমার হাসি দেখে সভ্য আমার দিকে এমন কটমট দৃষ্টিতে তাকালো পারলে যেন আমাকে চোখ দিয়েই ভস্ম করে দেয়।

সভ্যর এমন দৃষ্টি দেখে আমি কোনরকমে আমার হাসি আটকে ছোটমাকে বললাম,
— ‘কিছু না, ছোটমা। এমনি হাসি পাচ্ছে।’

সভ্যকে জ্বালানোর জন্য আবার বললাম,
— ‘ছোটমা, তোমার ছেলেটা লুচির মতো এত ফুলছে কেন?’
বলেই আবার হেসে ফেললাম।

ছোটমা কিছু বলার আগেই সভ্য বললো,
— ‘মামণি, তুমি এই বেয়াদপ মেয়েটাকে দাঁত কেলানো বন্ধ করতে বলো।’

সভ্যর কথা শুনে এবার আমি ওর দিকে কটমট করে তাকালাম যার অর্থ ‘আমাকে বেয়াদপ মেয়ে বলা না?? আচ্ছা দেখা যাবে। আবার যদি আমার কাছে আসিস তখন মজা বুঝবি।’

অসভ্যটার কথা শুনে ছোটমা বললো,
— ‘ছি ছি ছি সভ্য! এসব কোন ধরণের কথাবার্তা। ও না তোর বড়। তোর বড় বোন ও.. আর সভ্যতা তো ঠিকই বলেছে। কি হয়েছে তোর বলতো? চোখ, মুখ কেমন লাল হয়ে আছে। পরিক্ষা খারাপ হয়েছে, বাবা?’

ছোটমার কথা শুনে আমার দম বন্ধ করা হাসি পেলো.. কিভাবে যে আটকে ছিলাম সেটা শুধুমাত্র আমি এবং আমার সৃষ্টিকর্তা জানে…

আমি মনেমনে বললাম,
— ‘ছোটমা, তোমার ছেলে আমাকে বউয়ের চোখে দেখে… তোমার ছেলের মুখ কেনো লাল হয়েছে জানো? তোমার ছেলের চুমুর নেশা উঠেছে। তোমার ছেলে চুমু খাওয়ার জন্য যে কতটা অস্থির সেটা তুমি চিন্তাও করতে পারবে না।’

সভ্য ছোটমার কথার উত্তর না দিয়ে হনহন করে হেঁটে ওর ক্যাডেটের বাসে যেয়ে বসলো। যাওয়ার আগে অবশ্য আমার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো যার অর্থ ‘আমি আগে বাসায় আসি তারপর তোমাকে দেখছি।’

এরপর ও কয়েকদিন আমার সাথে কথা বলেনি। ছোটমা যখন ওর বন্ধুর মায়েদের সঙ্গে কথা বলতো তখন আমি ওকে স্যরি বলতাম। অবশ্য আমার কি দোষ? ওর যে পরিক্ষা ছিল সেটা কি ও বুঝে না। উওফ! এই ছেলে সব সময় ম্যাচিউরিটি দেখাবে আবার মাঝে মাঝে সামান্য বিষয় নিয়ে ছোট বাচ্চাদের মতো মুখ ফুলায় রাখবে।

সভ্যর বায়োলজি পরিক্ষার দিন ও সবার আগে ওর হল থেকে বের হলো। বের হয়েই ও সরাসরি আমার কাছে চলে এলো। ছোটমা কি একটা কেনার জন্য মৌবনে গেছে।

সভ্য এসেই আমার হাতে ওর জিনিসপত্র দিয়ে বললো,
— ‘মামণি, কোথায়?’

আমি কিছু বললাম না। কারণ এই কয়েকদিন ওর সাথে কথা বলার জন্য আমি যথেষ্ট চেষ্টা করেছি কিন্তু সে আমাকে পাত্তা দেয়নি। তাই আমিও আর কথা বলবো না।

আমাকে চুপ থাকতে দেখে ও আবার বললো,
— ‘কথা বলো না কেন? রাগ দেখাও আমাকে? রাগ তো দেখাবো আমি।’

এবার আমি রেগে যেয়ে বললাম,
— ‘আমি কেন রাগ দেখাবো? রাগ তো শুধু তুমিই দেখাবা। দেখাও রাগ। যত খুশি তুমি তোমার রাগ দেখাও। এই তুমি জানো না যে ফেব্রুয়ারিতে তোমার পরিক্ষা? এখানে আমার দোষ? নাকি চাও যে আমি তোমার ক্যাডেটে যেয়ে তোমাকে চুমু খেয়ে আসি? এহ্! যত রাগ শুধু ওনার একারই আছে।’

এতদিনে আমি ওকে তুই থেকে তুমি করে বলি। কিন্তু সবার সামনে তুইই বলি।

আমার কথা শুনে সভ্য আরো ঝাঁঝিয়ে উঠলো। এভাবেই আমাদের মধ্যে কিছুক্ষণ কথা কাটাকাটি হয়ে আবার কথা বন্ধ।

তারপর অবশ্য ও নিজে স্যরি বলে বললো,
— ‘আচ্ছা যাও সব বাদ। পরিক্ষা শেষে বাসায় যেয়ে আমার চুমু চাই ই চাই। আমি আর কিছু জানি না শুনতেও চাই না। না মানে না। আমার কিন্তু চুমু চাই ই চাই।’

আমি আর কি বলবো? ওকে আমি কথা দিলাম ওর এসএসসি পরিক্ষা শেষ হলে ও অবশ্যই চুমু পাবে।

মজার বিষয় হচ্ছে সভ্যর পরিক্ষা শেষে ও যেদিন বাসায় এলো, সেদিন রাতেই ছোটমা ওকে নিয়ে ঢাকায় চলে গেলো। সভ্যর নানু অসুস্থ, ওনার ওপেন হার্ট সার্জারি হয়েছে। সভ্যর পরিক্ষার জন্য ছোটমা যেতে পারেনি। তাই সভ্য বাসায় আসার ডেটে ছোটবাবা ঢাকায় যাওয়ার জন্য রাতের টিকিট কেটেছে।

এসব কিছুর কিছুই কিন্তু আমি জানতাম না। আমি জানতাম যে ঢাকায় যাবে কিন্তু ও আসার দিনেই যে যাবে সেটা আমি জানতাম না। সভ্য বাসায় এসে সব শুনে মুখ একদম অন্ধকার করে ফেললো। একবারও আমার দিকে তাকালো না।

আমি মনে মনে ভয় পাচ্ছিলাম এই বুঝি সব দোষ আমার হয়, হলোও তাই।

যাওয়ার আগে সভ্য এসে বলে গেলো,
— ‘জানি তো আমি সব তোমার প্লান। তুমি ইচ্ছে করেই আমার সাথে এমন করো। তোমরা সবাই মিলে আমার চুমুর পিছনে কেনো পড়ছো? যাস্ট একটা চুমুই তো খাবো সেটাও তোমরা দিচ্ছো না। যাও খাবো না আমি কোন চুমু। লাগবে না আমার কোন চুমু। চুমু না খেলে কি আমি পাগল হয়ে যাবো? দাঁড়াও আমি ঢাকা থেকে শুধু ব্যাক করি। তারপর তোমাকে বুঝাবো।’
বলেই হনহন করে হেঁটে চলে গেছে।

আমি হা হয়ে এই ছেলের কথা শুনলাম। কি বলে গেলো এগুলো! আমার হাসিও পাচ্ছে আবার রাগও উঠতিছে। আমার প্লান! চুমু খেতে না পেরে এই ছেলে সত্যি সত্যি পাগল হয়েছে… উফ! অসহ্য! এই ছেলে মাঝে মাঝে একদম ছোটবাচ্চা হয়ে যায়। অবশ্য বাচ্চাই তো!

ঢাকায় যেয়ে উনি আমার সাথে সব কন্টাক্ট অফ রাখলো। এবার আমিও আর যেচে পড়ে মিটমাট করতে যাইনি। বারবার একই কাহিনি কার ভালো লাগে? এবার আমিও দেখবো কত দিন সে থাকতে পারে।

তিন দিনের দিন রাত একটার পর সভ্য আমাকে ফোন করলো। তখন আমি পড়ছি। ওর ফোন দেখেও প্রথমে রিসিভ করলাম না। কয়েকবার রিং হয়ে কেঁটে যাওয়ার পর রিসিভ করলাম।

ফোন ধরার সাথে সাথেই সভ্য চিল্লায় বললো,
— ‘ফোন ধরো না কেন তুমি?? আবার ফোনও দেও না। আমি বাঁচে আছি নাকি মরে গেছি সেটার খোঁজও নাও না। গার্লফ্রেন্ডরা কি এমন হয়?’

আমি চুপ করে আছি। জানি এখন কিছু বললে আবার লেগে যাবে আমাদের। সে নিজে যে কন্টাক্ট অফ রাখছে সেটার বেলায় কিছু না?

সভ্য নিজে নিজেই কিছুক্ষণ চিল্লাচিল্লি করলো। এরপর হুট করে কেঁদে দিল।

আমি ওর কান্না শুনে আহাম্মক হয়ে গেলাম! মানে কি! কান্না করছে কেনো ও?

আমি ব্যস্ত হয়ে বললাম,
— ‘কি হয়েছে, সভ্য? কান্না করছো কেনো তুমি? সভ্য? কি হয়েছে বলবে তো।’

সভ্য ভাঙা ভাঙা গলায় বললো,
— ‘আ’ম স্যরি জান! আমি অনেক খারাপ তাই না? আমি জানি আমি অনেক খারাপ। আ’ম রিয়্যালি স্যরি। আমি তোমাকে খুব কষ্ট দেই তাই না? রাগের মাথায় ভুল হয়ে গেছে। আই প্রমিস আমি আর কখনো তোমাকে কষ্ট দিবো না জান। আ’ম স্যরি জান। আ’ম স্যরি।’

সভ্যর কোন কথাই আমার মাথায় ঢুকেনি। হটাৎ কি হলো এই ছেলের?

সভ্য নাক টানতে টানতে আবার বললো,
— ‘তুমি শুধু আমাকে চুমু খেতে দিবে তো জান? আমার আর কিচ্ছু চাই না। আমি সেদিন রাগ হয়ে বলেছিলাম আমার চুমু লাগবে না। না আমার চুমু লাগবে। লাগবে মানে লাগবেইইইই। ডু ইউ নো জান? সাদাফ, নিশাত, আনান, নাফিস, ফয়সাল ওরা ওরা সবাইইইই কিস করেছে। ইভেন রাদিব ও তো ওর গার্লফ্রেন্ডের সাথে রুম ডেটও করেছে। আর আমি? আমি একটা চুমুও খাইনি। হোয়াই জান? ওরা সবাই আমাকে নিয়ে হাসাহাসি করে।’

সভ্যর কথা শুনে আমি পুরাই থ! কি বলছে এসব? আর কেমন বেহায়াদের সাথে মিশে ও? নিজেদের পারসোনাল বিষয় গুলো এভাবে পাবলিক করে বেড়াচ্ছে? সভ্য যে ওদের কি কি বলেছে কে জানে? আল্লাহ্ নোজ বেস্ট!

আমি এতক্ষণে খেয়াল করলাম সভ্য স্বাভাবিক নয়। হি ইজ ড্রাঙ্ক! এবার আমার রাগ উঠে গেলো। জানতাম এমনই হবে। ঢাকায় যেয়ে এমন কিছু একটাই হবেই। ও যতগুলো নাম বললো ওরা সবাই সভ্যর কাজিন। আর এরা সবকটা ফাজিল। নট অনলি ফাজিল, বাট অলসো বেহায়া। এরা চরম লেভেলের বেহায়া। আমার আলাভোলা সভ্যটাকে এরা সবাই মিলে অসভ্য বানায় দিবে।

আমি রাগি গলায় বললাম,
— ‘সভ্য!’

সভ্য আবার নাক টানতে টানতে বললো,
— ‘হুঁ, জান বলো।’

আমি প্রশ্ন করলাম,
— ‘সভ্য, আর ইউ ড্রাঙ্ক?’

— ‘উঁহু! জান, আ’ম নট ড্রাঙ্ক। জান, চুমু খেতে দিবা তো?’

এবার আমি চিল্লায় বললাম,
— ‘রাখ তোর চুমু। এই চুমু চুমু করে আমার মাথা নষ্ট করে দিছিস তুই। ফাজিল ছেলে একটা। ঢাকায় যেয়ে বেহায়াদের সাথে থেকে থেকে বেহায়াপনা শিখেছিস না? আয় শুধু তুই তোর বারোটা বাজাবো আমি।’

— ‘উঁহু, জান! রাগ করো কেন? কি করেছি আমি? শুধু একটু চুমু চাইছি।’

সভ্যর নাক টানা একদম বন্ধ হয়ে গেছে।

— ‘রাগ করি কেন তাই না? আন্ডার এইটটিন একটা বাচ্চা ছেলে মদ খেয়ে মাতলামি করছে আর আমি রাগ করি কেন? এই তুই কোথায়রে? ছোটমা কোথায়? দাঁড়া আমি এখনি ছোটমাকে ফোন করে বলছি যে তুই মদ গিলে মাতাল হয়ে অসভ্যতামি করছিস।’

— ‘হুস! আমি মদ গিলিনি তো! অল্প একটু বিয়ার খাইছি।’

কি বেহায়া ছেলে! মদ গিলে আবার বড় গলায় বলা হচ্ছে ‘অল্প একটু বিয়ার খাইছি?’ এখন যদি সভ্য আমার সামনে থাকতো আমি যে কি করতাম আমি নিজেও জানি না।

বহু কষ্টে আমি নিজেকে শান্ত করলাম। এখন চিল্লাচিল্লি করে লাভ হবে না। ওকে বুঝিয়ে ঘুম পাড়াতে হবে। ছোটমা কোনভাবে জানতে পারলে ওকে শেষ করে দিবে একদম… জুতাপিটা করে ছাড়বে…

তাই আমি শান্ত হয়ে বললাম,
— ‘আচ্ছা বুঝেছি। তুমি অল্প একটু বিয়ার গিলছো তাই না?’

— ‘হুঁ, জান হুঁ। অল্প একটু। এই এত্তোটুকু!’

— ‘হুম আমি জানি তো। অল্প একটু গিলছো। তার নমুনা তো দেখতেই পাচ্ছি। এখন কোথায় আছ তুমি?’

— ‘আমি? আমরা সবাই তো ছাদে।’

— ‘সবাই মানে? তুমি আর কে কে আছ?’

— ‘ফয়সাল, আনান, নাফিস, রাদিব, সাদাফ, নিশাত, আমি আমরা সব্বাই।’

— ‘ওহ! ওরা সবাই কই? তোমার পাশে আছে?’

— ‘না না। ওরা তো পর্ণ দেখতিছে।’

আমার মেজাজ আবার খারাপ হয়ে গেলো।

আমি আবার চিল্লায় বললাম,
— ‘আর তুই? তুই কি করিস? তুইও দেখতিছিস তাই না?’

— ‘না না জান। আমি দেখি না তো। আমি তো তোমার সাথে কথা বলি।’

— ‘মিথ্যা বলবি না সভ্য।’

— ‘সত্যি জান আমি দেখি না তো। সত্যি দেখি না। আই সোয়্যার অন ইউ!’

মাতাল নাকি কখনো মিথ্যা বলে না!

তাই আমি বললাম,
— ‘আচ্ছা ঠিক আছে। এখন আমার কথা শুনো।’

— ‘হুঁ, জান বলো। আমি তোমার সব কথা শুনবো।’

— ‘তুমি এখনি নিচে যেয়ে ঘুমাবে বুঝেছো?’

— ‘কিন্তু জান আজকে তো আমরা সবাই জেগে থাকবো আর আমি তোমার সাথে কথা বলবো।’

— ‘তুমি আমার কথা শুনবা না তাই তো? আচ্ছা বায়।’

— ‘না না জান আমি শুনবো তো। আ’ম স্যরি। আমি যাচ্ছি এক্ষুনি যাচ্ছি।’

— ‘হুম, গুডবয়। যাও। সকালে ঘুম থেকে উঠে আমাকে ফোন দিবে। নাউ বায় এন্ড গুড নাইট।’

— ‘ওয়েট অ্যা মিনিট জান। আমি যাবো বাট আই হ্যাভ অ্যা কন্ডিশন। ইফ ইউ এগ্রি, দেন আই উ’ল গো টু স্লিপ।’

ওহ! কি জ্বালা! আবার শর্ত! দ্বারা কালকে তোকে আমি মজা বুঝাচ্ছি।

আমি বললাম,
— ‘আবার কিসের শর্ত? উফ সভ্য। ঘুমোতে যাবি তুই?’

— ‘উঁহু, জান। আমার শর্ত না মানলে আমি যাবো না।’

— ‘আচ্ছা ঠিক আছে। বলো তোমার কি শর্ত?’

— ‘তুমি টুয়েন্টি ফোর আওয়ারের জন্য আমাকে চুমু খেতে দিবা।’

সভ্যর কথা শুনে আমি টাস্কি খাইলাম! কি বলে এই ছেলে! টুয়েন্টি ফোর আওয়ার! সিরিয়াসলি! এরেই বুঝি বলে জাতে মাতাল তালে ঠিক! এমন কথা শুনলে কার মাথা ঠিক থাকবে?

আমি দাঁতে দাঁত চেপে বললাম,
— ‘সভ্য, আই থিঙ্ক ইউ আর গোয়িং ক্রেইজি।’

— ‘নো, আ’ম নট। আমি অত কিছু জানি না। তুমি রাজি কি না বলো। না হলে কিন্তু আমি যাবো না।’

আমি ভাবলাম সভ্য তো ড্রাঙ্ক হয়ে আছে! রাজি হয়ে যাই। পরে কি আর মনে থাকবে নাকি? এখন ওর ঘুমোনো জরুরি। ছোটমা কোনভাবে জানতে পারলে ওকে জুতা পিটা করবে।

তাই বললাম,
— ‘ওকে ডান। আর কোন শর্ত না। তুমি এখনি নিচে যেয়ে ঘুমোবে।’

— ‘সত্যি তো? পরে যদি আবার না করো?’

— ‘না আমি না করবো না। কিন্তু তোমাকে এখন ঘুমোতে হবে।’

— ‘থ্যাংকস জান। আই লাভ ইউ লাভ ইউ লাভ ইউ সো সো সো মাচ জান। ইউ আর দ্যা বেস্ট জান ইন দিস ওয়াল্ড।’

— ‘হইছে হইছে এখন যাও ঘুমোও।’

— ‘না হয়নি। আমার আন্সার কই?’

— ‘ওহ হো সভ্য! আবার কি? কিসের আন্সার?’

— ‘আই লাভ ইউ এর?’

— ‘ভালোবাসি ভালোবাসি ভালোবাসি। অনেক ভালোবাসি।’

— ‘ওহ জান! আ’ম অলসো লাভ ইউ সো মাচ।’

— ‘সভ্য, যথেষ্ট হয়েছে। তোর জন্য আমার পড়া গোল্লায় গেলো। যা ঘুমা বলছি।’

— ‘হুঁ, জান যাচ্ছি। এক্ষুনি যাচ্ছি। বায় জান। গুড নাইট। লাভ ইউ।’

— ‘হুঁ।’
বলেই আমি ফোন রেখে দিলাম। না হয় এই ছেলে আবার নতুন কিছু শুরু করবে।

পরের দিন দুপুর বারোটায় সভ্য আবার আমাকে ফোন করলো।

আমি হ্যালো বলতেই ও বললো,
— ‘জান কালকে রাতে আমাকে ফোন দিছিলা?’

আমি জানি এই ছেলে সব ভুলে গেছে।

তাই আমি বললাম,
— ‘কই? না তো। আমি ফোন দেইনি।’

— ‘তাহলে যে দেখলাম তোমার সাথে এক ঘন্টা সাতাশ মিনিট কথা বলছি।’

— ‘হুঁ, বলছি তো। তুমি নিজে ফোন দিছো আমাকে।’

— ‘আ–আমি? আমি নিজে? তাও আবার কালকে রাতে?’

— ‘হুঁ, তুমি নিজে। কেনো মনে নাই?’

— ‘নাহ্! মানে জান আমি মনে করতে পারছি না। ঘুমে ঘুমে কথা বলছি তাই হয়তো।’

— ‘ওহ্! আচ্ছা! ঘুমে ঘুমে? কিছু গিলো নাই?’

— ‘হুঁ! স্যরি জান! সবার সাথে একটু গিলে ফেলছি।’

— ‘একটু গিলছো না কতটুকু গিলছো তা আমি ভালোই জানি।’

— ‘স্যরি জান! আর এমন হবে না। আচ্ছা জান আমি কি কালকে তোমার সাথে কোন অসভ্যতামি করেছি?’

আমি কোন রকমে হাসি আটকে বললাম,
— ‘কেনো মনে নেই?’

— ‘উঁহু!’

— ‘আচ্ছা! তুমি আগে বাসায় আসো তারপর তোমাকে মনে করাই দিচ্ছি।’

— ‘হুঁ! স্যরি বললাম তো!’

— ‘কোন মাফ নাই।’

কিছুক্ষণ কথা বলার পর ফোন রাখার আগে সভ্য বললো,
— ‘জান কালকে কি আমি তোমার কাছে কিছু চাইছি?’

আমি মনে মনে বললাম, জানতাম আমি জানতাম তুই জাতে মাতাল তালে ঠিক।

কিন্তু মুখে বললাম,
— ‘কই না তো।’

— ‘সত্যি তো!’

— ‘হুঁ, সত্যি।’

— ‘মিথ্যা বলো কেন জান? আমি জানতাম তুমি পরে পল্টি খাবা।’

— ‘আমিও জানতাম তুই জাতে মাতাল তালে ঠিক। তুই শুধু বাড়ি আয়। তারপর তোকে আমি দেখতিছি।’

— ‘নিজে যে পল্টি খাচ্ছো? সেটার কি হ্যাঁ?’

— ‘তুই সত্যিই একটা অসভ্য। তুই যাস্ট আয়। আর খবরদার তুই আমাকে ফোন দিবি না।’
বলেই আমি ফোন রেখে দিলাম।

এরপর সভ্য যতদিন ঢাকায় ছিল আমাদের ঝগড়া হতোই। আমার পরিক্ষার দুইদিন আগে সভ্য ঢাকা থেকে এসেই আমার সাথে তুমুল ঝগড়া শুরু করলো।

পরিক্ষার টেনশনে আমার যায় যায় অবস্থা! তার উপর এই সভ্যর প্যারা! আমি এখন পড়াশোনা বাদ দিয়ে ওকে চুমু খাবো? তাও আবার টুয়েন্টি ফোর আওয়ার! ইম্পসিবল!

জীবনে প্রথমবারের মতো মনে হলো ভুল করেছি.. নিজের বয়সের থেকে ছোট কারো সাথে রিলেশনে যেয়ে ভুল করেছি.. চরম ভুল করেছি..
………………………..
(চলব)

[ বিঃদ্রঃ যারা আগে পড়েছেন তাদের উদ্দেশ্যে বলছি, ‘‘নো স্পয়লার প্লিজ…’’ ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here