‘সত্য পিঞ্জর’
অন্তিম পর্ব (২২)
তাবিনা মাহনূর

___________

ভোর থেকে ব্যস্ততা শুরু হলো দুজনের। রিশতা ঘরের আনাচে কানাচে সব স্থানের ধুলো পরিষ্কার করছে। আর আরশ বাজারে গিয়েছে। প্রতিবেশী এক আপা রিশতার কর্ম ব্যস্ততার কথা শুনে আন্তরিকতার সাথে রিশতাকে আজকের ইফতার বানাতে নিষেধ করেছেন। তিনি আজ ইফতার পাঠাবেন। রিশতা তাই ঘর গুছানোয় পূর্ণ মনোযোগ দিয়েছে। তবে মাঝে মাঝে মেয়ে রুকাইয়াহ মাকে খুঁজছে বলে রিশতাকে বারবার হাত ধুয়ে মেয়ে সামলাতে হচ্ছে।

ছেলে দুটো পড়তে গিয়েছে। ফিরলেই গোসল করতে পাঠাবে সে। এরই মাঝে কলিং বেলের শব্দ ভেসে আসলে রুকাইয়াহ খিক করে হেসে উঠলো। রিশতা মুচকি হেসে বললো, ‘বাবার আসার খবর টের পেয়ে গেছে নাকি আমার মামণি?’

দরজা খুললে আরশ ভেতরে ঢুকে বললো, ‘বাজারে গিয়ে সাইফের সাথে দেখা। তাই দেরি হলো একটু।’

রিশতা বাজারের ব্যাগ হাতে নিয়ে বললো, ‘সাইফ কে?’

আরশ সোফায় বসে ঘাম মুছে বললো, ‘ঐযে আপনাকে বলেছিলাম না? মিশরীয় এক ভাইয়ের সাথে বন্ধুত্ব হয়েছে মসজিদে গিয়ে। ওই ভাইয়ের নাম সাইফ।’

রুকাইয়াহ গোল গোল চোখে বাবা মায়ের কথোপকথন শুনছে। আরশ সেদিকে তাকিয়ে বললো, ‘মাকে জ্বালাতন করোনি তো সোনা?’

বলেই সে মেয়েকে কোলে নিয়ে আদর করলো। রিশতা রান্নাঘরে গিয়ে বললো, ‘আপনি জানেন না সে কত দুষ্টু? কাঁদবে না, কিন্তু এদিক ওদিক ছোটাছুটি করে হঠাৎ উধাও হয়ে যাবে। আমার তখন ভয় হয়ে যায়। হামাগুড়ি দিয়েই এই অবস্থা, হাঁটা শিখলে কি হবে আল্লাহই জানেন!’

আরশ মুচকি হেসে মেয়ের কপালে চুমু খেলো। সে মেয়েকে কোলে নিয়েই ঘরের কাজে রিশতাকে সাহায্য করছে। রিশতা তাকিয়ে দেখলো, আরশ রুকাইয়াহর সাথে কথা বলছে আর খুশিমনে কাজ করছে। রুকাইয়াহ হা করে বাবাকে একবার দেখছে, আরেকবার আশেপাশে তাকাচ্ছে। রিশতা রান্নাঘরে দাঁড়িয়ে মুচকি হেসে ভাবলো, ‘মানুষটা কত্ত খুশি আজ! পরিবার আসবে বলে…’

আরশ আর রিশতা বাংলাদেশ থেকে সৌদিতে আসার প্রায় সাড়ে ছয় বছর হতে চললো। সৌদি আরব আসার কয়েক মাসের মধ্যে রিশতা গর্ভধারণ করে। কোলে আসে যমজ ছেলে; সাদাফ আর সাদাত। এর প্রায় সাড়ে চার বছর পর রিশতা আবারো গর্ভধারণ করে। সেসময় আরশ বলেছিল, ‘আমান ভাইয়ের দুই ছেলের পর আবার ছেলে হয়েছে। আমাদের কি হবে নূরজাহান?’

রিশতার উত্তর ছিল, ‘আল্লাহ যা দিবেন, তাই হোক। তবে দুআ করতে তো আপত্তি নেই। দুআ করুন এবার যেন আনিকা আপুর মতো মিষ্টি একটা মেয়ে হয়।’

আল্লাহ তাদের দুআ কবুল করেছেন। রুকাইয়াহ মাত্র আট মাসের শিশু হয়েও সারা বাড়িতে তার অস্তিত্ব জানান দেয়। সাদাত আর সাদাফ দুজনেই খুব ভালোবাসে বোনকে। মাঝে মাঝে দুজনের ঝগড়া লেগে যায় কে বোনকে কোলে নিবে।

বাংলাদেশ থেকে চলে আসার সময় আরশের বুক চিরে দীর্ঘশ্বাস বের হতে চায়নি। যেন তা গলার কাছে আটকে গিয়েছিল। মন ভরে কাঁদতেও পারেনি সে। পরিবার ছেড়ে যখন সে বিমানে বসে ছিল, তখন হঠাৎ খুব কান্না পায় তার। রিশতার কাঁধে মুখ গুঁজে সে অবিরাম কেঁদেছে। রিশতার চোখে অশ্রু ছিল প্রিয়তমর মনঃকষ্ট দেখে।

বিমান ছাড়ার সময় আরশ বলেছিল, ‘বাংলাদেশের কোন বিষয়টা আপনার খুব মনে পড়বে রিশতা?’
রিশতা জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে বলেছিল, ‘বকুলতলা আর বকুল ফুল। আচ্ছা, মদিনায় কি বকুল ফুল পাওয়া যায়?’

মদিনায় আরশের দূর সম্পর্কের দুজন চাচা থাকেন তাদের পুরো পরিবার নিয়ে। দুই ভাইয়ের গড়ে তোলা কয়েকটা খাবারের দোকানে আরশ কাজ নিয়েছিল ম্যানেজার হিসেবে। শুরুটা ছিল খুবই কষ্টের। দুই রুমের একটা বাসায় উঠেছিল তারা। কোনো আসবাবপত্র ছিল না। মেঝেতে শুয়েছে দুজন। রিশতার গর্ভকালীন সময়ে তার কষ্ট দেখে আরশ বারবার আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করেছে এমন একজন জীবনসঙ্গী মিলিয়ে দেয়ার জন্য যে অসহায় অবস্থায় থেকেও কখনো কোনো অভিযোগ করেনি। বরং আরশকে পরামর্শ দিয়েছে, ধৈর্য ধরার শক্তি জুগিয়েছে।

চাচারা খুব নরম স্বভাবের, তাদের মনেও ব্যথা তৈরি হলো আরশের করুণ জীবন দেখে। তারা দুজন মিলে আরশকে অর্থ দিয়ে সাহায্য করতে চাইলেন যেন তা দিয়ে আরশ কোনো ব্যবসা করতে পারে। আরশ সেটা গ্রহণ করেনি। আল্লাহর অশেষ রহমতে তার জমানো টাকা দিয়ে সে ছোটখাটো ব্যবসা শুরু করেছিল যেটা এখন মোটামুটি ভালো পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে। একটা দোকান আছে তার যেখানে বাংলাদেশি জিনিস পাওয়া যায়। মদিনার বাঙালি মানুষজন তার কাছ থেকে খাঁটি জিনিস পায় বলে তার ব্যবসা দিন দিন উন্নতির পথে। এছাড়াও সে সৌদি থেকে বাংলাদেশে বিভিন্ন প্রয়োজনীয় জিনিস পাঠায় যা থেকে কিছু অর্থ আসে।

আল্লাহর দেয়া বারাকাহর কারণে আজ তারা বড় বাসায় থাকছে। তাদের সংসার চলছে সচ্ছল ও অপচয়মুক্ত। রিশতার যত্ন ও আরশের রক্ষণশীল মনোভাবের পাশাপাশি উভয়ের প্রণয়ের দৃঢ়তা তাদের সংসারকে করেছে অমলিন, প্রশান্তিময়।

কাল আরশের পরিবার আসবে। নাজিফার অনেকদিনের ইচ্ছে ছিল রমাদান মাসে উমরা করবেন। আমান তাই উদ্যোগ নিয়েছে সবাই একসাথে উমরা করার। আনিকার মেয়ে আর ফাতিহার ছোট ছেলে প্রায় সম বয়সী। পরিবারের এতগুলো বাচ্চার দেখভালের বিষয়টা নিয়ে চিন্তিত আরশ। সিয়ামের মাস, তার উপর উমরা করবে তারা। লুকমান এখন অসুস্থ থাকেন বেশি। তাকেই একজনের ধরে রাখতে হবে। নাজিফা নাহয় এই দায়িত্ব নিলেন। কিন্তু এতগুলো বাচ্চাকে একেকজন কীভাবে সামলাবে?

রিশতাকে বাসার কাজ করতে দেখে আরশ বললো, ‘আজ ইফতারি বাইরে থেকে কিনে আনি।’
কাজ করতে করতে উত্তর দিলো রিশতা, ‘কোনো দরকার নেই। জাহানারা আপা আজ ইফতারি পাঠাবেন বলেছেন। আর রাতের খাবার ফ্রিজে আছে। ওটা গরম করে খেয়ে নিলেই হবে।’

আরশ বাচ্চাদের বিষয়টা বললে রিশতা বললো, ‘কাল আসতে দিন উনাদের। তারপর দেখা যাবে এসব। তাছাড়া মুসআব এখন অনেক বড় হয়ে গিয়েছে। সে নিজেই ছোট ভাইদের খেয়াল রাখতে পারবে ইন শা আল্লাহ।’

মনে পড়লো আরশের, দেশ ছাড়ার আগে মুসআব ছিল সাত বছরের শিশু। এখন সে নিশ্চয়ই কৈশোরে পা রেখেছে। মুচকি হেসে সে বললো, ‘ভুলেই গিয়েছিলাম। কতদিন পর দেখবো ওদের!’
রিশতাও মুচকি হাসলো, ‘ইন শা আল্লাহ।’

সাহরি খেয়ে ফজরের সালাত পড়ে আরশ দুই ছেলেকে ঘরে নিয়ে গেল। তাদের বিছানায় শুইয়ে দিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে নিজের ঘরে গেল। রিশতা রুকাইয়াহকে ছোট্ট বিছানায় শুইয়ে ঘুম পাড়াচ্ছে। আরশ মুচকি হেসে রিশতার পাশে বসে বললো, ‘ঘুমিয়েছে?’

রিশতা মেয়ের কপালে আদর দিয়ে বললো, ‘হুম। আজ সে ছুটোছুটি করেছে অনেক। ক্লান্ত হয়ে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়েছে আলহামদুলিল্লাহ।’

আরশ রিশতাকে পেছন থেকে জড়িয়ে বাহুডোরে নিয়ে তার কাঁধে চিবুক ঠেকালো। রিশতা আরশের হাত দুটো নিজের হাতের বাঁধনে আগলে রাখলো, ‘খুশি যে ফুলের মতো ঝরে পড়ছে!’

ভারী কণ্ঠে আরশ বললো, ‘খুব।’

– আমারও ভালো লাগছে। মিশ্র অনুভূতি। প্রথমত পরিবারের সাথে দেখা হতে যাচ্ছে, দ্বিতীয়ত উমরা করতে যাবো সবাই একসাথে ইন শা আল্লাহ। এটা ভেবেই আনন্দ হচ্ছে খুব।
– আলহামদুলিল্লাহ।

আরশ চুপ করে বসে আছে। রিশতা বললো, ‘কিছু বলবেন?’
আরশ রিশতার চুলে মুখ ডুবিয়ে বললো, ‘তুমি করে বলো।’
– ইফতিখারের কি হয়েছে? কিছু বলবে নাকি সে?

আরশ চোখ বন্ধ করে অনুভব করছে সময়টা। রিশতা তাকে সবসময় যত্ন ও ভালোবাসার মাঝে রেখেছে। কখনো হৃদয়ের শূন্যতা বুঝতে দেয়নি। এতগুলো বছরে রাগারাগি হলে বেশিরভাগ সময় আরশই রাগ করেছে। রিশতা চুপ থেকেছে। তাদের কখনো ঝগড়া হয়নি। কখনো রিশতা রেগে গেলে আরশ চুপ থেকেছে। এভাবেই তাদের পবিত্র সম্পর্কের মুগ্ধতা অটুট রয়েছে। আরশ এখনো ভাবছে তার স্ত্রীর অসাধারণ ব্যক্তিত্বের কথা। ভাবতে ভাবতে সে কিছুটা গভীরে গেলে রিশতা হুট করে সরে বসলো। আরশ প্রথমে স্তম্ভিত থেকে পরক্ষণেই ভ্রু কুঁচকে বললো, ‘নূরজাহান!’

রিশতা মুচকি হেসে উঠে দাঁড়িয়ে বললো, ‘আগে বিমানের গতিবিধি দেখো। তারপর সিদ্ধান্ত নিব যে আজ আমি তোমার নাকি আমার মেয়ের!’

আরশ ঠোঁট উল্টে ভার মুখে ইন্টারনেট অন করলে দেখলো, কেউ একজন ইমেইল পাঠিয়েছে। সেখানে গিয়ে সে দেখলো, ইহসান স্যারের সহকর্মী ইমেইল পাঠিয়েছেন। সে জানতে পারলো, ইহসান স্যার গতকাল সিয়ামরত অবস্থায় দুপুর বেলা মারা গিয়েছেন। ইমেইলে আরো লেখা আছে, স্যারের মৃত্যু হলেই যেন তাকে এই ইমেইল পাঠানো হয় সেই নির্দেশ দেয়া ছিল তার সহকর্মীকে। সহকর্মী নিজের দায়িত্ব পালন করেছেন। বাকিটা আরশের কাজ।

ভারাক্রান্ত মনে সে দীর্ঘশ্বাস ফেলে খবরটা রিশতাকে দিলো। রিশতা বললো, ‘আল্লাহ উনাকে জান্নাত বাসী করুন। উনার ঋণ শোধ করার মতো নয়।’

আরশ ছলছল চোখে বাকি লেখাগুলো পড়ছে। পড়তে পড়তে হঠাৎ সে সোজা হয়ে বসলো। রিশতা তাকে গম্ভীর মুখে দেখে বললো, ‘কি হয়েছে?’

আরশ শীতল কণ্ঠে বললো, ‘অনেক কিছু!’

_____

মক্কায় পৌঁছে গিয়েছে আরশদের কাফিলা। রুকাইয়াহকে কোলে নিয়ে রিশতা হাঁটছে ধীরে ধীরে। তার পাশে আনিকা কথার ঝুড়ি খুলে বসেছে। মেয়েটাকে এক হাত দিয়ে ধরে রিশতার পাশাপাশি হাঁটছে সে। রিশতা হাসছে আর গল্প শুনছে। আনিকা মনে হয় কথাগুলো জমিয়ে রেখেছিল একটু একটু করে রিশতার কাছে মন খুলে বলার জন্য।

নাজিফা লুকমানকে নিয়ে হাঁটছেন। ফাতিহা হাঁটছে তার ছোট ছেলের হাত ধরে। আমান ভাইয়ের পাশাপাশি হাঁটছে জামিলকে সাথে নিয়ে। পরিপূর্ণ এক পরিবার চলেছে কাবার পথে। এর চেয়ে সুখের আর কি আছে?আল্লাহকে মস্তিষ্কে রেখে, রাসূলকে বুকে বেঁধে, বাইতুল্লাহর পথে মুমিন পরিবারের যাত্রা। এর চেয়ে আনন্দময় চিত্র আর কি আছে?

সব আরশদের মুক্তি মেলে না। কিছু আরশ তলিয়ে যায় নরকের কীটগুলোর নৃশংসতায়, যা তাদেরকে মহিমান্বিত করে। আল্লাহ তাদেরকে ভালোবেসে নিজের কাছে নিয়ে যান। আর যেই আরশরা মুক্তি পায়, তাদেরকে আল্লাহ অন্যরকম ভালোবেসে দুনিয়ায় রাখেন পরীক্ষার অনলে দগ্ধ করে পূর্ণ হীরায় পরিণত করতে।

যেমন ইফতিখার আরশ। বিভীষিকাময় দিনগুলো বুকে পাথর চেপে পার করেছিল সে। মধ্য রাত্রিতে দেখা মিললো নতুন সূর্যের। সেই সূর্যের আলোয় ফিরে পেলো সে নতুন জীবন, মদিনার জীবন। কিন্তু ছেড়ে এসেছে মাতৃভূমি, জন্মভূমি ও ভালোবাসার মানুষগুলোকে। স্বচ্ছল জীবন ছেড়ে বেছে নিয়েছে সাধারণ জীবন। ত্যাগ করেছে বিলাসিতা, প্রেমময় অবসর ও ক্লান্তিহীন রাত্রির প্রশান্ত ঘুম।

আর তার বেঁচে থাকার পৃষ্ঠে রয়েছে সত্য উন্মোচন। পৃথিবীতে মানবরূপী পশুদের বিচরণ যতদিন আছে, ততদিন সত্য-মিথ্যের লড়াই চলবে সম্মানিত মানুষগুলোর প্রতিবাদী চেতনায়। এই চেতনা বুকে চেপে বেঁচে থাকতে হয়, ফেলতে হয় নিঃশ্বাস। ইহসানের কাছে যেসব গোপন তথ্য ছিল তা আরশের কাছে ইমেইল করে কিছুটা জানানো হয়েছে। ইহসানের কাছে সত্য বিরোধী মিথ্যের পূজারীদের কুকর্মের যেই রেকর্ড ছিল, তা কুরিয়ার করা হয়েছে আরশের কাছে সাবধানতা অবলম্বন করে। এটা করেছেন ইহসানের কাছে প্রতি সপ্তাহে একদিন দুধ বেচতে আসা দুধ বিক্রেতা!

কিছু মানুষ থাকে যাদেরকে নিয়ে যা কল্পনা করা যায় না, তা-ই তারা বহন করে চলেন। যেমন এই দুধ বিক্রেতা তরুণ ছেলেটি। মনিবের কাছে দুধ বেচার নাম করে কত শত গোপন তথ্য সে তার বাড়ির মাটির তলে লুকিয়েছে! শিক্ষিত ছেলেটা টাকার প্রয়োজনে প্রতি সকালে দুধ বেচার কাজটা করতো। এভাবেই সখ্যতা গড়ে উঠলো ইহসানের সাথে এবং সে সাক্ষী হয়ে থাকলো কিছু ভয়ঙ্কর মানব অবয়বধারী পশুদের পশুত্বের।

আরশের দায়িত্ব পড়েছে সব তথ্য ফাঁস করার। সে জানে, এসব তথ্যের পিছে পরে আছে গোটা আন্তর্জাতিক মহল। সুতরাং তার জীবনটা মোটেও মসৃন নয়। বন্ধুর পথ পাড়ি দিতে হবে তাকে। মুমিন হয়ে জন্মেছে সে, মৃত্যুটা যেন মুমিন হয়ে বেঁচে থাকার প্রমাণ হয়ে থাকে, এটাই চায় সে।

তাই নিজেকে সপে দিয়েছে দ্বীনের পথে। সামনে ক্বাবা ঘর। অজস্র মুমিন তাওয়াফ করছেন। হঠাৎ কেউ তার হাত ধরলো। পাশ ফিরে তাকালো সে। সাদাত মুচকি হেসে বাবার দিকে তাকিয়ে আছে। তার আরেক হাত মায়ের হাতের মুঠোয়। আরশ তাকালো রিশতার দিকে। রিশতার সবুজ নয়ন জোড়া দেখা যাচ্ছে। আরশ স্পষ্ট অনুভব করলো রিশতা বলছে, ‘ভয় নেই। আল্লাহ আছেন। আপনার আর আমার সন্তানদের জীবন সম্পূর্ণ আল্লাহর মনোনীত দ্বীনের জন্য। আল্লাহ আপনাদের সম্মানিত করবেন। সেটা হোক বেঁচে থেকে, অথবা মৃত্যু দিয়ে!’

আরশের মনের ভার কমে এলো। তার কোলে থাকা রুকাইয়াহ জ্বলজ্বল চোখে মুসলিমদের ভ্রাতৃত্ব দেখছে। সাদাফ মায়ের আরেক হাত ধরে দাঁড়িয়ে। তাদের পদধ্বনি বিলীন হলো শত শত তৃষ্ণার্ত মুমিনদের মধুর স্বরে।

ধরণীর জন্য কল্যাণকর এক পরিবার চলছে সত্য উন্মুক্তের পথে। মিশে আছে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে, মুমিনদের ছায়ার সাথী হয়ে। আর বজ্র কণ্ঠে উচ্চারণ করছে, ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক!’

__________

(সমাপ্ত আলহামদুলিল্লাহ)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here