গল্প :- সঙ্কোচ
পর্ব :- ০৭ এবং শেষ
Writer :- Kabbo Ahammad
.
.
-:”একদম চুপ। তোকে এখানে বিক্রি করে দেয়া হয়েছে। আমরা যা করতে বলবো, তাই করবি তুই। আর তা না করলে তোদের কিভাবে সোজা করতে হয়, তা জানা আছে আমার।

আশাকে কথাটি বলেই কবিতা চাবুক হাতে নিলো। তিনি এখানকার সর্দারনী। আজ বিকেলেই এখানে নিয়ে আসা হয়েছে আশাকে।

আশা সেই বৃদ্ধ লোকের কথায় ভুলে চলে আসে এখানে। কিন্তু এখানে এসেই ও বুঝতে পারে, ফাঁদে পা দিয়েছে। লোকটি তাকে ওদের হাতে তুলে দিয়ে মোটা টাকা নিয়ে নেয়। এখনও সে এখানে, সোফায় বসে টাকাগুলো গুণতে গুণতে মদ গিলছে। আশা ওর সামনে গিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বললো।

–“আপনাকে এতো বিশ্বাস করে এসেছিলাম, তার এই প্রতিদান দিলেন?

লোকটা তখন হো হো করে হাসতে হাসতে বললো।

–“আরে বোকা মেয়ে, সবাই তো আমাকে বিশ্বাস করেই এখানে আসে। কেউ অবিশ্বাস করে আসে নাকি?

–“ঠিক বলেছেন চাচা, এখনকার মেয়েগুলোও হয়েছে বোকার হদ্দ। অপরিচিত একজন আসতে বললো আর সাথে সাথেই খুশি মনে চলে এলো। (কবিতা বললো)

–“বোকা হয়েছে ভালোই হয়েছে। সব মেয়ে চালাক হলেতো ব্যবসা লাটে উঠতো। (লোকটি হেসে বললো)

ঠিক সেইসময়ই একজন দৌড়ে এসে আতঙ্কিত হয়ে জানালো।

–“বাইরে পুলিশ। পুরো বাড়ি ঘিরে ফেলেছে।

এ খবর শুনে ঘরে আতঙক ছড়িয়ে পড়লো। সবাই পালাতে চেষ্টা করলো, কিন্তু পারলো না। পুলিশ চলে এসেছে ততক্ষণে, সবাইকে গ্রেফতার করা হলো। এবং সব মেয়েদেরও নিয়ে যাওয়া হলো থানায়।

আশা তখন ইন্সপেক্টরকে বলার চেষ্টা করলো যে, তাকে আজ সন্ধ্যাতেই প্রতারণা করে নিয়ে আসা হয়েছে এখানে, কিন্তু তিনি খুব ব্যস্ত, আশার কথায় কানই দিলেন না। অন্য মেয়েদের সাথেই আশাকে নিয়ে যাওয়া হলো। ঠিক তখন পুলিশ ভ্যানে ওঠানোর সময় ওর সাথে চোখাচোখি হয়ে গেল আলিফের।

আলিফ মায়ের চোখ ফাঁকি দিয়ে চলে এসেছিলো আশাকে খুঁজতে। এখানটায় মানুষের ভীড় দেখে খোঁজ নিতে আসে। পুলিশের রেইড দেখতে ততক্ষণে মানুষের ভীড় জমে গিয়েছিলো বাড়ির সামনে। এমন আবাসিক এলাকায় যে এধরণের অসামাজিক কাজ চলছিলো কেউ বুঝতে পারেনি আগে। লোকজনের কাছ থেকে সব শুনতে পারে আলিফ। আশাকে ভুল বুঝলো আলিফ। ভাবলো, দিপা আগে থেকেই এসব কাজে জড়িত। ওদের বাসাতে তবে মিথ্যা বলে ছিলো এতোদিন। ছিঃ ছিঃ ছিঃ। মায়ের কথাই তবে ঠিক, এসব মেয়েদের বিশ্বাস করতে হয় না। আশার দিকে প্রচন্ড ঘৃণার দৃষ্টিতে তাকিয়ে, রাস্তার উপর একদলা থুথু ছুড়ে মেরে সে চলে আসলো ওখান থেকে। আশাও যা বোঝার, বুঝে নিলো।

থানায় যাওয়ার পর আশা ইনস্পেক্টরের সাথে কথা বলার সুযোগ পেলো। সে তাকে মিনতি বললো।

–“বিশ্বাস করেন, আমি এসবের কিছুর সাথেই জড়িত না। আজকেই এরা ধরে নিয়ে এসেছে আমাকে। আমাকে ও বাসায় তোলার কিছুক্ষণ পরেই আপনারা চলে এসেছিলেন। আমাকে প্লিজ ছেড়ে দিন।’

ইন্সপেক্টরের মায়া হলো। তিনি তখন বৃদ্ধ লোকটির দিকে তাকিয়ে বললো।

–“ও যা বলছে সত্যি?

–“জ্বী স্যার।

এরপর তিনি এবার আশার দিকে তাকিয়ে বললেন,

–“আপনার পরিচিত কারো সাথে কি যোগাযোগ করতে চান?

–“হ্যাঁ।

ইন্সপেক্টর তখন ফোন এগিয়ে দিলেন। আশা ওর বাবাকে ফোন করলো। আশার বাবা তখন হাসপাতালে।

মিরাকে হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। খুব খারাপ অবস্থা ওর। কাব্য এই প্রথম মায়ের অবাধ্য হয়েছে, বাড়ি ফিরে যায়নি। মিরার সাথেই ও আছে সবসময়। মিরার কথা বলতে খুব কষ্ট হচ্ছিলো। তবুও কোনোরকমে বললো।

–“কাব্য মামাকে একটা কথা বলতাম। তার কাছে আমাকে নিয়ে যেতে পারবে প্লিজ?

মিরার তো এখন চলাফেরারই ক্ষমতা নেই, কিভাবে যাবে ও? তখন কাব্য আশার বাবাকে গিয়ে নিয়ে আসলো মিরার কাছে। তখন মিরা তাকে বললো।

–“মামা, আমি অনেক বড় অপরাধ করে ফেলেছি। আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিন।

মামা তখন মিরার মাথায় হাত বুলিয়ে বললো।

–“মা, আমার এক মেয়েকে আমি হারিয়েছি, তোমাকে হারাতে দেবো না। তুমি সুস্থ হয়ে ওঠো।

–“আপনার মেয়ের উপর যে অবিচার আমি করেছি, এটা তার পরিণাম। আমি আর ভালো হবো না।

ঠিক এসময়ই মামার কাছে আশার ফোন আসলো। তখন সাথে-সাথেই মামা আর কাব্য দুজনেই থানায় ছুটে যান। ইন্সপেক্টরের কাছ থেকে সব কথা শোনেন, এরপর ইনস্পেক্টরকেও তাদের সব কথা জানান। তারপর থানা থেকে ছেড়ে দেয়া হয় আশাকে। তারা হাসপাতালে ছুটে যায় সবাই। মিরা বারবার করে বলে দিয়েছিলো, আশাকে যেন তারা প্রথমে তার কাছেই নিয়ে আসে।

আশাকে নিয়ে আসার পর।
মিরা আশাকে দেখেই কেঁদে ফেললো। এবং ফিসফিস করে বললো।

–“বোন, তুমি বেঁচে আছো? তোমার উপর কত অবিচার করেছি আমি। এর শাস্তিও ভোগ করছি, দেখো।

–“আপনি আমার উপর কোনো অবিচারই করেননি। এসবই আমার ভাগ্য। আপনি সুস্থ হয়ে উঠুন। (আশা কেঁদে ফেলে বললো)

–“না বোন। আমি আর সুস্থ হবো না। তুমি আমায় ক্ষমা করে দিও। আর আমার সংসারটুকু আগলে রেখো।

–“মানে?

মিরা তখন কাব্যর দিকে ফিরে বললো।

–“তুমি আমায় ছুঁয়ে প্রমিজ করো, আমি চলে গেলে তুমি আশাকে স্ত্রীর মর্যাদা দিব। করো প্রমিজ।

–“মিরা, তুমি সুস্থ হও আগে…

–“কাব্য আমায় প্রমিজ করো। (মিরা রেগে গিয়ে বলল)

কাব্যর ও তখন আর কোনো উপায় ছিলো না। সে মিরার হাত ছুঁয়ে প্রতিজ্ঞা করলো।

মিরার মুখে এবার তৃপ্তির হাসি ফুটলো। এরপর হঠাৎ করেই জোরে জোরে শ্বাস নেয়া শুরু করলো সে, যেন শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। ইসিজি মেশিনও জোরে সাউন্ড করা শুরু করলো। ডাক্তার নার্সরা দৌড়ে এলেন। কাব্য মিরার হাত শক্ত করে চেপে ধরে চিৎকার করে বললো।

–“তোমার কিছু হতে দেবো না আমি মিরা, তোমাকে কোথাও যেতে দেবো না…….
.
.
.
কয়েক মাস পর……….

আশা আধহাত ঘোমটা টেনে বিছানায় বসে আছে, খুব লজ্জা লাগছে ওর। ওকে ঘিরে আছে মেয়েদের দল। একটু পরেই কাব্য ঢুকলো ঘরে, ওকে দেখে মেয়েরা সবাই বের হয়ে গেল একে একে।

তারপর কাব্য আশার পাশে বসে বললো।

–“আশা সবাই তো তোর কাছে ক্ষমা চেয়ে নিয়েছে, শুধু আমি বাদে। আমাকে কি ক্ষমা করা যায়?

আশা তখন মুখ তুলে কাব্যর দিকে তাকালো। ওর মনে পড়ে গেল বেশ কয়েকমাস আগের কথা।
.
.
সেদিন ওরা সবাই ছিলো মিরার পাশে, হাসপাতালে। মিরার হার্টবিট কমে যাচ্ছিলো। ও আশাকে ওর সংসারের ভার দিয়ে দিয়েছিলো, সাথে কাব্যকেও প্রতিজ্ঞা করিয়ে নিয়েছিলো আশাকে স্ত্রীর মর্যাদা দেওয়ার। এরপর মিরার শ্বাসকষ্ট শুরু হলো। ডাক্তাররা ছুটে এলেন, কিন্তু মিরাকে দেখেই মাথা নাড়াতে লাগলেন, কারন আর কোনো আশা নেই।

কাব্য পুরো সময়টাতেই মিরার পাশে ছিলো, মিরার হাতটুকু নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে। যখন ডাক্তাররা বললেন আর কিছুই করার নেই, তখন সবাই অপেক্ষা করছে মিরার চলে যাওয়ার, ঠিক সেসময়টাই কাব্য মিরার কানে কানে কি যেন বললো।

এরপরই, হঠাৎ করে একদম সিনেমার গল্পের মতো, হঠাৎ চোখ মেলে তাকালো মিরা। ওর হার্টবিট বাড়তে লাগলো আস্তে আস্তে। ডাক্তাররা অবাক হয়ে চিৎকার করে উঠলেন,

-“কি অদ্ভুত! কি অদ্ভুত!

তারপর মিরা সুস্থ হয়ে উঠতে লাগলো ধীরে ধীরে। ডাক্তার, নার্স, আশার বাবা, আশা সবাই একবার করে জিজ্ঞেস করেছিলো কাব্যকে, যে ও মিরার কানে কানে কি বলেছিলো, কিন্তু কাব্য মুখ খোলেনি। কাব্যর মা অবশ্য বলেছিলেন, সবটাই মিরার ঢং। তবে এরপর আর কখনোই মিরাকে ডিভোর্স দেওয়ার কথা তুলেননি তিনি।

অবশ্য সবটাই যে সুন্দর হলো তা না। মিরার বেবিটা মারা গেল। মিরা যখন এ খবরটা শুনলো, তখন খুব ভেঙে পড়েছিলো সে। আশা সেসময় রাতদিন খেটেছে মিরার জন্য, ওর পাশে থেকে ওর সাহস জুগিয়েছে। ওর সেবাতেই আস্তে আস্তে সুস্থ হয়ে উঠলো মিরা।

হাসপাতাল থেকে রিলিজের দিন মিরা আশাকে তাদের বাসায় নিয়ে যেতে চাইলো, তার খারাপ ভাইদের কাছে আর তাকে ফিরে যেতে দেবে না। কিন্তু আশা কিছুতেই যাবে না। কাব্য আর মিরার সংসারে আবার তৃতীয় পক্ষ হয়ে ঢুকতে চায় না সে। মিরাও নাছোড়বান্দা, আশাকে ছাড়বে না। শেষে আশা মিরাদের সাথে থাকতে রাজি হলো, তবে এক শর্তে। আশাকে ডিভোর্স দিতে হবে কাব্যর। মিরা প্রথমে রাজি হচ্ছিলো না। কিন্তু আশাও জেদ ধরে থাকলো, শেষ পর্যন্ত মেনে নিলো মিরা। আশা মিরাদের বাসাতে গিয়ে উঠলো। কিছুদিনের মধ্যে ডিভোর্স হয়ে গেল কাব্য আর আশার।

এদিকে আশার বাবা তার গ্রামের সেই দশ বিঘা সম্পত্তি শেষ পর্যন্ত আশার নামেই লিখে দিলেন। তাদের ভাইদের বিরুদ্ধে মামলা হলো। তাদের আরো কিছু অপকর্মের জন্যও মামলা চলছিলো তাদের নামে। সব মিলিয়ে জেরবার অবস্থা তাদের। এক সকালে পুলিশ এসে ধরে নিয়ে গেল দুভাইকে। দুভাইয়ের বউ কাঁদতে কাঁদতে বাপের বাড়ি চলে গেল, যেদিন তাদের স্বামীরা ছাড়া পাবে, সেদিনই তারা শ্বশুরবাড়ি ফিরবে।

তারপর মিরা একদিন কাব্যকে বললো।

–“আশার তো বিয়ে দেয়া উচিত। কতদিন আর এমন একা একা থাকবে বেচারি।

তখন কাব্যও সায় দিলো মিরার প্রস্তাবে।

এরপরে এক বিকেলে মিরা আশার কাছে এসে বললো,

–“আসো তোমাকে একটু সাজিয়ে দেই। কয়েকজন দেখতে আসবে তোমাকে।

–“কি বলো ভাবি। আমি বিয়ে করবো না। (আশা চমকে উঠে বললো)

–“আরে দেখলেই কি আর বিয়ে হয় যায় নাকি। তুমিও ছেলেকে দেখবে। পছন্দ হলে হ্যাঁ বলবে, নাহলে নাই।

তারপর সন্ধ্যায় ছেলের বাড়ির লোকজন আসলো। আশা ট্রে হাতে ঘরে ঢুকে ছেলেকে দেখেই ভয়ানক ভাবে চমকে উঠলো। কারন আলিফ হাসি মুখে তাকিয়ে আছে ওর দিকে। আশা অবাক হয়ে ভাবলো, “আলিফ তার পরিচয় জানলো কি করে?

আশা তো আর জানে না, মিরা আর কাব্যই যোগাযোগ করেছিলো আলিফের ফ্যামিলির সাথে। মিরাকে আশা ওর পালিয়ে যাওয়ার পর ঘটা সমস্ত ঘটনাই জানিয়েছিল, আলিফদের বাড়িতে আশ্রয় নেয়ার কথাও। আশার জন্য পাত্র খুঁজতে গিয়ে প্রথমেই মিরা আর কাব্য আলিফের খোঁজ করে। ওদের বাড়ির ঠিকানা পাওয়া গেলে একদিন দুজন মিলেই চলে যায় ওদের বাসায়, ওদেরকে আশার সমস্ত কাহিনী খুলে বলে। এরপর আশার সাথে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। আশার কাহিনী শুনে খুব মায়া হয় ওদের, এবং বিয়েতে আর কেউই অমত করে না।

তখন আশাকে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকতে দেখে আলিফের মা হেসে বললেন।

–“মেয়েতো আমাদের দেখাই আছে। আজকে বিয়ের দিনক্ষণ ঠিক করে ফেলি।

–“আমাকে মাফ করবেন সবাই। এ বিয়ে আমি করতে পারবো না।

বলেই আশা তার রুমে চলে গেল সবাইকে অবাক করে দিয়ে। মিরাও তখন আশার রুমে গিয়ে বললো।

–“কি ব্যাপার আশা? তুমি না ছেলেটাকে পছন্দ করতে? আজ এমন করলে কেন?

আশা চোখে পানি নিয়ে বললো।

–“করতাম ভাবি। কিন্তু ওদের বাসা থেকে আমাকে কিভাবে তাড়িয়ে দেয়া হলো তুমি তো দেখোনি। তাও মানলাম, ওর মা ভুল বুঝে এমন করেছে। কিন্তু ও আমাকে পুলিশ ভ্যানে যেভাবে থুথু ছিটিয়েছিলো তা আমি ভুলতে পারবো না। কেউ কাউকে ভালোবাসলে এমন করতে পারে ভাবি?

–“আচ্ছা ঠিক আছে। বিয়েটা তো তোমারই, তোমার মত না থাকলে বিয়েটাতো আর হবে না। আমি না করে দেই ওদের।

বলে মিরা চলে গেল।
তার দুদিন পর, আশা বাইরে থেকে বাসায় ফিরছে, এমন সময় দেখলো গেটের সামনে আলিফ দাঁড়িয়ে আছে। আশাকে দেখতে পেরেই সে এগিয়ে এসে বললো।

–“আপনাকে কিছু কথা বলবো, প্লিজ একটু শুনুন।

–“জ্বী বলেন।

–“আপনি কেন রেগে আছেন, আমি বুঝতে পারছি। রাগ করাই তো স্বাভাবিক। কিন্তু দেখেন, আপনি আমার সিচ্যুয়েশনে পড়লে কি এরকমই কিছু করতেন না? আপনাকে খুব ভালো লেগেছিলো আমার, চেয়েছিলাম আপনার সাথে সুখ দুঃখ ভাগ করতে। কিন্তু আপনি হঠাৎ করে চলে গেলেন। যখন আপনাকে খুঁজতে বের হলাম, তখন আপনাকে পেলাম ঐ খারাপ জায়গাতে। তখন আমার যে কি খারাপ লাগছিলো, তা আমি কিভাবে বোঝাবো আপনাকে। মনে হচ্ছিলো আপনি আমাকে ঠকিয়েছেন। তখন আমি আর মাথা ঠিক রাখতে পারি নি, অমন একটা আচরণ করে ফেলেছি আপনার সাথে। আপনার কাছে ক্ষমা চাওয়ার ভাষাও আমার নেই।

এরপর যখন মাথা ঠান্ডা হলো, আপনাকে খুঁজতে গিয়েছিলাম থানায়। কিন্তু শুনলাম আপনাকে নাকি আপনার ফ্যামিলির লোকজন নিয়ে গেছেন। আমি আপনার ঠিকানা চেয়েছিলাম, কিন্তু থানা থেকে দেয়া হয়নি। যখন ভাবছিলাম আপনাকে হারিয়ে ফেলেছি, তখনই আপনার ভাই ভাবি যোগাযোগ করে আমার সাথে।

এদিকে আশা চুপচাপ সব শুনে গেল, কিছু বললো না।

আলিফ তখন আবার বললো।

–“দেখুন, আপনি না করে দেয়ার পর মা খুব রেগে গিয়েছিলো। আমি বুঝিয়ে শুনিয়ে শান্ত করেছি মাকে। এরপর আমার আরো দুএকটা বিয়ের সম্বন্ধ আসছে, কিন্তু আমি মানা করে দিয়েছি। আমি আপনার কাছ থেকে একটি শেষ উত্তর পেতে চাই। আমাকে কি আরেকটা সুযোগ দেয়া যায় না?’

কিন্তু আশা চুপ করে আছে, যেন কি বলবে বুঝতে পারছে না। তখন আলিফ বললো।

–“থাক, আজ কিছু বলতে হবে না। আমি কাল আসবো আপনার উত্তরটা জানার জন্য। আসি।

বলেই চলে গেল সে।

আশা ওর রুমে গিয়ে লাইট না জ্বালিয়েই শুয়ে পড়লো। মিরা রুমে ঢুকে বললো।

–“কি ব্যাপার আশা? রুম অন্ধকার করে বসে আছো যে?

–“ভাবি, কেউ যদি কোনো ভুল করে, তবে তাকে আরেকটা সুযোগ দেয়া কি ঠিক হবে?

–“কেন ঠিক হবে না? মানুষই তো ভুল করে। সেই ভুল বুঝতে পেরে কেউ যদি তা শুধরোতে চায়, তবে তো দোষের কিছু নেই। কিন্তু কেন এই কথা বলছো?

–“একজনকে আরেকবার সুযোগ দিতে চাই। (আশা লাজুক হেসে বললো)
.
.
–“কিরে? কি চিন্তা করছিস? মাফ করবি না আমাকে?

কাব্যর ডাকে বাস্তবে ফিরে এলো আশা। আজ ওর বিয়ে আলিফের সাথে, একটু পরেই বরযাত্রীরা চলে আসবে। আশা তখন কাব্যকে বললো।

–“আপনাকে এক শর্তে মাফ করতে পারি। যদি আমাকে বলেন যে মিরা ভাবির কানে কানে সেদিন কি বলেছিলেন হাসপাতালে?

কাব্য তখন লজ্জায় লাল হয়ে বললো।

–“সেটা আমাদের সিক্রেট। তোকে বলা যাবে না।

–“আচ্ছা বলতে হবে না। আপনাকে অনেক আগেই ক্ষমা করে দিয়েছি আমি। (আশা হাসতে হাসতে বললো)

–“আরে তুমি এখানে? ওদিকে তো বরযাত্রীরা চলে আসলো। (মাঝখানে মিরা এসে বললো)

–“ওহো, এখনি যাচ্ছি। (বলেই কাব্য তাড়াতাড়ি চলে গেলো)

তারপর আশা মিরার কাছে এসে বললো।

–“তোমাকে অনেক ধন্যবাদ ভাবি। তুমি না থাকলে এই দিন আমি দেখতে পেতাম না।

মিরা তখন হেসে আশাকে জড়িয়ে ধরে বললো।

–“ধুর বোকা। ধন্যবাদের কি আছে? তুমি আমার জন্য যা করেছো তার থেকে তো এটা সামান্যই। দোয়া করি, স্বামী-সংসার নিয়ে অনেক অনেক সুখী হও।
.
.
সমাপ্ত…………..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here