সংসার
লেখা:রাইসা।
পর্ব:৫
– ঠাস! লজ্জা করে না? তুই যদি নগ্ন হয়েও থাকিস এই রাজ তোর দিকে ফিরে তাকাবে না। তোর শাড়ি খুলা তো দূরের কথা। আমার সম্পক্তির লোভে তুই প্রেমের ঝালে ফাঁসাতে চাস। এই জন্যই বাসর রাতে তোর সাইন নিয়ে নেয় ডির্ভোস পেপারে।
– মৌ কিছু না বলে শুধু দু’চোখে অশ্রু ঝরাতে লাগল। এদিকে রাজ চলে গেলেই, মৌ দু’বার করে বমি করে দিল। মাথাটা কেমন যেন ঘুরছে। বিকেল বেলা, বাহিরে যাওয়ার নাম করে হসপিটালে গিয়ে ডাক্তারকে সবকিছু খুলে বলল! ডাক্তার কিছু পরীক্ষা-নীরীক্ষা করে বলল’ খুশির খবর আপনি মা হতে চলছেন। ‘
– ডাক্তারের কথাটা আনন্দের হলেও মৌ এর চোখে অজান্তেই জল এসে ভর করলো ।
– কি হলো আপনি কাঁদছেন কেন?
– ম্যাডাম খুশিতে চোখে জল এসে গেছে।
– ওহ্ আচ্ছা। আর হ্যাঁ সব সময় সচেতন থাকবেন।
– ধন্যবাদ। আমি এখন আসি?
– আচ্ছা।
– মৌ হসপিটাল থেকে বের হয়ে সোজা বাসায় এসে পড়ে। মৌ বাসায় এসে ভাবতে লাগে কাজটা কি সে ঠিক করল। রাজের না করা সত্ত্বেও বেবীটা সে নিল।
– মৌ কিছু ভাবতে পারছে না। রাজ যদি শুনে সে প্রেগনেন্ট সে কি ভাববে? রাজকে কোন ভাবেই প্রেগনেন্টের কথা বলা যাবে না। বলা যাবে না সেদিন যখন রাজ পিল দেয় তখন সে পিল না খেয়ে মুখে রেখে দেয়। আর যখন রাজ চলে যায় তখন মুখ থেকে পিল ফেলে দিয়েছে। এ কথা শুনলে সে অনেক রাগ করবে। এসব ভাবতে ভাবতে চোখে জল এসে যায়। রাজ যদি বাবার পরিচয় না দেয়। সবাই কি বলে ডাকবে। এসব ভাবতে ভাবতে বুক ফেটে কান্না আসে মৌ এর।
.
বিকেল বেলা আসরের নামায পড়ে মৌ যখন বসে আছে বিছানায়। এমন সময় রিত্ত আর রাজের মা আসলো।
– মৌ দাঁড়িয়ে সালাম দিয়ে বললো’ মা কিছু বলবেন?
– হুম, রিত্তের কলেজ ছুটি, আর ওদিকে আমার ভাইটাও অসুস্থ। সকালে রাজকে বলেছিলাম সবাই মিলে যাবো। আর রাজ তো যেতে পারবে না। এদিকে বাড়ির কাজের মহিলাটাও ছুটি নিয়েছে। ভাবছিলাম তোমাকে নিয়ে যাবো। কিন্তু নিতে পারছি না বৌ মা।
– আরে মা, আপনারা যান। রাজকে ছেড়ে আমি কিভাবে যাবো?
– সত্যি বৌ মা তোমাকে ছেড়ে যেতে খারাপ লাগছে। এদিকে ভাইটাও ছাড়ছে না। নাছোড়বান্দা যেতেই বলেছে।
– আচ্ছা মা আপনি চিন্তা করবেন না।
– ঠিক আছে মা, আমরা তাহলে যাই। আর হ্যাঁ মনখারাপ করো না মা। আর রাজকে দেখে রেখো।
– আচ্ছা।
– এদিকে রিত্ত আর রাজের মা চলে গেলে, মৌ রান্না করে রাজের জন্য অপেক্ষা করছে। রাজ রাতে এসে দেখে মৌ খাবার টেবিলেই ঘুমিয়ে গেছে।
– মৌকে ডাক দিতে গিয়েও ডাক দিলো না । রাতের কথা ভেবে মনটা খারাপ হয়ে যায় রাজের।
– তাই মৌকে ডাক না দিয়েই শুয়ে পড়ে। রাত বারোটার দিকে যখন মৌ এর ঘুম ভেঙে যায়। ঘুম ভেঙেই দেখে রাজ ঘুমাচ্ছে বিছানায়। পা থেকে জুতোটাও খুলে নাই। মৌ খাবার টেবিলের দিকে তাকিয়ে দেখে খাবার যেমন রাখা আছে তেমনি । রাজ খাবার খায়নি। মৌ খাবারটা ওভাবেই রেখে রাজের পা থেকে জুতো খুলে পায়ে একটা চুমু দিয়ে বললো ‘ আমি কতই না ভাগ্যবতী হতাম যদি তোমার পায়ের নিচে একটু স্থান পেতাম সারাজীবনের জন্য। এ বলে পা জোড়া বুকে জড়িয়ে কাঁদতে থাকে। কাঁদতে কাঁদতে কখন যে পায়ের কাছে ঘুমিয়ে যায় খেয়াল নেই।
। ফজরের আযান হচ্ছে। আযান শুনে ঘুম ভেঙে যায় মৌ এর। ঘুম থেকে উঠে অযু করে নামাযে যাওয়ার আগেই ভাবল, রাজকে ডেকে দেয়। আমি চাই না আমার স্বামী জাহান্নামী হোক। মৌ রাজের মাথায় কাছে গিয়ে দু’বার ডাক দিতেই রাজ ঘুম থেকে উঠে’ চোখ কচলিয়ে কচলিয়ে বলতে লাগো ‘ এই ডাকছিস কেন আমায়?’
– ফজরের আযান হয়ে গেছে। অযু করে নামাযটা পড়ে নেন।
– এই তোকে না বলছি নামাযের জন্য ডাকবি না?
– আমার ভালোর জন্য কি ডাক দেয়? আপনার জন্যই তো ডাকি।
– রাজ এবার রেগে গিয়ে মৌ এর গালে চড় বসিয়ে দিয়ে বললো’ আমার ভালো তোর বুঝতে হবে না। রক্ষিতাদের আবার নামায। পারলে তুই গিয়ে পড়।
– রাজের মুখে রক্ষিতা কথা শুনে দু’চোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়তে লাগল। মৌ চোখের পানি মুছতে মুছতে জায়নামাযে গিয়ে বসলো। নামায শেষ করে প্রতিদিনের মতো আজও বললো’ হে আল্লাহ আমার স্বামীকে আপনি হেদায়েত দেন। ‘আমি আমার জন্য কিছু চাই না। আপনি আমার স্বামীকে কবুল করে নেন। তার ওপর কোন আযাব দিবেন না। যা দেওয়ার আমাকে দেন। তবে হে রাব্বে আল্লাহ সহ্য করার শক্তিটাও আপনি আমাকে দিবেন।
-নামায শেষ করে মৌ ব্রেকফাস্ট রেডি করতে চলে যায়। এদিকে রাজ ঘুম থেকে উঠে বেলকণীতে যখন যায়। এমন সময় রাজের ফোনটা ক্রিং ক্রিং করে বেজে ওঠে। ফোনের দিকে তাকাতেই দেখে মা ফোন করেছে। রাজ ফোনটা ধরেই বললো’ মা কোথায় তুমি?’
– আর বলিস না তোর মামা বাড়ি আসছি।তকে না গতকাল সকালে বললাম? আর শোন আমাদের ফিরতে সপ্তাহ খানেক লেট হবে। আর ঠিকমতো থাকিস। একদম বৌ মার সাথে খারাপ ব্যবহার করবি না।
– আচ্ছা মা। আর তুমি তাড়াতাড়ি এসো।
– আচ্ছা, সাবধানে থাকিস।
– রাজ ফোনটা কেটে দিয়ে ব্রেকফাস্ট করে যখন রেডি হচ্ছে। এমন সময় মৌ বললো ‘ আপনাকে নীল কোর্টে অনেক সুন্দর লাগে।
– রাজ গায়ে থেকে নীল কালারের কোর্ট খুলে কালো রঙেরটা পড়ে বের হয়ে গেল।
– রাজ অফিস গিয়ে দেখে তার চেয়ারে সুমাইয়া বসে আছে। রাজকে দেখেই সুমাইয়া জড়িয়ে ধরে।
– এই কি করছো? এটা তো অফিস কেউ দেখবে তো।
– আচ্ছা ছেড়ে দিলাম। আর শোন মা, রিত্ত তারা কেমন আছে?
-হ্যাঁ ভালো আছে।
– চলো আজ তোমার মায়ের সাথে দেখা করতে যাবো।
-কেন?
– শাশুড়ীকে দেখতে যাবো তাই।
– মা আর রিত্ত বাসায় নেই। মামা বাড়ি গেছে?
– সত্যি বলছো?
– হুম।
– তাহলে চলো, আজ তোমাদের বাসায় রোমাঞ্চ করবো।
– মৌ! ওই কি ভাববে?
-তুমিও না। ও কিছু ভাববে না। ও তো চুক্তি করেছে। কিছুই বলবে না। আর তুমি তো ডির্ভোস দিচ্ছোই।
– আচ্ছা চলো। রাজ সুমাইয়াকে নিয়ে বাসায় এসে পড়ে।
– বাসায় এসে দেখে মৌ রুমে বসে আছে।
– সুমাইয়া মৌকে দেখেই বলে,জান একে তুমি ভাড়া করেছো?
– হুম।
– আচ্ছা এই যে তুমি আমাদের জন্য নাস্তা রেডি করো তো।
– মৌ কিছু বলছে না। ফ্যালফ্যাল করে রাজের দিকে তাকিয়ে আছে।
– কি হলো? এখনো যাচ্ছো না কেন? সুমাইয়া কি বললো শুনতে পারলে না?
– মৌ বুকে পাহাড়সম কষ্ট চাঁপা দিয়ে মুচকি হেসে বললো’ যাচ্ছি। ‘
-মৌ চলে গেলেই, সুমাইয়া রাজকে জড়িয়ে ধরে। এই সুমাইয়া কি হচ্ছে?
– কি হচ্ছে বুজো না? আমার জানকে আদর করছি। সুমাইয়া রাজকে বিছানায় ফেলে দিয়ে রাজকে আলিঙ্গণ করে নেয়।
– এদিকে মৌ নাস্তা রেডি করে নিয়ে এসে যখন দরজা ধাক্কা দেয়। এমন সময় দেখে সুমাইয়া আর রাজ অধঃ উলঙ্গ। মৌ আর সহ্য করতে পারে না।
– সুমাইয়া হঠাৎ দরজা খুলার শব্দে মৌকে এভাবে দেখতে পেয়ে রাগে ফুসলে উঠে। মৌ এর গালে চড় বসিয়ে দিয়ে বলে’ তুই রুমে আসবি দরজা নর্ক করে আসবি না?
– সরি ম্যাডাম ক্ষমা করে দিবেন। আমি বুঝতে পারিনি। এই নেন আপনাদের নাস্তা।
– আচ্ছা এখন তুই যা। আমরা না ডাকলে আর রুমে আসবি না।
– মৌ রুম থেকে বের হয়ে ফুপিয়ে কাঁদতে লাগল। মনে হচ্ছে তার কলিজাটা কেউ কুচিকুচি করে কাঁটতেছে। মৌ পারছে না তার ভাগটা সুমাইয়াকে দিতে। মনে প্রাণে রাজকে সে স্বামী হিসেবে গ্রহণ করেছে।
– মৌ এর খুব কষ্ট হলে, সে নামায পড়ে। এতে কষ্ট কম হয়। এবারো তার ব্যতিক্রম হলো না।
– এদিকে রাজ আর সুমাইয়া বালিশ নিয়ে মারামারি করতে সময় সুমাইয়ার হাতের বালিশটার কভার খুলে যায়। আর সাথে সাথে বালিশের কভার থেকে একটা কাগজ বেরিয়ে আসে।
– রাজ কাগজটা হাতে নিয়েই দেখে মৌ এর পেগন্যান্সি রির্পোট। রাজের মাথায় রক্ত উঠে যায়।
– রাজ রির্পোট নিয়ে দৌড়ে বের হয়। রাজের মন চাচ্ছে কালনাগিনীটাকে এখনি মেরে ফেলি। রাজ রুম থেকে বের হয়েই দেখে, মৌ নামাযের মোনাজাতে। মোনাজাত শেষ করে যখন জায়নামায থেকে উঠে দাঁড়ায়। রাজ তখনি মৌ এর গালে সজোরে থাপ্পর বসিয়ে দেয়। মৌ মাথা ঘুরে জায়নামাযে পড়ে যায়। নাক ফেটে রক্ত জায়নামাযে পড়তে লাগে ।
চলবে”””