সংসার
পর্ব:০৮ +০৯
লেখা:রাইসা
এ ভাবে সম্পূর্ণ বস্ত্রহীন হয়ে আমাকে তোর বিশেষ বিশেষ অঙ্গ প্রদর্শন করালে কি আমি তোর প্রেমে পড়ে যাবো?রাজ কখনো রাস্তার রক্ষিতার দিকে ফিরেও তাকায় না। আর হ্যাঁ কোনদিন যদি আজকের মতো করতে দেখি, তাহলে তোর কি হবে আল্লাহ জানে। রক্ষিতা কথাকার।
– রাজের মুখে রক্ষিতা কথাটা শুনে মৌ এর গাল বেয়ে টপটপ করে পানি পড়তে লাগল। মৌ কান্না থামাতে পারছে না। কান্না জড়িত কন্ঠে বলল’ আপনি তো জানেন আমি শাড়ি পরতে পারি না । আর টাওয়াল তো আরো পরতে পারি না। এমন সময় পিছন থেকে কে যেন বললো’কি হয়েছে জান? রক্ষিতাটা তোমায় কিছু বলেছে।
– মৌ পিছনে চেয়েই দেখে সুমাইয়া। মৌ কিছু না বলে চলে গেল।
-না কিছু বলেনি।
– আচ্ছা বলেছিলাম না রাজ তোমাকে, আমরা আজ সারা শহর ঘুরবো।
– হ্যাঁ ঘুরবো তো।
– তাহলে চলো!
– হুম। চলো।
– মৌ রাজকে চলে যেতে দেখে বললো’ খেয়ে যাবেন না?’
– না। আমার ক্ষুধা নেই। এই বলে সুমাইয়ার সাথে রাজ চলে গেল।
– মৌ রুমে বসে বসে কাঁদছে এমন সময় মৌ এর ফোনটা বেজে ওঠল। ফোনটা রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে কেউ একজন বলল’ আপনি একটু হসপিটাল আসবেন? রির্পোট গুলো রেডি। যদি আসতেন? আর হ্যাঁ পারলে টাকাটা নিয়ে আসবেন। মৌ ফোনটা কেটে দিয়েই ভাবতে লাগল এখন রাজের কাছে টাকা চাইলে কি ভাববে?
– এদিকে রাজ আর সুমাইয়া রেস্টুরেন্টে চলে যায়। রেস্টুরেন্টে বসে একজন আরেকজনকে খাইয়ে দিচ্ছে। এমন সময় ফোনটা বেজে ওঠল। ফোনটা বের করেই দেখে ‘ মা ফোন দিয়েছে।’
– হ্যালো মা।
– হ্যাঁ বাবা কেমন আছিস?
হ্যাঁ মা ভালো আছি। আর তোমরা কেমন আছো?
– হ্যাঁ ভালো। তোর কোন সমস্যা হচ্ছে না তো?
– কি যে বলো মা! মৌ থাকতে আমার কোন সমস্যায় হবে না। তুমি মামা সুস্থ হলে এসো।
– আচ্ছা বাবা, মৌ এর দিকে খেয়াল রাখিস।
– কি যে বলো মা, মৌ তো আমার সাথেই। মৌকে খাইয়ে দিচ্ছি।
– আচ্ছা ভালো থাকিস। আর আমরা পরশু এসে পড়ছি।
– আচ্ছা। ফোন কেটে দিতেই সুমাইয়া একটা মুচকি হাসি দিয়ে বলল। জান আজকে পাস্তাটা অন্য রকম সাধ ছিল। তাই বুঝি। তা এতো সাধ হলো কিভাবে?
– আরে আমার জান আমাকে খাইয়ে দিয়েছে যে তাই।
-লাভিউ হার্ট।
-হঠাৎ রেস্টুরেন্টে সুমাইয়া আর রাজের ফেন্ডদের সাথে দেখা হয়ে যায়। কথায় কথায় সুমাইয়া বলে দেয় আজকে রাজের বাড়িতে মা-আর আপু নেই। তাই সে বাড়িতে পার্টি হবে। রাজও আর কিছু বলে না। বন্ধুদের বাসায় আসতে বলে সুমাইয়া আর রাজ বাসায় এসে পড়ে।
– রাজ বাসায় আসতেই দেখে মৌ বিছানায় শুয়ে ঘুমিয়ে গেছে।
– জান তোমার রক্ষিতাকে বলো না অন্য রুমে যেতে। তোমাকে খুব কাছে পেতে মন চাচ্ছে। এমন সুযোগ তো বারবার পাবো না। হুম হার্ট। আচ্ছা বিয়ের আগে এতোটা ঘনিষ্ট হওয়া কি ঠিক?
– জান তুমি আমায় ভালোবাস না। ভালোবাসলে এ কথা বলতে পারতে? আমার মন প্রাণ তো সে কবেই তোমাকে দিয়ে দিয়েছি। আর আমার বিশ্বাস আছে আমার জান আমাকে ঠকাবে না। আমায় অনেক ভালোবাসে।
– তাই বুঝি?
– হ্যা তাই।
– আচ্ছা মৌকে উঠিয়ে দিচ্ছি।
– এই মৌ, মৌ। দু’বার ডাক দিতেই মৌ ঘুম থেকে জেগে যায়। মৌ ঘুম ঘুম চোখে বলে কিছু বলবে?
– তুমি অন্য রুমে যাও।
– আমার না শরীর খারাপ লাগছে খুব। একটু পর ওঠি?
– জান দেখছো নবাব জাদি কি বলে?
– মৌ অসুস্থ শরীর নিয়ে বিছানা থেকে কোন রকম ওঠে, পাশের রুমে চলে যায়। মৌ চলে যেতেই সুমাইয়া ঘরের দরজা লাগিয়ে দেয়।
– এই দরজা লাগাচ্ছো কেন?
– ন্যাকা তুমি কিছুই বুঝো না?
– না তো।
– কাছে আসো বুঝাচ্ছি।
– না আমার ভয় করে।
– ভয় করবে না। আসো।
– রাজ কাছে যেতেই সুমইয়া রাজকে জড়িয়ে ধরে বিছানায় শুয়ে পড়ে। আচ্ছা জান চোখ বন্ধ করো ।
– কেন?
– সারপ্রাইজ আছে।
– রাজ চোখ বন্ধ করে বুঝতে পারছে সুমাইয়া গা থেকে কাপড় খুলছে। রাজ সুমাইয়াকে জড়িয়ে ধরে বলে, এটা বাসর রাতের জন্য থাকুক।
– হুমম। বিয়ে যে কবে করবে তুমি?
– আমার অনেক ভয় হয়। রক্ষিতাটা যেমন করে, তোমাকে যদি আমার কাছ থেকে কেড়ে নেয়। আমি সত্যি মরো যাবো দেখো। তুমি আমার জীবন। তাই তোমাকে সব দিতে চাই। তবুও, তুমি যেয়ো না।
– ধূর পাগলী, তোমাকে ছাড়া যে আমিও বাঁচবো না। বড্ড বেশি ভালোবাসি পাগলীটাকে। সারাজীবন ভালোবাসবো।
– হুম খুব ভালোবাসো। একটা পাপ্পি ও দিচ্ছো না কিপ্টা কথাকার।
– তুমা সত্যিই কিপ্টা।
– দাঁড়াও কিপ্টা না কি দেখাচ্ছি। এই বলে রাজ তার ওষ্ঠ দ্বয়, সুমাইয়া, ওষ্ঠ যোগলে স্পর্শ করে।
– এদিকে মৌ এখনো খায়নি রোযা রেখেছে । রোযা নিয়ে রাজ আর সুমাইয়ার এসব দৃশ্য সহ্য হচ্ছে না তার। মন চাচ্ছে নিজেকে শেষ করে দেয় । কিন্তু না। আর প্রতিদিন এসব দৃশ্য সহ্য হয় না। মানুষ কিভাবে পারে এসব করতে। দেখতে দেখতে মাগরিবের নামাযের আযান হয়ে যায়। মৌ হালকা কিছু খাবার দিয়ে ইফতার করে নামাযে দাঁড়িয়ে যায়। নামায শেষ করতেই কলিং বেলটা বেজে ওঠে।মৌ দরজা খুলতেই দেখে, অনেকগুলো কয়েকজন ছেলে আর মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
– আপনারা কে?
– আমরা রাজের ফেন্ড! রাজ বাসায় আছে।
– হ্যাঁ আছে। এদিকে কলিং বেলের শব্দ শুনে রাজ আর সুমাইয়া এসেই দেখে, রিফাত,
নিশাত, রকিবেরা আসছে। রাজ তাদের নিয়ে ভেতরে যেতে যেতে বলে’ তোরা কি ড্রিঙ্কস নিয়ে আসছিস?
– হ্যাঁ ওসবে তোর চিন্তা করতে হবে না। তোর রুমে সাউন্ড বক্স আছে? হ্যাঁ আছে।
– আর হ্যাঁ মৌ, তুমি আমাদের জন্য রান্না করবে। ফ্রিজে সবকিছু রাখা আছে।
– আচ্ছা ঠিক আছে। আমি তাহলে যাই। মৌ এর সহ্য হচ্ছে না। এতোগুলো বাহিরের লোক তার দিকে কিভাবে তাকিয়ে আছে।
– আচ্ছা, তাড়াতাড়ি রান্না করবে। আর তোরা দাঁড়িয়ে আছিস কেন? চল রুমে যায়।
– রুমে গিয়েই, একেকজন একেক কথা বলছে। সুমাইয়া ড্রিঙ্কস করছে সাথে রাজও। সবাই বক্সে বাজানো হিন্দি গানের তালে তালে নাচছে। সুমাইয়া রাকিবের সাথে তালে তালে নাচছে, রাজ নিশাতের সাথে। সবাই মনে হয় অন্য একজগতে আছে। আর কিছুক্ষণ পরপর, ড্রিংঙ্কস করছে।
– এদিকে মৌ এর রান্না করা শেষ। খাবার টেবিলে সাজিয়ে রেখে । ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে, এশার নামায কাযা হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু রুমে ফুল ভলিউমে, গান চলছে। এতো শব্দের ভেতরে নামায পড়বে কেমনে।
– মৌ রাজকে গিয়ে দেখে, মাতালামো করছে আর গানের তালে তালে নাচছে। মৌ রাজকে গিয়ে বলল’ আপনি একটু গানের সাউন্ডটা কমিয়ে দিবেন? আমি নামায পড়তাম।
– রান্না হইছে?
– হ্যা হয়েছে।
-তোর নামায পড়তে হবে না। চল আমার সাথে ডান্স করবি।
– না আপনার মন চাই আপনি করুন।
– এমন সময়, অন্য একটা ছেলে মৌ এর হাতটা ধরেই বলে, কামঅন বেবী ইউ আর সো হট। চলো ডান্স করি।
– প্লিজ ছাড়েন আমার হাত।
– কি হলে করবে না? এই বলে ছেলেটা যখন মৌ এর কাছে আসতে চায়।
মৌ তখনি এবার ছেলেটার গালে কষে চড় মারে।
– সবাই মৌ এর চড় মারা দেখে নিস্তব্ধ হয়ে যায়।
– এই দোস্ত, তুই বাড়িতে পার্টির কথা বলে আমাদের এভাবে অপমান না করলেও পার তি। একটু ডান্সই তো করতে চেয়েছিলাম।
– এই রকিব তো তোমার হাতটাই ধরেছিল। নাঁচলে কি হতো?
– ছি:রাজ লজ্জা করছে না নিজের বউকে অন্যের সাথে রোমাঞ্চ করার কথা বলতে? আর যে ছেলে মেয়ে জাতিকে সম্মান করতে পারে না। তাকে একটা কেন আরো থাপ্পর দিলেও কম হবে।
– মৌ এর কথা শুনে, সবাই বললো’ রাজ দোস্ত আমরা আসি। ‘ তুই এমন করে আমাদেরকে অপমান না করলেও পারতি। এই চল সবাই।
– রাজ সবাইকে থাকতে বললেও সবাই চলে গেল। সবাই চলে গেলে, রাজ মৌকে ধাক্কা দিয়ে ফ্লরে ফেলে দিয়ে বলে’ তোর ভাগ্য আমার বন্ধু তোর সাথে ডান্স করতে চেয়েছিল। আর এসব এখন কমন ব্যাপার।
– এই জান তুমি কাকে কি বলো, যে মেয়ে টাকার লোভে রক্ষিতা হতে পারে। তার আবার সম্মান।
– এই যে মিস, আমি রাজের বিয়ে করা বউ। কোন রক্ষিতা নয়।
– দেখছো জান? কি বলে?
– রাজ এবার রাগ সহ্য করতে না পেয়ে মৌ এর গালে সজোরে থাপ্পর বসিয়ে দিল। রাজের চোখ দিয়ে আগুন বের হচ্ছে। এই তুই সেচ্ছায় চুক্তিতে রাজি হয়েছিস না। ছয়মাসের জন্য ছয়লাখ টাকা! এটা দিয়ে তোর মতো ১০ টা মেয়েকে রক্ষিতা করে রাখা যেত। নির্ঘাত মা তোকে পছন্দ করেছিল বলে। আর তোকে তো বলেছিলাম, আমি সুমাইয়াকে ভালোবাসি। ওকে ছাড়া বাঁচবো না। এখানে আমার কি করার আছে? আর তুই আমার চোখের সামনে থেকে বের হ।
– মৌ কাঁদতে কাঁদতে রুম থেকে বের হয়ে যায়। সত্যিই তো সে রক্ষিতা। টাকার জন্য সবকিছু করছি। এখানে রাজেরই বা দোষ কি? দোষ তো আমার কপালের।
– মৌ সোজা এসে নামাযে দাঁড়িয়ে যায়। সে কি করবে ভেবে পাচ্ছে না। নামায শেষ করে, জায়নামাযেই ঘুমিয়ে যায়। সকালে ঘুম থেকে উঠে, যখন রাজকে ডাকতে যাবে, এমন সময় জানালা দিয়ে দেখে সুমাইয়া রাজের বুকের উপর শুয়ে শুয়ে বলছে’ জান তুমি রক্ষিতা রাখো আর যাই রাখো, মৌ এর গর্ভের সন্তানটাকে নষ্ট করতে হবে। তা না হলে পরে তোমার সম্পত্তিতে ভাগ বসাবে।
– তাই তো এটাতো ভাবিনি। আচ্ছা কিভাবে নষ্ট করা যায়?
– শোনো তুমি ওর একটু টেক কেয়ার করবে। কাল আমি ওষুধ এনে দিবো। সেটা দুধের সাথে মিশিয়ে খাইয়ে দিবে। তারপর আর কোন ঝামেলা থাকবে না।
– যদি না খায়? না খেলে, অন্য পন্থায় হাটতে হবে।
– কেমন?
– শোন মেয়েরা গর্ভবতী থাকলে, তার তলপেটে যদি লাথি দাও তাহলে মরে যাবে। এতে অনেকটা রিক্স। বাদ দাও কাল আমি মেডিসিন নিয়ে আসবো। তুমি যেভাবেই হোক বাচ্চাটা নষ্ট করো।
– মৌ এসব শুনে নিজেকে ঠিক রাখতে পারছে না।
– চলবে””’
সংসার
পর্ব:৯
লেখা:রাইসা
, মৌ এর গর্ভের সন্তানটাকে নষ্ট করতে হবে। তা না হলে পরে তোমার সম্পত্তিতে ভাগ বসাবে।
– তাই তো এটাতো ভাবিনি। আচ্ছা কিভাবে নষ্ট করা যায়?
– শোনো তুমি ওর একটু টেক কেয়ার করবে। কাল আমি ওষুধ এনে দিবো। সেটা দুধের সাথে মিশিয়ে খাইয়ে দিবে। তারপর আর কোন ঝামেলা থাকবে না।
– যদি না খায়? না খেলে, অন্য পন্থায় হাটতে হবে।
– কেমন?
– শোন মেয়েরা গর্ভবতী থাকলে, তার তলপেটে যদি লাথি দাও তাহলে মরে যাবে। এতে অনেকটা রিক্স। বাদ দাও কাল আমি মেডিসিন নিয়ে আসবো। তুমি যেভাবেই হোক বাচ্চাটা নষ্ট করো।
– মৌ এসব শুনে নিজেকে ঠিক রাখতে পারছে না। যদি গর্ভের সন্তানের কিছু হয়ে যায় তাহলে সে বাঁচবে কিভাবে।
-মৌ পাশের রুমে গিয়ে ভাবছে আজ তো টাকারো দরকার। এমন সময় রাজকে টাকার কথা কিভাবে বলি। হঠাৎ ফোনটা বেজে ওঠল। মৌ ফোনটা ধরতেই ওপাশ থেকে কেউ একজন বললো’ আপনি কখন আসবেন? আর এদিকে অবস্থা বেশি ভলো না। বিকেলে টাকা নিয়ে আসবেন।
– মৌ ফোনটা রেখে দিতেই রাজ সামনে এসে দাঁড়ায়।
– ব্রেকফাস্ট রেডি করেছ?
– হ্যাঁ তোমরা টেবিলে আসো খাবার দিচ্ছি। মৌ টেবিলে খাবার রাখছে, এমন সময় সুমাইয়া আর রাজ এসে টেবিলে বসলো। মৌ খাবার পরিবেশন করতেই দু’জনেই খেতে বসে পড়ল। রাজ একটিবার বললোও না, মৌ তুমিও আমাদের সাথে বসো।
– রাজ যখন খাবার মুখে দেবে এমন সময় সুমাইয়া বলল’ জান তুমি খেয়ো না। ‘ আমি তোমাকে খাইয়ে দেয়?
– রাজ মুচকি হেসে বলল’ হ্যাঁ সুইর্ট হার্ট দাও। ‘
– সুমাইয়া রাজকে খাইয়ে দিচ্ছে। রাজ সুমাইয়াকে খাইয়ে দিচ্ছে। মৌ অসহায় দৃষ্টিতে দু’জনের দিকে তাকিয়ে আছে।
– এই তুই আমাদের দিকে এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন?
– নাকি জীবনে এসব ভালো খাবার দেখিস নি?
ওহ সরি, তুই তো এতিমখানায় বড় হয়েছিস? দেখ জান কিভাবে তাকিয়ে আছে।
– সুইর্ট হার্ট বাদ দাও। টাকার জন্য যেসব মেয়েরা নিজের দেহ বিক্রি করতে পারে তাকে এসব শুনিয়ে লাভ নেই।
– মৌ আর সেখানে দাঁড়িয়ে থাকতে পারলো না। রাজের কথায় মনে হচ্ছে কলিজাটা ফুঁর হয়ে এফোঁড় ওফোড় হয়ে গেছে। মনে মনে আল্লাহকে বলতে ইচ্ছে করছে, ও আল্লাহ কেন এতিম করে পাঠালে। এসব ভাবতে ভাবতে চোখের পানিতে বুক ভেসে যায়। চোখের পানি মনে হচ্ছে কোনদিন শেষ হবে না।
-রাজ আর সুমাইয়া খাওয়া শেষ করে যখন রুমে চলে গেল। মৌ না খেয়েই রাজকে ডেকে নিয়ে বললো’ রাজ আমার চুক্তি থেকে পঞ্চাশ হাজার টাকা দাও।’
– আবারো টাকা দিয়ে কি করবে?
– আমারর টাকাটা খুব দরকার।
– আচ্ছা, আর মনে রেখো, আমি যখনি বলবো তখনি চলে যাবে।
– হুম তা তোমাকে বলতে হবে না রাজ।
– আচ্ছা, তুমি দাঁড়াও আমি টাকা এনে দিচ্ছি।
– রাজ লংকার থেকে টাকা এনে মৌ এর হাতে দিল। মৌ টাকাটা নিজের কাছে রেখে দিয়ে ফোনে কারসাথে যেন কথা বলছে এমন সময়, সুমাইয়া আর রাইসা দু’জনেই চলে গেল।
– পরের দিন, সকালে ঘুম ভাঙতেই টের পেলো মৌ কারো বুকে। ঘুম জড়ানো আখি জোড়া টিপটিপ করে খুলতেই চমকে গেল মৌ। রাজ খুব সুন্দর করে তাকে জড়িয়ে রেখেছে। রাজ তাকে বুকে নিবে সেটা কল্পনায় করতে পারে নাই।
– রাজ মৌকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ঘুমাচ্ছে। মৌ রাজের বুকে অন্যরকম শান্তির ছোঁয়া খুঁজে পাচ্ছে। মৌ এর চোখ জোড়া আবার লেগে আসছে। কখন যে, আবার গভীর ঘুমে হারিয়ে যায় সে খেয়াল নেই।
– হঠাৎ মৌ টের পেল তাকে কেও ডাকছে ‘ এই মৌ, আর কত ঘুমাবে? দেখ সূর্য উঠে পড়ছে। এবার তো উঠো।
– মৌ ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে আসতেই রাজ এক গ্লাস দুধ নিয়ে এসে বললো’ এই নাও দুধটুকু খেয়ে নাও। আর তোমার সাথে খারাপ ব্যবহার করার জন্য দুঃখিত। কি হলো কাঁদছো কেন?
– রাজ আমার তো মা নেই, কেউ কোনদিন এভাবে আদর করেনি। আমি তোমার ব্যবহারে কিছুই মনে করিনি। আমিই তোমার প্রতি অধিকার খাটাতে চেয়েছিলাম।
– মৌ এভাবে বলো না তো। আমি তোমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছি, যে কয়দিন তুমি আমার বাড়িতে আছো আমি আর কষ্ট দিবো না। এই পাগলী কাঁদছো কেন? কেঁদো না।
– মৌ এবার তো দুধটুকু খাও।
– আচ্ছা আমি খাইয়ে দিবো আমার বউকে?
– না তোমার কষ্ট করতে হবে না। কষ্ট কেন হবে মনে করো একটু প্রায়শ্চিত করে নেই।
– না দাও আমি খাচ্ছি। রাজ দুধের গ্লাসটা মৌ এর দিকে বাড়িয়ে দিল। মৌ খুশি মনে দুধের গ্লাসটা হাতে নিয়ে যখন মুখে দিবে এমন সময় কাল সকালের ঘটনাটা মনে পড়তেই মৌ চমকে ওঠলো। মনে মনে ভাবলো এ গ্লাসে তো আবার বাচ্চা নষ্ট করার ওষধ দেয়নি। না এ দুধ খাওয়া যাবে না। মৌ দুধ খেতে গিয়ে গ্লাসটা হাত থেকে ফেলে দিলো।
– গ্লাসটা হাত থেকে পরে যেতেই চুর্ণ-বিচুর্ণ হয়ে গেল। এ কি করলে মৌ?
– রাজ মাথাটা কেমন যেন ঘুরছে। তাই হাত থেকে গ্লাসটা পরে গেল। রাজ মনে মনে বললো’ এ প্ল্যানটাও ভেস্তে গেল।
– আমি তোমাকে খুব কষ্ট দিয়ে ফেললাম তাই না?
– কি যে বলো, ব্যাপার না।
– তুমি নিশ্চয় মন খারাপ করেছো। তোমার দেয়া দুধটা হাত থেকে পড়ে গেল।
– আরে না মন খারাপ করবো কেন কালনাগিনী যদি পারতাম তোর মতো রক্ষিতার পেটে লাথি দিয়ে বাচ্চাটাকে বের করে দিতাম। কিন্তু তা তো পারছি না।
– কি হলো তুমি চুপ করে আছো কিছু বলছো না?
– কি বলবো? অফিসের দেরী হয়ে যাচ্ছে। আমি যাচ্ছি।
– রাজ অফিসে গিয়েই সুমাইয়াকে ফোন করে বললো’ মৌকে তো বাচ্চা নষ্ট করার ওষধ খাওয়াতে পারিনি। ‘ মনে হয় আমাদের প্ল্যান বুঝে ফেলছে। কি করা যায় বলো তো? এ সন্তান পৃথিবীতে এলেই সমস্যা। ডির্ভোস দিলেও তো সন্তানের অধিকারে ঠিকই আসতে পারে কোন না কোনদিন? যে মেয়ে টাকার জন্য রক্ষিতা হতে পারে তার কাছে এসব কিছু না ।
– তুমি চিন্তা করো না, এভাবে না হলে অন্য পন্থায় হাটতে হবে। আর আমি অফিস যাচ্ছি। সুমাইয়া অফিসে গিয়ে দেখে রাজ ডেস্কে চিন্তিত মনে
বসে আছে। সুমাইয়া রাজের পিছন দিক দিয়ে গিয়ো রাজকে জড়িয়ে ধরে বলল’ আমার জানটার মন খারাপ?
– হ্যাঁ খুব মন খারাপ!
– তুমি এখনো মন খারাপ করে আছো? আরে মন খারাপ করে থেকো না। যদি এভাবে না হয় তাহলে, সোজা উল্টাপথে হাটতে হবে। যদি বাচ্চা নষ্ট না করে তাহলে সোজা উপরে পাঠিয়ে দিবো। এসব নিয়ে তোমাকে চিন্তা করতে হবে না।
– মেরে ফেলবা?
– আরে না বাদ দাও। অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা। আগে বাচ্চা নষ্ট করার ওষধ খাওয়ার চেষ্টা করো। যে মেডিসিন দিছি এক ডোসই যথেষ্ট।
– আচ্ছা চিন্তা করো না। খাওয়াবো যেভাবেই হোক।
– এদিকে মৌ তার পেটে হাত দিয়ে বলছে’ কিরে কেমন আছিস? ভুলে গেছিস আমায়? আচ্ছা তুই কি মন খারাপ করেছিস? তোর বাবাই তোকে মারতে চেয়েছিল বলে? শোন না, আল্লাহ তায়ালা সহায় হলে আমার দেহে প্রাণ থাকতে তোর কিছু হবে না। কি হলো তুই কাঁদছিস? কাঁদিস না, তোর বাবাই এর দোষ নেই। আমিই তোকে কষ্ট দেওয়ার জন্য নিজের গর্ভে ধারণ করেছি। অভিশাপ দেস না মা কে কেমন? তুই একদম ভয় পাবি না। আমি আছি তোর সাথে তোর কিছুই হবে না। আমি তোর কিছুই হতে দিবো না। আবারো কাঁদছিস? কাঁদিস না, আমার কোন কষ্ট হচ্ছে না। দেখিস না সবাই আমাকে কত ভালোবাসে। তুই ঘুমা। মৌ তার পেটে হাত রেখে এসব বলছে, আর অঝোর নয়নে কাঁদছে।
হঠাৎ কলিং বেলটা বেজে ওঠল।
– মৌ চোখের পানি মুছে দরজা খুলে দিতেই দেখল, রিত্ত আর রাজের মা দাঁড়িয়ে আছে। মৌ রাজের মা’কে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিল।
– কি হলো মা কাঁদছিস কেন?.
– মা আপনাকে অনেক মিস করছি। আমার তো মা নেই তাই।
– ধূর পাগলী কে বলছে তোর মা নেই? আমি কি মরে গেছি। আমার কাছে রিত্ত যেমন তুই ও সেরকম।
– তোর জন্য অনেক মন খারাপ হয়েছিল। কিন্তু কি করবো বল? ভাইটা যে অসুস্থ।
– সন্ধা বেলা, রাজ, রিত্ত আর মা বসে আছে। কারো মুখে কোন কথা নেই।
– রিত্ত বলে ওঠল, মা এদেরকে ক্ষমা করলে চরম অন্যায় হবে। ছি:ভাইয়া ছি, তুই এমন একটি কাজ করবি আমরা কল্পনাতেও ভাবিনি । আমাদের মানসম্মান আর কিছু রাখলি না। আমাদেরকে এতটাই পর করে দিলি?
– এতোবড় একটা সত্য গোপন করলি ক্যামনে?
– মা বিচারটা তুমি করো?
– রাজের আর বুঝতে বাকি রইলো না, তার আর মৌ এর ডির্ভোস পেপারটাই হয়তো তার মায়ের হাতে পড়েছে।
– কি হলো রাজ মুখটা ওভাবে করে রেখেছিস কেন?আর তুই এমন করবি কোনদিন স্বপ্নেও ভাবিনি। তুই আমার ছেলে না। এতোবড় ধোকা কিভাবে দিলি? আজকেই বাড়ি থেকে চলে যাবি।
– আর এই যে মৌ তোমাকে তো মেয়ের অধিকার দিয়েছিলাম। সে সুযোগে এতবড়ো একটা সত্য গোপন করে গেলে? আমার সত্যিই আজ মরে যেতে ইচ্ছে করছে। কি অন্যায় করেছিলাম আমি। এতোবড় কথাটা গোপন রেখেছো? এই মুহূর্তে বাড়ি থেকে তুমি আর রাজ বের হয়ে যাবে।
– মা কি করেছে আমি?
– কি করেছো দেখবে?
– মৌ ভয়ে কাঁপছে, এমন সময় রাজের মা একটা কাগজ বের করেই বললো’ এটা কি?
– মৌ কান্না করে দিয়ে রাজের মাকে জড়িয়ে ধরে বলল’ মা আমাকে ক্ষমা করে দেন। ‘
চলবে”””
””’আরো নতুন গল্প পেতে আমাদের সাথেই থাকুন
https://www.facebook.com/groups/999645603764557/?ref=share