সংসার
পর্বঃ১৮+১৯
লেখাঃরাইসা

– এদিকে মৌ তার রুমের দরজাটা লাগিয়ে রেখেছে। রাজ এসে দরজায় নর্ক করেই মৌ গিয়ে দরজা খুলে দেয়।
– ম্যাম দরজা বন্ধ করে রেখেছেন কেন?
– এমনি ভিতরে আসেন। রাজ ভিতরে আসার সময় দরজায় রাখা কলার খোসার উপর পারা দিতেই স্লীপ খেয়ে মৌ এর উপর পড়ে। মৌ ফ্লরে পড়ে যায়। রাজ মৌ এর উপর পড়ে। রাজের ঠোঁট দু’টি মৌ এর ঠোট অনিচ্ছতাকৃত স্পর্শ করে। মৌ চোখ বন্ধ করে ফেলে। রাজ উঠতে পারছে না। হঠাত কে যেন পিছন থেকে রাজকে লাথি দিয়ে মৌ এর উপর থেকে সরিয়ে দিয়ে বললো’ কিরে তোর সাহস কি করে হয় আমার স্ত্রীর সাথে অসভ্যতামি করার।
-কি হলো এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন?
– আর তুমি কেন যে এসব লোকদের চাকরী দাও বুঝিনা।

– তিশান শান্ত হও। আর রাজ তুমি তোমার রুমে যাও।
– রাজ কিছু না বলে রুম থেকে বেরিয়ে পড়ল। রুম থেকে বের হওয়ার আগে, চোখের পানিটা শার্টের হাতা দিয়ে মুছে নিল।

– মৌ তিশানের দিকে তাকিয়ে বলল’ তুমি কখন আসলে?
– কেন এসে কী সমস্যায় ফেল্লাম? আর সরি এসব কিছু করার জন্য।
– না এটা তোমার দায়িত্ব। বরং আমি অনেক খুশি।

– তিশান চলে গেলে মৌ ভাবতে লাগে, কাজটা কি ঠিক হলো? রাজের তো কোন দোষ নেই তারপরেও রাজকে শাস্তি পেতে হলো। মৌ এর খুব খারাপ লাগছে কেন জানি। বুকের ভেতরটা কেমন যেন করছে। তাই পিয়নকে বলল রাজকে ডেকে দিতে। পিয়ন রাজকে গিয়ে বলল ‘ স্যার ম্যাডাম আপনাকে যেতে বলছে।
– আচ্ছা আপনি যান আমি যাচ্ছি।
– রাজ মৌকে বলল ‘ বসব ম্যাম?’

– হ্যাঁ বসো।
– রাজ সরি আজকের ঘটনার কথা ভেবে কষ্ট পেয়ো না ।
– না ম্যাম কিছু মনে করিনি!
– আসলে তিশান যে এমন করবে ভাবতে পারিনি। আর তিশান এমন না কিন্তু তোমাকে আর আমাকে আপত্তিকর অবস্থায় দেখে নিজেকে কন্টোল করতে পারেনি। জানো তিশান আমাকে অনেক ভালোবাসে। সে চায়না অন্য কারো স্পর্শ আমার গায়ে লাগুক।

– ওহ্ আচ্ছা! ম্যাম আপনার এ নিয়ে ভাবতে হবে। আপনার স্বামীর জায়গায় আমি হলেও হয়তো তাই করতাম। আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিয়েন। আমি দরজা খুলতেই নিজেকে কন্টোলে রাখতে পারিনি। মনে হয় পায়ের নিচে কিছু একটা পরেছিল।

– আচ্ছা যাও।
– ঠিক আছে। আর হ্যাঁ আপনার হাসবেন্ড অনেক সুন্দর। আমার থেকেও।

– হুম ধন্যবাদ। দোয়া করো ওর সাথে যেন সারাজীবন কাটাতে পারি।

– হুম অবশ্যই। কথাটা বলতে গিয়ে রাজের গলাটা কেমন যেন ধরে এলো। মৌ এর সামনে থাকলে রাজ কেমন যেন হয়ে যায়। রাজের খুব করে মন চাচ্ছে মৌকে বুকে টেনে নিয়ে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদতে। মৌকে যে সে বড্ডবেশি ভালোবেসে ফেলেছে।
– কি হলো রাজ মন খারাপ?
– না ম্যাডাম গরীবের আবার মন খারাপ! মন খারাপ না। আমি আসি ম্যাডাম।
– আচ্ছা।

– রাজ মৌ এর রুম থেকে বের হয়ে গিয়ে ডেস্কে বসতেই ‘ তিশা গিয়ে বলল, রাজ আমার সাথে বিকেলে এক জায়গায় যেতে হবে।
– কোথায় যাবো বলো তো?
– একটু শপিং এ যাবো।
– তো যাও আমাকে কেন নিচ্ছো?
– ধ্যাত! আমি বলছি তাই যাবে বুঝা গেল?
– যদি না যাই?
– জোর করে নিবো।
– তাই বুঝি।

– হুম তাই। এখন বলো যাবে কি না?
– আচ্ছা যাবো।
– সত্যি যাবা। এই বলে তিশা রাজকে জড়িয়ে ধরে বলে ‘ থ্যাংকু! অনেকগুলো।
– রাজ অনেকটা চমকে যায় তিশার কান্ড দেখে। তিশাকে বুক থেকে সরিয়ে দিয়ে বলে’তিশা কি হচ্ছে?’
– সরি রাজ! আমি এমনি খুশির কথা শুনলে জড়িয়ে ধরি।
– এই যে মিস! আপনার এ রোগ ভালো করেন। নয়তো মান সম্মান আর কিছুও থাকবে না। আর আবেগ নিয়ন্ত্রণ করেন।

– আচ্ছা। আর হ্যাঁ রাজ তুমি কিছু মনে করো না । কেমন?

.
বিকেলবেলা তিশা রাজকে নিয়ে শপিং করতে বের হয়। এদিকে মৌ রিচিকে নিয়ে কেনাকাটা করতে বের হয়। তিশা একটা শাড়ি হাতে নিয়ে বলল’ দেখতো রাজ শাড়িটা কেমন লাগে?
– রাজ নীল একটা শাড়ি দেখিয়ে দিয়ে বলল’ তিশা তোমাকে নীল শাড়িতে অনেক সুন্দর লাগবে।
– তাই বুঝি? আচ্ছা এটা তাহলে প্যাক করেন।
শাড়িটা প্যাক করেন। আর ওই যে নীল রঙের পাঞ্জাবিটা দেখান তো। তিশা পাঞ্জাবিটা নিয়ে রাজের গায়ে ধরে বলল তোমাকেও নীল পাঞ্জাবিতে সুন্দর লাগে। তাই বুঝি কিন্তু আমি তো তোমার দেওয়া পাঞ্জাবি নিব না।
– আচ্ছা নিয়ো না। না নিলে তোমাকে জড়িয়ে ধরবো। বলো নিবে কি না?
-আচ্ছা নিলাম। তবে এটা ঠিক না।
– ধ্যাত তুমি না আমার বন্ধু বন্ধুরটাই তো নিবে।

-হঠাৎ রিচি মৌকে বলল’ মম দেখ তো কে ওটা? মম ওটা আমার -বাকি কথা বলার আগেই মৌ রিচির মুখটা ধরে ফেলল।
– মামনি চুপ কোন কথা বলো না। মৌ রাজকে তিশার সাথে দেখার সাথে সাথেই কেমন যেন হয়ে গেল। বুকের ভেতর কষ্টটা যেন দাউ দাউ করে জ্বলতে লাগল। তবুও কিছু বললো না। রিচিকে নিয়ে একেবারে বাসায় এসে পড়ল।
-বাসায় আসার পর বারবার রাজ আর তিশার কথা মনে পড়ছে। রাজের চরিত্র এখনো ঠিক হয়নি। সে আগের মতোই রয়ে গেছে। কিন্তু আমার কেন এতো কষ্ট হচ্ছে?

– এদিকে যতই সময় গড়াচ্ছে, ততই তিশা রাজের প্রতি উইক হয়ে যাচ্ছে। মৌ রাজকে একবারেই সহ্য করতে পারে না।

দিনগুলি ভালোই কাটতেছিল। একদিন হঠাৎ তিশা রাজকে সরাসরিই বলে ফেলল’ রাজ আমি তোমাকে ভালোবাসি। ‘

– রাজ কথাটা শোনার জন্য মোটেই প্রস্তুত ছিল না। তিশার মুখে ভালোবাসা কথা শুনে রাজ তিশাকে বলল’ তিশা তুমি ভুল করছো। তোমার জন্য আমি না। আমার চেয়েও ভালো কেউ তোমার জন্য অপেক্ষা করছে।
– আমি তো ভালো চাই না, তুমি আমার কাছে শেষ্ঠ।
– তাই বুঝি! আচ্ছা আমাকে কতটা ভালোবাসো?
– জানি না কতটা ভালোবাসি তোমায় তবে আমার দিবানিশির ভাবনায় শুধুই তুমি।

– বাহ! ভালো তো। আচ্ছা তিশা তুমি কি জানো আমি বিবাহিত?
– মানে?
– মানে আমার বউ আছে।
– রাজ তুমি মিথ্যা বলছো। তোমার বউ থাকলে দেখাও?
– রাজ তিশাকে কি বলবে বুঝতে পারছে না। কারণ মৌ এর কাছে প্রমিজ করেছে তাদের অতীত কাউকে বলবে না। এখন তিশাকে কিভাকে বুঝাবে যে রাজ মৌকে বিয়ে করেছিল। রাজের সবটা জুড়েই মৌ এর বিচরণ।
– কি হলো রাজ কথা বলছো না কেন?
– তুমি বিয়ে করেছো তো বউ দেখাও?
– তিশা পাগলামী করো না। তোমাকে ভালোবাসা আমার পক্ষে সম্ভব না।
– আমি পাগলামী করছি না আমি সত্যি সত্যি তেমাকে ভালোবাসি। বিশ্বাস করো। যেদিন তোমাকে ভালোবাসি সেদিনই আমার মনে তোমাকে জায়গা দিয়ে ফেলেছি। তিশা যখন রাজকে এসব বলছে, মৌ তখন রুমের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় তিশার কথা শুনে ফেলে। মৌ দরজাটা ধাক্কা দিতেই তিশা রাজের কপালে চুমু দিয়ে দেয়।
– মৌ কিছু না বলে, তার ডেস্কে এসে পড়ে।
– রাজ তিশাকে কষে থাপ্পর বসিয়ে দিয়ে বলতে লাগল’ কি তোমার লজ্জা নেই? বন্ধু ভেবেছিলাম তোমায় আর তুমি? ছি! লজ্জা করে না তোমার। আমার ঘৃণা লাগছে। আমি তোমাকে আর আমার সামনে দেখতে চাই না। প্লিজ আর আমার সামনে এসো না। আমি কতবার বলবো আমি একজনকে ভালোবাসি। শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত তাকেই ভালোবাসব। তিশা আর কিছু না বলে চোখের পানিটা মুছে রুম থেকে বের হয়ে যায়।

– মৌ ডেস্কে বসে বসে বারবার সে দৃশ্যটা কল্পনা করছে আর রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে যাচ্ছে। শেষ পর্যন্ত রাগ কন্টোল করতে না পেয়ে তিশানকে ফোন দেয়। তিশান ফোন রিসিভ করেই বলে, তুমি একটু অপেক্ষা করো আমি আসছি।
– মৌ পিয়নকে দিয়ে রাজকে ডেকে পাঠায়।
– রাজ মৌ এর রুমে আসতেই, মৌ রাজকে বলে, রাজ এটা কি পার্ক না কি কোন সিনেমা হল?
– ম্যাডাম পার্ক হবে কেন? এটাতো অফিস।
– ওহ তা না হলে তাহলে কেন মাখামাখি করেন তিশার সাথে? আসলেই আপনার চরিত্রের সমস্যা আছে।
– ম্যাডাম কি বলছেন? প্লিজ চরিত্র নিয়ে কোন কথা বলবেন না।
– আপনি লুচ্চামি করবেন আর আমি বললেই দোষ?
– ম্যাডাম চুপ করেন। আর একটা কথাও না।
– কি চুপ করবো? আর চুপ না করলে কি করবি?
– চুপ না করলে ভালো হবে না কিন্তু।
– কি বললি? ঠাস করে চড় বসিয়ে দিয়ে বলল’ তোকে অন্য মেয়ে কিস করবে তা আমি বসে বসে দেখবো? তুই ভাবলি কি করে? কুত্তা এখন বের হয়ে যাবি।

– মৌ রাজকে চড় দিবে, রাজ ভাবতেও পারেনি। রাজ মৌ এর দিকে অসহায়ের দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো ‘ কি হলো একটা মারলেন কেন? আরেকটা মারেন? কথাটা শেষ করতে না করতেই রাজের চোখ থেকে টপ করে জল গড়িয়ে মাটিতে পড়ল। রাজের অসহায় চাহনী আর কথাটা মৌ এর কলিজায় গিয়ে লাগল মনে হয়। মৌ নিজের ব্যালেন্স করতে পারছে না। মাথা ঘুরিয়ে পড়ে যেতে লাগল। রাজ মৌকে ধরে ফেলল। মৌ এর আপত্তিকর জায়গায় রাজের হাতটা স্পর্শ করলো। এমন সময় তিশা আর তিশান রুমে ঢুকেই দেখে মৌ এর কোমড়ে রাজের হাত। মৌ রাজের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। এদিকে তিশা মৌ আর রাজকে এভাবে দেখে চিৎকার দিয়ে বলে একি হচ্ছে!
– অফিসের প্রায় সকলেই চিৎকার শুনে, মৌ এর রুমে এসে উপস্থিত।

– তিশান রাজকে উদ্দেশ্য করে বলে’ কিরে,লুচ্চা তোর কিভাবে সাহস হয় আমার স্ত্রীর কোমড় ধরার!
– মৌ তিশানের কথায় যেন স্বাভাবিক হয়ে আসে। মৌ রাজের হাতটা কোমড় থেকে ছাড়িয়ে সোজা হয়ে দাঁড়াতেই দেখে, অফিসের সবাই হাজির। আর সবাই আপত্তিকর অবস্থাও মৌ আর রাজকে দেখে মাথা নিচু করে আছে।

– মৌ বুঝতে পারল, তার মান সম্মান যা আছে সব গেছে।এখন তাকে কিছু করতেই হবে। মৌ রাজকে কিছু না বলেই দু’গালে চড় বসিয়ে দেয়। রাজ কিছু না বলে মৌ এর দিকে তাকিয়ে আছে।
– কি হলো এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন? আমার সরলতার সুযোগ নিয়ে তুই ছি!আজকের পর থেকে আমার অফিসে তোর মতো ছেলেকে দেখতে চাই না! এখন বের হয়ে যা!আর আপনারা কাজ ছেড়ে কি করতে আসছেন?
যান কাজে যান।
– সবাই রাজকে ছি! ছি করছে।
– সবাই চলে গেলে, মৌ রাজকে বলে, কি হলো আপনি এখনো যাচ্ছেন না কেন?
প্লিজ যান আপনার চেহারাটা আমার দেখতে মন চাচ্ছে না।
– ম্যাডাম আমি ইচ্ছা করে করেনি। আপনি আমাকে ভুল বুঝতেছেন।

– আমি! তাও আবার তোকে ভুল বুঝতেছি?
চরিত্রহীন! তোর চরিত্রের ঠিক নাই সে আবার আমাকে বলে আমি নাকি ভুল বুঝতেছি।রাজকে কথাগুলো বলতে গিয়ে বুকেরভেতর কেমন যেন করতে লাগল।

– রাজ দরজাটা লাগিয়ে দিয়ে বললো’ কি ভেবেছেন? আমি আপনাকে এমনিতেই ছেড়ে যাবো? চরিত্রহীন কাকে বলে তা প্রমাণ করে যাবো।
– মৌ যখন চিৎকার দিতে যাবে তখন রাজ মৌ এর মুখটা চেপে ধরে! টেবিলের পাশেই কাটা চামিচটা রাজ হাতে নিয়ে বলে আর একটা কথা বললে এটা তোর বুকে গেথে দিব। মৌ ভয়ে চুপসে যায়। রাজ আস্তে আস্তে মৌ এর দিকে এগিয়ে যায়। মৌ এর শরীর কাঁপছে। রাজ হঠাৎ মৌ এর শাড়িটা ””

চলবে”””
সংসার
পর্বঃ১৯
লেখাঃরাইসা

ভেতর কেমন যেন করতে লাগল।

– রাজ দরজাটা লাগিয়ে দিয়ে বললো’ কি ভেবেছেন? আমি আপনাকে এমনিতেই ছেড়ে যাবো? চরিত্রহীন কাকে বলে তা প্রমাণ করে যাবো।
– মৌ যখন চিৎকার দিতে যাবে তখন রাজ মৌ এর মুখটা চেপে ধরে! টেবিলের পাশেই কাটা চামিচটা রাজ হাতে নিয়ে বলে আর একটা কথা বললে এটা তোর বুকে গেথে দিব। মৌ ভয়ে চুপসে যায়। রাজ আস্তে আস্তে মৌ এর দিকে এগিয়ে যায়। মৌ এর শরীর কাঁপছে। রাজ হঠাৎ মৌ এর শাড়ির আচলটা ধরতেই মৌ রাজকে বলল’ রাজ প্লিজ আমার কিছু করো না। আমার স্বামী আছে। প্লিজ ছেড়ে দাও আমায়।
– রাজ এবার শাড়িটা টান দিয়ে ফ্লরে থেকে তুলে মৌ এর মাথায় দিয়ে দিলো।
– মৌ ভ্রু কুচকে তাকালো রাজের দিকে।
– কি হলো অবাক হলেন? আপনার সাথে খারাপ কিছু করলাম না কেন? শুনুন সত্যিই যদি চরিত্রহীন হতাম তাহলে, আপনাকে বিয়ে করেছিলাম তখন প্রতিদিন নিজের দেহের চাহিদা মেটাতে পারতাম। আপনাকে নিজের সৎজ্ঞানে স্পর্শ পর্যন্ত করিনি। যে দু’দিন আপনার সাথে যা হয়েছে তা সম্পূর্ণ মাতাল হয়ে করেছিলাম। আর তার জন্য ক্ষমাও চেয়েছিলাম। আরে আপনি তো আমার বউ ছিলেন। আপনাকে যখন ইচ্ছা ভোগ করার অধিকার ছিল আমার তাই না? কিন্তু আপনাকে নিজে ইচ্ছায় কেন স্পর্শ করেনি জানেন? কারণ আমি আপনাকে ভালোবাসতাম না। ভালোবাসতাম সুমাইয়াকে। আমার সবটা জুড়ে সুমাইয়া ছিল। আর সুমাইয়াকে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম ওকে ঠকাবো না। ঠকায়নি ওকে কিন্তু সে আমাকে ভালোবাসেনি, তার নোংরা শরীর আর রুপ দিয়ে আমার সম্পত্তি দখল করতে চেয়েছিল। সে আরেকটা বিয়েও করেছিল। আমি তখন কাচকে হিরা ভেবে ভুল করেছিলাম। আর আপনি নিজের জীবনটা ঠিকই সাজিয়ে নিলেন। গত ছয়টা বছরে একটা খুঁজ নিয়েছিলেন? হ্যাঁ আমি আপনার সাথে অন্যায় করেছি, চরম অন্যায়। কিন্তু বিশ্বাস করেন আমার হৃদয়ে আপনি ছাড়া এখন আর কেউ নেই। বাকিটা জীবন আপনার স্মৃতিকে আকড়ে ধরেই বেঁচে থাকবো। আর হ্যা বললেন না চরিত্রহীন? চরিত্রহীন হলে আপনাকে দিনের পর দিন ইউজ করতাম। এখন আপনাকে যদি বলি আপনি স্বার্থপর। আপনার বাবাকে বাঁচাতে গিয়ে, আমার কাছ থেকে কতটাকা নিয়েছেন? যেটা চুক্তির চেয়েও বেশি ছিল।নিজেকে প্রশ্ন করে দেখবেন একবার।আমি আপনাকে বিয়ে করেছিলাম ‘আমার ভালোবাসাটাকে বাঁচাতে। আপনাকে ভোগ করতে নয়। চরিত্রহীন হলে আপনাকে ভোগ করতাম।
– আর হ্যাঁ ভালো থাকবেন। আপনার চোখের ত্রিসিমানায় আসবো না কোনদিন। আপনার স্বামীকে নিয়ে ভালো থাকবেন। আরেকটা কথা বড্ড ভালোবাসি আপনাকে। ভালোবাসার দাবি নিয়ে কখনো আপনার সামনে আসবো না ।

.
আসি ভালো থাকবেন। কথাটা বলে রাজ, শার্টের হাতা দিয়ে চোখের পানি মুছে নিল।
– রাজ দাঁড়াও যেয়ো না।
– সরি ম্যাডাম আমি কুত্তা রাজ নয়। আমি চরিত্রহীন।
– রাজ প্লিজ স্টপ করো। কোথাই যাচ্ছো?
– কোথায় যাবো, যাওয়ার তো কোন জায়গা নেই। তবে আপনার চোখের সামনে থেকে দূরে চলে যাবো।
– রাজ প্লিজ যেয়ো না। আর সরি, আসলে আমার জন্যই আজ তুমি অপমানিত হলে।
– ম্যাডাম সরি কেন বলছেন? চরিত্রহীনদের জন্য এসব কোন কিছু না। আর হ্যাঁ আপনার প্রতি অনেক কৃতজ্ঞ যে বিপদের দিনে চাকরিটা দিয়েছেলেন। সত্যিই আপনি অনেক ভালো, যতটা অন্যায় করেছিলাম আপনার প্রতি আপনি চাইলেই বিপদের দিনে লাথি মেরে তাড়িয়ে দিতে পারতেন। কিন্তু তা করেননি। আমার বিপদে আপনি সাহায্য করেছেন। ধন্যবাদ আপনাকে। আপনার আর আপনার স্বামীর জন্য দো’আ করি। সুখী হোন আপনারা। আমি তো আপনাকে হ্যাপি রাখতে পারিনি। স্বামীর অধিকারটাও দেয়নি। ক্ষমা করে দিয়েন আমায়। প্লিজ ক্ষমা করে দিয়েন।

– রাজ ক্ষমা চেয়ে না এভাবে। আর প্লিজ তুমি যেয়ো না।

– না ম্যাডাম আমার জন্য অনেক ঘটনার জন্ম হয়েছে। আপনার হাসবেন্ড আপনাকে সন্দেহ করেছে। বিশেষ করে সেদিনে র কথা যেদিন আপনার উপরে পড়ে গিয়েছিলাম। জানেন আপনার হাসবেন্ড আমার ঠিক কোমড়ে লাথি দিয়েছিল। আপনি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বাহবা দিচ্ছিলেন। সত্যিই কি সেদিন দোষটা আমার ছিল?
– রাজ সরি! বাট তুমি কেন তিশার সাথে কথা বলো? তুমি জানো তিশার সাথে যখন তুমি কথা বলো তখন আমার খুব কষ্ট হয়। কেন সে ফাযিল মেয়ে লাঞ্চের সময় তোমার জন্য খাবার নিয়ে আসবে? কেন তুমি ওর সাথে শপিং এ যাও। কাল রিচি যখন তোমাকে দেখিয়ে দিয়েছে তখন মনে হচ্ছিল আমার বুকটা কষ্টে ফেটে যাবে। তুমি কেন ওর সাথে শপিং এ যাও। এই জন্যই আমি তোমার সাথে ওমন করেছি। জেদ করে।

– বাহ! মৌ বাহ! জেদ?আচ্ছা আপনার কেন কষ্ট হবে? আমি আপনার কে?
– রাজ তুমি আমার –

– চুপ করেন আমি আপনার কর্মচারী। আর তিশা আমার ফ্রেন্ড, ও কাল জোর করে শপিং করতে নিয়ে গিয়েছিল। দেশের অবস্থা ভালো না এসবের জন্য একজন মানুষকে প্রয়োজন। মনে রাখবেন তিশা আর আমি ভালো বন্ধু এ ছাড়া আর কিছু না। আর হ্যাঁ আপনার কেন খারাপ লাগবে? আপনার না স্বামী আছে? যাই হোক ভালো থাকবেন। । আল্লাহ হাফেয।
– রাজ বেরিয়ে যাচ্ছে, মৌ পিছন থেকে বলছে রাজ প্লিজ যেয়ো না।

– এমন সময় তিশান এসে মৌকে বললো’ বউ অসভ্যটা তোমার সাথে খারাপ কিছু করেছে?
– মৌ মাথা নাড়িয়ে না সূচক জবাব দিল।

– বিকেলে মৌ অফিস থেকে এসে দেখে, রিচি তার বাবার ছবি বুকে নিয়ে ঘুমাচ্ছে। মৌ রিচির কপালে চুমু দিয়ে দেয়। রিচি সজাগ পেয়ে বলে মামনি,আমার বাবা অনেক ভালো তাই না?
– মৌ রিচিকে বুকের সাথে জড়িয়ে নিয়ে বললো হ্যাঁ মা অনেক ভালো। তোর বাবাটা আমাকে সকল পরিস্থিতিতেই ভালোবাসতে শিখেছে। আমি অনেক লাকি রে। কথাগুলো বলে মৌ কাঁদতে লাগল। বুকের ভেতরটা কেমন যেন তুলপাড় হয়ে যাচ্ছে।

– এদিকে বিয়ের দিন মৌ রিচিকে নিয়ে রাজের বাসায় আসে। বাসাটা খুব সুন্দর কর সাজানো। মৌ বিয়ে বাড়িতে এসে দেখে, তার অফিসের প্রায় সকলেই আছে বিয়ে বাড়িতে। সবাই আনন্দ করছে। পিয়ন মৌকে দেখে বললো ‘ ম্যাডাম কখন আসলেন?’
– এই তো এখনি। মৌ এর চোখ কেন জানি শুধু রাজকে খুঁজছে। হঠাৎ মৌ খেয়াল করলো, নীল একটা পাঞ্জাবি পড়ে একজন দাঁড়িয়ে কথা বলছে। মৌ এর বুঝতে বাকি হইল না সেটা রাজ। মৌ রাজের কাছে গিয়ে বললো, রাজ রিত্ত কোথায়? রিত্তকে কি সাজানো হয়েছে?
– না উপরে আছে, তিশা আর তার বান্ধুবিরা সাজাচ্ছে তাকে! ওহ্ আচ্ছা।

– মৌ রিত্তের রুমে গিয়ে দেখে, রিত্তকে তিশা আরো কয়েকজন সাজাচ্ছে। মৌ রুমে প্রবেশ করতেই, রিত্ত মৌকে দেখে চমকে যায়!

– কাঁপা কাঁপা গলায় বলে ভাবি! তুমি এতদিন পর। সবাই থমকে যায় রিত্তের কথায়।

– মৌ নিজেকে সামলে নিয়ে বললো’ আপনি আমাকে চিনেন?আর ভাবি কাকে বলেন?
– ভাবি আমাকে তুমি চিনতে পারছো না? আমি রিত্ত। ও ভাবি তুমি আর ভাইয়াকে ছেড়ে যেয়ো না ভাইয়া তোমাকে অনেক ভালোবাসে। তুমি চলে যাওয়ার পর ভাইয়া তোমাকে পাগলের মতো খুঁজেছে। জানো ভাবি ভাইয়া পাঁচ বছর পাগল ছিল। শুধু তোমার ছবি বুকে নিয়ে কাঁদতো। এখনো এমন একটা রাত দেখি না ভাইয়া তোমার ছবি নিয়ে না কাঁদে। ভাইয়া তোমাকে অনেক ভালোবাসে। তুমি ভাইয়াকে ছেড়ে যেয়ো না। রুমের সবাই মৌ এর দিকে চেয়ে আছে। মৌ কি বলবে কিছু বুঝতে পারছে না। মৌ এর ভেতরটা কেমন যেন করছে।

– কি হলো ভাবি? কথা বলছো না কেন?
– এমন সময় তিশা বললো’ রিত্ত এটা তো আমাদের বস। ‘ রাজ যে অফিসে চাকরি করতো যে মেয়ে রাজকে অপমান করেছে। এর স্বামীই তো রাজকে মেরেছিল।

– মৌ কিছু বলতে চেয়েও থেমে গেল। পিছন থেকে রাজ বলে উঠল” রিত্ত কি সব বলছিস? ওটা আমাদের ম্যাডাম। আর মানুষের মতো মানুষ হয় না? আর হ্যাঁ ম্যাডাম কিছু মনে করবেন না। রিত্ত আমাকে অনেক ভালোবাসে তো। আর তার ভাবি দেখতে আপনার মতো ছিল তাই ভুল করে বলে ফেলেছে।
– না রাজ কিছু মনে করিনি। আর রিত্ত আজ সকালেই সামনে বলছি আমিই তোমার– এমন সময় রাজ বলে উঠলো ‘ম্যাডাম আপনার হাসবেন্ড কোথায় তাকে তো দেখলাম না। ‘

– এদিকে বর এসে পড়ে। রাজ রুম থেকে বের হয়ে যায়। বিয়ের কাজ যখন শেষ হয়ে যায়।

.

বিয়ে শেষে, রাজের পাশে তিশা দাড়াতেই পাশ থেকেই রাফসান বলে উঠে ? রাজ আপনাকে আর তিশাকে খুব সুন্দর লাগছে। চলেন না আপনাদেরও বিয়েটা করিয়ে দেয়। তিশা রাজের হাতটা ধরে ফেলে। মৌ এর বুকটা ছ্যাঁত করে ওঠে!

– রিত্ত পাশ থেকে বলে’ আপনারা দো’আ করবেন, আগামী মাসে ভাইয়া আর তিশা আপুর বিয়ে হবে। কথাটা বলে হেসে দেয়।

– এমন সময় রিচি দৌড়ে এসে, তিশার হাতটা রাজের হাত থেকে ছাড়িয়ে দিয়ে বলে’ বাবাই তুমি মমকে রেখে বিয়ে করো না?’ মম তোমার জন্য কান্না করে। তোমার ছবি নিয়ে মম কাঁদে। বাবাই বলো না তুমি বিয়ে করবে না।

– চলবে””””’

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here