সংসার
পর্বঃ১৪+১৫
লেখাঃরাইসা
– সুমাইয়া একটি ছেলের বুকে অর্ধনগ্ন হয়ে শুয়ে আছে। ছেলেটি সুমাইয়াকে বলছে’ বেবী কাজটা কবে শেষ হবে? হাজার কোটি টাকা কবে যে পাবো?
– তুমি চিন্তা করো না। যে বুদ্ধি দিয়েছি রাজকে সে তো পটে গিয়েছে। আর আমাদের বিবাহ বার্ষিকীর আগেই এ কাজটা শেষ হবে। বিয়েটা হলেই সব সম্পত্তি আমার নামে করিয়ে নিবো। আর রাজ তো আমার জন্য পাগল।
– উম্মাহ, আমার সুইট বউ।বলেই সুমাইয়াকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল।
-এসব দেখে রাজের চোখের পানি কোন বাধা মানছে না।
– ছেলেটা সুমাইয়ার বক্ষে তার উষ্ণ ওষ্ঠের স্পর্শে স্পর্শে বললো’ জানো জানেমন অভিনয়ে তোমাকে অস্কার দেওয়া হলেও কম হতো। এতো প্ল্যান তুমি করতে পারো।
– দেখতে হবে না বউটা কার?
– হুম আমার বউ। জানো এভাবে আর একা থাকতে পারছিনা। লুকিয়ে আর কত।
– ওহ্ তুমিও না। আমেরিকা থাকতে তো একসাথেই থাকতাম। সামনে ১৫ মার্চ তো আমাদের বিবাহের এক বছর হবে। তার আগেই আমার বাবারো প্রতিশোধ নেওয়া হবে।
– বাবার আমার শত্রুতা কিসের?
– ছোটবেলা রাজের সাথে আমার বিয়ের কথা বলেছিল বাবা তার বাবাকে। বাবাকে রাজের বাবা অপমান করেছিল। বাবা তাই রাজের সাথে বিয়ে করিয়ে সমস্ত সম্পত্তি গ্রাস করে তালাক দিতে বলছে। আর তোমার সাথে স্যাটেল হতে বলছে।
-লাভিউ বউ। এবার তোমার ভালোবাসার সাগরে ডুব দিতে দাও।
– ওহ্! সাগরটা তো তোমারি বলতে হয় আবার? আমার সবকিছুই তো তোমার। আমার জীবনটাও তোমার।
– ছেলেটা সুমাইয়ার সাথে নোংরা খেলায় মেতে উঠলো। সুমাইয়া সমান তালে রেসপন্স দিচ্ছে। হঠাৎ বলে ওঠলো’ রাফি, তুমি দিনদিন দুষ্ট হচ্ছো কিন্তু। হুমম হচ্ছি তা তো তোমার জন্যই তাই না?
– হুমমম, অনেকদিন পর তোমার স্পর্শে শিহরিত হচ্ছি। তোমার মাঝে আমাকে মিশিয়ে নাও আমি আর পারছি না। এদিকে রাফি সুমাইয়াকে সম্পূর্ণ বিবস্ত্র করে ফেলছে। সুমাইয়ার নাভিতে ভালোবাসার স্পর্শ এঁকে দিচ্ছে।
– রাজের মাথাটা ঘুরছে। কলিজাটা মনে হয় বের হয়ে আসবে বাহিরে। যে সুমাইয়াকে এতো ভালোবাসলো। যার জন্য এতোকিছু করলো। একটা মেয়ের সাথে, পশুর মতো ব্যবহার করলো । কিন্তু সেই সুমাইয়া তার সম্পত্তির জন্য নোংরা খেলা খেলছে। আর সুমাইয়া বিয়েও করেছে। রাজের বুক ফেটে কান্না আসছে। হাতের ফুলগুলো মাটিতে পরে গেল। বকুলফুলগুলো পা দিয়ে পিষে ফেলল রাজ। চোখের সামনে মৃত্যুর চেয়ে যন্ত্রণাদায়ক দৃশ্য দেখতে হবে রাজ ভাবতে পারেনি। সে আর এক মুহূর্ত সেখানে থাকতে পারলো না।
– সুমাইয়াদের বাড়ি থেকে বের হয়ে সোজা বাসায় এসে পড়ে।
– কিরে বাবা কোথায় গিয়েছিলি? মন খারাপ করছিস? মন খারাপ করিসনা। আমি জানতাম না মৌ এতটা খারাপ। আমরা কাল সকালে সুমাইয়াদের বাসায় যাবো। তুই একটু বলে রাখিস।
– রাজ তার মাকে কিছু না বলে রুমে চলে গেল।
– রাজ বিছানায় শুয়ে আছে। হঠাৎ কে যেন বললো’ ভাত খাবে না শুয়ে পড়লে যে?
– রাজ চমকে ওঠে তাকিয়ে দেখে কেউ নেই। মৌ এর কথা কেন এতো মনে পড়ছে? মেয়েটাকে সত্যিই খুব বেশি কষ্ট দিয়েছি। এসব ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়ে খেয়াল নেই।
– এদিকে মৌ হসপিটালে টাকা পেড করে। ডাক্তারকে বললো ‘স্যার আমার বাবার অপারেশনটা খুব যত্ন করে করবেন। অনেক ভালোবাসিতো বাবাকে।
– মা’রে তোমার মতো আমারো একটা মেয়ে আছে। চিন্তা করো না তোমার বাবার অপারেশন ভালো ভাবেই হবে। আর আমাকে স্যার ডেকো না মা।
-আচ্ছা আঙ্কেল একটা অনুরোধ করবো?
– হ্যাঁ মা করো।
– অপারেশনের টাকাগুলো যে আমি দিলাম। সেটা বাবা যেন কখনো জানতে না পারে। বাবা যদি এখন জানে তবুও অপারেশন করবে না।
– আচ্ছা জানবে না।
– আরেকটা কথা বাবার তো কাল অপারেশন। বাবাকে বলবেন, অপারেশনের আগে তার মেয়ে তার সাথে দেখা করতে চাই। সে যদি চায় তাহলে তার মেয়ে তার সাথে দু’টো কথা বলতে চায়। বাবা যদি রাজি হয়, তাহলে বাবার সামনে যাবো।
– আচ্ছা মা আমি এখনি যাচ্ছি!
– ডাক্তার মৌ এর বাবার কাছে গিয়ে বললো ‘ এখন কেমন আছেন?’
– হ্যাঁ ভালো।
– কাল আপনার অপারেশন। অপারেশনের আগে আপনার কি কোন ইচ্ছা আছে?
– ডাক্তার সাব শুনছি অপারেশনের জন্য নাকি অনেক টাকা লাগার কথা ছিল। এতো টাকা কে দিলো? সে মানুষটাকে দেখার অনেক ইচ্ছা।
– সরি,তিনি তো বিদেশে। বিদেশ থেকে অনেক রোগীকে সুস্থ করতে টাকা দেন। আর হ্যাঁ আপনার মেয়ে আছে নাকি শুনেছিলাম?তার সাথে দেখা করতেন। অপারেসন তো বলা যায় না কি হয়?
– ডাক্তার সাব, আমার কোন মেয়ে নেই। আমি কোন রাক্ষসীটাকে জন্ম দেয়নি।
– কি বলছেন এসব?
– হ্যাঁ টিকই বলছি, জানেন ওই রাক্ষসীটার জন্য আমি মারিয়াকে হারিয়েছি। অনেক ভালোবাসতাম। ভালোবেসে বিয়ে করেছিলাম। কিন্তু পুড়োকপালীটা হওয়ার সময় আমার মারিয়াকে কেড়ে নিয়েছে। ওর মুখ দেখাও পাপ। ওর জন্য ওর মা মারা গেছে। ওর মতো মেয়ের মুখ আমি দেখতে চাই না। ওর মুখ দেখার আগে যেন মরণ হয়। ডাক্তার সাব যদি পারেন আমার অপ
– আচ্ছা
– মৌ জানালায় দাঁড়িয়ে তার বাবার কথা শুনছে। চোখের পানি টপটপ করে পড়ছে। বুকের ভেতরটা কেমন যেন করছে। বাবা, নামক মানুষটাকে সে কখনো বাবা বলে ডাকতে পারেনি।
– হ্যাঁ ঠিকই বলছি, জানেন ওই রাক্ষসীটার জন্য আমি মারিয়াকে হারিয়েছি। অনেক ভালোবাসতাম। ভালোবেসে বিয়ে করেছিলাম। কিন্তু পুড়োকপালীটা হওয়ার সময় আমার মারিয়াকে কেড়ে নিয়েছে। ওর মুখ দেখাও পাপ। ওর জন্য ওর মা মারা গেছে। ওর মতো মেয়ের মুখ আমি দেখতে চাই না। ওর মুখ দেখার আগে যেন মরণ হয়। ডাক্তার সাব যদি পারেন আমার অপারেশনের টাকা যে দিল তার সাথে একটু দেখা করিয়ে দিবেন।
– আচ্ছা আসি তাহলে।
– মৌ জানালায় দাঁড়িয়ে তার বাবার কথা শুনছে। চোখের পানি টপটপ করে পড়ছে। বুকের ভেতরটা কেমন যেন করছে। বাবা, নামক মানুষটাকে সে কখনো বাবা বলে ডাকতে পারেনি। নিজের বাবা তাকে ছোটবেলা জাতকঘরে মেরে ফেলতে চেয়েছিল। তবুও চায় তার বাবাটা যেন ভালো থাকে। মৌ চোখের পানি মুছে হসপিটাল থেকে বের হয়ে গেল। কোথাই যাবে পৃথিবীটা তার কাছে বড্ড নির্মম মনে হচ্ছে। এ পৃথিবীতে তার যে কেউ নেই। রাস্তায় হাটতেছে আর ভাবছে কি করবে।
– এদিকে রাজ সারাদিন কিছুই খায়নি। বিকেলে তার ফোনটা বেজে ওঠে। ফোনটা ধরতেই ওপাশ থেকে বলে ‘ জানন কেমন আছো তুমি?’আমাকে একটুও মিস করোনি?
– রাজ সুমাইয়ার কন্ঠ শুনেই বললো ‘ কোথায় তুমি?
– বাসায়।
– এক ঘন্টার মাঝে পার্কে আসতে পারবে?
– হ্যাঁ আসতেছি। আমার জান বলেছে আসতেই হবে।
– রাজ পার্কে গিয়ে বসে আছে। ক্ষানিক পর সুমাইয়া এসেই রাজকে জড়িয়ে ধরে বললো’ জান কাল সারারাত অসুস্থ ছিলাম। ‘ তোমাকে ফোন দিতে পারিনি। জানো তোমার সাথে কথা না বলতে পারলে মনে হয় আমার দমঃ বন্ধ হয়ে যায়।
– রাজ সুমাইয়াকে সরাচ্ছে না বুক থেকে।
– সুসাইয়া রাজকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো’ জান, রক্ষিতার সন্তার নষ্ট করেছে?
– না ও চলে গিয়েছে।
– ওহ্ তাই বুঝি? লাভিউ জান। সত্যিই রক্ষিতাটা –
কথা শেষ করার আগেই রাজ সুমাইয়াকে বুক থেকে সরিয়ে গালে ঠাস ঠাস করে চড় বসিয়ে দিলো।
– জান আমাকে মারলে তুমি?
– এবার আরেকটা কষে থাপ্পর দিয়ে বললো’ কাকে তুই রক্ষিতা বলছিস? যাকে আমি বিয়ে করেছিলাম তাকে? কাকে তুই রক্ষিতা বলছিস? যে নিজের স্বামীর পা ধরে সারারাত বসেছিল তাকে। রক্ষিতাটা তো তুই। তুই রক্ষিতা না শুধু তুই পতিতা।
– রাজ কি বলছো এসব?
– রাজ আবারো সুমাইয়ার গালে চড় বসিয়ে দিল। এবার সুমাইয়ার নাক ফেটে রক্ত বের হচ্ছে।
– কি রক্ষিতা এখন কষ্ট লাগে? আমারো লেগেছিল, কাল যখন রাফির কাছে তোর শরীরের চাহিদা মেটালে আমি সব দেখছি। আমেরিকাতে বিয়ে করে, আমার সম্পত্তির লোভে রক্ষিতাগিরি করতে চেয়েছিলি?
– আমি সত্যিই ভাগ্যবান মৌ এর মত কাউকে পেয়েছিলাম। হিরাকে কাঁচ ভেবে ভুল করেছি। আর সেটার সংশোধন করবো। আর তুই রক্ষিতা যদি কখনো আমার সামনে আসিস তাহলে তোর খবর আছে। কথাগুলো বলে, রাজ বাসায় এসে পড়ে।
– বাসায় আসতেই রাজের মা বলে বাবা বলছিস মেয়েদের বাড়ি?
– মা আমি সুমাইয়াকে বিয়ে করবো না।
– তো কাকে করবি?
– মা আমাকে একা থাকতে দাও।
– রাজ রুমে দরজা আঁকটে দেয়। মনে মনে ভাবতে লাগে, মৌ কি আমাকে ক্ষমা করবে? আমি যে অপরাধী নিজের সন্তানকে অবৈধ বানিয়েছি। যে ভাবেই হোক আমার মৌকে খুঁজে বের করতেই হবে। দরকার হলে তার পায়ে ধরে ক্ষমা চেয়ে নিবো। রাজ আর দেরি না করে গাড়ি নিয়ে বের হয়ে যায়।
– এদিকে মৌ কোথায় গিয়ে থাকবে কিছুই বুঝতে পারছে না। এদিকে সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে। দু’জায়গায় বাড়ি ভাড়া থাকার কথা বলেছিল। এক জায়গায় না করে দিছে। অন্য জায়গায় বাড়ির মালিক থাকতে দিতে চাইলেও তার বউ বের করে দেয়। আর বের করে দেওয়ার সময় বলে সতিন ঘরে আনতে পারবো না ।
– মৌ একা একা হাটছে, এতো রাতে কয় যাবে। রাত প্রায় নয়টা এমন সময় কে যেন পিছন থেকে মুখটা চেপে ধরে ঝোপের নিচে নিয়ে ফেলে দিলো।
– দু’টা ছেলে, একজন মৌ এর গলায় ছুরি ধরে বলছে, যদি কোন কথা বলিস তাহলে একদম গলায় চালিয়ে দিবো। আর তুই কি করছিস? তাড়াতাড়ি কাজ শেষ কর। তোর পর আমি করবো।
– মৌ এর শরীর কাঁপছে। গলা শুকিয়ে আসছে। অসহায়ের দৃষ্টিতে আরেকটা ছেলের দিকে তাকিয়ে আছে। ছেলেটা তারা পেন্ট খুলছে। মৌ ছোট্ট গলায় বললো’ ভাইয়া জানো ছোটবেলায় মা মারা গেছে। বাবাও সন্তান বলে পরিচয় দেয় না। আমার কোন ভাই নেই। তোমরা আমার ভাই। আমার গর্ভে সন্তান। তোমরা দু’জন আমার ভাইয়ের মতো। আমার সর্বনাশ করো না। দেখ তোমার বোনটার গর্ভে বাচ্চা। প্লিজ, এসব করো না।
– এই চুপ কর, ডায়ালগ কম করে দে। ছেলেটা সমাপূর্ণ বিবস্ত্র হয়ে বুকের উপর থেকে শাড়ির আচলটা সরাতেই মৌ, তার হাতে এক মুষ্ঠি বালু যে চাকু ধরছে তার চোখে ছুড়ে মারল। সাথে অন্য ছেলেটাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে এক দৌড়ে রাস্তায় মাঝখানে এসে পড়ে। হঠাৎ সামনের দিকে তাকিয়ে দেখলো একটা মাইক্রো দ্রুত গতিতে তার দিকে ছুটে আসছে। মৌ চোখ বন্ধ করে ফেলল। মৌ বুঝতে পারলো গাড়িটা এসে তাকে একটা ধাক্কা দিয়েই ফেলে দিল। রক্তে পিচঢালা রাস্তা লাল হয়ে যাচ্ছে।
চলবে”””””””
সংসার
পর্বঃ১৫
লেখাঃ রাইসা
– এই চুপ কর, ডায়ালগ কম করে দে। ছেলেটা সমাপূর্ণ বিবস্ত্র হয়ে বুকের উপর থেকে শাড়ির আচলটা সরাতেই মৌ, তার হাতে এক মুষ্ঠি বালু যে চাকু ধরছে তার চোখে ছুড়ে মারল। সাথে অন্য ছেলেটাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে এক দৌড়ে রাস্তায় মাঝখানে এসে পড়ে। হঠাৎ সামনের দিকে তাকিয়ে দেখলো একটা মাইক্রো দ্রুত গতিতে তার দিকে ছুটে আসছে। মৌ চোখ বন্ধ করে ফেলল। মৌ বুঝতে পারলো গাড়িটা এসে তাকে একটা ধাক্কা দিয়েই ফেলে দিল। রক্তে পিচঢালা রাস্তা লাল হয়ে যাচ্ছে। মৌ তার পেটটা ধরে আছে। মিনমিন করে আকাশের দিকে তাকিয়ে বলছে’হে আল্লাহ আমার সন্তানটাকে কিছু করো না। ‘
– এদিকে জনাব শফিক সাহেব, গাড়ির ব্রেক কষায় পরও গাড়ির পুরোটা কন্টোল নিতে পারেনি। তিনি গাড়ি থেকে নেমেই দৌড়ে আসলেন। মৌকে কুলে তুলে নিতেই চমকে ওঠলো! মৌ শফিক সাহেবকে কাঁপা কাঁপা গলায় বললো’ আমার সন্তানটার যেন কিছু না হয়। কথাটা বলেই সেন্সলেন্স হয়ে গেল। শফিক সাহেব এখনো মৌ এর দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
গাড়ি থেকে বাকিরা দৌড়ে নেমে এসে দেখে, শফিক সাহেব মৌকে কুলে নিয়ে বসে আছে।
– কি হলো আঙ্কেল চলেন হসপিটালে। মেয়েটাতো মারা যাবে। প্রচুর রক্তঝরছে। শফিক সাহেব ‘চিৎকার দিয়ে বলে ওঠলো, আমার কারিমা ফিরে এসেছে।
সবাই শফিক সাহেবের কথায় চমকে ওঠলো ‘কারিমা! এ কি করে সম্ভব কিছু ক্ষণ আগে যাকে নিজে হাতে দাফন করে আসলাম সে কিভাবে ফিরে আসে। শফিক সাহেবের হাতটা কাঁপছে। শফিক সাহেব মৌকে হসপিটালে তাড়াহুড়া করে হসপিটালে নিয়ে যায়। ডাক্তার ঘন্টা দু’য়েক পর অপারেশন কেবিন থেকে বের হয়ে বলে ‘ স্যার পেশেন্টের অবস্থা বেশি ভালো না। মাথায় ব্রেনে আঘাত পেয়েছে।
– কি বলছেন এসব? যেকোন মূল্যে আমার মেয়েকে বাঁচাতে হবে। আমার এক কারিমা মরে যাওয়াতে আরেক কারিমা আল্লাহ আমাকে দিয়েছে। প্লিজ ডক্টর মেয়েটার যেন কিছু না হয়।
– স্যার আপনি টেনশন করবেন না। আমরা দেখছি কি হয়।
– ডাক্তার শ্রীকান্ত মৌ এর চিকিৎসার জন্য মেডিকেল বোর্ড গঠন করলো।
– এদিকে শফিক সাহেবের স্ত্রী শফিক সাহেবের হাতটা ধরে বলল’ওগো আল্লাহ হয়তো তোমার আর আমার প্রতি চোখ তুলে তাকিয়েছে।’আমাদের কারিমাকে আমাদের জন্য আবার পাঠিয়েছে এ মেয়ের মাঝে। দেখো মেয়েটার যেন কোন কিছু না হয়।
– তুমি চিন্তা করো না, দরকার হলে বিদেশ নিয়ে যাবো তবুও বাঁচাবো। বাঁচাতে যে হবেই।
– পরের দিন ডাক্তার শ্রীকান্ত শফিক সাহেবকে বললো ‘ শফিক সাহেব আপনি পেশেন্টকে নিয়ে সিঙ্গাপুর চলে যান। ‘ সেখানে কথা হয়েছে। আমাদের হাতে কিছু করার নেই। তাছাড়া মেয়েটা প্রেগনেন্ট! রোগির অবস্থা খুবই খারাপ। এখানে রাখলে, হয়তো আর বাঁচানো যাবে না। ‘এখনো জ্ঞান আসছে না।
– প্লিজ আপনি যতো তাড়াতাড়ি পারেন ব্যবস্থা করের সিঙ্গাপুর নেওয়ার।রাতেই মৌকে নিয়ে জনাব শফিক সাহেব আর তার স্ত্রী সিঙ্গাপুর চলে যায়।
– এদিকে রাজ শহরের কোন অলিগলি বাদ রাখেনি। সব জায়গায় মৌকে খুঁজে যাচ্ছে। মৌ এর মায়াবী মুখটা বারবার রাজের চোখের সামনে ভাসছে। রাত একটা বাজে এমন সময় রাজের ফোনটা বেজে ওঠে। ফোনটা ধরতেই ওপাশ থেকে কে যেন বললো ‘ হ্যালো রাজ, বাবা তুই কই?
– বাসায় আসই।
– মা আমি আসতেছি। তুমি চিন্তা করো না। রাজ বাসায় যাওয়ার সাথে সাথেই রাজের মা রাজকে কাছে ডেকে নিয়ে বললো’ বাবা তোর কি হয়েছে? তোর কষ্ট যে আমার আর সহ্য হয় না? আমি যে তোর মা। আজ সুমাইয়াদের বাড়িতে যাওয়ার কথা ছিল। তাদের বাড়িতেও গেলি না?
– রাজ তার মাকে জড়িয়ে ধরে হাউ মাও করে কেঁদে দিয়ে বললো’ মা আমি ভুল করেছি। ‘ আমার মৌকে আমি কষ্ট দিয়েছি। নিজের সন্তানকে অবৈধ সন্তান বলে আখ্যা দিয়েছি। মৌ এর গর্ভে আমার সন্তান ছিল। মা আমি ওকে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে তাড়িয়ে দিয়েছি।
– কি বলছিস এসব রাজ?
– হ্যাঁ মা ঠিকই বলছি। মৌ ফুলের মতো পবিত্র। মৌকে ছাড়া আমি বাঁচবো না মা। আমি সুমাইয়ার মায়ায় ফেসে গিয়েছিলাম। সুমাইয়া আমাদের সম্পত্তির লোভে এসব করেছিল।
– কি! রাজ তুই মানুষ না অমানুষ? একটা এতিম মেয়েকে তুই কষ্ট দিতে পারলি? আরে আমিও না যেন মেয়েটাকে কত কষ্ট দিয়েছি। তুই অনেক ভুল করছিস। তুই আমার ছেলে হতে পারিস না ।
– মা, কি বলছো এসব?
– হ্যাঁ ঠিকই বলছি। আমার ছেলে হলে মেয়েটাকে দিনের পর দিন এভাবে কষ্ট দিতে পারতি না। আমি কিছু জানি না, আমি আমার বউকে দেখতে চাই এ বাড়িতে।
– রাজ কিছু না বলে তার রুমে চলে যায়। রুমে ঢুকলে রাজের আরো বেশি কষ্ট হয়। কারণ রুমে আসলেই মনে হয় মৌ রুমে বসে আছে। রাজের কেন যেন খুব কষ্ট হয়। মৌ এর কথা ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে যায় খেয়াল নেই। ফজরের আযান শুনে ঘুম ভাঙতেই বুকটা হুহু করে কেঁদে ওঠে। কারণ প্রতিদিন ফজরের আযান হলে মৌ ডেকে দিত। আজ তো কেউ ডেকে দেয় না। রাজ আজ আর শুয়ে থাকতে পারে না। বিছানা থেকে উঠে, পড়ে থাকা পাঞ্জাবিটা পড়ে মসজিদে চলে যায়। নামায শেষ করে বাসায় বসে আছে। এমন সময় ফোনটা ক্রিং ক্রিং করে বেজে ওঠে। রাজ তার ফোনটা বের করে দেখে তার ফোনে রিং হচ্ছে না। বালিশের নিচ থেকে আওয়াজ-আসছে। রাজ ফোনটা বের করতেও বুকটা ছ্যাঁত করে ওঠে! মৌ এর ফোন। মৌ তার ফোনটাও রেখে গিয়েছে। তাহলে এতোগুলো টাকা নিয়ে কি করলো। এ দিকে ফোনটা বেজেই চলছে। ফোনটা ধরতেই ওপাশ থেকে পুরুষালি কন্ঠে কে যেন বললো’ মামনি তোমার বাবা এখন সম্পূর্ণ বিপদ মুক্ত!
-মানে? আপনি কে? আর এসব কি বলছেন?
– ডাক্তার রাজকে সবকিছু খুলে বললো। রাজ হসপিটালেরর ঠিকানা নিয়ে মৌ এর বাবার সাথে দেখা করলো।
– ডাক্তার মৌ এর বাবাকে বললো’ এই যে মাহিস আহম্মেদ আপনার অপারেশনের টাকা কে দিয়েছে উনি জানেন।’কথাটা বলে ডাক্তার চলে গেল।
– মাহিস সাহেবকে রাজকে দেখে বললো’বাবা বলো কে আমার জন্য এতোগুলো টাকা দিলো?
– আপনার মেয়ে!
– মানে?কি বলছো এসব?
– হ্যাঁ সত্যি বলছি। যাকে আপনি জাতক ঘরে মেরে ফেলতে চেয়েছেন। সে মেয়ে আপনার অপারেশনের টাকা দিয়েছে। যে মেয়ের মুখ তিনবছর এর মাঝে একবারো দেখেননি সে মেয়ে। যে মেয়েকে দীর্ঘ বিশবছরে একটিবার বাবা ডাকতে দেননি। সে মেয়ে আপনাকে বাঁচিয়েছে। জানেন মাহিস সাহেব, হায়াত মউত আল্লাহর হাতে এতে কাউকে দোষারোপ করা ঠিক না। আর আপনি তো আপনার রক্তকে অস্বীকার করেছেন। জানেন মৌ আপনার জন্য কি করেছে? যে লোকটাকে জীবনে একটিবার বাবা বলে ডাকতে পারেনি। তার জন্য চুক্তি করে বিয়ে করেছিল। নিজের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদটা অন্য কারো পায়ে ঠেলে দিয়ে আপনার জীবন বাঁচিয়েছে। আগে জানতাম বাবা যারা তারা মেয়েকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসি। কিন্তু সেটা ভুল। একটা মেয়ে শুধু দিয়েই গেল। নিজের সমস্ত সুখটা বির্সজন দিলো। নিজেকে রক্ষিতা বানালো। কার জন্য জানেন আপনার জন্য।
– মৌ এর বাবা কাঁদছে। দীর্ঘ বিশবছর পর কাঁদছে। যেদিন মৌ এর মা মারা গিয়েছিল সেদিন কেঁদেছিল। আজ আবার নার চোখের নদীতে বান এসেছে। মৌকে খুব করে দেখতে মন চাচ্ছে। মা বলে ডাকতে ইচ্ছে করছে। মৌ এর বাবা রাজের হাত দু’টি ধরে বলতে লাগল’ বাবা আমার মেয়ে কেথায়? আমার মৌ কোথায়? আমার মা কোথায়? আমার মাকে আমি দেখবো। নিয়ো চলো।
– আঙ্কেল কান্না করবেন না। মৌ হারিয়ে গেছে। অভিমান করে চলে গেছে। আমি তাকে অনেক কষ্ট দিয়েছি। মৌকে যেভাবে হোক খুঁজে বের করবো।
– এদিকে অনেকদিন হয়ে যায় মৌ এর কোন খুঁজ নেই। রাজ প্রতিদিন নিয়ম করে মৌকে খুঁজে। মৌ এর চিন্তায় একদম খাওয়া -দাওয়া ছেড়ে দেয়। রাজের মা একমাত্র ছেলের কষ্ট সহ্য করতে পারে না। একদিকে ব্যবসাটাও ঠিকমতো পরিচালনা করা যাচ্ছে না।
-দিনদিন রাজের অবস্থা খারাপ হতে লাগলো। বিশেষ করে রাজকে নিয়ে মৌ এর স্বপ্নগুলো ডাইরির পাতায় দেখে। এখন সারাদিন এই ডাইয়িটা নিয়েই পড়ে থাকে। আস্তে আস্তে রাজ পাগল হয়ে যায়।
– এদিকে রিত্ত আর তার মা দু’জনেই ছেলের জন্য কান্না করে। মৌকে অনেক খুঁজেও পায় না। রাজ সারাদিন মৌ এর ছবি আর ডাইরিটা বুকে নিয়েই রুমে বসে থাকে। অনেক ডাক্তার দেখিয়েছে, কিন্তু দিন দিন আরো রাজের অবস্থা খারাপ হচ্ছে। সব ডাক্তারই বলে মৌকে যদি নিয়ে আসা যায় তাহলে ভালো হয়ে যেতে পারে । কিন্তু মৌকে অনেক খুঁজা খুজির পরও যখন পাওয়া যায় না। রাজ তখন বড্ড উন্মাদ। এখন তাকে বাসায় না পাগলা গারদে থাকতে হয়। বাসায় থাকলে সবকিছু ভেঙে ফেলে। এসব দেখে রাজের মা আর সহ্য করতে পারে না।
– দেখতে দেখতে ছয় বছর চলে যায়। রিত্ত এখন অফিসের দায়িত্ব নিয়েছে! প্রতিদিনের মতো সেদিনও যখন অফিসে যাবে এমন সময় শুনতে পায় তাদের কারখানায় আগুন লেগে কোটি কোটি টাকার ক্ষতি হয়ে যায়। কথাটা রাজের মা শুনায় সাথে সাথে হার্ট এট্যাক করে। হসপিটালে নেওয়ার আগেই মারা যায়।
– রাজকে মানসিক হসপিটাল থেকে নিয়ে আসা হয়। তার মাকে এ অবস্থায় দেখে কেমন যেন স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে। মা মা বলে কান্না করতে লাগে। রিত্তকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগে। এমন দিন তার দেখতে হবে সে কোনদিনই ভাবেনি। মা’কে হারিয়ে একদম নিঃস্ব হয়ে যায়। এদিকে রিত্ত তার মা’কে হারালেও তার ভাইয়ের সুস্থ হয়ে ওঠাই আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা জানান।
– এদিকে, কিছুদিন যেতেই ঋণের বুঝা চেপে বসে। ব্যাংকের ঋণ দিতে না পারায় তাদের সম্পত্তি নিলামে ওঠে যায়। রাজ রিত্তকে নিয়ে একদম রাস্তায় নেমে যায়। কত জায়গায় কতো চাকরি খুঁজেছে কোন চাকরি পায়নি। সব জায়গায় অভিজ্ঞতা খুঁজে। সত্যিই আল্লাহর খেলা বুঝা দায়। যে রাজ হাজার হাজার মানুষকে চাকরি দিতে পারতো আজ সেই সামান্য একটা চাকরির জন্য ঘুরছে কতো মানুষের দুয়ারে দুয়ারে। রাজ সারাদিন চাকরি খুঁজে বাসায় এসে দেখে, রিত্ত খাবার নিয়ে বসে আছে। রাজকে দেখেই বললো ভাইয়া ফ্রেশ হয়ে খেতে আসো। আচ্ছা আসতেছি। রাজ ফ্রেশ হয়ে খেতে বসে দেখে প্লেটে অল্প ভাত সাথে আলো ভর্তা। হাত ধুয়ে বলল’ তুই খেয়েছিস?
– হ্যাঁ ভাইয়া অনেক ক্ষুধা লেগেছিল। তাই খেয়ে নিয়েছি। তুমি খেয়ে নাও।
– আচ্ছা! রাজ খাবার মাখিয়ে রিত্তকে বললো ‘ হ্যাঁ কর।
– ভাইয়া আমি তো খেয়েছি।
– হুম যে বোন আমাকে রেখে কোনদিন খেলো না। সে বোন আজ আমাকে রেখে খেয়ে ফেলবে এটা ভাববো কি করে? হা কর। রাজ রিত্তের মুখে খাবার তুলে দিচ্ছে। রিত্ত রাজের মুখে খাবার তুলে দিচ্ছে।
দু’জনের গাল বেয়ে টপটপ করে পানি খাবারে পড়ছে।খাবারটা শেষ হওয়ার আগেই রাজের ফোনে টুং করে একটা ম্যাসেজ আসলো। ম্যাসেজটা রিত্ত দেখে বললো’ ভাইয়া, কারিমা হাউজিং প্রজেক্টে পরিক্ষা দিয়েছিলে?
– হ্যাঁ কেন?
– ভাইবার জন্য যেতে বলেছে কাল।
– ও আচ্ছা।
– পরের দিন রাজ যখন ভাইবা দিতে যাবে তখন দেখলো রিত্ত নামায পড়ছে। রাজ কিছুক্ষণ দাড়িয়ে থাকলো। রিত্ত নামায শেষ করে আসলে, রাজ বললো’ এখন কিসের নামায পড়লি?
– কিসের আবার নফল নামায পড়লাম। চাকরিটা যেন তোমার হয়ে যায়।
– রাজের চোখে পানি এসে গেলে, রিত্তের দিকে তাকাতেই। এই একটা ভালো জামা আছে রিত্তের। অথচ যার প্রতিদিন নতুন নতুন ড্রেস পড়া অভ্যাস ছিল। রাজ রাস্তা দিয়ে হাঁটছে আর ভাবছে চাকরিটা হলে, প্রথম টাকা দিয়ে রিত্তের জন্য কেনা কাটা করবে।
– রাজ অফিসে গিয়ে বসে আছে। হঠাৎ পিয়ন এসে বলল ‘ আপনাদের মাঝে রাজকে? তিনি ভেতরে যান।
– রাজ ফাইলটা নিয়ে রুমে প্রবেশ করার আগে বললো’ মে আই কামিন স্যার?’
– ইয়েস কামিন।
– কতটা শুনে রাজ চমকে গেল। পরিচিত কন্ঠ! রাজ সামনে বসা মেয়েটার দিকে তাকাতেই রাজের বুকটা ছ্যাঁত করে ওঠলো! মৌ তুমি! কথাটা বলতে গিয়ে গলাটা কেমন যেন ধরে এলো।
—- চলবে”””’