সংসার
পর্বঃ১০+১১
লেখা:রাইসা।

– আর এই যে মৌ তোমাকে তো মেয়ের অধিকার দিয়েছিলাম। সে সুযোগে এতবড়ো একটা সত্য গোপন করে গেলে? আমার সত্যিই আজ মরে যেতে ইচ্ছে করছে। কি অন্যায় করেছিলাম আমি। এতোবড় কথাটা গোপন রেখেছো? এই মুহূর্তে বাড়ি থেকে তুমি আর রাজ বের হয়ে যাবে।

– মা কি করেছে আমি?
– কি করেছো দেখবে?
– মৌ ভয়ে কাঁপছে, এমন সময় রাজের মা একটা কাগজ বের করেই বললো’ এটা কি?

– মৌ কান্না করে দিয়ে রাজের মাকে জড়িয়ে ধরে বলল’ মা আমাকে ক্ষমা করে দেন। ‘মা আমি আপনাকে বলতে চেয়েছিলাম। কিন্তু রাজ বলছে আপনাকে সারপ্রাইজ দিবে।

– রাজ বউমা কি সত্যি বলছে?
– রাজ মাথা নাঁড়িয়ে হ্যাঁ সূচক জবাব দিল।

– এই রিত্ত, সবাইকে জানিয়ে দে, আমাদের বাড়িতে নতুন মেহমান আসছে আর এজন্য কাল আমাদের বাড়ি অনুষ্টান হবে। আর মৌ মা আমার এখন থেকে আর কোন কাজ করবে না। মনে রাখবে তুমি শুধু রাজের বউ নও এখন। তোমার গর্ভে এ বাড়ির নতুন প্রদীপ জ্বলার অপেক্ষায়।
– কি হলো কাঁদছিস কেন? এই মৌ?
– মা আপনি আমাকে বকা না দিয়ে, আরো কত কি বলছেন! সত্যিই আমি অনেক ভাগ্যবতী।

– আরে কি বলছিস! তুই তো আমার মেয়ের মতো। বুকে আয় মা।
– মৌ রাজের মা’কে জড়িয়ে ধরে নিজের অজান্তেই মা মা বলে ডাকতে লাগল
কেমন যেন মনে হচ্ছে মৌ তার নিজের মাকে জড়িয়ে ধরে আছে।

– এদিকে রাজ কি করবে ভাবতে পারছে না। এখন বাচ্চাটা নষ্ট করা তো আরো কঠিন হয়ে গেল! কিসের জন্য যে এসব করতে গেলাম। এখন যদি মৌ না যায় বাড়ি থেকে! আমি তো সুমাইয়াকে ছাড়া বাঁচবো না। সুমাইয়াকেও কথা দিয়েছি ওকে বিয়ে করব। সুমাইয়া তো আমাকে ছাড়া বাঁচবে না। আমাদের ভালোবাসা কি হেরে যাবে। যে ভালোবাসাকে বাঁচানোর জন্য চুক্তির বিয়ে করলাম। রাজ অফিসে গিয়ে এসবই ভাবতে লাগল।লাঞ্চের সময় রাজের ফোনটা বেজে ওঠল!
– ফোনটা ধরতেও ওপাশ থেকে সুমাইয়া বলল’ বাবু কি করো?’
– বাবু বাবু করো না তো! আমি আছি মহা ঝামেলায়। তুমি বিকেলেই একটু দেখা করো।

– আচ্ছা!

– বিকেলবেলা সুমাইয়া আর রাজ বসে আছে। কারো মুখেই কোন কথা নেই। সুমাইয়া নীরবতা ভেঙে বলল ‘ কি হয়েছে আমার জানের?’
– আর বলোনা মৌ এর প্রেগন্যান্সি রির্পোট মা দেখে ফেলেছে। এখন তো বাচ্চা নষ্ট করা একেবারেই অসম্ভব হয়ে গেল। আর মা’কেই কি ভাবে বলবো যে আমি মৌকে চুক্তি করে বিয়ে করছি। আমি কি করবো বলো? বাচ্চাটা যেকোন মূল্যে নষ্ট করতেই হবে।

– রাজ, আমি কিছু জানি না। তুমাকে যদি না পায় তাহলে আমি বাঁচতে পারবো না। আমার মরার কথাটা শুনতে পারবে। সুমাইয়ার চোখে পানি টলমল করছে। দু’জন দু’জনকে সত্যিই অনেক ভালোবাসে।

– রাজ সুমাইয়ার চোখের পানি মুছে দিয়ে বলল’ তাহলে কি করা যায় সুইট?’

– শোন আগে বাচ্চাটাকে নষ্ট করো। আর একটা কথা বলি, মৌ যা করছে সব তোমার সম্পত্তির জন্য। এই জন্য বাচ্চা নষ্ট করতে চায়নি। যেন তুমি তালাক দিলেও সন্তানের দাবি নিয়ে এসে তোমার সম্পত্তিতে ভাগ বসাতে পারে। খুব সুন্দর করে নীলনকশা তৈরি করেছে। তুমি শুনো প্রথমে বাচ্চা নষ্ট করার কথা সুন্দর ভাবে বুঝিয়ে বলবে মৌকে। আর তা যদি না মানে তাহলে আরো দু’লাখ টাকা চুক্তির চেয়ে বাড়িয়ে দেওয়ার কথা বলবে। আমি মনে করি যে মেয়ে টাকার জন্য রক্ষিতা হতে পারে সে মেয়ে সামান্য একটা বাচ্চা নষ্ট করতে পারবে না এমন তো কোন কথা নেই। আর যদি না নষ্ট করে তাহলে সিউর হয়ে নিবা, তোমার সম্পত্তি লাভের জন্যই গর্ভবতী হয়েছে। তুমি হাজারবার বললেও নষ্ট করবে না। এজন্য অন্য পথে হাটতে হবে। তুমি এককাজ করতে পারো, রাতে যখন ঘুমাবে তখন মুখে সেন্সলেন্স করার স্প্রে মেরে অজ্ঞান করে নিবে। তারপর পেটে একটা জোরে লাথি দিবে, তাতে কেস খতম। আর তাতেও না হলে গাড়ি একসিডেন্ট করিয়ে দিলেই হবে। তুমি চিন্তা করো না। এ পৃথিবীর বিনিময়ে হলেও আমি তোমাকে চাই। আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচবো না রাজ।

– রাজ পার্কে সুমাইয়াকে জড়িয়ে ধরে কপালে চুমু দিয়ে বলল’ সুইট হার্ট এভাবে কান্না করছো কেন? পৃথিবীর কোন শক্তি,বা ষড়যন্ত্র আমাদের আলাদা করতে পারবে না। তুমি আমার হার্ট যে!

– সুমাইয়া রাজকে জড়িয়ে ধরে এবার ফুপিয়ে কেঁদে দেয়। রাজ জানো কখনো নামায পড়তাম না। কিন্তু তোমাকে পাওয়ার আশায় নামাযের মোনাজাতেও তোমাকে চাই। তুমি আমার জীবন। তুমি আমাকে ছেড়ে যাওয়ার আগে মেরে ফেলো তাতেও সুখী হবো তবুও কখনো ছেড়ে যেয়ো না। আমি তোমাকে দেহ -মন- প্রাণ সব দিয়ে দিয়েছি।
– তোমাকে ছেড়ে কিভাবে যাবো বলো?তুমি যে আমার নিঃশ্বাস। কেঁদোনা হার্ট!

– এদিকে রাত্রে রাজ বাসায় এসে দেখে তার মা মৌকে খাইয়ে দিচ্ছে।
– মৌ ছোট্ট বাচ্চার মতো খেয়েই যাচ্ছে। রাজ ফ্রেশ হয়ে খাবার টেবিলে বসতেই রিত্ত খাবার নিয়ে আসলো।

– রিত্তকে খাবার নিয়ে আসতে দেখে রাজ বলল’ রিত্ত তোর ভাবীকে দিয়ে না এনে তুই আনলি কেন?

– কেন তুমি জানো না, ভাবী মা হতে চলেছে তাই সবকাজ বন্ধ!

– ওহ্ আচ্ছা। খাওয়া শেষ করতেই রাজের চিন্তাটা আরো বেড়ে গেল।

– পরের দিন জাঁকজমক ভাবে বাড়িটা সাজানো হয়েছে। গ্রাম থেকে রাজের মামা-মামী এসেছে। এছাড়া বন্ধু-বান্ধব অনেকেই। সাথে সুমাইয়াও।
– মৌকে সাজানো হয়েছে নিপুণ ভাবে। আজ প্রথম রাজ মৌ এর দিকে সু-দৃষ্টিতে তাকালো। চোখের নিচে গাঢ় করে কাজল দেওয়া, কালো রঙের নীল পাড়ের তাতের শাড়িতে মৌকে মনে হচ্ছে স্বর্গের অর্পসী! এতো সুন্দর কোন মেয়ে হতে পারে।

-হঠাৎ রাজের চোখটা সুমাইয়ার দিকে চলে যায়। সুমাইয়া চোখের পানিতে কাজল লেপ্টে গিয়েছে। রাজের বুকের ভেতর কেমন যেন মোচড় দিয়ে ওঠল।
-বাড়িতে অনুষ্টান শুরু হয়ে গেছে। এদিকে রাজের চোখ শুধু সুমাইয়াকে খুঁজছে। কিন্তু সুমাইয়া কোথাও নেই। রাজের কিছুই ভালো লাগছে না প্রচন্ড কান্না পাচ্ছে। এদিকে অনুষ্টান শেষ হয়ে গেলে রাতে যখন রাজ আর মৌ একি বিছানায় শুয়ে আছে। এমন সময় রাজ রুমের লাইট জ্বালিয়ে দিয়ে বললো’ মৌ আমাকে তুমি স্বামী মানো?
– হঠাৎ আপনি এমন প্রশ্ন কেন করছেন?
– বলো আমাকে কি স্বামী হিসেবে মানো?
– হুম। যেদিন কবুল বলেছি সেদিন থেকেই আপনাকে স্বামী হিসেবে গ্রহণ করেছি।
– রাজ মৌ এর কাছে গিয়ে, মৌ এর কপালে একটা চুমু দিয়ে মৌ এর মাথাটা কুলে তুলে নিল।

– মৌ ভাবতেও পারেনাই রাজ তার মাথাটা উড়ুতে রাখবে। বুকের ভেতর কেমন যেন করছে। মুখটা লজ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছে।

– রাজ মৌ এর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আর বলছে ‘ জানো মৌ তুমি খুব সুন্দর। সত্যি আমি তোমাকে পেয়ে ধন্য। তবে কি জানো আমার এ মনটা আমি সুমাইয়াকে দিয়ে দিয়েছি। এবং প্রতিজ্ঞা করেছি তাকেই বিয়ে করবো। সুমাইয়া আমাকে ছাড়া বাঁচবে না।
– আচ্ছা তোমাকে একটা কথা বলি?
– হ্যাঁ বলো!
– রাজ মৌ এর কপালে একটা চুমু দিয়ে বললো’ আমার বুকে আসবে মৌ? বুকটা খুব শূন্য শূন্য লাগছে। আসবে একটু বুকে?
– মৌ কিছু বলতে পারে না। রাজকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে! মনে হচ্ছে রাজের বুকের ভেতরে ঢুকে যাবে। রাজ মৌ এর মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে কানের কাছে মুখটা নিয়ে বললো’ মৌ তোমার গর্ভের সন্তানটা নষ্ট করে ফেলো! কি লাভ, তুমি তো অর্ধেক ডির্ভোস দিয়েই দিছো। তোমার সন্তান যখন বড় হবে তখন তো আর বলতে পারবে না আমার সন্তান। তখন সবাই কি বলবে? জারজ সন্তান। আমি চাই না তুমি কষ্ট পাও। আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি তাই বলছি বাচ্চাটা নষ্ট করে ফেল। তোমার সন্তানকে কেউ জারজ বলুক সেটা আমি চাই না।
– মৌ রাজের কথা শুনে কি বলবে বুঝতে পারছে না। মনে হচ্ছে কলিজাটা বুক ফেঁটে বেরিয়ে যাবে। পৃথিবীতে এতো কষ্টের কথা আছে? মনে হচ্ছে কলিজাতে কেউ ছুরি চালিয়ে দিলেও এতো কষ্ট হবে না। মৌ এর চোখের পানি কোন বাঁধা মানছে না। মৌ নিজেকে রাজের বুক থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বললো’ রাজ তুমি ভেবো না তোমার পরিচয়ে বড় করবো আমার গর্ভের সন্তানকে! না, তা ভেবোনা। আমার চুক্তি পূর্ণ হয়ে গেলেই চলে যাবো। আর হ্যাঁ প্লিজ তুমি আমার হাতে বিষের বোতল তুলে দিয়ো আমি হাসতে হাসতে পান করবো। তবুও গর্ভের সন্তানকে নষ্ট করতে পারবো না।

– রাজ বিছানা থেকে উঠে গিয়ে লর্কার থেকে টাকা এনে মৌ এর বুকে ছুড়ে দিয়ে বললো’ এখন তো পারবে নষ্ট করতে। এমনেই এতক্ষণ সময় নষ্ট করলাম। এখানে দু’লাখ আছে। বলো কাল কখন বাচ্চা নষ্ট করতে যাবে?

– মৌ টাকাটা রাজের হাতে দিয়ে, সরাসরি রাজের পা দু’টি ঝাপটে ধরে বলল’ আপনি প্লিজ এসব আর বলবেন না। আমি এ শহর ছেড়ে চলে যাবো তবুও বাচ্চা নষ্ট করতে বলবেন না। আমি মা হয়ে কিভাবে তাকে হত্যা করবো? আল্লাহর কাছে কি জবাব দিব।
– রাজ ধাক্কা দিয়ে মৌকে সরিয়ে দিল।
– মৌ ফ্লরে পড়ে ঠিকমতো উঠে দাড়াতে পারছে না। মনে মনে আল্লাহকে ডাকছে।
– রাজ বিছানায় বসে ভাবছে কি করবে। টাকা দেওয়াতেও তো রাজা হলো না, নষ্টাটা। হঠাৎ রাজের ফোনটা বেজে ওঠল।
– ফোন রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে কেঁদে কেঁদে কেঁদে মি:আরাফাত সাহেব বললো’ বাবা রাজ সুমাইয়া সুসাইড করতে গিয়েছিল। এখন হসপিটালে আছে। তুমি এখনি হসপিটালে আসো। ডাক্তার বলছে অবস্থা বেশি ভালো না। রাজ কাউকে কিছু না বলেই ‘গাড়ি নিয়ে হসপিটালের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।

– এদিকে মৌ কোনরকম ফ্লরে থেকে উঠে দেখে রাত দু’টা বাজে। কনকনে শীত। মৌ এর বুঝতে বাকি রইল না, তার এ সন্তানকে রাজ যেকোন মূল্যে দুনিয়ার মুখ দেখতে দিবে না। এসব কথা তো আর কাউকে বলাও যাবে না। এসব ভাবতে ভাবতে হঠাৎ মনে পড়ল নামায পড়ে আল্লাহর কাছে বাচ্চার হেফাজতের জন্য প্রার্থনা করা।

– মৌ সুন্দর করে ওযু করে যখন জায়নামাযে দাঁড়ায় এমন সময় শীতে তার সমস্ত শরীর কাঁপছে। নামায শেষ করে আল্লাহর কাছে দু’খানা হাত তুলে বললো’ হে রহমানুর-রাহীম। তোমার হুকুম ছাড়া তো গাছের একটি পাতাও নড়ে না। তুমি আমার গর্ভের সন্তানকে তোমার গায়েবী রহমত দ্বারা হেফাযত করো। আমি তো ইয়াতিম! ছোটবেলায় মা’কে হারিয়েছি। কখনো কোনদিন তোমার কাছে নালিশ করিনি। তুমিই একমাত্র পায়ো আমার সন্তানকে হেফাযত করতে। এসব বলে কান্না করতে থাকে।

– অন্যদিকে রাজ পাগলের মতো সুমাইয়ার কাছে ছুটে যায়।

– রাজ হসপিটালে গিয়ে দেখে সুমাইয়াকে অক্সিজেন দিয়ে রাখা হয়েছে।
– সুমাইয়ার বাবা রাজকে দেখেই জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগল। ছোট্ট বাচ্চার মতো ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে। বাবা রাজ আমার মেয়েটা তোমাকে ছাড়া বাঁচবে না। তুমি ওকে কখনো ছেড়ে যেয়ো না।

– না আঙ্কেল কখনো ছেড়ে যাবো না।

– এদিকে ডাক্তার এসে বললো’ রোগীর জ্ঞান ফিরেছে। রাজ দৌড়ে সুমাইয়াকে জড়িয়ে ধরে বললো’ কেন এমন পাগলামী করতে গিয়েছিলে?তোমার কিছু হলে আমি কিভাবে বাঁচতাম?
– রাজ ওই মৌ এর গর্ভে তোমার সন্তান আমি কিভাবে সহ্য করবো। তোমার সন্তান শুধু তো আমার গর্ভে স্থান পাবে।
-তুমি কান্না করো না। তোমার মাথা ছুয়ে প্রমিজ করলাম। মৌ এর গর্ভের সন্তান পৃথিবীর আলো দেখবে না। এবার তো খুশি?
– আমায় বিয়ে করবে তো? না করলে আমি মরে যাবো।
– হুম! করবো। আর বাজে কথা বলো না।

– এদিকে যতই দিন যাচ্ছে ততই দুশ্চিন্তা বাড়ছে। রাজের মা আর বোন বাচ্চার নামও ঠিক করে ফেলেছে। বাড়ি ভর্তি বাচ্চার খেলনা। খুশি যেন আর ধরেনা। শহরের নামকরা ধনী পরিবারে নতুন অতিথি আসবে এতে করে বাড়িতে ইদের আমেজ চলছে।

– এদিকে সুমাইয়া অনেকটাই সুস্থ। রাজকে ফোন দিয়ে নিয়ে গিয়ে হাতে একটা স্প্রে দিয়ে বললো ‘ রাজ এটা মৌ ঘুমানোর পর মুখে স্প্রে করলেই অজ্ঞান হয়ে যাবে। এমন সময় তলপেটে লাথি দিবে। বাচ্চা নষ্ট হয়ে যাবে। আর শোন খালি পায়ে দিবে।

-রাজ স্প্রে নিয়ে বাসায় এসে পড়ল। রাতে যখন মৌ ঘুমিয়ে গেছে। এমন সময় রাজ মৌ এর মুখে স্প্রে করে! স্প্রে করার পর মৌকে ঝাঁকি দিয়ে দেখে সেন্স আছে কি না। কিন্তু সত্যিই সেন্স নেই। রাজ মৌ এর পেটের কাপড়টা সরিয়ে পা টা তুলে জোরে করে লাথি

-চলবে”””””””
সংসার
পর্বঃ১১
লেখাঃরাইসা

– এদিকে সুমাইয়া অনেকটাই সুস্থ। রাজকে ফোন দিয়ে নিয়ে গিয়ে হাতে একটা স্প্রে দিয়ে বললো ‘ রাজ এটা মৌ ঘুমানোর পর মুখে স্প্রে করলেই অজ্ঞান হয়ে যাবে। এমন সময় তলপেটে লাথি দিবে। বাচ্চা নষ্ট হয়ে যাবে। আর শোন খালি পায়ে দিবে।

-রাজ স্প্রে নিয়ে বাসায় এসে পড়ল। রাতে যখন মৌ ঘুমিয়ে গেছে। এমন সময় রাজ মৌ এর মুখে স্প্রে করে! স্প্রে করার পর মৌকে ঝাঁকি দিয়ে দেখে সেন্স আছে কি না। কিন্তু সত্যিই সেন্স নেই। রাজ মৌ এর পেটের কাপড়টা সরিয়ে পা টা তুলে জোরে করে লাথি
মারবে যখন এমন সময় রাজের মা রাজের রুমের পাশ দিয়ে বার্থরুমে যাচ্ছিল! রাজকে দাঁড়ানো দেখে বললো’ বাবা রাজ কি হয়েছে তুই দাঁড়িয়ে আছিস কেন ওমন করে? বউ মার কিছু হয়েছে।
– রাজ পা টা সরিয়ে নিয়ে আসল। মনে মনে বলছে মা উঠার আর সময় পেলো না।
– এদিকে রাজের মা দরজা ধাক্কাচ্ছে! এই রাজ কি হয়েছে? সকাল থেকেই বুকটা কেন জানি ছ্যাঁত ছ্যাঁত করে ওঠছে। দরজা খুল।

– রাজ দরজা খুলে দেতেই, রাজের মা মৌ এর পাশে এসে বসে। মৌ এর কপালে হাত রেখে বলে, মা তোর শরীর খারাপ লাগছে?
-মৌ কোন কথা বলছে না। রাজের খুব টেনশন হচ্ছে! মা যদি পরিকল্পনার কথা জেনে যায় তাহলে আমাকে তো বাড়ি থেকে বের করে দিবে।

– এই রাজ কি ভাবছিস? বউমাকে হসপিটাল নিতে হবে কোন কথা বলছে না। কি হলো তুই এম্বুলেন্স ফোন কর।

– রাজ ফোনদিতেই গাড়ি এসে গেল। রাতেই মৌকে হসপিটালে এডমিট করা হলো। ডাক্তার মৌকে দেখে বললো’ অজ্ঞান হয়ে গেছে। আপনারা একটু আলাদা ভাবে কেয়ার নিবেন। কিছু হবে না।

– পরেরদিন মৌকে হসপিটাল থেকে বাসায় এনে, রাজের মা রাজকে বললো’ যে পর্যন্ত আমার বউমা মা হবে না ততদিন আমার সাথেই থাকবে। তুই কোন যত্ন নিতে পারিস না।

– কিন্তু মা ।

– কোন কিন্তু না। সেদিন যদি আমি ঘুম থেকে না উঠতাম। দেখা যেত খারাপ কিছু হয়ে যেত। তাই মৌ আমার সাথে থাকবে।

– আচ্ছা মা।
– এদিকে রাজের মা মৌকে এক মুহূর্তের জন্য চোখের আড়াল হতে দেয় না। সবসময় খেয়াল রাখে। রিত্তও মৌকে অনেক ভালোবাসে। সবসময় হাসিখুশি রাখে।

– কিন্তু এতো যত্নের মাঝেও মৌ দুশ্চিন্তায় ভোগে। একটা করে দিন যাচ্ছে, মনে হচ্ছে বিপদ অগ্রসর হচ্ছে। পরিবারের মানুষগুলোর সাথে থাকতে থাকতে মৌ সবাইকে আপন কররে নিয়েছে।

-একদিন দুপুরে মৌ আর রিত্ত বসে আছে। রিত্ত মৌ এর মাথায় তেল দিয়ে দিচ্ছে। রিত্ত তেল দিতে দিতে বললো’বাবা দেখ তোমার বেবীটা ঠিক আমার মতো হবে। দেখতে হবে না ফুপিটা কত ভালো। ভাইয়ার মতো হবে না।

– হুম হতেই হবে।

– এদিকে রাজ অফিসে গিয়ে সুমাইয়াকে ফোন দিয়ে দেখা করতে বললো।

.

মৌ রিত্তের সাথে এটা ওঠা নিয়ে কথা বলছে এমন সময় রিত্তের পাশে থাকা ফোনটা বেজে ওঠল! ফোনটা রিসিভ করতেই, ওপাশ থেকে অবনী বললো’ রিত্ত আপু কাকা সকালে মারা গেছে। ফুফিকে নিয়ে তোমরা এখনি গ্রামে আসো।

– রিত্ত ফোনটা কেটে দিয়েই একটা চিৎকার মারল। রাজের মা এসে বললো’ কিরে রিত্ত কি হলো এভাবে কাঁদছিস কেন?’

– মা ছোট মামা মারা গেছে। রাজের মা যেন কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছে না। রিত্তকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিয়ে বলল’ চল মা তারাতারি রেডি হয়ে নে। আর মৌ মা তুমি বাসায় থেকো তোমার শরীরটাও ভালো না। আমরা চলে গেলাম। আর রাজকে তোমার কাছে রেখে গেলাম। আমাদের যেতেই ১০ ঘন্টা লাগবে নয়তো নিয়ে যেতাম।
– মৌ কিছু না বলে মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ সূচক জবাব দিল।

– রাজের মা যাওয়ার আগে রাজকে ফোন দিয়ে সবকিছু বললো। সাথে মৌ এর যত্ন নিতেও বললো!

– রাজ, সুমাইয়াকে ঘটনাটা বলতেই সুমাইয়া বললো’ আজ আমি তোমার বাসায় থাকবো। ‘

-আচ্ছা! কিন্তু মামা যে মারা গেল খারাপ লাগছে!
– রাজ আমারো খারাপ লাগতেছে অনেক। কি করবো, দোআ ছাড়া তো কিছু করার নেই।

– আচ্ছা চলো একটু নদির পাড়ে যায় সেখান থেকে বের হয়ে সোজা তোমার বাসায়। তারপর সারারাত থেকে সকালে এসে পড়বো।
– কিন্তু আঙ্কেল?
– কি যে বলো বাবা তোমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিয়েছে।

– আচ্ছা তাহলে চলো।
– সুমাইয়া গাড়ি করে যাচ্ছে আর ভাবছে, আজ যে ভাবেই হোক মৌ এর বাচ্চা নষ্ট করতে হবে আজ রাতে। দরকার হলে আমি লাথি দিবো। যখন ঘুমিয়ে যাবে।

– মৌ এশার নামায পড়ে রাজের জন্য অপেক্ষা করছে। বারবার ঘড়ির কাটা দেখছে। হঠাৎ কলিং বেলটা বেজে ওঠে। মৌ দরজা খুলেই দেখে রাজ আর সুমাইয়া। সুমাইয়াকে দেখেই মৌ এর বুকে কেমন করে ওঠে।
– মৌ কিছু না বলে রাজের রুম ছেড়ে দেয়।
– রাজ সুমাইয়াকে নিয়ে তার রুমে ঢুকার আগে মৌকে বলে খাবার নিয়ে আসতে তাদের জন্য।
মৌ খাবার টেবিলে রেডি করে রেখে যখন রাজকে ডাক দিবে এমন সময় মৌ বুঝতে পারলো সুমাইয়া আর রাজ ফিসফিসিয়ে কি যেন বলছে।
– মৌ জানালার পর্দাটা সরাতেই দেখতে পেল, সুমাইয়া রাজের বুকে অর্ধ নগ্ন হয়ে শুয়ে আছে। রাজের বুকে শুয়ে শুয়ে বলছে ‘জান আজ সুবর্ণ সুযোগ। আমাদের ভআলোবাসার পথে সবচেয়ে বড় বাধা হচ্ছে মৌ এর গর্ভের সন্তানটা। তাই আজ উপযুক্ত একটা সময়। মৌ যখন ঘুমিয়ে যাবে তখন তার নামা পেটে লাথি দিবে। তাহলে তার মা হওয়ার স্বাদ সারাজীবনের জন্য মিটে যাবে ।
– সুমাইয়া কিন্তু মা যদি জানতে পারে?
– আরে মা আর রিত্ত তো নেই এখনি উপযুক্ত সময়। আর স্প্রে করার পর দিবে, বুঝার কোন সুযোগ নেই।

– এসব শুনার পর মৌ এর পা কাঁপছে কি করবে কিছু বুঝতে পারছে না। রাজকে কাঁপা কাঁপা গলায় ডেকে ভেতরে খাবার দিয়ে যখন বের হবে এমন সময় সুমাইয়া বললো’ আপু তুমি ঘুমাবে না?’
– মৌ মুচকি হেসে বললো হে বোন ঘুমাবো। মনটা ভালো লাগছে না। একটু লেট হবে।
– আচ্ছা তাহলে যাও।

– মৌ বের হতেই সুমাইয়া দরজা লাগিয়ে দিলো।

– মৌ রুম থেকে বের হয়ে অন্য রুমে এসে কুরআন পড়তে লাগল। মৌ বুঝে ফেলেছে খু্ব গভীর ষড়যত্ন চলছে তার গর্ভের সন্তান নিয়ে। এ সময় আল্লাহ ছাড়া কেউ হেফাযত করতে পারবে না তাকে। তাই কুরআন তেলাওয়াত করছে। সুমাইয়া কয়েকবার রুম থেকে বের হয়ে উঁকি দিয়ে দেখলো মৌ কুরআন পড়ছে। কি করবে কিছু বুঝতেছে না।ঘুমায় না কেন। এসব ভাবতে ভাবতে সুমাইয়ার ফোন আসে, সুমাইয়া ফোনে কথা বলেই রাজকে বলে’ জান আমার যেতে হবে। বাবার অবস্থা ভালো না।
– আমি ও যাই?
– না জান তোমার যেতে হবে না। তুমি পারলে পথের কাঁটাটা দূর করো।

– সুমাইয়া চলে যাওয়ার পরপরই রাজের বুকে কেমন যেন ব্যাথা করতে লাগল। ক্রমশ ব্যাথা তীব্র থেকে তীব্র হতে লাগল। নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে। বাধ্য হয়ে মৌকে ডাক দিয়ে বললো”মৌ আমাকে বাঁচাও।’ মৌ দৌড়ে এসে দেখে রাজের অবস্থা ভালো না। তাড়াতাড়ি এম্বুলেন্স ফোন দিয়ে হসপিটালে নিয়ে এডমিট করে।
– ডাক্তাররা যখন রাজের চিকিৎসা করছে মৌ এদিকে সারারাত নফল নামায পড়ছে। সকালের দিকে নার্স এসে বললো’ আপু আপনার দোআ কবুল হয়েছে। আপনার স্বামী মৃত্যুর দোয়ার থেকে ফিরে আসল।
– মৌ দৌড়ে রাজের কাছে গিয়ে দাঁড়াল। মন চাচ্ছে রাজকে গিয়ে জড়িয়ে ধরুক। কিন্তু না। নার্স রাজকে বললো’ স্যার আপনি অনেক লাকি এমন একটা বউ পেয়েছেন। যে সারারাত নামায পড়ে আপনার সুস্থতার জন্য কেঁদেছে। আর সঠিক টাইমে যদি হসপিটালে না নিয়ে আসতো তাহলে আপনাকে বাঁচানো যেতো না।

– রাজ কিছু বললো না। মৌ এর দিকে তাকালো। রাজ স্পষ্ট বুঝতে পারলো। মৌ এর চোখে পানি।
– কাঁদছো কেন মৌ?
– আপনার কিছু হলে আমি বাঁচবো না তাই।
– রাজের বুকটা কেমন করে ওঠলো!
– মায়াভরা দৃষ্টিতে রাজ মৌ এর দিকে তাকিয়ে আছে। এমন সময় রাজের ফোনটা চেনা সুরে ভেজে ওঠল! ফোন ধরতেই ওপাশ থেকে বললো’ আমার জানটার ঘুম ভাঙছে?
– সুমাইয়া আমি হসপিটালে!
– কি বলো? আমার জানের কি হয়েছে? কোন হসপিটালে বলো। সুমাইয়া রাজের কাছে হসপিটালে ঠিকানা নিয়ে বিশ মিনিটেই হসপিটালে এসে উপস্থিত হয়। হসপিটালে রাজকে দেখেই জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে দেয়। জান তুমি অসুস্থ আমাকে জানাতে পারলে না?
– আর এই যে রক্ষিতা! আমাকে ফোন করে জানাতে পারলে না?
– আপনাকে কেন জানাবো?
– ঠাস! করে চড় বসিয়ে দিয়ে বললো রক্ষিতা তুই কি বললি? আমাকে কেন জানাবি? জানস রাজ আমার জান আমি ওকে ছাড়া বাঁচবো না। রাজ যে আমার কলিজা ””’

চলবে””””

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here