সংসার
পর্বঃ ১৬+১৭
লেখাঃ রাইসা।
– রাজ অফিসে গিয়ে বসে আছে। হঠাৎ পিয়ন এসে বলল ‘ আপনাদের মাঝে রাজকে? তিনি ভেতরে যান।
– রাজ ফাইলটা নিয়ে রুমে প্রবেশ করার আগে বললো’ মে আই কামিন স্যার?’
– ইয়েস কামিন।
– কতটা শুনে রাজ চমকে গেল। পরিচিত কন্ঠ! রাজ সামনে বসা মেয়েটার দিকে তাকাতেই রাজের বুকটা ছ্যাঁত করে ওঠলো! মৌ তুমি! কথাটা বলতে গিয়ে গলাটা কেমন যেন ধরে এলো। মৌকে এভাবে দেখতে পাবে কোনদিন কল্পনাও করেনি।
– কি হলো দাঁড়িয়ে আছেন কেন? বসেন।
– তুমি এখানে কিভাবে মৌ?
– what? মৌ কাকে বলছেন?
– জানো মৌ আমি তোমাকে কত জায়গায় খুঁজেছি? আমি তোমার সাথে অনেক অন্যায় করেছি । তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও।
– প্লিজ স্টপ! আরেকটা কথাও না। আপনার মাথায় সমস্যা আছে? আপনি পাগলা গারদ রেখে এখানে কেন? আমি মৌ হতে যাবো কেন? আমি কারিমা! আর তুমি বলার সাহস কোথা থেকে পান আপনি? যত্তোসব!আপনি এখন আসতে পারেন।
– শফিক সাহেব এসব পাগল কিভাবে পরীক্ষায় টিকে যায়? নাকা কোন দালাল ধরেছে।
-মুহূর্তের মাঝে মৌ অগ্নি মূর্তি ধারণ করে।
– সরি, ম্যাম আমি না বুঝে মৌ ভেবে ভুল করে ফেলেছি। চাকরিটা আমার খুব দরকার। আমাকে বের করে দিবেন না। প্লিজ।
– সরি আমি কোন পাগল লোককে অফিসে চাকরি দিতে পারবো না।
– প্লিজ ম্যাডাম এমন করবেন না। আপনি যেভাবে বলবেন সেভাবেই কাজ করবো।
– ওহ্ আচ্ছা তাই বুঝি? শফিক সাহেব আপনি বাহিরে যানতো আমি উনার সাথে কিছু কথা বলি।
– আচ্ছা ম্যাডাম।
– আচ্ছা মিঃ রাজ এর আগে কোন কম্পানিতে ছিলেন?
– ম্যাডাম আমি কোন কম্পানিতে ছিলাম না।
– ওহ্ আচ্ছা। তো অভিজ্ঞতা ছাড়া আপনাকে কিভাবে কাজ দেয় বলুনতো?
– ম্যাম আমার চাকরিটাকে খুব দরকার। তাই যদি চাকরিটা দিতেন ভালো হতো।
– ওহ্ আচ্ছা। তা চাকরিটা এতো দরকার কেন বলতে পারেন?
– ম্যাম পুরো পরিবারের দায়িত্ব আমার কাছে। বোনটাকে পড়াতে হয়। এছাড়া ঢাকা শহরে থাকা বুঝেনই তো।
– ওহ্ আচ্ছা। আপনার বাসায় কে কে আছে?
– বোন ছাড়া আর কেউ নাই।
– কেন বিয়ে করেননি?
– হুম বিয়ে করেছিলাম। ডির্ভোস দিয়ে দিয়েছি।
– তা ডির্ভোস কেন দিলেন?
– ম্যাডাম আমি একজনকে ভালোবাসতাম সেজন্য। আর আমি মোহে পড়ে গিয়েছিলাম। সত্যিকার ভালোবাসাকে চিনতে পারিনি।
-তা আর বিয়ে করেননি?
– না, মৌকে অবহেলা করতে গিয়ে ভালোবেসে ফেলেছিলাম। বাকিটা জীবন তার স্মৃতি নিয়েই কাটিয়ে দিবো।
– ওহ্ আচ্ছা। আপনার মা নেই?
– নাহ্ আপন বলতে পৃথিবীতে বোনটা আছে। মা কিছুদিন আগে মারা গেছে।
– ওহ্ আচ্ছা। মৌ এর মনটা কেমন যেন করে ওঠলো।মৌ চাচ্ছে না তার পরিচয়টা দিতে। সবাই কারিমা হিসেবে তাকে জানে। রাজও যেন তাই জানে।
.
। মিঃ রাজ আপনার সাথে কথা বলে ভালোই লাগলো। তবে কম্পানির ভালোটাও তো আমার ভাবতে হবে। আপনি যে পোস্টের জন্য আবেদন করেছেন। সে পোস্টের জন্য আপনার চেয়ে অধিক যোগ্যতাসম্পন্ন একজন পেয়েছি। কোম্পানি পরবর্তী সাকুলার পরলে একটু খোঁজ নিবেন। আমি চেষ্টা করবো আপনাকে রাখতে।
– ওহ্ আচ্ছা ধন্যবাদ ম্যাডাম। আমি এখন আসি।
– রাজ যখন রুম থেকে বের হয়ে যাবে। তখন মৌ রাজকে ডাক দিয়ে বললো’ তুমি চাইলে আমার P .A হতে পারবে?
– হুম ম্যাডাম পারবো।
– আচ্ছা তাহলে কাল থেকে জয়েন করবে।
.
হঠাৎ মৌ এর ফোনটা বেজে ওঠলো ‘মৌ ফেনটা ধরতেই ওপাশ থেকে বললো ‘ মামনি তুমি কোথায়? তুমি কখন আসবে?
– মামনি তুমি বাবাই এর সাথে এসে পড়ে বাসায়। আমার যেতে লেট হবে। কথাটা বলেই মৌ ফোন কেটে দিল।
– মৌ এর মুখে ‘তোমার বাবাই এর সাথে এসে পড়ো। ‘ কথাটা শুনে রাজের বুকটা কেমন করে ওঠলো। বুঝতে আর বাকি রইলো না তার মৌ আর তার নেই। নামের সাথে সাথে সব পরিবর্তন করে নিয়েছে। রাজের যে চিনতে বাকি নেই এটাই তার মৌ। প্রথম দেখাতেই চিনে ফেলেছে। কিন্তু নিয়তী কেমন করে খেলছে আজ মৌ তার কাছে নিজের পরিচয় লুকাচ্ছে।
.
রাজ বাসায় আসতেই দেখলো ‘ রিত্ত বিছানায় শুয়ে শুয়ে কাঁদছে। রাজ রিত্তের মাথায় হাত রাখতেই রাজকে জড়িয়ে ধরে হাউ-মাউ করে কেঁদে দিল।
– কি হলো আমার বোনটা কাঁদছে কেন?কি হয়েছে তোর?
– ভাইয়া আজ সুনয়নাকে পড়াতে গিয়েছিলাম। কিন্তু তারা বাসায় ছিল না। আঙ্কেল আমাকে ওসব করতে চেয়েছিল। আমি ধাক্কা দিয়ে চলে আসি। ভাইয়ারে মানুষ এতো খারাপ কেন রে?
– রাজ রিত্তের চোখের পানি মুছে দিয়ে বলে’ আর তোর কোন টিউশনি করাতে হবে না। ‘তুই আর যাবি না। জানিস আমি সত্যিই হতভাগারে নিজের বোনটার টাকায় চলি। আমারে ক্ষমা করে দে।
– চুপ ভাইয়া। আমি অন্য একটা টিউশনি নিবো। তুমি ওমন করে বলো না। বাবা নেই মা নেই। তুমিও যদি ওমন করে কথা বলো তাহলে আমার কেমন লাগে বলো তো? আচ্ছা ভাইয়া তুমি চোখ বন্ধ করো তো।
– কেনরে? চোখ বন্ধ করবো কেন?
– এমনিই করো!
– আচ্ছা।
– রাজ চোখ বন্ধ করলে রিত্ত একটা প্যাকেট এনে রাজের হাতে দিয়ে বলে ‘ চোখ খুলো তো ভাইয়া। ‘
-রাজ চোখ খুলে দেখে তার হাতে প্যাকেট। প্যাকেটে কি রিত্ত?
– ওহ্ খুলে দেখ না। রাজ প্যাকেটে খুলে দেখে নীল রঙের একটা শার্ট!
– রিত্ত শার্ট কিনছিস কেন?
– বারে!
আমার ভাইয়াটা একটা শার্ট পরে থাকবে আমার খারাপ লাগবে না?
– চুপ করবি তুই? তুই খুব বড় হয়ে গেছিস? আমি কিছুই বুঝিনা। তোর গায়ে যে জামাটা আছে সে জামাটা ছাড়া দ্বিতীয় কোন জামা আছে? নিজেকে কি ভাবিস? আমার কষ্ট লাগে না। প্রতিদিন এক ড্রেস পড়ে কলেজে যাস।
– ভাইয়া তুমিও না। যাও ফ্রেশ হয়ে আস। খাবার দিচ্ছি।
-না খাবো না।
– কেন? এই ভাইয়া কি হলো কাঁদছো কেন? একদম না একদম কাঁদবে না।
– আচ্ছা কাঁদবো না। তুই চোখটা বন্ধ কর।
– আচ্ছা চোখ বন্ধ করলাম।
– রাজ চাকরি পেয়েই জমানো টাকা থেকে রিত্তের জন্য গোলাপী রঙের একটা শাড়ি কিনে নিয়ে আসে। শাড়িটা রিত্তের হাতে দিয়ে বলে’ চোখ খুল তো। ‘
– রিত্ত চোখ খুলেই দেখে শাড়ি।
– ভাইয়া তুমি টাকা কোথায় পেলে?
– জমিয়েছিলাম। আর শোন না তুই টিউশনিতে যাবি না।
– কেন?
– তোর ভাইটার চাকরি হয়ে গেছে!
– সত্যি?
– হ্যাঁ সত্যি। আচ্ছা শাড়ি পছন্দ হয়েছে?
– কি হলো? শাড়ি পছন্দ হয়নি? কাঁদছিস কেন?
– রিত্ত কাঁদতে কাঁদতে বললো ‘ হ্যাঁ খুব পছন্দ হয়েছে।
.
– এদিকে পরের দিন রাজ অফিসে গিয়ে দেখে, মৌ এর চেয়ে ছোট্ট একটা মেয়ে বসে আছে। মেয়েটা দেখতে হবুহু মৌ এর মতো।
– মেয়েটা রাজকে দেখেই সালাম দিল ‘ আসসালামু আলাইকুম।’
– অলাইকুম সালাম।
– আপনি কিছু বলবেন?
– ম্যাডামের কাছে আসছিলাম।
– ওহ্ আচ্ছা মম তো ওয়াশরুমে।
– আচ্ছা আসি।
– কোথায় যাচ্ছো? আর তোমার নাম কি বললে না তো?
– আমার নাম রাজ।
– ওহ্ তাই বুঝি?
– হুম।
– তুমি আমার বন্ধু হবে?
– হ্যাঁ হবো।
– তাহলে আমাকে চকলেট কিনে দিবে কেমন?
– আচ্ছা।
– এদিকে মৌ ওয়াশরুম থেকে বের হতে হতে বললো’ কি হলো রিচি কার সাথে কথা বলছো?’
– এই যে মম বন্ধুর সাথে।
– ওহ্ আপনি?
– জ্বি ম্যাডাম।
– আচ্ছা রিচি তুমি বাহিরে যাও আমি আসছি।
– আর শোন রাজ, তুমি সবসময় আমার সাথেই থাকবে। আজ বিকেলে অফিসে বিদেশী ভায়ার আসবে।
– আচ্ছা।
– বিদেশি ভায়ারদের সাথে, মৌ কথা বলছিল। তখন রাজকে বললো’ রাজ তুমি চা দাও এদেরকে। ‘
– ম্যাডাম পিয়ন আছে তো?
– আমি যা বলছি তাই করেন।
– আচ্ছা। রাজ যখন চা দিতে যাই এমন সময় একজনের সাথে ধাক্কা লেগে চা একজন বিদেশী ভায়ারের পায়ে পড়ে যায়।
– লোকটা চেয়ার থেকে উঠে রাজকে কষে একটা থাপ্পর লাগিয়ে দিয়ে চলে যায়।
– ম্যাডাম সরি, আমি বুঝতে পারিনি।
– মৌ রাজের গালে ঠাস করে চড় বসিয়ে দেয়।
– রাজ মাথা নিচু করে সরি বলে যাচ্ছে।
– চুপ এখন বের হয়ে যাবি। আর শোন তুই ৫০ কোটি টাকার প্রজেক্টের ডিলটা কেনসেল করলি। তোর সরিতেই সব শেষ হয়ে যাবে। আর মন কোথায় থাকে? সারাদিন মেয়েদের সাথে পটোর পটোর করলে তো এমনি হবে। মৌ এক জায়গার রাগ অন্য জায়গায় মিটিয়ে দিলো। এটা আর রাজের বুঝতে বাকি রইলো না। রাজ মৌ এর রুম থেকে বের হয়ে তার ডেস্কে যেতেই দেখতে পেল ‘ লাল গোলাপ সাথে চিরকুট। চিরকুট দেখে মনে মনে ভাবলো চিরকুট কার লেখা হতে পারে!
– চিরকুটটা পড়ে রাজ অবাক হয়ে যায়। মৌ তো আমাকে সত্যি সত্যি ””
চলবে””””
সংসার।
পর্বঃ১৭
লেখাঃ রাইসা
– ম্যাডাম সরি, আমি বুঝতে পারিনি।
– মৌ রাজের গালে ঠাস করে চড় বসিয়ে দেয়।
– রাজ মাথা নিচু করে সরি বলে যাচ্ছে।
– চুপ এখন বের হয়ে যাবি। আর শোন তুই ৫০ কোটি টাকার প্রজেক্টের ডিলটা কেনসেল করলি। তোর সরিতেই সব শেষ হয়ে যাবে। আর মন কোথায় থাকে? সারাদিন মেয়েদের সাথে পটোর পটোর করলে তো এম।রইলো না। রাজ মৌ এর রুম থেকে বের হয়ে তার ডেস্কে যেতেই দেখতে পেল ‘ লাল গোলাপ সাথে চিরকুট। চিরকুট দেখে মনে মনে ভাবলো চিরকুট কার লেখা হতে পারে!
– চিরকুটটা পড়ে রাজ অবাক হয়ে যায়। মৌ তো আমাকে সত্যি সত্যি চিঠিটা দেখলে বের করে দিবে। কেন যে তিশা মেয়েটা পাগলামী করে। রাজ চিঠিটা যখন পকেট রাখতে যাবে এমন সময় মৌ খেয়াল করলো রাজের কেবিনে ফুল আর কি যেন একটা কাগজ পকেটে রাখছে।
– মৌ কিছু না বলে, রাজের ডেস্কে এসে বলল’ মিঃ রাজ আপনার কি আজ বার্থডে?
– না ‘তো ম্যাম।
– আপনাকে ফুল দিয়ে কেউ উইশ করছ, সাথে লেটার দিচ্ছে। শুনেন অফিসে কাজ করলে ভালো করে করবেন। লুচ্চামি করার জায়গা এই অফিস না।
– আচ্ছা ম্যাডাম।
– কি আপনি কখন থেকে আচ্ছা আচ্ছা করছেন? মনে রাখবেন কথাটা।
– মৌ চলে যাওয়ার পরপরই তিশা মেয়েটা রাজের কেবিনে এসে বললো’ আজ আমার সাথে একটু বাহিরে যেতে পারবেন?
– সরি, তিশা আমার একটু কাজ আছে।
– ওহ্ কাজ আবার কিসের? আপনি যাবেন এটাই শেষ কথা। আর ম্যাডাম আপনাকে কি বললো?
– কিছু বলেনি। আপনি যান তো। কাজ আছে আমার।
-আচ্ছা আসি। আবার কিন্তু আসবো।
-তিশা চলে গেলে রাজ আবার কাজে মন দেয়।
– রাজ কাজের ফাঁকে বারবার মৌ এর দিকে উঁকি দিয়ে তাকায়। রাজের চাহনীটা মৌ এর চোখ এড়ালো না।মৌ রাজকে কিছু না বলে মুচকি হেসে কাজ করতে লাগল।
– দিনগুলো ভালোই যাচ্ছিল। এদিকে রিত্তের জন্য ভালো একটা বিয়ের প্রস্তাব এসেছে। ছেলে কলেজের প্রফেসর। রাজ খুজ খবর নিয়ে বিয়েতে রাজি হয়ে যায়। সামনে মাসের ২৮ তারিখ রিত্তের বিয়ে। রাজ অফিস থেকে কিছু টাকা নিয়েছে বিয়ের এরেঞ্জ এর জন্য।
– মৌকে বিয়ের দাওয়াত দেওয়ার জন্য বাসায় কার্ড নিয়ে যায়। রাজ বাসায় ঢুকে একটা কাজের মেয়েকে বলে ম্যাডাম কোথায়?
– মৌ ম্যাডাম?
– কাজের মেয়ের মুখে মৌ নামটা শুনেই রাজের বুকটা ছ্যাঁত করে ওঠে। তার মানে কারিমাই তার হারিয়ে যাওয়া মৌ। কিন্তু মৌ কেন তার কাছে পরিচয় লুকালো।
– কি হলো সাহেব? কিসের জন্য আসছেন?
– ম্যাডামকে বিয়ের দাওয়াত দিতে আসছি। ম্যাডাম কোথায় আছে?
– ম্যাডাম উপরের রুমে আছে। আপনি উপরে যান।
– আচ্ছা।
– রাজ বিয়ের কার্ডটা নিয়ে সোজা উপরে চলে যায়। উপরে গিয়ে দরজা ধাক্কা দিতেই যা দেখে তা দেখে রাজ অবাক হয়ে যায়। মৌকে এভাবে দেখবে সে কল্পনাও করেনি। মৌ ট্রায়াল পড়ে আছে। মনে হচ্ছে এ মাত্র গোসল করে বের হলো। মৌ রাজকে দেখি চিৎকার দিয়ে উঠলো। মৌ চিৎকার দেওয়ার সাথে সাথেই ট্রায়ালটা মাটিতে পড়ে গেল। এই আপনি কেন ভেতরে এসেছেন। খোদা বাঁচাও আমারে সব দেখে নিয়েছে। কি হলো এভাবে তাকিয়ে কি দেখছেন? কোন দিন দেখেননি? বের হন লুচ্চা কোথাকার।
– ম্যাডাম নিচে। তাকান।
– নিচে মানে? ভালো হচ্ছে না কিন্তু। আপনি সবকিছু দেখে নিচ্ছেন আমার।
– ম্যাডাম নিচে দেখেন। রাজ দু’হাতে চোখ বন্ধ করে বললো।
– নিচে কি দেখবো?
– ম্যাডাম নিচে আপনার ট্রায়াল পড়ে গেছে।
– মানে?
– বুঝেন না, আপনি যে শাওয়ার নিয়ে ট্রায়াল পড়েছিলেন। সেটা খুলে ফ্লরে পড়ে গেছে। মৌ এবার ফ্লরের দিকে তাকিয়ে খুব জুরেসুরে চিৎকার দিল।
রাজ স্পর্ষ্ট দেখতে পেল মৌ এর পিঠের সাইডের কাটা দাগটা। ছোটবেলা রিক্সা থেকে পড়ে গিয়ে কেটে গিয়েছিল। রাজ দু’হাতে চোখ বন্ধ করে ফেলল। মৌ দৌড়ে চেঞ্জিং রুমে চলে গেল।
– রাজ রুম থেকে বের হয়ে বেলকণিতে দাড়িয়ে আছে। মৌ আজ সবুজ রঙের শাড়ি পড়েছে।
রাজকে দেখেই মৌ তার চোখটা নামিয়ে ফেলল।
– রাজ মৌ এর কাছে এসেই বললো’ ম্যাডাম সরি। ‘
– ঠাস! করে চড় বসিয়ে দিয়ে বলল লজ্জা করে না আপনার,ওভাবে রুমে ঢুকে অসভ্যতামি করতে? একটা মেয়ের কাছে তার সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ কি জানেন? মূল্যবান সম্পদ হচ্ছে তার চরিত্র। আপনি সে মূল্যবান সম্পদটা দেখে নিয়েছেন। যে অধিকারটা শুধু আমার স্বামীর আপনার নয়। আর আপনি? আপনার বিপদের সময় চাকরিটা দিয়ে কি অন্যায় করেছি?
– ম্যাডাম অন্যায় আপনি করেননি। করেছি আমি। না জেনে আপনার রুমে ঢুকে পড়েছি। আপনার কাছে কড়োজুড়ো ক্ষমা চাচ্ছি। এ মাসের ২৮ তারিখ আমার বোনের বিয়ে। আমার তো কেউ নেই যদি আপনারা আসতেন তাহলে ভালো হতো।
– দেখি কার্ডটা! ওহ্ সুন্দর হয়েছে। আমি যাবো চিন্তা করবে না।
– ম্যাডাম আপনাকে একটা কথা বলি?
– হ্যাঁ বলেন।
– ম্যাডাম প্রথমেই বলে রাখি, আপনি মিথ্যা বলবেন না দয়া করে। আমি শুনেছি আপনার স্বামী আছে। তাই কথাগুলো বলা উচিত না তবুও বলছি। আপনি কি আমার মৌ? যাকে নির্মমভাবে অত্যাচার করেছি? আর আমার সন্তানটা কেমন আছে বলবেন?
– প্লিজ মিথ্যা বলবেন না।
– কি হলো ম্যাডাম কথা বলছেন না কেন?
– আমি আপনার মৌ হতে যাবো কেন? আমি কারিমা। আমার স্বামী সন্তান সবই আছে।- ওহ্! ম্যাডাম মিথ্যাটা না বললেও পারতেন। আর হ্যাঁ বাড়িতে ঢুকতেই কাজের মেয়ে বলেছে আপনি কারিমা নন কথা। আর রুমে আপনার পিঠে, কাটা দাগ দেখে বাকিটা শিউর হয়েছি। বলেন আপনি আমার কথা?
– হ্যাঁ আমি কারিমা মৌ নয়। যেদিন আপনার বাড়ি থেকে বের হয়ে এসেছি সেদিনই আমি আমার মাঝে মৌকে মেরে ফেলেছি। সাথে অবৈধ সন্তানটাকে। আমার কাছে রাজ নামে কেউ মৃত। আমি নতুন করে সংসার করেছি। পেয়েছি স্বামীর হৃদয় নিংঙরানো ভালোবাসা। আর আপনি জায়নামাযের মাঝেও আমাকে রক্তাক্ত করেছিলেন। আমি অতীত ভুলে গিয়েছি। দয়া করে আমার সুখের সংসারে আগুন লাগাবেন না। আমি মৌ না, প্লিজ কারো সামনে মৌ ডাকবেন না। ম্যাডাম ডাকবেন। কারণ আপনার মতো অহংকারী আমার নাম ধরে ডাকার যোগ্যতাও রাখে না।
– ওহ্ আচ্ছা ম্যাডাম। ধন্যবাদ সত্যটা বলার জন্য। শুনেন সেদিন যা করোছিলাম সব ভুল ছিল আমার। ভুলটা বুঝতে পেয়েছিলাম। তবে দেরী হয়ে গিয়েছিল। আর ভাববেন না আপনার সুখের সংসারে আগুন লাগাবো। আপনার সাথে আমার মালিক শ্রমিক সম্পর্কই থাকবে। আপনি সুখী হোন এটাই চাই।
– ধন্যবাদ বুঝার জন্য। আপনি থাকে আমি রুমে যাচ্ছি।
– এমন সময়, রিচি কোথায় থেকে যেন দৌড়ে এসে বললো’ বন্ধু তুমি কখন এসেছো? আমার জন্য চকলেট নিয়ে এসেছো?
-রাজ পকেট থেকে চকলেট বের করে দিল। আসার সময় চকলেট নিয়ে এসেছিল। সেদিন অফিসে রিচি চকলেট চাওয়াতে। রিচি চকলেট পেয়ে রাজর দু’গালে চুমু দিয়ে বললো এবার তুমি দাও তো।
– রাজ রিচির কপালে চুুমু দিয়ে বুকের সাথে জড়িয়ে নিল। রাজের মনে হচ্ছ বুকটা প্রশান্তিতে ভরে গেল।
– কিছুক্ষণ পর মৌ এসে বললো’ চলো অফিসে যাব। ‘ রাজ মৌ এর সাথে গাড়িতে উঠতে গেলে। মৌ বলল’ আপনি একটা টাক্সি করে আসেন। ‘
– রাজ কিছু না বলে রিক্সা করে অফিসে যায়।
– মৌ অফিসে বসে মনমরা হয়ে আজকের ঘটনাগুলি ভাবছে। চোখের সামনে অজস্র কাহিনী ভেসে উঠছে। রিত্তকে খুব মনে পড়ছে। মেয়েটা অনেক বড় হয়ে গেছে। এখনো রাজ আর সুমাইয়ার করার অত্যাচারের কথা ভাবলে শরীরটা কেমন যেন শিউরে উঠে। রাজকে দু’চোখে দেখতে মন চায় কথাগুলো মনে পড়লে। হঠাৎ মৌ দেখে রাজ তিশার হাত ধরে আছে। মৌ কিছু বললো না রাজের এখনো আগের স্বভাব যায়নি।
– কি হচ্ছে তিশা হাত ধরলে কেন?
– সারাজীবন ধরব তাই ধরলাম। রাজ তোমাকে প্রথমম দেখায় ভালোবেসে ফেলেছি।
– ওহ্ তাই বুঝি?
– হুম বিশ্বাস করো! কসম করে বলছি তোমায় ভালোবাসি।
– হুমম তিশা তুমি অনেক সুন্দর। তবে আমি যদি অন্য কাউকে ভালো না বাসতাম তাহলে তোমায় ভালোবাসতাম।
– তিশার মুখটা বাংলায় পাঁচ হয়ে গেল। মুখটা গোমড়া করে তিশা চলে গেল। এদিকে মৌ পিয়ন দিয়ে রাজকে ঢেকে পাঠালো। ভাবলো রাজকে একটা শিক্ষা দিবে। কলায় খোসা তার দরজায় সামনে এমন ভাবে রাখলো যেন রাজ রুমে প্রবেশ করেই সেখানে পা দিয়ে পিচলে পড়ে যায়।
– এদিকে মৌ তার রুমের দরজাটা লাগিয়ে রেখেছে। রাজ এসে দরজায় নর্ক করেই মৌ গিয়ে দরজা খুলে দেয়।
– ম্যাম দরজা বন্ধ করে রেখেছেন কেন?
– এমনি ভিতরে আসেন। রাজ ভিতরে আসার সময় দরজায় রাখা কলার খোসার উপর পারা দিতেই স্লীপ খেয়ে মৌ এর উপর পড়ে। মৌ ফ্লরে পড়ে যায়। রাজ মৌ এর উপর পড়ে। রাজের ঠোঁট দু’টি মৌ এর ঠোট অনিচ্ছতাকৃত স্পর্শ করে। মৌ চোখ বন্ধ করে ফেলে। রাজ উঠতে পারছে না। হঠাত কে যেন পিছন থেকে রাজকে লাথি দিয়ে মৌ এর উপর থেকে সরিয়ে দিয়ে বললো’ কিরে তোর সাহস কি করে হয় আমার স্ত্রীর সাথে অসভ্যতামি করার।
চলবে”””’