#শৈবলিনী—২৯
#লেখিকা-মেহরুমা নূর

★পরদিন আদিত্য আর নূর এলো ডিসকো ক্লাবে। ক্লাব যেহেতু রাতেই খোলা থাকে তাই রাতেই আসতে হয়েছে ওদের। নূরকে বাসার সামনে থেকে গাড়িতে পিক করে এনেছে। আদিত্য যথারীতি নিজেকে ক্যাপ আর মাস্কের ভেতর লুকিয়ে নিয়েছে। যদিও আদিত্য চাইলে ওর গ্যাং এর লোক দিয়েই এসব কাজ করাতে পারে। তবে নূরকে সেটা বোঝানো মুশকিল হবে তখন। ও সন্দেহ করবে। মেয়েটা এখনো পর্যন্ত আদিত্যকে পুরোপুরি আপন করে নেয়নি। ওর এই গ্যাং ব্যাপারে জানলে ওকে আরও ভুল বুঝতে পারে, সেই ভয়েই আদিত্য ওকে এসব জানাতে চাইছে না। তাই অপরাধীকে খুঁজে বের করতে সে নিজেই কাজ করবে। এই সামান্য কাজের জন্য ও নিজেই যথেষ্ট। পরবর্তীতে যদি দরকার পরে তখন নাহয় ওর লোকদের বলা যাবে। এমনটাই ভেবে রেখেছে আদিত্য। নূর আর আদিত্য ক্লাবের ভেতর ঢুকলো। ক্লাবের অভ্যন্তরীণ পরিবেশ খুবই রঙিন আর জমকালো। ইয়াং ছেলেমেয়েরা বেপরোয়া ভাবে ড্রিংকস করছে আর উড়াধুরা নাচানাচি করছে। এসব দেখেই মস্তিষ্ক খিঁচে এলো নূরের। এমন একটা অসভ্য জায়গায় তার বোন কী করে আসতে পারলো! এতটা বেপরোয়া কবে হয়ে গেল সে? না কি আমিই আমার বোনকে সঠিক শিক্ষা দিতে অক্ষম হয়েছি? বাবার অবর্তমানে পরিবারের ছোটদের প্রতিপালনে ব্যার্থ হয়েছি আমি। তাইতো বুঝি আজ এই দিন দেখতে হলো আমাদের। আমার ব্যার্থতার ফল ভুগতে হচ্ছে সবাইকে। বাবাকে কীভাবে মুখ দেখাবো আমি। হতাশায় নূরের মনটা বিষিয়ে তুললো। মন ভারী হয়ে এলো তার। আদিত্য বুঝতে পারলো নুরের মনোভাব। নূরের এক হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে মোলায়েম সুরে বলল,
–নিজেকে এতো দোষারোপ করোনা নূর ।‌‌তোমার কোনো দোষ নেই এতে।‌‌ তুমি তোমার শতভাগ প্রচেষ্টা করেছ ।সবটা উজাড় করে দিয়ে তাদের ভালো রাখার চেষ্টা করেছ। তবে একটা কথা মনে রাখবে, তুমি শিক্ষা দিতে‌ পারো । সেটাকে গ্রহণ করা না করা একান্ত তাদের ওপর। এটা তাদের অপারগতা। তাই নিজেকে এতো‌ প্রেসার দিওনা ।

নূর আবারও থমকিত হলো । লোকটা সবসময় তার মনের সকল কথা কীভাবে বুঝে যায়? কীভাবে পড়ে ফেলে ওর মনের অলিখিত গ্রন্থ? তার নজর কী‌ ওর মনের ভেতরেও‌ উঁকি দিতে পারে? হয়তো পারে। সেতো আবার যাদুকরী।

দুজন‌ ক্লাবের ম্যানেজারের কাছে গেল।ম্যানেজার নূরকে দেখেই বিরক্তির সুরে বলল,
–আপনি? আপনি আবার এসেছেন? আপনাকেতো‌ বলেই দিয়েছি কোনো ফুটেজ দেখাতে পারবোনা।তাও কেন‌ বারবার এসে বিরক্ত করছেন‌ ? যান‌ এখান থেকে।

ম্যানেজারের‌ কথায় রাগতো খুব হচ্ছে নূরের। তবে এই মুহূর্তে রাগলে‌ চলবেনা তার।ভা,য়ো,লে,ন্ট হলে চলবে না ।তারজন্য কোনোভাবে সিসিটিভি ফুটেজ দেখাটা সবচেয়ে বেশি জরুরি।তাই রাগ প্রশমিত করে গেল‌‌ নূর। তবে সে তো আর জানে না যে,তার থেকে হাজার গুণ বেশি ক্রোধে ক্ষিপ্ত‌ হচ্ছে আদিত্য। নূরের সাথে এমন আচরণের দায়ে এই ম্যানেজারকে পারলে এক্ষুনি মাটির সাত ফুট তলে গেড়ে ফেলে আদিত্য। দাঁতে দাঁত পিষিয়ে নিজের উত্তপ্ত ক্রোধকে অনেক কষ্টে দমিয়ে রাখছে সে। নূরের সামনে সে নিজের ভয়ংকর সত্তাকে আনতে চায়না৷ তাই আপাতত ক্রোধের অগ্নি নিজের ভেতরেই দমিয়ে রেখে সে এগিয়ে গেল ম্যানেজারের সামনে। মুখে মিথ্যে হাসি টেনে ম্যানেজারের উদ্দেশ্যে চিবিয়ে চিবিয়ে বলল,
–কী ব্যাপার ভাই! বউয়ের সাথে ঝগড়া টগড়া হয়েছে না কি? এতো খেপাটে মেজাজে আছেন কেন? বউ কী ঘর থেকে বের করে দিয়েছে নাকি? ব্যাপার না, আমি আপনার দূর্দশা বুঝতে পারছি। আপনি এক কাজ করুন, আমার সাথে চলুন। আমার সাথে দুই মিনিট কথা বললেই আপনার মন মেজাজ একেবারে ফুরফুরে হয়ে যাবে দেখবেন। আসুন।

আদিত্য একপ্রকার লোকটাকে টেনেই অন্যদিকে নিয়ে গেল। বেচারা ম্যানেজার হতবিহ্বলের মতো এদিক ওদিক তাকাতে লাগলো। আদিত্যর ভাবসাব কিছু বুঝতে পারছে না সে। ওখানে দাঁড়িয়ে থাকা নূরেরও একই অবস্থা। লোকটা আসলে কী করতে চাইছে সেটাই ভাবতে চাইছে সে। সিসিটিভি ফুটেজ দেখার ব্যবস্থা না করে উনি কীসের চিকন আলাপ করতে ওই ব্যাটার সাথে? ভাবনা চিন্তার মাঝেই মিনিট পাঁচেক পড়েই আবার ফিরে এলো তারা। আদিত্য ম্যানেজারের কাঁধ জড়িয়ে ধরে নিয়ে আসছে। যেন ছোটবেলায় মেলায় হারিয়ে যাওয়া তার জানে জিগার বন্ধুর খোঁজ পেয়ে গেছেন উনি। তবে ম্যানেজারের চেহারাটা কেমন পিচকে যাওয়া আলুর মতো মন হচ্ছে। যেন তাকে কেউ কপালে ব,ন্ধু,ক ঠেকিয়ে হাসতে বলেছে। বলেছে, হাস ম্যানেজার, হাস। যতক্ষণ তোর ঠোঁটে হাসি থাকবে, ততক্ষণ তোর দেহে প্রাণ থাকবে। এমনই কিছু মনে হচ্ছে লোকটাকে দেখে। আদিত্য ম্যানেজারের সাথে নূরের সামনে এসে হাসিমুখে বলল,
–অল ইজ গুড নাও। ম্যানেজার সাহেবের মেজাজ এখন একদম ঠিক হয়ে গেছে। তিনি এখন খুশিমনে আমাদের সিসিটিভি ফুটেজ দেখতে দিবেন তাইনা ম্যানেজার?
সম্মতির অপেক্ষায় তাকালো ম্যানেজারের পানে। ম্যানেজার দ্রুত গতিতে মাথা ঝাকিয়ে ক্যাবলার মতো হেঁসে বলল,
–হ্যাঁ হ্যাঁ অবশ্যই। চলুন আপনাদের ফুটেজ দেখাচ্ছি।

নূরের কেমন সন্দেহ হলো। কী এমন করলো লোকটা যে, এই খেপা ষাঁড়ের মতো লোকটা হঠাৎ গাই কীভাবে হয়ে গেল? ম্যানেজার ওদের সিকিউরিটি রুমের দিকে নিয়ে যেতে লাগলো। নূর আদিত্যকে ফিসফিস করে বলল,
–কী বললেন আপনি উনাকে? এই বদমেজাজী লোকটা এতো সহজে মানলো কর করে? সত্যি করে বলুন আপনি টাকা অফার করেননি তো?

আদিত্য ইনোসেন্ট ভাব করে বলল,
–কিহহ্!! ঘুষ! আর আমি?এটা তুমি ভাবতেও কীভাবে পারলে? তোমার ভাবনারও এমন নিচু ভাবনা কী করে এলো? একজন সৎ ইমানদার ব্যক্তির নামে এতবড়ো মিথ্যে অপবাদ! ভালো মানুষের কোনো মূল্যই নেই এই জামানায়। আরে আমিতো লোকটাকে সুন্দর করে বুঝালাম আর সে আমার কথা মন দিয়ে উপলব্ধি করে নিজের মন পরিবর্তন করে ফেললো। আমার কথায় অনেক যাদু আছে বুঝলে। শুধু তোমার ওপরেই বিফল হয় বারবার। কারণ তুমি আজপর্যন্ত এই ইনোসেন্ট, ভোলাভালা মানুষটাকে চিনতেই পারলেনা। চোখ থাকতে অন্ধ হলে যা হয় আরকি।

নূর হালকা বিরক্তির সুরে বলল,
–হয়েছে হয়েছে, নিজের উপর রচনা লেখা শেষ হলে এবার আসল কাজে একটু ফোকাস করুন।
সিকিউরিটি রুমে ওদের নিয়ে এলো ম্যানেজার। নূরের বলা ডেট অনুযায়ী সেদিনের ফুটেজ চালু করা হলো। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো যে সময়টাতে অমালিয়াকে ওই ছেলেগুলো ডিস্টার্ব করেছিলো আর অমালিয়া থাপ্পড় দিয়েছিল সেই সময়কার ফুটেজটুকুই নেই। ফুটেজের ওই সময়টুকুই গায়েব। নূর হতবাক হয়ে উত্তেজিত কন্ঠে বলল,
–কিন্তু আর ফুটেজ কোথায়? সেটা দেখা যাচ্ছে না কেন? আসল ফুটেজ টুকুই তো নেই।

সিকিউরিটি সুপারভাইজার বলল,
–ম্যাম আসলে সেদিন হঠাৎ শর্ট সার্কিট হওয়ায় আমাদের ক্যামেরা নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। তাই এরপরের ফুটেজ আর রেকর্ড হয়নি।

বিশাল জোরে এক ধাক্কা খেল নূর। এটাই তো একমাত্র উপায় ছিলো অপরাধীকে খুঁজে বের করার। এখন কী করবে ও? এতকিছু করেও ঘুরেফিরে ফলাফল সেই শূন্যের কোঠাতেই এসে ঠেকলো। মাথা কাজ করছে না নূরের। হতাশ মনে দ্রুত পায়ে দৌড়ে বেড়িয়ে গেল ক্লাবের বাইরে। সেটা দেখে আদিত্যও ছুটলো তার পেছনে। পেছন থেকে ডাকতে থাকলো নূরকে। কিন্তু নূর শুনলোনা। দৌড়ে বাইরে বেড়িয়ে এলো সে। রাগে, দুঃখে মাথা ফেটে যাচ্ছে তার। আরও একবার ব্যার্থ হলো সে। হতাশা, কষ্ট আর রাগে অসহনীয় এক যন্ত্রণা হচ্ছে তার। ভেতর টা যেন ফেঁপে উঠছে। নূর সহ্য করতে না পেরে কাঁধের হ্যান্ডব্যাগটা হাতে নিয়ে ক্লাবের বাইরের দেয়ালে সজোরে বারি দিতে লাগলো। কয়েকবার বারি দিয়ে হ্যান্ডব্যাগের ফিতা কামড়ে ধরে,”আআআআআ” শব্দ করে চাপা আর্তনাদ করে উঠলো সে। চোখ মুখ লাল টকটকে হয়ে উঠেছে তার। যেন চামড়া ফেটে এখুনি র,ক্ত ছিটে বেড়িয়ে আসবে। তবুও যেন স্বস্তি হলোনা নূরের। সে এবার হাত শক্ত মুষ্টি করে দেয়ালে ঘুষি মারলো। কিন্তু দেয়ালে লাগার আগেই অন্য কারো হাত মাঝখানে এসে গেল। নূর তাকিয়ে দেখলো আদিত্য দেয়ালের ওপর নিজের হাত মেলে দিয়ে নূরের হাতকে দেয়ালে বারি দেওয়া থেকে বাঁচাল। নূরের চাইতেও অধিক বেশি ক্রোধান্বিত বর্তমানে আদিত্য নিজে। চোখে তার অগ্নি ঝড়ছে। আদিত্য নূরের দুই বাহু ধরে নিজের কাছাকাছি এনে কপালে কপাল ঠেকিয়ে চোয়াল কঠিন শক্ত করে বলল,
–নূরররররর!! তোমার সাহস কী করে হলো নিজেকে আঘাত করার? তোমার এই দুঃসাহসের জন্য আমি কি করতাম তা তুমি কল্পনাও করতে পারবেনা। শুধুমাত্র তোমার মনের অবস্থা বুঝতে পেরে আজ কিছু বললাম না আমি তোমাকে। কারণ আমি জানি তুমি তোমার বোনের জন্য দুশ্চিন্তায় ভুগছ। বাট দ্যাট ইজ ফাস্ট এন্ড টাইম। যাই হয়ে যাকনা কেন তোমার নিজেকে আঘাত করার কোনো অধিকার নেই। নাহলে আমার এমন রুপ দেখতে পাবে যা কখনো তোমার সামনে জাহির করতে চাইনা।

নূর ব্যাথিত দৃষ্টিতে তাকালো আদিত্যর পানে। যে দৃষ্টিতে ছিলো হতাশা আর গ্লানির ছাপ। আদিত্য এবার নরম হলো। নূরের মাথাটা নিজের বুকের মাঝে নিলো এবার। মায়াময় সুরে বলল,
–শান্ত হও নূর। এতো উত্তেজিত হলে কীভাবে চলবে বলো। আজ কিছু পাইনি তো হয়েছে, খুব জলদিই আমরা অপরাধী পর্যন্ত পৌঁছে যাবো। আমি তোমাকে প্রমিজ করছি নূর। যে বা যারা অমালিয়ার সাথে এই নি,কৃ,ষ্ট কাজ করেছে তাকে আমি শাস্তি দিয়েই ছাড়বো।

নূর কিছু বললো না। নীরবে পড়ে রইলো আদিত্যর বুকমাঝারে। এইখানে যেন অনাবিল শান্তির ঠিকানা খুঁজে পেল সে। ওর ভেতরের সব পীড়া নিমিষেই শীতল হয়ে গেল যেন। আদিত্যর কথায় পূর্ণ ভরসা পাচ্ছে সে। আদিত্য যখন বলেছে তখন নিশ্চয় ও সেই অপরাধীকে খুঁজে এনে দিবে। হ্যাঁ অবশ্যই দিবে। আজ আর কোনো দ্বিমত নেই। আদিত্যর উপর পুরোপুরি ভরসা হচ্ছে তার। সে জানে আদিত্য তার ভরসা ভাঙবে না। কখনোই না।

নূর একটু শান্ত হয়ে এলে ওকে নিয়ে রওয়ানা হলো আদিত্য। গাড়িতে বারবার আদিত্যকে আরচোখে তাকিয়ে দেখছে নূর। লোকটাকে শুধু তাকিয়ে থেকে দেখতে ইচ্ছে হচ্ছে তার। ওই মায়ায় ঘেরা মুখটা বারবার টানছে তাকে। কিন্তু সরাসরি তাকাতেও ইতস্তত লাগছে। কেমন নির্লজ্জ হয়ে গেছে মনটা। নূরের এই চোরা চোখের চাহুনি বুঝতে পেরে আদিত্য দুষ্টু হেঁসে বলল,
–দেখতে চাইলে সরাসরি দেখ। এভাবে চুরি করে কেন দেখছ? আমাকে দেখার জন্য কোনো প্রকার ট্যাক্স চাইবোনা। ফুল ফ্রী অফার। আমি আবার অতি মহৎ লোক কিনা।

নূর থতমত খেয়ে জানালার দিকে মুখ ঘুরিয়ে মুচকি হাসলো। হঠাৎ তখনই গাড়ির সামনে এক কু,কু,র এসে পড়লো। আদিত্য কু,কু,রটাকে বাচাতে অতি দ্রুত গাড়ির স্টেয়ারিং ঘোরালো। আর গাড়ি গিয়ে লাগলো রাস্তার পাশের একটা গাছের সাথে।গাড়ি গাছের সাথে ধাক্কা খেয়ে থেমে গেল। আদিত্যর মাথা বারি খেল স্টেয়ারিং এর সাথে। একটু ব্যাথা পেলেও জ্ঞান হারালোনা তার। তবে মাথাটা চক্কর দিয়ে উঠল। চেতনা ফিরে পেতেই ঝট করে ঘাড় ঘুরিয়ে নূরের দিকে তাকালো সে। আর তাকাতেই আৎকে উঠলো সে। নূর সামনের দিকে উবু হয়ে ঝুঁকে পড়ে আছে। অন্তর আত্মা শুকিয়ে গেল আদিত্যর। থমকে গেল হৃৎস্পন্দনের গতি। আতঙ্কিত হয়ে দ্রুত নূরের মাথাটা তুলে পাগলের মতো ডাকতে লাগলো তাকে। কম্পিত স্বরে বলতে লাগলো,
–নূর,নূর,ওয়েক আপ নূর। নূর প্লিজ চোখ খোলো। ডোন্ট ডু দিস টু মি,প্লিজ । আই কান্ট টেক দিস।

ধীরে ধীরে হুঁশ ফিরলো নূরের। আধোআধো চোখে তাকালো সে। আদিত্যর দেহে যেন প্রাণ ফিরে এলো। শক্ত করে বাহুডোরে জাপ্টে ধরলো সে তার প্রাণভোমরাকে। আজকের মতো ভয় জীবনে কখনো পায়নি আদিত্য। জান বেড়িয়ে গিয়েছিল তার। জীবনের সবচেয়ে বিশ্রী মুহূর্ত ছিলো এই সময়টুকু। যা সে কখনোই মনে করতে চায়না। নূর অনুভব করলো আদিত্যর শরীর অসম্ভব কাঁপছে। হৃদপিণ্ডের কাঁপুনিও ঠিক শুনতে পাচ্ছে সে। লোকটা কী ওরজন্য এতোটা ভয় পেয়েছে? আদিত্য দুই হাতে নূরের মুখটা ধরে অস্থির আর অপরাধী সুরে বলতে লাগলো,
–সরি, সরি, সরি আম সো সরি নূর। যেখানে তোমার নিজেকে আঘাত করাই আমি সহ্য করতে পারিনা। সেখানে আমার নিজের কারণেই তোমাকে আঘাত পেতে হলো। এরজন্য নিজেকে কখনো ক্ষমা করতে পারবোনা আমি। নিজেকে মেরে ফেলতে ইচ্ছে করছে আমার। আজ তোমার কিছু হয়ে গে…..

আর বলতে পারলোনা আদিত্য। কন্ঠনালী চেপে এলো তার। এমন কথা উচ্চারণ করতেও তার কন্ঠনালী সায় দিচ্ছে না।আবারও জড়িয়ে নিলো নূরকে বুকের মাঝে। মাথার উপর পরপর কয়েকটা চুমু খেল। আবেগ ভরা কন্ঠে সে বলল,
–প্লিজ নূর, যা খুশি করো আমার সাথে। সব সয়ে যাবো। শুধু আমাকে ছেড়ে যেওনা কখনো। এই একটা জিনিসই আমার সহ্য শক্তির বাইরে।তুমিহীনা নিঃশেষ হয়ে যাবো আমি।

নূরের কী যেন হলো। সে এবার নিজেও দুহাতে জড়িয়ে ধরলো আদিত্যকে। নিবিড় ভাবে মিশে যেতে চাইলো আদিত্যতে। তার সত্তা তাকে স্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিলো, এই লোকটাকে ছাড়া তুইও যে অসম্পূর্ণ নূর। লোকটা যে তার মায়ায় পুরোপুরি জড়িয়ে নিয়েছে তোকে। এই মায়া কাটিয়ে ওঠা যে এখন নূরের কাছেও অসম্ভব। বেহায়া মন বাঁধন খুলে ছুটে বেড়িয়ে গেছে। আর সোজা গিয়ে পড়েছে এই লোকের হৃদয়মাঝে। বেয়ারা মনটাকে যে আর ফিরে পাওয়া অসম্ভব। তাইতো এখন মন কেঁড়ে নেওয়া এই লোকটাকেও ওর চাই। ষড়যন্ত্রে সফল হয়ে গেল সে। লোকটা ঠিকই বলেছিলো। মানুষ সবচেয়ে বেশি সুখি হয় মন হারিয়ে। আজ এই নূরও মন হারালো। এই প্রথম হেরে গেল সে। তবে হেরে গিয়েও এতো খুশী পাওয়া যায় আজ জানলো সে। হ্যাঁ মন হারিয়েছে নূর। গুন্ডি নূর মিঃ নায়কের প্রেমে পড়ে গেছে। ভালোবেসে ফেলেছে এই অপছন্দের লুচু নায়ককে।

চলবে…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here