#শেষটা_সুন্দর পর্ব____২৬
#অজান্তা_অহি (ছদ্মনাম)
মাথা উঁচু করতে নাকে চির-পরিচিত ঘ্রাণ এলো নির্ঝরের। সঙ্গে সঙ্গে মুখে হাসি ফুটে উঠলো তার। তাকিয়ে দেখলো তরী তার বুকের মাঝে লেপ্টে ঘুমিয়ে আছে। গাঢ় ঘুম! সহজে ভাঙবে না! চোখের মণিতে মুগ্ধতা নিয়ে সে তরীর দিকে চেয়ে রইলো।
কিছুক্ষণ পর আস্তে করে তরীকে বুকের উপর থেকে সরিয়ে বালিশ টেনে মাথার নিচে দিল। সবশেষে তরীর গলার নিচ দিয়ে হাতটা সরিয়ে এনে উঠে বসলো। গলা পর্যন্ত ব্লাঙ্কেট জড়িয়ে দিয়ে তরীর মাথায় হাত রাখলো। রাতের বেলা তরীর বিঁনুনি করে দেওয়া সব চুল খুলে একাকার হয়ে গেছে। কপালের পাশ থেকে চুল গুলো সরিয়ে সে তরীর দিকে ঝুঁকে পড়লো। কাছে থেকে কিছুক্ষণ দেখে কপালে ঠোঁটের উষ্ণ পরশ ছুঁইয়ে দিল। আজকের দিনটা তার কত সুন্দর ভাবে শুরু হচ্ছে। এমন একটা দিনের জন্য সে রোজ স্বপ্ন দেখেছে। তার কত ইচ্ছে ছিল, আশা ছিল, প্রত্যাশা ছিল, সমস্ত ধ্যান জ্ঞান জুড়ে ছিল যে একদিন সে ঘুম ভেঙে দেখবে তরী তার বুকে জড়িয়ে শুয়ে রয়েছে। দিনটা এসে গেছে বলে সে মনে মনে সৃষ্টিকর্তার কাছে শোকরিয়া আদায় করলো।
ঠোঁটের কোণের হাসিটা আরো স্নিগ্ধ হলো তার। তরীর কানের কাছে মুখ নিয়ে সে ফিসফিস করে বলল,
‘তরীরাণী! শুভ শুভ্র সকাল। আজ থেকে তোমার প্রতিটা সকাল শুভ হবে। নিজের সবটা দিয়ে তোমার প্রতিটি দিন, প্রতিটা রাত, প্রতিটি সকাল, প্রতিটা সেকেন্ড শুভ করবো।’
ঘুমের মধ্যে তরী মৃদু নড়েচড়ে উঠতে নির্ঝর নিজের মাঝে ফিরলো। তরীর মসৃণ ত্বকে হালকা তেল জমেছে।নাকের কাছটা চিকচিক করছে। সে আলতো হাতে মুছে দিল। সে ভেবেছিল, তরীকে কাছে পেয়ে হয়তো ভুল কিছু করে ফেলবে। নিজেকে সংযত করা তার জন্য কঠোর হবে। কিন্তু তরীকে এত কাছে পেয়ে তার মধ্যে কামনা জেগে উঠলো না। বন্য হয়ে হামলে পড়ার বিন্দুমাত্র চিন্তা এলো না। উল্টো কেমন স্নিগ্ধ, পবিত্র একটা স্পর্শ! হঠাৎ হঠাৎ একটু দূর্বল হয়ে পড়লেও নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখা অসাধ্য মনে হয়নি। যতটা কঠিন মনে করেছিল ঠিক ততটা কঠিন নয়। মেয়েটাকে জড়িয়ে ধরলে তার ভেতরটা কেমন প্রশান্তিতে ভরে উঠে। মনে হয় বুকের মাঝে চৈত্রের খাঁ খাঁ রোদ্দুরে ফেটে চৌচির হয়ে যাওয়া জায়গাগুলো শীতল হয়ে গেল। মরুভূমিতে যেন জলের ঢেউ খেলে গেল। শষ্যবিহীন বুকটা যেন চিরসবুজ হয়ে গেল। কি নিদারুণ সুখ আর শান্তি!
আরেকবার তরীর গালে হাত ছুঁইয়ে নির্ঝর বিছানা ছেড়ে উঠে পড়লো। সকাল হয়ে গেছে। সবার এতক্ষণে উঠে পড়ার কথা। টাওয়াল হাতে নিয়ে সে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়লো।ওয়াশরুমের আয়নায় ফুটে উঠা নিজের প্রতিবিম্বের দিকে তাকালো সে। কয়েক সেকেন্ড তাকাতে চোখের সামনে তরীর ঘুমন্ত মুখ ভেসে উঠলো। দ্রুত মাথা নেড়ে সে আবার ভালো মতো তাকাল। আয়নায় নিজের প্রতিবিম্ব দেখা যাচ্ছে। চিবুকে হাত রেখে সে মুখটা এদিক ওদিক ঘুরিয়ে ভালো করে দেখলো। শরীরের দিকে আরো একটু নজর দিতে হবে। তরী যেন তাকে মানুষের সামনে নিজের হাজব্যান্ড পরিচয় করিয়ে দিতে দ্বিধাবোধ না করে। মুখটা হাসি হাসি করে ট্যাপের পানি ছাড়লো।
___________
সকালের নাস্তা করার জন্য নির্ঝর একাই নিচে নামলো। তরী এখনো ঘুমাচ্ছে। সে ইচ্ছে করে ডাক দেয়নি। গতরাতে অনেক দেরিতে ঘুমিয়েছে! ডাইনিং এ যাওয়ার পথে সোফায় চোখ পড়তে নির্ঝর কিছুটা বিস্মিত হলো। সকালবেলার গাড়ির হর্ণের শব্দ উদ্ধার করে ফেলল। এগিয়ে গিয়ে অবাক কন্ঠে বলল,
‘তাসফি তুমি? এত সকালবেলা? সব ঠিক আছে তো?’
তাসফির হাতে চায়ের কাপ। ফু দিয়ে দিয়ে খাচ্ছে। ফু দেওয়া বাদ দিয়ে সে হাসিমুখে বলল,
‘সব ঠিক আছে ভাইয়া। বাবা শুধু আপনাদের নিয়ে যেতে বলেছে।’
নির্ঝর তাসফির পাশে সোফায় বসে পড়লো। তাসপির পিঠ চাপড়ে বলল,
‘কিছুদিন আগে একবার গিয়ে ঘুরে আসলাম না!’
‘তখন তো আপুর ছুটি ছিল না। সকালে গিয়ে বিকেলে চলে এসেছেন। এখন আপুর প্র্যাক্টিক্যাল পরীক্ষার আগে কিছুদিন ছুটি আছে। এ ক’টা দিন আমাদের ওখানে থাকবেন।’
‘আমি যেকোনো জায়গা থাকতে রাজি ব্রো। এখন তোমার আপুকে রাজি করাও!’
‘আপু কোথায়? ঘুমায় এখনো?’
‘হুঁ! পরীক্ষা দিয়ে সে টায়ার্ড হয়ে গেছে। কাল বিকেল থেকে শুধু ঘুম আর ঘুম।’
তাসফির চা জুড়িয়ে গেছে। সে পরপর কয়েক চুমুকে কাপ খালি করলো। ফুপির বাড়ি তার ঘনঘন আসার একটা অন্যতম কারণ হলো চা খাওয়া। তাদের বাড়িতে রোজ রোজ চা করা হয় না। মাঝে মধ্যে একদিন বা কোনো আত্মীয় গেলে তখন। এ বাড়ির চা টা বরাবরই দারুণ হয়। ভানু খালার চা বানানোর হাত দূর্দান্ত। সে চায়ের কাপটা সামনের টেবিলে নামিয়ে রেখে উঠে দাঁড়ালো। নির্ঝরের দিকে চেয়ে বলল,
‘ভাইয়া আমি আপুকে ডেকে দিই তাহলে।’
‘পরে ডেকে দিয়ো। আগে নাস্তা করে নেই চলো।’
তাসফির হাত ধরে সে ডাইনিং এর দিকে এগোল। এ বাড়ির পশ্চিম দিকের কোণা ঘেঁষে উপরে উঠার সিঁড়ি। তার সামনে ড্রয়িং রুম। ড্রয়িং রুম পেরিয়ে উত্তর দিকে ডাইনিং। ডাইনিং এর সাথে লাগোয়া রান্নাঘর। নির্ঝর সামনে এগোতে এগোতে একবার দোতলার দিকে তাকালো। তাদের খাওয়ার সময় টুকুতে তরী আর একটু ঘুমিয়ে নিক! নির্ঝর ডাইনিং এ পৌঁছাতে গম্ভীর কন্ঠে একজন বলে উঠলেন,
‘এত ইয়াং একটা ছেলে হয়ে সকাল ন’টায় ঘুম থেকে উঠো? ভোরবেলা উঠার অভ্যাস করবে।’
নির্ঝর চমকে গেল। তার সামনে বড় বাবা শাহাদাত আহমেদ! চেয়ারে বসে পেপার সামনে ধরে আছে। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম উনার। দেখেই বোঝা যাচ্ছে সবেমাত্র জগিং থেকে ফিরেছেন উনি। চেয়ার টেনে তাঁর সামনে বসে নত মুখে সে বলল,
‘জ্বি বড় বাবা!’
‘এক্সারসাইজ করো না?’
‘করি বড় বাবা! ঢাকাতে আমি নিয়মিত এক্সারসাইজ করি। এখানে ইন্সট্রুমেন্টস নেই বলে…..’
‘অজুহাত দেখাবে না আমায়। আমাকে অশিক্ষিত মনে হয় তোমার? ঘাস কেটে এত বড় হয়েছি? যা বলবে তাই বিশ্বাস করবো?’
‘না বড় বাবা আসলে…….’
‘চুপ!’
নির্ঝর ফুটো বেলুনের মতো চুপসে গেল। পাশ থেকে তাসফি ফিক করে হেসে দিতে সে অসহায় বোধ করলো। তার বড় বাবা এখানকার টপ হাই স্কুলের শারীরিক শিক্ষার শিক্ষক। যুবক বয়সে সব ধরনের খেলায় বাজিমাত করেছেন তিনি। তাঁর খেলাধুলার রেকর্ড বরাবর অনেক হাই লেভেলের ছিল বলে খুব দ্রুত চাকরি পেয়ে যান। চাকরির সুবাদে কি না কে জানে, তাঁর কথাবার্তার প্রায় সবটা জুড়ে শুধু শরীরচর্চা থাকে। কানাঘুষায় শুনেছে স্কুলে তাক নাকি স্টুডেন্টরা ইয়োগা স্যার বলে ডাকে। সে আর কথা বাড়াল না।
মমতাজ বেগম রান্নাঘর থেকে এটা ওটা আনা নেওয়া করছে। একবার সিঁড়ির কাছে গিয়ে গলা ছেড়ে সবাইকে নিচে ডাকলেন। কিছুক্ষণের মধ্যে সবাই ডাইনিং এ হাজির হলো। এ বাড়ির সকালের খাবারটা সবাই একসাথে খেতে পারে না। একেক জনের একেক রকম কাজ পড়ে যায়। তবে আজ মোটামুটি সবাই উপস্থিত।
নির্ঝর পরোটার ছেঁড়া অংশে সবজি পেঁচিয়ে গালে পুড়লো। টেবিলে নজর বুলিয়ে বলল,
‘জ্যোতি ঘুম থেকে উঠেনি বড় মা?’
মমতাজ বেগম নুডলসের বাটিটা তাসফির দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,
‘কোন সকালে ঘুম থেকে উঠে পড়েছে! ওর খাওয়া শেষ। ঘুম থেকে উঠেই তরী আপু, তরী আপু করছিল। এখন মনে হয় ওর রুমে।’
‘বড় মা, তাসফির সাথে কি যাব আমরা?’
‘কেন যাবি না? যা দুজন গিয়ে ঘুরে আয়।’
এই ব্যাপারে নির্ঝর আর কোনো কথা বলল না। খাওয়ার ফাঁকে ফাঁকে সে জীবন ভাইয়ার সাথে দু চারটে কথা বললো। খাবার খাওয়া শেষ হতে কিছুক্ষণ ড্রয়িং রুমে অপেক্ষা করলো। ডাইনিং মোটামুটি ফাঁকা হতে সে তরীর খাবারটা নিজের হাতে প্লেটে সাজাল। তারপর উপরে উঠে গেল।
______________
তরীর বাপের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিতে দিতে দুপুর গড়িয়ে বিকেল হলো। ততক্ষণে আকাশে মেঘ জমা শুরু হয়েছে। দূর দূরান্ত থেকে মেঘের টুকরো গুলো ভেসে এসে এক জায়গা পূন্জীভূত হচ্ছে। চলমান গাড়ির ভেতর দিয়ে তরী আকাশের দিকে চেয়ে আছে। সে আর তাসফি পেছনে বসেছে। সামনে ড্রাইভিং সিটে বসে নির্ঝর গম্ভীর ভাবে গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছে। হুটহাট ফ্রন্ট মিররে দুজনের চোখ একে অপরে নিবদ্ধ হয়ে যাচ্ছে।
তরী পাশে বসা ছোট ভাইয়ের দিকে তাকালো। তাসফি চোখ বন্ধ করে সিটে হেলান দিয়ে বসে আছে। তরী তাকে কাছে নিয়ে এসে মাথাটা কাঁধের উপর রাখলো যাতে ঘুমাতে সহজ হয়। একটুপর নির্ঝরের দিকে তাকিয়ে মিনমিন স্বরে বলল,
‘শুনছেন?’
‘বলো। শুনছি।’
‘জানালার কাচ খুলে দিন না একটু! আকাশ দেখবো।’
‘হাউ ফানি! আকাশ কোনোদিন দেখোনি? এখন জানালা খুললে ধুলোয় অবস্থা কাহিল হয়ে যাবে। বাহিরে হাওয়া শুরু হয়ে গেছে। দেখছো না? তার চেয়ে আমায় দেখো!’
তরী ছোট্ট করে হুঁ বলেই চমকে গেল। খুব দ্রুত নিজেকে সামলে নিল। তার মন খারাপ হয়ে গেছে। এত ছোট্ট একটা বিষয়ে মন খারাপ হয়ে যেতে নিজের উপর প্রচন্ড বিরক্ত হলো সে। ঘাড় উঁচিয়ে সে কাচের এপাশ দিয়ে আকাশ দেখার চেষ্টা করলো। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে ভারী বাতাস এসে তার চোখে মুখে আছড়ে পড়লো। তরী দ্রুত চোখ বন্ধ করে ফেলল। পুনরায় চোখ খুলে সামনে তাকাতে মুখে হাসি ফুটে উঠলো। নির্ঝর জানালার কাচ নামিয়ে দিয়েছে। সে খুশি মনে বলে উঠলো,
‘আপনি এত ভালো কেন?’
নির্ঝর মুখ খোলার আগে তাকে নকল করে সে নিজে থেকে বলল,
‘বুঝতে হবে না বরটা কার?’
নির্ঝর মৃদু শব্দ করে হাসলো। আকাশের অবস্থা মোটেই ভালো নয়। মিরর থেকে দৃষ্টি সরিয়ে সে গাড়ি চালানোতে মনোনিবেশ করলো। সামনের রিকশাটাকে অভারটেক কর গাড়ির বেগ বাড়িয়ে দিল। দ্রুত পৌঁছাতে হবে!
বাড়ির সামনে গাড়ি থামিয়ে নির্ঝর বাইরে তাকালো। বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে। কাছাকাছি পৌঁছানোর অনেক আগেই থেকে ঝমঝম করে বৃষ্টি পড়ছে। মেঘমল্লার অঝোর ধারায় পানি ঝরিয়ে যাচ্ছে। সাথে ক্ষণে ক্ষণে দমকা হাওয়া। সে কিছুটা চিন্তিত হয়ে পড়লো। এখান থেকে তরীদের ঘর দেখা যাচ্ছে। হালকা নীল রঙের টিনশেড বিল্ডিং! কিন্তু ঘরে উঠতে হলে অনেকটা পথ পেরুতে হবে। ইতোমধ্যে তো সবাই ভিজে একাকার হয়ে যাবে।
বৃষ্টি ভেজা রাস্তার দিকে তাকিয়ে সে মুচকি হাসলো। এই রাস্তায় সে কত হেঁটেছে। কত উঁকিঝুঁকি মেরেছে তরীকে এক পলক দেখার জন্য। অবশেষে সেই মেয়েটিকে সাথে নিয়ে এ পথের সাক্ষী হলো।মাথা ঘুরিয়ে তরীর দিকে তাকাতে তরী নিজের মুখ মুছে নিল। অর্ধেকের কম খোলা জানালা দিয়ে পানির ছাঁটা এসে তার মুখ ভিজিয়ে দিয়েছে। কপালের কাছের চুল গুলো হালকা ভিজে গেছে। সে তাসফিকে ধাক্কা দিয়ে বলল,
‘তাসফি উঠে পড়। এসে গেছি আমরা।’
তাসফিকে কয়েক বার ডাকতে উঠে পড়লো। গাড়িতে ঘুমিয়ে পড়ার অভ্যাস আছে তার। সে বাইরে বৃষ্টি দেখে ভীষণ খুশি হলো। কারো তোয়াক্কা না করে একলাফে গাড়ির দরজা খুলে নেমে গেল। তরী পেছন থেকে তাকে ডাকা শুরু করলো। কিন্তু সে ডাক আদৌ গায়ে মাখলো না। তরী হতাশ হয়ে নির্ঝরের দিকে তাকালো। নির্ঝর সিটবেল্ট খুলে বলল,
‘গাড়িতে তো ছাতা নেই। তুমি বসো। আমি গিয়ে বাড়ি থেকে ছাতা নিয়ে আসি।’
‘দরকার নেই ছাতার। চলুন ভিজে যাই!’
‘খবরদার না! ভেজা যাবে না।’
‘এতটুকু রাস্তা যেতে আর কত ভিজবো? চলুন যাই!’
তরীকে উচ্ছ্বসিত দেখালেও নির্ঝরের মধ্যে আগ্রহ দেখা গেল না। তরীকে নিয়ে সে চিন্তিত। সে পুনরায় গাড়ি স্টার্ট দিয়ে আরো একটু ভিতরে ঢুকলো। আর যাওয়া যাবে না। সামনে সবজির বাগান। সে গাড়ি ঠিকমতো পার্ক করে গাড়ি থেকে নেমে পড়লো। সঙ্গে সঙ্গে তীরের মতো উপর থেকে বারিধারা এসে বিঁধলো। বরফ শীতল ঠান্ডা পানিতে তার শরীর কেঁপে উঠছে বার বার। সামনের ডোর লক করে তরীর কাছে আসার আগেই তরী গাড়ি থেকে নেমে পড়লো। নির্ঝর মৃদু ধমক দিয়ে বলল,
‘কথা শোনো না কেন তুমি? অসুস্থ হলে সেবা কে করবে শুনি?’
‘আপনি!’
নির্বিকার ভাবে বলে তরী বৃষ্টির ফোঁটা হাতে ধরলো। তার তরঙ্গের মতো উচ্ছ্বল রূপ দেখে নির্ঝরের মুখে হাসির রেশ দেখা দিল। কপালের চুল বেয়ে গড়িয়ে পরা পানি ফু দিয়ে ফেলে দিল সে। কাপড়ের ট্রলিটা বের করে তরীর হাত চেপে ধরে বলল,
‘দ্রুত চলো!’
কিছুদূর এগোতে তরীর বাবা তোফাজ্জল সাহবকে দেখা গেল। ছাতা মাথায় এগিয়ে আসছে। কাছাকাছি আসতে নির্ঝর সালাম দিয়ে কুশল জিগ্যেস করলো। তরী বাবাকে দেখে হুড়মুড় করে নির্ঝরের হাত ছেড়ে দিল। এগিয়ে গিয়ে বাবার ছাতার তলায় দাঁড়াল। নির্ঝর মুচকি হেসে বাবা-মেয়ের পেছন পেছন হেঁটে গেল। সিঁড়ি থেকে পা ধুয়ে নির্ঝর তরীর রুমের দিকে পা বাড়াল। এ বাড়ির সব মোটামুটি চেনা। কিছুদিন আগে তরীর সাথে এসেছিল।
এ বাড়িতে লম্বা ঘরটায় তিনটে রুম। উত্তর দিকেে বারান্দায় আরো একটা রুম। দক্ষিণের রুমটা তরীর। নির্ঝর সে রুমে ঢুকে দরজা সামান্য ভিড়িয়ে দিল। পেছন ঘুরতে চমকে উঠলো। চোখ বড় বড় করে বলল,
‘তুমি কখন রুমে এলে? মায়ের সাথে না কথা বলতে দেখলাম।’
তরী জানালা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে। জানালার স্টিলের পাল্লা খোলা। বৃষ্টির ঝাপটা এসে অর্ধেক ভিজিয়ে দিয়ে যাচ্ছে। সে ভেজা কাপড়ে নির্ঝরের দিকে না তাকিয়ে বলল,
‘ভেজা কাপড় পাল্টাতে হবে না?’
নির্ঝরের কানে তরীর কথা ঠিকই ঢুকলো। কিন্তু ঠাওর করতে পারলো না। তার দৃষ্টি আটকে আছে তরীতে। ভেজা জামাকাপড় গুলো আঁটসাঁট হয়ে শরীরের সাথে লেগে আছে। যার দরুণ শরীরের মেয়েলি ভাঁজ গুলো স্পষ্ট। মাথার ভেজা চুল গুলো পিঠময় লেপ্টে আছে। তাকে এই মুহূর্তে উচ্ছ্বল ঝরণার মতো লাগছে। এই ঝরণার একটুখানি স্পর্শ পেতে, ঝরনার পানিতে নিজের অবগাহন ধুতে নির্ঝর ধীরপায়ে তরীর দিকে এগিয়ে গেল। নিঃশব্দে তরীর কাছে গিয়ে পেছন থেকে পোশাকের মতো আঁটসাঁট করে জড়িয়ে ধরলো। কিছুটা শরীর ভেঙে তরীর কাঁধে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করলো। বিড়বিড় করে বলল,
‘ চুপচাপ এভাবে থাকো কিছুক্ষণ। আমি বোধ হয় অসুস্থ হয়ে পড়ছি।’
(চলবে)
আমার লেখা সব গল্পে পারিপার্শ্বিক চরিত্র গুলোর কথোপকথন বা কাজ-কারবার অনেক কম থাকে। সেজন্য অনেক দেরিতে আজ কিছু চরিত্রের এন্ট্রি হলো। আবার হয়তো দু একটা পর্বে এদের দেখা যাবে। লেখার ভুলত্রুটি ধরিয়ে দিবেন। 🤎