শুভ্রনীড়
পর্ব০৬
#Shamu_Choudhury
শুভ্রা রুমে ঢুকে দেখে পুরো রুম জুড়ে শুধু শুভ্রতার আভা।
পুরো রুমকে শুভ্র মোমবাতি তে আলোকিত করা হয়েছে। সে ভেতরেই ঢুকতেই দেখে পুরো রুম শুভ্রতায় আচ্ছাদিত রয়েছে রয়েছে শুধু নাম না জানা হরেক রকমের সাদা ফুল। তার মন যেন বিশুদ্ধতায় ছেয়ে গেলো। সে মুগ্ধ ভাবে তাকিয়ে দেখতে লাগলো। বেডশিট টাতেও শুভ্রতার ছোয়াঁ। তার উপর সাদা গোলাপ দিয়ে বড় করে লাভ শেপ দেওয়া তার মাঝে আবার পাপড়ি দিয়ে ছোট লাভ শেপ। পুরো বেডটা গোলাপ দিয়ে ভরানো তা দেখে তার চোখ জুড়িয়ে গেল। সব জায়গায় সাদা আর সাদা সাথে এত ফুলের সমোরোহ তার আবার সুঘ্রাণ মনে হচ্ছে সে তার কল্পনার ফুল বাগানে এসে পড়েছে। হঠাৎ তার চোখ পরল বেডের পাশের দেওয়ালে টাঙানো তার বড় মাপের একটা ছবি যাতে রয়েছে শুভ্রার মন ভুলানো হাসি। সে খুশিতে কেদেঁ দিল। তার মা মারা যাওয়ার পর সে তেমন হাসেইনি আজকের দিন তার জীবনের সবচাইতে খুশির দিন। সে ভাবে তার মা বেচেঁ থাকলে তার মত সেও অনেক খুশি হত। এসব ভাবতে ভাবতে সেখানে একটা ডায়েরি পায়। কৌতুহল বশত সে ডায়েরি টা হাতে নিয়ে দেখে ডায়েরীটা অনেক পুরোনো আর তাতেও শুভ্রতার ছোয়াঁ। সে ভেবে পায়না মানুষটা কি সাদা রঙ ভালোবাসে না তার জন্যই এতকিছু। সে মুচকি হেসে ডায়েরীটা খোলে,,
তার উপর একটা চিরকুট তাতে লেখা,,,,
“”প্রতিদিন একটা করে পেজ পড়বা কথা দাও। জানি তুমি কথা দিয়েও রাখতে পারবেনা,তাই ডায়েরীর সব পৃষ্ঠা আমি ছিড়ে একেকটা একেক জায়গায় রেখেছি। প্রতিদিন একটা করে যেন পড়তে পারো সেই ব্যবস্থাও করেছি। আর হ্যাঁ এগুলো আমার সুপ্ত অনুভুতি তোমায় ঘিরে, এইগুলার কখনো অবহেলা করোনা ছায়াবিনী___
ছায়াবিনী পড়ে সে হেসে উঠল,,
তারপর লেখা আছে
তোমায় ছায়াবিনী কেন বললাম জানো? ছোট বেলায় তুমি আমার সাথে ছায়ার মত সবসময় আমার পাশে থাকতে। কখনো হোচঁট খেয়ে পরে গেলে আমাকে হাত বাড়িয়ে দিতে। আমার কোথাও কেটে গেলে ক্ষুদ্র ডাক্তার হয়ে চিকিৎসা করতে। আগের মত এখনও পাশে থাকবে তো, আমার ছায়াবিনী হয়ে ছায়ার মত পাশে থাকবে তো??
শুভ্রা চিরকুট টি পড়ে মাথা হেলিয়ে সম্মতি দেয় যে সে থাকবে, আর হেসে উঠে মানুষটা তাকে এত কেনো ভালবাসে??পরক্ষণেই তার মন খারাপ হয়ে যায়, কেননা ছোট বেলায় তার একটা দূর্ঘটনা ঘটে যার জন্য তার শুধু মনে আছে তার একটা খেলার সঙ্গি ছিল। তার চেহারা মনে নাই। বড় হয়ে শুনেছে ওইটা নাকি ওর চাচাতো ভাই ছিল। শুভ্রা ভেবে নেয় ওইটা ইউভী ছিল কেননা তার তো একটাই ভাই। অতপর সেখানে ফলের জুস দেখতে পায়। দেখামাত্র খেয়ে নেয় এত না খেয়ে ছিল,শ্রাবণ অনেক জোড়াজুড়ি করলেও সে কিছু খায়নি ইউভীর সাথে খাবে তাই। কিন্তু সেই মানুষটার দেখা নাই। তার প্রচুর ঘুম পায়। সে বেডে হেলান দিয়ে বসে থাকে, একটু পর ঘুমে টলিয়ে পরে। তার একটু পর ই আমান আসে, এসে শুভ্রা কে দেখে মুচকি হাসে মনে হচ্ছে সে কোন পরি৷ জুসে আমান ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে দিয়েছিল। কেননা আমান চেয়েছিল আজ রাতে সে ইউভী সেজে শুভ্রা কে ঢোকা দিতে পারবেনা
সে শুভ্রা কে কোলে তুলে নিয়ে বেডে ভালভাবে শুয়ে দিয়ে কপালে চুমু দেয়। তারপর সব মোমবাতি নিভিয়ে সে শুভ্রা কে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পরে। এত বছরের স্বপ্ন তার পুরণ হল। কিন্তু সে ভেবে পায়না ইউভী আসলে কি চায়।সব রহস্য কোথায় থেকে শুরু হয়েছে সে জানেনা। তাই সে প্রথমে শুভ্রার চাচ্চুর খুনিকে খুজে বের করতে চায়।কাল সেখানে সে শুভ্রা কে নিয়ে যাবে।
অতঃপর সেও ঘুমিয়ে যায়।
_____সকাল বেলা
প্রথম শুভ্রার ঘুম ভেঙে যায়, সে দেখে তাকে কেউ জরিয়ে ধরে ঘুমাচ্ছে। যার গরম নিশ্বাস তার গলায় পরতেছে৷ সে আলতো ভাবে তাকায় কিন্তু মুখ দেখতে পায়না। আস্তে করে তার মাথার চুলে হাত দেয়, তার চুল খুব ঘন আর মসৃণ। এতক্ষণে সে বুঝে যায় ইউভী(মূলত আমান যাকে শুভ্রা ইউভী ভাবতেছে) তার সাথে আছে। চুল সরিয়ে তাকে দেখে তব্দা খেয়ে বসে আর বলে উঠে মাশাল্লাহ। আমানের বর্ননা যত দেওয়া যায় তত কম। ছেলেটা এত সুন্দর কেন? সবচেয়ে আকর্ষনীয় ঠোট, তাত ঠোট অনেক গোলাপী মনে হচ্ছে এই বুঝি টোকা লেগে রক্ত বের হল। সে আমানের কপালে চুমু খেয়ে হাল্কা ভাবে বেড থেকে উঠে যায় আর ভাবে যে কাল রাতে সে কখন ঘুমিয়ে গেল এই ভাবতে ভবতে বেল্কুনিতে যায় গিয়ে দেখে বেল্কুনিতে এক দোলনা পাশেই অনেক স্যাকুলেন্ট রাখা। এত সুন্দর স্যাকুলেন্ট দেখে তার মন ভরে যায়। দোলনাটাও কি সুন্দর সেখানে সে বসে পাশেই বই রাখা বইয়ের নাম শুভ্রনীড়। সে হাতে নেয়। আজব বইটাতেও শুভ্রতার ছোয়াঁ। এই ছেলে নির্ঘাত পাগল। এই ভেবে সে হাসতে থাকে। দোলনার আরেক দিকে অন্য প্রজাতির ছোট বাশঝাড় দেখতে অনেক সুন্দর সে খেয়াল করে দেখে তাতে পাখি বাসা বেধেঁছে। পাখি তো নেই কিন্তু তিনটা ডিম আছে। বাহিরে একবার তাকায়, তার চোখ যেন আটকে যায়।
বাসার এক সাইডে শুধু সাদা ফুল যার স্কেলিটন ফ্লাওয়ার’। এসব ফুলের গাছের শেপ দিয়ে শুভা লেখা সে আবার হেসে উঠে।টুইটারে এই ফুলের ছবি পোস্ট করার সঙ্গে সঙ্গে বিস্ময়ের বন্যা বয়ে গিয়েছিল তখন শুভ্রাও দেখেছিল। কিন্তু এই ফুল এখানে থাকা সম্ভব না কারণ এসব ফুল শুধু পাহাড়ি অঞ্চলে দেখা যায়। হয়ত এগুলো গ্রাফটিং করাত নতুন পন্ধতি পাওয়া গেছে।
(স্কেলিটন ফ্লাওয়ার’ ফুলগুলো চিন, জাপান এবং আমেরিকার অ্যাপালাশিয়ান পাহাড়ি অঞ্চলে এই ফুলের আধিক্য দেখা যায়। আর পাঁচটা বুনো ফুলের মতোই তেমন নজরকাড়া রূপ তার নেই। কিন্তু এই ধারণা সম্পূর্ণ পাল্টে যায় যদি আচমকা এক পশলা বৃষ্টি এসে পড়ে। জলের ফোঁটার স্পর্শে শুরু হয় তার ভেল্কি। চোখের সামনে যেন ধুয়েমুছে সাফ হয়ে যায় পাপড়ির সাদা রং। বদলে কাচের মতো স্বচ্ছ্ব হয়ে ওঠে এই ফুল। রং-রূপ হারিয়ে যেন সত্যিই এক কঙ্কালে রূপান্তরিত হয় সে।
বৃষ্টি পড়লেই স্বচ্ছ্ব। ঠিক যেন অন্তর্বাস!)
সে দেখে বাসার আরেক পাশে সুইমিংপুল এই সব দেখে সে অনেক উল্লাসিত হয়। সে ভেবে পায়না সব কিছু এত সুন্দর কেন? হঠাৎ খেয়াল করে ফুলের বাগানের কাছে একটা দোলনা তার আশে পাশে সবুজ ঘাসে ভরা।সেখানে শ্রাবণ আর অন্য কর্মচারীরা বসে আড্ডা দিচ্ছে। আর কি যেন খাচ্ছে। সে ভাবে এক সময় আমার কাছে কিছুই ছিলোনা এখন আলহামদুলিল্লাহ আমার কাছে সব আছে।
সে আবার রুমে আমানের কাছে জায় গিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে ভালবাসি বড় বেশি ভালবাসি। কখনো ছেড়ে যাবোনা। আমি যা শুধু আপনারই।
এই বলে সে গোসলে যেতে চায় কিন্তু সে পরবে কি? সে তো কোন জামা আনেনি। পাশেই দেখে একটা বক্স। সে খুলে দেখে একটা বোরখা,কিছু হিজাব, কিছু জামা অনেক কিছু বক্সের একপাশে লেখা৷ কাল বেশি সময় পাইনি তাই এই কয়টাই এনেছি। পরে আপনাকে নিয়ে শপিংমলে গেলে যা যা লাগে কিনে নিও। এখন এর ভিতর থেকে কিছু একটা পরে নাও আর হুম বাড়িরে যখন যাবা তখন বোরখা পরে যাবা। আমি চাইনা আমার ছায়াবিনীর মায়া কারো চোখে পরুক। শুভ্রা হেসে একটা কুর্তি বেছে নেয়। পরে সে বাথরুমে চলে যায়।
এর মাঝে আমান উঠে পরে। দেখে শুভ্রা নেই বাথরুম থেকে আওয়াজ পেয়ে ভাবে সে সেখানে। আমান আরেক রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে কিচেনে যায়।খুটিনাটি রান্নার সব সরঞ্জাম রয়েছে। সে শুভ্রার জন্য কি করবে ভেবে পায়না পরে মনে পরে শুভ্রা হোয়াইট পাস্তা খেতে বেশি ভালোবাসে। আমান হোয়াইট পাস্তা সাথে কফি বানিয়ে শুভ্রার বেডের পাশে রেখে বাহিরে শ্রাবণ দের কাছে আছে। সে বলে যায় তার জরুরী কাজ আছে সে বেরিয়ে যাওয়ার আগে শ্রাবণ কে বলে যায় সে জেনো শুভ্রার খেয়াল রাখে। শ্রাবণ সব কিছু আগে থেকেই জানতো তাই সে কিছু বলেনা। সে সেখান থেকে শুভ্রার রুমে যায় গিয়ে দেখে শুভ্রা খাচ্ছে সে বলে উঠে,,
_ভাইকে ছেড়ে একা একা খাচ্ছিস?? তোর জামায় তো না খেয়ে বের হয়ে গেল।
(শুভ্রার মন খারাপ হয়ে যায় সে ভেবেছিল আমান হয়ত নিচেই আছে। পাস্তার প্লেট রাখতে চাইলে শ্রাবণ বলে,,,)
_তোর জন্য কত কষ্ট করে খাবার বানানো আর তুই রেখে দিচ্ছিস? খাবার শেষ করার পর তোকে একটা কথা বলব,,
_শুভ্রা তরিহরি করে খাবার খায়,,খেয়ে বলে কি বলবা বল?? সামিহার কি খবর??
__জানিনা। কাল থেকে তাকে পাওয়া যাচ্ছেনা৷ আমরা ওর গাড়িতে ট্র্যাকার লাগিয়েছিলাম। সেই অনুযায়ী আমাদের লোক সেখানে পৌঁছালে সেখানে সামিহাকে পাওয়া যায়। সে কোন ভাবে জেনে যায় গাড়িতে ট্র্যাকার লাগানো ছিল। সে ট্র্যাকার রাস্তায় ছুড়ে ফেলে দেয়৷ আচ্ছা তোর কি সামিহাকে সন্দেহ হয়??
_এইগুলা কি বলতেছো ভাইয়া? যখন আমার পাশে কেউ ছিলো না তখন শুধু সেই ছিল। সে আমাকে তার জিবনের থেকেও বেশি ভালোবাসে। তাছাড়া ওই সবসময় আমার পাশেই থাকতো কিছু করলে তো বোঝা যেতোই।হয়ত তোমাদের ভয়ে পালিয়ে গেছে কি পুলিশের কাছে গেছে আমাকে বাঁচাতে।(শুভ্রা বলল)
_প্রতি উত্তরে শ্রাবণ বলে উঠল,,,
হতে পারে তা ঠিক জানিনা তবে শোন আলভী চাচ্চুকে যেখানে মারা হয়েছিল সেখানে নাকি সিসিটিভি ক্যামেরা ছিল। পরে পুলিশের লোকেরা তদন্ত করে জানতে পেরেছে কিন্তু ক্যামেরা টা পাওয়া যাচ্ছেনা।
তোর জামায় সেই ক্যামেরা খুজঁতে গেছে।তুই চিন্তা করবিনা।
_ওই একা গেল আর তুমি তাকে আটকালেনা?? তাছাড়া পুলিশ যখন পায়নি সে কিভাবে পাবে??(শুভ্রা বিচলিত হয়ে বলল)
__যে পেয়েছে সে কাল ফোন করেছিল। টাকার বিনিময়ে সিসিটিভি ফুটেজ দিয়ে দিবে। চালাকি করবেনা কারণ আমরা খোঁজ নিয়ে দেখেছি যে ফোন দিয়েছিল সে নিতান্তই গরীব। টাকার লোভে এইসব করতেছে। তাছাড়া চালাকি করলেও তোর জামায়ের সাথে পেরে উঠবেনা বুঝছিস???
আমাদের এই সবের ট্রেনিং আছে। আস্তে আস্তে তুই আমরা সব জেনে যাবো৷ চল
খাবার বানায়,,,
এই বলে তারা কিচেনে চলে যায়
_____অন্য দিকে
আমান কে জাপানের সেই বিখ্যাত সুইসাইড ফরেস্ট এ ডাকা হয়, আর ইউভী গিয়েছিল জার্মানের সুইসাইড ফরেস্ট এ। শ্রাবণ কে সে মিথ্যা বলেছে, সত্য বললে সে আমান কে আস্তে দিতোনা। জনমানবহীন জায়গা সে ভিতরে ঢোকেনি। কেননা,যে একবার ভিতরে যায় সে নাকি কোনদিন ফিরে আসেনা। আমান ঘামতে থাকে এর আগে এই রকম ভুতুড়ে ভয়ানক জায়গায় সে কখনো আসেনি। হঠাৎ করে কিসের যেন শব্দ হয় আমান চমকে সেদিকে তাকায় আর সাথে সাথে তার পিঠে একটা তীর এসে লাগে। তীর বেশি ধারালো না তাই আমান কে ততটাও ঘায়েল করতে পারেনি, সে হাত দিয়ে তীর টা বের করে দেখে তীরে নীল কি যেন মাখানো ছিল। তীর লাগার সাথে সেইটা আমানের শরীরের সাথে মিশে যায়, আহত জায়গাটা প্রচুর জ্বলতে থাকে এক পযার্য়ে আমান ওখানেই বেহুশ হয়ে যায়।
সে বেহুশ হয়ে গেলে কিছু কালো মাস্ক পরা লোক এসে তাকে কাধে করে তুলে নিয়ে যায়_____
চলবে????
(ঠিকমত সালাত আদায় করুন,ধন্যবাদ)