শুভ্রনীড়
পর্ব০১
Shamu_Choudhury
ব্রেকিং নিউজ
জাপানের টোকিও শহরে বাংলাদেশের সুনামধন্য ব্যাবসায়ী আলভী রাহমানের রহস্যময়ী মৃত্য। তার রক্তাক্ত দেহ টোকিও শহরের রেইনবো ব্রিজ এ ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া গেছে। তার মরদেহের অবস্থা খুব ভয়াবহ।
_____রেইনবো ব্রিজ জাপানের রাজধানী ও বৃহত্তম শহর টোকিওর একটি সাসপেনশন সেতু। এটি কাওয়াসাকি হ্যভি ইন্ডাস্ট্রিজ দ্বারা নির্মিত। ১৯৮৭ সালে এটি নির্মাণ করা হয় যা ৭৯৮ মিটার দীর্ঘ। দিনের মধ্যে প্রাপ্ত সৌর শক্তি ব্যবহার করে প্রতি রাতে লাল, সাদা ও সবুজ তিনটি ভিন্ন রঙের আলোকে আলোকিত করা হয় সেতুটিকে। ২,৬১৮ ফুট এই ব্রিজ এ ইদানীং ভয়াবহ অনেক লাশ পাওয়া যাচ্ছে। কারো পরিচয় জানা যায় আবার কারো পরিচয় এর রহস্য ভেদ না করতেই আরেক লাশ হাজির। এত লাশের ভীড়ে শুধু আলভী রাহমানের লাশ টাকে ভালভাবে চেনা গেছে। নতুবা কারো শুধু মাথা পাওয়া গেছে, কারো বা শরীর থেকে হাত, পা বিচ্ছিন্ন ছিল।
___এত টুকু শুনে সামিহার হাত থেকে চায়ের কাপ পড়ে যায় সে দৌড়ে শুভ্রার রুমের কাছে যায়। শুভ্রা টোকিও যাওয়ার জন্য প্যাকিং করতেছে আজ সন্ধায় তার আর সামিহার ফ্লাইট। কিন্তু সামিহা শুভ্রাকে কিভাবে বলবে তার একমাত্র চাচ্চু যার কাছে সে যেতে চাচ্ছে সে এইভাবে খুন হয়েছে। তাই সে শুভার হাত ধরে টেনে এনে তাকে টিভিতে নিউজ দেখায়। শুভ্রা কি বলবে ভেবে পাচ্ছেনা এক মুহুর্তে তার সব কিছু শেষ হয়ে গেল শুধু তো তাই এই চাচ্চুটাই ছিল। তাকেও নির্মম ভাবে কে খুন করল? শুভ্রা কিছুই বলতে পারতেছেনা। ধপ করে মাটিতে বসে পড়ে। সামিহা তাকে সামলায়,এক পযার্য়ে চুপ থাকতে থাকতে হুভ্রা জ্ঞান হারায়
____শুভ্রা,, যে গল্পের এক মূল চরিত্র। যার পুরো নাম শুভ্রানুর রাহমান শুভ্রা। তার আপনজন বলতে তার চাচ্চু আলভী রহমান,তার মা আর তার চাচ্চুর ছেলে ইউভী ছিল। তার চাচ্চু তো মারা গেলেন তার ভাই অনেকদিন হল নিখোঁজ আর তার মা নয় মাস আগে ব্রেইন স্টোক করে মারা যায়। যার জন্য সে খুব অসুস্থ হয়ে পরে এক পযার্য়ে ডিপ্রেশনে চলে যায়। কিছুদিন আগে সামিহা তার জন্য নিজের কলেজ থেকে শুভ্রার কলেজে ট্রান্সফার নিয়ে নেয় কলিজার বান্ধবী সে। সামিহা তাকে কিছুটা ডিপ্রেশন থেকে বের করেও আনে কিন্তু পুরোপুরি পারেনি তাই শুভ্রার চাচ্চু তাদের জন্য জাপানের টিকিট কেটে দেয় যাতে শুভ্রা তার চাচ্চুর কাছে গিয়ে কিছুদিন থাকতে পারে।
কিন্তু কি থেকে কি হয়ে গেল
___
কয়েক ঘন্টা পর শুভ্রার জ্ঞান ফিরে,
সে তার সামনে অনেকজন কে দাড়িয়ে থাকতে দেখে ভয় পেয়ে যায়। তারা সবাই শেতাঙ্গ। দেখে বাঙালি মনেই হচ্ছেনা। এই বুঝি তাদের গাল চিড়ে রক্ত বের হল। সবার একই রকম ফরমাল ড্রেসআপ। তাদের হাতে রয়েছে হেকলার কোচ এইচকে এমজি৪ এমজি ৪৩ মেশিনগান এই মেশিনগান জার্মানের। এই মেশিনগান সবথেকে কম সময়ে সবথেকে বেশি রাউন্ড গুলি ছুঁড়তে পারে। টার্গেট ‘মিস’ করার প্রবণতা এই মেশিনগানের মাত্র ০.০১ শতাংশ। তাই এই মেশিনগানকে অনেকে আদর করে ‘কিলার মেশিন’ বলেও ডাকেন। কয়েকদিন আগে শুভ্রা খবরের কাগজে এই নিয়ে পড়েছিল সাথে ছবি ও ছিল। এই রকম মেশিনগান নিয়ে ছোটবেলা থেকে শুভ্রা অনেক উদ্দেপিত অনেক সামিহা তাকে সামলে নেয় আর বলে তারা নাকি তাদের নিতে এসেছে। বাকি কিছু তারা বলেনি। শুভ্রা কিছু বলতে যাবে তারমাঝেই
হঠাৎ একজন বলে উঠল,তাদের স্যার শুভ্রার সাথে কথা বলতে চায়। শুভ্রা ভ্রু কুচকে তাকাল, লোকটি বুঝতে পেরে বলল তারা কিছুই জানেনা যা বলার তাদের স্যার বলবে। শুভ্রা পাল্টা জবাবে কি বলবে ভাবতে না ভাবতেই তাদের ফোন এ একটা কল আসলে,তারা শুভ্রা কে ফোন দিয়ে বাহিরে চলে যায়। শুভ্রা কাঁপা কাঁপা হাতে ফোনে রিসিভ করে। অপাশ থেকে সালাম আসে
শুভ্রা তার জবাব দিয়ে বলল,আপনি কে?
-আমার নাম আমান জুনাঈদ খান।
আপনি মূলত আমাকে চিনবেন না। আমি আপনার চাচ্চু আলভী রহমান কে খুব ভালভাবে চিনি সেও আমাকে চিনতো আর তিনি যেমন অল্প কয়েকদিনে ইম্পোর্ট আর এক্সপোর্ট এর ব্যাবসা করে জাপানে সেরা ব্যাবসায়ী হয়ে গেছে আমিও সে রকম তবে আমার কাজ এবং আমার দেশ দুইটাই আলাদা আর আপনাকে আমার লোকদের সাথে আসতে হবে।আপনি না আসতে চাইলেও আপনাকে জোর করেই আনা হবে। যদি একা না আসতে চান তো সামিহা কে সাথে নিয়ে আসবেন__
(শুভ্রা অবাক হয়ে)
_আপনি আমার সম্পর্কে সব জানেন কে আপনি আর কিইবা চান আমার থেকে?
– দেখেন আমি আপনার সম্পর্কে সব জানি, আর এও জানি ইউভী কোথায় আছে। এখন কি করবেন ভেবে নেন। আমার লোক আপনাকে কাল নিতে আসবে। রেডি থাকবেন।আল্লাহ হাফেজ এই বলে অপরপাশে ফোন কেটে যায়___
____
ফোন কেটে গেলে সামিহা বলে উঠল তুই আমান কে চিনিস? তাছাড়া ইউভী কোথায় মানে? সে তো বাসাতেই ছিল।
-তুই অনেক কিছু জানিস না সামিহা
-মানে??
-মনে আছে তুই ৮মাস আগে তোর গ্রামের বাসায় গেছিলি? আসার পর দেখিস আমি অনেক চুপচাপ অনেক বলার পর ও আমি তোকে আসল কারণ বলিনি
-তুই তো বলেছিলি তোর চাচ্চুর জন্য তোর মন খারাপ। তাহলে কি লুকিয়েছিলি বল তো। আজ না বললে আমরা কিভাবে সমাধান বের করব বল?
-তুই তো জানিস ইউভী ভাইয়া রুম থেকে দিনে বের হয়না। সে শুধু রাতে বের হয় তাও একা একা। আর সে চায় তাকে কেউ না দেখুক যার জন্য সে শুধু রাতেই বের হয় এতে সবাই তাকে সন্দেহ করে কোন মানুষ তো এই রকম আচরণ করে না। আর করলেও হঠাৎ করে তার আচরণের এত পরিবর্তন কিভাবে হল? এই নিয়ে কানাঘুষাও হয় অনেক। চাচ্চু তাকে অনেক বুঝায় কিন্তু সে বুঝেইনা তারপর একদিন ইউভী ভাইয়া হঠাৎ ট্যুরে যেতে চায় এত বছর পর কোথাও ঘুরতে যাবে শুনে চাচ্চু এক কথায় রাজি হয়ে যায় কেন যাবে তা আর শোনেনা। সে নাকি জার্মানির ‘সুইসাইড ফরেস্ট’ নামে এক জায়গায় একা ঘুরতে যায় কেন যায় সে কারণ টাও জানা যায়নি। সেখানে নাকি সবাই সুইসাইড করতে যায় আর যেখানে মানুষ সুইসাইড করত সেইখানে সাদা ক্রস দিয়ে রাখত। আর জানা যায় এমন গাছ নাই যেখানে ক্রস নাই এবং ওখানে এক কবরস্থান ও ছিল ভাইয়া নাকি ওই কবরস্থান দেখতে যায়। আমি জানিনা এত জায়গা থাকতে ওখানে কি? যে গভীর রাতে কবরস্থান যায় তাও এই রকম জায়গা,
-জাপানের টোকিও শহর থেকে ১০০ মাইল পশ্চিমে মাউন্ট ফুজির পাদদেশে কি আছে জানিস? ঘন গাছ-গাছালিতে ভরা নিঝুম জঙ্গল রয়েছে যার স্থানীয় নাম অকিগাহার তবে বিশ্বে এই বন সুইসাইড ফরেস্ট হিসেবেই পরিচিত ঐখানে না গিয়ে আরেক দেশে কেন গেল?? জার্মানিতে যে এই রকম ফরেস্ট আছে তাও তো জানতাম না।
–অনেকে বলে ১৯৭০ এর দশকে বিখ্যাত এক জাপানি লেখকের একটি গল্প থেকে অনুপ্রাণীত হয়ে প্রথম দিকে সেখানে কেউ আত্মহত্যা করেছিলেন । এরপর থেকে আরও অনেকেই সে নির্জন বনে যায় শুধুমাত্র আত্মহত্যা করতে সে বনে কেউ গেলে আর ফিরে আসেনা হয়ত সে শুধু ঘুরতে গিয়েছিলো। সে কি করতে গিয়েছিল সেইটাই তো আসল রহস্য। কেননা, তারপর থেকেই তো ভাইয়াকে পাওয়া যায়নি। তার সাথে কি হয়েছিল,কেউ জানেনা হয়ত আমান জানে আর
চাচ্চু বলেছিল উনি এইগুলা পরে জানতে পারেন কিভাবে জানেন তা জানিনা। আর সবাই ভাবছে ইউভী ভাইয়াও সুইসাইড করতে গেছিল।
-এত কিছু ঘটে গেল আর তুই বললি না? তাহলে এই আমান ছেলেটা তার হয়ত বন্ধু না হলে এত কিছু জানবে কিভাবে?
-কিন্তু ভাইয়া তো শেষের দিকে রুম থেকেই বের হত না তাহলে তার বন্ধু কিভাবে হয়?
– হয়ত আগে থেকে পরিচয় ছিল যাই হোক আমাদের রহস্য বের করা লাগবে। আর চাচ্চুকেই বা কে এইভাবে খুন করল তাও জানা লাগবে। যার জন্য আমাদের কোথাও থেকে শুরু করা তো লাগবেই।
-চল আমরা জাপানে আগে যাই তারপর দেখি কি হয় রেইনবো ব্রিজ থেকেই রহস্য ভেদ করব।
-কিন্তু আমান?? এই তো সব কিছু জানে তার চোখ ফাকি দেওয়া সম্ভব না রে।
– এর কথা বাদ দে ইউভী ভাইয়ার জন্য হলেও আমাকে রিস্ক নেওয়াই লাগবে। কারণ সে প্রথম ব্যাক্তি যাকে আমি মন থেকে ভালবেসেছি তাকে পেতে হলে কিছু তো রিস্ক নেওয়ায় লাগবে। সব গুছিয়ে নে, আজ রাতে বের হব।
_______
শুভ্রা আর সামিহা সব কিছু ঠিক করে নিয়ে এয়ারপোর্টের দিকে রওনা দিবে, কিন্তু রাস্তায় কোন জনমানব নাই। এমনি দিন তো কোলাহলে থাকা যায়না। আজ তাহলে সবকিছু এত শান্ত কেন? ঝড় আসার আগে প্রকৃতি যে রকম শান্ত থাকে, অনেকটা সে রকম। হঠাৎ করেই শুভ্রার কেমন জানি লাগতে থাকে মনে হয় ঘুমে তার চোখ বুজে আসতেছে,সামিহাকে বলতে যাবে তার আগেই সে ঘুমে টলিয়ে পরে। সামিহা দেখে ভয় পেয়ে যায়। কি করবে ভেবে পায়না। দূর থেকে এক গাড়ি এগিয়ে আসতেছে, সামিহা গাড়ির দিকে ছুটে চলে তার পা চলতেছেনা। হঠাৎ করে তারওচোখ ও বুজে আসে আর সেও রাস্তায় টলিয়ে পরে। গাড়ি যখন তাদের কাছে আসে তা থেকে ৪টা লোক সামিহা আর শুভ্রা কে ধরে নিয়ে যায় তাদের হাতেও সেইম মেশিনগান যেটি জার্মানের আর তারা বেরিয়ে পরে কোন এক অজানা উদেশ্যে
চলবে___
(এইটা আমার জীবনের প্রথম একটা গল্প। আপনাদের ভাল লাগলে কমেন্টের মাধ্যমে উৎসাহ দিন তাহলে নেক্সট পর্ব আসবে। ভূল-ত্রুটি মাফ করবেন। ধন্যবাদ)