#শুভ্র_বর্ষণ
#প্রভা_আফরিন
#পর্ব_২১

রাত নয়টা বেজে গেলো। মিহা তৈরি হয়ে বসে আছে। পড়নে সোনালী জমিনে বেগুনি গুটি গুটি ফুল আঁকা শাড়ি। এক আকাশ কালো মেঘযুক্ত চুলগুলো বিনুনি করে এক পাশে ফেলে রেখেছে। তাতে পেচিয়েছে শুভ্র বেলীফুলের মালা। চোখে কাজলের গাঢ় টান সময়ের সাথে লেপ্টে উঠেছে বেশ অনেকটা। মসৃন ঠোঁটের ওপরে লিপস্টিকের প্রলেপ দাতের সাথে ঘর্ষণের ফলে প্রায় অস্তিত্বহীন হতে চললো। অথচ নিশান্তের খোজ নেই।
আজ মিহার পরিবার দুপুরে নিশান্তের বাড়ি গিয়েছিলো। বিয়ে নিয়ে বিস্তর আলাপের পর শুভ দিন ঠিক করা হয়েছে সামনের মাসের প্রথম সপ্তাহে। সেই নিয়ে বর্তমানে মিহার মাথাব্যথা নেই। বরং ওর মাথাব্যথা নিশান্ত কখন আসবে বা আদৌ আসবে কিনা তা নিয়ে। কাল রাতে নিজের একটা ইচ্ছা সে নিশান্তের কাছে পেশ করেছে। রাতের শহরে হাত ধরে হাটবে। চাঁদ দেখবে। ভালোবাসা ব্যক্ত করবে একে অপরের প্রতি। কথাগুলো ভাবতেই শুভ্র অনুভূতিরা মনের ভেতরে বর্ষণ শুরু করেছে।

মিহা জানতো নিশান্ত ওর ইচ্ছা শোনার পর পূরণ করবেই। সেই বিশ্বাস নিয়ে আজ রাত ঘনিয়ে আসতেই সেজেগুজে বসে আছে। ফোনটার দিকে নজর স্থির করে আছে সেই কখন থেকে। হয়তো ঘন্টা গড়ালো। তবুও নিশান্তের না কোনো ফোন, না কোনো খবর। সময় গড়ালো আরো এক ঘন্টা। ঘড়ির কাটা দশের ঘরে। মিহার হঠাৎ কান্না পেয়ে গেলো। সে তো ভেবেছিলো আজ নিশান্ত আসবে। তাহলে এলো না কেনো? তাহলে কি ওই ভুল বুঝলো! নিশান্ত সত্যিই আসবে না! সত্যি সত্যিই রাগ করে বসেছে লোকটা!

অপেক্ষার সমাপ্তি না পেয়ে সোনালি এবং বেগুনি মিশেল আঁচল টা ছড়িয়ে দিয়ে বিমর্ষ মনে বিছানায় শরীর এলিয়ে দিলো মিহা। চোখ বন্ধ করতেই অবাদ্ধ, ছন্নছাড়া অশ্রুকণা টুপ করে বেরিয়ে এলো চোখের কোণ বেয়ে। মনে মনে নিশান্তের প্রতি অসন্তোষ সৃষ্টি হলো। সেই অসন্তোষ বেশিক্ষণ স্থায়ীত্ব পেলো না। তার আগেই বেসুরো রিংটোন মিহার মনের মেঘ কাটিয়ে দিলো। তরাক করে উঠে ফোন রিসিভ করলো সে। অপরপাশ থেকে নিশান্তের উপেক্ষামূলক কন্ঠ কানে এলো।

“কেউ যদি এই রাতের বেলা আমার সাথে হাটতে বের হতে চায়, তাহলে যেন পাঁচ মিনিটের মধ্যে বের হয়। আমার হাতে একদম সময় নেই।”

মিহা হাসলো। কোনো উত্তর না দিয়েই ফোন কেটে দিলো। আয়নায় নিজেকে ভালো করে একবার দেখে নিলো। শাড়ির আঁচল টা টেনে ধরে ছুট লাগালো বাইরে। বাড়ির সবাই যার যার ঘরে। হয়তো এতোক্ষণে ঘুমিয়েও পড়েছে। মিহা শোভাকে ডেকে ছোট্ট করে জানিয়ে দরজা পেরিয়ে বের হয়ে গেলো।

শোভা অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো মিহার যাওয়ার দিকে। কি এক অদ্ভুত উজ্জ্বলতা, উচ্ছলতা বইছে ওর মধ্যে। ভালোবাসা বুঝি এমনই হয়! শোভার কি কখনো এমন হয়েছে? এই খুশি কি সে অনুভব করেছে কখনো! উত্তরটা ভাবতে গিয়েও থেমে গেলো। চোখ চলে গেলো রাতের আধার ঠেলে পাশের বাড়ির জানালা দিয়ে বিচ্ছুরিত হওয়া এক চিলতে হলদে আলোর দিকে।

ল্যাম্পপোস্টের হলুদ, সাদা আলোর নিচে দুই ভালোবাসার ভ্রমর হাটছে পায়ে পায়ে। নিশান্ত পকেটে দুইহাত গুজে ভাবলেশহীন ভাবে হাটছে। আড়চোখে পাশের রজনীগন্ধাকে পর্যবেক্ষণ করছে লুকিয়ে। হালকা বাতাসের দাপটে মিহার মসৃন শাড়ির আঁচল উড়ছে। ঠোঁটের কোণে মিষ্টি, মনভোলানো হাসি। নিশান্ত বেশিক্ষণ দৃষ্টি স্থির রাখে না। নিজের দুর্বলতা ঢেকে সে এখন রাগের অভিনয়ে ব্যস্ত। নিশান্তকে আরো একধাপ এলোমেলো করে দিয়ে মিহা ওর বাহু আঁকড়ে ধরলো। ঠোঁটের হাসি বজায় রেখে বললো,

“কথা বলবেন না বুঝি? এই সুন্দর চাঁদনী রাতটা অমাবস্যার মতো মুখ নিয়ে কাটাবেন নাকি?”

নিশান্ত নিরুত্তর। মিহা নিশান্তকে টেনে নিয়ে রাস্তা ছেড়ে আধার মোড়ানো মাঠে পা দিলো। যায়গাটা একদমই সুনসান। দূরের টিমটিমে আলোয় রাস্তায় কয়েকটা কুকুর ঘুমিয়ে আছে। হঠাৎ হঠাৎ টুংটাং আওয়াজ করে একটা-দুইটা রিক্সা ছুটে যাচ্ছে পাশ দিয়ে। মিহা এই যায়গাটায় অনেকবার এসেছে। বিয়ের আগেই ওর ইচ্ছে হয়েছিলো এই মাঠের শেষ প্রান্তে থাকা দিঘিটার পাড়ে বসে প্রিয় মানুষের সাথে জোৎস্নাবিলাস করবে। আজ সেই ইচ্ছেটাকেই বাস্তব রূপ দেওয়ার প্রয়াস।
মিহা মাঠের সবুজ ঘাসে পা দিয়ে জুতা খুলে নিলো। নিশান্তকেও খুলতে বললো। নিশান্ত চুপচাপ জুতা খুলে ফেলতেই মিহা সেগুলো মাঠের শেষ প্রান্তের বেঞ্চির নিচে রেখে দিলো, যেন যাওয়ার সময় আবার এখান থেকে নিয়ে নিতে পারে। তারপর আবার নিশান্তের আঙুলে নিজের আঙুল গলিয়ে হাটতে লাগলো সবুজ ঘাসের ওপর দিয়ে। চাঁদের রুপালী আলোয় পরিবেশটা মায়াবী সুন্দর লাগছে। মিহা থেমে গিয়ে নিশান্তের দিকে তাকালো। হাতে টান পড়ায় নিশান্তকেও থামতে হলো। মিহা মুখ ফুলিয়ে বললো,

“এভাবে জোর করে আমার ইচ্ছা পূরণ করতে কে বলেছিলো আপনাকে? না আসলেই পারতেন।”

“আপনি তো আগেই রেডি হয়ে ছিলেন। না আসলে কেদে কেটে সমুদ্র বানাতেন তা কি আমি জানি না।!”

মিহা অসন্তোষ প্রকাশ করে বললো,
“তারমানে আমি কাদবো বলেই এলেন? আর কিছুই না?”

নিশান্ত উত্তর দিলো না। ওকে চুপ থাকতে দেখে মিহা এগিয়ে এলো। মাঝের দুরত্ব টুকু ঘুচিয়ে নিশান্তের পায়ের ওপর পা তুলে দিয়ে গলা আকড়ে ধরলো। এতোটা বোধহয় নিশান্ত আশা করেনি। কয়েক সেকেন্ডের জন্য ভড়কে গেলো বেচারা। মিহা আর কি করতে পারে দেখার জন্য নিজেকে সামলে চুপ রইলো সে। মিহা চাঁদের আলোয় কিছুক্ষণ প্রিয়তমের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো। ভীষণ লজ্জা লাগছে এভাবে থাকতে। রীতিমতো কাপাকাপি লেগে গেছে বুকের ভেতর। কিন্তু নিশান্তের মুখের ভাবের পরিবর্তন হচ্ছেই না। মিহা ওর কাধে মাথা রেখে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। মনে মনে ভাবলো একজন পায়ের ওপর এতোক্ষণ দাড়িয়ে থাকলে বিরক্তিও তো আসার কথা। এই লোকের কিছু হচ্ছে না কেনো। জড়িয়ে ধরলে নাকি সব রাগ-অভিমান পানি হয়ে যায়! তাহলে এখন হচ্ছে না কেনো?

বেশ অনেকক্ষণ পরেও যখন নিশান্তের থেকে সাড়া পাওয়া গেলো না, মিহা বুঝলো নিশান্ত আসলে মজা নিচ্ছে। সে মিহার এই কান্ডগুলো উপভোগ করছে। মিহা হাত ঝাড়া দিয়ে ছেড়ে দিলো নিশান্তকে। কোনোদিক না তাকিয়েই মাঠের অপর প্রান্তে অবস্থিত দিঘির দিকে হাটা দিলো। নিশান্ত আঁচল টেনে ধরে মিহাকে নিজের সাথে মিশিয়ে বাহুবন্ধনে আবদ্ধ করে সেই দিকেই হাটা ধরলো। মিহা হেসে ফেললো। হাসলো নিশান্তও।

দিঘির পাড়ে আঁচল বিছিয়ে বসেছে মিহা। ওর কোলে মাথা দিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে নিশান্ত। ধুসর আকাশের গায়ে তারার মেলা বসেছে। সেই সাথে একটা পুরোপুরি পূর্ণ না হওয়া ঝলমলে চাঁদ। সেই প্রতিফলন পড়েছে দিঘির জলে। মিহার দৃষ্টি সেদিকে নিবদ্ধ। জলের মৃদু তরঙ্গে কেপে উঠছে চাঁদটা। প্রিয় মানুষের সাথে এমন মন ভালো করা দৃশ্য এক অনন্য অনুভূতি। যা দুইজনকেই আবিষ্ট করে রেখেছে। নিশান্ত মিহার হাত নিজের হাতে আবদ্ধ করে হায়ে উল্টোপিঠে ঠোঁট ছোয়ালো। মিহা মাথা নিচু করে ফেললো। নিশান্ত বললো,

“বাড়ির সবাই খুব খুশি জানোতো! দুই নতুন সদস্য যোগ হবে আমাদের বাড়িতে। এক, তুমি আমাদের পরিবারে আসছো আর দুই, একটা পুচকু আসবে ভাইয়া-ভাবীর কোলে। আমার পরিবারটা পরিপূর্ণ হয়ে যাবে তোমাদের পেয়ে।”

“আমি সেইভাবে কখনো বাচ্চাদের আদর করিনি বা পাইনি। আমার আত্মীয়ের পরিসীমাও ছোট। তাই বাচ্চাদের সাথে সেই অর্থে মেলামেশা বা সখ্যতা হয়নি। ভাবীর সাথে আজ কথা বলার সময় আমারও খুব ভালো লাগছিলো। বাচ্চাটা নিয়ে আমিও খুব এক্সাইটেড।”

নিশান্ত হেসে মিহার বিনুনিতে টান দিয়ে সেখানে প্যাচানো বেলীফুলে নাক টেনে ঘ্রান নিলো। ফুলগুলো নেতিয়ে গেছে। কয়েকটা খুলে এদিক সেদিক পড়ে গেছে।
“আমিও। কারণ এর পরেই তো আমাদের পালা।”

“মানে?”
মিহা জিজ্ঞেস করার সাথে সাথেই হঠাৎ মাথায় এলো কি বলেছে নিশান্ত। ঠোঁট চেপে নিজের লজ্জা সংবরণের চেষ্টা করে নিশান্তের বুকে কিল বসিয়ে দিলো সে। নিশান্ত ব্যাথা পাওয়ার ভাণ করে বুকে চেপে ধরলো। তারপর পাশ ফিরে শক্ত করে মিহার কোমড় জড়িয়ে মুখ গুজে রইলো। মিহা নড়ে ওঠার আগেই হুমকি দিয়ে বললো,

“খবরদার, যদি মোচড়ামুচড়ি করেছো তো। তুমি তোমার চাঁদ দেখো। আমি এখন আমার চাঁদের কোলে শুয়ে আরাম করবো। আমার চাঁদের ঘ্রাণ নেবো। উষ্ণতা নেবো। তারপর রাস্তায় দাঁড়িয়ে চা খেয়ে ফাকা রাস্তায় হাটবো। আজকের জন্য ঘুমের ছুটি।”

__________

সকাল সকাল ইংলিশ আন্টির ডাক পড়েছে শোভার। মূলত নিজের এক্সপেরিমেন্ট করে বানানো লেমনিশ বিস্কুট শোভাকে টেস্ট করাতে ডেকেছে। এই বাড়িতে তার এক্সপেরিমেন্ট করা খাবার কেউ মুখে তোলার সাহস পায় না। আরিফ সাহেব মুখে তোলা তো দূর স্ত্রীর ওইসব আজগুবি রান্নায় আগ্রহও দেখায় না। রিয়াদ অফিসে চলে গেছে। তাই শোভাকে দেখা মাত্রই ডেকে এনেছেন তিনি। শোভা বাড়িতে ঢুকতেই আরিফ সাহেব হাতে থাকা পত্রিকাটা চোখের সামনে থেকে সরিয়ে স্নেহের হাসি উপহার দিলো। শোভা গিয়ে আরিফ আঙ্কেলের পাশে বসতেই তিনি চাপা কন্ঠে বললো,

“তোমার পেট আজ খারাপ হবে মা।”

“কেনো আঙ্কেল?”

“তোমার আন্টি আবার রান্না নিয়ে নিজের প্রতিভা দেখাচ্ছে। লেবু ফ্লেভারে বিস্কুট বানিয়েছে। নাম দিয়েছে লেমনিশ বিস্কুট। আমাকে সেধেছে, খাইনি। তাই তোমাকে ধরে এনেছে।”

শোভা হাসার চেষ্টা করলো। না জানি আবার কি বিস্কুট করেছে। এর আগে একবার ইংলিশ আন্টি আমলকি দিয়ে স্পেশাল ফালুদা বানিয়েছিলো। কাউকে না পেয়ে মিহাকে খাইয়ে দিয়েছিলো। বেচারি সারাদিন বাথরুম থেকে বের হতে পারেনি। আর না কিছু খেতে পেরেছে। শোভা সেই কথা ভেবে একটা শুকনো ঢোক গিললো। আরিফ আঙ্কেল আবার বললো,

“পালিয়ে যাও। আমি অস্বীকার করে বলবো তুমিতো কাউকে ডেকে আনোনি। হয়তো ভুল দেখেছো।”

শোভা উঠতে চেয়েও পারলো না। টফি শোভার উপস্থিতি পেয়েই পায়ে পায়ে ঘুরছে। শোভার ইচ্ছে করছে ফুটবলের মতো একটা কিক করে ওকে দূরে ছুড়ে মারতে। আফসোস, ইচ্ছেটা মনের ভেতরেই পূরণ হবে। বাস্তবে না। কিছুক্ষন পর ইংলিশ আন্টি মাঝারি একটা ট্রে তে করে তার লেমনিশ বিস্কুট নিয়ে হাজির হলো। দেখে মোটামুটি ভালোই লাগলো। একটা লাইট গ্রিনিশ ব্যাপার আছে বিস্কুটে। কিন্তু খেতে কেমন হবে ভাবা যাচ্ছে না।

“খেয়ে বলে দাওতো শোভা, যে আমিও ভালো কিছু বানাতে পারি। এরা বাপ-ছেলে বিশ্বাসই করতে চায় না।”

শোভা করুন ভাবে হেসে একটা বিস্কুট হাতে তুলে নিলো। কিন্তু নিজের মুখে না দিয়ে টফির দিকে বাড়িয়ে দিলো। টফি সেটা বারকয়েক শুকে মুখ ঘুরিয়ে নিলো। শোভা চেষ্টা করেও টফিকে খাওয়াতে পারলো না। ইংলিশ আন্টি বললো,

“ছাড়োতো ওকে। ওদের ভালো জিনিস সহ্য হয় না। তুমি খাও। খেয়ে বলো কেমন হয়েছে।”

“খাচ্ছি।”

শোভা বিস্কুট মুখে দিতেই মুখের ভেতরে টক এবং তেতো একটা স্বাদ পেলো। হয়তো লেবুর খোসার।সাথে লবনের পরিমাণ বেশি। শোভার মনে হলো আরেকটু লবণ এবং তেতোটা বেশি দিলেই হোমমেইড বিষ বানিয়ে ফেলতেন ইংলিশ আন্টি।ভেতরের সব কেমন পাক দিয়ে উঠছে। ছি! কি বিদঘুটে স্বাদ। ইংলিশ আন্টি আগ্রহ নিয়ে বললো,
“কেমন হয়েছে শোভা?”

শোভা মুখে কিছুই বলতে পারলো না। বিস্কুটের অংশটুকু সবার সামনে ফেলতেও পারছে না, আর না পারছে গিলতে। আরিফ আঙ্কেল আফসোস করে বললো,
“ইশ বাচ্চা মেয়েটা বুড়ির ফাদে পড়ে গেলো।”

ইংলিশ আন্টি খেপে গিয়ে বললো,
“তুমি আমায় বুড়ি বললে?”

“বুড়িকে বুড়ি বলবো না? চামড়া ঢিলে হয়ে যাচ্ছে দেখো। দুদিন পর ছেলের বিয়ে দেবে।”

“দেবো তো কি হয়েছে। ছেলের বউ এবং আমায় একসাথে দেখলে মানুষ আমাদের দুই বান্ধবী বলবে বুঝলে। তোমায় বুড়ো বলবে।”

আরিফ আঙ্কেল বললো,
“কিহ! তারমানে কি তুমি আমার ছেলেকে কোনো বুড়ির কাছে বিয়ে দেবে নাকি যে দুজনকে বান্ধবী লাগবে?”

ইংলিশ আন্টি বিরক্ত হলো। বললো,
“আমার ছেলেকে আমি একটা মিষ্টি বিদেশি মেয়ের সাথে বিয়ে দেবো। যার চুল হবে ব্রাউনি। চোখের মনি হবে ঘোলাটে। চকচকে ত্বক। এলাকার সবাই দেখে যেন হা করে তাকিয়ে থাকে আর বলে, রিয়াদের বউ লাখে একটা।”

“হ্যা, এক বিদেশি হতে চাওয়া বউ নিয়েই সংসারে লাল বাতি। আবার সম্পূর্ণ বিদেশি বউ এলে আমি আর এই বাড়ি থাকছি না।”

ইংলিশ আন্টি আরো কিছু বলতে যাচ্ছিলো। তার আগেই শোভা মুখ চেপে বসার ঘর ছেড়ে বেড়িয়ে গেলো। মুখে থাকা তেতো, নুনে পোড়া বিস্কুটের থেকেও রিয়াদের বউ নিয়ে বলা কথাগুলো বিদঘুটে লাগছিলো ওর। বাইরে এসে মুখের খাবারগুলো আগে রাস্তায় ফেললো। খিচে যাওয়া মেজাজে একা একাই বললো,

“একটা বিদেশি সাদা বিড়াল এনে বিয়ে করান ছেলেকে। এমনিতেই আপনার ছেলে একটা সাপ।আবার একটা শিয়ালও আছে। চিড়িয়াখানা পূর্ণ হবে তাহলে। হুহ।”

“আমি যেহেতু সাপ, তাই ভাবছি একটা বেজি বিয়ে করবো। বিড়ালের সাথে ঠিক জমবে না।”

শোভা ভয় পেয়ে পেছনে ফিরে তাকালো। রিয়াদ ঠোঁটের কোণে হাসি ঝুলিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। শোভা ভড়কে গিয়ে অস্ফুট স্বরে বললো,

“আপনি? আপনি তো অফিসে থাকার কথা!”

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here