#ললাট_লিখন
কলমে:লাবণ্য ইয়াসমিন
পর্ব:৮
আলামিন সাহেব ওদের দুজন কে নিয়ে নিজের বাড়িতে চলে আসলেন। ঐতিহ্য আরশীর হাত ধরে গাড়ি থেকে নামিয়ে ভেতরে নিয়ে গেলো। প্রায় শেষ রাত হয়তো কিছুক্ষণের মধ্যেই মসজিদে আযান দিবে। আলামিন হাসেবের বাড়িটা বেশ নির্জন কাউকে দেখা যাচ্ছে না। ঐতিহ্য ওকে নিয়ে সোফায় বসতেই আলামিন সাহেব তাড়াতাড়ি করে ওষুধ নিয়ে আসলেন। এই মূহুর্তে ডাক্তার পাওয়া বেশ কঠিন আপাতত এই ওষুধ দিয়েই রক্ত বন্ধ করতে হবে। তাছাড়া কাটাটা অতটাও গভীর না। সেলাই দিতে হবে না। উপর থেকে কেটেছে।উনি ব্যান্ডেজ করতে করতে বললেন,
> আমি এখানে একাই থাকি। আসলে এই শহরে আমি নতুন । ভেবেছিলাম বাসা ঠিকঠাক করে তবেই বাবা মাকে নিয়ে আসবো। তবে এখন আর চিন্তা নেই বোন চলে এসেছে।
> আপনার ঋণ কখনও শোধ হবে না ভাইয়া। আমাদের এই বিপদের দিনে যখন সব প্রিয়জনেরা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে তখনই আল্লাহ্ আপনাকে আমাদের কাছে পাঠিয়েছেন।
> ঋণ কেনো বলছো বোন? মানুষ হিসেবে এটা আমার দ্বায়ীত্ব। আর শুনো তোমরা রেস্ট করো আমি আজ থেকে তোমাদের সমস্যার সমাধান করবো। তোমার শশুর বাড়ির ঠিকানা দিবে। কে বা কারা তোমাদের ক্ষতি চাইছে এর শেষ আমি দেখে ছাড়বো।
> অনেকগুলো ধন্যবাদ ভাইয়া। আমি আপনাকে একটা ডাইরী দিব ওখানে বিস্তারিত লেখা আছে।
আলামিন সাহেব ওদের দুজনকে একটা রুমে রেখে নিজের রুমে চলে গেল। আরশী বিছানায় মাঝখানে বসে আছে আর ঐতিহ্য ওর মাথা মাথ বুলিয়ে দিচ্ছে। ঐতিহ্যের মুখটা মলিন হয়ে আছে। আরশী ওকে এভাবে থাকতে দেখে ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটিয়ে বলল,
> ভয় পাচ্ছেন? বাঁচতে হলে লড়াই করেই বাঁচতে হয়। সারাদিন কাজ করলাম রাতে বাড়ি ফিরে নাক ডেকে ঘুমিয়ে পড়লাম ওরকম জীবনের কোনো মানেই হয়? জীবন মানেই দুঃখ কষ্ট যন্ত্রণা এবং সুখ। দুঃখ না থাকলে কি সুখের মর্ম বোঝা যায়?
ঐতিহ্য মেয়েটার মুখের দিকে তাকিয়ে ভাবছে,কি অসীম ধৈর্য্য আল্লাহ্ মেয়েটার মধ্যে দান করেছে। আমি ছেলে হয়ে প্রায় হাল ছেড়ে দিয়েছিলাম অথচ মেয়েটা ঠিক মনে মনে আশা করে বসে আছে। তবে একদিন ঠিক কুয়াশা কেটে গিয়ে রঙিন প্রভাতের দেখা মিলবে। তখন কাধে মাথা রেখে শান্তিতে প্রভাতফেরির গান খাইবো। জানিনা নিয়তিই কোনদিকে নিয়ে যাবে তবুও চেষ্টা করবো। যদি ব্যাক্তি তার কর্ম দ্বারা ভাগ্য নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। তবে তাই হোক। ঐতিহ্যকে এভাবে ভাবতে দেখে আরশী ওর হাত ধরে বলল,
>অনেক ভাবনা চিন্তা হয়েছে এবার একটু ঘুমিয়ে নিন। সকাল হলে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। আপনাকে সুস্থ হতে হবে বুঝলেন?
ঐতিহ্য ওর কথামতো পাশে শুয়ে পড়লো। কিছুক্ষণের মধ্যেই ওরা গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলো।
বহুতলবিশিষ্ঠ বাড়ির ছাদে দাঁড়িয়ে আছে আরশী। চারদিকে ভুমিকম্প হচ্ছে। বিল্ডিংগুলো থরথর করে কাপতে কাপতে ভেঙে পড়ছে। আরশীর প্রচণ্ড ভয় করছে। ও এখানে আটকে পড়েছে কিছুতেই নামতে পারছে না। পায়ের নিচ থেকে বিল্ডিংটা মনে হচ্ছে নড়াচড়া করছে। আরশী দাঁড়িয়ে থাকতে পারলো না কারণ বিল্ডিং ডানদিকে কাত হয়ে পড়েছে। ও কোনো রকম রেলিং ধরে ঝুলে আছে এমন সময় উপর থেকে ঐতিহ্য ওর হাতটা ধরলো। আরশী কিছুটা আশার আলো দেখলো।কিন্তু ঐতিহ্য ওকে কিছুটা উপরে তুলতেই বিল্ডিংটা দুজনকে নিয়ে হুড়মুড় করে ভেঙে ওদের গায়ের উপরে ভেঙে পড়লো। ওরা দুজন ভাঙা ইটের অতল গহীনে হারিয়ে গেলো। চমকে উঠে আরশী ঘুম ভাঙলো। ওর গা ঘেমে একাকার। এতো সময় ও স্বপ্ন দেখছিল। কি ভয়ংকর স্বপ্ন মনে হলো ও উপর থেকে নিচে পড়ে গেছে। গায়ে একটুও শক্তি নেই। ও মাথার ঘাম মুছতে গিয়ে হাতে টান পড়লো। ব্যাথাই হাতটা টনটন করছে। ও উঠে বসতে গেলো কিন্তু পারলো না। মাথাও ভারি অনেক। ব্যাথার ওষুধ খাওয়া হয়নি তাই যথারীতি ব্যাথা বেড়েছে সঙ্গে জ্বর ও আছে। আরশীর নড়াচড়া দেখে পাশ থেকে ঐতিহ্য ওকে উঠিয়ে বালিশের সঙ্গে হেলান দিয়ে বসিয়ে দিল। আরশী পিটপিট করে চোখ খুলতেই একঝলক আলো ওর চোখের মধ্যে ঢুকে পড়লো ও সঙ্গে সঙ্গে চোখ বন্ধ করে নিয়ে আবারও দ্বিতীয় দফায় চোখ খুললো। খোলা জানালা দিয়ে সূর্যের রশ্মি ভেতরে প্রবেশ করছে। দেওয়াল ঘড়িতে সময় ঠিক বারোটা বেজে চার মিনিট। আরশীর চোখ উল্টে গেলো। কথা ছিল সকালবেলায় ঐতিহ্যকে নিয়ে হাসপাতালে গিয়ে রিপোর্ট করা কিন্তু কিছুই তো হলো না। ও চোখ দুটো ছলছল করে বলল,
> আপনি আমাকে ডাকেননি কেনো? এতটা বেলা হলো ঠিক পেলাম না। চলুন সময় নষ্ট করলে চলবে না।
আরশী নামতে গেলো কিন্তু ঐতিহ্য ওকে বাধা দেবার চেষ্টা করছে ঠিক তখনই আলামিন সাহেব ভেতরে প্রবেশ করলেন। উনি হাসি মুখে বললেন,
> তোমাকে ব্যস্ত হতে হবে না। নিজের শরীরের ঠিক নেই উনি আসছে আরেকজন কে ডাক্তার দেখাতে।
> ভাইয়া আপনি তো সব জানেন তবুও?
> বলেছি না বোনের জন্য সামান্য কিছু করতে পারলে খুশী হবো? ঐতিহ্য ভাইকে আমি ডাক্তার দেখিয়ে এনেছি এবং রিপোর্ট ও করিয়েয়েছি। রিপোর্ট বের হতে সময় লাগবে বিকালে আমি গিয়ে নিয়ে আসবো ঠিক আছে?
> কখন করলেন এতকিছু?
> তোমার অনেক জ্বর ছিল তাই কাজের মেয়েকে তোমার কাছে রেখে দুজন মিলে বের হয়েছিলাম। তোমাকেও নিয়ে যেতাম কিন্তু ধরা পড়লে ঝামেলা হতো। তোমার শশুর মশায়ের কাণ্ডকারখানা জানো তো?
> কিসের কাণ্ড?
> তোমরা দুজন যে গায়েব উনি সবটা জেনেছেন এবং সকালবেলায় থানায় নিখোঁজ ডাইরী করেছেন। আপাতত ধরা খেলে চলবে না। আমি অনেক কৌশলে ওকে বাইরে নিয়েছিলাম। এবার থেকে যা হবে এই বাড়ির মধ্যেই হবে।
> আমার জন্য আপনি যা করছেন না আমার নিজের আপন ভাই ও করেনি। ভাই তো দূর নিজের বাবা ও আমাকে পর করতে দুবার ভাবেনি।
> এসব বলে লজ্জা দিতে হবে না। আমি তোমাদের বাড়িতে যাচ্ছি।
আরশী আলামিন সাহেবের কথায় চমকে উঠে জিঞ্জাসা করলো,
> কেনো যাবেন?
> ভয়ের কিছু নেই। অফিস থেকে আদেশ এসেছে। তোমাদের খুজে বের করতে তাই নিয়ম অনুযায়ী যেতেই হবে। আচ্ছা আমি আসছি এখন। যা যা দরকার হবে কাজের মেয়েকে বলছি সব করে দিবে।
> আচ্ছা ভাইয়া।
আলামিন সাহেব বেরিয়ে পড়লেন। বাসার সামনে গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। আরশী মেয়েটার উপরে উনার মায়া হচ্ছে। বোন হিসেবে যতদুর পযর্ন্ত সাহায্য করার দরকার হবে ও করবে। তাছাড়া বেশ রহস্যময় লেগেছে আরশীর বলা কাহিনী শুনে। ওই বাড়িতে দৃষ্টির অগোচরে কিছু চলছে যেটা কেউ জানেনা। লেখাপড়া জানা শিক্ষিত প্রাণবন্ত বুদ্ধিমান একটা ছেলে কিভাবে সামান্য জ্বরের কারণে বোবা হয়ে যায়? সবাইকে সন্দেহ হচ্ছে। লোকে বলে পুলিশের চোখে নাকি সুধু সন্দেহই ঘোরাফেরা করে। কথাগুলো ভেবে ও আরশীর বাবার বাড়ির দিকে এগিয়ে চলল। কাকে কি প্রশ্ন করতে হবে ও সারা রাস্তায় চুপচাপ ভেবে নিয়েছে। ওরা বাড়ির সামনে গিয়ে গাড়ি থামালো। রাস্তার পাশে টিন সেটের দুইরুম ঘর মাঝখান উঠান পেরিয়ে আমারও তিনরুম ঘর। আরশীর বর্ণনা অনুযায়ী ওটা এর ছোট মা আর বাবার আস্তানা । আর এই দুরুম ওর ভাইয়ের। আলামিন সাহেব নেমে বাড়ির উঠানে গিয়ে দাঁড়াতেই ভেতর থেকে এক অল্প বয়সী ভদ্রমহিলা বেরিয়ে এসে জিঞ্জাসা করলেন,
> আপনারা আমাদের বাড়িতে?
> গতকাল রাত থেকে আপনার ননদ এবং তার স্বামিকে খুজে পাওয়া যাচ্ছে না। এই বিষয়ে আমরা তদন্ত করতে এসেছি। এবার বলুন আপনার নাম ঠিকানা?
চলবে
ভুলত্রুটি মার্জনা করবেন।
(আসুন নামাজ ও কোরআন পড়ি)