#রৌদ্রদেশে_মেঘের_বেশে
#পুষ্পিতা_প্রিমা
[২৪]
নিউইয়র্কে তখন সন্ধ্যে, আঁধার নেমেছে। গুটগুটে অন্ধকার শহর ছেয়ে গেলে ও কৃত্রিম আলোর কারণে তা বুঝে উঠার জোঁ নেই। এয়ারপোর্টে পৌঁছে সাথে সাথে বন্ধুু তামিমের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল নাহিল।
‘ তোদের খুব খুব মিস করব দোস্ত। আমি শীঘ্রই ফিরব।
তামিম জড়িয়ে ধরে রাখল। আবেগের জায়গা সীমিত হলেও বন্ধুদের ক্ষেত্রে তা আলাদা। হাটতে, বসতে, চলতে তাদের কথা মনে পড়লে তাদের কাছে না পেলে হাহাকার লাগে চারপাশ। অনেক্ক্ষণ সময় নিল তামিম নাহিলকে ছাড়তে। প্রশ্ন করল,
‘ হঠাৎ করে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার কারণটা বুঝে পেলাম না।
হাসল নাহিল।
‘ আমার ছোট ছোট দুটো মা বাবা আছে। তারা এমন রাগ করেছে, কয়েকদিন ধরে ভিডিও কলে আসছেনা। তাদের দেখতে না পেয়ে ভীষণ মন খারাপ। আমি জানি এসব ভাই করছে। ভাই তাদের আমার সাথে কথা বলতে দিচ্ছেনা। তাছাড়া আমি এমনিতে ও যাব যাব ভাবছিলাম।
এখান থেকে গিয়ে সবার আগে ভাইয়ের মান অভিমান ভাঙানোর লড়াইয়ে নেমে যেতে হবে।
নাহিলের পিঠ চাপড়াল তামিম। খুব আলগোছে বের করল একটি ঝকঝকে কালো ঘড়ি। বাড়িয়ে দিল নাহিলের দিকে। নাহিলের চোখ নিচে ছিল। উপরে তুলে তামিমের হাতে এই অনাকাঙ্ক্ষিত জিনিসটি দেখে শান্ত চোখে তাকাল নাহিল।
আবার ও নাহিলের পিঠ চাপড়াল তামিম।
‘ নিজের জিনিস নিজের কাছে রাখা ভালো দোস্ত। রাখ।
নাহিল কথা না বাড়ানোর জন্য ঘড়িটা নিয়ে নিল। পকেটে রেখে দিল।
দুজনই একসাথে হাঁটল।
হাঁটার সময় প্রশ্ন করল তামিম। বহু সংকোচে।
‘ হুট করে যদি আবার তার মুখোমুখি হস কোনোদিন?
হাসি সরছেনা নাহিলের মুখে। আশ্চর্য হলো তামিম।
‘ হাসার কি বললাম?
উপরে চোখ করে আবার নিচে নামিয়ে বলল নাহিল,
‘ দেখব, কত ভালো আছে। এই আর কি।
অন্য কিছু বলল না তামিম। বিদায় জানাল বন্ধুকে।
প্লেনের সিট খুঁজে বসে মাথা এলিয়ে দিতেই ঘুম ভর করল নাহিলের চোখে। সেই ঘুম ভাঙল অনেক দেরীতে। ক্লান্ত লাগছে।
সবাই আচমকা এতবড় সারপ্রাইজ পেয়ে কি করবে? সবাই নিশ্চয় শক খাবে। ভাই? ভাই কি করবে? মুখ ফিরিয়ে থাকবে? আর মা? মা নিশ্চয়ই খুশিতে কেঁদে ফেলবে৷ বড়মা ও আছে এখন। বড়আব্বা। বাবা। গ্র্যান্ড মা। শুধু নেই আনহা। সে থাকলে খারাপ হতোনা। আর ছোট্ট ছোট্ট পুঁচকু গুলো তাকে দেখে দৌড়ে আসবে? নাকি না চিনে ফ্যালফ্যাল করে তাকাবে। নিশ্চয়ই চিনবে। কোলে এসে ঝাঁপ দেবে। তার কাছ থেকে চকলেট চাইবে। আনমনে হাসল নাহিল। আবার পরক্ষণে মনে পড়ল নোরার কথা। স্বামী সংসার নিয়ে নিশ্চয়ই ভালো আছে মেয়েটা। ভালো থাকুক। একটা মরিচীকার পেছনে না ঘুরাটাই মঙ্গল। নাহিল কখনো পারত না নোরাকে সুখী করতে। কখনোই পারত না।
সূদুর নিউইয়র্কে থেকে ও যার মন পড়ে থাকে বাংলাদেশের সেই ছোট্ট অবহেলিত একটা গ্রামে। সে কি করে ভালো রাখত নোরাকে?
এত এত আভিজাত্যের মাঝে ও কেন গ্রামের সেই সেলোয়ার কামিজের মেয়েটাকে ভাবতে ভালো লাগে। রঙ বেরঙের রমণীর মাঝে ও যে সামান্য গ্রামের এক শ্যামবতীকে ভেবে যায়, তার কাছে কি করে ভালো থাকত নোরা?
দুঃখের অনলে পুড়তে পুড়তে নোরাকে ও জ্বালিয়ে পুড়ে শেষ করে ফেলত সে। তারচাইতে বরং এটাই ভালো করেছে সে। গা ঢাকা দিয়ে রেখেছিল। পকেট থেকে কালো ঘড়িটা বের করল নাহিল। ঘড়িটার দিকে তাকিয়ে মনে পড়ল সেই তিনবছর আগের কথা।
নাহিল ভীষণ আশ্চর্যান্বিত হয় মাঝেমাঝে। পাবনা, পাইনি জানার পর ও, বুঝার পর ও আমরা কেন তারপর ও তাদের নিয়ে ভাবতে থাকি? তাদের নিয়ে পড়ে থাকি? মনের গহীনে তাদের জায়গাটা পুড়লে ও কেন তা আবার ছাই হয়ে থেকে যায়। সেই ছাই থেকে ও আবার কেন সেই না পাওয়া প্রেমের বীজ অঙ্কুরিত হয়? নিজেকে কেন দ্বিতীয় বার সুযোগ দেওয়ার সাহসটা আসেনা?
কেন ” ভালোবাসা ” শব্দটাকে এত ভীষণ রকম ভয় হয়? কেন?
হাজারটা প্রশ্ন উঁকি দেয় মনে, কিন্তু সেই প্রশ্ন উত্তর খুঁজতে ও লাগে হাজারটা মানে। আসলেই এত এত প্রশ্নের উত্তর দেবে কোনজনে?
____
এডভোকেট আজিজুল রহমান ফোনের উপর ফোন করল সাহিলকে। প্রাক্টিকেল নলেজ ইনক্রিস করার জন্য ইনশিরাহ তার এসিস্ট্যান্টের সব কাজ নিজে নিজে করে। হঠাৎ পেট ব্যাথা উঠল মেয়েটার? কি হলো কে জানে?
প্রায় আধঘন্টার সময় পার হওয়ার পর, কল আসল সাহিলের কাছ থেকে। মিঃ রহমানকে জানাল, সিরিয়াস কিছুনা। মাঝেমাঝেই হয় ওর পেট ব্যাথাটা। মিঃ রহমান হাঁফ ছাড়লেন। ইনশিরাহ তার মেয়ের মতো। এই মেয়েটা তার কাজে কত যে হেল্প করে। দারুণ বুদ্ধিমতী। যেকোনো কিছু খুব ভেতর থেকে ধরে ফেলতে পারে। নামমাত্র কেস লড়েন মিঃ রহমান। ইনফরমেশন কালেক্ট থেকে শুরু কেস ফাইল সবকিছু ইনশিরাহ রেডি করে। সেবার তিনি ডিপেন্স হিসেবে কেস লড়ছিলেন, কেস চলাকালীন অসুস্থ হয়ে পড়লে কেসটা লড়ে ইনশিরাহ। সবকিছু একা একাই হ্যান্ডেল করেছে মেয়েটি । সেটিই তার জীবনের প্রথম কেস ছিল। আর ইনশিরাহ সেটি জিতেছে ও। সেদিন হাসি সরেনি মেয়েটির মুখ থেকে।
দুইপাশে দুই ঝুটি করা বাচ্চা মেয়েটির চুল টেনে দিল তার ভাই। হাত নাড়ল তাননা।
‘ দুককু মুননু।
দাঁত দেখিয়ে হাসল মুননা৷ বলল,
‘ দুককু তুননু।
তাননা ধপ করে বসে পড়ল মেঝেতে। পা ছুড়তে ছুড়তে বলে,
‘ তুননুল মুতো বুলবেনা।
মুননা ও তারমতো করে বসে।
‘ তুননুল মুতো বুলবো।
তাননা এবার মেঝেতে শুয়ে পড়ে। কাঁদতে কাঁদতে হাত পা ছুঁড়ে। মুননা ও তার মতো হাত পা ছুঁড়ে। শেষমেশ বোকা বোকা চাহনি দিয়ে বোনের দিকে তাকিয়ে বলে,
‘ কাঁদু কিনো? গুডডু মিরেছে? জুননু মিরেছে?
তাননা হাত পা ছুঁড়ে।
‘ মুননু মিরেছে।
মুননা আবার ও দাঁত দেখিয়ে হাসে। তাননার দুই ঝুটি ধরে ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে বলে,
‘ আদোল আদোল। তুননু কানেনা, কানেনা।
তাননা মুননার চুল ধরল। ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে কাঁদে। বলে,
‘ মুননু তুননু মুরে গিছে। তুননু মুরে গিছে।
দুইজনের কেউ কারো চুল ছাড়েনা। চিল্লিয়ে চিল্লিয়ে কাঁদে কিন্তু চুল ছাড়েনা কেউ কারো।
দৌড়ে আসেন সালেহা বেগম আর তরিনা খাতুন। দুইজন দুদিকে নিয়ে যায় তাননা মুননাকে।
তরিনা খাতুন মুননাকে কোলে তুলে নিল।
‘ দুনোটার মা বাপ সরলে হয়ছে। এত ঝগড়া কেমনে করে? দেখা যাবে কিছুক্ষণের মধ্যে মা বাপ এলে একদম ঠিক হয়ে যাবে।
সাহিল জিনিয়াকে নিয়ে এল। হাতের জিনিয়ার কোর্টে পড়া কালো কোর্টটি। সালেহা বেগম বললেন,
‘ এখন ভালো লাগছে বৌমা?
জিনিয়া মাথা নাড়াল।
‘ জি মা। এখন ঠিক আছি। তাননা মুননা কোথায়?
তরিনা খাতুন তেড়ে এসে বললেন,
‘ কাঁদতে কাঁদতে দুইজন দুদিকে ঘুমিয়ে পড়ছে। একটার চুল আরেকটা ধরে টানাটানি।
জিনিয়া মাথায় হাত দিল। সাহিল বলল,
‘ আমার বাচ্চাদের নামে বদনাম রটিওনা গ্রান্ডমা। ওরা তাদের বাবার মতো ভালো।
তরিনা খাতুন রেগে গেলেন।
‘ তুই কি বলতে চাইছিস গুড্ডু? আমি মিথ্যে বলছি? যাহ গিয়ে দেখে আয় দুজনের গালে এখনো চোখের জল শুকিয়ে আছে। যাহ।
সাহিল জিনিয়াকে নিয়ে উপরে চলে গেল। রুমে যেতে যেতে কানে ভেসে এল বাচ্চার গলার স্বর। রুমের সামনে দরজার কাছে গিয়ে দাঁড়াল সাহিল আর জিনিয়া।
তাননা মুননার চুলে হাত বুলিয়ে দিয়ে বলছে,
‘ ইখানে বিথা? তুননু ব্যাড চিচতার?
মুননা ছোট ছোট হাত দুটো দিয়ে বোনের গাল ধরে বলে,
‘ তুননু গুড চিচতার। মুননু ব্যাড বাদাল। আদোল কলি, আতো আদোল কলি। তুননু মুননু ভালু।
দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরে বসে থাকে। একে অপরকে আদর করে। জিনিয়া আর সাহিল হাসল মিটিমিটি।
মুননা বলল,
‘ গুডডু কুথাই? জুননু কুথাই? উরা এতু পুঁতা কিনো?
তাননা বলল,
‘ গুডডু নয় আববা বুলবে। জুননা নয় আমমা বুলবে। আল্লাহ মাববে। লাগ কববে।
মুননা তাননাকে ছেড়ে দিল। মুখ বাড়িয়ে ঠোঁট ফুলিয়ে বলল,
‘ মুননু গুডডু ডাববে,জুননু ডাববে। আল্লাহ কিনো মাববে? তুননু আবাল পুঁতা কথা বুলো কিনো? মুননুর দুককু লাগে।
তাননা ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে থাকে।
‘ তুমি আমাল ভাই না।
মুননা বিছানার উপর উঠে দাঁড়ায়।
‘ তুমি আমাল বুন না। পুঁতা। মুননু আব্বা ডাকিনা, গুডডু ডাকি। আমমা ডাকিনা, জুননু ডাকি। আল্লাহ মাববে না মুননুকে। আদোল কববে।
তাননা গাল ফুলিয়ে বসে থাকে। ধপ করে সিজদাহ দেওয়ার মতো পড়ে যায়। বলে,
‘ আল্লাহ মুননুল সাথে লাগ কলো । মুননু পুঁতা।
মুননা বোনের পিঠের উপর বসে। গাড়ি চালানোর মতো করে নেচে নেচে বলে,
‘ গালি চললে না। চললে না লে গালি চললে না।
তাননা কেঁদে দেয়। সিজদায় মাথা ঠুকে ঠুকে বলে,
‘ আল্লাহ মুননুল সাথে লাগ কলো। লাগ কলো।
সাহিল হেসে ফেলল এবার আওয়াজ করে। জিনিয়া ও হাসল।
তাননার উপর থেকে মুননাকে কোলে নিয়ে নিল সাহিল। পেটে মুখ দিয়ে সুড়সুড়ি দিতে দিতে বলল,
‘ বোনের ব্যাথা লাগছেনা? উপরে উঠে নাচছেন?
মুননা হাসতে হাসতে বলল,
‘ গুডডু, জুননু কুথায় ?
সাহিল বলল,
‘ ওটা কি। জুননু দেখা দাও তো।
জিনিয়া হিজাব খুলতে খুলতে বলল,
‘ কি হয়েছে মুননু সাহেব?
তাননা কেঁদে উঠল। সাহিলের দিকে হাত বাড়িয়ে বলল,
‘ আববা তুননুকে কুলে নাও। আল্লাহ মাববে।
জিনিয়া হেসে ফেলল। হাসতে হাসতে বলল,
‘ আপনার মেয়েকে ও কোলে নিন। নইলে আল্লাহ মাববে।
সাহিল তাননাকে ও কোলে নিয়ে নিল।
দুজনকে কোলে নিয়ে আদর করতে করতে বলল,
‘ আপনারা নাকি ঝগড়া করেছেন? হ্যা?
তাননকে জড়িয়ে ধরে রাখল সাহিলকে। সাহিলের মুখে মুখ ঢলে বলল,
‘ না। তুননু মুননু ভালু। ঝগলা কলেনা।
মুননা বলল,
‘ আমলা ভালু।
জিনিয়া বলল,
‘ হ্যা হ্যা আপনারা খুব খুব ভালো। খারাপ বললে আল্লাহ মাববে।
_______
লাল রঙের ঢিলেঢালা কূর্তি মেয়েটির গায়ে। সাদা ওড়নাটি গলার সাথে ঝুলে রয়েছে। কাঁধের খানিকটা নিচ অব্ধি করা একটি অপরিপক্ব বেনুণি সামনের দিকে ফেরানো। কয়েকটা উটকো চুল কানের আশেপাশে লেগে গেছে লেপ্টে।
হাত পা মোচড়ামুচড়ি করা মেয়েটার হাত পায়ে ঘাম জমে উঠেছে ফোঁটাফোটা। মুখে ও। কপালের মোড়ানো সাদা ব্যান্ডেজটা টান দিয়ে খুলে ফেলার আগেই তার হাতটা ধরে ফেলল মিঃ নারায়ণ চ্যাটার্জি। মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,
‘ কি করছ পূজা মা? কপালে আঘাত পেয়েছ তুমি।
কতবার বলেছি নিচের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে হাঁটবে। কাউকে দেখলে ভয় পেয়ে দৌড়াবে না। কেউ তোমার কিচ্ছু করবেনা। আমি আছি তো।
পূজা ভীত কন্ঠে বলল,
‘ বাড়ি যাব বাবা। বাড়ি।
মিঃ চ্যাটার্জি মাথায় হাত বুলালো পূজার। বলল,
‘ এক্ষুণি বাড়ি ফিরব আমরা। কিন্তু কথা দাও। ডক্টর বাবু আসলে ভয়ে লুকোবে না। পালাবেনা। ভয় পাবেনা।
তরতর করে হাত পা কাঁপতে থাকা পূজা বলল,
‘ না না ভয় পাব না। ভয় পাবনা। মা, মায়ের কাছে যাব। মা।
মিঃ চ্যাটার্জি হাত ধরে বেড থেকে নামাল পূজাকে। হসপিটালের বাইরে নিয়ে এসে গাড়িতে বসালো। গাড়ি ছেড়ে দিল। গাড়ির কাচ দিয়ে বাইরে গাড়ি আসা যাওয়া দেখতে লাগল পূজা। কপালে চিনচিনে ব্যাথা অনুভব হচ্ছে। শরীর দুর্বল লাগছে। মিঃ নারায়ণের কাঁধে মাথা রাখল পূজা। মিঃ নারায়ণ পূজার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,
‘ শরীর খারাপ লাগছে? তখন ওভাবে না দৌড়ালে কি কপালে আঘাত লাগত? ডক্টর বাবু তো তোমার ভালোর জন্যই আসে।
ফুঁপিয়ে উঠল পূজা। ডক্টরের কথা বললে ভালো লাগেনা আমার। ভয় লাগে। খুব ভয় করে।
মিঃ নারায়ণ হেসে বলল,
‘ আচ্ছা। আর বলব না। কিন্তু তোমাকে তো সুস্থ হতে হবে মা।
পূজা গালের ভেতর আঙুল ডুকিয়ে রাখল। বলল,
‘ আমি সুস্থ নেই?
মিঃ নারায়ণ বললেন,
‘ না। তোমার মন আর শরীর দুটোই খুব খারাপ। আমি চাই তুমি পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠো। তোমাকে চেনো।
পূজা বিড়বিড় করল,
‘ আমি পূজা। আমি আমাকে চিনি।
জ্যাম পড়ে গেল রাস্তায়। পুলিশ সামনের একটা ট্রাককে থামিয়ে রেখেছে। গলা বের করে পুলিশ দেখল পূজা। কানচাপা দিয়ে চিল্লিয়ে উঠল। মিঃ নারায়ণ ভয় পেয়ে গেল।
‘ পূজা। কাম অন। শান্ত হও। কি হয়েছে? কেউ তোমাকে কিচ্ছু করবেনা। পূজা?
তরতর করে কাঁপতে কাঁপতে জ্ঞান হারাল পূজা। ঢলে পড়ল মিঃ নারায়ণের কাঁধে। মেয়েকে আগলে ধরলেন তিনি। ড্রাইভারকে বললেন,
‘ তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরতে হবে রতন। যে করেই হোক। পূজার আবার শরীর খারাপ করছে। কি হবে আমি কিচ্ছু বুঝতে পারছিনা। হুটহাট ভয় পাচ্ছে আর জ্ঞান হারাচ্ছে। বাম পাশের সরু রাস্তায় গাড়ি ঘুরালো রতন। এই রাস্তা দিয়ে যেতে দেরী হবে কিন্তু পৌঁছানো যাবে। পুলিশ এসে আটকালো গাড়ি।
‘ ভয় পেয়ে গাড়ি ঘুরাচ্ছেন নাকি?
মিঃ নারায়ণ রেগে গেলেন। অযাচিত সন্দেহ করে পুলিশরা। রেগেমেগে গর্জন করলেন মিঃ নারায়ণ।
‘ আমার ডটারের শরীর খারাপ। তাকে নিয়ে যে করেই হোক বাসায় পৌঁছাতে হবে।
কনস্টেবল বললেন,
‘ সরি। আমাদের স্যারের পারমিশন ছাড়া ছাড়তে পারব না।
মিঃ নারায়ণ রাগ চেপে বসে থাকলেন৷
আওয়াজ করে এসে থামল আর ও একটি পুলিশের গাড়ি। সাদা শার্ট পড়া লোকটিকে দেখে সব কনস্টেবলরা সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে স্যালুট দিল। এগিয়ে গিয়ে বলল,
‘ স্যার এদিকে একটু দেখতে হচ্ছে।
এগিয়ে গেল জায়িদ। বলল,
‘ কি সমস্যা?
‘ স্যার ওদিকে একটা মেয়ের শরীর খারাপ করেছে। শীঘ্রই বাড়িতে পৌঁছা দরকার। এখন কি করব?
জায়িদ বলল,
‘ কোন গাড়ি?
কন্সটেবল গাড়ি দেখিয়ে দিল। জায়িদ বলল,
‘ সব ট্রাক তন্নতন্ন করে তল্লাশি করো। এখানে কোনো না কোনো একটার মধ্যে অস্ত্র লুকায়িত আছে। আমি ওদিকে দেখছি।
কনস্টেবল মাথা নাড়াল।
জায়িদ এগিয়ে গেল মিঃ নারায়ণের গাড়ির দিকে। ওনার কাঁধে পড়ে আছে পূজা। গলা বের করে দিলেন ওনি। জায়িদকে বলল,
‘ আপনি কে? এই পুলিশগুলো কি শুরু করেছে দেখেছেন? আমার মেয়েটা অসুস্থ।
জায়িদের কপালে ভাঁজ পড়ল৷ পুলিশরা কি ইচ্ছে করে এসব করে? আশ্চর্য!
জায়িদ বলল,
‘ কি হয়েছে আপনার মেয়ের?
মিঃ নারায়ণ মেয়ের দিকে চাইলেন। বললেন,
‘ ও সেন্সলেস হয়ে পড়েছে। আমাকে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরতে হবে।
জায়িদ মাথা নিচু করে দেখার চেষ্টা করল পূজাকে। মুখ দেখল না। হাত দেখল। লাল টকটকে মেহেদী পড়া হাত। মিঃ নারায়ণ পূজার ওড়না দিয়ে মাথার উপর দিয়ে দিলেন। জায়িদ সোজা হয়ে দাঁড়াল। বলল,
‘ ঠিকআছে। আপনারা এই রাস্তা দিয়ে চলে যান। তল্লাশি শেষ হতে হতে দেরী আছে।
রতন বলল,
‘ আপনার কথা কেন শুনব? পুলিশ পেটাবে। পকেট থেকে বের করে নিজের আইডি দেখাল জায়িদ। চুপ মেরে গেল রতন। গাড়ি ঘুরালো সে তাড়াতাড়ি। গাড়িটি চলে গেল। জায়িদ তাকালো গাড়িটির দিকে। গাড়ির নাম্বার প্লেটটা এমনি এমনি মুখস্থ করল। পরক্ষণে ভাবল, কেন মুখস্থ করল ওই নাম্বার প্লেট?
আবার ভেবে নিল, এটি তার অভ্যাস হয়ে গিয়েছে।
চলবে,
গঠনমূলক মন্তব্য আশা করছি