#রৌদ্রদেশে_মেঘের_বেশে
#পুষ্পিতা_প্রিমা
#অন্তিম_পর্ব_৪৭

তখন সন্ধ্যা। সূর্য ডুবার প্রস্তুতি চলছে। হালকা ঝিরিঝিরি বাতাস চারপাশে। গাছপালা দুলছে সেই বাতাসের ঝাপটায়। সোফার উপর অচেতন হয়ে পড়ে আছে নাহিল। তার হাত পা মালিশ করছে নাতাশা। সালেহা নিজের ঘরে বিছানার উপর। আনহাকে হসপিটালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বেবি মিসক্যারেজ হওয়ার সম্ভাবনা আছে। জায়িদ সাহিলের কবর খোঁড়া লোকগুলোর কাছে।

তাননা মুননা সাহিলের সাদা কাফনে মোড়ানো লাশের পাশে। সাহিলের পাশে পা কুড়িয়ে মাথা ফেলে শুয়ে রয়েছে। কান্না থেমে গিয়েছে তাদের। মানতে বড়ই কষ্ট হচ্ছে আব্বা নেই পৃথিবীতে। মুননা হঠাৎ হঠাৎ উঠে উঠে আঙুল দেখিয়ে বলল
‘ গুড্ডু আল্লার কাছ থিকে আচকিলিম আনিও। কিমুন? মুজা মুজা কলে খাবো। কিমুন? গুড্ডু কুথা বুলো না কিনো? লাগ কচচো?
তাননা কেঁদে কেঁদে বলল
‘ আব্বা ঘুম মুননু। আব্বাল ঘুম ভাংগি গিলে দুক্কু পাবে। ডাকিও না। কিমুন?
মুননা সাহিলের চোখ আঙুল দিয়ে ছুঁয়ে বলল
‘ গুড্ডু এতু ঘুম কিনু? ঘুম ঘুম। ছুদু ছুদু ঘুম। লাগ কচচি গুড্ডু।
দাঁড়িয়ে পড়ে মুননা। গায়ে সাদা পান্জাবি। মাথায় সাদা টুপি। নাহিলের কাছে গিয়ে ডাকে
‘ মুন্টু উতো। গুড্ডুকে আল্লাল কাছি দিয় আচি। উতো। আব্বা আল্লাল কাছি যাবে। উতো।
নাহিল উঠল না। মুননা হেঁটে হেঁটে গেল সোরার কাছে। সোরাকে ডেকে বলল
‘ সুলা ফিপি। আননা ফিপি কুথায়? গুড্ডুকে টা টা বুলো।
সোরা চোখ চেপে ধরে রাখলো।

জ্ঞান ফেরায় জিনিয়া হঠাৎই খাট থেকে নেমে পড়ল। জাহেদা চেপে ধরল তাকে। নাহ নাহ কোথায় যাচ্ছিস। কোথায় যাচ্ছিস মা?
জিনিয়া সরিয়ে দেয় জাহেদাকে। নিজের পেটের দুপাশে চেপে ধরে বলল
‘ আম্মা বুঝোনা কেন? উনার কাছে যেতে হবে আম্মা। একা একা কোথায় পড়ে আছে।
জাহেদা জিনিয়ার পিছু পিছু দৌঁড়ালো। জিনিয়া নিজের ঘরে ডুকল। সাহিলকে শোয়ানো হয়েছে নিচে। জিনিয়া নিজের ভালোবাসার ঘরটাতে চোখ বুলিয়ে নিল। আনাচে কানাচে ভালোবাসা লেপ্টে আছে। মানুষটার গায়ের গন্ধ মৌ মৌ করছে। হাসিগুলো, রাগগুলো, অভিমানগুলো হানা দিচ্ছে। দুষ্টুমিষ্টি খুনসুটিগুলো চোখের পর্দায় ভেসে উঠছে। বিছানায় পাশাপাশি দুটো বালিশ ঠিকই আছে। ওয়ারড্রবে শাড়ির সাথে শার্ট লেপ্টে লেপ্টে আছে। জিনিয়ার কসমেটিক্সের জিনিসের মধ্যে সাহিলের প্রিয় পারফিউমটা ঠিকই আছে। শুধু মানুষটা নেই। জিনিয়া ঝাপসা চোখে তাকালো সাহিলের লাশের দিকে। মুখটাতে লেপ্টে রয়েছে রয়েছে তাননার মুখ। ডাকছে
‘ আব্বা। আমাল আব্বা। আব্বা আদোল কলি। আদোল কলো।
জিনিয়া গেল হেঁটে হেঁটে। সাহিলের মাথার কাছে বসল। গায়ের শাড়িটা কেউ পাল্টে দিতে পারেনি তার। সাদা শাড়ি পড়লে মানুষটা রাগ করবে। কষ্ট পাবে।
জিনিয়া হাত গলিয়ে দিল সাহিলের চুলের ভেতরে। কাফন আর আতরের গন্ধে মৌ মৌ চারপাশ। জিনিয়া ডাকল
‘ শুনছেন? তাননা মুননা বড় হলে রূপসা গ্রামে গিয়ে নৌকায় চড়ার কথা ছিল। ভুলে গিয়েছেন বোধহয়। ওদের গ্রাম দেখাবেন বলেছিলেন। তাননাকে লাল টুকটুকে বরের সাথে বিয়ে দেবেন বলেছিলেন।
মুননার জন্য জিনির মতো নরম তুলতুলে পুতুলের মতো বউ আনবেন বলেছিলেন। এতসব স্বপ্নগুলোকে মেরে ফেললেন কেন? আমাকে কেন জাহান্নামে ফেলে চলে গেলেন? শাস্তি দিলেন কেন আমায়? কিসের শাস্তি দিলেন? আপনাকে ভালোবাসার শাস্তি? নোংরা ডেকেছি তার শাস্তি?
দুজন বৃদ্ধা এসে জিনিয়াকে নিয়ে যেতে আসে। বলে
‘ এখন নিয়ে যাবে। বউকে নিয়ে যেতে হবে।
জিনিয়া সাহিলকে ডাকে।
‘ আরেহ উঠুন না। এই? উঠুন। আমাকে ছেড়ে কোথায় যাচ্ছেন আপনি? কোথায়? আমি কি যেতে পারবনা ওখানে? পারবনা? ইচ্ছে করলে আপনাকে ভালোবাসতে পারবনা? আপনাকে ছুঁতে পারবনা? আমার ঘুম না আসলে কি করব? আপনার বুক কোথায় পাব? উঠুন না।
মহিলা দুটোকে ধাক্কা মারে জিনিয়া। সাহিলকে দুহাতে জড়িয়ে ধরে বলে
‘ কোথাও যাবনা আমি। আল্লাহ!
মহিলা দুটো আর এগোয় না। তাননা জিনিয়ার মুখে হাত বুলাতে বুলাতে বলে
‘ আম্মা কানেনা। আব্বা ঘুম, ঘুম। ঘুম ভাংগি দিলে আল্লাহ মাববে।
জিনিয়া আবার জ্ঞান হারায়।

নাহিলের জ্ঞান ফিরল অনেক্ক্ষণ পর। কিছুক্ষণের মধ্যে নিয়ে যাবে সাহিলকে। নাহিল দৌড় লাগালো উপরে। হোঁচট খেল আবার উঠে দাঁড়ালো। দৌড়ে গিয়ে সাহিলের পাশে বসে পড়ল সে। সাহিলের আগলে ধরে ঘর কাঁপিয়ে ডাকল
‘ ভাই? এই ভাই? মাইর, আদর, শাসন আর কে করবে ভাই? আমি ভাই বলে কাকে ডাকব? মাছের মাথা নিয়ে কার সাথে ঝগড়া করব? এই ভাই? আমি না খেলে তার খোঁজ নেওয়ার কেউ থাকলোনা ভাই। আমি নিঃসঙ্গ। আমাকে সাহস দেবে কে ভাই? আমি কার কাছে আবদার করব? ভাই বলে আর কেউ থাকলোনা আমার। ভাই উঠো যাওনা ভাই। তোমাকে রাগ করা মানায়, চিল্লাচিল্লি করা মানায়। পেট চেপে হাসা মানায়। এভাবে শান্ত হয়ে ঘুমানো মানায় না ভাই। এতগুলো মানুষের কান্না কেন তুমি শুনতে পাচ্ছনা? তোমার বাচ্চাদুটোর কান্না। কেন ভাই? কেন?
জায়িদ এসে টেনে নিয়ে গেল নাহিলকে। জানাজার খাট বের করার সময় জায়িদের পা টেনে ধরল জিনিয়া।
‘ ভাইয়া উনি একা একা কিভাবে থাকবে? কোথায় নিয়ে যাচ্ছ উনাকে? নিয়ে যেওনা। যেওনা। জায়িদ শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। জিনিয়া শফিক সাহেবের পা ধরে রাখে।
‘ আব্বা তোমরাই এই মানুষটার সাথে আমাকে জড়িয়ে দিলে। এখন আমার কাছ কেড়ে নিচ্ছ কেন? আব্বা এমন করোনা। করোনা। দিয়ে ফেলো। আমাকে দিয়ে ফেলো।
জিনিয়া নাহিলের কাছে যায়। সাজেদ সাহেবের কাছে যায়। সাগর সাহেব ও আনহার সাথে হসপিটালে। হার্ট অ্যাটাক হয়েছে।
খাট নিয়ে যায় বহুদূর। জিনিয়া দৌড়ে পেছন পেছন। তাননা মুননা দৌড়ে যায় মায়ের পিছু। জিনিয়া মাঝরাস্তায় গিয়ে আবার জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। সালেহা অজ্ঞানই থাকে। শেষ দেখা ওই যে দেখল।
কবরে মাটি দেওয়ার সময় চিৎকার করে কেঁদে উঠল নাহিল, শফিক সাহেব, জায়িদ। জায়িদ মাটি দিতে দিতে বলে
‘ ভালো থাকিস বন্ধু। যেখানেই থাকিস ভালো থাকিস।
নাহিল কবরের মাটি হাতের মুঠোয় চেপে রাখে। মাটি গুড়ে করে দিতে দিতে কাঁদে। বলে
‘ ভাই কোথায় তুমি? এই দেহটা আমার ভাইয়ের নয় বোধহয়। আমার কান্না কেন শুনতে পাওনা ভাই? কেন?
শফিক সাহেব মাটি দেয়। সাজেদ সাহেব ও। শফিক সাহেব বলেন
‘ তুমি আমার মেয়েকে বাঁচিয়ে যাওনি সাহিল। মেরে গিয়েছ। সে মরে গিয়েছে। বেঁচে নেই আর। সাজেদা সাহেব মাটি দেয়। বলে
‘ গুড্ডু ভালো থাক। আল্লাহ ভালো রাখুক তোকে। ভালো থাক।
তাননা মুননা মাটি দেয়। শান্ত দুজন। যখন দেখল আব্বাকে দেখা যাচ্ছেনা। মুননা এসে নাহিলকে ধাক্কা মারে।
‘ গুড্ডুকে দিখিনা কিনো? কুথায় গুড্ডু কুথায়?
তাননা হাত পা ছুঁড়তে ছুঁড়তে কাঁদে। বলে
‘ আব্বা আব্বা। আমাল আব্বা কুথায়। আল্লাহ আমাল আব্বা। আব্বা তুমি কুথায়? কুলে নাও। কুলে তুলো আব্বা। আদোল কলো। আব্বা আসু।
মুননা মাটি খুঁড়তে থাকে। ছোট্ট ছোট্ট হাত দিয়ে মাটি খুঁড়তে খুঁড়তে বলে
‘ আব্বা মাতির নিচে কিনো? আল্লাহ! আমাল আব্বা। আব্বা কুথায়? মাতির নিচে কিনো? আল্লাহ!
মুন্টু আব্বাকে আনি দাও। আনি দাও। নাওলে আল্লাহ মাববে। আনি দাও।
নাহিল বসে রইল। মুননার সাদা পান্জাবি কাদায় মিশে কালো হয়। নখের ভেতর মাটি ডুকে যায়। মুননা মাথা ফেলে রাখে সাহিলের কবরের উপর। আব্বা তুমাল মুতো ঘুমাবো। আব্বা ঘুমাবো।
তাননা কাঁপতে কাঁপতে হুশ হারায়। হাত পা শীতল হয়ে আসে তার। মুননা কবরের উপর শুয়ে থাকা অবস্থায় জ্ঞান হারিয়ে অচেতন হয়ে পড়ে। দাঁতে দাঁত খিঁচে যায়।
জানাজা পড়তে দলে দলে লোক আসে। ঢলতে ঢলতে জিনিয়া একটি গাছের কাছের তলায় গিয়ে দাঁড়ায়। দূর থেকে তাকিয়ে দেখে সাহিলের কবর। শীতল হয়ে হাত। পা। মাথা। মন মস্তিষ্ক।
আচমকা শক্তি ভর করে তার গায়ে। জানাজা পড়তে আসা মানুষের ভীড়ে এক পশুকে দেখতে পায় সে।
সে দৌড়ে যায় নিজের ঘরে। সাহিলের শার্টের পকেটে রাখা পিস্তল আর ধারালো ছুরি নিয়ে দৌড়ে আসে সে। পড়নের লাল বেনারসি মাটিতে গড়াগড়ি খাচ্ছে। কেউ আটকাতে পারেনা জিনিয়াকে। মেয়েমানুষ কেউ আটকাতে পারেনা তাকে।
দৌড়াতে দৌড়াতে সে হাজির হয় জানাজায় আসা মানুষগুলোর পেছনে। শাড়ির আঁচল তুলে মাথা ঢাকে সে। মুখ ঢাকে। দৌড়ে গিয়ে মাথায় হ্যাট পড়া একজন লোকের পিঠে লাগায় গুলি। পরপর পাঁচ পাঁচবার গুলি ছুঁড়ে। লোকটা ঢলে পড়ে। ছুরি দিয়ে ইচ্ছেমতো কোঁপায় জিনিয়া। শেষমেশ সাতবারের মাথায় বুকে ছুরি গেঁথে দেয় ইয়াজিদের। ইয়াজিদ চোখ বন্ধ করতে করতে গুলি তুলে হাওয়ায় ছুঁড়ে । গিয়ে পড়ে জিনিয়ার বুকে। ফিনফিনিয়ে বেয়ে পড়ে রক্ত।

পুলিশে লাল হয়। মানুষে মানুষে ভীড় হয়। জায়িদ এসে ধরে জিনিয়াকে। হাসলো জিনিয়া। বুক ধরে রেখে গড়গড়িয়ে পড়া রক্ত চেপে ধরে হাসতে হাসতে বলে
‘ ভাইয়া আমি উনাকে দেখতে পাচ্ছি ওই আকাশে। আমাদের দেখা হচ্ছে। দেখা হচ্ছে আমাদের।
জায়িদের মুখের ভাষা চলে যায়। জিনিয়া বুক চেপে ধরে আবার ও হাসে। হাসতে হাসতে বলে
‘ আমি খুন করেছি তাকে, যার জন্য আমার স্বামীকে হারাতে হয়েছে। যারজন্য আমার সুখের সংসার ভেঙেছে। যারজন্য আমার সন্তানরা অনাথ এতিম হয়েছে। আমি নির্মমভাবে হত্যা করেছি তাকে। দেখো ভাইয়া।
জায়িদ বসে পড়ে। জিনিয়া হাসতে হাসতে জায়িদ আর নাহিলকে বলে,
‘ তাননা মুননাকে দেখে রেখো। ওদের দায়িত্ব দিয়ে গেলাম। ওদের ভালো রেখো। ভালো থেকো। আমার বাচ্চাগুলোর যদি আম্মা আব্বাকে মনে পড়ে তাহলে ওই আকাশের তারার সাথে কথা বলতে বলিও। আমার বাচ্চাগুলোকে দেখে রাখিও। আমার বাচ্চাগুলো, আমার মানিক। আমার মা বাবা।
শফিক সাহেব গগন কাঁপিয়ে কেঁদে উঠে মেয়েকে বুকে জড়িয়ে ধরে বলে
‘ এটা কি করলি রে জুননু? কি করলি মা? কি করলি?
জিনিয়া হাসলো। হাসতে হাসতে কাঁদলো। বলল
‘ উনি খুব খুব ভীতু আব্বা। একা থাকতে পারেনা। আমি উনার কাছে চলে যাচ্ছি।কিন্তু আমার বাচ্চা। আমার তাননা মুননা। কোথায় ওরা? আমি ওদের শেষ দেখা দেখতে পেলাম না। জায়িদ আর নাহিল দৌড়ে গেল। অচেতন তাননা মুননাকে দেখায় জিনিয়াকে।
জিনিয়া কাঁপা কাঁপা হাতে ছুঁই তাদের। দুজনকে বুকের উপর টেনে নেয়। কলেমা উচ্চারণ করতে করতে জগৎ, সংসার ছেড়ে পাড়ি দেয় না ফেরার দেশে। তাননা মুননা কি জানে? আব্বার মতো আম্মা ও তাদের ছেড়ে চলে গেল? জানে?

সাহিলের পাশাপাশি কবর দেওয়া হয় জিনিয়াকে। তাননা মুননা হসপিটালে। সালেহার যখন জ্ঞান ফিরে তখন ছেলে বৌমা বহুদূরে। বহুদূরে। শফিক সাহেব স্ট্রোক করে বসেন। জাহেদার খিঁচুনি। সাগর সাহেব চলে যান কোমায়।

জায়িদ বসে থাকে ছাদে এসে। চিৎকার করে কাঁদতে কাঁদতে সে বলে
‘ আমার জুননু? বোন, কোথায় তুই বোন? তোকে মিস করি খুব। খুব মিস করি। ফিরে আয়। ফিরে আয় জুননু। পকেট ভর্তি চকলেট নিয়ে বসে আছি। ফিরে আয় জুননু।
ফিরে আয়।

তাননা মুননা সুস্থ হয় প্রায় দশদিনের মাথায়। বাড়ি ফিরে শান্ত হয়ে যায় মুননা। পাগলের মতো বকবক করে তাননা। দিন হলে মা বাবার কবরের পাশে গিয়ে বকবক করে দুজন। কত আবদার, অনুরাগ, অভিমান!
রাত হলে দূর আকাশের তারাকে ডাকে।
‘ আম্মা, আব্বা আসো। আসো। আল্লাহ আম্মাকে ভালু রাখু, আব্বাকে ভালু রাখু।
বিছানায় গুটিসুটি মেরে ঘুমোয় দুজন। মায়ের বুক না পেয়ে মাঝরাতে চিল্লিয়ে কেঁদে উঠে। বাবার আদর না পেয়ে হাত পা ছুঁড়ে। সোরা, আনহা, নাহিল জায়িদ কারো আদরে কিচ্ছু হয়না। মন ভরেনা। শান্তি পায়না। কোথাও যেন কেউ নেই। এমন ও সময় কাটে যখন নাহিল দুজনকে নিয়ে চলে আসে কবরের কাছে। তাননার মুননার চোখে ঘুম নামে কবরের মাটিতে মাথা রাখলে। কত শান্তির জায়গা যেন এটা! কত আরাম! কত আদর! কত মমতা! যেন আম্মা আব্বা বুকে শুইয়ে ঘুম পাড়ায় দুজনকে।

সেই ছোট্ট ছোট্ট তাননা মুননা বড় হয় ধীরে ধীরে। বুকের মাঝে একরাশ হাহাকার নিয়ে। মনে একপৃথিবী সমান অভিযোগ জমা তাদের। পার হয় বিশটা বছর।
বিশ বছর পার হলেও দুই বাড়ির ছাদ আগের মতোই আছে। দুই ছাদে দাঁড়িয়ে থাকে দুই ভাইবোন। ভাইটা তাকিয়ে থাকে আকাশের দিকে উধ্বমুখী হয়ে । যেন তারার সাথে কথোপকথন চলছে তার। বোন তাকিয়ে থাকে ভাইয়ের গাল বেয়ে গড়ানো জলের দিকে। তার শক্তপোক্ত, ঘাড়ত্যাড়া ভাইয়ের চোখে জল? কারণ কারা? কোথায় তারা? মা বাবারা?

বোন ডাকে আকুল হয়ে
‘ ভাই তোর চোখে জল কেন?
ভাই তাড়াতাড়ি জল মুছে নিয়ে বোনের দিকে বেশখানিক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলে
‘ তাননা আজ গুড্ডু আর জুননুর এনিভার্সারি। তাদের উইশ করবিনা? চোখের জল দিয়ে উইশ করলাম। তুই ও করে দে। তারা আমাদের চোখের জল দেখলে খুশি হয়।
তাননা চোখের জল ছেড়ে দেয়। তার ভাইয়ের এই চোখের জল গড়ানোর জন্য দায়ী আকাশের কোণায় আলাদা হয়ে থাকা ও-ই দুটো তারা। কি স্বার্থপর! তারা চোখের জল দেখলে হাসে কেন? কেন হাসে?

সমাপ্ত
আর ও একটা পর্ব আসবে। বোনাস পর্ব। তাননা মুননাকে নিয়ে।
আজ সবার মন্তব্য চাই।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here