যখন এসেছিলে অন্ধকারে
১৮।।

ইমরানের অবস্থা দেখে সাইদা কেঁদে ফেললেন। নাকের উপর ব্যান্ড এইড লাগানো। কপাল কাটা। শার্টে রক্তের দাগ। চোখফুলে কালশিটে হয়ে আছে। হাতেপায়ে আরও কয়েকটা ব্যান্ডএইড। ঠোঁট ফুলে আছে।
মাকে কাঁদতে দেখে ইমরান স্বান্তনা দেওয়ার চেষ্টা করল ‘ছোটো একটা একসিডেন্ট মা। কান্নাকাটির কিছু হয়নি।’

‘হ্যাঁ, ছোটো একটা একসিডেন্ট। খুন করেনি এটাই বড় ব্যাপার।’ তীক্ষ্ণস্বরে বললেন সাইদা।

‘মানে?’

‘অনির মা ফোন করেছিল। তুই ওখানে গিয়েছিলি। তারপর যা যা হয়েছে সব বলেছে। এগুলোর দরকার ছিলো না ইমরান।’

‘দরকার ছিলো মা, দরকার আছে।’

‘না নেই। তুই আর কখনো ওখানে যাবি না।’

‘কিন্তু অনি আমার ওয়াইফ, মা।’

‘সেসব চুকেবুকে গেছে। শেষ।’

‘কিছু শেষ না, মা।’

‘তার মানে, তুই আবার যাবি ওখানে? এই এত মার খেয়েও?’

‘মা, অনির সাথে আমার কথা বলতে হবে।’

‘কোনো কথা নেই। এতদিন যখন প্রয়োজন মনে করিসনি, এখনো মনে কর কোনো প্রয়োজন নেই।’

‘প্রয়োজন আছে। আমার প্রয়োজন আছে।’

‘চিরকাল তুই উলটো কথাই বলে গেলি। মা আমি তোর। যখন যেটা করেছি শুধুমাত্র তোর ভালোটা দেখে গিয়েছি। শুধু তোর ভালোর চিন্তা করেছি। কিন্তু তুই কোনোদিন আমাদেরকে বিশ্বাস করিসনি। যেটা তোর ভালো লেগেছে, তোর ইচ্ছে করেছে তুই সেটাই করেছিস। আমি অন্ধ মা, ছেলের স্নেহের কাছে কিছু দেখিনি। অনিকে আমি পছন্দ করেছিলাম বলেই তুই ফেলে দিয়ে গিয়েছিস। তোর নিজের পছন্দ হলে তুই এমন করতে পারতি না। তুই বল, আজ এতদিন পরে এসে তুই বলবি, অনি তোর বউ আর ওরা তা মেনে নেবে? সেদিনও আমি তোর মুখের দিকে তাকিয়েই বলেছিলাম, সব ভুলে যা। আজও বলছি, গত পাঁচবছরের মতো করে সব ভুলে থাক।’

ব্যথায় কঁকিয়ে উঠল ইমরান। সাইদার চোখ জলে ভরে এলো। ‘ইশ, কী মার মেরেছে আমার ছেলেটাকে। মাথার উপর বাবা নেই। ছেলেমেয়েগুলো সব উচ্ছন্নে গেছে। একটা নটি হইছে, আরেকটা ডাকাত।’ ইচ্ছে করেই খারাপ শব্দটা উচ্চারণ করলেন সাইদা।

কিন্তু ইমরানের শরীরের ব্যথার চাইতে বেশি বাজল শব্দটা। ও খুব শক্ত করে বলল ‘শোনো মা, অনির সাথে আমার সম্পর্ক এখনো আইনসম্মত। সেটা ভেঙে যায়নি। আমি সবরকম চেষ্টা করব আমার ভুলগুলো কারেকশন করে নিতে।’

‘মানে, ওই মেয়েকেই তোর লাগবে? ওকেই তুই চাস, এতকিছুর পরেও?’

‘চাওয়া না চাওয়ার কিছু নেই মা। অনি আমার স্ত্রী, সে আমাদের যোগাযোগ থাকুক বা না থাকুক, সম্পর্কটা তো মিথ্যা না।’

‘এই সম্পর্ক এখন আর কেউ মানবে না। অনির ভাই মানবে না সেটা তো দেখেই এলি, অনিও মানবে না। সেই মেয়ে এখন বারোভাতারি হইছে…’

‘মা? থামো। মানবে কী না সেটা আমি বুঝব।’

‘তুই কী বুঝবি রে? এত বুঝিস বলেই তো এই মারটা খেয়ে এলি।’

‘মা যাও। আমাকে রেস্ট করতে দাও। আমার যা করার আমি করে নেব। তোমরা যখন পাশে থাকবেই না সিদ্ধান্ত নিয়েছ, আমার কাজ আমাকে করতে দাও।’

‘বাপ আমার, কথা শোন। এখন এসব নিয়ে অনেক বড় ঝামেলা হবে। সবাই জানে, অনিকে তুই তালাক দিয়ে গেছিস। এখন আর কেউ তোকে বিশ্বাস করবে না।’

‘বিশ্বাস না করার তো কিছু নেই মা। ডিভোর্স তো হয়ইনি। বিয়ে যে হয়েছে তার প্রমাণ আছে, তালাক হয়েছে সেটা কেউ প্রমাণ করতে পারবে না।’

‘প্রমাণের দরকার নেই আমার। তোর কথাই আমি বিশ্বাস করলাম, কিন্তু দেখতেই পাচ্ছিস কেউ মানবে না।’

‘আমার অন্যায় হয়েছে মা। আমি জানি আমার অন্যায় হয়েছে। ক্ষমা পাওয়াটাও এত সহজ হবে না। কিন্তু অসম্ভবও হবে না। তোমরাই তো বলো, মেয়েদের জীবনে বিয়ে একবারই হয়। অনি রেগে থাকলেও, আমাকে মুছে ফেলতে পারেনি। বিয়ের একটা জোর তো থাকেই।’

‘ইমরান, তুই জেদি সারাজীবন। যেটা চেয়েছিস সেটা তোকে দিতেই হয়েছে। কিন্তু এটা আর জেদের ব্যাপার নেই। শুধু তোর চাওয়াতে যদি হতো, তবে আমি না করতাম না। এখানে অনির চাওয়াও আছে। আর আমি যতটুকু শুনেছ, নাটকের এক নায়ক আবরার, বড় নায়ক সে, তার সাথে অনির লাইন আছে। তাকেই মনে হয় বিয়ে করবে।’

‘সেটা তো অসম্ভব মা। অনি অন্য কাউকে বিয়ে করতে পারবে না। আমার এখনো ম্যারিড!’

‘তোকে কী বলছি সেটা বোঝ, অনি অন্য কাউকে পছন্দ করে।’

‘আমাকে ওর সাথে কথা বলতে হবে, মা। ওসব সব ও ভুলে যাবে। অল্প বয়স তো, কাউকে ভালো লাগতেই পারে। কিন্তু ও যখন জানবে আমাদের ডিভোর্স হয়নি, তখন নিশ্চয়ই আর কারো সাথে সম্পর্ক রাখবে না।’

‘পড়াশোনা করতে করতে কত ছেলেপেলে পাগল হয়ে গেছে, আগে শুনেছি শুধু। আজ দেখলাম। নিজের ছেলেকে দেখছি। তুই কি সোজাকথা বুঝতে পারছিস না?’

‘বুঝেছি মা। কী বোঝাতে চাইছ আমি বুঝেছি। তুমি বলতে চাইছ অনি ফিরবে না। তো তুমি এই সোজাকথাটা বুঝে নাও, ও ফিরবে। আমি বলছি, ও ফিরবে।’

‘ও ফিরলেই আমি ওকে নেবো এই কথাটা তোকে কে বলল? কীসব ছবি বেরোয় দেখেছিস? আব্রু, পর্দার বালাই নেই। বেলাজ, বেহায়া মেয়েছেলে। আর যেসব নাটক করে, আস্তাগফিরুল্লাহ। এত এত পুরুষের সাথে এত ঢলাঢলি! আল্লাহ মাফ করুক, ওই মেয়ে আমি আর ঘরে তুলছি না।’

ইমরান হেসে ফেলল ‘ওসব শুচিবায়ু তোমার থাকতে পারে, আমার নেই মা। ওর ভালো লেগেছে, ও মডেলিংএ ক্যারিয়ার করতে চাইছে। ওর প্রফেশন নিয়ে আমার কোনো নালিশ নেই। আর এমনিতে পড়াশোনা করে ও খুব একটা কিছু হতে পারত না। এসএসসি পাস করত কীনা আমার সন্দেহ আছে। হাউজওয়াইফ হলেও খুব ভালো হাউজওয়াইফ হতো সেটাও আমি মনে করি না। যেটা করছে সেটাই ওর জন্য ঠিক।’

‘ওই হাজার লোকে ঘাঁটা জিনিস তোর লাগবেই?’ মাথায় হাত দিলেন সাইদা ছেলের চিন্তাভাবনায়। বিড়বিড় করতে করতে নিজের ঘরের দিকে চলে গেলেন।

ইমরান হাসল শুধু। অনির শরীরের শুচিতা আছে কী না ও জানে না, তবে মনে অন্য কারো জায়গা হয়নি, এটা ও জানে। ইমরানের মনে তো অন্য কেউ নেই অনি ছাড়া, অনির মনে কী করে কেউ থাকবে?

এই সহজ কথাটা কেউ কেন বুঝছে না? ইমরান অনিকে ফোন করাটাই ঠিক মনে করল। চট করে মোবাইল বের করে অফিস থেকে আনা নম্বরটাতে ডায়াল করল। রিং হলো অনি ধরল না। প্রচন্ড উত্তেজনা নিয়ে ইমরান আবার কল করল। এবারে অনি রিসিভ করল, সুন্দর করে বলল ‘হ্যালো, আসসালামু আলাইকুম। অনামিকা বলছি।’

ইমরানের শ্বাসরোধ হতে আসল, গলা থেকে শব্দ বেরোবে কী না সন্দেহ করে বেশ জোরে বলল ‘অনি? আমি ইমরান। একটু কথা ছিলো।’

এরপর সব চুপ। কয়েকবার হ্যালো বলে ইমরান ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখল অনি অনেকটাসময় আগেই কল কেটে দিয়েছে।

আবার ফোন করল ইমরান। অনির ফোনটা ততক্ষনে সুইচড অফ! সারারাত জেগে ইমরান শুধু ফোন দিয়েই গেল, দিয়েই গেল। একবারের জন্যও অনি ফোনটা চালু করল না।

*****

সারারাত নির্ঘুম ইমরানকে ছটফট করতে দেখে মায়ের মন আর মানেনি। যাতে ছেলে সুখি হয় তাতেই মায়ের আনন্দ। নিজের মনের সাথে যুদ্ধ করেছেন, স্বামীকে ঘুম থেকে তুলে পরামর্শ করেছেন, তারপর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, অনিকে নিতে তার আর কোনো আপত্তি নেই সাইদার। নিজেও সারারাত ঘুমাননি, ভোরে চোখ লেগে এসেছিল, আটটার দিকে ঘুম ভাঙলে অসুস্থ ইমরানের সমাচার নিতে এসে দেখেন ও অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে গেছে। মাকে দেখেই বলল ‘খাবার আছে কিছু?’

সাইদা গভীর স্নেহে ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন ‘আজ অফিস না গেলে হয় না? এরকম ব্যান্ডেজ চোখেমুখে, রাতে ঘুমাসওনি!’

‘তুমি রাতে আমাকে পাহারা দিয়েছ, মা?’

‘পাহারা দিতে হয় না। ছেলের চোখে তাকালেই মা বুঝতে পারে সব। আজ বুঝবি না, যেদিন বাবা হবি সেদিন বুঝবি, বাবামায়ের বুকের ভেতরটা কেমন করে সন্তানের জন্য। আজ ছুটি নে অফিস থেকে। একটাদিন আরাম কর?’

ইমরান হাসল শুধু।

সাইদা বুঝলেন ইমরান কথা শুনবে না। ঝড়,বর্ষা, জ্বর, অসুখ কোনোকিছুই ওকে কোনোদিন ঘরে আটকে রাখতে পারেনি। হান্ড্রেড পার্সেন্ট এটেন্ডেন্স ছিলো স্কুলে সবসময়। শরীর বলতে এই ছেলের মনে হয় কোনো অনুভূতি নেই।

ইমরান আবার ফোন হাতে নিয়েছে দেখে সাইদা বললেন ‘আর অস্থির হোস না বাপ। আমি যাব অনির মায়ের কাছে। ওই মেয়ে লাগবে যখন তোর, আমি চেয়ে নিয়ে আসব।’

ইমরানের চোখ উজ্জ্বল হয় ‘তবে আজই চলো মা।’

‘আজই?’

‘হ্যাঁ। দেরি করার দরকার কী?’

সাইদা কিছু বললেন না ইমরানকে। মনে মনে গালাগাল করলেন ছেলেকে ‘পাঁচবছর পরে এসে বলছিস দেরি করার দরকার কী?’

বিকেলে ইমরানের বাবা আব্দুল মজিদ সাহেব, ওর মা সাইদা, সীমা, ইকরাম, ইমা, ইমার ছেলে আর ইমরানকে আবার দেখা গেল অনির মায়ের বাসায়। সত্যিই ইমরান আর দেরি করতে দেয়নি।

এইভাবে এত আনন্দের উপলক্ষ পাবেন এটা অনির মা সুমনা ভাবতেই পারেননি। আগেরদিনের গণ্ডগোলের পর থেকে শুধু আল্লাহকে ডেকে গেছেন একমনে যেন থানাপুলিশ না হয় আর সীমার জীবনে এই ঘটনার প্রভাবে কোনো সংকট না আসে। ভাসুর বেলায়েত শিকদারকে ঘটনা জানালে তিনিও দুঃশ্চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলেন।

সকালে সীমা ফোন করেছিল। ইমরান আর শাশুড়ীর কথা-কাটাকাটি যতটুকু কানে এসেছিল, তাতে অনি-ইমরানের তালাকবিভ্রাট নিয়ে যা বোধগম্য হয়েছিল সবটাই সে সুমনার কানে তুলে দিয়েছিল। আর বিকেলে সপরিবারে সাইদার আগমনে সাইদাকে জড়িয়ে ধরে আনন্দে কেঁদেই ফেললেন সুমনা।

কুশল বিনিময়ের মধ্য দিয়ে দুই পরিবারে মাঝে যে ক্লেশ জমেছিল তা উধাও হয়ে গেল। সুমনা শুধু পরশের প্রতিক্রিয়া কী হয় তাই ভেবে একটু অস্থির হচ্ছিলেন। পরশকেও ফোন করে ডেকেছেন। আবার ইমরানের মুখোমুখি হলে কী না কী করে বসে তাই আগে থেকেই সব বলে নিয়েছেন। পরশ আসতে দেরি করল না। দরজায় দাঁড়িয়েই সুমনা ওকে অনুরোধ করলেন শান্ত থাকতে। রাগে পরশের কপালের দুপাশের শিরাদুটো দপদপ করছে, স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। সুমনা তাড়াতাড়ি ওর হাত চেপে ধরলেন ‘ইমরানও ছেলেমানুষ। ভুল করে ফেলেছে। যত যাই হোক না কেন, এখনো নামে অনির স্বামী। একটু বুঝে পরশ। তোমার বড়চাচাও এই কথা বলে দিয়েছে। কোনো বেয়াদবি করবা না। শোনো ওদের কথা। শুনতে তো দোষ নেই। তারপর ওরা চলে গেলে আমরা পরিবারের সবাই মিলে যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার নেবো। বাড়ি বয়ে আসা মেহমানের সাথে কোনো অভদ্রতা করবা না। কোনোভাবে অপমানিত যেন তারা না হয়। অনি না হোক, সীমাও তোমার আরেকটা বোন। তার শ্বশুরবাড়ির লোক ভেবে একটু মাথাটা ঠান্ডা করো। মায়ের অনুরোধটুকু রাখো।’

পরশ নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করে ঘরে ঢুকে সবার উদ্দেশ্য সালাম দিয়ে ইকরামের সাথে হাত মেলালো।
পাঁচসিটের একসেট সোফা ওদের ঘরে। সেগুলোতে আগেই সবাই বসে পড়েছে। একটা সিঙ্গেল বেড পাতা আছে ঘরটাতে, পরশ ঘুমায় ওখানে – ইকরাম, ইমা আর ইমার ছেলে সেখানে বসেছে। অলির পড়ার ঘর থেকে একটা চেয়ার টেনে এনে ইমরানের ঠিক মুখোমুখি বসল পরশ। তারপর বলল ‘কী অবস্থা? আমাদের বাসায় তো চাঁদের হাট বসেছে। কী বলেন সোনমা?’ সাইদার দিকে তাকিয়ে কাষ্ঠহাসি হাসল পরশ।

‘হ্যাঁ তোমরা তো আর বুড়ো মানুষগুলোর কোনো খবরই রাখো না। যাও না। যোগাযোগও রাখো না। বোনের শ্বশুরবাড়ি, অন্তত বছরের ফল-মিষ্টি পাঠাতে হত। ইদেচাঁদে সেমাই খেয়ে আসতে হয়, সেসব তো ভুলেই গিয়েছ। বোনজামাইই বুঝি আপন শুধু? সে বিদেশ তাই এই বুড়ো সোনমা আর সোনমিয়ার একটা খবরও রাখতে নেই বুঝি?’

সাইদার কথায় স্পষ্ট ইঙ্গিত অনির ব্যাপারে, তবুও পরশ না বোঝার ভান করল ‘এই তো বিয়ে হয়েছে সোনমা। দেখবেন সীমার ভাই কী কী করে। ট্র‍্যাকভরে ফল পাঠাব। খেয়ে, বিলিয়ে পারবেন না যেমন তেমনি আমরা গিয়ে উঠে এমন বিরক্ত করব সইতেও পারবেন না। আর সোনমিয়া আপনার ছিপ-বড়শির কী খবর? ভালো চাড় আছে কিন্তু আমার কাছে।’

আব্দুল মজিদ সাহেবের অস্বস্তি হচ্ছিল এইরকমভাবে এই বাসায় আসাতে, কথা ফুটছিল না মুখে, পরশের কথায় আলোচনার টপিক পেলেন ‘হ্যাঁ হ্যাঁ কীসের চাড় বলো তো, ঘুরঞ্চিগাছে পিঁপড়ের ডিমে কিন্তু বড় কালিবাউশ আসে তা জানো?’

‘লালপিঁপড়ের ডিম আর ভাজেমেথিগুঁড়ো মেশালে যে চাড় পড়বে তাতে সব মাছই পাগল হয়ে ছুটে আসবে, সোনমিয়া। আর ভালো টিকেটের পুকুরও আছে ঢাকার আশেপাশেই।’ পরশের কথায় মজিদ সাহেবের আগ্রহ আরও বেড়েই যাচ্ছিল, সাইদা তাড়াতাড়ি কথা ঘুরালেন ‘আর তুমিও পরশ, এই লোককে আরও নাচাচ্ছ? মাছ, মাছের চাড়, হুইলের নাম্বার এইসব ছাড়া এই লোক আর কোনো কথা জানে? না না, আমি আর রোদে ছিপ বাইতে দেবো না।’

পরশ হাসল ‘তাহলে সোনমিয়া আমাদের পলাশডাঙায় চলেন একদিন, শিশুগাছের নিচে আমাদের ঘাটলা। ছায়া আছে। মাছ কম হলেও নেই মামার চাইতে কানা মামাই তো ভালো, তাই না?’

‘ঠিক ঠিক।’ জোরে ঘর কাঁপিয়ে হাসলেন মজিদ সাহেব।

সাইদা মাঝখানে কথা কাটলেন ‘তা সুমনা আপা, আসল কথাই তো বলা হচ্ছে না।’

সুমনা একটু ব্যস্ত ছিলেন, খাবার পরিবেশনে। বাইরে থেকে বিভিন্ন নাস্তা আনিয়েছেন। অলি গিয়ে নিয়ে এসেছে – এরা হুট করে আসায় ঘরে কিছু করে উঠতে পারেননি। সাইদার কথার উত্তরে তাড়াতাড়ি করে বললেন ‘হ্যাঁ আপা বলেন।’

ঘরে সবার দিকে তাকিয়ে একটা টানটান উত্তেজনা তৈরি করলেন সাইদা, দুবার গলা পরিস্কার করে নিয়ে বললেন ‘আমাদের তো কথাই ছিলো, ইমরান ফিরে আসলে আমরা অনিকে উঠিয়ে নেব। তাই চলে এলাম। ভাবলাম একসাথে বসে দিনতারিখ ঠিক করি। একটা বড়সড় আয়োজনে রিসেপশনটা করে ফেলি। ইকরাম আর সীমার রিসেপশনও তো হয়নি, একসাথেই দুটো অনুষ্ঠান করে ফেলা গেলে ঝামেলা শেষ। আমি ঝাড়া হাত পা হয়ে যাই।’ হেসে হেসে কথা শেষ করলেন সাইদা।

‘কোন দুটো অনুষ্ঠান? আমি বুঝিনি ঠিক!’ সুমনা কিছু বলার আগেই পরশ প্রশ্ন করল।

সাইদা পরশের উপস্থিতিতেই সংকুচিত হচ্ছিলেন, ওর কথায় আরও মিইয়ে গেলেন ‘সীমা আর ইকরামের রিসেপশন করলাম আর অনিকেও তুলে নিলাম।’

‘আপনার মাথা ঠিক আছে? অনির রিসেপশন কীভাবে সম্ভব? অনির তো বিয়ে হয়ে গেছে। আমরা ওকে আবার বিয়ে দিয়ে দিয়েছি। একটা বাচ্চাও আছে ওর!’ অবাক হওয়ার ভঙ্গি করল পরশ।

ঘরের সবাই একজন আরেকজনের মুখ চাওয়াচাওয়ি করতে থাকল। শুনশান নীরবতা ঘর জুড়ে। সুমনা ব্যস্ত হয়ে বললেন ‘কী বলিস এইসব পরশ? বাজে কথা। আজব কথা এই ছেলেটার মাথায় শুধু!’

ঘাড় উঁচিয়ে মায়ের দিকে তাকালো পরশ, বলল ‘কোনটা আজব কথা মা?’

তারপর ইমরানের দিকে ঝুঁকে বলল ‘পাঁচ বছর তো কম সময় না। এইসময়ে তালাক হয়ে যাওয়া অনির আবার বিয়ে হওয়াটা কি আজব কথা নাকি? একটা বাচ্চা থাকাটাও তো খুব স্বাভাবিক, তাই না ইমরান সাহেব? কী বলেন আপনি?’

চলবে…

Afsana Asha

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here