ম্যাডাম
পর্ব(০৫)
#Writer_Nandita_priti
নিজের রুমে বসে ক্রিকেট খেলা দেখছি।তখনি মায়ের আগমন। মাকে দেখে ও না দেখার ভান করলাম।মা থমথমে স্বরে বলল
টিভিটা অফ কর।
আমি প্রশ্নবোধক চোখে তাকিয়ে বললাম
কেন?
তোর সঙ্গে আমার কথা আছে।
ওহ।
আমি টিভিটা অফ করলাম। মা আমার পাশে বসে বলল
শুনলাম তোর নাকি কোন মেয়েকে পছন্দ?
আমি মায়ের দিকে তাকালাম।এই খবরটা ম্যাডাম মাকে দিয়েছেন সেটা আমার অজানা নয়।আমি মাথা নাড়লাম।মা গম্ভীরস্বরে বলল
কে মেয়েটা?
তুমি চিনবে না।একদিন বাসায় নিয়ে আসবো। পরিচয় করিয়ে দিবো।
তোকেতো আমি এরকম ভাবি নি দিগন্ত।
আমি ভ্রু কু্ঁচকে বললাম
মানে?
কিছু না।আচ্ছা দিগন্ত আমি যদি ওই মেয়েটির সঙ্গে তোর বিয়ে দিতে রাজি না হই।তবে তুই কি করবি?
আমি হেসে বললাম
রাজি কেন হবে না?মেয়েটা উচ্চশিক্ষিত।রূপবতী।আমার চেয়ে হাই লেভেলের।
তোর মতো একটা বাদাইম্যার প্রেমে মেয়েটা কি করে পড়লো?
মায়ের এরকম কথা শুনে আমি মুখ কালো করে বললাম
মা তুমি এমনটা বলতে পারলে?আমি বাদাইম্যা?আমার একটা পারসোনালিটি আছে মা।
তোর আবার পারসোনালিটি। ঝাড়ু মারি তোর পারসোনালিটিতে।
আমি হতবম্ব, আমি নির্বাক,আমি ভাবান্বিত।মায়ের মুখে এই ধরণের কথা শুনে।আমি মায়ের দিকে তাকিয়ে বললাম
তুমি আচমকা আমার উপর এত ক্ষেপেছো কেন?কি হলো মা?
তোর প্রতি আমি সদয় কখনো ছিলাম না।তোর মতো অকর্মা আর আছে নাকি?মনে আছে ছোটবেলা তোর বাপ তোকে স্যান্ডোল ছুড়ে মারছিলো?তোর প্রতি না আমি বা তোর বাপ কেউ সদয় ছিলাম না।
মায়ের মুখে স্পষ্ট রাগ বিদ্যমান।কিন্তু প্রকাশ করছে না।বাবা স্যান্ডোল ছুড়ে কি আর সাধে মেরেছিলো?সেই বয়সে একটা মেয়েকে বিয়ে করার জন্য উতলা হয়ে গিয়েছিলাম।মেয়েটার হাত ধরে টানাটানি করছিলাম।যার দরুণ কপালে স্যান্ডেলের ছোঁয়া জুটলো।আমার একথা মনে পড়তে হাসি এলেও আমি হাসলাম না।
বলছিলাম মা ম্যাডাম কোথায়?
ম্যাডাম দিয়ে তুই কি করবি?যাক যেখানে ইচ্ছে।তোর কি?
নাতো আমার কিছু না।
মা অনেকক্ষণ চুপ করে থেকে বলল
তোর ম্যাডাম আজ নিজের বাড়ি চলে যাচ্ছে।
আমি মায়ের দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুচকালাম।ম্যাডাম বাড়ি চলে যাচ্ছে?এটা কেমন কথা।নিজের জালে নিজে ফাঁসবো নাকি?আমি মাকে কিছু বলতে যাবো তখনি দরজায় ম্যাডাম উপস্থিত।হাতে ট্রলি ব্যাগ।চোখে মুখে যেন বিষন্নতা ভর করেছে।মুখের লাবণ্যতা হারিয়ে গেছে।মা ম্যাডামকে দেখে উনার কাছে গেলেন।দুজনে কি কথা বললেন আমি চেষ্টা করেও শুনতে পারলাম না।মা চলে গেল ম্যাডাম আমার রুমে এলেন।ম্যাডামকে আসতে দেখে আমি দাঁড়িয়ে পড়লাম।ম্যাডাম আমার দিকে তাকিয়ে বললেন
আপনাকে অনেক বিরক্ত করেছি।দয়া করে ক্ষমা করে দিবেন।
আমি চুপচাপ ম্যাডামের দিকে তাকিয়ে আছি।ম্যাডাম মলিন হাসি হেসে বললেন
চাকরিটায় আবার জয়েন করুন।আমি এই আপনার হাত ছুঁয়ে কথা দিচ্ছি।কোনো রকম বিরক্ত আর আপনাকে করবো না।
ম্যাডাম সত্যি সত্যি আমার ডান হাতে নিজের ডান হাত রাখলেন।আমি মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে আছি।ম্যাডাম বললেন
আপনি চাকরিতে জয়েন করলেই বুঝবো আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন।আশা রাখছি আসবেন । বায়।ভালো থাকুন।
একথা বলে ম্যাডাম আমার রুম থেকে বের হয়ে দরজার সামনে ট্রলি ব্যাগটা হাতে নিয়ে বের হয়ে গেলেন।আমি যেন এবার নিজের কাছে নিজেই বোকা বনে গেলাম।
ম্যাডাম চলে যাওয়ার পর মা আর রুম থেকে বের হন নি।আমি চুপচাপ সারাদিন রুমে ঘাপটি মেরে বসে রইলাম।অতি চালাকের গলায় দড়ি এই কথাটা হারে হারে টের পেয়েছি পরের দিন অফিসে গিয়ে। কারণ ম্যাডাম সত্যি সত্যি আর আমাকে বিরক্ত করেন নি।কোনো ধরণের বাজে বিহেভ আমার সঙ্গে করেন নি।আমি ফাইল নিয়ে গেলে চুপচাপ সাইন করে দিতেন।যখন ফাইল নিয়ে যেতাম তখন একবার শুধু আমার দিকে তাকাতেন তারপর আর তাকাতেন না।ম্যাডামের মধ্যে সেই চঞ্চলতা না পেয়ে আমি প্রতিদিন হতাশ হতাম।আমার মনে হতো আমি ম্যাডামকে হারিয়ে ফেলবো।
———–
চলবে…